কনে বদল পর্ব ৮
“তোর কী হবে রে চারু?”
কাজলের দিকে তাকায় না চারু। তাকালেই তো ভিজা চোখ দেখে ফেলবে কাজল।
কী হলো কথা বলছিস না কেন? তুই এটা কী করেছিস চারু! একটা ছেলে তোকে দেখেছে বিয়ে হয়নি এটা কোনো সমস্যা না। কিন্তু তুই বোকা মেয়েদের মতো ছেলেটার প্রেমে পড়ে বসে আছিস। আবার বোনের সাথে বিয়ে দিয়ে মহৎ তো মারাচ্ছিস! এখন ভ্যা ভ্যা করে কাঁদবি না বলে দিলাম। যত সব ইমোশনাল ফুল!
কিছুই বলে না চারু। কেমন নীরব হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে। খুব মায়া হয় কাজলের। এত ভালো মনের একটা মেয়ের সাথে এমন হলো। চারুর পাশে বসে চারুকে জড়িয়ে ধরে। এ ছাড়া কোনো উপায় কাজলের জানা নেই।
“এখন কী করবি তুই?”
ধরা গলায় বলে, ” জানি না রে!”
“আচ্ছা চল নিচে থেকে ঘুরে আসি।”
“ভালো লাগছে না রে!”
“আরে চল তো।”
রোকেয়া হল থেকে বের হয়ে রাস্তায় আসে চারু আর কাজল। রাতে রাস্তা কিছুটা ফাঁকা। রাস্তা দিয়ে হেঁটে হেঁটে ওরা যাচ্ছে টি,এস,সির দিকে। একটু ঘুরাঘুরি করলে চারুর মনটা হালকা হবে। কাজলভাবে মেয়েটা বড্ড বেশি বোকা! অবশ্য বাপ-মা হারিয়ে মামার বাড়িতে বড়ো হওয়া একটা মেয়ের শক্ত আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠে না।
“কোথায় যাবি এখন?”
নির্দিষ্ট কোনো গন্তব্য নেই এমনই ঘুরি কিছুক্ষণ। টি,এস, সির সামনের সিঁড়িতে বসে আছে দুইজন। এখনো বেশ কয়েকটা চায়ের দোকান খোলা আছে। এখানে একটা দোকান আছে খুব ভালো আলুর চপ বানায়। দোকান বলতে ভ্যানগাড়ির মতো একটা গাড়িতে এরা বসে। আরো অনেকেই বসে আছে এ সময়ে। যদিও এটা ঢাকা ইউনিভার্সিটির নিজস্ব এলাকা তবুও এখানে বাহিরের লোকজন এসে আড্ডা দেয়।
“চপ খাবি চারু?”
“না রে খেতে ইচ্ছে করছে না।”
“এমন নেতিয়ে পড়েছিস কেন! “
কিছু বলে না চারু। কাজলের দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করে।
কাজল হাঁক দিয়ে বলে, “মামা চপ দেও আমাদের। “
“কিরে একাই খাবি নাকি আমিও আছি।” কথা শুনে কাজল ঘুরে তাকিয়ে দেখে রাসেল দাঁড়িয়ে মিটমিট করে হাসছে।
“তুই এখানে?”
“হ্যাঁ, কামালের সাথে কথা বলতে বের হয়েছিলাম ও বাসায় চলে গেল। হলে ফিরছি হঠাৎ তোদের দেখলাম। তা কী খবর বল?”
“ভালো।”
“কি রে চারু তোর বিয়ের তো দাওয়াত পেলাম না?”
“ওর বিয়েটা হয়নি!”
“কেন!”
“ও ভেঙে দিয়েছে তাই। “
“ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছিস! কেন যে তোরা বিয়ের জন্য উতলা হয়ে যাস? অবশ্য কাজল আলাদা। আরে সবেমাত্র ফাইনাল ইয়ার শেষ হলো। এবার একটু ক্যারিয়ারের দিকে মন দিবি তা না অন্যের গলায় ঝুলে পড়ার ধান্ধা!”
“একটা বড়ো প্লেটে গরম গরম চপ দিয়ে যায় দোকানদার। একটা চপ হাতে নিয়ে আলত কামড় দিয়ে রাসেল বলা শুরু করে, চারু তুই বি সি এস টা সিরিয়াসলি দে, তোর সাধারণ জ্ঞান ভালো জানা। ম্যাথ আর বাংলাটা একটু ঝালাই দিলেই হয়ে যাবে।”
“এটা তুই ঠিক বলেছিস। আমিই চারুকে অনেকদিন থেকে বলছি এটা। আমার তো সাধারণ জ্ঞান বড্ড বিরক্তি লাগে!”
“শোন তোরা ক্যারিয়ার গড়ায় মন দে, তারপর যদি কোনো পাত্র খুঁজে না পাস আমি তো আছিই।”
“এই তোর মতো বানর কে বিয়ে করবে কোন মেয়ে শুনি?”
“কতজন আছে, তোরাই শুধু চিনলি না!”
“এখন বিল দিয়ে ওয়েটিং লিস্টে থাক।”
“আচ্ছা তোরা আর বসবি নাকি? আমার উঠতে হবে। “
“কাজল চল যাই এবার।”
———-
আমজাদ সাহেব বসে আছেন ফুলের বাগানে এখনো ওনার সকালের চা খাওয়া হয়নি। মেয়েটা চলে যাওয়ার পর সকালে চা খাওয়াটা ঠিক মতো হয় না। আনোয়ারা ঘুম থেকে উঠে একটু দেরি করে। নীরু আর তার ভোরে উঠার অভ্যাস। চারুটা হয়েছে আনোয়ারার মতো। ঘুম থেকে উঠতে উঠতে দশটা!
