#যেদিন তুমি এসেছিলে পর্ব ১১
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
_____________
লজ্জায় স্তব্ধ আহনাফ মূর্তির ন্যায় অন্যপাশ ফিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। রেণু যে কথা বলেছে এরপর তো আর মুখ না ঘুরিয়ে উপায় নেই। সত্যি বলতে সে নিজেই আহম্মক বনে গেছে। বাকিদের কী অবস্থা কে জানে! এই মুহূর্তে তার শামুক হতে ভীষণ ইচ্ছে করছে। শামুক যেমন নিজের সেইফটির জন্য শক্ত খোলসের আবরণের মধ্যে নিজেকে চট করে লুকিয়ে ফেলে; তারও ঠিক সেরকম নিজেকে শক্ত কোনো আবরণে আবৃত করে ফেলতে ইচ্ছে করছে।
জহির চৌধুরী ঘুম জড়ানো কণ্ঠে উঁচুস্বরেই জিজ্ঞেস করলেন,’কী হয়েছে?’
ভয়ার্ত দৃষ্টি এবং অস্থির মন নিয়ে মাথা নত করে দাঁড়িয়ে রয়েছে অর্ষা। এখনো তার সর্বাঙ্গ কাঁপছে। তবে ছায়ামূর্তিটি যে কোনো জ্বীন, পরী নয় বরং আহনাফ ছিল এটা বুঝতে পেরে সে লজ্জায় মূর্ছা যাচ্ছে। আর বুঝলই যখন আরেকটু আগে বুঝলে কী এমন হতো?
রেণুও প্রায় নিশ্চুপ, নির্বিকার। সে বুঝতে পারছে না তার কিছু বলা উচিত কিনা। আমেনা বেগম এগিয়ে অর্ষার কাছে যান। মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করেন,’কী হয়েছে রে মা?’
এরা কি কেউ রেণু আপার উদ্ভট কথাটি শুনেছে? অর্ষা আড়চোখে একবার তাকায়। এখানে আহিল নেই। ওর ঘুম ভাঙেনি তাহলে?
অর্ষাকে এই যাত্রায়ও আহনাফ বাঁচিয়ে দিলো। সে বিবৃতি দেওয়ার ভঙ্গিতে বলল,’আমি কফি বানাতে এসেছিলাম। এরমধ্যে কারেন্ট চলে গেল। আর অর্ষাও এই সময়ে এদিকে এসেছে। সম্ভবত অন্ধকারে আমায় দেখে ভয় পেয়েছে।’
অর্ষাও নিজেকে সবার সামনে ক্লিয়ার করতে তড়িঘড়ি করে বলল,’ইয়ে আসলে, আমি পানি নিতে এসেছিলাম। আর সত্যিই আমি ভয় পেয়েছিলাম।’
মুচকি হাসলেন আমেনা বেগম। পিঠে হাত বুলিয়ে বললেন,’আর ভয় পাওয়া লাগবে না। পানি নিয়েছ?’
অর্ষা দু’দিকে মাথা নাড়ায়। তিনি রেণুকে বললেন,’ওর পানির বোতলটা ভরে ঘরে দিয়ে আয়।’
রেণু মাথা নাড়ায়। আহনাফ মনে মনে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। যদি বাবা-মা রেণুর কথাটা খেয়াল করত এবং আহিল এখানে থাকত তাহলে কী বিশ্রি একটা ঘটনাই না ঘটে যেত!
ঘরে ফিরে অর্ষার আর পড়া হলো না। রেণু পানির বোতলের সাথে টর্চও দিয়ে গেছে। কিন্তু সে পড়াতে মন বসাতে পারেনি। তাই দুরুদুরু বুকে আয়তুল কুরসী পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়েছে।
ঘুম যখন ভাঙে তখন বেশ বেলা হয়ে গেছে। উঠে দ্রুত রেডি হয়ে নেয়। রেণু অর্ষাকে দেখে বলল,’আল্লাহ্ গো আল্লাহ্! আফা কী ঘুমডাই না দিছেন আইজকা। ডাকতে ডাকতে মনে হয় আমার দম বাইর হইয়া গেছে। তবুও আপনেরে উডাইতে পারি নাই।’
অর্ষা অপ্রস্তুতভাবে হাসে। আহিলের নাস্তা করা শেষ। সে চেয়ার থেকে উঠতে উঠতে বলল,’জলদি খেয়ে নে।’
অর্ষা দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,’সময় নেই। লেট হয়ে যাবে।’
আহিল ও’কে আর কিছু না বলে রেণুকে বলল,’টিফিন বক্সে ব্রেকফাস্ট দিয়ে দাও।’
অর্ষা ওর দিকে তাকিয়ে মৃদু মুচকি হাসে। সত্যি কথা বলতে কি বাবার পর নিজের আপন ভাইও তাকে এতটা কেয়ার করেনি। বরং উঠতে, বসতে কথা শুনিয়েছে। অকারণেও মেরেছে। সেখানে বাবার পর পুরুষের দ্বিতীয় স্থানটা আহিলকে নিঃসন্দেহেই দেওয়া যায়। অর্ষার মনে আছে ওরা যখন ইন্টার প্রথম বর্ষে নতুন ভর্তি হয়, তখন ক্লাসের একটা মেয়ে আহিলকে প্রপোজ করেছিল। মেয়েটি ছিল দূর্দান্ত সুন্দরী। যেমন সুন্দর দেখতে; তেমনই তার গুণ। অসাধারণ গান গায় এবং নৃত্যও করে। আহিল যে দেখতে কোনো অংশে কম সেটাও তো নয়। অর্ষার সাথে আহিলের বন্ধুত্বের বয়স তখন দু’মাস। মেয়েটির সাথে আহিলের রিলেশন হয়। তবে এক পর্যায়ে মেয়েটি আকারে-ইঙ্গিতে অর্ষার উপস্থিতি বুঝিয়ে দিয়েছিল। এটাও বুঝিয়েছিল, তাকে সে নিজের পথের কাঁটা মনে করে।
অর্ষা বিষয়টি যখন বুঝতে পারে তখন চেষ্টা করেছিল নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার। কোনো মেয়েই হয়তো তার ভালোবাসার মানুষটির পাশে অন্য কোনো মেয়েকে সহ্য করতে পারে না। তাই সেও অর্ষাকে সহ্য করতে পারেনি। যদিও আহিল এবং অর্ষার মাঝে বন্ধুত্বটা তখনো ততটা গাঢ় হয়নি। শেষমেশ একদিন মেয়েটি অর্ষাকে নিয়ে যা তা বলায় আহিল ব্রেকাপ করে ফেলে। রিজন হিসেবে মেয়েটিকে বলেছিল,’তোমার আগে অর্ষা আমার জীবনে এসেছে। আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব ছাড়া অন্য কোনো সম্পর্ক নেই। এছাড়া আমরা কখনো এমনও আচরণ করি না যেটা তোমার খারাপ লাগবে বা সন্দেহ করবে। সূতরাং, যে আমার বন্ধুদের সহ্য করতে পারবে না তাকে আমার জীবনেও প্রয়োজন নেই।’
মেয়েটি সেদিন প্রত্যুত্তরে কিছুই বলেনি। এর কিছুদিন পর্যন্ত কলেজেও আসেনি। এসবের জন্য অর্ষার খুব খারাপ লাগত। বারবার মনে হতো সবকিছুর জন্য হয়তো সে নিজেই দায়ী। কিছুদিন পর অন্যদের মাধ্যমে জানা যায় মেয়েটি টিসি নিয়ে চলে গেছে। আহিলের কোনো ভাবান্তর লক্ষ্য না হলেও মনে মনে অর্ষার খারাপ লাগাটা ভীষণ বেড়েছিল। মেয়েটির সাথে যোগাযোগ করারও চেষ্টা করেছিল। তবে কোথাও কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।
অতীতের পাতা উলটাতে গিয়ে যে কলেজেও এসে পড়েছে সেই খেয়ালটাও অর্ষার নেই। আহিল যখন বলল,’কিরে? নামবি না?’
অর্ষার হুঁশ আসে তখন। সে বাইক থেকে নেমে ক্লাসের দিকে যায়। জুঁই আর লামিয়া বাদে বাকিরা থমথমে মুখে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল। অর্ষা গিয়ে ওদের পাশে দাঁড়ায়।
রেশমির গলা জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করে,’কী হয়েছে রে?’
রেশমি গম্ভীরমুখে উত্তর দিলো,’হয়েছে আমাদের কপাল!’
অর্ষা বুঝল না কিছু। ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তিনজনের দিকে। আশিক হঠাৎ করে অর্ষার সামনে আসে। ওর হাত নিজের হাতের ওপর রেখে বলে,’কথা দে, তুই কখনো প্রেম করবি না?’
অস্ফুটস্বরে অর্ষার মুখ থেকে বেরিয়ে আসে,’মানে?’
আহিলও এবার সেখানে এসে উপস্থিত হয়। ওদেরকে অন্যরকম দেখে সেও জিজ্ঞেস করে,’হয়েছে কী?’
এবার রেশমিও আশিকের মতো একই কাজ করল আহিলের সঙ্গে। আহিল ভ্রুঁ কুঁচকে জানতে চাইল,’এটা কথা দেওয়ার মতো কিছু?’
মাঝখানে ফোঁড়ন কাটল দিদার। সে চটজলদি রেশমির হাতটা নিজের হাতের ওপর রেখে বলল,’ছেলেদের কথা দেওয়া লাগে না। কারণ ছেলেরা সেলফিস হয় না। সেলফিস হচ্ছে নারীজাতি। তুইও সেলফিস। থুক্কু! মানে বলতে চাচ্ছি, তুইও সেলফিস হতে পারিস যেকোনো মুহূর্তে। সূতরাং তুই আর অর্ষা কথা দে যে, প্রেম করবি না কখনো।’
অর্ষা এবার চরম বিরক্ত হয়। একই তো ক্ষুধা লেগেছে তারমধ্যে আবার ওদের নাটক। কী হয়েছে সেটাও বলছে না। শুধু কথা পেঁচাচ্ছে। গ্যাঞ্জাম পার্টির হুটহাট মাথায় গণ্ডগোল হয় বলে অর্ষা বিশেষ পাত্তা দিলো না। সে ক্লাসে চলে যায়।
রেশমি, আশিক আর দিদারকে উদ্দেশ্য করে আহিল জিজ্ঞেস করল,’লামিয়া আর জুঁই আসেনি?’
অর্ষা ক্লাসে গিয়ে রীতিমতো স্তব্ধ। ওরা সবসময় যেই বেঞ্চটিতে চারজনে মিলে বসে, সেই বেঞ্চেই দু’মাথায় জুঁই আর লামিয়া দুজনে ব্যাগের ওপর মাথা রেখে ফোনে ফুসুরফাসুর করছে। হঠাৎ হঠাৎ যে দু’টিতে কথা বলতে বলতে হাসছে সেটা ওদের শরীরের কাঁপুনি দেখেই বোঝা যাচ্ছে। এতক্ষণে বাইরে ওদের নাটকের কারণটা ক্লিয়ার হলো। তবে সে তো বিস্ময় আর মোটেও আটকে রাখতে পারছে না। জুঁই নিজেও তো লামিয়ার থেকে কম ফাস্ট নয়। একদিন আর এক রাতেই প্রেম এত উতলে পড়ল?
অর্ষা অসহায় দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে লম্বা শ্বাস নেয়। এগিয়ে গিয়ে ব্যাগটা মাঝখানে রাখে। লামিয়া আর জুঁই একবার ওর দিকে তাকিয়ে আবারও আগের স্থানে থেকে কথায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল। হতাশ হতে হয় ওদের কাণ্ডে। সে পেছনের বেঞ্চে গিয়ে সামনের বেঞ্চে এলো। চুপচাপ ব্যাগ থেকে টিফিন বক্স থেকে খাবার বের করে খেতে শুরু করে। হতাশ দৃষ্টিতে ডানদিকে একবার লামিয়ার দিকে তাকায়; বামদিকে একবার জুঁইয়ের দিকে তাকায়। আহারে জুঁই! জুঁই ফুলের সুবাসে বাকিদের হতাশাজনক অবস্থা। অন্য সময় হলে সবাই খাবার কাড়াকাড়ি করে খেত। দেখা যেত, অর্ষা হয়তো নিজেও ভাগে পেত না খাবার!
খাবার গলা দিয়ে নামছে না। কষ্ট হচ্ছে। কান্না পাচ্ছে। রেশমি আসে তখন ক্লাসে। সেও পেছনের বেঞ্চে থেকে সামনের বেঞ্চে আসে। কিনারের দুজনকে এখন সরায় এমন সাধ্যি কার? রেশমি বাটি থেকে স্যান্ডউইচের রুটি নিয়ে আলস্য ভঙ্গিতে কামড় দিয়ে বলে,’আশিকের উদ্ভট কবিতাই এখন সঠিক মনে হচ্ছে বুঝলি। চুমকি চলেছে একা পথে গান গায় না ওরা? দেখ, সেই আমি একাই রইলাম।’
অর্ষা সান্ত্বনা দেওয়ার ভঙ্গিতে বলল,’থাক মন খারাপ করিস না। আমি আছি তো।’
জুঁইয়ের কথা বলা শেষ হলে ফোন ব্যাগের ভেতর রাখে। উচ্ছস্বিত কণ্ঠে বলে,’জানিস কী হয়েছে?’
রেশমি মুখ ঝামটা মেরে বলে,’ক্লাসে এসে অব্দি যা প্রেম-পিরিতি শুরু করেছিস! কিছু জানতে বাকি আছে এখনো?’
জুঁই ওর গলা জড়িয়ে ধরে বলল,’না রে! প্রেম এখনো হয়নি। হলে তোদের বলতাম না?’
‘তোকে আর লামিয়াকে এখন আর বিশ্বাসই করি না।’
অর্ষাও হতাশসুরে বলল,’আজকে শেষ ক্লাস আমাদের। আজকের দিনটা কি ফোনে ফুসুরফাসুর না করলেই নয়?’
‘স্যরি জান। একটু কথা বলতে গিয়ে এতক্ষণ কথা বলেছি খেয়ালই করিনি। আসলে সুবাস যে এত সুন্দর গুছিয়ে কথা বলে! কী বলব আর তোদের।’
লামিয়ারও ফোনে কথা বলা শেষ। সেও ওদের উদ্দেশ্যে বলে,’কী গল্প করছিস তোরা?’
রেশমি চটজলদি অর্ষাকে জড়িয়ে ধরে, গালে গাল মিলিয়ে বলল,’আমরা দুই এতিম তোদের মাঝখানে বসেছি মানে এই নয় যে,মন চাইলে আমাদের সাথে কথা বলবি। আবার মনে না চাইলে বলবি না। তোরা ভাগ। ফোনে কথা বল। যা। হুস, হুস!’
জুঁই কিংবা লামিয়া কেউই সরল না। বরঞ্চ দুজনে দু’পাশ থেকে দুজনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজেদের ভুলের জন্য মাফ চাইল। শেষ ক্লাস করে সবাই মিলে রেস্টুরেন্টে চলে যায়। মিনিট বিশেক একেকজনের মান-অভিমানের পালা চলে। এরপর আবারও আগের মতো হয়ে যায় গ্যাং-টি। হৈ-হুল্লোড়, আড্ডা-মাস্তি, ছবি তুলে দিনটিকে ওরা যতটা সম্ভব স্মরণীয় করে রাখার চেষ্টা করল।
_______
আমেনা বেগম বারবার করে আহনাফকে বারণ করছেন, আজই যেন সুইজারল্যান্ডে না যায়।
আহনাফ রেডি হতে হতে বলল,’আর থাকা যাবে না, মা। আমি এখন যথেষ্ট সুস্থ আছি। আমার কোনো সমস্যাই হবে না।’
তিনি অভিমানী কণ্ঠে সুধালেন,’বাবা-মায়ের চেয়ে ঐ ভীনদেশ তোর অনেক আপন তাই না রে?’
আহনাফ মৃদু হেসে বলে,’প্রতিটাবার যাওয়ার সময় তুমি এমন বাচ্চাদের মতো করো।’
‘করি কারণ, আমি তোকে ভালোবাসি। অনেক মিস করি।’
‘আমিও তো তোমাদের সবাইকে খুব ভালোবাসি মা। কত করেই তো বললাম, চলো সবাই মিলে সুইজারল্যান্ড সেটেল হই। কথাই তো শোনো না!’
তিনি ঝাঁঝের সঙ্গে বলেন,’কেন সুইজারল্যান্ডে সেটেল হব হ্যাঁ? বাংলাদেশ আমার মাতৃভূমি। আমার জন্মভূমি। বিনাকারণে আমার জন্মভূমি কেন ত্যাগ করব?’
‘কী আছে এই দেশে বলো তো? রাস্তায় বের হলেই দিনের অর্ধেকটা সময় জ্যামে আটকে থাকতে হয়। যেখানে, সেখানে ময়লা-আবর্জনা। হাই সোসাইটি ব্যতীত কোথাও কোনো সুস্থ পরিবেশ নেই। দরিদ্রদের করুণ অবস্থা। হাইজেনিক খাবার!’
