#অবন্তিকা_তৃপ্তি
দুপুরে তখন গোসল করে এসে ধ্রুব মাত্রই রুমে এসেছে। ছোট একটা রুম; রুমের একপাশে একটা পড়ার টেবিল, অন্যপাশে দুজনের জন্য একটি বেড। বেডের পাশে একটি ছোট টেবিল, যেখানে পানির কলস আর গ্লাস রাখা। ধ্রুব কখনোই এত ছোট রুমে থাকতে অভ্যস্ত নয়। বোঝাই যাচ্ছে, ওকে এখানে যতটুকু যত্ন করা দরকার; সেটুকুই করা হবে। এক্ষুনি জামাই আদর চাওয়াটা ধ্রুবর বোকামি! ধ্রুব দীর্ঘশ্বাস ফেলে এগিয়ে গেল বিছানার দিকে।
সারাদিনের জার্নিতে ধ্রুবর পুরো শরীর ব্যথা হয়ে গেছে। তারমধ্যে রাস্তার দুরবস্থা যেন আরেক বিপদ; পুরো শরীরের হাড্ডি-মাংস একদম এক করে ছেড়েছে। ধ্রুব ময়লা শার্ট খুলে পাল্টাচ্ছিল। চেয়ারের উপর টিশার্ট রাখা ছিল। খালি গায়ে ওদিকে যাওয়ার সময় হুট করে ঘরের দরজা খুলে গেল।ধ্রুব টিশার্ট হাতে পেছন ফিরে চাইলো; অদিতি এসেছে! বারবার পেছনের দিকে দেখে; ভীতস্বতন্ত্র মুখটা ঘোমটার আড়ালে ঢেকে, চোরের মতো ঘরে ঢুকে পড়ল!
ধ্রুব টিশার্ট হাতে দেখছিল অদিতিকে; ও বলল ——‘তুমি এখানে? কেউ দেখে নিলে—‘
অদিতি মুখ থেকে ঘোমটা সরিয়ে ফেলল! তারপর দুজনেই একে অপরের দিকে তাকালো! অদিতি ধ্রুবকে খালি গায়ে এই প্রথম দেখামাত্রই ওর চোখ বড় বড় হয়ে গেল মুহূর্তেই। দ্রুত ও মুখ চেপে পেছনে ঘুরে গেল!
অদিতিকে পেছন ঘুরতে দেখে ধ্রুব নিজের শরীরের দিকে একবার চেয়ে দেখল— সে খালি গায়ে, শুধু প্যান্ট পরা। অদিতি অপ্রস্তুত হয়ে পরেছে; ধ্রুব সেটা বুঝে দ্রুত তাড়াহুড়ো করে টিশার্ট গায়ে দিতে লাগল।
অদিতির বুক কাঁপছে; এমন পরিস্থিতিতে সে জীবনে প্রথমবার পড়েছে।কোনো পরপুরুষকে এভাবে ও দেখেনি আজ অব্দি; অদিতি চোখ খিঁচে ফেলেছে দ্রুতই।ধ্রুব টিশার্ট পরতে পরতে কাচুমাচু গলায় বলতে লাগলো——–‘নক করে আসা উচিত ছিল, আই গেইজ”
অদিতি পেছন ফিরে থাকা অবস্থায় অপ্রস্তুত গলায় বলল——‘সরি, আমি বুঝি—”
ধ্রুবর টিশার্ট পরা শেষ! ও কথা মাঝপথে থামিয়ে বলল—-‘ন্যাকামি না করে পেছনে ঘুরো। আমি টিশার্ট পরে নিয়েছি।’
অদিতি ধীরে ধীরে পেছনে ফিরে তাকাল, কিন্তু লজ্জায় মুখ তুলে ধ্রুবর দিকে তাকাতে পারলো না। অন্যদিকে চেয়ে আছে দেখে ধ্রুব বিছানার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললো——‘কি বলতে এসেছিলে?’
অদিতি এবার তাকাল ধ্রুবর দিকে। ধ্রুবর রুমটা একবার দেখে নিল। এমন একটা স্যাতস্যাতে ঘরে ধ্রুব থাকছে শুধুমাত্র ওর জন্যে; অদিতিকে ব্যাপারটা অপরাধবোধে ফেলে দিচ্ছে বারবার। অদিতি কথা তুলল; বড্ড অনুনয় করে বললো——-‘ধ্রুব;আপনি এসবে অভ্যস্ত নন।কেন এমন করছেন? চলে যান; কিচ্ছু হবে না এসবে।’
ধ্রুব শুনে; অদিতির দিকে পিঠ দিয়ে আছে ও। অদিতির ওসব কথা পাত্তা না দিয়ে ব্যাগ থেকে প্যান্ট বের করতে করতে উদাস ভঙ্গিতে বলল—-‘তুমি এখন এই চোরের মতো আমার ঘরে এসব বলতে এসেছো?’
অদিতি লজ্জা পেয়ে ওরনা ঠিক করে; ধ্রুবর পিঠের দিকে তাকালো। ধ্রুবও প্যান্ট হাতে ওর দিকে ফিরে তাকাল; ওর চোখ ভীষণ শান্ত-স্বাভাবিক! অদিতি ওই চোখের দিকে চেয়ে এবার কাতর কণ্ঠে বললো——-‘আপনি চলে যান, ধ্রুব। আপনার সঙ্গে সামনে কী হবে, সেটা ভেবেই আমি দিশেহারা হয়ে যাচ্ছি। এসব এত সহজ নয়।”
ধ্রুব এবার বিরক্ত হলো; বললো———‘তুমি আমাকে বারবার চলে যেতে বলছো;অথচ তুমি নিজেও চাওনা আমি এখান থেকে তোমাকে না নিয়ে চলে যাই।সবসময় মুখে এক; মনে এক তোমার। আ’ম রিয়েলি টায়ার্ড নাও; অদিতি।’
অদিতির গলা কেপে উঠল; ও ধ্রুবর চোখে চোখ রেখে কেন মিথ্যা বলতে পারেনা? কেন ধ্রুব সবসময় ওর মুখে না বলা কথা বুঝে ফেলে?অদিতি অন্যদিকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে আবারও মিথ্যা বললো——‘আপনি ভুল ভাবছেন; আমি মন থেকেই চাই আপনি চলে যান।’
ধ্রুব মাথাটা কাত করে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো! পরপর ভেজা কাপড় বিছানাতে ছুড়ে ফেলে রেখে এগিয়ে আসতে লাগল অদিতির দিকে। ও অনেকটাই কাছে আসতেই অদিতি ওর দিকে চেয়ে পিছু হটে গেল। অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে ধ্রুবর দিকে তাকাল ও। ধ্রুব মাথাটা ঝুঁকে ওর চোখে চোখ রেখে খেয়ে বলল——‘আবারও মিথ্যা; বারবার যে এত মিথ্যা বলো, তুমি হাঁপিয়ে যাও না তোফাজ্জল হায়াতের মেয়ে?’
অদিতি চোখ নামিয়ে ফেলল; আবারও ধরা পরে গেছে! ধ্রুব ওকে ঘাটালো না। ওর মনের উপর জোর দেখালো না। বরং বড্ড শান্ত-নরম গলায় বোঝালো——-‘আমাকে নিয়ে এতো চিন্তা না করে নিজের জন্য করো। ভরদুপুরে এক নওজোয়ান ছেলের ঘরে একা একা এসেছো। তোমার প্রেমবিরোধী বাবা জানলে তো…”
ধ্রুব গলায় হাত দিয়ে মে/রে ফেলার ভঙ্গি করল। অদিতি ভ্রু কুঁচকে তাকালো; ধ্রুবর মজা করা ওর একটুও ভালো লাগেনি। ধ্রুব অদিতির নাকের ডগায় তাজা-তাজা রাগ দেখে মৃদু হেসে ওর নাকে আলতোভাবে আঙুল ছুঁইয়ে বললো—-‘ডোন্ট ওরি।অ্যাই উইল বি ফাইন।’
অদিতি নাকে হাত চেপে ধরল! নাকটা যেন লাল হয়ে গেছে ওর। ধ্রুব নিজের মতো করেই দরজা খুলে বেরিয়ে গেল। সে বাইরে যেতেই অদিতি দ্রুত ঘোমটা টেনে মাথা ও মুখ ঢেকে নিল। নিচে নেমে একবার দেখে নিলো; কেউ আছে কিনা। কেউ নেই দেখে এক দৌঁড়ে ঘরের ভেতর ঢুকে গেল।
__________
দুপুরে সবাই খেতে বসেছে। ধ্রুবর পাশে বসেছে অদিতির ছোট ভাই, ইফাজ। তোফাজ্জল সাহেব ছেলের মাছের কাঁটা বেছে দিচ্ছেন। ধ্রুব খেতে বসে খাবারের আইটেম দেখে কিছুটা বিরক্ত হলো। সবজির আধিক্য শুধু! একটা মাছের তরকারি আছে; অথচ ধ্রুব মাছ পছন্দ করেনা। ও মুখ কুঁচকে ফেলেছিল। পরপর স্বাভাবিক মুখভঙ্গি করে খেতে বসলো।
ধ্রুব সবজি পাতে তুলবে; তার আগেই অদিতির মা ফাহিমা ভুনা মাংসের একটা বাটি রান্নাঘর থেকে এনে ধ্রুবকে দিলেন। ধ্রুবর হাতে সবজির চামচ; ও অবাক হয়ে ফাহিমার দিকে তাকিয়ে আছে। ফাহিমা হেসে বললেন——‘তুমি শহর থেকে এসেছো, এই সবজি-মাছ হয়তো তেমন খেতে পারবে না। এটা নাও; আমার বড় মেয়ে বানিয়েছে।”
‘বড় মেয়ে’ মানে তো অদিতি! ধ্রুব বাটির দিকে তাকিয়ে; হঠাৎ আরও এক দফা ওই মেয়েটার প্রেমে পরলো! ইচ্ছে করছিল তখন; ছুটে গিয়ে ওই মুগ্ধ মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরতে। ও নিজের অনুভূতির দা/বানল সামনে ফাহিমার দিকে চেয়ে মুচকি হেসে বলল—-‘থ্যাংক ইউ, আন্টি।’
ধ্রুব মাংস দিয়ে খেতে খেতে বারবার অদিতির কথা মনে করছিল। অদিতি লক্ষ্য করেছে সব; ও জানে ধ্রুব এসব খেতে অভ্যস্ত নয়। তাই নিজের হাতে মাংস রান্না করেছে। ধ্রুবর হৃদয় প্রশান্তিতে ভরে উঠল।
তোফাজ্জল সবার আগে খাওয়া শেষ করে উঠে গেলে ইফাজ বাবার যাওয়ার দিকে চেয়ে হাফ ছাড়লো! সঙ্গেসঙ্গে ধ্রুবর বাহুর শার্ট চেপে ধরে বলল——-‘ভাইয়া; তোমার নাকি ক্যামেরা আছে?”
ধ্রুব খাওয়া থামিয়ে ইফাজের দিকে তাকালো! বলল——-‘হ্যাঁ, আমি ফটোগ্রাফি করি।’
ইফাজ চোরের ন্যায় আশপাশটা সতর্ক চোখে দেখে নিয়ে ধ্রুবর কানের কাছে ফিসফিস করে বলল——‘আমাকে তোমার সঙ্গে নিয়ে যাবে? আমি তোমাকে একদম বিরক্ত করব না। শুধু তোমার ছবি তোলা দেখব।”
ধ্রুব ইফাজের বাচ্চা-বাচ্চা কথা শুনে মাথা নাড়লো; মৃদু কণ্ঠে বলল—-‘ঠিক আছে; নেব। আগে খাওয়া শেষ করো।”
ইফাজ খুশিতে ঝটপট খাওয়া শেষ করতে লাগল।
____________
ধ্রুব গ্রামের মেঠোপথ দিয়ে হাঁটছিল। ইফাজ পাশ দিয়ে খুশিতে দুলতে দুলতে হাঁটছিল। ধ্রুব ক্যামেরা হাতে ছোটোখাটো ছবি তুলছিল।ধ্রুব ফোকাস করছিল ক্যামেরা; ইফাজ তখব ধ্রুবর আঙ্গুল চেপে ধরে বললো——‘ভাইয়া; ছবি-গুলো দেখি না একটু।’’
ধ্রুব মানা করলো না; নিচের দিকে ঝুঁকে এসে ইফাজের বরাবর হয়ে ওকে সব ছবি দেখালো। ইফাজ ছবি দেকজটে দেখতে ধ্রুবর দিকে তাকালো! ও একটু দোনামোনা করছে; ধ্রুব হয়তো সেটা বুঝতে পারল। ও ইফাজের বাচ্চা-বাচ্চা মুখের দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করলো——‘ছবি তুলতে চাও তুমি?’
ইফাজের খুশি দেখে কে! ও লাফিয়ে উঠে বলল—-‘হ্যাঁ, হ্যাঁ’
ধ্রুব ইফাজের চুল এলোমেলো করে দিয়ে ক্যামেরা ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো———‘তুলো।’
ইফাজ হাসিমুখে ক্যামেরা হাতে নিল, কিন্তু ছবি তোলার বেলায় তার মন খারাপ হয়ে গেল। ও তো শিখেনি কিভাবে ক্যামেরা ব্যবহার করে। ধ্রুব ইফাজকে ক্যামেরা হাতে চুপ করে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু উঁচিয়ে বললো—-‘কি? ছবি তুলবে না?’
ইফাজ ক্যামেরা ফিরিয়ে দিলো; মন খারাপ করে বললো——‘আমি ক্যামেরা চালাতেই জানি না। যদি নষ্ট করে ফেলি?’
ধ্রুব শোনে! এই হায়াত পরিবারের ছেলেমেয়েগুলো একটু বেশিই ভদ্র-সভ্য! অথচ জামাই পাবে চুড়ান্ত উগ্র; অসভ্য কাউকে। তোফাজ্জল হায়াতের ভাগ্যের উপর হঠাৎ করেই বড্ড আফসোস হলো ধ্রুবর। ধ্রুব ইফাজের দিকে চেয়ে নরম কণ্ঠে বললো——‘আসো, আমি শেখাই।’
ধ্রুব রাস্তায় হাঁটু গেড়ে বসে ইফাজের সমান হলো। পেছন থেকে ওর হাত ধরে, দুটো হাত ক্যামেরায় ছুঁলো! ইফাজের হাতে হাত ধরে তারপর কীভাবে ক্যামেরা চালাতে হয়, সেটা শেখাতে লাগল। ইফাজ খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছিল ধ্রুবর শেখানো। ধ্রুব শেখানো শেষ করতেই ইফাজ নিজে নিজেই একটা ছবি তুলল। ছবিটা ছিল একটা গরুর গাড়ির, যা বেশ ভালোই এসেছে। নিজের তোলা ছবি দেখে ইফাজ খুশি হয়ে লাফিয়ে উঠল। বললো——‘ভাইয়া, দেখো ছবিটা সুন্দর না?’
ধ্রুব দেখে; ছবিটা ততটা স্পষ্ট আসেনি, কিন্তু ইফাজের খুশি দেখে ধ্রুব শান্ত স্বরে বললো——‘জোস ছবি তুলেছো তুমি। আরো তুলবে?’
ইফাজ উচ্ছ্বসিত গলায় বললো——‘হ্যাঁ, আরো তুলব!’
ধ্রুব মানা করলো না; ওরও ভালো লাগছিল ইফাজের পাগলামি-গুলো! ও ইফাজের দিকে চেয়ে আশকারা দেখিয়ে মৃদু হেসে বললো——‘যত ইচ্ছা তুলো। আজকের দিনের জন্য এই ক্যামেরা তোমার।’
ইফাজ অবাক হয়ে বললো——-‘সত্যি? তোমার ফিল্ম শেষ হয়ে যাবে না তো?’
ধ্রুব হাসিমুখে জবাব দিলো——‘আমার কাছে আরো আছে। তুমি ছবি তুলতে থাকো।’
ইফাজ এটা শুনে খুশিতে নাচতে নাচতে যা দেখছে সেটার-ই ছবি তুলতে লাগল। ইফাজ ছবি তুলে তুলে ধ্রুবকে দেখাচ্ছে। ধ্রুব তার পাশে হাঁটছিল,মাঝেমধ্যে ইফাজকে টুকটাক নতুন কিছু শিখিয়েও দিচ্ছিলো।
একসময় ধ্রুবর হঠাৎ কী মনে হলো। সে হাঁটতে হাঁটতে ইফাজকে জিজ্ঞেস করলো——‘ইফাজ, তোমার বাবা বলছিলেন, আজ তোমাদের বাড়িতে মেহমান আসবে? কে আসবে, জানো?’
মিথ্যা কথা! তোফাজ্জল এমন কোনো কথাই বলেননি ধ্রুবকে। কিন্তু ধ্রুব ইফাজের মুখ থেকে কথা টেনে বের করার জন্যে কথা তুলেছে। ইফাজ এক চোখ বন্ধ করে; ডান চোখ দিয়ে ক্যামেরার লেন্স দেখতে দেখতে জবাব দিলো ——‘আজ না; আগামীকাল আসবে ওরা।’
ধ্রুব যেন এবার সুযোগ হাতে পেলো! ও ভ্রু কুঁচকে ফেললো; জিজ্ঞেস করলো —-‘ওরা কারা জানো তুমি?’
ইফাজ ছবি তুলতে তুলতে বলল —-‘আপুকে ছেলেপক্ষ দেখতে আসবে।’
কথাটা শুনেই ধ্রুবর চোয়াল মুহূর্তেই শক্ত হয়ে গেল। ও হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে নিজেকে সামলালো; গলার স্বর যথাসম্ভব নরম রেখে প্রশ্ন করে গেলো——‘ছেলে কী করে?’
ইফাজ নিজের মতো করেই জবাব দিলো——‘দুলাভাই তো ঢাকায় চাকরি করে। মা বলছিলেন, উনি একটা কাপড়ের ফ্যাক্টরির ম্যানেজার।’
‘দুলাভাই’ শব্দটা শুনে ধ্রুবর মুষ্টি শক্ত হয়ে গেল।তারউপর তার প্রতিদন্ধী কিনা একজন ম্যানেজার! অথচ সে কিনা একটা ম্যানেজারের জন্যে মাথায় ‘আশি কেজি ওজনের জেলাসি’ পুষে রেখেছে! এমন শত ম্যানেজার ধ্রুবর আশেপাশে ঘুরঘুর করে।
ধ্রুব রেগে ইফাজের হাত থেকে ক্যামেরা নিয়ে গেল। ইফাজ ক্যামেরা খুইয়ে অবাক হয়ে ধ্রুবর দিকে চেয়ে রইলো; মন খারাপ নিয়ে বললো—-‘আর ছবি তুলবো না? তুমি তো বলেছিলে, আজ সারাদিন ক্যামেরাটা আমার।’
ধ্রুব হাসার চেষ্টা করে ক্যামেরা নিজের হাতে রেখে বললো—-‘এটা আমার ক্যামেরা। বাট আমি এটা তোমাকে দেব যখনই তুমি চাইবে। কিন্তু ওয়ান কন্ডিশন!’
ইফাজের মলিন মুখে হাসি ফুটলো; সে ধ্রুবর শার্ট ধরে টান দিয়ে বলল,—-‘বলো না কী শর্ত?’
ধ্রুব ক্যামেরা ওর কাঁধে ঝুলিয়ে হাঁটু গেড়ে ইফাজের মুখোমুখি বসলো। ইফাজের চুল এলোমেলো করে দিয়ে বলতে লাগলো——‘আজ থেকে তুমি আমার শালা! যখনই আমরা দুজন একা থাকব, তুমি আমাকে ‘দুলাভাই’ বলে ডাকবে।”
ইফাজের চোখ এ কথা শুনে চড়কগাছ হয়ে গেল! ও বড়বড় চোখ করে; অবাক হয়ে বললো—-‘কিন্তু তুমি তো আপুকে বিয়ে করোনি। তোমাকে কেন ‘দুলাভাই’ ডাকব?”
ধ্রুব বিরক্ত হলো! ছোট প্যাকেটে বড় ধামাকা এই পুঁচকে ছেলে। বাপের মতোই শেয়ানা ভীষণ। ধ্রুব একটু ভেবে নিল; পরপর মুচকি হেসে বোঝাতে লাগল আবুল-তাবুল; ——–‘আমার বিয়ে হচ্ছে না; পাত্রী পাচ্ছিনা বিয়ে করার জন্যে। কিন্তু আমার একটা শালা পাওয়ার ভীষণ শখ। যে আমাকে দুলাভাই বলে ডাকবে। বউ নেই, তাই শালাও পাচ্ছি না। তোমাকে আমার ভালো লেগেছে; আজ থেকে তুমিই আমার শালা। ঠিক আছে?’
ইফাজের চোখ টলমল করে উঠল! ধ্রুবর দুঃখ-ভরা কাহিনি শুনে ওর চোখ ভিজে এলো! ও দুঃখী ধ্রুবকে সান্ত্বনা দিতে ওকে হঠাৎ জড়িয়ে ধরল; ধ্রুব ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেল; ও তবুও একহাত তুলে ইফাজের পিঠে রেখে বুলালো! ইফাজ নাক টেনে বললো—-‘আর কষ্ট পেওনা; তুমিই আজ থেকে আমার দুলাভাই।’
ধ্রুব ইফাজের বাচ্চামো; ওর সরলতা দেখে হেসে ফেলল শব্দ করে। ইফাজ মুখ উঠালো ধ্রুবর কাঁধ থেকে; ধ্রুবর হাসি ওর ইমোশনকে অপমান করে ফেলেছে। ধ্রুব হাসতে হাসতে ইফাজের চুল এলোমেলো করে দিয়ে বললো—-‘আমাদের ‘শালা-দুলাভাই’ জুটি জোস হবে; শালাবাবু।’
ধ্রুব এখনো হাসছে! ইফাজ মুখটা ফুলিয়ে ওর হাসি দেখছে।তার অযথা হাসি ইফাজকে এবার বিরক্ত করতে লাগলো। ইফাজ দুহাত কোমরে রেখে নাক ফুলিয়ে বললো—-‘তুমি হাসছো কেন?’
ধ্রুব হাসি থামিয়ে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করল; ইফাজের হাত ধরে ওকে টেনে ওর ছোটমোট্ট শরীরটা নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিতে নিতে বললো——‘আমার বোঝা হয়ে গেছে- কেন ও এত্ত সরল! তোমরা তোমাদের মায়ের জিন পেয়ে গেছো। বাট অ্যাই লাভ ইট।’
ইফাজ ধ্রুবর কাঁধে মুখ গুঁজে শুধু শুনে যাচ্ছিল কথা-গুলো! অথচ এসব কথার মানে ও একবিন্দুও বুঝেনি।
_
ইফাজ আর ধ্রুব হাঁটছে। ইফাজের হাতে ক্যামেরা। ও ছবি তুলছে। ধ্রুব হাঁটতে হাঁটতে বললো——‘ইফাজ, তোমার আপুকে যে ছেলে দেখতে আসবে, সে কী ধরনের মানুষ?’
ইফাজ ক্যামেরায় তোলা ছবি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে অন্যমনস্ক গলায় বললো——‘দুল…’
সঙ্গে সঙ্গে ধ্রুব তাকালো ইফাজের দিকে। ইফাজ চমকে উঠে; ও ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে ফেলেছে! এখন আবার যদি ধ্রুব ওর হাত ঠেকে ক্যামেরা নিয়ে যায়? ইফাজ দ্রুত জিভ কেটে বললো—-‘সরি, সরি। ওই ভাইয়ার নাম ফারদিন হোসেন। আব্বুর বন্ধুর ছেলে।”
ধ্রুব শান্ত হল; ছেলের বুদ্ধি আছে যথেষ্ট! ধ্রুব এবার মোক্ষম কথাটাই তুলে ফেললো—-‘ইফাজ; তোমার একটা সাহায্য দরকার আমার। করবে?’
ইফাজ ছবি তোলা বাদ দিয়ে; অবাক চোখে তাকালো ধ্রুবের দিকে। ধ্রব ইফাজের চাওনি দেখে আগেভাগেই সাবধান হয়ে লোভনীয় অফার তুললো দ্রুতই—-‘অব…সাহায্য করলে তুমি যা চাইবে, তা পাবে। এমনকি এই ক্যামেরাও; ফর লাইফটাইম।’
ইফাজের চোখ-মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল! সে খুশিতে লাফিয়ে উঠে বললো—-‘কী কাজ দুলাভাই?’
#চলবে
মনখুলে সবাই রিয়েক্ট-কমেন্ট করবেন প্লিজ!
পর্ব ভালো লাগলে বা না লাগলে, আপনারা গ্রুপে এটা নিয়ে আলোচনা করতে পারেন।
অবন্তিকা তৃপ্তির পার্সোনাল গ্রুপ লিংক- https://www.facebook.com/share/g/5XQheuegTGqc2anJ/?mibextid=K35XfP