বন্ধু পর্ব ৫ ও শেষ
অরুনের বন্ধুদের বউরা কেউ শাহিন নামের মেয়েটাকে নিয়ে এমন কোন কথা ভুলেও বলে নাই, যা শুনে তাদের হাসবেন্ডরা কষ্ট পাবে। হয়তো শাহিন নামের মেয়েটিকে নিয়ে অরুণের বউ অথবা অন্য বন্ধুদের বসায় কোন সমস্যা হতে পারতো, কারণ আমাদের সমাজে এখনো ছেলে-মেয়েদের মধ্যে একদম নির্মল বন্ধুত্বের বিষয়টা খুব বেশি মানুষ নিতে পারে না। অধিকাংশ মনে করে,ছেলে ও মেয়ের মধ্যে আবার বন্ধু কি? শাহিন নামের মেয়েটার প্রতি তার বন্ধুদের গভীর ভালোবসা দেখে তারা-ও বুঝতে পেরেছে, এখানে কোন ধরনের অপ্রিয় কথা বলে লাভ নাই, এতে করে নিজেরাই ছোট হবে।অথবা তাদের মনে হয়েছে একজন মৃত্যু পথযাত্রীকে নিয়ে কোন ধরনের অপ্রিয় কথা বলা ঠিক না।
শাহিনের হাসবেন্ড দুইদিন পারে চিটাগং থেকে ঢাকা আসে, তিনি অবশ্য তৃষ্ণার কাছে কল দিয়ে শাহিনের খবর নিয়েছে দিনে দু’বার একদম নিয়ম করে।ঢাকা এসে তিনি যখন হসপিটালে আসে, তখন শাহিনের অবস্থা একটু ভালো তবে বিপদমুক্ত বলা যাবে না। সেদিনই তাঁকে আই সি ইউ থেকে ক্যাবিনে দেওয়া হয়েছে। রফিক সাহেব আসায়, শাহিনের রুমে বসে থাকা তৃষ্ণা বের হয়ে গেলো।
তৃষ্ণা হসপিটালের ক্যান্টিনে চলে আসে, কফি খাওয়ার জন্য। এদিকে সেই সময়ে বাবু হসপিটালে এসে সরাসরি শাহিনের রুমে চলে যায়, তখন শাহিনের সাথে তার হাসবেন্ডের কিছু কথা সে শুনে ফেলে,
শাহিনকে তার হাসবেন্ড বলছিলো,
আমি এখন কোন টাকা তোমার চিকিৎসার জন্য দিতে পারবো না, তুমি কেন বলো নাই তোমাকে সাধারণ কোন হসপিটালে নিয়ে যেতে।
তখন শাহিন প্রচন্ড রেগে যায় আর বলে,
তোমাকে কে বলেছে টাকা দিতে, আমি বলছি আমার বাবার বাড়ি থেকে পাওয়া আমার টাকা দিয়ে আমি হসপিটালের বিল পরিশোধ করবো, তুমি শুধু তা তুলে এনে দিবে।
তখন শাহিনের হাসবেন্ড বলে,
এখনই যদি সব টাকা খরচ করে ফেলো, তা হলে পরে আরো বেশি সমস্যা হলে তখন কে টাকা দিবে?
শাহিন তখন ঠান্ডা গলায় বলে,
আমার টাকা শেষ হওয়া পর্যন্ত আমি বেঁচে থাকবো এই আশা তুমি করো?
না করো না। তুমি আসলে প্রতিবার আমি হসপিটালে আসলেই মনে মনে ভাব এটাই আমার শেষ আসা।
বাবু হঠাৎ করে শব্দ করে শাহিনকে ডাক দেয়, কারণ শাহিন বা ওর হাসবেন্ড কেউ ওর উপস্থিতি খেয়াল করে নাই, রুমের ভেতরে শাহিনকে কাপড় চেঞ্জ করানোর সময় বেডের পাশের পর্দাটা টানা ছিলো।
বাবুর হাত পা কাঁপছে এত সিক একজন মানুষের হাসবেন্ড কতটা আবেগ শূন্য হলে এই ধরনের কথা বলতে পারে তার স্ত্রীকে।
শাহিনের হাসবেন্ডকে বাবু বলে,
ভাই আপনি কফি খেতে চাইলে ওদের ক্যান্টিনে চলেন ভালো কফি হয়। বাবু চাচ্ছিলো না এই লোক শাহিনের সাথে আর কোন কথা বলুক।
তখন শাহিনের হাসবেন্ড বলে,না আমি কফি খাবো না আমার একটু উঠতে হবে আমার এক জায়গায় যাওয়ার কথা আছে।
তখন বাবু জিজ্ঞেস করলো, আপনি কোথায় উঠেছেন?
তখন রফিক সাহেব বললেন,
– আমার শালার বাসা মোহাম্মদপুরে, সেখানে উঠেছি
বাবু এই কথায় অবাক হয়! কারণ শাহিন বলেছে ওর দুই ভাই- ই এখন ওদের চাঁদপুরের বাড়িতে থাকে। ওখানেই ব্যবসা করে।
রফিক সাহেব যাওয়ার সময় বলে গেলেন, উনি আজ রাতে আর আসবেন না। আগামীকাল আসবেন আর শাহিনকে যদি রিলিজ করে দেয় তা হলে শাহিনকে নিয়ে তিনি চিটাগং রওনা দিবেন আগামীকাল রাতের ট্রেনে।
এদিকে শাহিনের হাসবেন্ড রুম থেকে চলে যাওয়া পর্যন্ত শাহিন আর চোখ খুলে তাকায় নাই।
বাবু শাহিনের পাশে গিয়ে বসলো আর শাহিনের হাতটা ধরে বলল,
শাহিন তোর হাসবেন্ড চলে গেছে।
শাহিনের চোখ থেকে অনবরত পানি পরছে।
বাবু তৃষ্ণাকে কল দিলো, আর রুমে আসতে বলল,তার নিজেকে কেমন জানি অসহায় লাগছে, এই কদিনে তৃষ্ণার প্রতি অরুনের বন্ধুদের সবার, অন্য রকম একটা ভরসা তৈরি হয়েছে, ওরা দেখেছে তৃষ্ণা যথেষ্ট ঠান্ডা মাথায় যে কোন পরিস্হীতি সামলাতে পারে।
তৃষ্ণা আসার পরে তৃষ্ণাকে বাবু রুমের বাহিরে নিয়ে গিয়ে শাহিন আর রফিক সাহেবের মধ্যে যে কথা গুলি হচ্ছিল তা বলল,আর এ-ও বলল,
তৃষ্ণা তুমি শাহিনের পাশে থাকো আমি একটু আসতেছি।
শাহিনও বুঝতে পেরেছিলো বাবু, রফিক আর তার কথা গুলি শুনে ফেলেছে।
তৃষ্ণা রুমে ঢুকে শাহিনের হাত ধরে বসে আছে চুপচাপ কি বলবে বুঝতে পারছে না।
এদিকে বাবু হসপিটালের একাউন্টসে গিয়ে এখন পর্যন্ত কত টাকা বিল হয়েছে তা জেনে নেয়, তারপর বন্ধুদের সবাইকে শাহিনের হাসবেন্ডের কথা গুলো বলে।ওরা সিদ্ধান্ত নেয় শাহিন বা তার হাসবেন্ডকে কিছু জানানোর কোন দরকার নাই তারা বিল পেইড করে রাখবে। তা হলে আর কে বিল পে করবে সেই প্রসঙ্গ এড়ানো যাবে।
শাহিন তৃষ্ণাকে তার জীবনের ঘনটা বলে,
শাহিনের হাসবেন্ডের নাম রফিক, তিনি দুবাই ছিলেন অনেক বছর,তিনি দুবাই থেকে দেশে এসেছেন চার বছর আগে এখন শাহিনরা চিটাগং থাকে,আর তার হাসবেন্ড ছোট-খাটো বিজনেস করে। তার হাসবেন্ডের নতুন বউয়ের ঘরে দুই ছেলে।
শাহিনের বিয়ের দুই বছর পরে সে কনসিভ করে, তখন শাহিন তার হাসবেন্ডের সাথে দুবাই ছিলো, সেই সময়ে তার কিছু শারীরিক জটিলতার কারণে তার বাচ্চাটা এবর্ট হয়ে যায়, তখন শাহিন একদম ভেঙে পড়ে, তারপর থেকে অনিয়মিত খাওয়া-দাওয়ার ওজন বেড়ে যাওয়া, কারো কাছ থেকে মানসিক সাপোর্ট না পাওয়া সব মিলিয়ে ওর জীবন হয়ে যায় আরো জটিল।তারপর তার আর বাচ্চা হয় নাই।একসময় শাহিনের একটু ব্যথা হলেই ব্যথার ঔষধ খেতো খুব একটা ডাক্তার দেখানো কখনো হয় নাই। তারপর ধরা পড়লো ফ্যাটি লিভার তখনও খুব বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় নাই।তারপর লিভার সিরোসিস এখন লিভার সিরোসিস ক্যানসারে রুপ নিয়েছে।
শাহিন ছিলো একটু ভিন্ন মানসিকতার তার স্বপ্ন ছিলো সে পড়ালেখা শেষ করবে, তারপর নিজের পায়ে দাঁড়াবে তার শখ ছিলো সে পর্যটক হবে, সে ঘুরে বেড়াবে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়, সে দেখবে একই পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন রুপ।সে প্রচুর বই পড়তো, সেই সময়ে চুপেচুপে কবিতা লেখতো, সব মেয়ের কি স্বপ্ন থাকে? শুধু মাত্র মেয়ে বলে, বিয়ে, ঘর, সংসার করার, সবাই কি এক রকম হয়। তার সব মনের কথা তার সব গল্প এক সময় ছিলো শুধু মাত্র তার বন্ধুদের সাথে।
