#স্যার I Love You
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
#পর্ব_১৮
____________
১ঘন্টা পর~
ও.টি থেকে ডাক্তাররা সবাই এক সাথে বের হলেন।
আমার আম্মুর আব্বুর সামনে গিয়ে ডাক্তাররা বললেন।
ডাক্তার- আল্লাহর অসীম রহমতে আমরা আপনাদের মেয়েকে বাঁচাতে পেরেছি কিন্তু মাথায় খুব খারাপ ভাবে আঘাত লাগার জন্য পেসেন্ট কোমায় চলে গেছে। আর যে কোনো সময় কোমা থেকে বেরিয়ে আসতেও পারে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন।
আপনার মেয়েকে আমরা কেবিনে সিফট করছি ৩০মিনিট পর আপনারা সবাই পেসেন্টের সাথে দেখা করতে পারবেন।
আমাকে কেবিনে সিফট করা হয় একে একে সবাই আমাকে এসে দেখে যায়।
১মাস পর~
আমি এখন আগের থেকে অনেকটা সুস্থ হাসপাতাল থেকে দুইদিন পর রিলিজ করে দেবেন।
বাড়িতে এসে সবাই কে এক সাথে দেখেও আমার কেনো জানি ভালো লাগছে না কিন্তু কেনো আমি তো ছোটো থেকে এটাই চেয়ে ছিলাম আমার দাদা দাদী নানা নানী সবাই আমরা এক সাথে থাকবো কত মজা হবে কিন্তু আমার ইচ্ছা পূরণ হয়েছে দেখেও আমি খুশি হতে পারছি না মনের ভেতরে খা খা করছে। হল রুমে আর বসে থাকতে পারলাম না আম্মুকে বললাম আমাকে রুমে দিয়ে আসতে।
রুমে এসে আরও বেশি কষ্ট হচ্ছে ওই চেয়ারটা তে বসে স্যার আমাকে পড়াতো আর আমি উনাকে কত জ্বালাতাম। চোখের কোণে পানি মুছে নিলাম।
কারো সাথে তেমন কথা বলতেও ইচ্ছে করে না। চুপচাপ একা একা বসে থাকতেই ভালো লাগে।
আমাকে এভাবে দেখে আব্বু আম্মু আড়ালে চোখের
জল ফেলছে।
১ সপ্তাহ পর ~
আল্লাহর রহমতে আমি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ।
আর সুস্থ হয়েই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরি স্যারের খোঁজে ২দিন ধরে খোঁজেও গাজীপুরের কোথাও স্যারকে পেলাম না।
আর পাবোই বা কিভাবে স্যারের বাম শাওন ছাড়া তো কিছুই জানি না। আমার আগের ফোনে একটা ছবি ছিলো সেটাও এক্সিডেন্ট এর পর রাস্তা থেকে হয়তো কেউ কুড়িয়ে নিয়ে গেছে। দেড় মাস হয়েগেছে ফোন কি এখনও থাকবে নাকি?
যাইহোক সারাদিন খুঁজে রাত ৯টায় বাড়ি ফিরলাম।
বাড়িতে এসেই আব্বু আম্মু আমাকে ধরলেন।
আব্বু- তুমি কেনো বাহিরে ঘুরাঘুরি করছো তমি সম্পূর্ণ সুস্থ হও নাই এখনো আর এভাবে ঘুরাঘুরি করে লাভ নাই যে যাওয়ার সে চলে গেছে কেনো খুঁজছো তাকে ছেড়ে দাও শাওনকে ভুলে যাও জীবনে এগিয়ে যাও।
আব্বুর শেষের কথা গুলো আমার পছন্দ হলো না আর অনেক রাগ উঠে গেলো।
আমি- ভুলে যাবো খোঁজা বন্ধ করে দেবো কিন্তু কেনো বলতে পারো। আমি খুঁজবো সারাজীবন কারণ আমি স্যারকে ভালোবাসি। আর তুমি বলছো এইসব কথা তুমি বলছো স্যারকে ভুলে যেতে বলছো আব্বু কিভাবে পারছো বলতে তুমিও জানো স্যার আমাকে ভালোবাসি বলে ছিলো শুধু আমি কোটিপতি বিজনেসম্যানের মেয়ে বলে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে শুধু এই এই তোমার সম্পত্তির জন্য কি হবে এই সম্পত্তি দিয়ে আব্বু যে সম্পত্তি তোমার মেয়ের থেকে তারই ভালোবাসার মানুষকে কেড়ে নেয় আব্বু কি হবে এই সম্পত্তি দিয়ে আমার ধম বন্ধ হয়ে আসে এই বাড়িতে মনে পরে যায় স্যার এই বাড়ি গাড়ির জন্য আমাকে ছেড়ে চলে গেছে আমি স্যারকে কখনো ভুলবো না আর না কখনো স্যারের জায়গা আমি কাউকে দেবো না আমি স্যারের জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করবো আমি শুধু স্যারকেই ভালোবাসি আমি খুঁজবো আমার স্যারকে আমি খুঁজবো তারপর আবারও চিৎকার করে বলবো।
#স্যার_I_Love_you ~
কথাগুলো শেষ হতেই ফ্লোরে হাঁটু ভাজ করে বসে পরলাম আর কাঁদতে শুরু করলাম।
আব্বু আম্মু দু’জনেই আমার কাছে এসে আমাকে জরিয়ে ধরেন আর আব্বু প্রমিজ করে আমার সাথে আব্বুও স্যারকে খোঁজবে।
তারপরে দু’জনে মিলে স্যারকে অনেক খুঁজি কিন্তু কোথাও পাই না।
এদিকে আমার কেরিয়ার নষ্ট হবে ভেবে আব্বু আম্মু আমাকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়ে দেয়।
এদিকে পড়াশোনার পাশাপাশি স্যারকেও খুঁজি কিন্তু কোথায় পাই না।
প্রতি রাতে এক দীর্ঘ শ্বাসে স্যারকে অনুভব করে ঘুমিয়ে পরি এইটা ভেবে আগামীকাল কের নতুন ভোরে নতুন দিনে হয়তো স্যারকে খুঁজে পাবো।
কিন্তু স্যারকে কোথাও পাই না।
জানি না কোন সাপের গুহায় গিয়ে ঢুকে গেছে খুঁজেই পাই না।
প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার সন্ধ্যার পর ওই হাইওয়ে রোডে আমি আসি আর কিছু দাঁড়িয়ে থাকি আর সেই দিনটা কল্পনা করি যে দিনে স্যার আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল সেই জায়গা টায় দাঁড়িয়ে থাকি সেই দিনটা তেই তো আমি আমার স্যারকে শেষ দেখেছিলাম আমি কি আর জানতাম নাকি তখনই যে শেষ দেখা।
এভাবেই দিন চলে যাচ্ছে কেটে যাচ্ছে সময়।
দিনের পর দিন বছরের পর বছর। সময় কারো জন্য থেমে থাকে না সময় সময়ের মতো চলতেই থাকে শুধু কিছু মানুষ অতীতের কিছু খারাপ সময়ে আঁটকে যায়।
আজও আমি স্যারকে খুঁজে চলেছি।
ফিরে আসা যাক বর্তমানে_____
হঠাৎ কারো ডাকে ঘুম ভেঙে যায়!
চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি আম্মু মাথায় হাত বুলাচ্ছে আর আমায় ডাকছে। চোখ খুলে বুঝতে পারলাম স্যারকে ভাবতে ভাবতে আমি সাদের দোলনা তেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম।
আম্মু- এভাবে আর কতদিন চলবে?
আমি- যতদিন চলার চলবে।
আম্মু- ৬, ৬ টা বছর পার হয়ে গেছে আর তুই এখনো তোর অতীত আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছিস। এমন ও তো হতে পারে তুই যার জন্য অপেক্ষা করছিস সে অন্য কাউকে বিয়ে করে নিয়েছে।
আমি- আম্মু প্লিজ এমনটা বলো না আমি বেঁচে থাকতে মরে যাবো স্যার আমার কাছে নেই ছয়টা বছর উনার স্মৃতি নিয়েই বেঁচে আছি উনি ফিরে আসবেন এই আশায় আছি। প্লিজ আম্মু তোমরা আমার থেকে এইটুকু ছিনিয়ে নিয়ো না প্লিজ।
আম্মু- আচ্ছা খাবি চল!
সাদ থেকে সোজা রুমে চলে আসলাম ফ্রেশ হয়ে টোটাল রেডি হয়েই নিচে নামলাম।
ডাইনিং টেবিল~
আম্মু- বলো না বলো। (আব্বুকে কি জেনো বলার জন্য জোর করছে)
আব্বু- আরে তুমি বলো।
আমি- কি বলা নিয়ে এত বকবক করছো?
আম্মু- তোর আব্বু বলবে।
আব্বু- মামনি একটা কথা ছিলো।
আমি- হুম বলো।
আব্বু- তোর ওই যে ছোট ফুপি মিনা ওর বড় মেয়ে তোর মায়া আপুর বিয়ে ফিক্সড হয়েছে। আমাদের সবাইকে ইনভাইট করেছে কিন্তু তুই তো জানিসই আমার এখানে কত কাজ আর তোর আম্মুও তো এতদূর জার্নি করতে পারবে না তাই বলছিলাম আমাদের হয়ে তুই যদি চলে যেতি।
আমি- আমার কি এখানে কাজ নেই। আমার পেসেন্টদের কি হবে?
আম্মু- মাত্র তিন দিনের ব্যাপার ছুটি নিয়ে নে। আর হাসপাতাল তো তোরই কোনো সমস্যা হবে না।
আব্বু- আর কোথাও ঘুরতে গেলে তোরও মন ভালো হয়ে যাবে।
আমি- হুম দেখছি। পুরো প্লেন করে নিয়েছো আমাকে তাড়ানোর চেষ্টা করবো ১০০% যাওয়ার হ্যাপি তোমরা?
আব্বু, আম্মু- হুমমমম।
আমি- আচ্ছা আমি এখন যাই টাটা।
আম্মু- আল্লাহ হাফেজ!
দুই দিন পর~
হাসপাতালের এত পেসেন্টের জন্য আমি তো ভুলেই গেছিলাম আমাকে মিরপুর যেতে হবে। ফুপির বাড়ি।
হাসপাতালের ম্যানেজারদের সব কিছু বুঝিয়ে দিয়ে বেরোতে যাবো এমন টাইমে চলে এলো একজন সিজারের রোগী আমি একজন ডাক্তার আর একজন ডাক্তার কি তার পেসেন্ট রেখে চলে যেতে পারে আপনারাই বলুন?
পারে না তো আমিও পারিনি। মহিলাকে আইসিইউ তে নিয়ে আসলে। অপারেশন শুরু করি।
ওইদিকে আব্বু আম্মু অস্থির হয়ে গেছে আমি এখনও যাচ্ছি না কেনো বারবার কল দিচ্ছে কল দিলে লাভ কি আমি তো আমা চেম্বারে নাই আইসিইউতে!
আমি- আপনার ছেলে হয়েছে দেখবেন? (বাচ্চা টা বের করে গাতে নিলাম আর উনাকে জিজ্ঞেস করলাম)
উনিও চোখ দিয়ে ইশারা করলেন সে দেখতে চায়।
পাশে থাকা ভুয়ার কাছে দিলাম সে টাওয়াল দিয়ে বাচ্চা টাকে টেকে ফেলেছে আর মহিলা টাকে এক নজর দেখিয়ে বাহিরে চলে যায়। এদিকে মহিলাও ঘুমিয়ে যায়।
আমাদের অপারেশন কমপ্লিট হলে পেসেন্ট কে কেবিনে সিফট করা হয়।
আমি ফ্রেশ হয়ে চেম্বারে এসে বসতেই আমার আবারও মনে পরে যায়। বসা থেকে উঠে মোবাইল পার্স নিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে পরি।
বাড়ি এসে ইচ্ছা মতো কথা শুনতে হয়।
আমি- আব্বু আম্মু আমি একজন ডাক্তার আমার ইমারজেন্সি পেসেন্ট আসছিলো আমি তো আর আমার পেসেন্ট রেখে চলে আসতে পারি না। আমি তো বলেছি যাবো মানে যাবো।
আব্বু- ফোন দিয়ে বলতে তো পারতি কত গুলা কল দিছি?
আমি- কি জানি দেখি নাই। আর অনেক বকছো আর বকতে হবে না এখন যাচ্ছি তো। বলে আব্বু আম্মু কে জরিয়ে ধরলাম।
ড্রাইবার আঙ্কেল লাগেজ গাড়ির ডিঁকি তে ডুকালেন।
আমিও গাড়ি উঠে বসলাম গাড়িও চলতে শুরু করলো।
আমার যাওয়ার একটু ও ইচ্ছে নেই শুধু যাচ্ছি আব্বু আম্মুর খুশির জন্য ~
To Be Continued?
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ]