#যেদিন তুমি এসেছিলে পর্ব ৩৯
#লেখিকা_মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
অপ্রত্যাশিতভাবে কাছে আসার মুহূর্ত হয় কল্পনাতীত, বর্ণনাতীত। অনুভব করার জ্ঞানটুকুও অবশিষ্ট নেই। মোহাবিষ্ট হয়ে আহনাফের দ্বারা অর্ষার হাত চলছে। হার্টবিট চলছে দ্রুত। অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বলবে নাকি সুখকর পরিস্থিতি হিসেবে আখ্যায়িত করবে সেটাও সে বুঝতে পারছে না।
স্মিথ দৌঁড়ে রান্নাঘরে আসায় আহনাফ অর্ষাকে ছেড়ে কিছুটা দূরে সরে দাঁড়ায়। স্মিথও কিছুক্ষণ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
অর্ষা আমতা-আমতা করে জিজ্ঞেস করে,’কী হয়েছে স্মিথ?’
স্মিথ শান্তকণ্ঠে বলল,’ফ্রিজের পানি খাব।’
আহনাফ ফ্রিজ থেকে পানির বোতল বের করে একটা গ্লাসে ঢেলে দেয়। স্মিথ গ্লাস নিয়ে চলে যাওয়ার পর আহনাফ আবার কাছে আসতেই অর্ষা বলে,
‘আর সাহায্য লাগবে না। কাটা হয়ে গেছে।’
‘ডাবলি কি আগে ভেজানো ছিল? সেদ্ধ হবে এখন?’
অর্ষা এবার আহনাফের দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। কোমরে হাত রেখে বলে,’আপনার কি মনে হয় আমি রান্নাবান্না করতে জানি না?’
‘আমি এই কথা কখন বললাম? আমি তো শুধু জিজ্ঞেস করলাম।’
‘আপনার প্রশ্নের ধরণেই বোঝা যায়। ভেজানো ডাবলি আগেই ফ্রিজের ডিপে রাখা ছিল। দু’দিন আগে বানিয়ে খেয়েছিলাম।’
‘এ কথাটা প্রথমে বললেই পারতে। শুধু শুধু ঝগড়া করার জন্য মুখিয়ে থাকো।’
‘আমি মোটেও ঝগড়া করছি না।’
‘তাহলে কি তর্ক করছ?’
‘হয়েছে কি আপনার আজ?’
‘আমার আবার কী হবে? আমি কি মেয়ে নাকি? হলে আমার বউয়ের হবে। মানে তোমার।’
কথাটা বলেই অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে আহনাফ। কী বলতে কী বলে ফেলেছে! এদিকে আহনাফের এমন কথা শুনে মুখ হা হয়ে গেছে অর্ষার।
আহনাফ মুখটা কাচুমুচু করে বলল,’স্যরি! আমি আসলে এমন কিছু বলতে চাইনি। সব দোষ লামিয়ার। ওর বাতাস লেগেছে আমার গায়ে। তাই তো ওর মতো বেফাঁসে উলটা-পালটা কথা বলে ফেলেছি। তুমি কিছু মনে কোরো না প্লিজ!’
কথা শেষ করে আহনাফ আর এক মুহূর্তও সেখানে দাঁড়ায় না। লম্বা লম্বা পা ফেলে দ্রুত বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। অর্ষা বিস্মিত নয়নে নিরবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হেসে ফেলে।
আহনাফকে হন্তদন্ত হয়ে আসতে দেখে লামিয়া জিজ্ঞেস করে,’আরে ভাইয়া কী হলো?’
আহনাফ অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে ফের। লামিয়ার জন্যই সব ঘেঁটে যাচ্ছে। এতদিন তো সে তার গম্ভীরতা, রাগ নিয়ে ভালোই কর্তৃত্ব ফলাচ্ছিল। নিজের মতো চলতে পারছিল। আর এখন কিনা হুট করেই হাওয়া বদলে গেল!
আহনাফকে নিরুত্তর দেখে লামিয়া ফের বলল,’এক্সকিউজ মি ভাইয়া? হলো কী?’
‘কিছু হয়নি।’
‘এভাবে বাড়ি থেকে বের হলেন যে? ভূত দেখেছেন নাকি?’
আহনাফ বেঞ্চে বসতে বসতে বলল,’ধুর! কীসব যে বলো তুমি। ভূত আসবে কোত্থেকে? ভূত বলতে কিছু আছে নাকি?’
লামিয়াও এবার পাশে বসে বলল,’হয়তো নেই। তবে আপনার ভাবসাবে মনে হচ্ছে থাকলেও থাকতে পারে।’
আহনাফ এবার নিহালের দিকে তাকয়। কপাল চুলকে মৃদুস্বরে জানতে চায়,’একে টলারেট করেন কীভাবে?’
‘সবই কপাল ভাই! দু’কাঁধ উঁচু করে বলল নিহাল।
লামিয়া গাল ফুলিয়ে বলে,’তোমরা দুজন আমাকে পচাচ্ছ?’
নিহাল হেসে ফেলে। লামিয়ার গাল টেনে দিয়ে বলে,’এত সাধ্যি কার?’
লামিয়া অবশ্য নিহালের আহ্লাদী কথায় একদম পাত্তা দিলো না। সে এমনভাবে নিহালের দিকে তাকাল যার অর্থ,’একবার শুধু একা পাই তোমাকে! ঘাড় ম’ট’কা’ব একদম। আমায় তো চেনো না তুমি!’
এরপর সে নাছোড়বান্দার মতো আবারও আহনাফের কাছে জানতে চাইল,’আমি কী জিজ্ঞেস করলাম? বলেন না কেন?’
‘তুমি কি এমনই লামিয়া? মাঝখানে এতগুলো কথা হয়ে গেল। তারপরও সেই একই প্রশ্ন নিয়ে বসে আছো!’
‘আরে না জানলে বুঝব কীভাবে প্ল্যান কতদূর আগালো?’
‘কী! প্ল্যান মানে? কীসের প্ল্যান?’
লামিয়া এবার ফেঁসে যায়। মুখ ফসকে কথা বলার স্বভাব তার ইহজীবনেও যাবে কিনা সন্দেহ! তুতলিয়ে বলল,
‘চটপটি হওয়ার প্ল্যান।’
‘কী বলো এসব?’
‘আসলে ভাইয়া লামিয়া প্ল্যান করেছিল যে, অর্ষার চটপটির প্লেটে ঝাল মিশিয়ে দেবে একটু বেশি। ঐযে একটু আগে নাকি দুজনের রাগ-অভিমান হয়েছে। তাই রিভেঞ্জ নেওয়ার প্ল্যান করেছিল আরকি! অর্ষা তো ঝাল খেতে পারে না।’
নিহাল লামিয়াকে বাঁচানোর জন্য মিথ্যা বলল। লামিয়া যতই বাঁচাল প্রকৃতির মেয়ে হোক না, তার তো স্ত্রী! আর কঠিন মুহূর্তে, বিপদে-আপদে স্ত্রীকে বাঁচানো তার দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। এদিকে লামিয়াও মহাখুশি হয় নিহালের পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার ক্ষমতা দেখে।
ওদের দুজনের খুশিতে পানি ঢেলে আহনাফ বলল,’কিন্তু অর্ষা তো ঝাল খেতে পারে। শুধু তাই নয়, খুব পছন্দও করে।’
লামিয়ার হাসি বন্ধ হয়ে যায়। কী করবে এখন সে? সেই সময়ে তাকে আল্লাহ্-ই সাহায্য করে। উসিলা হিসেবে অর্ষাকে বোধ হয় পাঠিয়ে দিলেন।
গার্ডেনে এসে অর্ষা সবাইকে ভেতরে আসতে বলল। চটপটি বানানো হয়ে গেছে। লামিয়া আর এক সেকেন্ড সময়ও নষ্ট করল না। দ্রুত বসা থেকে উঠে অর্ষার হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে বলল,’হ্যাঁ, হ্যাঁ চল।’
‘আরে! এভাবে তাড়াহুড়া করে হাঁটছিস কেন? তুইও পড়বি, আমাকেও ফেলবি।’
‘আর আস্তে হাঁটলে আমি ম’র’ব। সূতরাং পা চালা।’
অর্ষায় বেজায় বিরক্ত হয়ে লামিয়ার দিকে তাকায়।
অর্ষা সবার জন্য চটপটি নিয়েছে বাটিতে। স্মিথ আর লিলিয়া খাবে না জানিয়ে দিয়েছে। যেহেতু বেশি করে ঝাল দিয়ে বানানো হয়েছে তাই আহনাফ কিংবা অর্ষা কেউই আর জোর করল না।
খাওয়ার সময় লামিয়া খেয়াল করে যে, আহনাফ কেমন যেন সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। একটু পরপরই তাকাচ্ছে। পাছে লামিয়া আবার ধরা না পড়ে যায়, তাই অর্ষাকে বলল,
‘তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে। চল ঘরে যাই।’
অর্ষা আহনাফের দিকে তাকাতেই আহনাফ সায় দিল। নিহালও বলল,’হ্যাঁ, যাও তোমরা আলাদা গল্প করো। মেয়েলি গল্প শুনে আমাদের কাজ নেই। আমি আর আহনাফ ভাইয়া আমাদের গল্প করি।’
অর্ষা হেসে বলল,’ঠিক আছে।’
দুজনে নিজেদের খাবার নিয়ে রুমে চলে যায়। বিছানায় বসে অর্ষা বলল,’এবার বল এমন কী কথা?’