‘তুই বিদেশে গিয়ে বিদেশী বাবু হয়ে গেছিস ভালো করেছিস। কিন্তু আমার দেশ নিয়ে আজেবাজে কথা বলবি না।’
‘বাংলাদেশ আমারও দেশ মা। আমিও নিজের দেশকে ভালোবাসি। তুমিও খুব ভালো করেই জানো, আমি যা বলেছি তার কোনোটাই মিথ্যে নয়।’
‘না হয়, না হোক। তবুও আমি আমার দেশ ছাড়ব না।’
‘আচ্ছা বেশ! এখন আর রাগ করতে হবে না। যাওয়ার আগে তোমার হাসিমুখটা দেখে যেতে চাই।’
‘মানে কী? তোর ফ্লাইট রাতে। সন্ধ্যায় বের হলেই তো হয়।’
‘এয়ারপোর্টে সন্ধ্যার সময়েই যাব। এখন যাব অফিসে। বাবার কিছু কাজ আছে ওগুলো কমপ্লিট করব। বিকেল হবে সম্ভবত। অফিস থেকে বেরিয়ে এক বন্ধুর বাসায় যাব। ওর বার্থডে আজ। তাই সবাই মিলে অল্প কিছু সময় কাটাব। ওখান থেকে সোজা এয়ারপোর্টে যাব।’
‘আহিলের সঙ্গে দেখা করবি না?’
‘সময় তো মিলছে না। আমি ওর সাথে ফোনে কথা বলে নিব। তুমি টেনশন কোরো না। আর হ্যাঁ, ঠিকমতো খাবে। নিজের যত্ন নেবে। এখন তো আফরিন নেই। তাই বলে কিন্তু খাওয়া-দাওয়ায় একদম ফাঁকি দেওয়া যাবে না বলে দিলাম। আমি কিন্তু সিসি ক্যামেরা রেখে যাচ্ছি।’
আমেনা বেগম হেসে ফেলেন। হাসতে হাসতে বলেন,’তোর সিসি ক্যামেরাটা কি রেণু?’
প্রত্যুত্তরে আহনাফও হেসে ফেলে। বাড়ি থেকে বের হওয়ার পূর্বে রেণুকে সব বলে বুঝিয়ে দেয়। মাকেও বুঝিয়ে-সুঝিয়ে সে বাড়ি থেকে বের হয়। অফিসে গিয়ে কাজ এবং কাজ শেষে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া এই পুরো সময়টুকুই তার ভীষণ ব্যস্তভাবে কেটেছে। অন্য কোনো চিন্তা-ভাবনা মাথায় আসার সুযোগ হয়নি। বন্ধুরা ও’কে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দেয়। ফ্লাইটে ওঠার আগে আহিল, আফরিন আর বাবা-মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলে নেয় সে। সবার থেকে বিদায় নিয়ে প্লেনে উঠে বসে। সারাদিনের ক্লান্তি এখন তাকে পেয়েছে। তবে কাবু করা সহজ নয়!
দু’চোখের পাতা বন্ধ করে সিটের সাথে মাথা ঠেকিয়ে একটু আরাম করে বসে। সহজে তার বাংলাদেশ আসতে ইচ্ছে করে না। আবার এলে সকলের মায়া কাটিয়ে যেতেও ইচ্ছে করে না। একটু নড়েচড়ে সোজা হয়ে বসে। ফোনের গ্যালারিতে যায়। ক্যাথিওনের ছবি দেখে আনমনে হাসে। পিচ্চিটা এখন কেমন আছে? দেখা যাবে সেও আহনাফের সাথে রাগ করে বসে আছে। আহনাফ দূরে কোথাও যাওয়ার আগে ক্যাথিওনকে পাশের বাসায় রেখে যায়। ঐ বাড়িতে বিদেশী দম্পতির আট বছরের ছোটো একটা পরীর মতো মেয়ে রয়েছে। সে ক্যাথিওনকে ভীষণ ভালোবাসে। আগলে রাখে। তাই আহনাফও ওর কাছে ক্যাথিওনকে নিশ্চিন্তে রাখতে পারে।
অনেকক্ষণ গ্যালারিতে ঘাটাঘাটি করে এই ছবি, সেই ছবি দেখে। কোনো কিছুতেই তার মন বসছে না। ক্লান্তি, অবসাদও এতক্ষণে দূর হওয়ার কথা। তবুও কেন মন এত অস্থির হয়ে রয়েছে সে কিছুতেই বুঝতে পারছে না। মনে হচ্ছে সে কাউকে ভীষণ মিস করছে, ভীষণ!
চলবে…