#স্যার I Love You
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা (রাইটার)
#পর্ব_১৩
________________
বিকেলে ইতি পড়ার টেবিলে বসে আছে স্যার আসার নামে খবর নাই!
৩০ মিনিট পর~
স্যার আসলেন ইতি স্যারের দিকে একবার তাকালো আর চোখ সরিয়ে নিলো ভদ্র ও লক্ষী মেয়ের মতো পড়তে শুরু করে।
স্যার- আজকে একটু অবাক হয় কারণ ইতি রোজ অনেক ভাবে স্যারকে জ্বালায় কখনো হাত থেকে বই কেড়ে নেয় কখনো কলম নিয়ে নেয় কখনো চুলে হাত দেয় চুল ধরে টানাটানি করে আবার কখনো কফি এক চুমুক খেলে সেটা খাওয়ার জন্য জেদ ধরে।
আর কখনো তো স্টক দেওয়ার জন্য ওইরকম করে ওই যখন আসতে আসতে কাছে আসে তখন ছি ছি ছি কি ভাবতাছি। (মনে মনে) (আপনারা আবার উল্টা পাল্টা কিছু ভাইবেন না। বি পজিটিভ)
পড়ানো শেষ হলে স্যার উঠে চলে যেতে নেয়।
ইতিঃ স্যার। (পেছন থেকে ডাক দেয় স্যার পেছনে ঘুরে তাকায়)
স্যার- কিছু বলবে ইতি।
ইতিঃ স্যার । স্যারের সামনে দাড়িয়ে।
স্যারঃ বলো।
ইতিঃ স্যার আগামী শনিবার আমার জন্মদিন আপনি প্লিজ আসবেন। আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করবো। কাল তো শুক্রবার আসবেন না তাই আমি আজকেই বললাম।
স্যারঃ ওকে চেষ্টা করবো।
বলেই স্যার চলে যায়।
হল রুমে বসে গল্প করছে ইতির বাবা মা।
স্যারকে যেতে দেখে ইতির মা তাকে ডাক দিয়ে তাদের কাছে আসতে বলেন।
স্যার তাদের কাছে এসে বসলে। তারাও স্যার ও স্যারের আম্মুকে সহ ইনভাইট করেন।
স্যারও আসবো বলে চলে যায়।
পরেরদিন জুম্মার নামাজ পরে বাড়ি ফিরে স্যার।
রুমে বসে কাগজপত্র ঠিক করছিলেন নতুন কক্সবাজারে একটা প্রাইভেট কোম্পানি থেকে জবের অফার আসছে। চাকরি টা এখনও কনফার্ম করেনি। কেনো জানি স্যার এর চাকরির অফারটা ক্যানসেল করে দিতে ইচ্ছে করছে কারণ সে নিজেও জানে না।
সন্ধ্যা ৬টা বাজে।
হঠাৎ ফোন বেজে উঠে স্যার কল রিসিভ করেন।
অপর পাশ থেকে ইতি।
ইতি- স্যার কাল তো আমার জন্মদিন তো আপনার কাছে আমি কিছু চাইবো দিবেন?
স্যারঃ কি?
ইতিঃ আগে বলেন দিবেন!
স্যারঃ আমার সামর্থের মধ্যে হলে দেবো।
ইতিঃ ইশশশ তেমন কিছু না। আমি বাহিরে ঘুরতে যেতে চাই আপনার সাথে আপনি কিন্তু না করবেন না প্লিজ।
স্যারঃ বাহিরে?
ইতিঃ স্যার প্লিজ চলুন না। প্লিজ না করবেন না।
স্যার- আচ্ছা ঠিক আছে তুমি রেডি হয়ে থাকো আমি তোমার বাড়ির সামনে আসছি।
ইতিঃ আপনাকে যেতে হবে না আমিই চলে আসছি আপনি রেডি হয়ে আপনাদের রাস্তার মোড়ে চলে আসুন।
স্যারঃ কি তুমি এই সন্ধ্যে বেলায় রাস্তার মোড়ে একা একা দাঁড়িয়ে আছো।
ইতিঃ আমার সাথে গাড়ি আছে আপনি তারাতাড়ি আসুন। বলেই ঠুসস করে ইতি কল কেটে দেয়।
স্যার চটজলদি করে নেবি ব্লু কালারের একটা শার্ট পরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে।
হাঁটতে হাঁটতে রাস্তার মোড়ে এসে দূর থেকে দেখে ইতি দাড়িয়ে আছে।
ইতির পরনে হোয়াইট কালারের থ্রি পিছ!
