কিছু জোড়া শালিকের গল্প পর্ব ২৮ : #অদ্বিতীয়
লেখিকা : #Lucky_Nova(কপি নিষেধ)
পুনরায় সাজানো বাসর ঘরটায় বসে আছে ত্রয়ী। অদ্ভুত অস্থিরতায় ছটফট করছে মন। গলা কেমন শুকিয়ে আসছে।
নীল ঘরটায় ঢুকতেই নড়েচড়ে বসলো ও। ফাঁকা একটা ঢোক আপনা আপনিই গলা বেয়ে নেমে গেল। রীতিমতো ঘামতে লাগলো ও। অস্থির হয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো।
নীল সরাসরি ওর পাশে এসে বসলো।
ত্রয়ীর বিচলিত ভাব দেখে খানিক অবাকও হলো।
চোখ পিটপিটিয়ে “ত্রয়ী!” বলে ডেকে হাতের উপর হাত রাখতেই কেমন চমকে উঠলো ত্রয়ী।
নীল ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল খানিক।
ও যে অতিরিক্ত ভয় পাচ্ছে সেটা আন্দাজ করতে পেরে হাতটা সরিয়ে নিতে গেল।
তবে তার আগেই হম্বিতম্বি করে ওর হাতটা চেপে ধরলো ত্রয়ী।
নীল দ্বিগুণ অবাক হলো। তবে ঠিক পরমুহূর্তেই ত্রয়ীর কান্ড কীর্তি দেখে না হেসে পারলো না। ভয়ে চোখ মেলাতেই পারছে না, থরথরিয়ে কাঁপছে, কিন্তু সাহস করে হাত ধরেছে। আর ধরেছেও এমনভাবে যে নখগুলো গেঁথে যাচ্ছে হাতে।
ফর্মালিটি দেখাতে গিয়ে ধরেছে বলে কথা!
নীল ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেললো। অন্য হাতটা ত্রয়ীর মাথার উপর রেখে হেসে বলল, “শান্ত হও। আমি খেয়ে ফেলছি না তোমাকে!”
ত্রয়ী চোখ তুললো। এক ঝলক চোখাচোখি হতে চোখ নামালো।
“আমার হাত…।” নীল এটুকু বলতে নিজে হাতের দিকে ইশারা করতেই চট করে হাত ছেড়ে দিলো ত্রয়ী। লজ্জায় পড়ে গেল একটু।
নিঃশব্দে হেসে উঠে দাঁড়ালো নীল। ত্রয়ী প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকাতেই বলল, “বারান্দায় বসবা?”
বারান্দার ডিভানে ত্রয়ীকে বসিয়ে রুম থেকে কম্বল নিয়ে এলো নীল। ত্রয়ী গায়ে সেটা জড়িয়ে দিতেই ত্রয়ী বলল, “আপনি নেবেন না?”
নীল প্রত্যুত্তরে মৃদু হাসলো। অতঃপর বিনাবাক্যে ত্রয়ীর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়তে পড়তে বলল, “চাইলে দিতে পারো।”
ত্রয়ী লাজুক হাসলো। আলতো হাতে কম্বলের একপ্রান্ত টেনে দিতে চাইতেই নীল ওর হাতটা ধরলো। হালকা শিউরে উঠলো ত্রয়ী।
নীল ওর হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল, “কম্বল লাগবে না আমার। তোমার হাতটা ধরে থাকি?”
ত্রয়ী বুক ধুকপুক করতে শুরু করলো। সে এদিক ওদিক তাকিয়ে খুব নীরবেই সম্মতি দিলো।
নীল প্রসন্ন হেসে ওর হাতের দিকে তাকালো। মেহেদী রাঙা তালুতে নজর গেঁথে রইলো নীরবে।
বেশ কিছুক্ষণ এভাবেই কেটে গেল।
অবশেষে ত্রয়ীই নীরাবতা ভাঙলো। আমতাআমতা করে বলল, “হাতে কী দেখেন আপনি?”
“তোমার যা নাজেহাল অবস্থা তাতে হাত ছাড়া অন্য কিছু দেখার উপায় আছে?” ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে বলে চোখ তুলে ত্রয়ীর দিকে তাকালো নীল৷
ত্রয়ী তড়িঘড়ি করে চোখ সরালো। উক্ত কথাটায় আরক্তিম হলো মুখটা।
“তুমি তখন কী যেন জানতে চাচ্ছিলা?”
ত্রয়ী তাকালো।
“কখন?”
