#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ৩১ ]কপি করা নিষেধ
নগ্ন দেহের ভাজে নিজেকে আড়াল করেছে রাশেদ।বাইরে ঝমঝম বৃষ্টি ঝরছে প্রলয়কারী ঝড়ে এক্ষুণি টিনের চালটা যেন ছিদ্র হয়ে যাবে।এই বুঝি বাতাসের তান্ডবে উড়ে যাবে ঘরের চাল।থেকে থেকে আকাশের বাজ পরিবেশটাকে আরও দুর্বোধ্য করে তুলছে।অনৈতিক সম্পর্ক আর অনৈতিক ছোঁয়া দুটোকেই প্রশ্রয় দিচ্ছে সে।একে অপরের কামুক চাহিদা পূরণে ব্যস্ত বৃষ্টির ঝমঝম শব্দের সহিত মেয়েটির শীৎকার ধ্বনি মিশে একাকার।আশেপাশের দূর দূরান্তের কেউ তো জানেই না এই ছোট্ট ঘরে কি লীলাখেলা চলছে।আদৌ জানার কথা না এই রাতে ঝড়বৃষ্টি মাথায় করে অতি দরকার ছাড়া কে বা বের হবে?
” আস্তে ব্যথা লাগে।”
তীব্র ব্যথায় কুঁকড়ে বলল মেয়েটি।রাশেদ মুখ তুলে তাকায়।অন্ধকারে হারিকেনের আলোয় দেখতে পায় মেয়েটির কামুক চাহনি।দাঁতে দাঁত চেপে হাসল সে রসিকতার স্বরে পুনরায় প্রশ্ন ছুড়ল,
” কি লাগে?”
” বুঝেন না?ব্যথা লাগে।”
পুনরায় হাসল রাশেদ।মেয়েটির কথা অগ্রাহ্য করে বলিষ্ঠ হাতের সাহায্যে চেপে ধরল এক দলা মাংস পিন্ড।মুহূর্তে ব্যথায় দাঁতে দাঁত খিঁচে চুপসে গেল মেয়েটি।
” কিরে সুন্দরি চুপ কেন?”
” ছাড়েন তো।”
” আজ রাত কি ছাড়া যাবে?ছাড়ার মতো রাত না।”
” বাড়ি ফিরবেন না?”
” বৃষ্টি দেখিস না?এই রাতে বের হব না।”
” আপনার বাবারে কি জবাব দিবেন?”
” আগে সকাল হোক তারপর ভাবা যাবে।”
রাশেদ উঠে বসল।খাটের পাশে থাকা টেবিল থেকে মদের বোতলটি নিয়ে সম্পূর্ণ মুখে পুরে নিল।মেয়েটি আশাহত চোখে তাকিয়ে রয় রাশেদের পানে এই লোক মদ কবে ছাড়বে?এসব ছাইপাশ গেলা কি খুব দরকার?মেয়েটির নাম ময়না ইদানীং রাশেদ যার কাছে এলে নিজের সুখ খুঁজে পায় মানসিক শারিরীক তৃপ্তি পায় এই সেই মেয়ে।ময়না সাহস নিয়ে রাশেদের হাত থেকে মদের বোতল ছিনিয়ে নেয়।
” কবে ছাড়বেন?আর কতবার বলব বলেন তো।”
” বোতলটা শেষ করতে দে।”
” নেশা ছাড়েন রাশেদ।”
” তোর নেশা বড় নেশা বুঝলি।”
” বোঝা লাগবে না।এই নেশা আমার এক সংসার ভাঙছে আমি আর চাই না আপনারে হারাতে।”
রাশেদ শব্দ করে হাসল কোমড় জড়িয়ে কাছে টানল ময়নাকে।মেয়েটার শরীর থেকে কাথা সরিয়ে নগ্ন করে জড়িয়ে ধরল বুকের মাঝে।
” বোকা ভয় পায় না।”
“আমরা বিয়ে কবে করব?”
” আগে তোর সতিনরে বিদায় করি।”
” কবে করবেন?”
” এত তাড়া কেন তোর?আমারে কি সন্দেহ করস?”
” না না একদম না।”
” তাহলে?সবকিছুর সুযোগ আর সময় আছে।”
” কিন্তু আর কতদিন আপনার সাথে রাত কাটাব?এলাকার মানুষ জানলে কি হবে ভাবতে পারছেন?ভাগ্যিস কেউ দেখে না যদি দেখে ফেলে?তাছাড়া দাদি তাড়া দিতাছে।”
” তোর দাদিরে বলবি আর কয়েকদিন তারপরেই তোরে আমার ঘরে তুলব।বুড়ি আজ বাড়ি না থাইকা বেশ ভালোই হইছে মন মতো থাকা যাচ্ছে।”
” দাদি বারণ করছে আপনার সাথে আর যেন শারিরীক মেলামেশা না করি।”
” তোর দাদি বলছে?”
“হু।”
” বুড়ির গলা কাইট্টা কুত্তারে খাওয়ামু।”
কিড়মিড়িয়ে কথাটি বলল রাশেদ।ময়না ভয় পায় কথা ঘুরাতে রাশেদকে পুনরায় কাছে টেনে নেয়।রাশেদ ভ্রমে পড়ে যায় ময়নার শরীরে সুখ খুঁজতে ব্যস্ত সে।রাশেদের এলাকার কিছুটা দূরেই ময়নার বাড়ি মেয়েটার স্বামী মাত্র চার মাস আগেই তাকে তালাক দিয়েছে তার প্রথম স্বামীও নেশা জুয়ায় আসক্ত।মায়ার মা ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করে সেখানে উনার নতুন সংসার হয়েছে।ময়না এখন দাদির সাথেই থাকে।অন্যের সংসার ভেঙে মায়া যে সংসার গড়তে স্বপ্নের জাল বুনছে এ যে অন্যায় আবদার তা সে জানে।এই জানাতেও তার বিবেকে বাঁধে না কেননা নিজ স্বার্থ আগে রাশেদের মতো টাকার মেশিনকে বিয়ে করলে তাকে আর দরিদ্রতার বশে থাকতে হবে না।
.
ঝিরঝির বৃষ্টি পড়ছে কাচের দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে রুমু।রেস্টুরেন্টের বাইরে ছোট্ট একটা পুল করা হয়েছে সেখানে রাখা হয়েছে রঙিন মাছ এবং জলজ উদ্ভিদ সেই সাথে ফুটে আছে কিছু বড় বড় পদ্ম ফুল।রেস্টুরেন্টের এক কোনায় করা হয়েছে ফোয়ারা উচু স্থান থেকে গড়িয়ে পড়ছে পানি দুইধারে বেশ কিছু গাছ এবং পাথর।কৃত্রিম এসব কিছুতে অন্যরকম শান্তি খুঁজে পায় রুমু।হাতে থাকা কফির কাপটা আচমকা টেনে নিল উজ্জ্বল সেই কাপটায় চুমুক বসিয়ে তৃপ্তির শব্দ তুলল।
” ডার্লিং একা বসে কেন?”
” আমি আমার ডার্লিংকে পাহারা দিচ্ছি এখানে মেয়েদের উৎপাত একটু বেশি তো তাই।”
” গুড।কিছু খাবে?”
” ভালো লাগছে না।”
” কেন?”
” বাড়ি যাব এখানে এসেই আটকে গেলাম।সকালে রোদ দেখে যা খুশি হয়ে এলাম এখানে এসেই নামলো বৃষ্টি।নেমেছে তো নেমেছেই থামার নাম নেই।”
” দুপুর হয়ে এসেছে এখান থেকে খেয়েই যেও।”
” আচ্ছা দেখি।তুমি…”
রুমু কথা শেষ করার আগেই উজ্জ্বলের কাছে এসে দাঁড়ায় একটি মেয়ে।তার হাস্যোজ্জ্বল চাহনি উজ্জ্বলকে কিছুটা বিব্রত করে মেয়েটা কি তাকে চেনে?কই সে তো চিনে না।অবশ্য তার গান অনলাইনে শুনে অনেকেই তার সাথে রেস্টুরেন্টে আসে দেখা করতে আজকাল পথে ঘাটে দেখলেও উজ্জ্বলকে তার শুভাকাঙ্ক্ষীরা চিনে ফেলে।
” ভাইয়া আপনি উজ্জ্বল না?”
” জি।”
” আপনার কণ্ঠ বেশ মধুর।আমার ভীষণ ভালো লাগে।”
” ধন্যবাদ আপু।”
” আপনার রেস্টুরেন্টেটাও অনেক সুন্দর বর্তমানে সবার মাঝেই হাইপ তুলেছে।”
” জি সবি আপনাদের সাপোর্ট।”
মেয়েটা কৌতূহল চোখে রুমুর পানে তাকাল।
” আপনার ওয়াইফ না?”
” জি।আমার ওয়াইফ রুমু।”
“মাশাআল্লাহ আপনাদের একসাথে দারুন লাগে।”
” ধন্যবাদ।”
মেয়েটা আরও কিছু কথা বলে নির্দিষ্ট সিটে গিয়ে বসল।বৃষ্টি থেমেছে রুমু দ্রুত বাড়ির যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল।
উজ্জ্বল বলেছিল এগিয়ে দেবে তবে রুমু বলল কাজে আছে কাজেই থাকুক।রেস্টুরেন্টের বাইরের রোডটা প্রধান সড়ক বাস সিএনজির ছড়াছড়ি।রিক্সার জন্য দশ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকেও রিক্সা পেল না সে যাও একটা পেল বিশ টাকার ভাড়া চেয়ে বসল পঞ্চাশ টাকা।ঝিরঝির বৃষ্টি আবার শুরু হয়েছে বাঁধ্য হয়ে যখনি রেস্টুরেন্টে ফিরবে তখনি তাকে ডেকে উঠল কেউ।
” ওই রুমু।”
চকিতে নজর ঘুরাল সে।চেক শার্টে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটি তার অত্যন্ত পরিচিত।হাই স্কুলে তাদের বেশ ভালো বন্ধুত্ব ছিল কিন্তু কলেজে উঠতে শুভ চলে যায় অন্য শহরে।
” আরে শুভ তুই এখানে?”
” তোদের বাড়িতেই যাচ্ছিলাম।কত বছর হয়ে গেল তোকে দেখিনা।”
” এখানে কোথায় এসেছিস?”
” এদিকে আমার কে আছে?কেউ নেই।এই তো পাশের শহরে মামার বাড়ি।কাউকে না জানিয়ে এদিকে চলে এলাম।”
” ভালো করেছিস তোকে দেখে ভীষণ খুশি হয়েছি।”
” কোথাও যাচ্ছিস নাকি?”
” হ্যাঁ বাড়ি ফিরব।”
” আয় বাইকে বস তোকে নামিয়ে দেব।”
” নানা আমি রিক্সায় যাব।”
“আরে বস তো।”
শুভ চট করে ধরে ফেলল রুমুর হাত এবং টেনে এনে বাইকে বসাতে উন্মুখ হলো।শুভ কি তার কাজে সফল হলো?মোটেই না তার আগেই রুমুর হাত টেনে ছিনিয়ে আনল উজ্জ্বল।হঠাৎ টান সামলাতে না পেরে রুমু ছিটকে পড়ল রাস্তার ধারে কাদা পানিতে।আকস্মিক ঘটনায় রুমু শুভ দুজনেই অপ্রস্তুত বাক্যহারা।শুভ উজ্জ্বলের মুখপানে তাকাতেই ভয় পেল সে চেনে উজ্জ্বল ভাইকে।স্কুল লাইফে তাকে কতবার যে শাসিয়েছে যেন রুমুর সাথে বন্ধুত্ব ছিন্ন করে।রুমুকে পাগলের মতো ভালোবাসে উজ্জ্বল সে কথা শুভ জানত কিন্তু এত বছর পর এসেও যে উজ্জ্বলের থাবায় পড়বে কে জানত?রুমু যে পড়ে গেল উজ্জ্বলের সেদিকে হুশ নেই সে তাকিয়ে আছে শুভর দিকে শুভ এগিয়ে এসে পুনরায় রুমুকে তুলতে নিলে তার আগেই উজ্জ্বল রুমুকে পাঁজাকোলে তুলে নিল।
” উ..উজ্জ্বল ভাই ভালো আছেন?”
” এখানে এসেছিস কেন?”
” এ..এমনি।”
” এমনি এসেছিস এমনি চলে যাবি।গো..”
বেশ ধমক দিয়েই বলল উজ্জ্বল।শুভ আর দাঁড়ানোর সাহস করেনি দ্রুত বাইক স্টাট দিয়ে চলে গেল অপরদিকে রুমু দাঁত মুখ খিঁচে তাকাল উজ্জ্বলের পানে।
” এটা আপনি কি করলেন?”
” চুপ।”
এবারের ধমকটা বেশ জোরেই দিল উজ্জ্বল।রুমু কথা বলার সাহস করে না।রুমুকে নামিয়ে বাইক আনল এবং রুমুকে বসতে নির্দেশ দিল।
বাড়ি ফিরে উজ্জ্বলের রাগ দেখে কে।সারাঘর জুড়ে পাইচারি করছে ঠান্ডার মাঝে খালি গায়েও সে ঘামাচ্ছে রুমু মাত্রই গোসল সেরে এসেছে উজ্জ্বলের রাগান্বিত ভাবটা সে বড্ড ভয় পায়।
” উজ্জ্বল এখনো রেগে আছেন?”
” শুভ তোর হাত ধরেছে কেন?”
” ধ…ধরে ফেলেছে ভুলে আমি কিছু বলার…”
” চুপ কর।এসব আমার ভালোলাগে না তুই জানিস না?”
” জানি।”
” তাহলে?”
” রেগে যাচ্ছেন কেন?”
” আশ্চর্য আমি রাগবো না?”
” না মানে…”
আচমকা রুমুর হাত শক্ত করে চেপে ধরল উজ্জ্বল দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
” এসব আমার একদম পছন্দ না রুমু আমি কিন্তু একবার খারাপ হলে আমাকে ভালো রূপে পাবি না।”
টনটনে ব্যথায় চোখে পানি চলে এলো সেই সাথে উজ্জ্বলের ধমকে মনটা কেমন মরে যাচ্ছে।ঝাপসা চোখে মুহূর্তে দু’তিন ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়তে পালটা ধমক দিল।তখনি বাইরে থেকে ডেকে উঠলেন নার্গিস।মায়ের ডাকে হাত ছেড়ে দরজা খুলল উজ্জ্বল।নার্গিস এসেছেন রুমুর কাছে তাই বিনা বাক্যে রুমে ঢুকতে দেখতে পেল রুমুর কান্নামাখা চাহনি।রুমু অবশ্য ইচ্ছা করেই চোখ মুছেনি সে চায় উজ্জ্বল নার্গিসের কাছে যেন বকা খায়।
” কিরে রুমু কাঁদছিস কেন?”
” আপনার ছেলেকেই জিজ্ঞেস করেন।”
নার্গিস ভ্রু কুচকে বলেন,
” রুমু কাঁদছে কেন?”
” রাস্তার পাশে কৈ মাছ উঠতে দেখেছে ধরতে পারেনি বলে কাঁদছে।দেখেছো মা কি বোকা মেয়ে।একটা মাছের জন্য কেউ কাঁদে?”
উজ্জ্বলের কথায় ভড়কে গেল রুমু।কি হয়েছে আর কি বলছে!নার্গিসের মুখ থেকে রাগের মেঘটা কেটে গেল।তিনি হাসি মুখে বলেন,
” আরে ফ্রিজেই তো কৈ মাছ আছে কৈ মাছ খাবি?দাঁড়া আমি ভেজে দিচ্ছি তোকে।”
নার্গিস চলে গেলেন।রুমু রেগেমেগে তাকাল উজ্জ্বলের পানে।
” আপনাকে বিয়ে না করে অন্তত শয়তানের সাথে প্রেম করা অনেক ভালো ছিল।”
” আশ্চর্য জমজ ভাইবোন প্রেম করে কেমনে?”
” কি!”
চলবে…