###জীবন যখন যেমন ৪র্থ পর্ব
###লাকি রশীদ
ছুটির দিন আরামে ঘুমানোরও উপায় নেই। এতো গরম এই রুমে, অসহ্য লাগছে। উঠে দেখি মা কি যেন করছে রান্নাঘরে। গিয়ে দেখি তেজপাতার ৩ টা ডাল মর্জিনার হাতে। আমার বড়ফুপুর ভাষায় মর্জিনা মেজচাচির খাস বান্দি। মেজচাচি কে যেমন কেউ দেখতে পারে না তেমনি মর্জিনা কেও এবাড়ির কেউ দেখতে পারে না। শুনি সে মাকে তেজপাতা দিচ্ছে আর মা বলছে, লাগবে নারে এইগুলো, দিয়ে দে ওদের সব। মর্জিনা মাকে বলছে,আফনেরা মানুষ তো মোটেই চাইরজন। তেজফাতা বেশি নিয়া করবেন টা কি? মা এবার স্পষ্টস্বরে বলছে, আমার গাছ আমাকে না বলে তেজপাতা পাড়ছে। আবার ঢং করতে এই কয়টা পাতা দিয়ে তোকে পাঠিয়েছে। চলে যা এগুলো নিয়ে, আমার ছেলে মেয়ে উঠলে ঝামেলা করবে।
আমি তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছছিলাম। কি হয়েছে মা? বলতেই মা বলছে, কি আবার হবে? চা খাবি তো বাবা, দাঁড়া বানাচ্ছি। আমি মর্জিনা কে বলি,
তোর হাতে আমাদের গাছের তেজপাতা কেন? আমাদের না বলে এগুলো কে পেড়েছে? সে দ্বিগুণ তেজে এবার বলছে, এইগুলা দারোয়ান দিয়া আপনের চাচী পাড়াইছে। আমি বলি,শোন চাচীকে গিয়ে বলিস গতবার যেমন গাছ থেকে আমাদের সব নারকেল পেড়ে খেয়েছেন, তেমনি সব তেজপাতা খেয়ে নিলেও মা কিছুই বলবে না।কারণ আমার মা অনেক ভালো মানুষের বাচ্চা। সুতরাং,পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া না করার চেষ্টা করাই তার জন্য ভালো হবে। ভাগ্ এখান থেকে।
সে চলে যেতেই মা বকছে, শুধু শুধু তুই নাক গলাতে এলি কেন বাবা? আবার এটাও বলেছিস, আমার মা ভালোমানুষের বাচ্চা। এদের সাথে আমরা কোনদিকে পারব বল? আমি হেসে বলি,
এতো ভয় পেয়ে কোনো লাভ নেই মা। ৩ ছেলের রোজগারেও পেট ভরে না ভদ্রমহিলার। পরের গাছের জিনিস চুরি করে। দোলা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনছে মা দেখেনি। চা ঢালতে মা রান্নাঘরে যেতেই
আমাকে ও কানেকানে কিছু বলল। আমি মাথা নেড়ে হ্যা বলেছি। চা খেয়ে মায়ের চোখ এড়িয়ে দুজনেই আমাদের ও মেজচাচার সীমানার মাঝের জায়গা,যেটার মালিকানা আমাদের,যে জায়গায় মা অনেক গাছ লাগিয়েছে সেখানে দাঁড়ালাম।
পাশের খালি বাসার কেয়ারটেকার মনা মিয়াকে ২০০ টাকার চুক্তিতে নিয়ে এলাম। সে এসে কোটা দিয়ে (বাঁশ এর তৈরি লম্বা লাঠির মতো,যার মুখ দিয়ে টেনে পাতা বা ফল আনা যায়) প্রথমে গাছের তেজপাতা সব পাড়লো। এরপর পেয়ারা পাড়ছে। এই গাছের পেয়ারা সব ডাসা ডাসা। মা বলেছিল, আগামী সপ্তাহে সবগুলো গাছ থেকে আনাবে। আগামী সপ্তাহের অপেক্ষা করলে, একটাও মিলবে না। এই বুদ্ধি টাই দোলা আমাকে কানে কানে দিয়েছিল। সমস্যা হলো,তেজপাতা নামানোয় এতোক্ষণ কোনো শব্দ হয়নি। কিন্তু,মনা মিয়ার জোরে কথা শুনে শাওন মুখ বাড়িয়ে দোলাকে বলছে, এই দোলা তোরা এতো কৃপণ কেন রে? এতো মজার মজার পেয়ারা সব একা খাবি? আমি আসি? দোলা বলছে, বেশতো চলে এসো।
আমি এবার ওকে বকছি, ওকে এসো বলার কি দরকার ছিল? মা আমাদের গাছ থেকে সব ফসল নিয়ে যাচ্ছে আর মেয়ে আহ্লাদে গদগদ হয়ে ঢং করছেন। এবার দোলা বললো, ছিঃ ছোট ভাই তুমি জানো ওদের পরিবারের কারো মতোই শাওন আপু না। আমি বলি, ওর ভাইয়েরা যখন দেখবে আমাদের সাথে শাওন আছে তখন কি আমাদের আদর করবে ভেবেছিস? দোলা বলে, কি বলিস !!
আমরা কি ওকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে এসেছি
নাকি? ও নিজের ইচ্ছায় এলে আমরা কি করবো?
এতো ভয় পাস না তো। আমি দেখি শাওন ছুরি নিয়ে এসেছে। ওদের দারোয়ান কে ভালো একটা গামলায় পানি দিতে বলছে। পানিতে ধুয়ে পেয়ারা
কেটে ৪ টুকরো করলো। নিজের জায়গায় যেতে পা বাড়ানো দারোয়ান কে একটুকরো প্রথমেই দিল। তারপর আবার আস্ত একটা পেয়ারা দিয়ে বললো, এগুলো আপনার জায়গায় বসে বসে খান। আমি মনে মনে ভাবছি, এগুলো সব ঘুষ।
এবার দোলা কে দিয়ে আমার দিকে এক টুকরো পেয়ারা দিতেই আমি বলি, তুই খা। আমি পরে নিয়ে খাবো। এবার সে বাচ্চাদের মতো জোরে চেঁচাচ্ছে,দেখ দোলা তোর ভাই আমাকে কেমন অপমান করছে? দোলা এবার বললো,অসভ্যতা করিস না ছোটভাই। ওর হাত থেকে পেয়ারা নে। আমি নিতেই বেহায়া মেয়ে আবার বলছে, আমার হাত লেগেছে বলে এটা দ্বিগুণ মজা,তাই না রে দোলা? ইডিয়ট দোলা বলছে,হ্যা। এবার চোখ টেরিয়ে টেরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে শাওন বলল,জানিস মনে হয় চাচা তো আগামী সপ্তাহে পরিবার নিয়ে আসছে। বিথী আপুর বিয়ে দিবে বলে আসছে। পাত্র সুন্দর ও শিক্ষিত হলেই হবে। কতো জন যে এবার লাইনে দাঁড়াবে দেখিস। আমি ভেবে পাচ্ছি না, আমার দিকে এভাবে সে তাকাচ্ছে কেন? পাগল একটা। আমি এবার মনা মিয়াকে তাড়া দেই, শেষ করে ফেলো তাড়াতাড়ি। সারা দিন কি এখানেই খতম করে দিবে না কি?
এবার শাওন দোলাকে জিজ্ঞেস করছে,তোর ভাই তো দেখি আরো লালটু হয়েছে রে? প্রেম ট্রেম করছে নাকি দেখিস। দোলা এবার চেঁচাচ্ছে, কি আমার ভাই আমার ভাই বলে যাচ্ছ, শাওন আপু ও তো তোমারো ভাই। এইমাত্র শাওন পৃথিবীর সবচেয়ে ভুল তথ্য যেন শুনেছেন, এমনভাবে মাথা
নেড়ে বললো, তোর যেমন কথা !!! ও কেন আমার ভাই হতে যাবে? আমার পেট ফেটে যেন হাসি আসছে। এবার বুদ্ধিমতী দোলার মাথায় ঢুকেছে,
তুমি কি আমার ভাইকে কিছু বলতে চাও নাকি?
শাওন এবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, অনেক দিন ধরেই তো বলছি, তোর ভাই আমার কথাটা কানে
নিচ্ছে না।নিজেকে সে কি যে ভাবে আল্লাহ জানে।
এবার দোলা রাণী মাথা নেড়ে বলছেন,ও ব্যাপার টা যে এই, সে তো আমার জানা ছিল না শাওন আপু। এজন্য তুমি এতোক্ষণ ধরে এরকম করছ।
মনা মিয়া তার কাজ শেষ করে ফেলেছেন। উনার
পারিশ্রমিক ২০০/ টাকা দিয়ে তেজপাতা ও পেয়ারাগুলো ঘরে পৌঁছে দিতে বলি। উনি চলে যেতেই সুন্দর ড্রেস পরা ঝকঝকে তরুণী শাওন কে বলি, আজ দোলা কে যা বলেছিস তা আর কাউকে বলতে যাস না। দেয়ালেরও কান আছে। তোর সাথে সাথে আমি গরীবের ছেলেও মারা যাবো। শোকর কর্ ছুটির দিন বলে তোর ভাইয়েরা এখনো ঘুমে। নয়তো ওরা এতক্ষণে তোকে টেনে হিচড়ে নিয়ে যেতো। এবার রাগীস্বরে বলছে, সেই ভয়ে এখন থেকেই তুমি কাঁপা শুরু করো। সাথে সাথেই দেখি একচোখ জল নিয়ে আমায় বলছে, কাওয়ার্ড কোথাকার।আমি হেসে বলি,গত কয়েক বছরে এটা অনেকবার শুনেছি, এখন বাসায় যা।
যাবার পথে দুইপা হাঁটতেই দোলা থামিয়ে দিলো আমাকে, আমি তো ভাবতাম ছোটভাই তুই এটলিষ্ট আমাকে সবকিছু শেয়ার করিস। এতো বড় ব্যাপার এতো দিন ধরে, আমায় একবারও বললি না। এজন্যই, বছর দুয়েক আগে শর্মির বড়ভাই আমাকে দিয়ে শাওন আপুকে খবর দিয়ে
ছিলেন, আপু রাজি থাকলে রিলেশনশিপে যেতে
চান। আমাকে তখন উত্তর দিয়েছিল, নারে দোলা একজন কে মানানোর চেষ্টায় আছি। আমি তো
বুঝতে পারিনি সেই একজন হচ্ছো তুমি। আমি এবার হেসে বলি, এটা সিরিয়াস হবার মতো কোনো ব্যাপার না। তাই আমি এতো দিন তোকে বলিনি। বড়লোকের মেয়েদের খাওয়া,থাকা,পরার চিন্তা নেই তো তাই অনেক কিছুই মনে আসা কিন্তু
স্বাভাবিক। দেখছিস না আমাদের বাসার একজন
বাবা মা ছেড়ে এসে, না গিলতে পারছেন না বমি করতে পারছেন। এই সম্পর্কের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। তাই আমি এসব নিয়ে মোটেও ভাবতে চাই না। তুইও বাসায় গিয়ে কাউকে এ ব্যাপারে কিছু বলিস্ না। পাঁচ কান হলে ঝামেলা বাড়বেই শুধু।
দোলা কি যেন ভাবতে ভাবতে এগুচ্ছে, আবার থেমে বললো,জানিস ছোটভাই আজ আমার শাওন আপুর পরা এতো সুন্দর ড্রেস দেখে দুঃখ হচ্ছিল যে বড়লোকদের কাছে সব ভালো ভালো জিনিস চলে যায়। এখন মনে হচ্ছে,ও তো আরো
কষ্টে আছে। এতো বছর ধরে একজন কে মনে প্রাণে চাচ্ছে কিন্তু ফ্যামিলির জন্য সেটা হওয়া সম্ভব নয়। এ যেন বন্দী এক রাজকন্যা। তোর কাছে সিরিয়াস না হলেও ওর কাছে খুব সিরিয়াস
আসলে। আমি বলি, সেটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। মেডিকেলের এডমিশন টেষ্ট নিয়ে ভাব্,
সেটা বরং কাজে দিবে। আর প্রমিজ করলাম, ছোটভাই চাকরি পেলেই তোকে আর মেঘলা কে
এরচেয়েও সুন্দর ড্রেস কিনে দেবো ইনশাআল্লাহ।
দুজনে ঘরে ঢুকতেই দেখি মা একমনে বকছে, কেউ কিছু করলে বা বললেই তোমাদের গায়ে কেন ফোস্কা পড়ে যায় আমি সেটা বুঝিনা। এদের সাথে টক্কর দিতে তোমরা পারবে? তেজপাতা ও
পেয়ারা তোর ৩ চাচার ঘরে দিয়ে আয় সাদি। আমি দেখি, টেবিলে বসে ভাইয়া ও ভাবী নাস্তা করছে। শুনিয়ে শুনিয়ে বলি, আমার সারা শরীরে আম পিঁপড়া মা। ভাইয়া কে দিয়ে আসতে বলো।
সারাটা দিন কেন যেন কানে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে,
তুমি কাওয়ার্ড। রাতে ঘুমাতে গেছি, চোখ বুজলেই দেখি জলভরা চোখে আমাকে শাওন বলছে,সেই ভয়ে তুমি এখন থেকেই কাঁপা শুরু করো। কাওয়ার্ড কোথাকার !!! আচ্ছা যন্ত্রণা হলো তো।
মাষ্টার্স ফাইনাল দরজায় কড়া নাড়ছে আর আমি
এসব নিয়ে ভাবছি। আমাদের পরিবারের জন্য এ
মাসটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। এখন এসব ভাবলে চলবে না সাদি। কেন যে দোলার কথায় নেচে গেলাম। কি এক অদ্ভুত সমস্যা হচ্ছে এখন।
আমি তো আর তখন জানি না, এতো সমস্যার সূচনা মাত্র। আগ্নেয়গিরি জেগে উঠছে মাত্র,আস্তে
আস্তে অগ্নুৎপাতের ইশারা চলছে। কখন গলগল
করে লাভা বের হবে………সে অপেক্ষায় আছে মাত্র।
পরদিন শনিবার বলে আমাদের সবার ছুটি আজ।
ছোটফুপুর নাতির আকিকা উপলক্ষ্যে সকালে বেশ খানিকটা গরুর গোশত এসেছে। মা আমাকে
দিয়ে চিকন চাল ও গরম মশলা আনিয়েছে। কি
সব রান্নাবান্না করছে মা, খুটখাট শব্দ শুনতে পাচ্ছি। মেঘলা চুপচাপ রান্নাঘরে মাকে সাহায্য করছে। মাঝে মাঝে আমার মনে হয়, মেঘলা ঠিক মায়ের কার্বন কপি হবে। এই যে বাসায় থাকে সারা দিনে ১০টা কথাও বলে না। বাবা বলতেন, আমার মেয়ে কথা কম বলে কতো গোনাহ থেকে বেঁচে যাচ্ছে। চুপ করে থাকাও একটা ইবাদত। যে
টা অনেকেই বুঝতে পারে না। আমাদের দোলা রাণী তখন বলতেন, বাবা আমাকে তুমি খারাপ বললেও কিছু করার নেই। আমি ওর মতো বোবা হয়ে বসে থাকতে পারি না।
দোলা ছুটির দিনে কি একটা ফেসপ্যাক তৈরি করে দুইবোন মুখে দেয়,ওটা করছে। আমি তখন টেবিলে বসে লিখছি। ভাইয়া বৌকে নিয়ে বের হয়ে টেবিলে বসেছে। দোলা ভাবীর দিকে তাকিয়ে বলল, মার হাত মনে হয় জোড়া, রান্না করছে। তুমি প্লিজ ২ কাপ চা বানিয়ে নাও। উনি বললেন তোমার হাত তো জোড়া নয়, তুমি বানাও না কেন? চিরদিনের ডিবেটে পুরস্কার প্রাপ্ত দোলা এবার নিচু গলায় স্পষ্ট করে বললো, তোমার চোখে সমস্যা নাকি? দেখছো না আমি ফেসপ্যাক তৈরি করছি। তাছাড়া তুমি আতুড় না লুলা, সবসময় কেউ না কেউ তোমাকে চা বানিয়ে দিতে হবে। ভদ্রমহিলা ঠাস করে চেয়ার সরিয়ে দাঁড়িয়ে বললেন, হাদি চলো এই মুহূর্তে আমরা এখান থেকে বের হয়ে চলে যাবো।
ভাইয়া এবার শান্ত স্বরে বলছে, আমি নিজেই চা বানিয়ে আনছি না হয়, দয়া করে তোমরা দুজনে ঝগড়া করো না। অনেক সময় আমার মন হঠাৎ করে কিছু বলে বা আন্দাজ করে। কাকতালীয় ভাবে সেটা মাঝে মধ্যে ঠিক হয়ে যায়। এখন যেমন আমার কেন যেন মনে হচ্ছে, ইনি ইচ্ছে করেই এসব করছেন। ঝগড়া করার ছুতো খুঁজছেন, হয়তো বা চলে যাবার জন্যই। এবার উনি তেজে ফেটে পড়ে বললেন, বললাম না চলো। এই মুহূর্তে এখান থেকে বের হয়ে যাবো আমরা। ভাইয়ার স্লিপিং স্যুটের ট্রাউজার পরা ছিল। এখন বলছেন, এটা চেন্জ করে দয়া করে প্যান্ট পরে আসো তুমি।
ভাইয়া এবার কঠিন স্বরে বললো, আমরা কোথায় যাবো বলো তো? তোমার বাবা মা দুজনেই তোমার কোনো খোঁজ করেছেন এই কয়দিনে? প্রথমেই বলেছিলাম, এভাবে হয় না। আমাকে জোর করে বিয়ে করেছো। এখন প্রতিদিন একটা না একটা
অশান্তি। মা ও মেঘলা এসে দাঁড়িয়েছে, মা এবার শান্ত গলায় বললো, বৌমা সংসারে থাকতে গেলে বাসনে বাসনেও ঠোকাঠুকি হয় মা। আর এ তো কষ্টের, গরীবের সংসার। রাগ করে না, বসো আমি
চা বানিয়ে দিচ্ছি। উনি চিৎকার করে বললেন,
আপনার মেয়ে আমাকে আতুড়,লুলা বলেছে। আগে এটার বিচার করেন আপনি। ও আমাকে স্যরি বলুক,পরে ভেবে দেখবো।
দোলা এবার বলে,আহহা রে !!! ওইসব বড়লোকি অন্য জায়গায় গিয়ে দেখাও। আমার সাথে এসব ধানাই পানাই করে লাভ হবে না। আমার ভালো মানুষ ভাইকে পেয়ে যা ইচ্ছে তাই করেছো, আমি
তার মতো না। ভালো কিছু তো করে দেখাতে পারো না, একবার ভাবো না আমার নিজের যখন যোগ্যতা নেই স্বামীকে অন্তত চাকরি খুঁজতে পাঠানোর চেষ্টা করি। ভালো জিনিস করবে কেন,
তোমার কাজ হচ্ছে শুধু সংসারে আগুন লাগানো।
বুড়ো শাশুড়ির বানানো চা খায় !!! ছিঃ লজ্জাও করে না। আমি এমন মানুষ পৃথিবীতে আর দুটো
দেখিনি। মা এবার চিৎকার করে উঠল, চুপ করবি তুই? না আমি যেদিকে খুশি সেদিকে চলে যাবো?
ভাবী এবার ভাইয়ার হাত ধরে রুমে নিয়ে গেছেন ।
মা দেখি কাঁপছে থরথরিয়ে। আমি চেয়ারে বসিয়ে বলি, পানি খাও মা। পানি খাইয়ে মাত্র বলেছি,
চলো কিছুক্ষণ শোবে। এবার দেখি ভাইয়া ও ভাবী
আমাদের সবার সামনে দিয়ে গটগট করে চলে যাচ্ছেন। মা বললো, বৌমা শোনো যেও না। আমি বলছি মা,ঘর থেকে বের হইও না। আমার কথা তো শোনো। ভদ্রমহিলা এসব কানেই নেয়নি। সাথে নিয়ে যাচ্ছে কলের পুতুলের মতো ভাইয়া কে। দোলা এবার বললো, চিন্তা করো না তো মা।
যাবে আর কোন চুলোয়? বাপ মায়ের জুতার বাড়ি
খেয়ে এমনিতেই দেখবে আজকেই চলে আসবে।
এতো বছরের জীবনে আমার সর্বংসহা মাকে খুব
কমই রাগান্বিত অবস্থায় দেখেছি। চোখ বড়বড় করে চেঁচিয়ে বলছেন, চুপ কর তুই। একটু মানিয়ে
গুছিয়ে চললে কি হয়? চা তো বানাবো আমি, তুই
ওকে এতো কথা বলার কে? স্বল্পভাষী মানুষ যখন
রেগে যায়, তখন ভীষণ ভয় লাগে। দোলা ভয়ে আর দ্বিতীয় বাক্য উচ্চারণ করেনি। মেঘলা দেখি অঝোর ধারায় কাঁদছে। আর অকর্মার ধাড়ি আমি
মাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছি। মনে হচ্ছে,যদি আজ বাবা বেঁচে থাকতো, আমি সত্যিই যেদিকে
দূচোখ যায় সেদিকে চলে যেতাম। বাবা মারা
যাওয়ার অনেক বছর পর, আমি মাকে জড়িয়ে ধরে “বাবা বাবা তুমি কই”? বলে হাহাকার করছি।
(চলবে)
.