“রিসিপশনের সময়। আমার ফোন আসলো বলে আর জিজ্ঞেস করতে পারলা না।”
ত্রয়ীর মনে পড়লো এবার৷ অপ্রকৃতস্থ হয়ে নীলের প্রশ্নসূচক দৃষ্টি থেকে চোখ সরিয়ে নিলো। খানিক ইতস্তত করতে করতে জিজ্ঞেস করলো, “হ্যাঁ, মানে…আপনি যাকে ভালোবাসতেন… তাকে বিয়ে করলেন না কেন?”
নীল ভ্রুকুটি করলো। একটু থেমে বলল, “তাকেই তো করেছি।”
ত্রয়ী একটু থতমত খেয়ে গেল। এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল, “না..ওই যে.. যে আপনাকে এলভিকে দিয়েছে। আপনার সেই..ফার্স্টলাভ..।”
এটুকু বলে একপলক নীলের দিকে তাকালো ত্রয়ী।
নীলকে সন্দিহান চোখে তাকালো। কোল থেকে মাথা উঠিয়ে বসলো সোজা হয়ে। ত্রয়ীর দিকে খানিকটা এগিয়ে এসে বলল, “তোমার সত্যিই কিছু মনে নেই?”
চোখ পিটপিটিয়ে তাকালো ত্রয়ী। না বুঝতে পেরে বলল, “কী?”
“এলভিকে তো তুমিই দিয়েছ!”
হতবিহ্বল হয়ে তাকালো ত্রয়ী। বিস্মিত হয়ে মিনমিন করলো, “আমি?”
“হ্যাঁ তুমি। তোমার বাবা কুকুর, বিড়াল মোটেও পছন্দ করে না বলে যার হাতে এলভিকে দিয়েছিলা সেটাই আমি ছিলাম।”
ত্রয়ী ভ্রুকুটি করে কিছু ভাবলো। আচানক সবকিছু মনে পড়তেই হা হয়ে গেল মুখটা। একরাশ বিহ্বলতা নিয়ে প্রশ্ন করলো, “ওটা আপনি ছিলেন?”
নীল হাসলো। মাথা নেড়ে বলল, “জি, হ্যাঁ।”
ত্রয়ী বড়োসড়ো একটা ধাক্কা খেলো। বড়ো বড়ো চোখে তাকিয়ে রইলো নীলের দিকে।
লোকটাকে এতদিনেও চিনলো না কীভাবে তাহলে!
এত মনভুলো ও!
তখন খুলনায় থাকতো ওরা। স্কুলে পড়তো ও। ক্লাস নাইনে। একদিন স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে, রাস্তার পাশে একটা ছোটো, একদমই বাচ্চা কুকুরকে আহত অবস্থায় পেয়েছিল ও। কুকুরটা হাঁটতেই পারছিলো না দেখে খুব মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল ত্রয়ীর। সেটার করুণ অবস্থা দেখে কেঁদে ফেলেছিল।
বাবা কুকুর মোটেও পছন্দ করেন না। তার খুব অপছন্দ এসব কুকুর-বিড়াল। এজন্য বাসাতেও নিতে ভয় পাচ্ছিল। আবার ফেলে যেতেও একদমই মন চাচ্ছিলো না।
তখন ওকে রাস্তার পাশে ওইভাবে কাঁদতে দেখে একটা ছেলে এগিয়ে এসেছিল। জিজ্ঞেস করেছিল ও কাঁদছে কেন।
ত্রয়ী কাঁদোকাঁদো মুখ তুলেই একপলক তাকিয়েছিল তার দিকে।
কান্নাকাটির কারণে চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছিল তখন। তার উপর কড়া রোদের কারণে চোখও বুজে আসছিল। এটুকু মনে আছে যে ছেলেটা ভালোই লম্বা ছিল। যাকে ও অকপটেই কুকুরটার জন্য কিছু করতে বলেছিল। হয়তো বাসাতে নিয়ে যেতেও অনুরোধ করেছিল।
কিন্তু এতকিছুর পরও ছেলেটার চেহারাই মনে রাখতে পারলো না ও! অদ্ভুত!
আনমনেই হেসে ফেললো ত্রয়ী। ঘুরে তাকালো নীলের দিকে।
এসব ঘটনার পর সাত বছর কেটে গেছে। আজ সেই মানুষটা নাকি তার স্বামী! ভাবা যায়?
“মনে পড়েছে তাহলে?” ভ্রু উঁচিয়ে নামালো নীল।
ত্রয়ী হাসি মুখেই মাথা নেড়ে সায় দিলো, “হু। কিন্তু আপনার সাথে তো আমার আর দেখাই হয়নি। তাহলে…?”
