#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ৮]
উজ্জ্বলের পিঠে মুখ লুকিয়ে বসে আছে রুমু।মেয়েটার ভেজা চোখ উজ্জ্বলের শার্ট ভিজিয়ে দিচ্ছে।এক অদ্ভুত অনুভূতির সাক্ষী হচ্ছে উজ্জ্বল কিন্তু কিছুই বলতে পারছে না সে।ইচ্ছে হচ্ছে এই আদুরে মেয়েটাকে বুকের কোনে লুকিয়ে রাখতে চোখ মুছে বলতে ইচ্ছে হয় কেঁদো না কান্না তোমায় মানায় না মেয়ে।অথচ অনুভূতি শূন্য ভাব ধরে বাইক চালাচ্ছে সে।বাস স্ট্যান্ড পেরিয়ে ছুটছে উজ্জ্বলের বাইক বাসের হর্নের শব্দে মাথা তুলে তাকায় রুমু,
” উজ্জ্বল ভাই বাস স্ট্যান্ড তো পেরিয়ে যাচ্ছি গাড়ি থামাচ্ছেন না কেন?”
” অনেক ভেবেছি তোর ভাই তোকে বাস থেকে ধরে ফেলতে পারবে।তোকে বরং ট্রেনে তুলে দিব ট্রেনে নিরাপদ।”
” গাড়ি থামান।থামান বলছি আমি বাসেই যাব।”
” জেদ করিস না রুমু।”
” কোথায় আপনার ট্রেন?যেতে কতক্ষণ লাগবে?”
” চুপচাপ বসে থাক কথা বলবি না।”
” কথা বলবো না কেন?আশ্চর্য কেন কথা বলবো না?”
” আরে তুই রেগে যাচ্ছিস কেন?বাড়াবাড়ি করলে একদম রাশেদের কাছে দিয়ে আসবো।”
” বিপদে পড়েছি তো তাই এখন বিপদের সুযোগ নিবেন।”
” যদি সুযোগ নিতাম তাহলে তুই এতক্ষনে কোন গোপন কক্ষের চার দেয়ালে থাকতি বুঝলি?”
” ছিহ আপনার মুখে কি কিছুই আটকায় না?”
” না আটকায় না।তুই যে ভাবে বলছিস আমি সুযোগ নিচ্ছি যদি সুযোগ নেওয়ার হতো এর থেকে ভালো সুযোগ আমি নিতাম না।”
” আপনার কোন কথা শুনতে চাইনা তাড়াতাড়ি আমাকে বাসে ট্রেনে লঞ্চে যেখানে পারেন তুলে দিন।”
” চুপ চাপ বসে থাক বেশি বাড়াবাড়ি করলে জমের মুখে তুলে দিব।”
রুমু চুপসে গেল।কান্না পেল বহুগুন।পুনরায় উজ্জ্বলে পিঠে মুখ গুজে কাঁদতে থাকলো সে।সময় পেরিয়ে গেল আরো আধা ঘণ্টা অথচ কোথায় রেল স্টেশন কোথায় কী?রুমু আঁচ করলো স্থানটা তার আচেনা।এটা তো তার শহর নয় এটা আরেক শহর ব্যস্ত জনজীবন।হাইওয়ের রোডে স্প্রিডে ছুটছে উজ্জ্বল।উজ্জ্বলের পেট ছেড়ে বসলেই যেন উড়ে যাবে রুমু।ভোরের আলো পূর্ণ হয়েছে চারিদিকে পাখিদের কিচিরমিচির মুগ্ধ হয়ে শুনছে রুমু।আশেপাশে বিল বোর্ড খুঁজলো রুমু কিন্তু কোথাও জ্যাম লাগেনি যে পড়তে পারবে কোথায় আছে সে।
” উজ্জ্বল ভাই রেল স্টেশন কোথায়?”
” আর অল্প ডার্লিং।”
” আপনার মুখে এসব শুনতে আমার জঘন্য লাগে বেয়াদব লোক একটা।”
উজ্জ্বল হাসে।সেই হাসি অবশ্য রুমুর অগোচরে।
” এই জঘন্য লোককে বিয়ে করতে চাইছিলি?”
রুমু প্রত্যুত্তর করার আগে উজ্জ্বল বাইক থামায় একটি দশ তলা বিল্ডিং এর সামনে।রুমু মাথা তুলে তাকায় বেশ সুন্দর একটি ভবন।আলিশান গেটের আড়ালে একজন দারোয়ানের পা দেখা যাচ্ছে।
” উজ্জ্বল ভাই এখানে এলাম কেন?”
” কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ আয়।”
” না যাব না আপনার সাথে।বেয়াদব বদ লোক।”
” বাড়াবাড়ি করিস না।”
” করবো বাড়াবাড়ি।যখনি বিয়ের কথা তুললাম তখনি তো আসল রুপটা দেখিয়ে দিলেন।
উজ্জ্বল ভাই আল্লার কাছে বিচার দিলাম ভালোবাসার নামে যে আপনি আমার সাথে নাটক করলেন আপনার বংশের বাত্তি নিভে যাবে।মানে বুঝতে পারছেন?উজ্জ্বলের উজ্জ্বলতা কমে যাবে।”
” এই আমার বংশের বাত্তি নিভে যাবে মানে?তুই এই উজ্জ্বলকে চিনিস না।একবার বিয়েটা হোক ঘরে বউ আসুক বছরে একটা করে ছক্কা পড়বে দেখেনিবি।”
“আমার দেখার দরকার নাই।উজ্জ্বল ভাই আপনি যদি সত্যি ভালোবাসার নামে নাটক করে থাকেন তাহলে অভিশাপ দিলাম, বিয়ের পর আপনার বউকে খুশি করতে কলিকাতা হারবাল খেতে হবে।”
কলিকাতা হারবাল!এত বড় অভিশাপ!উজ্জ্বল তজ্জব বনে তাকিয়ে রইল রুমুর পানে।ভেতরে ভেতরে রাগে ফুলে ফেঁপে উঠলো সে।
” তুই কাকে কি অভিশাপ দিলি নিজেও জানিস না।”
উজ্জ্বল খপ করে রুমুর হাত টা ধরলো দ্রুত তাকে টেনে নামালো বাইক থেকে।
” চল তোকে প্রেক্টিক্যালি বুঝাতে চাই কলিকাতা হারবালের প্রয়োজন আছে কি নেই।”
রুমু ভড়কে গেলো।উজ্জ্বলকে রাগিয়ে দেওয়া উচিত হয়নি।গেটের দারোয়ান উজ্জ্বলকে দেখে ঠিকি চিনতে পারলো এই ছেলে মাঝে মাঝেই আসে কিন্তু উজ্জ্বলের পাশে মেয়েটা কে?দারোয়ানের সন্দিহান দৃষ্টিতে উজ্জ্বল বাঁকা হেসে বলে,
” ইয়াং ছেলে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন অন্যের বউয়ের দিকে?বিয়ে করেছো?”
” জি স্যার।”
” তোমারো কি কলিকাতা হারবালের প্রয়োজন হয়েছে?”
” ম..মানে?”
” বোঝাতে চাইছি কলিতাকা হারবাল চেনো?তোমার কি প্রয়োজন হয়েছে?”
” এসব প্রশ্ন কেন করছেন?”
” মানে ওষুধটা কতটা কার্যকর জানতে চাইছি।যদি কার্যকর না হয় অন্য প্রডাক্টের খোঁজ নিতে হবে।”
উজ্জ্বল রুমুকে টেনে নিয়ে গেল।লিফটে উঠে রুমুর হাত ছাড়লো সে।দুজনেই তখন হাঁপাচ্ছে।
” এখানে কেন এনেছি জানিস?এটা উর্মি আপুর বাসা ভেবেছিলাম আপুর সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব বিয়েটা কি এখন করবো নাকি পরে।নাকি তুই এখানে কয়েকদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকবি।তুই যেহেতু আমার ভালোবাসার প্রশ্ন তুললি আবার আমাকে সাংঘাতিক অভিশাপ দিলি তখন আজকেই তোকে বিয়ে করবো প্রেক্টিক্যালি বুঝাবো হারবালের প্রয়োজন আছে কি নেই।”
” উজ্জ্বল ভাই আমি মজা করেছি।”
” তুই আমার মেন পয়েন্টে আঘাত দিয়েছিস।এবার আর রিডিং ফিডিং পড়ে কাজ নেই যা হবে প্রেক্টিক্যালি হবে।”
রুমু ভয় পেল কোনঠাসা হয়ে মেয়েটা হুহু করে কেঁদে উঠলো।উজ্জ্বল তার কান্নায় পাত্তা দিল না চোখ রাঙিয়ে বলে,
” এই কাঁদবি না।এমন একটা ভাব করছিস যেন তোকে তুলে নিয়ে এসেছি।অথচ তুই নিজে আমাকে তুলে এনেছিস।”
রুমু হতভম্ব হয়ে গেল।কান্না থামিয়ে বলে,
” আমি তুলে আনলাম!কখন?”
” তুই বলায় আমি বাড়ি থেকে বেরিয়েছি।সেখান থেকে তোকে নিয়ে এখানে চলে এসেছি মানে তুই আমাকে তুলে এনেছিস।”
” আপনার কথায় কোনো যুক্তি খুঁজে পাচ্ছি না উজ্জ্বল ভাই।”
” আমার লজিকে যুক্তি আছে তুই এসব বুঝবি না চুপ থাক।”
তর্কাতর্কির মাঝে লিফট থামলো আট তলায়।দুজনে গিয়ে দাঁড়ালো একটি দরজার সামনে বেশ কয়েকবার বেল বাজাতে দরজা খুললো একটি ছেলে।ছেলেটা চোখ কচলে তাকালো উজ্জ্বলের পানে,
” উজ্জ্বল সাত সকালে তুমি?”
” তাড়াতাড়ি এসেছি বলে কি আপনার আফসোস হচ্ছে দুলাভাই?সকালের নাস্তা খাওয়াতে হবে বলে কি টাস্কি খেয়ে গেছেন?”
” আশ্চর্য তুমি আমাকে সবসময় এমন ভাবে ট্রিট করো যেন আমি এ জগৎ এর মহান কঞ্জুস।”
” তা নয় তো কি দুলাভাই?বিয়ের ঘটনা আমি ভুলি নাই তাই খোটা দেওয়া ছাড়ি নাই।যাই হোক আসসালামু আলাইকুম।”
” এতক্ষণে সালাম!আচ্ছা আমিও না হয় জবাবটা আরো কিছুক্ষণ বাদে দেব।তা পাশের মেয়েটা কে?”
” আমার বউ। চাচাতো বউ।”
” চাচাতো বউ মানে?”
” চাচাতো বোন ছিল এখন চাচাতো বউ হয়ে গেছে।”
তামিম অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে উজ্জ্বলের কথা তার মাথায় ঢুকছে না।অপরদিকে উজ্জ্বল তামিমকে পাশ কাটিয়ে ঘরে প্রবেশ করে।উজ্জ্বলের ভাই বোন বলতে শুধু একমাত্র বোন বড় বোন আছে তার নাম উর্মি।
অপ্রত্যাশিত ভাইয়ের কণ্ঠ শুনতে পেয়ে ছুটে আসে উর্মি।তার অবাকটা আরো বহুগুনে বেড়ে গেল যখন পাশে দেখতে পেলো রুমুকে।রুমুর হালচাল দেখে আতঙ্কিত হয়ে উর্মি বলে,
” রুমু তোকে কে মারলো?তোর সারা শরীরে মারের দাগ!”
উজ্জ্বলের চাপা রাগটা বাড়লো দাঁতে দাঁত
পিষে বলে,
” ওর জানোয়ার ভাই আছে জানো না?আর ওর মায়ের কথা আশা করি বলতে হবে না।”
” কিন্তু মারলো কেন?”
” সব কথা বলবো আগে এক গ্লাস পানি দাও রুমুকে ফ্রেশ হতে দাও।”
” ভাই তুই কি ওঁকে হলুদের আসর থেকে তুলে এনেছিস?”
” অদ্ভুত এমন কেন মনে হলো তোমার?”
” না মানে এই সাজ পোশাকে।”
” তুলে আনার হলে আগেই আনতাম।যাই হোক কথা না বাড়িয়ে যা বললাম তা করো।”
উর্মির এক সেট জামা দিয়ে রুমুকে পাঠিয়ে দেওয়া হলো গোসল করতে।অপরদিকে উজ্জ্বল রুমুর ব্যপারে সবটা খুলে বললো।বিয়ের প্রসঙ্গ তুলতে বাদ সাধলো উর্মি সে চায় না একমাত্র ভাইয়ের বিয়েটা বাবা মা ছাড়া হোক।প্রায় আধা ঘন্টা যাবৎ ভাই বোনের বাকবিতন্ডায় চললো।উজ্জ্বল আপোষ মানতে নারাজ আজকেই বিয়ে হবে যে করে হোক তবে মা বাবাকে এই মুহূর্তে জানানো যাবে না।বিয়েরপর জানানো হবে।উজ্জ্বলের জোরাজোরির কাছে হেরে উর্মি রাজি হলো বিয়েটা হোক।রুমুকে নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যথা নেই কিন্তু তার পরিবার!একবার জানতে পারলে তান্ডব শুরু করবে।
সকাল বাজে প্রায় সাড়ে সাতটা উজ্জ্বল তার দুই বন্ধুকে আসতে বললো।কাউকে কিছু না জানিয়ে তারাও রওনা হলো।তামিম আজ অফিসে যায়নি মূলত উজ্জ্বল তাকে যেতে দেয়নি।তার দায়িত্ব যে করে হোক কাজী খুঁজে বের করতে হবে সে যে করেই হোক বের করতেই হবে।হঠাৎ বিয়ের তোড়জোড় দেখে ভয় লাগলো রুমুর।ঘোরে পড়ে সে বিয়েতে রাজি হয়েছে কিন্তু এরপর!এরপর কী হবে?বাংলা সিনেমার মতো উজ্জ্বল ভাই বিয়ের পর যদি মুখোশ পালটে ফেলে!তিনি যদি বলেন বিয়েটা প্রতিশোধ সরূপ করেছেন তখন কী হবে!এসব ভাবতে ভাবতে নাকে এলো ঘি দিয়ে পরোটা ভাজার সুঘ্রাণ।রুমু ভেজা চুল থেকে গামছা সরিয়ে উর্মিকে বলে,
” তোমার ভাই ইদানীং বাড়াবাড়ি করছিল তাই…”
” আমার ভাই ইদানীং না আগে থেকেই বাড়াবাড়ি করছিল তোর হয়তো চোখে পড়েনি।আজ তোর হাতে দিব তুলে আমার ভাইকে দেখবো কতটা সামলে রাখতে পারিস।”
” উজ্জ্বল ভাইকে সামলানো যায়!”
” এই ভাই ডাকা একদম বন্ধ।তবে জানিস আমার ভয় হচ্ছে বিয়ের কথা শুনে চাচা চাচি কি যে করবে।”
কলিং বেলের শব্দে ছুটে গিয়ে দরজা খুললো উর্মি।উজ্জ্বল এসেছে হাতে কিছু প্যাকেট বোঝাই যাচ্ছে টুকটাক শপিং করেছে।মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে উজ্জ্বলের বন্ধু সিয়াম এবং দিপু।উর্মি সবাইকে বসতে দিয়ে রান্না ঘরে যায়।
উজ্জ্বল রুমুকে রান্না ঘরে দেখতে পেয়ে আদেশ সুরে বলে,
” এই হারবাল আমার পেছন পেছন আয় কথা আছে।”
হারবাল!এই নামে কেউ কাউকে ডাকে?
গেস্ট রুমে প্রবেশ করতে দ্রুত দরজা বন্ধ করলো উজ্জ্বল।রুমু প্রতিবাদ জানিয়ে বলে,
” হারবাল কোন নাম হলো?”
” বকবক করে না ডার্লিং।শুনো আমার সামর্থ অনুযায়ী তোমার বিয়ের শাড়ি কিনলাম আর আমার জন্য পাঞ্জাবি।শাড়িটা খুব বেশি দামি না মাত্র ২৭০০ টাকা নিলো।”
এত সুন্দর করে উজ্জ্বল বুঝিয়ে বললো রুমু মুগ্ধ হয়ে শুনছিল।খুব সুন্দর একটি লাল শাড়ি আর উজ্জ্বলের সাদা পাঞ্জাবি।শিরায় উপশিরায় অনুভূতিরা কানায় কানায় পূর্ণ হলো।উজ্জ্বল শাড়িটা জড়িয়ে দিল রুমুর মাথায়।
” এই তো লাগছে আমার বউ।”
উজ্জ্বল যখন বিয়ের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত তখন তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে রাশেদ।সে জানে উজ্জ্বল ছাড়া রুমুকে নিয়ে যাওয়ার মতো সাহস আর কারো নেই।রাশেদের সন্দেহের তীর যখন সঠিক স্থানে পড়েছে তখন এই বিয়ে আদৌ হয় কি না কে জানে।
চলবে….
[গল্প দিতে পারিনি বলে দুঃখিত এক্সাম চলছে ব্যস্ত সময় পার করছি।]