#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ১৪]কপি করা নিষেধ।
জেদ নিয়ে বসে আছে রুমু।উজ্জ্বলের প্রতি তার রাগ কমছে না বরং বাড়ছে এই ছেলেটা কতটা বেয়াদব হলে তাকে কথায় কথায় রাগিয়ে দেয়!বৃষ্টি শেষে সূর্য্যি মামা হাসতে হাসতে তার দাপট নিয়ে আকাশটা দখল করেছে।পুঞ্জিভূত সাদা মেঘে ছেয়ে গেছে নীল আকাশ।রুমু জানলার কিনারায় বসে আছে মুখটা ফুলিয়ে।
“ডার্লিং রাগ করে না।আমার মতো বর পেয়ে কী করে রাগ করিস?”
উজ্জ্বল ফুঁ দিল রুমুর গালে।
” আমার বউ,আমার ডার্লিং,আমার জান,আমার প্রাণ রাগ করে না দেখ দেখ তুই রাগ করায় আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।”
” ঢং।”
” হ্যাঁ ঢং তাও কথা বল।
রুমু উঠে গেল রান্না ঘরে গিয়ে নিজের জন্য চা বসালো।মাথাটা ভীষণ ধরেছে রাতে ঘুমাতে পারেনি বলে মাথাটা কেমন টালমাটাল করছে।দরজার খটখট শব্দে দ্রুত দরজা খুলল রুমু।উর্মি এসেছে দেখে মেয়েটা খুশিতে জড়িয়ে ধরে অপরদিকে উজ্জ্বল বউয়ের রাগ ভাঙাতে রুমের দরজা বদ্ধ করে শাড়ি পরার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
সেন্টু গেঞ্জিটাকে ব্লাউজ বানিয়ে উজ্জ্বল প্যাঁচিয়ে শাড়ি পরলো।আঁচল টাকে চিকন করে দিয়ে মেদযুক্ত পেটটা বের করে মেয়েদের মতো হেটে রুমের বাইরে গেল।উজ্জ্বল আঁকাবাঁকা পা ফেলে রুমুর দেখা পেল রান্না ঘরে।
রান্না ঘরের দরজায় দুই হাত তুলে স্টাইল দিয়ে বলে,
” হেই ডার্লিং।”
রুমু পেছন ফিরে তাকাল।উজ্জ্বলের মেয়েলি বেশভূষা দেখে কয়েক সেকেন্ড থম মেরে পলকে হেসে উঠল।মেয়েটা হাসতে হাসতে মেঝেতে বসে যায় হাতের টান লেগে সেই সাথে চামচ স্টিলের বাটি মেঝেতে পড়ে যায়।মুহূর্তে ঝনঝন শব্দে ছুটে আসে উর্মি এবং তামিম।উজ্জ্বলের এহন রূপে তারা তাজ্জব বনে তাকিয়ে আছে।এর মাঝে রুমু চিল্লিয়ে বলে,
” সো হট সুন্দরী।”
তামিম অবাক স্বরে বলে,
” এটা কে রে!”
উজ্জ্বল পেছেনে তাকাতে বোন আর দুলাভাইকে দেখে হতভম্ব হয়ে যায়।থরথরে কাঁপতে থাকে তার পা।এটা কী হলো!আপু দুলাভাই কখন এলো!উজ্জ্বল কোন মতে শাড়িটা লুঙ্গির ন্যায় তুলে ছুটে পালিয়ে যায় নিজের রুমে।
তামিম হাসতে হাসতে বলে,
” উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতা।রুমু তোমার কপাল পুড়ল।”
.
সারাটা দিন কেটে রাত নেমেছে অথচ উজ্জ্বল রুম ছেড়ে বের হয়নি।রুমুর সাথেও কথা বলেনি।মানসম্মানের আজ রফাদফা হয়ে গেছে যেখানে উজ্জ্বলকে দেখলে সবাই সম্মানের চোখে তাকাতো সেখানে আজ সবাই হাসছে!এসব কি মানা যায়?
রুমু উজ্জ্বলের পাশে বসে হাসিটাকে চেপে রেখে বলে,
” এভাবে আর কতক্ষণ বসে থাকবেন?”
” তোর সাথে আমার কথা নাই।”
” কেন নাই?”
” মানসম্মানের বারোটা বাজিয়ে আবার বলছিস… তুই সর, সর সামনে থেকে।”
” দোষটা কি আমার?নাকি আপনার?আমি কি জানতাম আপনি এই বেশভূষায় আসবেন?”
” তুই ওভাবে না হেসে আমাকে ইশারায় বলতেও তো পারতি আপু দুলাভাই এসেছে।”
” আপনাকে এই লুকে দেখে আমার হাসি কন্ট্রোলে ছিল না বিশ্বাস করুন।আপনার হটি পেটটা যা লাগছিল না.. একটু সুযোগ পেলে আপনার হটি পেটটায় চিমটি কেটে দিতাম।”
রুমু পুনরাত হেসে ফেললো উজ্জ্বল সেই হাসির দিকে তাকিয়ে রইল দাঁত কিড়মিড়িয়ে।
” খুব হাসি হচ্ছে?দাঁড়া তোর হাসি আজ বের করবো।”
উজ্জ্বল রুমুকে চেপে ধরে গালে চুমু খেতে থাকে একটা সময় কাঁমড়ে ধরতে দাঁত খিঁচে চুপসে যায় মেয়েটা।উজ্জ্বল উঠে বসে বিজয়ের হাসি হেসে বলে,
” যা দিলাম হাসি বন্ধ করে এবার উর্মি আপুর সামনে কি করে যাবি আমিও দেখব।”
রুমু শোয়া থেকে উঠে বসে।দ্রুত আয়নায় নিজের গালটা দেখে বুঝতে পারে কামড়ের দাগ বসে গেছে এই দাগটা কমবে না বরং সময়ের তালে তালে আরো বাড়বে।
রাতের খাবার টেবিলে সবাই উপস্থিত হলেও রুমু রুমেই বসে রইল।উর্মি বেশ কয়েকবার তাকে ডেকে পাঠিয়েছে কিন্তু লজ্জায় তার আর বের হওয়ার সাহস হয়নি।শেষ পর্যন্ত উর্মির অতিরিক্ত ডাকাতিতে বের হয়ে আসলো সে।তবে মুখটা ঢেকে ফেলল ওড়নার সাহায্যে।
” একি রুমু এভাবে মুখ ঢেকেছো কেন?”
” এ..এলার্জি আপু।”
” এলার্জি হলে মুখ ঢাকতে হয়?”
“আ…আমি ঢাকি আপু।”
” কি যে বলো তুমি।দেখি কি অবস্থা।”
উর্মি গাল থেকে ওড়না টান দিতে কামড়ের দাগ দেখে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।বুঝতে পারে কি হয়েছে।
” তু..মি রুমে যাও আমি খাবার পাঠিয়ে দিব।”
উর্মি লজ্জায় মাথা নামিয়ে ডাইনিং টেবিলের সামনে আসে।উজ্জ্বলের পিঠে ধুমধাম কিল বসিয়ে বলে,
” খাবার নিয়ে রুমে যা।”
” এখানে খেলে কি সমস্যা?”
” অনেক সমস্যা।”
উজ্জ্বল চুপচাপ খাবার নিয়ে উঠে যায়।উর্মি নিশ্চিয়ই রুমুকে দেখেছে মেয়েটাকি লজ্জা পেয়েছে?
.
এলাকায় খবর ছড়িয়েছে রুমু পালিয়েছে তবে রুমু কার সাথে পালিয়েছে এই ব্যপারটা নিয়ে সবাই এতদিন জানার আগ্রহে থাকলেও বর্তমানে অনেকেই কানাঘুষা করছে উজ্জ্বলের সাথেই রুমু পালিয়েছে।উজ্জ্বল এলাকায় নেই আজ তিন দিন হয়ে গেল।এর মানে কি?নিশ্চিত উজ্জ্বল এসবে জড়িত।রাশেদের রক্ত টগবগিয়ে ফুটছে হাতের কাছে রুমুকে পেলে খু ন করতেও দ্বিধা করবে না।শত্রু পক্ষের ছেলের সাথে এই মেয়ে পালিয়েছে!কত বড় কলিজা হয়েছে মেয়েটার।উজ্জ্বলের খোঁজ লাগাতে লোক ভাড়া করেছে রাশেদ। রুমু যাকেই বিয়ে করুক ডিভোর্স করিয়ে হলেও হিমেলের সাথে বিয়ে দিয়েই ছাড়বে।রাশেদের জেদ রাশেদ কখনো অপূর্ণ রাখে না আর এই জেদটা কি করে রাখবে?
.
লেকের পাশে সারি বদ্ধ বেশ কিছু স্ট্রিট ফুডের দোকান।রুমু একটি শর্মা নিয়ে বসলো চেয়ারে।ফুরফুরে বাতাসে তার খোলা চুল উড়ে বার বার মুখে লাগছে উজ্জ্বল যত্ন নিয়ে চুলগুলো মুঠোয় পুরে খোপা বাঁধলো।
উজ্জ্বল নিজেও শর্মা নিয়ে বসলো রুমুর পাশে।এক কামড় দিয়ে কিছুটা চবন করতে মুখ কুচকে বলে,
” এই রুমু কাছে আয়।”
” কেন?”
” কানে কানে কথা আছে শুন।”
রুমু তার কান বাড়িয়ে দিল উজ্জ্বল স্বল্প স্বরে বলে,
” ট্রাস্ট মি,এই শর্মার চেয়েও তোর ঠোঁট আরো বেশি ফ্লেভারফুল।”
রুমুর কান গরম হয়ে গেল।আশেপাশে তাকিয়ে চোখ পাকিয়ে বলে,
” লজ্জা লাগে না আপনার?”
” না লাগেনা।তুই পাশে থাকলে লজ্জারা উড়ে যায়।”
” আচ্ছা ওই হিমেল সাথে আমার বিয়েটা যদি সেদিন হয়েই যেত আপনি কি করতেন?”
” এত সহজ?তুই কবুল বলার আগে এই বান্দা হাজির হয়ে যেত।”
” যদি না হতেন?”
” এই তুই খা তো।বাসর ফাসর শেষ করে নিশ্চিন্ত হয়ে গেছি তুই আসলি আউল ফাউল কথা বলতে।”
” আমি আউল ফাউল কথা বলি?”
” বলিস,খুব বেশি বলিস।”
রুমু রেগে গেল।অর্ধ খাওয়া শর্মাটা রেখেই উঠে গেল সে।উজ্জ্বল মেয়েটাকে থামাতে বলে,
” বউ রাগ করে না।আসো আসো আর কি খাবে?”
” আমি কিন্তু চার প্লেট ফুসকা একটা বার্গার খাব।”
“এসব না খেয়ে আমায় খেলেও তো পারো।”
চলবে…