ফ্রিজ পর্ব ৮
মামার মুখে হাসি। কথা বলছে আনন্দিত হয়ে।” কী ব্যাপার চেয়ারম্যান সাহেব হঠাৎ আমার বাড়িতে? “
“আসলাম আর কি তোমরা তো মিয়া খবর-টবর নাও না! তা কেমন আছ বলো?”
“চলছে ভালোই। ”
বলেই মামা আমার দিকে তাকিয়ে ইশারা করলেন। চা নাস্তার কথা মামি কে বলতে। আমিও দিলাম ছুট। মামি কোথায় আছে কে জানে? প্রথমে আসলাম রান্নাঘরে। এ সময় অবশ্য মামির রানাঘরে থাকার কথা না। রান্না হয় একবার দুপুরের আগে। দুপুর আর রাত একাসাথে। রাতের তরকারি একটু গরম করে খাওয়া হবে রাতে। মাঝেসাঝে নাস্তা টাস্তা বানালে সে আলাদা কথা।
না, রান্না ঘরে মামি কে পাওয়া গেল না। পাশের বাড়ির শাহিদা খালা বলল, “কী রে রুনু মামি কে খুঁজছিস?”
আমি মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বললাম।
“আমাদের ঘরে আছে। আয় এ দিকে।”
আমি এক দৌড়ে মামির সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। এমন করে আসতে দেখে মামি জিজ্ঞেস করল, “কী হয়েছে রে মা?”
“বাড়িতে মেহমান আসছে। মামা তোমায় নাস্তা দিতে বলেছে।”
আমার কথা শুনেই মামি উঠে দাঁড়াল। সাথে শাহিদা খালাও আসল। আপা মনে হয় ভিতরে গল্প করছে। থাকুক আপাকে ডাকার কী দরকার?
মামি এসে গরম পানি বসিয়ে দিলো চুলায়। ঘরে বিস্কুট আছে সাথে চা দিবে। শাহিদা খালা ঘরে এসে বিস্কুট প্লেটে সাজাচ্ছে।
আমি বসার ঘরে পাশে এসে দাঁড়ালাম। মুরুব্বি একজন বলছেন,” তোমার ভাগ্নির কী কপাল আব্বাস! সারা দুনিয়া চষে বেড়িয়ে একটা মেয়ে পছন্দ করাতে পারলাম না। সেই ছেলে তোমার ভাগ্নীকে এক নজর দেখে পছন্দ করে ফেলেছে!”
“দেখুন চাচা, ভাগ্নী আমার সবেমাত্র কলেজে উঠেছে। ও আর পড়াশোনা করবে। পড়াশোনা শেষ হোক তারপর বিয়ের কথা ভাববো।”
“এটা কী বললা আব্বাস! আমার বাড়িতে গিয়ে কি মেয়ে পড়ালেখা করতে পারবে না? আমার বাড়িতে কী ওকে কোনো কাজ করতে হবে নাকি? বাড়িতে আমার কাজের লোকের অভাব।”
আমি বুঝতে পারলাম ওনারা আপার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন। ওই বদ ছেলেটার সাথে আপার বিয়ে দিতে চায়! আপা শুনলে কী যে মনখারাপ করবে!
মামা বলল,” ঠিক আছে চেয়ারম্যান সাহেব। আমি আমার বোনের সাথে কথা বলব। মেয়েটা তো আর আমার না। ওদের মেয়ে ওদের সাথে কথা বলি।”
“ভুল-টুল করো না আব্বাস। যাই কোরো বুঝেশুনে করো।” চেয়ারম্যানের পাশে মুরুব্বি বললেন।
“তাহলে আজ আমরা যাই আব্বাস। “
“একটু চা খেয়ে যান।”
“আজ না তুমি ব্যবস্থা করো ভরপেট খাব তোমার বাড়ি।”
ওনারা উঠে চলে গেলেন। মামা ওনাদের সাথে বের হলেন। মামি বলল, “রুনু সবাই চলে গেলো নাকি রে মা?”
“হ্যাঁ মামি।”
“সেকি রে! এমন হুট করে চলে গেলো যে?”
আমি কিছু বললাম না।
মামা কে বেশ চিন্তিত লাগছে! আপা এখনো কিছু জানে না! নাকি কিছু শুনেছে আমি ঠিক জানি না। এ সব কথা তো বাতাসের আগে ছড়িয়ে পড়ে। এটা অবশ্য খারাপ কিছু না। বিয়ের প্রস্তাব তো যে কেউ দিতেই পারে। মামার খারাপ লাগছে কারণ চেয়ারম্যান মানুষটা সুবিধার না। ওনার ছেলেটাও অনেকটা ওনার মতো। এদের না বলাটা কঠিন। কী করে বসে বলা যায় না!
মামা বলল, “তোরা কাপড়চোপড় গুছিয়ে নে মা। তোদের ঢাকা পাঠিয়ে দিবো। এতদিন পরে মামা বাড়ি এলি কয়দিন বেড়াবি তা না। কী এক আপদ এসে জুটলো! “
মামি বলল,” তুমি এত ঘাবড়াচ্ছ কেন? ওরা থাকুক আর কটাদিন। বিয়ের প্রস্তাবেই তো দিছে নাকি?”
“তুমি চিনো না ওদের! কখন কী করে বসবে ঠিক আছে! তারচেয়ে ওরা ঢাকা চলে যাক সেই ভালো।”
মামার বাড়িতে বেড়াতে আসার আনন্দটা কেমন মাটি হয়ে গেলো! আমার খুব খারাপ লাগছে! আপাটা কেন যে এত সুন্দর হলো? আপা যদি কালো হতো তাহলে এত সমস্যা হতো না। চলে যেতে হবে শুনে হয়ত আপার মনটাও খারাপ হয়েছে! প্রথমবার আমি আপার মনখারাপ দেখলাম। আরেকজনের মুখ কালো হয়ে গেছে আমরা চলে যাব শুনে সে হলো আমাদের মামাত ভাই সামিন।
আমরা চলে এসেছি রাজশাহী রেলস্টেশনে। মামা আমাদের সাথে যাবে। যদিও আপা বারবার বলছিলো আমরা যেতে পারব। মামা তোমার যেতে হবে না।
মামা বলল,” এ সব কী বলিস তোরা! তোদের আমি একা একা পাঠিয়ে দিবো?”
এবার বগি নিলেও আসার মতো ভালো লাগছে না। মামা অনেকটা জোর করে রাতে খাওয়াল। কমলাপুর পৌঁছালাম ভোরে। এখনো ইদের ছুটি শেষ হয়নি। ঢাকা শহর এখন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে! মামা কত সব জিনিসপত্র নিয়ে এসেছে বস্তা ভরে।
সবচেয়ে বেশি খুশি হলেন বাবা! আমাদের যেন তার প্রাণ ফিরে এসেছে। মা বলল, “কী রে তোরা এত তাড়াতাড়ি চলে আসলি!”
আপা আর আমি কিছু বললাম না। মামা মা কে বলেছে জানি না। আপার বিয়ের কথাটা কি বলেছে? মনে হয় বলেনি। মামাও এ সব নিয়ে আর কোনো কথা বলতে মানা করেছে।
আমি আনেয়ার চাচার বাসায় গেলাম। আমাকে দেখে আনোয়ার চাচা বললেন,” কী খবর রে রেনু? এত জলদি বেড়ানো শেষ হয়ে গেল!”
আমি চাচার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলাম।
“মিলি কোথায়? “
আপা বাসায় এসেই বই নিয়ে বসেছে। আপা যে কী মজা পায়, এ সব বই পড়ে কে জানে? আমার পড়তে একটুও ভালো লাগে না! আপার মতো বই পড়তে পারলে ভালো হতো। বই পড়লে সহজে সময় কেটে যায়। মনে হয় সব কিছু ভুলেও থাকা যায়। তাই তো আপা কী সহজে সব কিছু ভুলে যায়! এই আপার সাথে কত ঝামেলা হচ্ছে। আমার সাথে হলে আমি মনে হয় সহ্যই করতে পারতাম না। এ সব মনে হলেই আমার কান্না পায়!
“আপা বই পড়ছে চাচা।”
আনোয়ার চাচা রহিমার মা কে হাঁক দিয়ে বললেন, “আমাদের দুই কাপ কফি দাও তো।”
আমি চাচার দিকে তাকিয়ে আছি। চাচা কেমন হাসি দিয়ে বলল, “নতুন কফি কিনেছি বুঝলি। কফি খাওয়া নাকি সাস্থ্যের জন্য ভালো। ব্রাজিলের কফি খেয়ে দ্যাখ খুব স্বাদ। মিলিটা আসলে ভালো হতো।”
আমি আপাকে ডেকে নিয়ে আসি।
চাচা বলল,” তোর মামা না কে যেন এসেছে দেখলাম। উনাকে নিয়ে আয়। কথা টথা বলি। একজন মানুষ আসল তার সাথে জানাশোনা হবে না এটা কেমন কথা! অবশ্য আমারই যাওয়া উচিৎ। যেতে ইচ্ছে করছে না।”
“আপনার যেতে হবে না। আপনি শুয়ে থাকুন।”
আমি নিচে এসে প্রথমে আপার কাছে গেলাম। আপা এখনো বই পড়ছে। আপার কাছে গিয়ে বললাম, “কফি খাবা? “
“কফি হলে খারাপ হয় না। তা কফি পাবি কোথায়?”
“আনোয়ার চাচা ব্রাজিলের কফি এনেছে। খেলে চলো যাই। “
“আচ্ছা চল যাই।”
“তুমি যাও, আমি মামা কে নিয়ে আসছি।”
“মামাকেও বলেছে না-কি? “
“হ্যাঁ,” বলল, “তোর মামার সাথে পরিচয় টরিচয় করালি না! “
আমরা এখন ছাদে এসেছি। মামা আর আনোয়ার চাচা কথা বলছেন। আমি আর আপা দাঁড়িয়ে আছি কফি নিয়ে। আপা বলল, “কফির স্বাদ তো ভালোই! একটা কফি কিনতে হবে কী বলিস?”
আমি জানি এটা আপার কথার কথা। আপা ঠিকই জানে এমন একটা কফির অনেক দাম। বাবা কে বললে হয়ত কিনবে। মা কিছুতেই কিনতে দিবে না। এ সব অযথা খরচ মা পছন্দ করে না। আদা চা ই আমাদের একমাত্র ভরসা।
চলবে–
® নাবিল মাহমুদ