আমাদের সমাজে যেখানে এখনো মেয়ে যত শিক্ষিতই হউক না কেন? তাঁকে সংসার সামলাতে জানতে হবে প্রথমে, তারপর কর্মক্ষেত্র। মেয়েদের সুনিপুণ গৃহিনী হওয়াটাকেই মেয়েদের বড় গুণ বলে বিবেচনা করা হয়। সেখানে তার এই ইচ্ছের মূল্য কে দিবে? সেখানে শাহিনের মতো মেয়ের এই ধরনের ভিন্ন স্বপ্নকে মনে হতো নাদানি, তার নিজের পরিবারই শাহিনকে মনে করতো বাস্তব বুদ্ধিহীন মেয়ে, তাঁকে তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দিতে পারলে বাঁচে।বিয়ের পরে সব ঠিক হয়ে যাবে, স্বামী সংসার করবে সুখে শান্তিতে থাকবে।
যেহেতু শাহিনের মানসিকতা একটু ভিন্ন ছিলো, শাহিনের ছোট বেলা থেকে ঘর সংসারের কোন কাজে আগ্রহ ছিলো না, বিয়ের পরে শ্বশুর বাড়িতে শাহিনকে তার রান্না না পারা, সহ ছোট খাটো ত্রুটি নিয়ে যথেষ্ট পরিমানে লাঞ্ছনার মধ্যে পড়তে হতো।
আস্তে আস্তে শাহিন সব শিখে ফেলে, কিন্তু সে এমন একজন মানুষ, যার কোন কিছু সময় মতো হয় না। এখন সে ঘর গুছানো, নানা রকমের রান্না সব কিছু পারে কিন্তু সে এখন তার সংসারেই অনাহুত অতিথির মতো বাস করে, সেখানে তার কোন অধিকার নাই, সে অবাঞ্ছিত, অপ্রোজনীয় ফুটা পয়সার মতো মূল্যহীন, কিন্তু, পড়ে আছে ঘরের কোনে।
হয়তোবা তাঁকে তার হাসবেন্ডের বাড়ি থেকে বের হয়ে আসতে হতো , বা তার ডিভোর্স হয়ে যেতো,কিন্তু এই মরন ব্যাধি হওয়ার পরে তার হাসবেন্ড রফিক আর তার নতুন স্ত্রী আয়েশার মনে হয়েছে, আর কদিনই বা বাঁচবে এই একদিনের জন্য কি হবে, এত অমানবিক হয়ে। তাই তারা তাঁকে বিশেষ কোন টেক কেয়ার না করলেও এখন আর তাকে সারাদিন নানা কটু কথা শুনতে হয় না।
তবে এখানেও একটা কথা আছে, সে তার বাবা-র বাড়ির সম্পত্তির কিন্তু অংশ পেয়েছিলো, তা তার দু’ভাই মিলে বোনকে সতেরো লক্ষ টাকা দিয়ে তা কিনে নেয়, যদি-ও জায়গাটার মূল্য ছিলো আরো বেশি, আর সেই টাকার একটা বড় অংশ রফিক তার বিজনেসে লাগায়, তখনও শাহিন জানতো না রফিক দেশে অলরেডি আরেকটা সংসার পেতেছে।
রফিক পরপর দু’বার দেশে এসেছিলো একা-একা, সেবার এমন সময় রফিক ছুটি নিয়ে দেশে আসে, তখন তাদের ছোট দোকান শাহিন সামলাতো। সে টেরও পাই নাই রফিক বিয়ে করেছে, তারপর যখন শাহিন বিষয়টা জানলো, তখন এক বাক্যে বলে দিলো তার একটা ভবিষ্য নাই? তার সন্তান লাগবে, তাই সে বিয়ে করেছে। আর শাহিনের তাতে কি কোন সমস্যা হচ্ছে? শাহিনকে তো সে তার সাথে দুবাই রেখেছে, নতুন বউ তো দেশে। তারপর রফিকের বাবা-মা’র বয়স হয়েছে তাদের সেবা যত্ন করারও তো কোন লোক নাই, নানা রকম অযুহাত দেখায়।
তৃষ্ণা যখন শাহিনের মুখ থেকে তার জীবনের গল্প শুনছিলো তখন তার এত রাগ হচ্ছিল মনে হচ্ছিল শাহিনের হাসবেন্ড রফিককে এর পর সামনে পেলে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিবে।
ওর বন্ধুরা বলছিলো তুই ঐ ফাতরা লোকটাকে কেন নিজে থেকে ডিভোর্স দিলি না?
শাহিন তখন এমন কিছু কথা বলল যে, সবাই চুপ হয়ে শুধু ভাবছিলো মানুষের জীবন এমন হয় কেন?
শাহিন বলল,
শোন আমি যখন শুনলাম, রফিক দেশে আরেকটা বিয়ে করেছে, আমার অনেক রাগ হলো, আমি সারারাত কেঁদেছি কেমন জানি নিজেকে পরাজিত মানুষ মনে হচ্ছিল। পরের দিন আমি একা-একা ঘুরতে বের হলাম। আগে আমারা ছুটির দিন গুলোতে কখনো কখনো কয়েকটা পরিবার মিলে কোথাও বেড়াতে যেতাম অথবা আমাদের মতোই প্রবাসি বাংলাদেশিদের বাসায় জন্মদিন, বা কোন অনুষ্ঠানে কখনো একা-একা বেড়ানো হতো না।আমি সেবার দুবাই এর আশেপাশে যত এলাকা আছে ওনন্য দেশ থেকে আসা ভ্রমনকারীদের মতো করে দেখতে লাগলাম, একদম পর্যটকের দৃষ্টিতে, আমার খুবই ভালো লাগতে শুরু করলো, আমার নিজেকে কেমন জানি মুক্ত স্বাধীন মনে হতে লাগলো।
এর পরে আস্তে আস্তে আমি নিজেকে বদলাতে থাকি, আমি আমার ছোট ছোট ভালো লাগা গুলোকে মূল্য দিতে থাকি, আমি তখন দেখতাম রফিক কাজ থেকে এসে দেশে তার নতুন বউয়ের সাথে কথা বলছে, আমি তখন রাতের দুবাই শহর দেখতাম আমি আপন মনে বেলকনিতে বসে থাকতাম, আমি কোন শপিং মলে চলে যেতাম ও তখন ও আমাকে, তার সুবিধার্থে কিছু বলতো না।
আসলে দুবাই তো পর্যটন কেন্দ্র তাই এখানে ঘুরাঘুরি করা কোন সমস্যা না, যদিও আমার তো তেমন কোন খরচ করা লাগতো না, আমি শুধু আমার মতো করে দেখতাম, আমি মানুষ দেখতেও পছন্দ করি।
এর পরে রফিক যখন দেশে আসতো আমি ইচ্ছে করেই আর আসতে চাইতাম না, আমি সেই সময় আমার কাজের বাইরের সময়টা একা-একা উপভোগ করতাম। আমি বেশির ভাগ সময় ড্রাই কিছু খেয়ে কাটিয়ে দিতাম। আমার ভালো লাগতো শুধু মাত্র নিজের মতো করে থাকতে।
আসলে বিবাহিত নারীদের জীবনে তো ইচ্ছে-অনিচ্ছের মূল্য খুবই কম, রফিকের দেশে বউ আছে,তারপর দুবাই যখন থাকে তখন তারজন্য আমি আছি তার ইচ্ছে হলেই রাতে আমাকে পায়, তার খাবার আমি রেডি রাখি, একজন হাসবেন্ড কখনো চিন্তা করতে পারবে তার বউ অন্য কোন পুরুষের শয্যাসঙ্গী হওয়ার পরেও, তার সাথে স্বাভাবিক ভাবে রাত্রিযাপন করবে? কিন্তু একজন নারীর কি মনে হতে পারে না, তার হাসবেন্ড অন্য নারীর সাথে থাকে সে আর তার হাসবেন্ডের সাথে এক বেডে থাকবে না?
