কিছু জোড়া শালিকের গল্প পর্ব ৫
#সে_গুড়ে_বালি
লেখিকা: #Lucky_Nova(গল্প কপি নিষেধ)
ফোন নাম্বার আর বাসার ঠিকানা লিখে দিলো প্রয়াস। মনে মনে খুবই বিরক্ত হচ্ছে সে। এখন মেয়েটাকে তো তাহলে নিজের বাসায় নিতে হবে। তাও কতদিনের জন্য কে জানে! আদৌ মেয়েটার কেউ আছে কিনা তাও বা কে জানে!
“ঠিক আছে। কোনো খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গেই জানাবো।” বললেন তৌহিদুর রহমান।
প্রয়াস কিছু বলল না।
মেয়েটার দিকে একপলক তাকিয়ে তারপর উঠে দাঁড়ালো। মেয়েটাও ওর পিছু নিতে উঠে গেলো।
প্রয়াস বাহিরে এসে মেয়েটার দিকে কপাল কুচকে তাকিয়ে বলল, “ঠিকানা কেনো লিখো নি তখন?”
মেয়েটার মুখের স্নিগ্ধ হাসিটা আস্তে আস্তে বিলীন হয়ে গেলো। হাতের নোটপ্যাডটার দিকে দৃষ্টি নামালো সে।
“অদ্ভুত!” প্রয়াস শ্রান্ত ভঙ্গিতে নিঃশ্বাস ফেলে বিড়বিড়ালো।
হঠাৎই মেয়েটা দুইহাতে পেট চেপে ধরলো। প্রয়াস তাকালো সন্দিহান চোখে। মেয়েটাকে অস্থির অস্থির লাগছে। মুখটাও কেমন হয়ে গেছে।
একটু চমকালো প্রয়াস।
“কী সমস্যা? পেট ব্যথা?”
মেয়েটা দ্রুত নাবোধক ভাবে মাথা নাড়লো।
মেয়েটার ছটফটানি আর এদিক ওদিক তাকিয়ে কিছু খুঁজতে দেখে প্রয়াস বলল,”বাথরুম?”
মেয়েটা মাথা নাড়লো। চোখ মুখ করুন হয়ে গেছে।
প্রয়াস একটা পুলিশের থেকে জেনে বাথরুমের কাছে নিয়ে এলো মেয়েটাকে।
মেয়েটা প্রয়াসের হাতে নোটপ্যাড আর কলম কোনোমতে ধরিয়ে দিয়ে ঢুকে পড়লো ভিতরে।
প্রয়াস থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে রইল। এই মেয়ে একটা আস্ত একটা ঝামেলা। সামনে আরো কত কী হবে কে জানে?
বাধ্য হয়ে নিজের বাড়িটাতেই মেয়েটাকে নিয়ে এলো প্রয়াস। কাল পরশুর মধ্যে মেয়েটার বিষয়ে খবর না এলে কোনো গার্লস হোস্টেলে রেখে আসবে।
প্রয়াস ওকে একটা রুম দেখিয়ে দিয়ে বলল,”এখানে থাকবা। ভুলেও বের হবা না।”
মেয়েটা তাকালো প্রয়াসের দিকে।
“তোয়ালে বাথরুমেই আছে। যাও ফ্রেশ হও।”
কথাটা বলেই বেরিয়ে এলো প্রয়াস। নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নিলো। তারপর রান্নাঘরে গিয়ে খাবার গরম করে টেবিলে সাজালো।(লেখিকা-লাকি নোভা)
একজন কাজের লোক সকাল থেকে বিকাল অব্দি কাজ করে। সে-ই রান্নাবান্নাসহ সব কাজ করে। প্রয়াসের কাজ শুধু গরম করা।
টেবিলে খাবার সাজিয়ে মেয়েটাকে ডেকে আনলো প্রয়াস।
সোজাসুজি একটা চেয়ারে প্লেট এগিয়ে দিয়ে বসতে বলল তাকে।
কিন্তু সে প্লেট নিয়ে প্রয়াসের পাশের চেয়ারে এসে বসলো।
সরু দৃষ্টিতে দেখে নিজের খাওয়ায় মনোযোগ দিলো প্রয়াস।
তবে খেতে খেয়ে খেয়াল করলো যে মেয়েটা পাখির মতো খায়। একদম অল্প। একটা পাখিও ওর থেকে বেশি খায় হয়তো।
প্রয়াস বিছানায় শরীর এলিয়ে দিতে না দিতেই মেয়েটা এসে ঢুকলো। বেশ অবাক হয়েই দ্রুত উঠে বসলো প্রয়াস।
দুইহাতে বালিশটা জড়িয়ে ধরে ঝলমলে চেহারায় দাঁড়িয়ে আছে সে। সাথে নোটপ্যাড আর কলম।
“এখানে এসেছো কেনো? তোমাকে না বলেছি ওই রুম তোমার?” আকাশ থেকে পড়ে বলল প্রয়াস।
মেয়েটা উওর না দিয়ে গটগট করে এসে প্রয়াসের বিছানায় উঠে পড়লো।(লেখিকা লাকি নোভা)
অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেলো প্রয়াস।
মেয়েটা বালিশ পাতিয়ে শুতে না শুতেই প্রয়াস হড়বড়িয়ে বলে উঠলো, “মাথা ঠিক আছে তোমার? তুমি আমার বিছানাতে এসেছো কেনো? বের হও।”
শেষ কথাটা একটু ধমকের মতো শুনালো হয়তো। মেয়েটার মুখটা খুব চুপসে গেলো। কাঁদো কাঁদো ভাব চলে এলো চেহারায়।
প্রয়াস নিভলো।
নিচু তবে থমথমে গলায় বলল, “নিজের রুমে যাও। এটা আমার রুম। ওঠো।”
মেয়েটা চুপসানো মুখে শুয়ে রইলো। অর্থাৎ সে যাবে না।
মহা ফ্যাসাদে পড়ে গেলো প্রয়াস। কিছুক্ষণ সংকুচিত চোখে তাকিয়ে থেকে ঠিক করলো নিজেই অন্য রুমে শোবো। তবে সে উঠে দাঁড়িয়ে বিছানা থেকে নামতে নামতে মেয়েও উঠে বসলো। প্রয়াসকে চলে যেতে দেখে সেও নেমে পড়লো বিছানা থেকে। পিছু পিছু চলেও গেলো।
আঁচ করতে পেরে ঘুরে তাকালো প্রয়াস। অবাক কণ্ঠে বলল, “তুমি কোথায় যাচ্ছো?”
মেয়েটার ঠোঁটে আগের মতো উদ্দেশ্যহীন কোমল হাসি।
কপালে ভাঁজ পড়ে গেলো প্রয়াসের।
“আশ্চর্য তো! চুপচাপ ওই রুমে যাও।” হাত উঁচিয়ে রুমের দিকে ইশারা করে বলল প্রয়াস।
তারপর আবার হাঁটা শুরু করলো। পাশের রুমে ঢুকে বিছানায় বসতে না বসতেই দেখলো মেয়েটাও হাজির। আগের মতো আবার বিছানায় উঠে পড়েছে।
হতবুদ্ধি হয়ে পড়লো প্রয়াস।
মেয়েটার উজ্জ্বল মুখে তাকিয়ে রইলো প্রয়াসের দিকে।
একটু ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো প্রয়াস। মেয়েটাকে দেখতে যতটা ইনোসেন্ট, ঠিক ততটাই ডেঞ্জারাস। এখন কী চাচ্ছে কে জানে!
“নড়বা না। এখানেই থাকবা।” হালকা হুমকি দিয়ে বলে দেরি না করে আবার নিজের রুমে গেলো প্রয়াস।
কে শোনে কার কথা! পিছনে পিছনে মেয়েটাও হাজির।
“কী চাচ্ছো বলো তো?” সন্দিগ্ধ কণ্ঠে বলল প্রয়াস।
মেয়েটা যেন কিছুই বোঝেনা ভাব ধরে তাকিয়ে রইলো।
প্রয়াস কান্ত নিঃশ্বাস ফেলে বিছানায় বসতেই মেয়েটাও গিয়ে বসে পড়লো অপর পাশে।
প্রয়াস তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, “তোমার মাথা ঠিক আছে? মেয়ে হয়ে একটা অচেনা ছেলের সাথে ঘুমাতে চাচ্ছো!”
মেয়েটার মুখ আগের মতোই রইলো। মুখ দেখে মনে হলো না যে এতে দোষের কিছু আছে।
ঝামেলায় পড়ে গেলো প্রয়াস। এই মেয়ের কী মাথার স্ক্রু ঢিলা নাকি!
এবারো উপায়ন্তর দেখলো না প্রয়াস। বাধ্য হয়ে একটা চাদর দিয়ে ইন্ডিয়া পাকিস্তানের বর্ডার লাইন বানিয়ে বলল, “এদিকে ভুলেও আসবা না। বুঝেছো?”
বুঝলো কি বুঝলো না কে জানে। তবুও হাসিমুখে তাকালো প্রয়াসের দিকে।
প্রয়াস চোখ সরালো। মেয়েটা সত্যিই অদ্ভুত। কালই একটা ব্যবস্থা করতে হবে।(লেখিকা লাকি নোভা)
প্রয়াস বালিশে হেলান দিয়ে বসে বলল, “এখন ঘুমাও।”
প্রয়াস চাচ্ছে মেয়েটা ঘুমিয়ে যাক। ততক্ষণ বসে থেকে তারপর অন্যরুমে চলে যাবে। কিন্তু সে গুড়ে বালি।
প্রয়াস বসে আছে তাই সেও বসে আছে।
“ঘুমাতে বললাম যে আমি?”
চোখ রাঙানিতে চুপসানো মুখে শুয়ে পড়লো মেয়েটা। কিন্তু চেয়ে রইলো তাও।
“ভাই এই কার খপ্পরে পড়লাম!” বিড়বিড়িয়ে বলে উঠলো প্রয়াস।
“দয়া করে ঘুমাও। চোখটা বোজো।” দাঁতেদাঁত চিপে বলল প্রয়াস।
মেয়েটা ম্লান মুখে তাকিয়ে চোখ বুজলো।
ফোন কানে নিয়ে সারাঘর পায়চারী করছে ত্রয়ী। বিকেলের পর থেকেই নুহাসকে ফোন করেই যাচ্ছে। এখন বাজে রাত দশটার বেশি। এখনো ফোন বন্ধ। এসবের মানে হয়!
ত্রয়ী ফোন রেখে বিছানায় বসলো। হাঁসফাঁস লাগছে খুব। লোকটা নাকি চারদিন আগে ওকে দেখেছে! তাহলে নুহাস আর ওর বিষয়ে সবটা কী করে জানে?
নুহাস কি চেনে ওকে? কিছুই তো বোঝা যাচ্ছে না!
আর তাছাড়া লোকটার হাবভাবও তো সুবিধার নয়। মনে হচ্ছে বিয়েটা করেই ছাড়বে। এমন মানুষও হয়! কালই তো পাকা কথা। নুহাসকে তো জানানোই হলো না যে ওই লোকটা মানে নি। উলটো ‘বিয়ে করবেই করবে’ মনোভাব নিয়ে বসে আছে।
অবশ্য ফোন ধরলে তবে তো জানাবে।
মাথাটা ধরেছে খুব। মাথা চেপে ধরে শুয়ে পড়লো ত্রয়ী। চিন্তায় এপাশ ওপাশ করতে করতে একসময় চোখ লেগে এলো ওর।
ঘুমটা গাঢ় হতেই ফোন বেজে উঠলো। প্রচন্ড বিরক্তিতে কপাল বাজেভাবে কুচকে ফেললো ত্রয়ী। ঘুম ঘুম চোখে ফোন হাতরিয়ে হাতে পেয়ে রিসিভ করলো।
ঘুমকাতুরে গলায় বলল, “হ্যালো?”
ঘুম ঘুম মিষ্টি আওয়াজ পেয়ে মুচকি হাসলো নীল।
“ঘুমিয়ে গেছো?”
আধোঘুমে থাকা ত্রয়ী অস্পষ্টে বলল, “হু। কে আপনি?”
“তোমার হবু বর।”
আচমকাই ঘুমের রেশ কেটে গেলো ত্রয়ীর। হন্তদন্ত করে উঠে বসলো ও।(লেখিকা লাকি নোভা)
চকিত হয়ে বলল, “আপনি!”
“হু আমি।”
“এতরাতে কেনো ফোন করেছেন?”
“প্রেম করতে।”
চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো ত্রয়ীর।
“চুপ করে গেলা যে?”
“আজে বাজে কথা না বলে ফোন রাখুন।” নিজেকে সামলে ভদ্রভাবেই বলল ত্রয়ী।
“রাখবো না।” স্বাভাবিক গাঢ় কণ্ঠে বলল নীল।
“তাহলে আমিই রাখছি।”
“রেখো না।”
থতমত খেয়ে গেলো ত্রয়ী। লোকটা সত্যিই কেমন যেন। কথাগুলোও কেমন।
“আমি মনে করেছিলাম তুমি চিনতে পারবা আমাকে। কিন্তু আমি ভুলেই গেছিলাম যে তুমি অনেক বোকা। যেমন বোকা ছিলা তেমন আছো আর থাকবাও।” দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল নীল।
ভ্রু কুচকে গেলো ত্রয়ীর।
“কী বললেন? আমি বোকা? আর হুট করে ফোন দিলে চিনবো কী করে? আর আমার চেনারও বা কী দরকার?”
নীল নিঃশব্দে হাসলো। মেয়েটা সত্যিই বোকা। এজন্যই তো এখনো প্রথম কথার মানে ধরতে পারে নি।
“সমস্যা নেই। পরে চিনে যাবা। এবার আর আড়াল হতে দিচ্ছি না। সোজা নিজের কাছে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করবো।”
মুখটা বিমর্ষ হয়ে গেলো ত্রয়ীর। তর্কে তর্কে ভুলেই গিয়েছিলো কালই পাকা কথা।
“আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই না।” ম্লান স্বরে বলল ত্রয়ী।
“কেনো চাও না?” অতি স্বাভাবিক কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো নীল। যেন সে জানেই না কিছু।
একটু ক্ষেপলো ত্রয়ী। থমথমে গলায় বলল, “আপনি জানেন না, কেনো?”
“না তো।” আকাশ থেকে পড়লো নীল।
দাঁত কিড়মিড় করলো ত্রয়ী।
“এতো নাটক করেন কীভাবে? আপনি জানেন না আমার বয়ফ্রেন্ড আছে?”
“জানি তো।”
ভাবলেশহীন উত্তরে অবাক হলো ত্রয়ী।
“জানেন তাহলে কেনো আমাকে বিয়ে করতে চাইছেন?”
“কারণ তোমার সো কল্ড বয়ফ্রেন্ড একটা ফালতু ছেলে। তোমাকে ও ডিজার্ভ করে না। তুমি কেনো, ও কোনো মেয়েকেই ডিজার্ভ করে না।”
রাগ হলো ত্রয়ীর। যা ইচ্ছা তাই বলেছে এই লোক।
“একদম ফালতু কথা বলবেন না। ও ডিজার্ভ করে না! আপনি কে সেটা বলার? আর তাছাড়া আপনি করেন আমাকে ডিজার্ভ?”
“করি।”
হা হয়ে গেলো ত্রয়ী। বলে কিনা ‘করি’!
“মোটেও করেন না। আর আমার বয়ফ্রেন্ড না থাকলেও আমি আপনাকে বিয়ে করতাম না। একদম ইচ্ছে নেই আমার৷ অন্যের বিষয় না জেনে এভাবে…।”
“না জেনে আমি কিছুই বলি না। আর বিয়ে না করে কই যাও দেখবো। নিজ ইচ্ছাতেই বিয়ে করবা তুমি। দেখে নিও।” খুব আত্মবিশ্বাসের সাথে বলে উঠলো নীল।
না চাইতেও ভিতরে ভিতরে বেশ চমকালো ত্রয়ী। শরীর কেমন শিরশির করে উঠলো।
“তোমাকে সম্পূর্ণভাবে নিজের করবো ত্রয়ী। আর তুমি নিজ ইচ্ছাতেই ধরা দিবা।”
ঢোক গিললো ত্রয়ী। বুকে ধড়াম ধড়াম করে শব্দ হচ্ছে। কী সব উদ্ভট কথা বলছে!
“নিজ ইচ্ছার জীবনেও না।”
“দেখা যাবে। এখন আসো প্রেম করি। কী টপিকে প্রেম করা যায়?”
হকচকিয়ে উঠলো ত্রয়ী।
“আমি ফোন রাখছি।”
“প্রেম করবা না?” নীল হেসে ফেললো।
“অসভ্য।” বিড়বিড়িয়ে বলে চোখমুখ কুচকে ফোন কাটলো ত্রয়ী।
মেয়েটা ঘুমিয়ে পড়েছে নিশ্চিত হয়ে আস্তে করে বিছানা থেকে নেমে পড়লো প্রয়াস। চলে এলো পাশের রুমটাতে।
অনেকক্ষণ ধরেই ওর ঘুম পাচ্ছিলো। কিন্তু মেয়েটাই ঘুমাচ্ছিলো না। খানিক বাদে বাদে চোখ খুলে দেখছিলো প্রয়াস আছে কিনা। কি সাংঘাতিক মেয়েরে বাবা। কাল মেয়েটাকে যে করেই হোক কোনো গার্লস হোস্টেলে দিয়ে আসতে হবে।
প্রলম্বিত নিঃশ্বাস ফেলে বিছানায় শুয়ে পড়লো প্রয়াস৷
আরাম করে সবেমাত্র শুতে না শুতেই টের পেলো উলটো পাশে কেউ শুয়ে পড়েছে। অবাক হয়ে ঘাড় ঘুড়ালো প্রয়াস। সাথে সাথে হতবাক হয়ে গেলো।
মেয়েটা ঘুমায় নি এতক্ষণে?(লেখিকা লাকি নোভা)
কোমল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেয়েটা। এই ধরনের চাহনি হয় বাচ্চাদের৷ ছয় সাত বছরের বাচ্চাদের। যাদের মুখে এক চিলতে ঠোঁট এলানো হাসি থাকেই।
মুখটা চুপসিয়ে আবার ঘাড় ঘুরিয়ে নিলো প্রয়াস।চুপচাপ উলটোপাশ ফিরে রইলো। এমনিই খুব ঘুম পাচ্ছে। কাল অফিস আছে। আর জেগে থাকা সম্ভব নয়।
ঘুমিয়ে পড়লো প্রয়াস। তবে সে ঘুম বেশি সময় স্থায়ী হলো না। মেয়েটা ঘুমের ঘোরে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে গায়ে পা তুলে দিতেই ঘুম ছুটে গেলো প্রয়াসের।
ঘুম ঘুম চোখে কপাল কুচকে ফেললো প্রয়াস। পেটের কাছে থাকা মেয়েলি হাতটা দেখে হতবুদ্ধি গেলো খানিক।
বিস্মিত চোখে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকানোর চেষ্টা করলো।
মেয়েটা ওর পিঠে মুখ গুজে ঘুমাচ্ছে।
বিমূঢ় হয়ে কয়েকবার পলক ফেললো প্রয়াস।
“উফ!” অস্বস্তিতে নিঃশ্বাস ফেলে মেয়েটার হাতটা পেটের কাছে থেকে সরাতে চাইলো।
কিন্তু মেয়েটা শার্ট হাতের মুঠোয় চেপে ধরে ঘুমোচ্ছে।
ভারি জ্বালা তো!
