কিছু জোড়া শালিকের গল্প পর্ব ৩
: #intoxicating (গল্প কপি নিষেধ)
লেখিকা: #Lucky_Nova
“বিয়েটা আমি তোমাকেই করছি। এন্ড ইট’স ফাইনাল।” শান্ত গলায় বলল সে।
ত্রয়ী হকচকিয়ে তাকালো।
“আমি অন্য একজনকে..।”
“ভুলে যাও।” ত্রয়ীর কথার মাঝেই বলে উঠলো নীল। তার চোখের দৃষ্টি শীতল।
ত্রয়ী অবাক হয়ে তাকালো। ভিতরে ভিতরে ভয়ানক তোলপাড় চলছে। ও এসেছিলো লোকটা রাজি হবে ভেবে। কিন্তু সে-ই কিনা এসব বলছে!
এখন কী করবে ও!
দিশেহারা হয়ে পড়লো ত্রয়ী।
“আর কিছু?” প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল নীল।
ত্রয়ী হতবাক হয়ে তাকালো নীলের দিকে।
নীল কফির মগের দিকে ইশারা করে বলল,”কফি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।”
ত্রয়ীর গা জ্বলে গেল উক্ত কথাটা শুনে। কফি নিয়ে পড়ে আছে সে!
সত্যিই খুব অসহ্যকর একটা লোক। ত্রয়ীর ইচ্ছে করছে এই ছেলেটার মুখেই কফিটা ফিকে মারতে। কিন্তু সে অত সাহসী নয়। আর না অত বেয়াদব।
ত্রয়ীর আর বসতেই ইচ্ছে হচ্ছে না এই লোকটার সামনে। এখন অস্বস্তির জায়গায় লাগছে খুব রাগ।
নীল ত্রয়ীর থমথমে মুখটা দেখে বুঝতে পারছে সবই। তাই ত্রয়ীকে আরেকটু জ্বালিয়ে দিতে বলল,”কফি না খেলে অন্য কিছু অর্ডার করি!”
ত্রয়ী ক্ষিপ্ত চোখে তাকালো নীলের দিকে।
“আপনি কি আমার সাথে মশকরা করছেন?” দাঁতেদাঁত চিপলো ত্রয়ী।
নীল মৃদু হাসলো। মোলায়েম গলায় বলল, “রাগলে তোমাকে সুন্দর লাগে।”
একথায় ত্রয়ীর রাগ আরো বাড়লো।
নীল এবার সংকুচিত চোখে পাশের কাচের দেয়ালের দিকে তাকিয়ে কফিতে চুমুক দিতে দিতে বলল,”নুহাস! মাত্র ছয় মাসের রিলেশন!”
ত্রয়ী চরমভাবে বিস্মিত হলো।
“এক বছর পিছে ঘুরেছে। রাইট?” বলেই সে একবার তাকালো ত্রয়ীর দিকে।
ত্রয়ী বাকরুদ্ধ হয়ে পড়লো। এই লোক কী করে জানে এসব!(লেখিকা লাকি নোভা)
“আমি কী করে জানি?!” স্বগোতক্তি করে মুচকি হাসলো নীল। তারপর বলল,”সবই জানি। তুমি যা জানো না তাও জানি।”
“কবে থেকে ফলো করছেন আ…।”
“উহু। ফলো করা, পিছে ঘোরা এসব আমার কাজ না। তোমার বয়ফ্রেন্ডের কাজ।”
ভ্রুকুটি করে তাকালো ত্রয়ী। কটাক্ষ করে বলল, “আপনি সব জেনেও কেনো আমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন?”
“আমার ইচ্ছা।” ভাবাবেগ শূন্য কণ্ঠে বলল নীল।
ত্রয়ীর মেজাজটাই বিঘড়ে গেলো। রাগী কটমট চাহনিতে চেয়ে কিছু বলতে যাওয়ার আগেই নীল ওর চোখে চোখ রেখে তর্জনী আঙুলের ইশারায় বলল, “তোমার ঠোঁটের নিচের তিলটা অনেক সুন্দর। কিস করার জন্য পারফেক্ট একদম।”
ধক করে উঠলো ত্রয়ীর বুক। এলোমেলো হয়ে গেলো সাজানো কথাগুলো। সাথে অগোছালো হয়ে গেলো চোখের দৃষ্টিও। অস্বস্তি, লজ্জা সব একজোট হয়ে ঘিরে ধরেলো ত্রয়ীকে।
নীল পুনরায় মৃদু হাসলো। এটাই চেয়েছিলো ও।
“খেয়াল করেছো তুমি?”
ত্রয়ী আড়ষ্ট হয়ে গেলো। রাগে, লজ্জায় শরীর তিরতির করে কাঁপছে। এখানে ওর পক্ষে আর বসা সম্ভব নয়। এমনকি এই লোকের সামনেও আর আসা সম্ভব নয়। এতো ফালতু!
সবকিছু জেনেও কীভাবে বিয়ে করতে চাইতে পারে! ভেবেই অবাক হয় ত্রয়ী।
নীল ফোন ক্যামেরা অন করে ত্রয়ীর ফটো ক্লিক নিলো পর পর কয়েকটা।
ক্লিক করার আওয়াজে চমকে চোখ তুললো ত্রয়ী।
ততক্ষণে ক্লিক করা সারা।
“আপনি, আপনি আমার ছবি কেনো তুললেন?” রাগ দেখানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো ত্রয়ী।
“প্রমাণ আছে কোনো?” ভ্রু উঁচিয়ে বলল নীল।
হা হয়ে গেলো ত্রয়ী।
“মাত্রই আপনি তুললেন। মিথ্যা কেনো বলছেন? ডিলিট করেন এখনি।”
নীল লক বাটন চেপে দিয়ে বলল, “করবো না।”
নীলের ত্যাড়া কথায় থতমত খেয়ে গেলো ত্রয়ী।
নীল মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো ওর দিকে চেয়ে।
ত্রয়ী ঢোক গিললো। এখানে আর থাকা যাবে না। এটুকু সময়েই ত্রয়ী বুঝেছে যে এই লোক বিপদজনক। আর চরম অভদ্রও। যা করার অন্যভাবে করতে হবে।
ত্রয়ী উঠে দাঁড়ালো দ্রুত। দেরি না করেই দ্রুতপদে বেরিয়ে গেলো ক্যাফে থেকে।
নীলও কালবিলম্ব না করে টেবিলে পাঁচশো টাকার নোট রেখে বেরিয়ে এলো ক্যাফে থেকে।(লেখিকা লাকি নোভা)
মাঝ সিঁড়িতে এসে দাঁড়িয়ে গেলো ত্রয়ীর সামনে। আচমকা সামনে এসে দাঁড়িয়ে যাওয়ায় ভড়কে গেলো ত্রয়ী। নীলের চোখমুখে রহস্যময় হাসি দেখে বুকে দামামা বাজতে লাগলো। নিজেকে সামলে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইতেই পুনরায় পথ আটকে দাঁড়িয়ে গেলো সে।
ত্রয়ীর চোখ মুখে চাপা আতঙ্ক ছেপে উঠলো। পুনরায় পাশ কাটিয়ে যেতে চাইতেই আবার একই কাজ করলো নীল। তার খুব ভালো লাগছে এসব করতে।
এদিকে মহাবিপদে পড়ে গেলো ত্রয়ী। প্রথম দেখাতেই মানুষ এমন অসভ্যতা কীভাবে করতে পারে।
ত্রয়ী আতঙ্ক ভাবটা লুকাতে চেষ্টা করে বলল, “সরে যান। পথ কেনো আটকাচ্ছেন?”
নীল ত্রয়ীর এক সিঁড়ি নিচে ওর মুখোমুখি দাঁড়ালো ছিলো। হুট করে কিছু না বলে ত্রয়ীর সিঁড়িতে এক পা রাখতেই ত্রয়ী ধড়ফড়িয়ে পিছিয়ে যেতে চাইলো। ফলে পা ফসকালো। ভয়ে চেঁচিয়ে উঠে ব্যালেন্স করাতে গিয়েই নীলের গায়ের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়লো। দুইহাতে চেপে ধরলো নীলের কাঁধের কাছের শার্ট। নীলও ওর কোমড় জড়িয়ে ধরে ওকে নিজের অবস্থানে নামিয়ে নিয়ে এলো।
কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে ঘটে গেলো এসব।
ত্রয়ী আস্তে ধীরে চোখ খুললো। আর খুলেই নিজেকে একটা পুরুষের এতোটা কাছে আবিষ্কার করে আঁতকে উঠলো। দেরি না করে সরে গেলো ছিটকে। মুখ শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো মুহুর্তেই। শরীরও ঘামতে শুরু করে দিলো। ও ভুলের তাকালো না নীলের দিকে।
নীল ওর বিবর্ণ মুখ দেখে হেসে ফেললো। দুই পা এগিয়ে আসতেই ত্রয়ী ধড়ফড়িয়ে পিছিয়ে গেলো। বুকের মধ্যে দ্রিমদ্রিম করতে লাগলো।
খুব আফসোস হচ্ছে এখানে আসার জন্য।
নীল পকেটে হাত গুজে ত্রয়ীর দিকে সামান্য ঝুঁকতেই ত্রয়ী আতঙ্কিত হয়ে তাকালো একবার।
নীল মুচকি হেসে ফিসফিসিয়ে বলল, “Your smell is intoxicating.”
চমকে উঠলো ত্রয়ী। তাকালো বড়বড় চোখ করে।
নীল দুষ্টু হাসি দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।
ত্রয়ী ফাঁকা ঢোক গিললো।
নীল কিছু বলতে যাওয়ার আগেই ফোন বেজে উঠলো ওর। নীল ফোনের দিকে তাকালো। ইংলিশ অক্ষরে লেখা ‘ইভান’।
নীল ফোনের দিকে মনোযোগ দিতেই আর এক মুহূর্তে সময় নষ্ট করলো না ত্রয়ী। অতিসত্বর নেমে পড়লো সিঁড়ি দিয়ে।
নীল ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসলো নিঃশব্দে।
তারপর ফোন রিসিভ করে কানে দিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলল,”আসছি।”
“তারমানে তুই সারারাত ওই ছেলের বাসাতেই ছিলি?”
“হ্যাঁ, এটাই তো। কীভাবে গেলাম আমি ওখানে? তোরা কেউ আমাকে আটকালি না কেন?” আহাজারি করে বলল ক্যান্ডেল।
“আটকেছিলাম। তুই শুনলে তো! ধমকে থামিয়ে দিলি আমাদের। আর আমরা মনে করেছি তুই পিয়াসের বাসায় ওকে পেদাতে যাচ্ছিস। ওই ছেলের বাসায় কী করে গেলি!”
“জানলে তো আর তোকে জিজ্ঞেস করতাম না।” দাঁতেদাঁত চিপে বলল ক্যান্ডেল।
দিয়া দোষী দোষী চোখে তাকিয়ে বলল, “সরি রে।”
ক্যান্ডেল মুখ দিয়ে বিরক্ত সূচক শব্দ বের করে সামনে তাকিয়ে রইলো। মনে করার চেষ্টা করতে লাগলো সবকিছু। কিন্তু কিছুতেই মনে আসছে না।
“ছেলেটা কিছু করে তো নি! না?” আমতাআমতা করে প্রশ্ন করলো দিয়া।
ওই ছেলের প্রসঙ্গ উঠতেই মেজাজ চড়ে গেলো ক্যান্ডেলের।
ঝাঁঝ দেখানো গলায় বলল,”কিছু আবার করবে না? আস্ত কাপুরুষ আর নির্লজ্জ। কথাবার্তা আর চালচলন যদি দেখতি তুই একবার!”
বলতে বলতে ক্যান্ডেলের গায়ে জ্বলন ধরে গেলো।
“ফ্ল্যাটে ঢুকলাম আর ও দরজা বন্ধ করে দিলো! কেনো! ভিতরে কেনো নিয়ে গেলো? ভালো ছেলে হলে ভিতরে কেনো নিয়ে যাবে? সকালে উঠে আমি দেখি আমার…”
“তোর?”
দাঁত কিড়মিড়িয়ে হাত মুষ্টি বদ্ধ করলো ক্যান্ডেল।
“ঐ ছেলেটাকে খুন করবো আমি। এতোকিছুর পর ওর বড়বড় কথাগুলো যদি শুনতি!”
ফোঁসফাঁস করতে লাগলো ক্যান্ডেল।
দিয়া মুখ চুপসিয়ে চুপ করে রইলো।
“প্রতিশোধ তো নেবোই নেবো। যেভাবেই হোক নেবো।”
“কীভাবে নিবি?”
“ওর বাসায় আগুন ধরাই দিবো।” বলতে বলতে ঠোঁট এলিয়ে হাসলো ক্যান্ডেল।
দিয়া আগাগোড়া কিছুই বুঝলো না। বলল, “চল এখন। বের হই।”
ক্যান্ডেল রেস্টুরেন্টের বিল মিটিয়ে বেরিয়ে এলো।
পার্কিং-এ গাড়ি নিতে আসতেই অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে চোখে পড়লো সেই কাপুরুষকে। শরীরটা জ্বলে উঠলো রাগে। থেমে দাঁড়িয়ে কটমট চাহনিতে চেয়ে রইলো সে তার দিকে। (লেখিকা লাকি নোভা)
“দাঁড়িয়ে পড়লি কেনো?” দিয়া বিরক্ত হয়ে বলল।
“ওইযে ওইটা।”
ক্যান্ডেলের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকালো দিয়া।
“কে? চিনিস?”
“চিনবো না? ওর ঘাড় মটকাবো আমি।” হাত মুষ্টিবদ্ধ করলো ক্যান্ডেল।
“এটাই সেই ছেলে?” অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো দিয়া।
দিয়ার প্রশ্নের জবাব না দিয়েই ক্যান্ডেল গটগট এগিয়ে গেলো ইভানের দিকে।
ইভান গাড়ির হুডের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোন স্ক্রোল করছিলো। কেউ তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে আন্দাজ করে তাকালো মুখ তুলে।
কটা কটা চাহনিতে চেয়ে থাকা ক্যান্ডেলকে একপলক দেখে আবার মনোযোগ দিলো ফোনের স্ক্রিনে। এমন একটা ভাব যেন সে দেখেই নি তাকে। সে অদৃশ্য।
এক কথায় ইভান ইগনোর করলো ক্যান্ডেলকে।
যা দেখে রাগেরটা অতিরিক্ত মাত্রায় বাড়লো ক্যান্ডেলের।
ইভানের ফোনটা এক থাবায় কেড়ে নিয়ে ছুড়ে ফেললো রাস্তাতে।
চোখের পলকে ফোনের কাচ ভেঙে গুড়িয়ে গেলো।
ইভান রাগটা চাপা দিয়ে শান্ত ভঙ্গিতে ফোনটার দিকে তাকিয়ে তারপর দাঁড়ালো সোজা হয়ে। পকেটে হাত গুজে মুখোমুখি ঘুরলো ক্যান্ডেলের দিকে।
“ফলো করছো আমাকে?” জ্বালাময়ী হাসি দিয়ে বলল ক্যান্ডেল।
অবজ্ঞাসূচক ভাবে মৃদু হাসলো ইভান। বলল, “একই প্রশ্ন তো আমিও করতে পারি।”
“আমি ফলো করবো তোমার মতো এক অসভ্যকে? কাপুরুষ কোথাকার!” খর্খরে গলায় বলল ক্যান্ডেল।
কথাগুলো এবারো গায়ে লাগলো ইভানের। রাগে দপদপ করে উঠলো শিরা-উপশিরা। এই মেয়েকে উচিত শিক্ষা না দিলেই নয়।
ইভান শীতল চোখে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে বলল, “বলা তো যায় না! আবার আমার বিছানায় আসতে চাইতে পারো।”
চরম বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলো ক্যান্ডেল। রাগে রি রি করে উঠলো ওর পুরো শরীর। কড়া কিছু কথা শুনাতে যাওয়ার আগেই ইভান হাসিটা ঠোঁটের কোণে ধরে রেখেই বলল, “একবারে খুশি হও নি বললেই তো হয়। ফ্রি থাকলে চলো। খুশি করে দিচ্ছি।”
বলেই নিজের গাড়ির দিকে ইশারা করলো ইভান।
(চলবে…)
লেখিকা – লাকি নোভা
(গল্প কপি নিষেধ)
(ভুল ধরিয়ে দেবেন)