#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ১২]
ঝড় বৃষ্টি রাতটা কেটে ভোর হয়ে এলো যদিও বৃষ্টির দাপট এখনো কমেনি।স্বামীর বুকে মুখ লুকিয়ে শুয়ে আছে আনিকা।রাশেদ স্বামী হিসেবে যথেষ্ট কেয়ারিং হলেও হুটহাট রেগে গিয়ে ঝামেলা বাঁধিয়ে দেয়।রাশেদকে ভালোবেসে ঘর ছেড়ে পালিয়ে যায় আনিকা।মেয়েটার স্বপ্নের সংসার সাজিয়েছে শুধু রাশেদকে ঘিরে।পড়াশোনা বেশিদূর করা হয়নি তার।
” ঘুমাবে না?সকালে উঠে কাজে যেতে পারবে?”
আনিকার প্রশ্নে রাশেদ হাই তুলে নড়ে চড়ে উঠে।মেয়েটার মাথার পেছনে হাত বুলিয়ে বলে,
” ঘুম আসছে না।”
” তবে আমাকে ঘুমাতে দাও।সারা দিন যদি ঘুমে ঝুরতে থাকি কাজ করবো কখন?”
রাশেদ স্মিত হেসে আনিকাকে আরো কাছে টেনে আনে।মেয়েটার উন্মুক্ত পিঠে চুমু খেয়ে বলে,
” কাজের খালা আছেন তাও কেন কাজ করো?এই বাড়ির ভবিষ্যত কর্তী তুমি হাতে হাতে এগিয়ে দেবে এই যা।”
” কাজ দেখলে আমি বসে থাকতে পারিনা।”
রাশেদ চুপসে রইল।হঠাৎ তার মাথায় ভর করেছে কিছু চিন্তা মনে থাকা সন্দেহকে সঙ্গ দিয়ে বলে,
” রুমু এখন কোথায় বলতো।মেয়েটা পালিয়ে গেল কোথায়।”
” যেখানে আছে নিশ্চয়ই ভালো আছে।”
” ভালো আছে মানে?খারাপও থাকতে পারে।সত্যি করে বলতো রুমুর পালিয়ে যাওয়ার পেছনে তোমার হাত নেই তো?”
” ক.. কি বলছো তুমি!তোমার কোন কথার অবাধ্য আমি আজ পর্যন্ত হয়েছি?”
” জানি হও না হতেও তো পারো।”
” রাশেদ আমাকে শুধু শুধু সন্দেহ করছো কেন!”
” শুধু শুধু নয় আমি বেশ ভালো ভাবেই খেয়াল করেছি রুমুর পালিয়ে যাওয়া নিয়ে তোমার কোন মাথা ব্যথা নেই।মেয়েটা কোথা আছে নাকি মরেছে সেই নিয়েও তোমার দুশ্চিন্তা নেই।”
রাশেদ দাঁতে দাঁত পিষে কথা গুলো বলল।আনিকা ভয় পেল।ভয়ের চোটে কাঁপুনি ছুটে যায় তার।সে জানে রাশেদ একবার ক্ষেপে যাওয়া মানে মানসিক শারিরীক দুটো অত্যাচারি চলবে।রাশেদ আচমকা আনিকার চুলের মুঠি চেপে ধরে এবং কিড়মিড়িয়ে বলে,
” বাড়ির গেটের চাবি আর রুমুর ফোন আমার কাছে ছিল।একমাত্র তুমি দেখেছো আমি এসব কোথায় রেখেছিলাম।তাহলে রুমু পেল কি করে?এসব প্রশ্ন শুরু থেকেই আমাকে ভাবাচ্ছে।শুধু কখনো জানতে পারি রুমু পালিয়ে যাওয়ার পেছনে তোমার হাত আছে তবে কু*ত্তা মারা মারবো মনে রেখ।”
রাশেদ হাত ঝারা দিয়ে ছেড়ে দেয় আনিকার চুল।মেয়েটা কাপঁতে কাঁপতে ছিটকে যায় বিছানার কোনায়।
.