কাছে এসে দেখে শুধু দুইচোখে গাড় করে কাজল দিয়েছে। ঠোঁটে লিপস্টিক দেওয়ার প্রয়োজন পরে না কারণ ইতির ঠোঁট অলরেডি গোলাপী।
স্যার কতক্ষণ ইতির দিকে তাকিয়ে থাকে।
ইতিঃ দেখা শেষ হলে চলুন যাওয়া যাক। ইতির কথায় স্যারের ধ্যান ভাঙে।
স্যারঃ হুম হুম চলো।
ইতি আর স্যার পাশাপাশি হাঁটছে আর হাঁটতে হাঁটতে দু’জনেই একটা ঝিলের কাছাকাছি পৌঁছে যায়। পাশেই হাইওয়ে রোড সাথে ঝিল ঝিলের সামনে হচ্ছে নানান জিনিসের ছোটো খাটো স্টল যেমন- খাবার দাবার, ফল-মূল, মেয়েদের মেক-আপ এর সব ধরনের জিনিসপত্র চুড়ি কানের দুল ঝুমকো, জামা কাপড়, ফুচকা ইত্যাদি ইত্যাদি সিরিয়ালে সব কিছু আছে।
এখানে সন্ধ্যের পর সব কিছু পাওয়া যায়।
আর সন্ধ্যের পর এখানে হাঁটতে বেশ লাগে। এতদিন ইতি বন্ধুদের সাথে আসতো ওর অনেক দিনের ইচ্ছে ছিলো একদিন স্যারকে নিয়ে আসবে আর আজ ওর ইচ্ছা পূরন হয়ে গেলো।
স্যারের সব থেকে বেশি ভালো লাগে ইতির চঞ্চলতা ফটফট কথা বলা আর কথার মধ্যে হাত এদিক সেদিক করে নাড়াচাড়া করা আর সব চাইতে বেশি কথা শেষ হতেই এক গাল হাসি দেওয়া। এই হাসির দিকে তাকিয়ে জেনো সারাজীবন পার করে দেওয়া যাবে।
অনেকক্ষণ হাঁটাহাঁটির পর স্যারঃ- কিছু খাবে ইতি?
ইতিঃ না।
স্যারঃ ফুচকা?
ইতিঃ আপনি খাওয়ালে খেতে পারি।
স্যারঃ আমিই খাওয়াবো তাছাড়া ছেলেরা সাথে থাকলে কোনো মেয়েই বিল দেয় না এটা আমি জানি।
ইতিঃ ঠিক তো মেয়েরা কেন দিবে?
স্যারঃ হইছে এখন চলো আর ভাবতে হবে না।
দু’জনেই হেঁটে একটা ফুচকার দোকানে এসে বসলাম।
আমি- মামা দুই প্লেট ফুচকা দিয়েন তো ঝাল বেশি করে দিবেন।
স্যার- আমার টাতে ঝাল দিবেন না।
আমি- কেন স্যার আপনি ঝাল খান না?
স্যার- না।
১০ মিনিট পর দুই প্লেট ফুচকা দিয়ে গেলো।
ফুচকাওয়ালা একটা ভুল করে ফেলছে আমার ঝাল দেওয়া ফুচকা সে স্যারকে দিয়ে দিছে আর স্যারের টা আমাকে দিয়ে দিছে।
স্যারের তো ফুচকা খেয়ে নাক মুখ লাল হয়ে গেছে।
আমি খাওয়া বন্ধ করে স্যারের কাছে গেলাম।
আমি- স্যার আপনি ঠিক আছেন তো কি হয়েছে?
স্যার- ইতি ঝাল!
স্যার দুইহাত মুখের সামনে এনে বাতাস করছে আর ঝাল ঝাল বলে চেচাচ্ছে আমার দেখে প্রচুর হাসি পাচ্ছে কিন্তু হাসলে চলবে না। বলেই ফুচকাওয়ালার কাছে পানি চাইলাম তার কাছে পানি নাই শেষ হয়ে গেছে দিলাম ইচ্ছা মতো ধমক ফুচকা বিক্রি করে আর পানি নাই। এদিক সেদিক দৌড়াতে লাগলাম আর দেখলাম একটা জিলাপির দোকান বানিয়ে বিক্রি করছে দিলাম দৌঁড় এসে কয়েকটা জিলাপি কিনে আবারও দিলাম দৌঁড়, দৌঁড়ে স্যারের সামনে আসলাম আর উনাকে জিলাপি দিতেই সে গপ-গপ করে খেয়ে নেয় এখন একটু সস্থির নিশ্বাস নিচ্ছে আর আমার দিকে রাগী লুকে তাকিয়ে আছে।
স্যার- ইতি পাগল তুমি এত ঝাল দিয়ে কেউ ফুচকা খেতে চায় আজ আমার জায়গায় তুমি খেলে কি হতো বুঝতে পারছো।
আমি- আমি আমি আমি তো এই এই এইটুকু ঝাল দিতে বলছিলাম আর ফুচকাওয়ালা যদি ঝাল বেশি দেয় তাইলে আমার কি দোষ। সরি স্যার!
স্যার- এইরকম আর কখনো করো না বেশি ঝাল খাওয়া উচিত না।
আমি- আপনার তো শরীর খারাপ হচ্ছে চলুন বাড়ি চলুন।
স্যার- হুম চলো।
দু’জনেই হাঁটতে শুরু করি কিছুদূর যেতেই আমার পা থেমে যায়। আমাকে থেমে যেতে দেখে স্যারও পেছনে তাকায় আর আমি কোনদিকে তাকিয়ে আছি সেদিকেও খেয়াল করে। আর একটু সামনে আসতেই স্যার বাহানা দিয়ে কোথায় জেনো চলে গেলো আর কিছুক্ষণ চলেও এলো হেহেহেহে।
তারপর আবারও হাঁটতে শুরু করি। কিছুদূর আসতেই গাড়িতে উঠে পরলাম।
স্যার- আগে আমি তোমাকে তোমার বাড়ি ছাড়বো আর সেখান থেকেই আমি চলে আসবো।
আমি- কিন্তু স্যার আপনি একা একা.?
স্যার- পারবো চিন্তা করো না।
আমি- আচ্ছা।
মনের মধ্যে একটা আফসোস রয়েই গেলো।
গাড়ি এসে আমাদের গেইটের সামনে ব্রেক করলো।
গাড়ি থেকে নেমে স্যারকে বিদায় দিয়ে বাড়িতে ঢুকতে যাবো স্যার পিছন থেকে আমাকে ইতি বলে ডাক দিলেন আর আমিও উনার ডাক শুনে উনার সামনে গিয়ে দাঁড়াই।
আমি- জি স্যার কিছু বলবেন?
স্যার- তোমার হাতটা দাও তো!
আমি- কিন্তু কেনো?
স্যার- দাও বলছি.
আমি- হুম দিলাম। (স্যারের দিকে এক হাত বাড়িয়ে)
স্যার উনার প্যান্টের পকেট থেকে হাত বের করে উনার হাত আমার হাতের উপর রেখে বললেন!
এটা তোমার জন্য, ভাবতে পারো ছোটো একটা গিফট!
কিন্তু এখন খুলবে না, সোজা রুমে গিয়ে দেখবে!
ওকে এখন আমি যাই!
-যা চলে গেলো।
যাই রুমে গিয়ে দেখি এই প্যাকেট এর মধ্যে কি আছে? কলিংবেল বাজাতেই একজন স্টাফ এসে দরজা খুলে দেয়। আর আমি দৌঁড়ে রুমে চলে আসলাম আর প্যাকেট টা খুলতেই আমি অবাক!
এটা তো ওই ঝুমকো দুই জোড়া যেটা আমি পছন্দ করে ছিলাম। শুধু স্যার সাথে ছিলো বলে লজ্জায় নিতে পারিনি। তার মানে স্যার লক্ষ্য করেছিলো আমার যে ঝুমকো জুড়ো পছন্দ হয়েছিল ভাবতে ভাবতে অনেক খুশি হয়ে গেলাম।
একদিন স্যারকে পরে দেখাবো হিহিহি স্যারকে যেদিন প্রপোজ করবো সেদিনই পরবো।
পুরো ১০মিনিট ঝুমকো জোড়ার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। কিছুক্ষণ পর আম্মু আসলো আর ডিনার করার জন্য ডেকে গেলো। রাতে খেয়ে শুয়ে পরি।
পরেরদিন সকালে আজ আর কলেজে যাইনি।
কারণ আজ আমার জন্মদিন আর বাড়ি ডেকোরেশন করার জন্য ডেকোরেশনের লোক চলে আসে আর তারা তাদের কাজ শুরু করে দেয়।
To Be Continued?
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ]