#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ১৭
ভেজা চুল ঝারতে ঝারতে গানের সুর তুলল রুমু।আকাশটা আজ ঝকঝক করছে।সাদা নীল মিশে একি একাকার সৌন্দর্য!উজ্জ্বল ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে আছে রুমুর পানে।মেয়েটা সেচ্ছায় উজ্জ্বলের সামনে নিজেকে উন্মুক্ত করছে।সদ্য ফোটা গোলাপের ন্যায় স্নিগ্ধ আর আকর্ষনীয় লাগছে তাকে।উজ্জ্বল রুমুর পানে তাকিয়ে বালিশ আঁকড়ে বসে আছে বালিশের কোনা কামড়ে কিছুটা আমতা আমতা করে বলে,
” এই চুমু বউ।”
“কে যেন বলেছিল কুত্তী বউ।”
” ভুল কিছু বলেছিলাম?”
“একদমি না।”
” তাহলে?”
রুমু চুপচাপ রইল।উজ্জ্বলকে ইদানীং কম পাত্তা দিচ্ছে মেয়েটা।
” এইইই বউ, তোকে একটু ছুঁই?একটুখানি আদর করবো।”
” এক কামড়ে এত ভদ্র হয়ে গেলেন!অনুমতিও নিচ্ছেন!এখন যদি অনুমতি না দি তাহলে কি গতরাতের মতো কান্না করবেন?”
” খবরদার আমার কান্না নিয়ে মজা নিবি না।তুই জানিস না আমি আবেগ অনুভূতি কন্ট্রোল করতে পারিনা।
তবে আমার মাথায় একটা প্রশ্ন এখনো ঘুরছে তুই কি সত্যিই রাশেদের কথায় আমার সাথে এসব করছিস?”
উজ্জ্বলের কথা শুনতেই রুমুর মাথা গরম হয়ে গেল।মেয়েটা দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলে,
” আবার সন্দেহ!উজ্জ্বল আবার সন্দেহ করছেন।”
” রাশেদের কথায় আমি স্পষ্ট বুঝেছি তোদের মধ্যে কোন সাংঘাতিক পরিকল্পনা চলছে।সাবধান করছি রুমু, আমাকে ঠকানোর চিন্তা তোর মাথায় যদি কোনদিন আসেও নিজেকে বাঁচাতে হলেও এসব ঝেরে ফেলবি।”
” আমার মনে বিষ থাকলে যা করার আগেই করে দিতাম।ভেবেছিলাম সত্যিটা বলবো কিন্তু তার আগেই আপনি জল ঘোলা করলেন।আমাকে সন্দেহ করছেন,এমন ভাব করলেন আমি যেন….থাক থেমে যাই যেদিন আমার মন চাইবে সেদিন সত্যটা বলবো।”
” এই যে গলা তুলে কথা বলছিস,সত্যটা এড়িয়ে যাচ্ছিস তোর কি ধারণা উজ্জ্বল এতই সোজা?উজ্জ্বল কি এসবের জন্য কঠোর হবে না?তবে তুই ভুল।যতদিন আমি তোকে মাথায় তুলে রাখবো তোর সুখ ততদিন।যেদিন তোর কৃতকর্মের জন্য মাথা থেকে আছাড় দেব সেদিন বুঝবি এই উজ্জ্বল কি।”
রুমু ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো।কিছুটা এগিয়ে এসে তর্জনির আঙুল দিয়ে ছুঁয়ে দিল উজ্জ্বলের গাল।কিছুটা নাটকীয় ভঙ্গিমায় বলে,
” এই যে প্রতিবার রোমান্সের উচিলায় আমায় কোল থেকে বিছানায় ছুঁড়ে ফেলেন এটা কি আছাড় নয়?তবুও এখন আবার থ্রেট দিচ্ছেন আছাড় দেবেন আপনার তো সাহস কম নয়।”
” আমার সিরিয়াস কথায় তুই এসব বলে মুড পালটে দিস কেন বলতো?”
রুমু সরে দাঁড়ায়।এই যে উজ্জ্বল গলে যাচ্ছে এই রূপটা দেখতে তার ভীষণ ভালোলাগে। উজ্জ্বল উঠে দাঁড়ায় তার এলোমেলো চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে দেয়।
” চুমু বউ একটা প্রশ্ন করবো?”
” হুম।”
” তুই আমাকে সত্যি ভালোবাসিস তো?”
” ভালোবাসা কারে কয়?”
” জানিনা।”
“আমিও জানিনা।”
” তুই এমন কেন?”
” কেমন?”
“আমাকে বড্ড জ্বালাচ্ছিস।”
রুমু প্রত্যুত্তর করে না।উজ্জ্বলের অনাবৃত দেহে তাকিয়ে বুকে হাত রাখে।কামড়ের অংশটায় দাগ পড়ে আছে।রুমু সেই দাগে ঠোঁট ছোঁয়ায়।উজ্জ্বল সেই সুযোগটা কাজে লাগায় রুমুর কোমড়ে হাত ঠেকিয়ে বুকের সাথে মেশায়।
” শ্বশুর বাড়ি যাবি?”
” কেন যাব না?”