“তাহলে কী?” নীল মুচকি হাসলো।
সাথে সাথেই চোখ সরিয়ে নিলো ত্রয়ী।
“আমি বাবামায়ের সাথে খুলনায় এসেছিলাম, মামার বাসায়। কিছুদিন বেড়াতে৷ তবে তোমার সাথে দেখা হবার পরদিন বাবা মায়ের সাথে ঢাকায় ফিরে যেতে হয়েছিল। নানা অসুস্থ ছিলেন। তিনি সুস্থ হওয়ার পরে যখন খুলনা এসেছিলাম তোমাকে আর খুঁজে পাইনি। ওই স্কুলেও না। এটা ঠিক যে ওটা আমাদের প্রথম দেখা ছিল। কিন্তু ওই প্রথম দেখাতেই আমি আটকে গিয়েছিলাম। তোমার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। ভয়ানক প্রেমে।” অনুভূতিপূর্ণ কণ্ঠে বলতে বলতে শব্দহীন হাসলো নীল।
ত্রয়ী অবাক হলো। খানিক লজ্জাও পেল। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে নখ খুটতে খুটতে বলল, “আসলে আব্বুর ট্রান্সফার হয়েছিলো। সেখান থেকে রংপুরে শিফট হয়েছিলাম আমরা।”
“এজন্যই পাইনি। কিন্তু অবশেষে দেখা হয়েই গেল। আমি কিন্তু তোমাকে দেখার সাথে সাথেই চিনেছিলাম। তবে ভাবিনি দেখা হবে। আর এটাও ভাবিনি যে আমার প্রথমই আমার অদ্বিতীয় হবে।”
ত্রয়ী লাজ রঞ্জিত হয়ে চোখ নামিয়ে নিলো। একরাশ ভালোলাগা মনের আনাচকানাচ ভরিয়ে তুললো ওর।
এরপর অনেকক্ষণ ইতিউতি কথাবার্তা চলতে লাগলো দু’জনের। আস্তে আস্তে সমস্ত জড়তা কেটে গেল ত্রয়ীর। লোকটাকে এখন আগের থেকেও বেশি ভালো লাগতে লাগলো।
“ঘুমাবেন না?” এক পর্যায়ে বলল ত্রয়ী।
তবে প্রত্যুত্তরে নীল মুচকি হাসতেই নিজের বলা কথাতে নিজেই লজ্জা পেয়ে গেল। তাকাতে লাগলো এদিক ওদিক।
নীল ওর কোমড় জড়িয়ে কাছে টেনে আনলো। কানে কানে আদর মেশানো কণ্ঠে ফিসফিসালো, “তোমার মনে হয় আজ রাতে আমি ঘুমাতে দেবো তোমাকে?”
ত্রয়ী শিহরিত হলো। নিমিষেই অতিরিক্ত লজ্জায় লাজুক লতার মতো গুটিয়ে গেল নীলের বুকের মধ্যে।
(চলবে…)
গল্পের নাম : কিছু_জোড়াশালিকের_গল্প
পর্ব ২৮ : (বর্ধিতাংশ)
লেখিকা : Lucky_Nova(কপি নিষেধ)
সকাল দশটা নাগাদ ঘুম ভাঙলো ক্যান্ডেলের। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো ও। ঘুমঘুম চোখদুটো মেলে অপর পাশটায় একবার চোখ বুলিয়ে নিতে ইভানকে পেল না। ভ্রু কুচকালো।
ঘাড় ঘুরিয়ে আশেপাশে নজর বুলিয়ে নিলো একবার।
নাহ্! ইভান নেই।
অবাক হলো কিছুটা। তবে বিষয়টা গায়ে না মাখিয়ে উঠে পড়লো বিছানা ছেড়ে। এমনিও দেরী হয়ে গেছে অনেক।
ক্যান্ডেল ফ্রেশ হয়ে নিলো ঝট করে। মুখ মুছতে মুছতে এসে দাঁড়ালো আয়নার সামনে।
ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে চিরুনি তুলে নিতে গিয়েও হাত থেমে গেল ওর। ফের তাকালো আয়নায়।
কৃত্রিম আলোতে গলার কাছে জ্বলজ্বল করা লকেটটার দিকে চোখ পড়লো ওর। কপাল কুচকে গেল মুহূর্তেই। কিছুক্ষণ অবাক হয়ে চেয়ে থেকে হাত দিয়ে লকেটটা ধরলো ও। আয়না থেকে চোখ সরিয়ে সরাসরি লকেটটার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো।
অদ্ভুত তো! এটা তো কাল রাতেও ওর গলাতে ছিল না। এমনকি এটা ওর নয়। তাহলে এটা এলো কোথা থেকে?
হতবিহ্বল হয়ে গেল ক্যান্ডেল। ভেবে পেলো না কিছুতেই।
তবে বেশি চিন্তা করতে হলো না। হঠাৎই কিছু একটা মনে হতেই ড্রেসিং টেবিলের দিকে তাকালো। সেখানে কালো রঙের ছোটোখাট বক্স দেখতে পেয়ে হাতে তুললো সেটা। বক্সটা খুলতেই সেটা ফাঁকা দেখতে পেয়ে বুঝলো গলার লকেটটা এখানে ছিল। এটার মধ্যে।
কিন্তু এটা কে আনলো? আনলেও তার গলায় কখন পরানো হলো?
অনুপলেই সেই উত্তরটাও পেয়ে গেল নিজে থেকেই। সাথে সাথেই যেন বিস্ময় খেলে গেল ওর চোখমুখে। ঠোঁট দুটো আলাদা হয়ে গেল আপনাআপনি।
স্বগতোক্তি করে বিড়বিড়িয়ে উঠলো, “ইভান!”
হতভম্ভতার শেষ রইলো না ক্যান্ডেলের। কিন্তু এটা পরালো কখন সে! টের অব্দি পেল না ও!
ঠোঁটের কোণে বিস্ময়কর এক হাসির রেশ ছড়িয়ে পড়লো ওর। তবে সে হাসি দীর্ঘক্ষণ স্থির হলো না। ফোনের টুংটাং মেসেজের আওয়াজে ঘোর কাটলো।
একটু কেঁপে উঠলো ক্যান্ডেল। ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো ফোনের দিকে। এগিয়ে গিয়ে সেটা হাতে নিয়ে মেসেজটা দেখলো।
যেটাতে স্পষ্ট করে লেখা –
“Mrs Candle Roy Chatterjee, you are late again!
Do you want me to withdraw the deal with your company?”
মেসেজটা পড়েই যেন সম্পূর্ণ মেজাজটাই পানসে হয়ে গেল ক্যান্ডেলের। চোখমুখ কুচকে গেল ওর। এই লোকটাকে কিনা একটু আগে ওর ভালো লাগছিলো।
কিন্তু না! ভুলে গেলে কীভাবে হবে?
পার্ভাট, পার্ভাটই থাকে। অসভ্য একটা!
নীল ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে বিছানার পাশে এসে দাঁড়ালো। কোমড়ে হাত দিয়ে ত্রয়ীর অবয়বের পানে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে হেসে ফেললো ও।
নিঃশব্দ হাসি।
সেই কখন থেকে মেয়েটাকে উঠতে বলছে ও। কিন্তু তার ওঠার নাম নেই। আদ্যপ্রান্ত কম্বল মুড়িয়ে কাচুমাচু হয়ে শুয়ে আছে। এমন না যে সে ঘুমাচ্ছে! দিব্যি জেগে আছে।
না দেখেও নীল বলতে পারবে যে মেয়েটা জবাফুলের মতো লাল হয়ে আছে। লজ্জা পাচ্ছে বলে কথা!
নীল দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো। হাসি থামিয়ে কিছুক্ষণ নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে রেখে তারপর বলল, “তুমি কি আজ সারাদিন এভাবেই থাকবা? উঠবা না?”
ত্রয়ীর দিক থেকে কোনো উত্তর এলো না। বরং কম্বলটাসহ আরো কাচুমাচু হয়ে রইলো সে।
নীল অধর প্রশস্ত করে হেসে ওর মাথা বরাবর ঝুঁকলো। হাতটা কম্বলের উপর রাখতে না রাখতেই মেয়েটা আঁতকে উঠলো। ভেতর থেকে মোড়ামুড়ি করে উঠলো। তটস্থ হয়ে তড়িঘড়ি স্বরে বলল, “আপনি… আপনি যান আমি পরে উঠবো।”
নীল ভ্রু উঁচিয়ে হাত সরালো। হাতটা ত্রয়ীর বালিশের পাশে ঠেস দিলো। একগাল হেসে বলল, “তুমি তো ঘুমাচ্ছো না। এখন উঠলে কি সমস্যা?”
পরক্ষণেই গলার স্বর একটু নিচুতে নামিয়ে বলল, “এতো লজ্জা পাচ্ছ কেন? আমি কি বেশি কিছু করেছি?”
কম্বলের ভেতরে থাকা ত্রয়ী চমকে উঠলো। লাজে সারা শরীরে মৃদু ঝংকার উঠলো যেন। নাস্তানাবুদ হয়ে ব্যগ্র গলায় আহাজারি করে উঠলো, “উফ! জ্বালাবেন না। যান তো!”
নীল এবার শব্দ করে হাসলো।
তার হাসি শুনে ত্রয়ী দাঁত কিড়মিড় করে চোখ বুজলো। এতো খারাপ কেউ হয়!
“আচ্ছা আমি গেলে আসবা? ওকে ফাইন। আমি যাচ্ছি, তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো।”
নীলের পায়ের শব্দ মিলিয়ে যাবার কিছুক্ষণ পর চোখ খুললো ত্রয়ী। সে সত্যিই গেছে কিনা নিশ্চিত হতে মাথার উপর থেকে আস্তে আস্তে কম্বল সরালো ও। শুধু চোখদুটো বের করে বুলিয়ে নিলো সারা ঘরে।
অতঃপর হাঁফ ছাড়লো। তাড়াহুড়ো করে গা থেকে কম্বল সরিয়ে নামলো বিছানা ছেড়ে। দ্রুতপদে এগিয়ে দরজায় ছিটকিনি দিলো।
স্বস্তিতে মুক্তশ্বাস ফেলে পিছনে ঘুরতেই পিলে চমকে উঠলো ওর। ধরাম করে দরজার সাথে লেপ্টে গিয়ে বড়ো বড়ো চোখের দৃষ্টিতে চাইলো নীলের দিকে।
লোকটা না বের হয়ে গেছিলো একটু আগে! তাহলে?
ক্যান্ডেল এই পুরুষটিকে একদমই বুঝতে পারে না। ঘরে এক, বাহিরে আরেক!
একটু আগেও এমন ঠান্ডা ব্যবহার দিলো যেন সে ওকে চেনেই না! সামান্য দেরি করে এসেছে বলে কিনা এক্সট্রা কাজগুলোও ওকে করতে দিয়ে দিয়েছে এজন্য।
অথচ নিজে অফিসে আসার সময় একটু ডাকলে কী হতো! মহাভারত অশুদ্ধ হতো?
না, না! ডেকে তুললে তো আর ওকে হয়রানিটা করতে পারত না! এজন্যই ডেকে তোলে নি। যাতে এভাবে বিটলামি করতে পারে।
হিটলার একটা!
রাগে দাঁত কিটকিট করলো ক্যান্ডেল। হাতে থাকা কাপড়টা দু’হাতের মুঠোয় মুচড়ে ধরলো ও।
“ম্যাম!”
আচমকিত ডাকে চমকে উঠলো ক্যান্ডেল। চকিত ভঙ্গিতে ঘুরে তাকালো শব্দ উৎসের দিকে।
“ম্যাম আপনি…।” তটস্থ হয়ে বলতে বলতে মেয়েটা ক্যান্ডেলের হাতের দিকে তাকালো।
ক্যান্ডেলও মেয়েটার দৃষ্টি অনুসরণ করে নিজের হাতের দিকে তাকালো। নিজের রাগের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে অজান্তেই যে একটা ড্রেস ও মোচড়ামুচড়ি করে ফেলছে সেটা খেয়াল হলো। সাথে সাথেই মুঠো আলগা করলো ও।
শশব্যস্ত হয়ে বলল, “ওহ, সরি!”
মেয়েটা হালকা হেসে নিজের কাজে মনোযোগ দিলো।
ক্যান্ডেল দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো। ড্রেসগুলোর উপর থেকে হাত সরিয়ে নিলো। আপাতত কোনো কাজ নেই দেখে ভাবতে লাগলো কীভাবে এই বেহায়া লোকটাকে শায়েস্তা করা যায়!
অবশেষে ভেবে পেয়েও গেল।
ঠোঁটের কোণে বক্র হাসি ফুটলো ওর।
ও একটু আগের সেই মেয়েটাকে ডাকলো। মেয়েটা এই শপের বিক্রয়কর্মী।
মেয়েটা প্রশ্নসূচক চোখে তাকিয়ে এগিয়ে এলো ক্যান্ডেলের দিকে। জিজ্ঞেস করল, “জি ম্যাম, বলুন?”
ক্যান্ডেল একগাল হাসলো। বলল, “আমার একটা ট্রান্সপারেন্ট শাড়ি দরকার। উইথ স্লিভলেস ব্লাউজ।”
(চলবে…)