পুনরায় সকালে নামলো মুষলধারের বৃষ্টি।পানি কণা যে এক্ষুনি জানলার থাই ভেঙে ফেলবে।রুমু আড়মোড়া কাটিয়ে নড়ে চড়ে উঠতে উজ্জ্বল বিরক্ত হয়।মেয়েটাকে টেনে শুইয়ে দেয় বুকের কোনে।উজ্জ্বলের এসব প্রচন্ড বিরক্ত লাগলো রুমুর।মনে মনে বিরক্ত হয়ে বলল,ঘুমাচ্ছে ঘুমা আমাকে নিয়ে টানাটানি করছিস কেনরে ভাই।না আমাকে ঘুমাতে দিচ্ছিস না নিজে ঠিকঠাক ঘুমাচ্ছিস।
” উজ্জ্বল শুনছেন?”
সাত সকালে এমন ডাকে উজ্জ্বলের মস্তিষ্ক সজাগ হয়।এত আদুরে ডাক!ছেলেটা পিটপিট চোখে তাকায় রুমুর পানে,
” বল বউ।”
” আপনি ঘুমাবেন ঘুমান।আমাকে ছাড়ুন আমার ঘুম দরকার।”
” তোকে ছাড়া ঘুমানোর ইচ্ছে নেই বউ।ঘুমাতে হলে আমাকে জড়িয়েই ঘুমা।”
” এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হচ্ছে।সারারাত জ্বালিয়েছেন কিছু বলিনি।”
” আমি তোকে জ্বালিয়েছি!ভালোবেসেছি আর তুই এত বড় অপবাদ দিলি।ঠিক আছে ঘুমা।”
রুমুকে বুক থেকে সরিয়ে উজ্জ্বল পাশ কেটে শুয়ে পড়লো।ছেলেটার এমন রাগে রুমু যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো।অত্যান্ত খুশি মনে যখনি সে শুয়ে পড়লো তখনি তার উপর ভর ছেড়ে দিল উজ্জ্বল।
” বউ তোকে ছাড়া ঘুম আসবে না।”
” এতদিন ঘুমিয়েছেন কীভাবে?”
” ধর তুই এতদিন ভাত খাইতি এখন বিরিয়ানি পাইলি তাহলে কি খাবি ভাত নাকি বিরিয়ানি?”
” আপনার এসব যুক্তির কোন মানে নেই সরুন।”
উজ্জ্বল সরলো না বরং আরো চেপে গেল।রুমু বিরক্ত মাখা দৃষ্টিতে নজর বুলাতে গালে বেশ কয়েকটি চুমু খেল।
” বউ তোর স্কিন কেয়ার প্রডাক্ট কেনা লাগবে না আমার চুমুতে পিম্পল,টিম্পল সব তাদের বংশ গুটিয়ে পালাবে।”
” আপনার ঠোঁটের জীবাণু… “
” কী বললি?”
উজ্জ্বল রুমুর গাল চেপে ধরল।কপাল কুচকে জেদ নিয়ে রুমুর ঠোঁটে চুমু বসালো।একে একে উজ্জ্বলের ঠোঁট ছোঁয়া ছড়িয়ে পড়ল সারা মুখে। এত ধকল সইতে না পেরে রুমু ক্লান্ত হয়ে গেল।
“যদি আমার চুমুতে জীবাণু থাকে তবে জীবাণুই ভালো।দুজন মিলে এখন থেকে জীবাণু জীবাণু খেলবো।ঠিক আছে?”
” উজ্জ্বল ভাই আপনার পায়ে ধরি আমাকে একটু ঘুমাতে দেন।আমি যদি জানতাম আপনি এমন…”
” কেমন?”
” কন্ট্রোললেস।”
” আমার যে কন্ট্রোল নেই তুই জানিস না?”
