#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ২]
বলিষ্ঠ দেহের আদলে ক্রমশ গুটিয়ে যাচ্ছিল রুমু।অনেকক্ষণ যাবৎ মোচড়ামুচড়ি করেও নিজেকে ছাড়াতে ব্যর্থ।পুরুষালি শক্ত হাতটা মুখ চেপে রাখতে দমটাও আজ নিমিষে ফুরিয়ে যাবে যেন।রুমুর মোচড়ামুচড়ি সহ্য করতে পারলো না অজ্ঞাত ব্যক্তিটি।পেট চেপে শূন্যে তুলতে ভয় দ্বিগুন বাড়লো রুমুর।মেয়েটা এবার নিজেকে বাঁচাতে দেহের সব শক্তি দিয়ে কামড় বসালো অজ্ঞাত ব্যক্তির হাতে।তীব্র ব্যথায় মুহূর্তে বিবশ করে দিল অজ্ঞাত ব্যক্তির হাত,ব্যথার দাপটে হাত ঝাঁকি দিতে কোল থেকে ধপাস করে নিচে পড়লো রুমু।
” কিরে এগুলো তোর দাঁত নাকি ব্লেড!”
পরিচিত কণ্ঠে চমকে মাথা তুলে তাকালো রুমু।আরে এত তো উজ্জ্বল ভাই।উনি এখানে কী করছেন?এতটা দুঃসাহস দেখিয়ে এখানে কেন আসলেন?মেয়েটা অবাক চাহনি নিক্ষেপ করে বলে,
” উজ্জ্বল ভাই আপনি?”
” আগে বল তোর দাঁতের এত ধার কেন?আর একটু হলে আমার হাতের মাংসপিণ্ড তোর মুখে চলে যেত।বুঝতে পেরেছি বেশ ভালো করে বুঝতে পেরেছি, বিয়ের পর আমার হসপিটালের বেডেই রোমান্স করতে হবে।বলা তো যায় না কখন কি হয়।”
চোখ পাকিয়ে উজ্জ্বলের দিকে তাকালো রুমু।এই লোকটা অসভ্য বেয়াদব মেয়াদহীন মস্তিষ্কের লোক।কি বলে কি করে নিজেও জানে না।
” আপনি এই ছাদে কি করছেন?আব্বা,ভাইয়া দেখলে আপনার সাথে ঠিক কি হবে আপনি ভাবতেও পারছেন না।”
” ভাবতেও চাইছি না ডার্লিং।”
” আমি এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি চাচ্চুর কাছে গিয়ে আপনার নামে বিচার দিব এসব আর মানা যাচ্ছে না।”
” তোর চাচ্চুকে আমি ভয় পাই?”
” তাহলে বলুন আপনি কাকে ভয় পান আমি তার কাছে যাব।”
উজ্জ্বল শব্দ করে হাসতে গিয়েও থেমে গেলো।হাটু ভেঙে বসলো রুমুর মুখোমুখি। মেয়েটার হাত পা পরখ করে বলে,
” কোথায় ব্যথা পেয়েছিস?”
” বলবো না।আপনার সাথে আমার জরুরি কথা আছে।”
” বলে ফেল।”
” মাহমুদকে মে রে ছে ন কেন?”
” এসব কথা এখানে বলতে আসিনি আমি।”
” উজ্জ্বল ভাই এবার কিন্তু একটু বেশি বাড়াবাড়ি হয়েছে।ছেলেটাকে একদম হসপিটালে শুইয়ে দিলেন।ওর শার্ট দেখে আতঁকে উঠেছি আমি।আপনি কি মানুষ?”
“ওর ডিম দুটো ভেঙে দিলে বেশি শান্তি পেতাম।”
” ডিম! কিসের ডিম?মাহমুদের ডিম মানে?”
উজ্জ্বল নিশব্দে হাসে।রুমুর প্রশ্নবিদ্ধ চাহনি তাকে বেশ মজা দিচ্ছে।
” তোকে বলেছিনা প্রেম করিস না।তুই তো আমার বউ হবি তাহলে কেন এ পাতে ও পাতে মুখ দিচ্ছিস?”
” আগের দিন বাঘে খাইছে আপনি জানেন না?”
” জানতে চাই না।সৈয়দ উজ্জ্বল আনিস এক কথার ছেলে।তোর আব্বাকে যখন শ্বশুর ডেকেছি তখন পার্মানেন্ট শ্বশুর বানিয়েই ছাড়বো।এই আমি বলে দিলাম।”
” আপনার কথা আপনার কাছে রাখুন।এখানে কী করে আসলেন উজ্জ্বল ভাই?”
” তোর বাড়ির আমগাছ আর আমার বাড়ির আমগাছ যে প্রেম করছে জানিস?তারা দুইজন দুজনের মাঝে ঢাল পালা ছড়িয়ে দিব্বি প্রেম করছে।সেই গাছ বেয়ে এসেছি”
” ভাইয়া বলেছে আপনাদের গাছের ঢাল কেটে দেবে।আপনাদের গাছ কেন এলো আমাদের সীমানায়।”
” তোর ভাই আর তোর মা দুইজনের মনে হিংসায় ভরা বুঝলি?না হলে গাছের সাথে কেউ এমন করে!অবলা গাছের কি দোষ?”
রুমু চুপসে যায়।এ কথা মিথ্যে নয় তবুও আপন বলে সত্যটা সে দিব্যি হজম করে নেয়।উজ্জ্বল রুমুকে টেনে দাড় করায়।মুখভঙ্গিমা পালটে আদেশ সুরে বলে,
“এখান থেকে গিয়ে তাড়াতাড়ি খেয়ে ঘুমিয়ে যাবি।তোর ভাইয়ের অপেক্ষায় থাকবি না।আর হ্যাঁ রুমের দরজা আটকে দিবি।”
” কেন?”
” কেন বলেছি সেটা তোর না বুঝলেও চলবে তবে যা বলছি তাই করবি।”
” যদি না করি?”
” তবে একটাও চড় এদিক সেদিক হবে না একদম গালের উপর দিয়ে যাবে।”
” কিহ!উজ্জ্বল ভাই আপনি আমাকে মারবেন!”
” আমি কেন মারবো?তোকে মারার লোকের অভাব আছে?যে গালে এখনো চুমু খেতে পারিনি সেই গালে মারবো?এতো আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনা।”
” খালি আপনার বাজে কথা।”
” বাজে কথা নয় সত্যি।যেদিন বিয়ে করে নিয়ে যাব সেদিন বুঝবি।কত বছর হয়ে গেল তুই আমাদের ঘরে যাস না তোর ছোট দুই পায়ের দৌড় ঝাপ আমরা সবাই মিস করি।আমার রুমে ঢুকে যে বই ছিড়তি মনে আছে?কতবার মারতে গিয়েও মারিনি তোকে মারলে আমি নিজেই শান্তি পাব না।”
অতীতের ধূলো জমা স্মৃতি আবার স্মরণে আসতে মুখটা গোমড়া হয় রুমুর।কত সুন্দর ছিল সেই দিনগুলো।সৈয়দ বাড়ি জুড়ে ছিল হাসি আনন্দ মাতামাতি।সেই সময়টাতে সুখের পাশাপাশি দুঃখটাও ভাগ করে নিতো সকলে অথচ কালবৈশাখির ন্যায় মানুষ্য ঝড়ে সৈয়দ বাড়ির মাঝ উঠানে দেয়াল গড়ে তোলে।আর সেচ্ছায় মুখ দেখাদেখি করেনি দুইভাই মানে সৈয়দ বাড়ির কর্তারা।এত বছরের ঝামেলাকে স্মরণে রেখেও উজ্জ্বল রুমুকে পাওয়ার অদম্য মনোবলে দিনগুনে।
এক ছটাক শীতল বাতাসে ভাবনার দুয়ার থেকে বেরিয়ে আসে রুমু।উজ্জ্বল তার দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে।যতদিন যাচ্ছে ততই উজ্জ্বলের পাগলামো বাড়ছে।
” রুমু কাল থেকে মাহমুদের সাথে কোন যোগাযোগ করবি না।এবার শুধু মে রে রক্তাক্ত করেছি পরেরবার হাত পা ভাঙবো কথা দিলাম।”
” আপনি এসব করে কী হবে?ঠিকি আমি আব্বার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করবো।”
” তোর বাপের পছন্দের ছেলে আমি জানিস না?ছোট বেলায় আমাকে মেয়ে জামাই বলে ডাকতো।সেই ডাক আমি কিছুতেই বিফলে যেতে দিব না।”
” দেখা যাবে।”
ছাদে অন্ধকার মাড়িয়ে বিদ্যুৎ এর দেখা মিললো।চারদিকে আলোকিত হতে সতর্ক হলো রুমু।
” উজ্জ্বল ভাই এখান থেকে জান।কেউ দেখে ফেললে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।ভাইয়া ওঁৎ পেতে আছে কখন সুযোগ পাবে আর আপনাকে মা র বে।”
” এই উজ্জ্বলকে মারার মতো সাহস তোর ভাইয়ের হয়নি।চলে যাব একটা চুমু দে।”
“অসভ্য।”
” অসভ্যের বউ।”
” উফ।”
“উফফ।”
” উজ্জ্বল ভাই।”
” রুমু বউ।”
উজ্জ্বলের দিকে সরু চোখে তাকিয়ে রয় মেয়েটা।এই ছেলে দিন দিন একটু বেশি জ্বালাচ্ছে।
” এভাবে তাকায় না ডার্লিং বুকে লাগে।”
” যাবেন আপনি?”
” রুমু দে একটা চুমু।”
” আমার নামের মান সম্মান ঘেটে ঘ করে দিচ্ছেন আপনি।”
রুমুর রাগান্বিত মুখটা দেখতে উজ্জ্বল হাসে।দ্রুত রুমুকে হেঁচকা টেনে কপালে একটা চুমু খায়।মেয়েটা অবাক হয় রাগ দেখিয়ে কিছু বলার আগে উজ্জ্বল ছাদ পেরিয়ে গাছে উঠে যায়।
.
উজ্জ্বলের কথায় আজ পাত্তা দিল না রুমু।তাকে বলেছিল রুমের দরজা বন্ধ করে যেন ঘুমিয়ে থাকে অথচ মেয়েটা বসার ঘরে ভাবিকে নিয়ে টিভি দেখছে।এখন রাত প্রায় এগারোটা।কলিং বেল বাজতে দরজা খুলে দেয় রুমুর ভাবি আনিকা।রুমুরা ভাই বোন দুইজন।বড় ভাই রাশেদ।বয়স ত্রিশের কোঠায় পৌঁছে গেছে।বাবার ব্যবসা দেখাশোনা এবং কীভাবে আরো উন্নত করা যায় সেই প্রয়াসে মত্ত থাকে ছেলেটা।
বসার ঘরে এসে রুমুকে দেখতে পেয়ে সরু চোখে তাকালো রাশেদ।হাতের সিলভার রঙের ঘড়িটা খুলে দিল আনিকার হাতে।
রিমোটের সাহায্যে টিভি অফ করে রুমুর মুখোমুখি বসলো সে।
” তোর পড়া নেই রুমু?”
“পড়া শেষ।”
ডাহা মিথ্যা কথা অনায়াসে বলে ফেললো মেয়েটা।সন্ধ্যার পর সে আজ পড়তে বসেনি।আনিকা আড়চোখে তাকালো, সে জানে রুমু আজকে পড়তে বসেনি এই সত্য কথা রাশেদ জানলে বেজায় রেগে যাবে।
” রুমু তোর ফোনটা কোথায়?”
কলিজায় মোচড় দিল মেয়েটার।ভাইয়া কখনো ফোন এভাবে চায় না তবে আজ কেন?
” ক..কেন ভাইয়া?”
” কৈফিয়ত দেওয়া লাগবে তোকে?তুই যে কি কি করিস কি ভেবেছিস আমি খবর পাব না?”
আচমকা রেগে গেল রাশেদ।প্যান্টের বেল্ড খুলে হাতে তুলে তেড়ে যায় রুমুর দিকে।ঘটনাটা এতটাই তাড়াতাড়ি ঘটে যায় রুমু হতবাক স্তম্ভিত।
রাশেদকে দ্রুত বাধা দেয় আনিকা।রাশের মেজাজ সর্বদা একটু বেশি গরমে থাকলেও কখনো মারামারির দিকে যায়নি।বিয়ের এত বছরেও স্ত্রীর গায়ে হাত তুলেনি।তাহলে আজ একমাত্র বোনকে এভাবে মারতে আসার কারণ কী?রাশেদের গলার আওয়াজে ছুটে আসেন তার মা রাবেয়া এবং বাবা সৈয়দ ইসমাইল।আনিকাকে সরিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করলো রাশেদ।একটি ভিডিও অন করে ফোন বাড়িয়ে দিল ইসমাইলের দিকে।
ভিডিওটি দেখে কপালে ভাজ পড়ে যায় রাবেয়া এবং ইসমাইলের।রাশেদ আচমকা রুমুর গালে চড় বসালো।মুহূর্তে অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো সকলে।
” এই চড়টার কথা যেন আজীবন তোর মনে থাকে।তুই সৈয়দ বাড়ির মেয়ে হয়ে এসব করিস!টিকটকে নাচানাচি করিস!তুই আমার বোন আমার বোন হয়ে এতটা লিমিটক্রস করার সাহস তুই কি করে পেলি?তোর বুক কাঁপলো না? এই রাশেদ যদি জানে তোর কি হবে বেয়াদব মেয়ে তোর ভাবনায় এলো না?তুই এক্ষুনি এই টিকটক একাউন্ট ডিলেট করবি।”
ইসমাইল ছেলেকে টেনে সরিয়ে আনলেন।
” ব্যপারটা ঠান্ডা মাথায় হ্যান্ডেল করা যায়।এতটা চড়াও হচ্ছো কেন?”
” বাবা তোমার আশকারায় ও এতটা সাহস পেয়েছে।আগেই বলেছিলাম ফোন কিনে দিও না।পাড়ার একটা ছেলে আজ আমাকে ভিডিওটা দেখালো বিশ্বাস করবে না আমার মাথায় সাথে সাথে আগুন জ্বলছিল।তোমার মেয়ে শুধু কি এসব করছে?সে প্রেমও করছে।একটা না একেরপর এক তার ক্রমাগত চলছে।আজ কলেজে যায়নি কেন জিজ্ঞেস করো।আমি আজ ওর কলেজে গিয়েছি ওর নামে খোঁজ নিয়েছি গত এক্সামেও তিন সাবজেক্ট ফেল করেছে সে বাসায় জানিয়েছে?বাসার স্যার কি করেন এসব দেখেন না?তার প্রত্যেকটা ক্লাসমেট থেকে আমি খোঁজ নিয়েছি সে আর ঠিক কি কি করে।”
রাশেদ থামলো।ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে হেঁচকি উঠে গেছে রুমুর।বাম গালে কেউ যেন বড় পাথর নিক্ষেপ করেছে।নিজেকে সামলে নেওয়ার আগে এবার ক্ষেপে গেলেন রাবেয়া।বাম গালে পালটা চড় পড়লে ছিটকে পড়লো সোফায়।আনিকা দ্রুত শাশুড়ীকে বাঁধা দিল।রাবেয়া রাগান্বিত স্বরে বলেন,
” বলেছিলাম বিয়ে দিয়ে দাও শুনলে না কেউ আমার কথা।
রাশেদ সহমত জানিয়ে বলে,
“ভেবেছিলাম ইন্টার শেষ করুক কিন্তু আর নয় আমার বন্ধুর সেই কাজিনরা তাড়া দিচ্ছে আমি তাদের বুঝিয়ে শুনিয়ে রেখেছি।আজকেই তাদের জানাবো আমরা রাজি যতদ্রুত সম্ভব এই অসভ্যটাকে নিয়ে বন্দি করুক।”
” তারা বিদেশ থেকে কবে না কবে আসবে।তার থেকে ভালো তোর খালতো ভাই নিরবের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দে।তোর খালা আমাকে…. “
রাবেয়ার কথা শেষ হওয়ার আগে খেপে যায় রুমু।রক্তিম চোখ মুখে হিসহিসিয়ে বলে,
” তোমার বোনের ছেলেকে আমি বিয়ে করবো না।গলায় ছুরি ধরে হুমকি দিলেও করবো না।ওই ইতরকে বিয়ে করার চাইতেও ফাঁ সি দেওয়া অনেক ভালো।”
রাবেয়া কিছু বলার আগেই রাগ দেখিয়ে প্রস্থান করে মেয়েটা।রাগে জেদে ভয়ে তার শরীর কাঁপছে।
সাথের বন্ধুদের টিকটক করতে দেখে সেও করছে বলা যায় নেশা তৈরি হয়েছে।যদিও এর আগে তিনটা একাউন্ট উজ্জ্বল উড়িয়ে দিয়েছে।উজ্জ্বল কখনো চায় না রুমু এসবে জড়িয়ে যাক।কিন্তু উজ্জ্বলকে সর্বদা রাগিয়ে দিতে বেশ মজা পায় মেয়েটা তাইতো এসব দিকে আরো এক ধাপ এগিয়েছে সে।
এত এত প্রেম করা ছেলেদের সাথে বন্ধুত্ব করা এসব করার মূল উদ্দেশ্য উজ্জ্বলকে রাগিয়ে দেওয়া।উজ্জ্বলের সেই রাগান্বিত, হিংসাত্মক মুখটা দেখতে রুমুর যে বেশ শান্তি লাগে।ছোট বেলা থেকে উজ্জ্বলের যারপরনাই পাগলামো গুলোতে সে অভ্যস্ত এই পাগলটাকে ক্ষেপিয়ে যে বেশ মজা পায় সে।
.
রুমুর নাম্বার বন্ধ পেয়ে চিন্তায় মাথা ধরে এলো উজ্জ্বলের।মেয়েটার উপর দিয়ে জানি কোন ঝড় গেল।রাশেদ যে রুমুর টিকটকের ব্যপারে শাসন করবে এটা উজ্জ্বল আগেই জানতো তাই অগ্রিম কিছুই জানায়নি রুমুকে।এই মেয়ের একবার শিক্ষা হওয়া উচিত অতি বাড় বেড়েছে।
উজ্জ্বল মাঠের একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে রুমুর অপেক্ষায়।উজ্জ্বল অর্নাস ৩য় বর্ষের ছাত্র।একটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে সে।অপরদিকে রুমু একই প্রতিষ্ঠানের ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছে।মাঠের একপ্রান্তে ভার্সিটি ভবন অপরপ্রান্তে কলেজের ভবনগুলো।তাই রুমুর সাথে উজ্জ্বলের দেখা হওয়া কঠিন কিছু নয়।
গেট দিয়ে মাক্স পড়া রুমুকে দেখে ভ্রু কুচকে যায় উজ্জ্বলের।এই মেয়েতো মাক্স পড়ে আসে না তবে আজ কেন?উজ্জ্বল এগিয়ে যায় রুমুর হাত টেনে নিয়ে যায় এক কোনে।
” কিরে মাক্স পড়লি কেন?”
” কাল আপনি সবটা জেনেও আমাকে বললেন না কেন উজ্জ্বল ভাই?”
” সতর্ক করেছিলাম তো।আমার কথা শুনিসনি।”
” এভাবে কেউ সতর্ক করে?আমাকে জানিয়ে রাখলে কি হতো?”
উজ্জ্বল প্রত্যুত্তর না করে রুমুর মাক্স নামিয়ে দিল।মেয়েটার বাম গালে দু’আঙুলের ছাপ স্পষ্ট ঠোটের কোন কেটেছে।উজ্জ্বলের বুকটা কেঁপে উঠলো।রুমুর গাল ছুঁইয়ে ধমক সুরে বলে,
” সবকিছুতে তোর পাকনামো।বলেছিলাম তো ঘুমিয়ে যাবি তাহলে এমন হতো না।আর এই শিক্ষাটা তোর দরকার ছিল অতি বাড় বেড়েছিলি।”
” এবার আপনিও মারুন।মে রে ফেলুন আমায় সকলে মিলে।”
রুমুর চোখ ঝাপসা হয়।কান্না আটকানোর বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সে।
” খেয়ে এসেছিস?”
” যে মা র টা খেয়েছি আর কিছু খাওয়ার প্রয়োজন নেই।”
” চল আমার সাথে।আগে পেট পুরে খাবি তারপর ক্লাসে যাবি।”
” খাব না আমি।ছাড়ুন আমার হাত।”
” চুপ কর।”
উজ্জ্বল টেনে নিয়ে গেল রুমুকে।ছেলেটার শক্ত হাতের সাথে কিছুতেই পেরে উঠছে না সে।
” উজ্জ্বল ভাই ছাড়ুন।এবার আপনিও কি মা র বে ন?কি খাওয়াবেন মা র?”
উজ্জ্বল চুপচাপ হাটতে থাকে।রুমু পুনরায় হাত ঝাকি দিয়ে বলে,
” কি হলো বলুন কি খাওয়াবেন?”
” আমাকে খাওয়াবো।খাবি?”
#চলবে…