#স্যার I Love You পর্ব ২
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
____________
আমাকে দেখে ড্রাইবার আঙ্কেল দৌঁড়ে আমার কাছে আসে কাঁধের উপর হাত রেখে বলেন,
“ ইতি মামনি কান্না করো না চল বাড়ি চল! ”
“ হুম আঙ্কেল আপনি যান আমি আসছি ”
বলে দুইহাতের উল্টো পিঠ দিয়ে গালে ল্যাপ্টে থাকা অশ্রুকণা মুছে গাড়িতে উঠে বসলাম।
গাড়ির কাচ নামিয়ে বাহিরের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছি!
নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে অজস্র পানি ঝরছে!
ড্রাইবার আঙ্কেল: ‘ মামনি আমরা এসে পরেছি! ’
“ ও আমি খেয়াল করিনি, সরি! ”
বাড়িতে ডুকে কোথায় দাঁড়ালাম না আম্মু একবার ডাক দিয়েছিল কিন্তু আমি সোজা রুমে চলে আসি!
আর ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেই কারণ আম্মু আমাকে দেখলে ঠিক বুঝে যেতো আমি কান্না করেছি!
ফ্রেশ হয়ে বেরোতেই দেখি আম্মু বিছানায় বসে আছে!
‘ আম্মু তুমি কখন এলে? ’
– যখন তুমি আমাকে ইগনোর করে রুমে চলে এসেছিলে তখন।
– মানে কি? তুমি ৩০ মিনিট ধরে রুমে বসে আছো?
‘ হুম, তাড়াতাড়ি নিচে খেতে এসো। ’ আর কিছু না বলে আম্মু চলে গেলো।
আমিও পিছু পিছু লক্ষী মেয়ের মতো চলে আসলাম!
আব্বু- মামনি তোমার ক্লিনিক কেমন চলছে?
– আলহামদুলিল্লাহ ভালো আব্বু!
আব্বু- মামনি তোমার জন্য একটা ছেলে দেখেছি, তুমি কাল ছেলেটার সাথে মিট করো!
— আব্বু ইম্পসিবল, কোনো ভাবেই না!
আম্মু- তোর বাবা কি বলছে সেটা তো আগে শুনে নে!
– আমি কিচ্ছু শুনতে চাই না! আমি শুধু স্যারকে ভালোবাসি আর স্যারকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবো না কখনোই না! সারাজীবন এমনেই থেকে যাবো তবুও কাউকে বিয়ে করবো না! আমার বিয়ে নিয়ে কেউ আর একটা কথাও বলবে না তা না হলে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো! (উঠে চলে আসলাম)
আম্মু- মেয়েটা না খেয়েই চলে গেলো!
আব্বু- আমি কি কিছু ভুল বলেছি? নাসিমা!
আমি ওর বাবা আমি কি নিজের মেয়েকে এভাবে তিলে তিলে কষ্ট পেতে দেখতে পারি বলো?
শাওন কে তো আমি কত জায়গায় খোঁজার চেষ্টা করেছি কিন্তু না ওর কোনো খোঁজ পেয়েছি না ওর মা-র কোনো খোঁজ পেয়েছি! একমাত্র মেয়েকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখে তো আমার কলিজা ফেটে যায়!
আমি তো শুধু এই টুকুই চাই আমার মেয়ে খুশি থাকুক!
এটা চাওয়া কি আমার অপরাধ?
আম্মু- তুমি কষ্ট পেও না, আমি ওকে বোঝাবো পরে!
তুমি প্লিজ এখন খেয়ে নাও!
আব্বু- আমার মেয়ে না খেয়ে চলে গেছে আমি কিভাবে খাই? আমার গলা দিয়ে খাবার নামবে না নাসিমা! আমার মেয়েটাকে বুঝিয়ে খাইয়ে দিয়ে আসো!
শাওন চলে যাওয়ার পর আমাদের মেয়েটা কেমন যেনো হয়ে গেছে, ৬বছরে অনেক পাল্টে গেছে
নিশ্বাস তো নিচ্ছে কিন্তু জীবিত লাশ হয়ে আছে!
আমি আমার ৬বছর আগের ইতি কে ফিরে পেতে চাই
(এই বলে আব্বু চলে গেলো তার রুমে)
আম্মু রুমে এসে দেখে আমি রুমে কোথাও নেই!
ওয়াশরুমে অথবা বারান্দায় যায়নি তো?
কোথাও নেই দেখে আম্মু ভাবলো, “ছাঁদে যায়নি তো?”
আম্মু দৌঁড়ে ছাঁদে এসে দেখে আমি ছাঁদের এক কোণে মন খারাপ করে বসে আছি!
আম্মু- ইতি! এত রাতে ছাঁদে কেনো আসছিস মা?
‘ আম্মু তুমি এখানে আসছো কেনো? যাও রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ো আমাকে একা থাকতে দাও প্লিজ! ‘
‘ তুই আমাদের একমাত্র মেয়ে মা আমরা যে তোর কষ্ট হইতে পারছি না, তাই তো তোর বাবা! ‘
‘ আম্মু প্লিজ, আর কিচ্ছু বলবা না! আমি স্যারের জায়গায় কাউকে কল্পনাও করতেও পরিনা! আর তোমরা বলছো অন্য একটা ছেলের সাথের সাথে দেখা করতে আমি পারবো না! ‘
“ শাওন ৬বছর হয়েছে চলে গেছে আর তুই এখনও ওকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছিস! কেনো মা? তুই তোর লাইফে এগি ” আম্মুকে আর কিছু বলতে দিলাম না, নিজেই বলতে শুরু করলাম।
– আম্মু আর কিছু বলবা না, আমি বাড়ি থেকে চলে যাই এটাই তো যাও নাকি? ওকে ফাইন কালকেই চলে যাবো!
আম্মু: ‘ তোকে আমি আর তোর বাবা আর কিচ্ছু বলবো না যা ইচ্ছা কর কিন্তু বাড়ি ছেড়ে যাসনা মা!
তোকে ছাড়া আমরা থাকতে পারবো না। ‘
আম্মু কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো। আমি আম্মু আব্বুর কষ্ট বুঝতে পারছি কিন্তু আমার যে কিছু করার নাই
আমি যে স্যারকে অনেক ভালোবাসি!
আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি অনেক কালো কালো মেঘ জমেছে আকাশের বুকে!
তার থেকে বেশি মেঘ আমার বুকে জমে পাথর হয়ে গেছে! মনে হচ্ছে বৃষ্টি আসতে পারে!
আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম, “ স্যার আপনি কবে ফিরে আসবেন? আপনাকে যে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে ইচ্ছে করছে! আমার তো আপনাকে ছাড়া থাকতে অনেক কষ্ট হয় আপনার কি আমার কথা একবারও মনে পরে না! আপনার চোখে তো আমি আমার প্রতি ভালোবাসা দেখেছিলাম তো কিভাবে ভুলে গেলেন আমাকে? ”
কাঁদতে কাঁদতে চোখ বন্ধ করলাম, আর ডুব দিলাম ৬ বছর আগের আমি পুরানো স্মৃতি তে।
চলবে?
(কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ)