#ইশরাত_জাহান_জেরিন
আজ চিত্রার বিয়ের সাত মাস পূর্ণ হলো। সকাল থেকে ফারাজের জন্য কত কিছু রান্না করছে, সাথে একটা সারপ্রাইজও পরিকল্পনা করেছে। তবুও ফারাজ কাজে যাওয়ার আগে পর্যন্ত চিত্রা বারবার ব্যাকুল হয়ে তার দিকে তাকিয়েছে—কিন্তু স্বামীটা একবারও সাত মাসের বিবাহবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানায়নি। ভুলে গেছে কী? না সে তো ভুলে যাওয়ার মানুষ নয়! চিত্রা আজকে মরিয়মের বাড়ি যাবে। ওর পরিবারের সঙ্গে দেখা করবে সেখান থেকে একটা রিসোর্টে যাবে। তারপর কল করে আসতে বলবে ফারাজকে সেখানে। চিত্রা সেখানেই ফারাজের জন্য সারপ্রাইজ পরিকল্পনা করেছে। কেবল মাত্র সেই কথা জানে আয়েশা। সেই তো কত সাহায্য করল। চিত্রা তৈরি হয়ে নেয়। চিত্রা ডার্ক মেরুন রঙের একটা গাউন প’রে ঝটপট তৈরি হয়। আজকে যতটা সুন্দর করে সাজা যায় ততটা সুন্দর করে সেজেছে। স্বর্ণের গহনায় শরীর চকচক করছে। চুলগুলো ছেড়ে ফারাজের দেওয়া নাকফুলটা প’রে আয়েশাকে বলল, ‘আমি ওইদিন মরিয়মের মাকে কথা দিয়েছিলাম একবার দেখা করব। আজ তো যাওয়ার পথে সেইদিক থেকে ঘুরে যাব। জানিস তো কয়দিন পর বিদেশে চলে গেলে আর কবে ফেরা হবে জানি না।’
আয়েশার মনটা কেমন কেমন করছে। সে চিত্রাকে বলল, ‘বাড়ির গাড়ি নিয়ে যাও।’
‘না, ড্রাইভারগুলোকে চিনিস না? একেবারে ফারাজ ভক্ত। দেখা যাবে ফারাজকে সব বলে দিয়েছে।’
‘বজ্র ভাই তো রুমেই আছে। ওনাকে ডাক দেই।’
‘না সে ঘুমাক। তুই চিন্তা করিস না। চিত্রা তালুকদারকে তুই কি মনে করিস রে? আমি ঠিক সামলে নেব। আর তেপান্তরে তো যাচ্ছি না।’
চিত্রা রিকশা থেকে সরাসরি নামল মরিয়মদের বাড়ির সামনে। এদিকটা এত নিরিবিলি। রাস্তায় অটো, রিকশা কিছুই যে নেই। আগে জানলে ওই রিকশা ওয়ালা মামাকে এখানে অপেক্ষা করতে বলত। চিত্রা মরিয়মের কবরটা দূর থেকে দেখে তার মায়ের সঙ্গে কথা বলে আসে। কিছু টাকাও দেয়। মরিয়ম থাকলেও হয়তো দিত। আর এখন তো সে নেই। বাসা থেকে বের হয়ে চিত্রাকে মেইনরোডে উঠতে হবে। তবে এদিকটা এত সুনসান। দুইদিকে জঙ্গল। মাছের প্রজেক্টও আছে। তবে তুলনামূলক মানুষ নাই বললেই চলে। আচ্ছা একটুই তো। কষ্ট করে না হয় বাকিটা পথ পার করে দেওয়া যাবে। চিত্রা একা মনে হাঁটতে থাকল জঙ্গলের পাশের রাস্তা ধরে। হঠাৎ মনে হলো কেউ তাকে অনুসরণ করছে। চিত্রার কেমন যেন ভয় ভয় করল। সে তবুও হেঁটে চলল। পেছন ফিরে তাকালো না। তবে একটা সময় মনে হলো কেউ পায়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাকে অনুসরণ করছে। সে থামলে পায়ের শব্দ থেমে যাচ্ছে আবার সে হাঁটলে সেই শব্দের বেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। চিত্রার তবুও পেছন ফেরার সাহস হলো না। এই মুহূর্তে যেন সে ওই কুসংস্কারটাকেই বিশ্বাস করে নিল, ‘পেছন ফিরে তাকালে বিপদ হয়।’ তবে হঠাৎ করেই এবার কানে এলো একটা পরিচিত কণ্ঠ। কেউ তার নাম ধরে ডাকল, ‘চিত্রাঙ্গনা।’
অন্ধকার রুম। ভাঙ্গা একটা বাড়ি। সন্ধ্যার সেই মৌসুমে ধুলো জমা ঘরের এক পাশে, দেয়ালের গায়ে ঠেস দিয়ে পড়ে আছে চিত্রা। চিত্রার হাত পা রশি দিয়ে বাঁধা। ক্লান্ত শরীর নিয়ে চিত্রা পড়ে আছে। মুখটা কাপড় দিয়ে প্যাঁচানো। চিত্রার সামনের চেয়ারে বসে আছে কেউ একজন। চিত্রা ভালো করে দেখতে পাচ্ছে না। তার চোখ মেলতেও কষ্ট হচ্ছে। তবুও চিত্রা চেয়ে দেখল। দেখল একটা পুরুষ মানুষকে। তার চেনাজানা একজন পুরুষ মানুষ। ওই যে জোহান এলাহী। সেই জোহান এলাহীই তো। জোহান উঠে প্রথমে চিত্রার মুখের প্যাঁচানো কাপড়টা খুলে ফেলল। বাতাসে ধুলোর সাথে মিশে যায় চিত্রার গলা দিয়ে বেরিয়ে আসা কাশির দমক। পানি খাওয়ার জন্য সে ঠোঁট নাড়িয়ে কিছু বলার চেষ্টা করে, কিন্তু কথার বদলে শুধু কান্নায় ভেঙে পড়ে। জোহান চিত্রার মুখটা দু’হাতে চেপে ধরল। ঠোঁট কামড়ে ওর মুখে এক চড় বসিয়ে দিল। মাথাটা ঠোকর খেয়ে মেঝেতে লেগে যায়। চিত্রার ঠোঁটের কোণা ফেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ে ধুলোর ওপর।
‘আজ নয়তো কাল তোর মরণ আমার হাতেই ছিল। ফারাজ এলাহীকে অনেক ভালোবাসিস তাই না? এমন ভালোবাসা দেখানো মেয়ে মানুষগুলোকেই সহ্য হয়না আমার। তোরা আজকে এত ভালোবাসা দিয়ে কালকে বেঈমানি করিস। পরে সেই বেঈমানির মাশুল দিতে হয় পুরুষ মানুষদের। আমি জোহান চাই না যেই যন্ত্রণা আমি জোহান ভোগ করেছি তা দুনিয়ার কোনো পুরুষ ভোগ করুক। তাই আমি ওইসব নারীদের এক এক করে যন্ত্রণা দিয়ে খুন করব যারা বেশি ভালোবাসা দেখায়। দুনিয়ার বুকে দ্বিতীয় লাবণ্যকে জন্মাতে দেব না আমি।’ জোহান বলে উঠে দাঁড়ায়।
চিত্রা কথার মানে বুঝতে পারছে না। কেবল তার চোখের সামনে ফারাজ এলাহীর মুখ ভাসছে। সে কোথায়? কেন তাকে বাঁচাতে করেনি। আর জোহান? সে এসব কি বলছে ? কোন কারণে চিত্রাকে এতটা কষ্ট দেওয়া তার? কি সেই কারণ? আর এই ভালোবাসা, হত্যা, লাবণ্যের সাথে চিত্রার কি সম্পর্ক?
জোহান চিত্রার দিকে তাকায়। অনেকদিন ধরেই সে ওতপেতে বসে ছিল। শেষমেষ সেই সুযোগ এলো। আজকে একে কিছুতেই ছাড়বে না। পাশেই নদী। টুকরো করে দেবে ভাসিয়ে। অনেক হয়েছে একে সহ্য করা। নারীরা বেঈমান হয়। তা না হলে মা, লাবন্য শেষে বোন নিরু সবাই ছেড়ে যেতে পারে? জোহান রাম দা হাতে তুলে নেয়। ধারালো রামদা হাতে চিত্রার দিকে এগিয়ে যায়। চিত্রার মাথা বরাবর কোপ বসানোর আগেই পিস্তল থেকে বেড়িয়ে আসা পরপর তিনটে গুলি তার মস্তিষ্ক ভেদ করে গেল। মগজ ছিটকে বেড়িয়ে চিত্রার গায়ের ওপর পড়ল। চিত্রা কিছু বোঝার আগেই জোহান রক্তবমি করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। চিত্রার ঠিক সামনেই জোহান পড়ে যায়। চিত্রা কেবল আতঙ্কে লাশের দিকে চেয়ে রইল। গুলি কে করল দেখার আগেই জোহানের হাত থেকে পড়ে যাওয়া রামদা কেউ একজন হাতে তুলে নিল। চিত্রা এবার ঢোক গিলেই তাকালো সেই ব্যক্তির দিকে। ফারাজ এলাহী। তার উত্তাল সমুদ্রের এমন রূপ? ফারাজ একটাও কথা না বলে গুটিয়ে যাওয়া চোখে চিত্রার দিকে তাকায়। রামদা হাতে, নিঃশব্দে এগিয়ে গিয়ে চিত্রার হাত-পায়ের বাঁধন কেটে দিল। রশিগুলো কেটে গেলে সে চিত্রাকে এক পাশের ধূলিধূসর কোণে ঠেলে সরালো। চিত্রা স্তব্ধ। দৃষ্টিতে বিস্ময় আর আতঙ্ক। তার ঠোঁট কাঁপছে, কিন্তু গলা দিয়ে কোনো শব্দ বেরোচ্ছে না। চোখের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ফারাজকে সে চিনতে পারছে না—এ যেন আর সেই মানুষটা নয়, যার হাত ধরে সে নিজের সমস্ত ভয়কে ভুলে যেত। এ তো এখন নিজেই ভয়ের আস্ত কারিগর।
ভাগ্যিস ঠিক সময়ে এখানে পৌঁছাতে পেরেছে। না হলে আজ কি হতো? ফারাজ ভাবতে পারছে না। ফারাজ আজকে চিত্রার জন্য একটু অন্যরকম পরিকল্পনা করেছিল। ফারাজ আজকের দিনের কথা কি করে ভুলতে পারে? বাসায় জলদি ফিরেছিল আজকে সে। চিত্রাকে নিয়ে বেরুবে বলে। সেখানে গিয়ে আয়েশার কাছে জানতে পারল মরিয়মের বাসায় গিয়েছে। একটা সারপ্রাইজ পরিকল্পনা করেছিল। সময় মতো নাকি ফারাজকে কল দেওয়ার কথাও ছিল। কই কল তো এলো না? মরিয়মের বাসা থেকে শুরু করে তন্ন তন্ন করে পাগলের মতো খুঁজেছে ফারাজ চিত্রাকে। কেবল না সঙ্গে বজ্র আর অভ্রও ছিল। শেষে মনে পড়ল কিছুদিন আগেই তো চিত্রার ফোনের লোকেশন ট্র্যাকিংয়ের ব্যবস্থা করেছিল সে। যদিও চিত্রা সব খানে ফোন নিয়ে যায় না। তবে আজ নিয়েছে। লাস্ট লোকেশন নদীর ঘাটে পেয়েছিল। সেখান থেকেই সব বন্ধ। মাথা কাজ করছিল না ফারাজের। তবে কেন জানি মনে হচ্ছিল খুব কাছেই আছে চিত্রা। হঠাৎ নদীর পাড়ের ভাঙা পুরোনো বাড়িটির দিকে নজর গেল। বাড়িটা ভাঙা হলেও সেখানে পাপের অন্ত নেই। একবার সেখানে গিয়েও দেখবে কি? যদি ওইখানে কেউ যায় না। মাঝে মাঝে নেশা পানি করে ছেলে-পেলেরা। বজ্র আর অভ্র তখন বাইরেই ছিল। আশপাশটায় খুঁজছিল। ফারাজ সেই কবেই বউয়ের খাতিরে অস্ত্র ছেড়ে দিয়েছিল। আজ বজ্র নিজ হাতেই তার হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে বলল, ‘ভালোর জন্য ফারাজ এলাহী খারাপ হওয়া দোষের নয়। এই দুনিয়ায় ভালো কিছু করতে হলে যতটা খারাপ হওয়া লাগে হবে। যদিও আমাদের হাত রক্তাক্ত।’
ফারাজ তখন পিস্তলের দিকে একবার চাইল। তাকিয়ে রইল। নেবে কি নেবে না করেও তুলে নিল। দুনিয়া বোধহয় চায় না ফারাজ এলাহীর রক্তের খেলা এভাবে বন্ধ করে দেখ।
ফারাজ ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এলো। গায়ের ছাইরঙা ব্লেজারটা খুলে ধপ করে মাটিতে ফেলে দিল। রামদা শক্ত করে হাতের মুঠোয় চেপে ধরে সে এগিয়ে গেল মৃতপ্রায় জোহানের দিকে। জোহানের চোখ দিয়ে জানটা তখন বেড়িয়ে যাচ্ছে। মৃত্যুর আগে তার চোখের সামনে বহু স্মৃতি ভেসে উঠছে। এই যে ভাইয়ের হাতেই নিঃশ্বাস ছাড়া, এত এত পাপ সবই মৃত্যুর সাত সেকেন্ডে মস্তিষ্কে গভীর ভাবে নাড়া দিচ্ছে। চোখের সামনে ভেসে উঠছে লাবণ্যের মুখ। তার জন্যই তো জোহান এত খুন করল। ওই মেয়েটা তার জীবনে এলো বলেই জোহানের জীবনটা আজকে এভাবে শেষ হলো। মা বোধহয় জোহানকে নিতে এসেছে। আফসোস বাবাকে শেষ বিদায় দেওয়া হলো না। নিরুর ব্যর্থ ভাই হিসেবে সে চলে যাচ্ছে ওপারে। জোহান ঢলে পড়ে। চোখ দু’টো দিয়ে দম যায়।
ফারাজ পিস্তলটা ফেলে দিয়েছে। ফারাজ একহাতে জোহানের মাথার চুলগুলো মুঠো করে ধরল, অন্য হাতে রামদা তুলে হুংকার ছাড়ল, ‘জানোয়ারের বাচ্চা তোর কলিজা কত বড় আমার বউয়ের গায়ে হাত তুলিস?’
ফারাজ আর একটাও কথা বলল না। ঘেমে সে একাকার। সাদা শার্ট ভিজে গায়ের সঙ্গে লেপ্টে আছে। ফারাজ একের পর এক কুপাতে জোহানের গায়ে বসিয়ে দেয়। শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে খণ্ড খণ্ড হয়ে যায়। সাদা শার্ট রক্তে রঞ্জিত হয়। মুখমণ্ডল ছেয়ে যায় রক্তের আভাসে। সেই রক্তের ছিটা যখন চিত্রার গায়ের ওপর এসে পড়ে তার তখন শরীর হিম হয়ে আসে। ফারাজ নরপশুর মতো রামদা অনবরত চালাচ্ছে। হাড়গোড় ছিটকে ঘর ভরে গেছে। চিত্রার মেরুণ রঙের শাড়ির রঙটার কারণে কেমন যেন তাকেও রক্তজবা’র মতো লাগছে। এই যে গায়ে ছিটকে আসা মানুষের শরীরের রক্ত,হাড় এসব তার গায়ে লাগছে তাও তার মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। চোখের সামনে তার স্বামী কী ভয়ানক কাজ করছে। একটা মানুষকে কুপাতে কুপাতে মুখ শরীর থেতলে আলাদা করে দিয়েছে। ফারাজের হুঁশ জ্ঞান নেই। সে অনবরত গালাগাল দিয়ে পশুর মতো হত্যাকাণ্ড চালিয়েই যাচ্ছে। অভ্র আর বজ্র দৌড়ে ততক্ষণে ভেতরে আসে। এসেই অভ্র ফারাজকে আটকায়। ফারাজ অভ্রকে ধাক্কা দিয়ে বার বার সামনে থেকে সরিয়ে দিচ্ছে। অভ্র একবার চিত্রার দিকে তাকায়। তারপর বলল, ‘ভাই থামেন। ভাই আপনি ভাবীর কাছে যান। তাকে সামলান।’
ফারাজ অভ্রকে পুনরায় ধাক্কা দিয়ে বলল, ‘অভ্র তুই আমাকে ছাড়। ওর সাহস কী করে হয় আমার বউয়ের গায়ে হাত তোলার? ওকে স্পর্শ করার? ওর কলিজা বের করব আমি। ওর কলিজা চাই আমার।’
‘ভাই ও মৃত। আপনি ভাবীর কাছে যান তাকে সামলান। ভাই!’ অভ্র চেঁচিয়ে উঠতেই ফারাজের হুঁশ ফিরল। তার শরীর একটা ঝাঁকুনি দিল। চিত্রার ভয়ার্ত মুখের দিকে তাকাতেই হাত থেকে রামদা মাটিতে পড়ে শব্দ হলো। ফারাজ চিত্রার কাছে যেতেই চিত্রা ভয়ে পিছিয়ে যায়। ফারাজের তা দেখে দমবন্ধ হয়ে এলো। রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে এ কী করে দিল সে? তার চিত্রা তাকে ভয় পাচ্ছে? ফারাজ আবার চিত্রার দিকে এগিয়ে যায়। ‘চিত্রা চলো বাসায় চলো।’
ফারাজ চিত্রাকে স্পর্শ করতে গেলেই চিত্রা ভয়ার্ত গলায় বলল, ‘ছুঁবেন না আপনি আমাকে। আপনার হাতে রক্ত লেগে আছে। খুনী আপনি। ধরবেন না আমাকে।’
চিত্রার বলা শব্দগুলো শুনে মনে হলো কেউ তার বুকে ছুরি চালাচ্ছে। ‘দেখো চিত্রা তুমি কিছুই দেখনি। সব কল্পনা তোমার। ভ্রম এসব।’
‘কল্পনা বলছেন?’ চিত্রা হুঁহুঁ করে কেঁদে উঠল। বলল, ‘ফারাজ একবার বলুন আপনি খুন করেননি। আপনি আমার ফারাজ এলাহী, যে কখনোই এসব করতে পারেনা। বলুন ফারাজ। বলুন না। চুপ করে আছেন কেন? কথা বলছেন না কেন?’
ফারাজের মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। সে এই পরিস্থিতিতে কি করবে? এমন কেন হলো? কয়দিন পর তো তাদের এইদেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ছিল। সব তো স্বাভাবিক চলছিল। তাহলে কেন এমনটা হলো? এসব হওয়া কী অনেক জরুরী ছিল? না হলে কী খুব ক্ষতি হতো?
‘ফারাজ সত্যি করে বলুন আপনি কে? আপনি কে ফারাজ? কি লুকিয়েছেন আপনি আমার কাছ থেকে? আমার ফারাজ তো কখনো এত খারাপ হতে পারেনা। আপনি কে বলুন? বলুন প্লিজ।’ চিত্রার কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে গেছে। ফারাজের বুকটা মোচড় দিচ্ছে। এই দিনটা নিয়েই সে ভয় পাচ্ছিল। চিত্রা উঠে এসে ফারাজের রক্তাক্ত কলার খামচে ধরে কান্না জর্জরিত কণ্ঠে বলল, ‘জবাব দিন ফারাজ। চুপ করে থাকবেন না। আপনি আমায় ঠকিয়েছেন ফারাজ। আপনি আমায় শেষ করে দিয়েছেন।’
চিত্রা ক্লান্ত হাতে অঝোরে ফারাজের বুকে কিল-ঘুষি মারতে থাকে। ফারাজ নিচের দিকে চেয়ে আছে। চেয়ে আছে রক্তাক্ত হাতের দিকে। হারানোর ভয়ে দগ্ধ হচ্ছে সে। ফারাজ শেষবারের মতো একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে অভ্র আর বজ্রের দিকে তাকালো। তারা ইশারা বুঝতে পেরে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল। লাশের সঙ্গে পরে রইল চিত্ররাজ। ফারাজ এবার চিত্রার চোখের দিকে অনুতপ্ত হয়ে তাকালো। ভয় করছে ওই চোখের দিকে তাকাতে।
‘আপনি ফারাজ মিথ্যা বলে ধ্বংস ডেকে আনবেন না। মিথ্যা বললে ধ্বংস হয়ে যাবেন ফারাজ।’
ফারাজ একটা ভারী নিঃশ্বাস ছাড়ল। কি করে বউকে বলবে সে, ‘আমি তো সেইবারই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলাম, যখন তার মারাত্মক চোখ দু’খানা আমার চোখে স্থির হয়েছিল।’
ফারাজ উঠে দাঁড়াল। ধীর গলায় বলল,
‘জানতে চাও তোমার স্বামী ফারাজ এলাহী কে?’
চলবে?