কিছু জোড়া শালিকের গল্প পর্ব ২১ : #গোলমাল
লেখিকা : #Lucky_Nova(কপি নিষেধ)
রুহুলের কথায় ভ্রুকুঞ্চন করলো নীল।
উঠে দাঁড়াতেই প্রয়াস হাত বাড়ালো। সৌজন্যসূচক ক্ষীণ হাসি দিয়ে বলল, “ধন্যবাদ।”
অবাক হয়ে তাকালো নীল। একটা মানুষ তার গাড়ির সাথে এক্সিডেন্ট করেছে বলে একজন দিচ্ছে ধন্যবাদ, আর আরেকজন করছে মৃত্যু কামনা। অথচ ওই লোকের সাথে তেমন গুরুতর কিছু হলে ও নিজেই তো বাজেভাবে ফাঁসতো!
গলা ঝেড়ে হাত মেলালো নীল, “My pleasure.”
“স্যরি, এতসময় বসিয়ে রাখার জন্য।”
“It’s okay. কিন্তু… এখন কি যেতে পারি?”
“Yeah, sure.”
প্রয়াসের ফিরতে বেশ রাত হলো। তিয়াসা তখনো ঘুমাচ্ছে। তার অপরপাশে, বিছানার সামনে দাঁড়িয়ে আছে রেখা।
অঞ্জলি এতসময় এখানেই ছিলেন। প্রয়াসই তাকে একটু আগে ঘুমাতে পাঠিয়েছে রেখাকে এখানে থাকতে বলে। প্রথমে রাজি না হলেও পরে জোরাজুরিতে অন্যরুমে গেছেন তিনি।
প্রয়াস জানে ভদ্রমহিলা নিজেও অসুস্থ। এভাবে রাত জেগে বসে থাকলে আরো অসুস্থ হয়ে পড়বেন তিনি।
“আপনে খাইবেন না?” জিজ্ঞেস করলো রেখা।
“না। আপনি সব ফ্রিজে রেখে দেন।” বলতে বলতে প্রয়াস ঘড়ি খুলে ড্রেসিং টেবিলে রাখলো।
“আচ্ছা।” মাথা নেড়ে বলল রেখা। কিন্তু চলে গেল না।
প্রয়াস তিয়াসার পাশে এসে বসে হাতের উলটোপিঠ দিয়ে জ্বর দেখলো।
না নেই।
চোখ তুলে রেখাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে প্রশ্ন করলো, “কিছু বলবেন?”
কিছু বলার জন্যই দাঁড়িয়ে ছিল সে। প্রয়াস জিজ্ঞেস করাতেই বলল, “লোকটারে ধরছেন?”
“হ্যাঁ। পুলিশের তত্ত্বাবধানে আছে এখন।”
স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো রেখা। তৃপ্তিকর হাসি দিয়ে বলল, “যাক, ভালো।”
“আপনারো তো রেস্ট দরকার। আপনি গিয়ে শুয়ে পড়েন, আমি থাকছি ওর কাছে।”
“আপনেরও তো দরকার। সারা রাত্তির জাইগা থাকবেন!”
“আমার এমনিও কাজ আছে। সমস্যা হবে না। আপনি যান।”
রেখা কথা বাড়ালো না। সে নিজেও অনেক ক্লান্ত। মাথাটা ব্যথা করছে। ঔষধ খেয়ে শুয়ে পড়তে হবে তার।
মধ্যরাতের পরে ঘুম ভাঙলো তিয়াসার। ভয়ে ছটফটিয়ে উঠে বসলো সে। বুক ওঠানামা করতে লাগলো হাপরের মতো।
প্রয়াস পাশেই হেডবোর্ডে হেলান দিয়ে বসে ছিল। চোখ লেগে এসেছিল। কিন্তু তিয়াসার ধড়ফড়িয়ে উঠে বসাতে সজাগ হলো সেও।
“তিয়াসা!” টেবিল লাইট জ্বাললো প্রয়াস।
ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো তিয়াসা। প্রয়াসকে দেখে ছলছল চোখদুটো থেকে অশ্রু গড়ালো তার।
উদগ্রীব হয়ে উঠলো প্রয়াস।
“কী হয়েছে তু…?” প্রশ্ন শেষ হবার আগেই ওকে জড়িয়ে ধরলো তিয়াসা। বুকের মাঝে মুখ গুজে হাঁসফাঁস করতে শুরু করলো অস্থিরতায়।
প্রয়াস বুঝলো। তিয়াসার মাথার উপর একহাত রেখে ধীর গলায় আশ্বস্ত করে বলল, “এখন সব ঠিক আছে। বিশ্বাস করো। আর কেউ তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।”
তিয়াসা হাতের বাধন দৃঢ় রেখে মাথা তুললো। ভিজে চোখদুটো মেলে তাকালো প্রয়াসের দিকে।
চোখের জলে ঘন পাপড়িগুলো ভিজে লেপ্টে আছে একে অপরের সাথে। কম্পিত ঠোঁটজোড়া রক্তবর্ণ হয়ে উঠেছে তার।
সেই মায়াবী মুখটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো প্রয়াস। অন্যহাতে চোখ মুছিয়ে দিয়ে গালে লেপ্টে থাকা চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিলো। ঠোঁট এগিয়ে পরম যত্নে চুমু আঁকলো তিয়াসার কপালে।
চোখ পিটপিটালো তিয়াসা। অদ্ভুত শিহরণমিশ্রিত এক স্নিগ্ধ অনুভূতির সৃষ্টি হলো তার বুকের মাঝে।
কোমল চাহনিতে চেয়ে অধর ছড়িয়ে নিঃশব্দে নির্মল এক হাসি হাসলো সে।
সকাল সকাল নিজের কেবিনে নীলকে দেখে অবাক হলো ইভান।
“তুই? এই সময়ে এখানে?” বলতে বলতে নীলের মুখোমুখি চেয়ারের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। হাতের কোটটা চেয়ারের পিছনে রাখতে না রাখতেই নীল প্রশ্ন ছুড়লো, “তুই নাকি লিভ টুগেদার করছিস?”
এমন প্রশ্নে ভ্রু কুচকে ফেললো ইভান।
“What!”
সরু চোখে তাকালো নীল। ঠোঁট উলটে বলল, “আমি কি জানি! তোর মা আমার মাকে বলেছে এসব। তোকে ফ্ল্যাটে খুঁজে পাচ্ছে না। ফোনে পাচ্ছে না। আর এজন্যই আমাকে ধরেছে। বিয়ের জন্য রাজি করাতে বলেছে তোকে। ওদিকে তোর গার্লফ্রেন্ড নাকি প্রেগন্যান্ট। কী যেন নাম বলল!” ভাবুক ভঙ্গিমায় মনে করতে চেষ্টা করলো নীল।
“ক্যান্ডেল?” গম্ভীর মুখে নীলের দিকে তাকিয়ে বলল ইভান।
“হ্যাঁ।” মনে পড়ায় মাথা নাড়লো নীল। আরো বলল, “আমাকে শুধু রাজি করাতে বলেছে। এভাবে নাকি সম্পর্ক রাখা যাবে না। তাই বিয়ে করতে হবে। আজ সন্ধ্যার সময় মেয়ের বাসায় মানে তোর গার্লফ্রেন্ডের বাসায় যেতে বলেছে তোকে। সবাই সেখানেই থাকবে। কথাবার্তা হবে হয়তো। উম…আর বলেছে বিয়েতে সবাই রাজি।”
একনাগাড়ে বলে থামলো নীল। তারপর ডেস্কের উপর দু’হাত ভাঁজ করে তার উপর চিবুক রেখে সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বলল, “কাহিনী কী?”
ইভান পূর্বের ন্যায় নিশ্চুপ রইলো। কিছু ভাবছে হয়তো।
নীল ভ্রু উঁচিয়ে নামালো। সরব কণ্ঠে আবার জিজ্ঞেস করলো, “কী?”
“কয়টায় যেতে বলেছে?” পালটা প্রশ্ন করলো ইভান।
“সন্ধ্যা ছয়টায়। তুই কি কোনো ঝামেলায় পড়েছিস?”
“আমার মতো মা থাকলে ঝামেলা ছাড়া থাকা যায় না।” নির্বিকার ভঙ্গিতে এটুকুই বলল ইভান। যার বাকিটা আপনাআপনি বুঝে গেল নীল।
ইশারা আন্টির তিলকে তাল করে, সেই তালের তাল পিঠা বানানোর স্বভাব সম্পর্কে নীল অবগত। ছোটো বেলা থেকেই দেখে আসছে। ইভানের সাথে ছোটোবেলা থেকেই বন্ধুত্ব। আর তাদের বন্ধুত্বের খাতিরেই তাদের পরিবারদ্বয়ের মধ্যেও একটা ভালো সম্পর্ক হয়েছে। যদিও তাদের মধ্যে রক্তের কোনো সম্পর্কই নেই। এমনকি ধর্মের দিক থেকেও আলাদা।
“তো এখন কী করবি?”
“সবসময় যা করি।”
অধর ছড়িয়ে নিঃশব্দে হাসলো নীল। হাত উলটে ঘড়ি দেখে বলল, “আমাকে উঠতে হবে।”
অনেকক্ষণ ধরেই ইতস্তত করে যাচ্ছেন অঞ্জলি। বলতে চাচ্ছেন কিছু।
প্রয়াসের আন্দাজ অনুসারে তিয়াসার ব্যাপারেই কিছু বলবেন তিনি। হতে পারে ওকে নিয়ে যাওয়ার কথাই।
আসলেই তাই। অঞ্জলি এভাবে প্রয়াসকে আর বিরক্ত করতে চান না। ছেলেটা অনেক করেছে। গতরাতে নাকি জেগেই কাটিয়ে দিয়েছে তিয়াসার জন্য।
এদিকে রেখা বলল মেয়েটা নাকি ওকে ছাড়া ঘুমাতেই চায় না। এতদিন নাকি একসাথেই ঘুমিয়েছে। কিন্তু এটা তো ঠিক না। বিষয়টা তো আর পাঁচটা মানুষ ভালো চোখে দেখবে না। তিয়াসা যে মানসিক দিক থেকে অসম্পূর্ণ সেটা তারা বুঝবে না।
এই যেমন রেখাই তো বিষয়টা ভালো চোখে দেখছে না। তার মতে, শত হলেও অবিবাহিত একটা মেয়ের এভাবে একটা পুরুষ মানুষের সাথে থাকা ঠিক নয়। ভুল হতে কতক্ষণ! তখন সম্মানে তো দাগ একমাত্র তিয়াসারই লাগবে।
খুক খুক করে গলা ঝেড়ে নিলেন অঞ্জলি।
প্রয়াস সরাসরি তাকালো তার দিকে। মুখের অবস্থা সঙ্গিন ওর। বুকের মধ্যে কিছু একটা খোঁচাচ্ছে খুব। অজানা ভয় ঘিরে ধরেছে তাকে। হারানোর ভয়।
এই বুঝি উনি তিয়াসাকে নিয়ে চলে যাওয়ার কথা বলে বসেন!
হলোও তাই।
অঞ্জলি দেবী বললেন, “অনেক কষ্ট করেছ বাবা। এতোটা তো কাছের মানুষও করতে চায় নি। করেও নি।”
প্রয়াস মিনমিন করলো। কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না।
“অনেক জ্বালিয়েছি তোমাকে। তিয়াসাও এতদিন জ্বালিয়েছে। যাইহোক, এখন তো আর সমস্যা নেই। তাই আজ বিকেলেই ভাবছি বাড়িতে ফিরে যাব।”
বুকটা ধক করে উঠলো প্রয়াসের। বিচলিত চোখে অঞ্জলির দিকে তাকালো সে। এই আশঙ্কাই করছিলো সে।
ফোন কানে ধরে আছে নীল। ভ্রু স্বয়ংক্রিয়ভাবেই কুঞ্চিত হয়ে এসেছে।
এই নিয়ে সকালের পর থেকে কয়েকবার ফোন করেছে সে। এখন দুপুর গড়িয়েছে। কিন্তু ত্রয়ীর ফোনের ‘ফ’ ধরারও নাম নেই।
অথচ মেয়েটা কালই তাকে কথা দিলো এমন করবে না। এমনকি তার এই সম্পর্ক নিয়েও নাকি অসুবিধা নেই। তাহলে?
মুখটা প্রবল গুরুগম্ভীর হয়ে উঠলো তার। ফোনটা একপ্রকার শব্দ করেই ফেললো টেবিলের উপরে।
এতো অবহেলা আর নেওয়া সম্ভব নয়। এই হেলাফেলার জবাবদিহিতা তো ত্রয়ীকে করতেই হবে এবার। বিন্দুমাত্র ছাড় দেবে না নীল। প্রচন্ড রকমের রাগ হচ্ছে তার। প্রচন্ড!
অথচ সে তো জানেই না ত্রয়ী ফোনের ধারেকাছেও নেই।
সকাল থেকে ব্যস্ত সে। ভেবেছিল ভার্সিটিতে যাবে না। কিন্তু দরকারে যেতে হয়েছে। জলদি ফিরতে গিয়েও দেরি হয়ে গেছে তার। দুটো ক্লাস মিস দিলেও বাসায় আসতে দুপুর গড়িয়েছে। সাইলেন্ট ফোনটা ব্যাগের মধ্যে পড়ে পড়ে বেজেছে৷ বিন্দুমাত্র টের পায়নি ও।
বাসায় ফিরে চেকও করা হয়নি। রান্নার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। রাতে ওর মা বাবা ফিরে আসবে। অথচ দুপুরের রান্নাই ঠিকমতো করা ছিল না।
তৃণা আপু কিছুই রান্না করতে পারে না। এখনো শেখে নি। মায়ের অনুপস্থিতিতে সবসময় ত্রয়ীই করে এসেছে। আজও ব্যাতিক্রম হলো না।
ডিম ভেজে ভাত খেয়ে তারপর রাতের রান্নায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো সে।
সব কাজ সাড়তে গিয়ে বিকেল পেরিয়ে গেল। সকালে গোসল করলেও রান্নার পরে ঘেমে চিটচিটে হয়ে গেছে শরীর।
আরেকবার শাওরার নিতে হবে।
ত্রয়ী আলমারি খুললো। সেখান থেকে জামা কাপড় গুছিয়ে নিয়ে আলমারির একটা পাল্লা বন্ধ করে আনমনে পাশে তাকাতেই ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো ও। আনমনেই দুই পা পিছিয়ে চকিত ভঙ্গিতে বলে উঠলো, “এভাবে হুটহাট চলে আসেন, ভয় পাই না!”
নীল কিচ্ছুটি বলল না। পকেটে হাত গুজে তীব্র এক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চেয়ে রইলো ত্রয়ীর দিকে।
খেয়াল করে দেখতেই ঢোক গিললো ত্রয়ী। সে কি ফের কিছু করেছে!
কিছু বলতে তো ফোন ধরাটাই বুঝায়।
কিন্তু সে তো রাতে হাই ভলিউম দিয়ে, ফোন হাতে নিয়ে শুয়ে ছিল। অনেকক্ষণ জেগেও ছিল। কই সে তো ফোন দেয়নি! ভোরের দিকে ওঠার পর কোনো মিসকলও দেখে নি।
তাহলে কীসের রাগ!
শঙ্কায় পড়ে গেল ত্রয়ী।
চোরা দৃষ্টিতে কয়েকবার তাকালো নীলের দিকে। একটুক্ষণ কিছু শোনার অপেক্ষায় নিশ্চুপ থেকে মিনমিন করলো, “কিছু হয়েছে? আপনি হঠাৎ এখানে…”
“কেন? তুমি চাও না আমি আসি?” নীলের তীর্যক দৃষ্টির ত্যাড়া প্রশ্নে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল ত্রয়ী। বড়ো বড়ো চোখে চেয়ে রইলো বোকার মতো।
সে কি একবারো একথা বলেছে?
নীল দূরত্ব কমিয়ে কাছাকাছি এসে দাঁড়ালো একদম। ভেতরে ভেতরে শিউরে উঠলো ত্রয়ী। তবুও পিছালো না।
“তোমাকে কী বলেছিলাম আমি?” শীতল কণ্ঠের কাঁটাকাঁটা প্রশ্নে মুখ তুলে তাকালো ত্রয়ী৷ চোখে একগাদা বিভ্রান্তি। কারণ সে সত্যিই বুঝতেই পারছে না নীল ঠিক কী বিষয় নিয়ে রেগে আছে।
লোকটার শক্ত মুখ এড়িয়ে অন্যদিকে দৃষ্টি ঘুরাতে গিয়েও ফের তাকালো ত্রয়ী। ঠিক কপালের বা পাশটার দিকে। সাদা একটা ব্যান্ডেজ সেখানটায়।
কপাল কুচকে গেল ওর। অবাক হয়ে কী হয়েছে জানার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করতে উদ্যত হতেই তৃণা কিছু বলতে বলতে ঘরে ঢুকলো।
ঢুকেই নীলকে দেখে বিস্মিত হয়ে বলল, “আপনি কখন এলেন?”
ত্রয়ীর পিলে চমকে উঠলো। সে চুরি করে ধরা খাওয়ার মতো দৃষ্টি নিয়ে তাকালেও নীল স্বাভাবিক ঠাঁট বজায় রাখলো।
“মাত্রই।” নম্রতার সাথে প্রত্যুত্তর করলেও মুখটা বেশ থমথমে নীলের। সে এই মূহুর্তে অন্যকারো প্রবেশ আশা করে নি।
এক কথার ছোটো উত্তরে সেটা হয়তো বুঝলো তৃণা। ঝগড়ার পূর্বাভাস আন্দাজ করতে পেরে মেকি হেসে ত্রয়ীকে বলল, “আব্বু আম্মু চলে এসেছে, এটা বলতেই এসেছিলাম। যাইহোক তোরা কথা বলে টলে নিচে আসিস।”
বেরিয়ে গেল তৃণা।
আর তৃণা বের হতেই নীল পূর্বের ন্যায় চাহনিতে ফিরে তাকালো ত্রয়ীর দিকে। অতঃপর এক সেকেন্ডের ঠান্ডা দৃষ্টি বিনিময় করেই বেরিয়ে গেল।
পুরোদস্তুর বেকুব বনে গেল ত্রয়ী। হা হয়ে, বিস্ময়সূচক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো। হুট করে এসে আবার হুট করেই বেরিয়ে যাবার কারণ আন্দাজ করতে পারলো না। না ঠাওর করতে পারলো রাগের কারণ।
কিছু অন্তত বলে যেতে পারতো!
ইভানের বিন্দুমাত্র ইচ্ছে ছিল না এখানে আসার। কিন্তু না এসেও উপায় নেই। তার মাকে সে চেনে। ঠিক অফিসে গিয়ে হাজির হবে। তারপর চেঁচামেচি করে এই ভুল ব্যাপারটা পুরো অফিসময় ছড়িয়ে ছাড়বে। যেটা ইভান চায় না।
সব বিষয় আজ খোলাসা করে ফেলতে চায়। বিশ্বাস করা না করা একান্তই তাদের ব্যাপার। কিন্তু মিথ্যে কোনো দায়ভার সে নেবে না।
হাত উলটে ঘড়িতে নজর বুলালো ইভান। ছয়টা বাজতে কুড়ি মিনিট বাকি।
ঢাকা শহরের জ্যামের সমস্যার জন্যই কিছুটা সময় হাতে রেখে রওনা হয়েছিল ও। কিন্তু জ্যাম একটু কম হওয়ায় অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবেই কুড়ি মিনিট আগেই এসে পড়েছে। তবে এর সাথে দরজা না খোলার সম্পর্ক থাকার কথা নয়। অথচ মিনিট পাঁচেক হচ্ছে সে কলিং বেল দিচ্ছে। কিন্তু কেউ খুলছেই না।
অদ্ভুত তো!
কপালে ভাঁজ ফেলে আরো দুইবার বেল দিলো ইভান। মনে মনে ঠিক করলো আর একমিনিট দেখবে। তারপরও না খুললে ফিরে যাবে।
ঘড়ির কাঁটা সম্পূর্ণ একমিনিটের আবর্তন শেষ করতেই ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেললো ইভান।
চলে যেতে উদ্যত হতেই দরজা খোলার আওয়াজ কানে এলো।
থেমে দাঁড়ালো সে। ঘাড় ঘুরাতেই মুখোমুখি হলো ক্যান্ডেলের।
ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল ক্যান্ডেল। বড়ো বড়ো চোখে তাকালো ইভানের দিকে।
ইভান ওর মুখের দিক থেকে দৃষ্টি নামিয়ে আগা গোড়া চোখ বুলাতেই ভ্রু কুঞ্চিত হয়ে গেল আপনাআপনি।
ক্যান্ডেলের পরনে চিকন ফিতা বিশিষ্ট অফ সোল্ডার টপ। ড্রেসটা হাঁটু অব্দিও নয়। কাধ, এমনকি ফর্সা পা দুটো পর্যন্ত অনাবৃত।
আচ্ছা, এই মেয়ে কী ভালো পোশাক পরতে পারে না?
ইভানকে নজর বুলানোতে ভারি অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো ক্যান্ডেল। শীতল এক স্রোত বয়ে গেল শিরদাঁড়া বেয়ে। আচমকা সেদিনের ঘটনাটা মনে পড়ায় লজ্জায় মিলিয়ে গেল। ধরাম করে দরজা বন্ধ করে দিতে উদ্যত হতেই একহাতে দরজাটা ধরে থামিয়ে দিলো ইভান।
ক্যান্ডেল চকিত ভঙ্গিতে তাকাতেই রাশভারি গোছের চাহনিতে বক্রোক্তি করলো, “এতোই যখন লজ্জা তাহলে এসব পরো কেন? নাকি পোশাকের অভাব তোমার?”
(চলবে…)