” সব ব্যপারে যে নেই তা তো জানতাম না।”
উজ্জ্বল উঠে দাঁড়াল।পড়নের টাউজারটা টেনে টুনে সারা শরীর টানটান করে বলে,
” ওকে ঘুমা।জ্বালাতন করবো না।তবে পাঁচ মিনিট সময় দিলাম জামাকাপড় পড়ে ঘুমাবি।আমি আবার কন্ট্রোল হারাতে পারি এই ক্ষেত্রে নিজেকেও নিজে বিশ্বাস করি না।”
রুমু ঠোঁট বাঁকাল।গায়ে কাথা জড়িয়ে সেও উঠে দাঁড়ালো।ডয়ার থেকে জামা নিয়ে যখনি ওয়াশরুমে যাবে উজ্জ্বল চেচিয়ে বলে,
” সেই সেই আমার বউয়ের কাছে এই জগৎ এর নায়িকারা ফেল।”
” উজ্জ্বল ভা…”
” খবরদার ভাই ডাকবি না।ভাই ডাকলে আবার বুঝিয়ে দেব আগের উজ্জ্বলের সাথে তোর এখনকার উজ্জ্বলের কি সম্পর্ক।”
রুমু চুপসে গেল।সারাটা রাত তার উপর রোলার চলেছে এখন কিছু বললে আবার চলবে।এই মুহূর্তে চুপ থাকাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
.
রুমু আর উজ্জ্বলের একটা দিন কেটে গেল ঘুমে ঘুমে।উজ্জ্বলের ঘুম ভেঙেছে কিয়ৎক্ষণ আগে ছেলেটা গোসল সেরে জলদি জলদি খাবার গরম করলো।গতকালকের সব খাবার ফ্রিজেই ছিল তাদের আর খাওয়া হয়নি।রুমে টুকটাক শব্দে রুমুর ঘুমটাও ভেঙে গেলো।মেয়েটার রক্তিম চোখ দেখে উজ্জ্বল কিছু আঁচ করতে পারলো নিজের দুষ্টুমি ভাবটা কমিয়ে স্বাভাবিক হয়ে বলে।
” যা গোসল করে আয়।ফ্রেশ লাগবে।”
রুমু উঠে বসলো কিন্তু আবার বসা থেকে শুয়ে পড়লো।সারা শরীরে অসহ্যকর ব্যথা ছড়িয়ে আছে।উজ্জ্বলের প্রতি ভীষণ রাগ জমলো তার।ঠোঁট খিঁচে হাতের কাছে থাকা চুলের ক্লিপটা ছুড়ে ফেলল উজ্জ্বলের গায়ে।
” বেয়াদব লোক রয়ে সয়ে করা যেত না!আমি কি পালিয়ে যাচ্ছিলাম।”
” আজব!যখন করলাম তুই আমাকে বারণ করেছিস?তখন তো…”
” এই চুপ!”
রুমু চেচিয়ে উঠলো তা দেখে হাসলো উজ্জ্বল।মেয়েটাকে পাঁজাকোল তুলে নিয়ে গেল ওয়াশরুমে।
” গোসল সেরে আয় খেয়ে দেয়ে ওষুধ খাবি দেখবি ভালো হয়ে যাবি।”
” যান বের হন।আবার তো বায়না ধরবেন আমার সাথে গোসল করার জন্য।”
” দেখলি এখন আমি কিছু বলেছি?তুই আমার মাথাটা ঘুরিয়ে দিয়ে সব দোষ আমার দিকে দিয়ে দিস।এখন যখন বললি গোসল আরেকবার করাই যায়।”
উজ্জ্বল নিজের গায়ে থাকা টি-শার্ট টেনে খুলে ফেললো।রুমু এমন পরিস্থিতিতে ধাক্কা দিয়ে উজ্জ্বলকে বের করল।
” আপনার মতো কন্ট্রোললেস পুরুষ মানুষ আমি আর দেখিনি।”
” দেখবি কি করে?যে পুরুষের যেখানে কন্ট্রোললেস হওয়া দরকার সে সেখানেই হয়।যেমনটা আমি হচ্ছি।”
চলবে…
উজ্জ্বল ভাইয়ের পাঠকরা একটু বেশি পচাতারা গ্রুপে জয়েন নাই।কেউ আড্ডা দেয় না।