তারপর আর কি? আমার এই সুখ ও সইলো না রফিক তার বউ বাচ্চা ফেলে দুবাই আর থাকবে না, চলে এলাম দেশে। এখন তো আমার বাবা-মা নাই, ভাইদের সংসার কোথায় যাবো? থেকে গেলাম রফিকের সাথেই। প্রথম প্রথম রফিকের বউ আয়েশা আমার সাথে খুবই খারাপ ব্যবহার করতো, কিন্তু এই রোগটা ধরা পরাতে বেঁচে গেলাম, এখন আর আমাকে অহেতুক যন্ত্রণা করে না আমি আমার মতো চুপচাপ থাকতে পারি।
আমি আসলে আমার বিয়ের পরে রফিকের সাথে আমার বন্ধুদের অনেক গল্প করেছিলাম, যদিও ও বিষয়টা তেমন কোন গুরুত্ব দিয়ে শোনাতো না কখনো।
আমার জীবনে একটা বড় পাওয়া এবং ভালো লাগার স্মৃতি আমাদের বন্ধুদের সাথে কাটানো, আনন্দের ময় সময় গুলো। আমার যখন প্রচন্ড মন খারাপ হতো আমি একা একা আমার বন্ধুদের সাথে কথা বলতাম।
আমার অনেকবার মনে হয়েছে বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করি, কিন্তু সময় সুযোগ হয় নাই আর আমার মনে ভয় ছিলো, যদি আমার বন্ধুরা সময়ের সাথে বদলে গিয়ে থাকে? আমার প্রতি ওদের সেই ভালোবাসা, আবেগ না থাকে, আমি সহ্য করতে পারবো না।আমি তা হলে আরে শূন্য হয়ে যাবো, আমার জীবনটা তো শুধু না পাওয়া দিয়ে ভরা।
তারপরও বারবার মনে হতো, আচ্ছা আমি তো মরেই যাবো, অল্প কিছু দিনের মধ্যে, একবার না হয় সাহস করে বন্ধুদের কাছে যাই, যাচাই করে দেখি বন্ধুরা আমাকে আমার মতো করে মনে রেখেছে, না ওরাও ভুলে গেছে আমাকে।
তারপর রফিককে বললাম, এটা আমার শেষ ইচ্ছে, রফিক আমাকে নিয়ে আসবে ঢাকাতে, তারপর যদি আমাকে তরুণ তার বাসায় রাতে বেলা নিয়ে যায়, তা হলে রফিক আমাকে রেখে চলে যাবে। আমি বন্ধুদের সবার সাথে একটু সময় কাটাবো,, আমরা পাঁচ বন্ধু আবার একসাথে গল্প করবো তারপর আমি চলে যাবো।
সবাই শাহিনের কথা শুনে শক্ত হয়ে গেছে, তাদের আর নড়ার শক্তি নাই, ওরা কি বলবে শাহিনকে, ওরা কি শাহিনকে শান্তনা দিবে,না-কি বলবে তুই ভালো হয়ে যাবি,কিছু কথা জানলেও কষ্ট না জানলেও কষ্ট।
ওরা এত অসহায় অবস্থায় কখনো পড়ে নাই। এবারও তৃষ্ণা ওদের বাঁচালো, তৃষ্ণা বলল,
অরুন, তুমি রফিক সাহেবকে বলে দাও শাহিনকে আরো দুই তিন দিন হসপিটালে থাকতে হবে। উনি যেন চিটাগং চলে যান। আমি এই লোকের চেহারারও আর দেখতে চাচ্ছি না আপাতত। তারপর শাহিনকে উদ্দেশ্য করে বলল,
শাহিন এখন থেকে শুধু অরুনরা তোমার বন্ধু, এটা যদি ভাব তা হলে ভুল করবে, এখন থেকে তোমার বন্ধু সংখ্যা ডাবল হলো, তাই মজাও হবে ডাবল, আমরা তুমি একটু সুস্থ হলেই একসাথে কোথাও বেড়াতে যাবো। সব চাইতে ভালো হয় তুমি যে, তোমার চার বন্ধুকে নিয়ে হেটে হেটে ভুটান চলে যেতে চেয়েছিলে সেখানে গেলে।
অরুন, তৃষ্ণার সাথে গতকালই গল্প করছিলো, শাহিন যখন ক্লাস টেনে পড়ে, তখন একবার তাদের বন্ধুদের প্রায় রাজি করিয়ে ফেলেছিলো, তারা এসএসসি পরীক্ষার পরে বাসা থেকে টাকা না দিলে নিজেরা তাদের মাটির ব্যাংক ভেঙে যা টাকা পাবে তা দিয়ে ভুটান ঘুরতে যাবে দরকার হয় হেঁটে চলে যাবে।
শেষ
#লেখাঃসুরাইয়া_শারমিন