এক কাপ চা আর কয়েকটা পিঠা নিয়ে আসে আনোয়ারা বেগম। “এই নেও তোমার চা। কী এক অভ্যাস বানিয়েছ না?” বলতে বলতে পাশের চেয়ারটাতে বসে পড়ে।
তুমি নিবে না?
“না বাবা সকালবেলা ছাইপাঁশ আমার মুখে রুচবে না।”
“এখনো আধুনিক হতে পারলে না!”
“আমার এত আধুনিক হওয়ার কাম নাই। আপনাকে না বললাম মেয়েটার একটা খবর নিতে?”
“হ্যাঁ আজ যাব। এ কয়দিন তো নীরুর বিয়ের ঝামেলা নিয়েই ছিলাম। চারুটা ক্যান যেন এমন রাগ করল! তোমার কি মনে হয় চারু অন্য কোনো ছেলেকে পছন্দ করে?”
“এমন কোনো ছেলে থাকলে আমায় বলতো। কত গল্পই তো করে আমার সাথে। হলে ওরা কী সব মজা করে সবই তো বলে আমায়। এটা বুঝি বলতো না? মন বলে অন্য কিছু হবে।”
“আমারও তাই মনে হয়। আমি মনে হয় একটু তাড়াহুড়ো করে ফেলেছি। মেয়েটা হয়তো আরেকটু সময় চাইছে?”
“আর শোন আমি এবার মেয়েকে হলে রাখব না। তুমি সোজা বাসায় নিয়ে আসবা। ওর তো পরীক্ষা শেষ হয়েই গেছে আরো পড়াশোনা করলে বাড়ি থেকেই করবে। হলে পাঠানোটাই ঠিক হয়নি! নীরুটাও এখন নাই বাড়িটা বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগে!”
“হ্যাঁ ঠিকই বলছ! “
ঢাকা ইউনিভার্সিটির এড়িয়ায় আসলেই আমজাদ সাহেবের বুকটা গর্বে ফুলে যায়। তার দুটি মেয়ে এই ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। তার গর্বের কথাটা তিনি মানুষ বলতে চান এমনি এমনি তো কাউকে ডেকে বলা যায় না ভাই শুনেন আমার দুটি মেয়ে এই ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। মানুষের সাথে কথা বলার জন্য একটা উপলক্ষ লাগে। তিনি পথচারীদের জিজ্ঞেস করেন, “ভাই রোকেয়া হলটা কোথায়? ”
“এই তো অদিকে যান।”
তখন একটু হাসি দিয়ে বলে,” আমার দুইট মেয়ে এখানে পড়ে। “
পথচারী মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে এটা দেখতে তার খুব ভালো লাগে। এমন না উনি রোকেয়া হল চিনেন না। তিনি ভালো মতো চিনেন তবুও এ কাজটা করেন।
হলে গিয়ে সে কখনো বলে না সে চারুর মামা। সে বলে আমার মেয়ে চারু এখানে থাকে ওকে একটু ডেকে দেন
হলের দায়িত্বে থাকা শিক্ষক হল বয় টোটন কে পাঠায় চারুকে ডেকে আনার জন্য। হলের মেয়েদের যে কোনো প্রয়োজনে একটাই নাম টোটন। কিছু আনতে হবে, কাউকে কিছু পৌঁছে দিতে হবে সব কিছুতেই টোটন।
রোকেয়া হলের তিনশোর চার নাম্বার রুমে থাকে কাজল আর চারু। রুমে গিয়ে চারুকে ডাকে টোটন। “চারু আপু”
“কী হয়েছে রে টোটন?”
“তোমার বাবা এসেছেন দেখা করতে।” চারু বুঝতে পারে মামা এসেছেন। মামা প্রতিবার আসলেই টোটন এমন করে ডাকতে আসে।
“তুই যা আমি আসছি।”
মামার সামনে যেতে খুব খারাপ লাগছে চারুর! কী বলবে মামাকে? চারু একবারভাবে মামার সাথে দেখাই করবে না, আবার মামার মুখটা মনে পড়ে যায় খুব কষ্ট হয় চারুর!
আমজাদ সাহেব বসে আছেন হলের গেস্ট রুমে। রুমটা বিশাল বড়ো অনেকটা সরকারি অফিসের মতন। মাথার উপরে ক্যাক ক্যাক শব্দ করে একটা ফ্যান ঘুরছে। ফ্যানের বাতাসের চেয়ে শব্দই মনে হয় বেশি। দরজায় দিকে চেয়ে আছেন তিনা মেয়েটা কখন আসবে। মেয়েটা এমন একটা কাজ করেছে, মেয়ের ওপর তার প্রচন্ড রাগ হওয়ার কথা কিন্তু তার কোনো রাগ হচ্ছে না!
মাথা নত করে অপরাধীর মতো রুমে ঢুকে চারু। চারুকে দেখে মায়া মায়া একটা হাসি দিয়ে মামা বলে, “কেমন আছিস রে মা?”
চারু কিছু বলে না নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
চারুর হাত ধরে পাশে বসায় মামা। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,” মামার ওপর রাগ করেছিস?”
না সূচক মাথা দুলায় চারু। মামার দিকে তাকাতে তার কষ্ট হচ্ছে!
“বাড়ি চল চারু। তোর মামী তোকে আর হলে রাখবে না। এখন থেকে বাসায় থাকবি।”
“না মামা আমি হলেই থাকব। “
আমজাদ সাহেব অবাক হয়ে ভাগ্নির দিকে তাকান তিনি জানেন। দূর্বল মনের মানুষগুলো সহজে না বলতে পারে না। এরা সব সময় অন্যের কথা চিন্তা করে। এরা একবার না বললে তা কখনোই হ্যাঁ হয় না।
চলবে–
® নাবিল মাহমুদ