‘আরে ধুর! জানিস না তো কী হয়েছে!’
‘কী?’
‘আমি মুখ ফসকে প্ল্যানের কথা বলে ফেলেছি।’
অর্ষা কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বলে,’তোর বেফাঁসে কথা বলার স্বভাব কি কোনোদিন যাবে না?’
‘মনে হয় না।’
‘বেশি কিছু যে বলিসনি এটাই অনেক।’
‘ঘোড়ার ডিম! একটু পরপর তোর হাজবেন্ড যেই লুক দিচ্ছে! বাপরে বাপ!’
‘বাদ দে এসব। আমি বলি শোন, শুধু শুধু এসব করে সময় নষ্ট করিস না। তোরা ঘুরেফিরে ইনজয় কর। কাল থেকেই ঘুরাঘুরি শুরু কর।’
‘অত সোজা? এত সহজে আমি হাল ছাড়ছি না বুঝলি?’
‘বাচ্চামো করছিস কেন? আমায় একটা কথা বল। তুই এখানে হানিমুনে এসেছিস নাকি রোমান্টিসিজম শেখানোর ক্লাস নিতে?’
লামিয়া দুষ্টু হেসে বলল,’দুটোই।’
অর্ষার ফোনে হোয়াটসএপে তখন কল আসে। ফোন চার্জে দেওয়া ছিল। লামিয়া গিয়ে ফোন তোলে।
‘রেশমি ফোন করেছে।’ বলল লামিয়া।
এরপর সে নিজেই ফোন রিসিভ করে বলল,’কীরে? কী খবর?’
‘লামিয়া! তুই এখনো অর্ষার বাসায়?’ ওপাশ থেকে বলল রেশমি।
‘জি হ্যাঁ।’
লামিয়া অর্ষার পাশে বসে ফোন লাউড স্পিকারে দিল। ওপাশ থেকে রেশমি বলল,’রাতেও এখানে থাকবি?’
‘উঁহু। একটু পর চলে যাব। তোর কাহিনি কী বল? অর্ষাকে একা কল দিলি কেন?’
‘ভেজালে পড়ে গেছি বা’ল! আমার জন্য ঘটকে বিয়ের প্রস্তাব এনেছে।’
‘ওয়াও! এটা তো গ্রেট নিউজ। গুড নিউজ। তোর মুড অফ কেন তাহলে?’
অর্ষাও বলল,’তাই তো! তুই না এতদিন বিয়ে বিয়ে করে পাগল হয়ে যাচ্ছিলি? তাহলে এখন এমন করছিস কেন?’
রেশমি বিরক্ত হয়ে বলল,’আশ্চর্য! তাই বলে কি আমি এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চেয়েছি? অনার্সটা শেষ করতে চেয়েছিলাম।’
লামিয়া ফোন নিয়ে শুয়ে পড়ল। হেসে হেসে বলল,’একেবারে বিয়ে পাশ কর আগে। পরে না অনার্স আর মাস্টার্স করবি।’
‘মজা নিস না লামিয়া।’
‘আরে ইয়ার! এত ভাউ খাচ্ছিস কেন? আমিও তো বলেছিলাম বিয়েটিয়ে কিচ্ছু করব না এখনই। কিন্তু কী হলো শেষে? ছেলেকে দেখে আমারই মাথা নষ্ট হয়ে গেল। আমিই বিয়ের জন্য পাগল হয়ে গেলাম। তোরও দেখবি এমন হবে।’
‘জি না! আমি ছেলের ছবি দেখেছি। আহামরী কোনো সুন্দর নয়। তবে চলার মতো।’
‘তুই যদি সত্যিই বিয়ে করতে না চাস তাহলে বাড়িতে সুন্দর করে বুঝিয়ে বল।’ বলল অর্ষা।
রেশমি রাগ দেখিয়ে বলল,’বলেছি রে বলেছি! কিন্তু ম’রা’র ঘটক যে কী বুঝাইছে আব্বু-আম্মুরে আল্লাহ্ মালুম! ঘটক উল্টা আমার সামনেই মাকে বলে, এখনই তো মেয়েদের বিয়ের সময়। পরে চেহারা নষ্ট হয়ে যাবে ব্লা ব্লা।’
‘মহিলা ঘটক নাকি?’
‘হ্যাঁ রে! পাশের বাড়ির আন্টি। তার বান্ধবীর ছেলের জন্য ঘটকালি করতেছে।’
লামিয়া আর অর্ষা এবার শব্দ করে হেসে ফেলে। লামিয়া হেসে হেসে বলে,’তোর বিয়ের দায়িত্ব যখন পাশের বাড়ির আন্টি নিয়েছে, তখন তুই নিশ্চিন্তে থাক। উনারা আদাজল খেয়েই নামে।’
‘সব দোষ তোদের।’
‘আমাদের?’ সমস্বরে বলল অর্ষা, লামিয়া।
লামিয়া জিজ্ঞেস করল,’আমরা কী করেছি?’
‘তোরা সবাই বিয়ে করে ফেলেছিস এই খোঁটা দিচ্ছে আম্মু। আমি না করেছি বলে আমায় বলতেছে, তোর সব বান্ধবীরা বিয়ে করে ফেলেছে। তাহলে তোর সমস্যা কী? এখন আমি কী করব তোরাই বল।’
‘এত ভাউ না খেয়ে ছেলে ভালো হলে বিয়ে-শাদী করে ফেল।’
‘সলিউশনের জন্য অর্ষাকে ফোন করেছিলাম। আর তুই আমাকে এসব কী বলতেছিস?’
‘খারাপ কী বললাম? বিয়েটা করেই ফেল। ভালোই হবে তাহলে। আমরা তিনজনে ম্যারিড। তুই একাই আনম্যারিড বিষয়টা কেমন না?’
রেশমি বিমর্ষস্বরে বলল,’কালকে দেখতে আসবে। দেখি কী হয়! রাখছি এখন।’
‘ঠিক আছে। অল দ্য বেস্ট।’
ফোন রেখে লামিয়া বলে,’বিয়েটা হয়ে গেলেই ভালো হবে। চার বান্ধবী এক সাথে বর নিয়ে ঘুরতে যাব। গ্রুপ সেলফি তুলব। অনেক মজা হবে।’
প্রত্যুত্তরে অর্ষা মুচকি হাসে। বাটিগুলো হাতে নিয়ে বলে,’আমি যাই ডিনারের ব্যবস্থা করি।’
‘যা। আমি একটু শুয়ে থাকি।’
অর্ষা গিয়ে একাই ডিনারের আয়োজন করছিল। কিছুক্ষণ পর লিলিয়াও এসে অর্ষার হাতে হাতে কাজ করে। আজ অনেক পদের খাবার রান্না করা হয়েছে। সবকিছু ডাইনিং টেবিলে নিয়ে সকলকে খেতে ডাকা হয়। লামিয়ার ঠোঁটে কেমন যেন দুষ্টু দুষ্টু হাসি।
খাওয়া-দাওয়ার পাট চুকিয়ে চলে যাওয়ার সময় লামিয়া আবদার করল আহনাফ যেন ওদের পৌঁছে দিয়ে আসে। আহনাফও কোনো আপত্তি প্রকাশ করেনি।
আজকের মতো বিদায় নিয়ে লামিয়া আর নিহাল চলে যায়। ওদেরকে পৌঁছে দিতে যায় আহনাফ। অর্ষার আজ অনেক ধকল গেছে বলে, দু’চোখে ঘুমও চলে আসে। তাই আহনাফের ফিরে আসা পর্যন্ত আর অপেক্ষা করে থাকতে পারে না। আহনাফের ওদেরকে পৌঁছে দিয়ে ফিরে আসতে প্রায় চল্লিশ মিনিট লেগে গেছে। দরজা খুলে দিয়েছে লিলিয়া। সে রুমে এসে দেখে অর্ষা গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে। সে বেড সাইডের লাইট অফ করতে গিয়ে একটা চিঠি দেখতে পায়। কৌতুহলবশত সে চিঠি খুলে পড়তে শুরু করে।
‘আপনি এত আনরোমান্টিক কেন? আমাকে একটুও বোঝেন না। আপনার জন্য সাজগোজ করি সেটা কি আপনার চোখে পড়ে না? শাড়ি নাকি ছেলেদের খুব পছন্দ। কই আপনি তো কোনোদিন আমার প্রসংশা করলেন না? এত কঞ্জুস কেন আপনি? বউয়ের প্রসংশা হাজবেন্ড না করলে কি অন্য লোকে করবে? একটু তো রোমান্টিক হোন প্লিজ! কথাগুলো সামনা-সামনি মুখে বলতে পারব না বলে, কাগজে লিখে দিলাম। খবরদার! আমাকে এই চিঠি নিয়ে সামনা-সামনি কোনো প্রশ্ন করবেন না। কিছু জিজ্ঞেস করবেন না।
ইতি
আপনার একমাত্র বউ অর্ষা।’
চিঠি পড়ে হতভম্ব হয়ে যায় আহনাফ। এটা সত্যিই অর্ষা লিখেছে? তার তো বিশ্বাস-ই হচ্ছে না। আবার হতেও পারে! অর্ষা তো লাজুক স্বভাবের। মুখে বলতে না পারলে লিখেও প্রকাশ করতে পারে। অসম্ভব কিছু না। কিন্তু তবুও কেমন যেন বিষয়টা তাকে একটু ভাবিয়ে তুলছে।
রাতটা কোনোমতে পার করে সে। কোনোমতে বলছি এই কারণে যে, রাতে আহনাফের ঠিকমতো ঘুম হয়নি। বারবার চিঠির কথাগুলো মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। স্বপ্নেও সে আবোল-তাবোল এসবই দেখছিল। শেষমেশ ঘুমটাই তো আর হলো না। তবে আজকের সকালটি ভিন্ন। সে একটু বাদে বাদেই ঘনঘন অর্ষার দিকে তাকাচ্ছে। চাহনীও কেমন অন্য রকম। অর্ষা বিষয়টি প্রথমে স্বাভাবিকভাবে নিলেও এখন কেমন যেন অস্বাভাবিক লাগছে।
সে প্রশ্ন করেই ফেলে,’এভাবে কী দেখেন?’
‘মনে তো হয় তোমাকেই।’ গলায় টাই বাঁধতে বাঁধতে উত্তর দিল আহনাফ।
‘আজ কি নতুন দেখতেছেন?’
‘না। তবে নতুন করে দেখতেছি। আচ্ছা তোমার বান্ধবী কখন আসবে?’
‘জানিনা। আসার আগে ফোন করবে বলেছে।’
‘ওহ। আমি আজ অফিসে গিয়ে ছুটি চাইব। যদি দেয় তাহলে তো ভালোই।’
‘আর যদি না দেয়?’
আহনাফ এবার অর্ষার দিকে ঘুরে দাঁড়াল। মুচকি হেসে বলল,’তাই তো! যদি না দেয়?’
অর্ষা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে আহনাফের আচরণে। মানুষটা একেক সময়ে একেক রকম রূপ দেখায়। কোনো রূপ-ই আগে থেকে আন্দাজ করা যায় না। সে নিজে থেকে প্রকাশ না করলে বুঝাও যায় না।
উত্তরের জন্য আর অপেক্ষা করল না আহনাফ। অফিসের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বে বলল,’আজ আর বাসায় খাব না। অফিসে গিয়ে খেয়ে নেব।’
‘কেন?’
‘এমনিই। কেউ তো খাইয়ে দেবে না।’
‘কী!’
‘কিছু না।’ বলে আহনাফ রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আবার দ্রুতগতিতে ফিরে এসে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে,
‘তেমন কিছু না। একটু রোমান্টিক হওয়ার ট্রাই করছিলাম। বউয়ের আবদার বলে কথা!’
অর্ষার অদ্ভুত রিয়াকশন দেখে আহনাফ শব্দ করে হেসে ফেলে। যাওয়ার পূর্বে অর্ষার মাথায় হাত রেখে চুলগুলো একটু এলোমেলো করে দেয়।
চলবে…