এদিকে পা-ও তুলে দিয়েছে। কোলবালিশ পেয়েছে নাকি!
প্রয়াস বিরক্ত হয়ে নড়েচড়ে সরতে চাইলো।
এতে মেয়েটা ঘুমের ঘোরেই আরো আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো।
নিরুপায় হয়ে হাল ছাড়লো প্রয়াস। চোখ খিচে বন্ধ করে কপাল চাপড়ালো।
সে রাতে আর ঘুম হলো না তার। প্রচন্ড অস্বস্তিতে নির্ঘুম কাটলো পুরো রাত।
ফাইল হাতে কনফারেন্স রুমে ঢুকতে না ঢুকতেই ভারি অবাক হলো ক্যান্ডেল। বিস্ময়ে থম মেরে দাঁড়িয়ে পড়লো প্রবেশ পথে। মুখটাও আপনাআপনি হালকা হা হয়ে গেলো।(লেখিকা – লাকি নোভা)
ভুল দেখে না থাকলে ওর থেকে ছয় সাত কদম দূরে ব্যাক সুইভেল অফিস চেয়ারে ফর্মাল পোশাকে বসে আছে সেই কাপুরুষ। ফাইল উলটে উলটে চোখ বুলাচ্ছে সে।
ভ্রুদ্বয় কুচকে এলো ক্যান্ডেলের। এই লোক এখানে কীভাবে সেটাই ভেবে পাচ্ছে না।
ফাইল চেক করতে করতে ইভান তাকালো একবার ক্যান্ডেলের দিকে। চোখাচোখি হলো। আর এতেই শরীরটা জ্বলে উঠলো ক্যান্ডেলের। মুখটা থমথমে রূপ ধারণ করলো।
ইভানের মধ্যে কোনো বিস্ময় বা অবাকভাব লক্ষ্যনীয় হলো না। একদম স্বাভাবিক চোখে একবার তাকিয়ে আবার ফাইলে মনোনিবেশ করলো। যেন সে চেনেই না তাকে।
“Excuse me!”
চকিতে ঘুরে তাকালো ক্যান্ডেল।
প্রবেশ পথে দাঁড়িয়ে থাকায় মেয়েটা ভিতরে ঢুকতে পারছে না বুঝেই নিচু গলায় ‘সরি’ বলে জায়গা করে দিলো ক্যান্ডেল।
মেয়েটা মিষ্টি হাসি দিয়ে ঢুকে গেলো ভিতরে।
ক্যান্ডেল আরেকবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো ইভানের দিকে।
গম্ভীর মুখে ফাইলের দিকে তাকিয়ে আছে।
ক্যান্ডেল ভেবে পাচ্ছে না এই লোকটা এখানে কেনো!
ক্যান্ডেলের কোম্পানির চিফ, মিস্টার আদনান জুবায়ের ঢুকতে ঢুকতে হাসিমুখে ক্যান্ডলকে বললেন, “দাঁড়িয়ে আছো কেনো! এসো।”
ক্যান্ডেল সৌজন্য হাসি দিয়ে এগিয়ে গিয়ে বসলো। ক্যান্ডেল বসেছে ইভানের তিন চেয়ার পরে আড়াআড়ি উলটো দিকে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মাঝে মাঝে আড়চোখে তাকিয়ে দেখছে ইভানকে।
ইভান আর তাকায় নি।
মিটিং এর শুরুতে সবার পরিচিতি বর্ণনার সময় ক্যান্ডেল জেনেছে এই কাপুরুষের নাম ‘ইভান চ্যাটার্জি।’
আর তার কোম্পনিই অর্থাৎ ‘রয়্যাল’ এই প্রজেক্টে অংশগ্রহণ করবে।
পুরোটা সময় জুড়ে ক্যান্ডেল ফাইল ঘেটে ঘেটে দেখলো। সত্যিই এই ফালতু চরিত্রের লোকটা ‘রয়্যাল’ কোম্পানির! বিশ্বাসই হচ্ছে না ক্যান্ডেলের।
আর এই লোকটার সাথে কাজ করতে হবে ভেবেই আরো অস্বস্তি হচ্ছে। আগে জানলে এই প্রজেক্টে কাজই করতো না ও।
মিটিং শেষে সবাই একে একে বেরিয়ে যেতে লাগলো কনফারেন্স রুম থেকে।(লেখিকা লাকি নোভা)
ক্যান্ডেল বিরক্ত মুখে বসে বসে বিভিন্ন চিন্তা করতে লাগলো। অবশেষে সবাই বের হবার পর ক্যান্ডেল উঠে দাঁড়ালো। ফাইল গুছিয়ে নিতে নিতে একবার তাকিয়ে দেখলো ইভানকে। সে গায়ের কোটটা খুলে হাতে ঝুলিয়ে ফাইল গুছিয়ে নিয়েছে। এদিকেই হেঁটে আসছে।
ক্যান্ডেল মুখ ঘুরিয়ে নিলো। ইভান ওর পাশ কাটিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে ক্যান্ডেল বিড়বিড়িয়ে বলে উঠলো, “অসভ্য লোক।”
কথাটা কানে আসতেই থেমে দাঁড়ালো ইভান। ভালো করেই বুঝলো ওকে উদ্দেশ্য করেই বলা হয়েছে। তাই একটা নিঃশ্বাস ফেলে ক্যান্ডেলের পাশে এসে দাঁড়িয়ে হাতের ফাইলটা রাখলো টেবিলে।
ক্যান্ডেল আড়চোখে তাকালো একবার। বিরক্ত লাগছে খুব। এখানে কী চায়!
ইভান বলল, “থার্টি সিক্স, টুয়েন্টি ফোর, থার্টি সিক্স।”
ক্যান্ডেল মহাবিরক্ত হয়ে ভ্রুকুচকে তাকালো ইভানের দিকে। কী আজে বাজে বকছে!
ইভান বাঁকা হাসি দিয়ে ক্যান্ডেলের দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলল,”তুমি তো প্রথমটাতেই মার খেয়ে বসে আছো। মিস.থার্টি ফোর।”
বলেই ইভান ক্যান্ডেলকে অপ্রস্তুত করে দিতে ওর বুকের দিকে তাকালো।
ক্যান্ডেলও কুঞ্চিত চোখে সেই দৃষ্টি অনুসরণ করে নিজের দিকে তাকালো। আর সেকেন্ডের মধ্যে বিষয়টা বোধগম্য হতেই ছিটকে সরে গেলো। বিস্ফোরিত হয়ে গেলো ওর চোখমুখ।
বাঁকা হাসিটা আরেকটু প্রশস্ত হলো ইভানের।
ক্যান্ডেল লজ্জায় দ্রুত ফাইলটা নিজের বুকের কাছে ধরে রাগে গজগজ করতে করতে দাঁতেদাঁত চিপে বলে উঠলো, “Pervert.”
কথাটা বলে আর একটুও দাঁড়ালো না ক্যান্ডেল। একপ্রকার দৌড়েই বেরিয়ে গেলো কনফারেন্স রুমটা থেকে।
ইভান তাচ্ছিল্যের সাথে মুচকি হেসে সেদিকে তাকালো। নিজের ফাইলটা হাতে তুলে নিতে নিতে বিড়বিড়ালো, “ক্যান্ডেল রয়! You better behave yourself.”
(চলবে…)
লেখিকা লাকি নোভা
(ভুল ধরিয়ে দিয়েন)
(গল্প কপি সম্পূর্ণ নিষেধ)
ভুল ধরিয়ে দিয়েন।