” মানসিক ভাবে প্রস্তুত?একটা ঝড়ের কবলে পড়বি কিন্তু।”
” আপনি আছেন তো।”
” আমি ততক্ষণ পারবো যতক্ষণ তুই আমার সহ যোদ্ধা থাকবি।আমার এত যুদ্ধে তুই যদি না থাকিস তবে আমার পরাজয় নিশ্চিত।”
রুমু কথা বাড়ায় না।উজ্জ্বলের বুকে মাথা গুটিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
.
সকালের নাস্তায় তামিমের দেখা নেই ছেলেটা অফিসে চলে গেছে।উর্মি রুমুর অপেক্ষায় ছিল এতক্ষণ সবাইকে খাবার বেড়ে সেও বসলো।উজ্জ্বল আজ রুমুর পাশে নাস্তা খেতে বসেছে ব্যপারটা দেখে উর্মি বলে,
” তোমাদের বনিবনা হয়েছে?গ্রেট।”
উজ্জ্বল বিরস মুখে বলে,
” আমার বউটাকে তুমি চালাক বানাচ্ছো আপা।তুমি যেমন দুলাভাইকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাও সেও এমন করছে।”
” তোরা ব্যাডা জাত খুব ভালো?চুপচাপ খা আরেকটা কথা শুন,আম্মা ফোন করেছে চাচি নাকি মামলার ধমকি দিয়েছে।”
” তো?মামলা টামলা করলে আমার কী?আমি কাল যাচ্ছি এলাকায়।একা যাব না বউ নিয়ে যাব।”
“সর্বনাশ এলাকায় তবে আ গু ন জ্বলবে।”
” হুহ।ব্যবস্থা করে যাব।এইজন্যই তো তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠলাম হাতের কাজ শেষ করতে হবে।খেয়ে দেয়ে আমি বের হব।”
” সেকি আমি তো ভাবলাম শপিং করতে যাব।বিয়ের পর রুমুকে কিছু দেওয়া হয়নি তোর ভাইয়া বলল তোদের নিয়ে যেতে।”
” শপিং!মানে ঘরের বাইরে যেতে হবে!না না রুমুকে বের করবে না রিস্ক আছে।”
” কিসের রিস্ক?ওর ভাই এখানে আসবে কোথা থেকে?”
” আসতেও পারে।রাশেদকে চেনো না।সে বড্ড সেয়ানা লোক বুঝলে।”
” তুইও চল আমাদের সাথে।”
” আমি যেতে পারবো না কাজ আছে।”
” ঠিক আছে তাহলে আমরা একাই যাই।”
” না না।একা যাবে না রাশেদের সাথে যদি দেখা হয়ে যায় তখন কি করবে?ভালোর জন্য বলছি বের হইও না।”
” কিছু হবে না।তুই ফাও চিন্তা করিস না তো।”
উজ্জ্বল অনেকবার বারণ করল কিন্তু উর্মি কথা শুনল না।উজ্জ্বল নিজ কাজে বেরিয়ে গেল অপরদিকে রুমু এবং উর্মি দুজনে বেরিয়ে গেল শপিং এর উদ্দেশ্যে।
রুমুর জন্য কিছু গোল্ডের জুয়েলারি কিনে শাড়ি কেনার উদ্দেশ্যে অন্য আরেকটি দোকানে যায়।দুজনে কেনাকাটায় এতটাই মগ্ন ছিল রাশেদের ভয়ে সতর্ক থাকার কথা ভুলেও গেল।
.
দ্বিপ্রহরে রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে থরথর করে কাঁপছে উর্মি মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলে ফেলেছে।উজ্জ্বল দ্রুত বাইক রেখে উর্মির কাছে আসল,
” কিরে আপা রুমু কোথায়?”
” আ..আমরা রাস্তা পার করবো বলে সামনে এগিয়ে যাচ্ছিলাম রুমু আমার পেছনেই ছিল হঠাৎ মেয়েটা গায়েব।আধাঘন্টা যাবৎ খুঁজে যাচ্ছি আমি ওঁকে পাচ্ছি না উজ্জ্বল।”
উজ্জ্বলের বুকটা কেঁপে উঠল।ভয়ে শরীরটা তারও কাঁপছে।আশেপাশে তাকিয়ে দেখল কোন সিসি ক্যামেরা আছে কি না, কিন্তু নেই।
” তুমি ফোন দিয়েছিলে?”
” হ্যাঁ কিন্তু রুমুর ফোন বন্ধ।”
” আমি বলেছিলাম বের হইও না।সব কাজে বাড়াবাড়ি।”
” আমি বুঝতে পারছি না।রুমুকে কোথায় পাবি?”
” জানি না।মাথা কাজ করছে না।কি করবো আমি।”
রুমুকে খোঁজার উদ্দেশ্যে সারটাদিন কেটে গেল।সন্ধ্যার সময় উজ্জ্বল পুনরায় দিপুকে ফোন করল ,রাশেদের বাড়ির আশেপাশে উজ্জ্বল আগে থেকেই লোক লেগে ছিল অথচ আশ্চর্যের বিষয় কেউ রুমুকে দেখেনি।এমনকি কাজের মহিলা রহিমাও জানায় রুমুদের বাড়ির পরিবেশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক আগের মতো।তাহলে রুমু কোথায় গেল?
চলবে…