#স্যার I Love You
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
#পর্ব_২২
_____________
দুপুরে বাড়ি এসে আব্বু আম্মুকে বলি তাদের সাথে আমার খুব জরুরি কথা আছে। তারাও আমার কথা শুনার জন্য আমারই সামনে বসে আছে।
সবাই নিরবতা পালন করছি। এক দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলতে শুরু করলাম, “ আব্বু আম্মু আমার জরুরি কথা হচ্ছে। ”
“ তুমি এই কথা এই নিয়ে ১০ বার বলেছো। তোমার কথার গাড়ি এর থেকেও আগে যাবে নাকি এখানেই আটকে থাকবে। ” আব্বু বলল।
আম্মু- কি বলবি খুলে বল।
“ আমি বিয়ে করবো। ” এক নিশ্বাসে বলে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। না জানি উনারা কি বলবেন। কিন্তু উনাদের কোনো কথা শুনতে পাচ্ছি না বলে এক চোখ একটু খোলে উনাদের দিকে আড়চোখে তাকাতেই আমার অন্য চোখও অটোমেটিক খুলে গেলো।
উনারা দুই চোখ গোল টমাটোর মতো করে তাকিয়ে আছে সাথে মুখ হা করে আছে।
আমি- কি হয়েছে তোমরা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছো কেনো?
আব্বু- এর থেকে ভালো কোনো খবরই হতে পারে না।
আম্মু- আমাকে এসে জরিয়ে ধরে চুমু দেয়।
আব্বু- আমি সব থেকে ভালো দেখে ছেলেকে তোর লাইফ পার্টনার চুজ করবো।
আমি- আব্বু তার কোনো দরকার নেই,, আমি ছেলে দেখেছি আর আমি তাকেই বিয়ে করবো।
আব্বু- কে সে নাম বল। আমি আজই তার সাথে দেখা করে কথা বলবো।
আমি- তুমি না আব্বু আগে তো আমার উনার সাথে কথা বলতে হবে উনাকে রাজি করাতে হবে।
তারপর তোমরা কথা বলবে তারপর বিয়ে।
আম্মু- কে সেই ছেলে নাম বল।
আব্বু- মানে?
আমি- সে আর কেউ না আমার স্যার।
আব্বু- শাওন…?
আম্মু- কি বলছিস তুই পাগল হয়ে গেছিস ওর পাঁচ বছরের একটা মেয়ে আছে।
আমি- আম্মু মেয়ে আছে বউ তো নেই। আর ওই ছোট্ট মেয়েটার ও তো মার প্রয়োজন আম্মু।
আম্মু- আম্মু এই সম্পর্ক কোনো ভাবেই হতে পারে না।
আব্বু- নিশ্চুপ।
আমি- তোমরা কেউ রাজি নও কেনো শুধু স্যারের মেয়ে আছে বলে।
আম্মু- হ্যাঁ ও অবিবাহিত হলে সমস্যা ছিলো না কিন্তু।
আমি- কিন্তু কি আম্মু ইতিকে নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই তাহলে তোমাদের এত কেনো সমস্যা হচ্ছে?
আব্বু- কারণ তুমি আমাদের একমাত্র মেয়ে আমরা তোমার ভালো চাই।
আমি- আমি ভালো থাকবো শুধু স্যারের সাথে আর কারো সাথে না।
আম্মু- ইতি…..।
আমি- আমি জাস্ট বলে দিয়েছি আমি বিয়ে করবো তো শুধু স্যারকেই করবো। এখন তোমরা ঠিক করো সারাজীবন আমাকে একা একা কষ্ট পেতে দেখবে নাকি আমার স্যারের সাথে সুখের সংসার করতে দেখবে।ডিসিশন তোমরা নিবা আর ঠিক এক ঘন্টা পর আমাকে জানাবা তারপর আমি ডিসিশন নেবো। সারাজীবনের জন্য তোমাদের থেকেও দূরে দেশের বাহিরে চলে যাবো।
আব্বু- মামনি।
আর কারো কোনো কথা না শুনে চলে আসলাম নিজের রুমে।
৩০ মিনিট পর আব্বু আম্মু দু’জনেই আমার রুমে আসে। আর আমার দুইপাশে দু’জন বসে।
আব্বু আমার মাথায় হাত বুলাচ্ছে।
আম্মু- তুই কিভাবে বলতে পারলি মা আমাদের ছেড়ে চলে যাবি নল কিভাবে পারলি? আম্মু কেঁদে দিলো।
আব্বু- তুই শাওন কে রাজি করা আমরা রাজি।
আব্বুর কথা শুনে কাঁদতে কাঁদতে আব্বুকে জরিয়ে ধরলাম সাথে আম্মুকেও।
আমি চাইলেই উনাদের সত্যি কথা বলতে পারতাম কিন্তু আমি কোনো রিস্ক নিতে চাই না। কোনো ভাবেই জেনো ইতি সত্যি যানতে না পারে ও স্যারের মেয়ে নয় আব্বু আম্মু যদি কোনোদিন ওর সামনে বলে দেয়।
সন্ধ্যা ৬টা বাজে আজ আমি সেই ব্রীজটার উপর সেই একই সাজে হাতে ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
গাড়ি স্যারের অফিসের সামনে ওয়েট করছে কখন বের হবে। বিশ মিনিট পর স্যার বের হলেন।
ড্রাইবার- স্যার উঠে বসুন।
স্যার- হুম।
স্যার গাড়িতে উঠে বসতেই ড্রাইবার গাড়ি স্টার্ট দেয়।
কিছুক্ষণ পর….
স্যার- ড্রাইবার আমরা হাইওয়ের রোডে কেনো যাচ্ছি?
ড্রাইবার- স্যার সারপ্রাইজ!
স্যার- কিসের সারপ্রাইজ?
ড্রাইবার- সেটা গেলেই দেখতে পারবেন।
গাড়ি থামতেই ড্রাইবার নিচে নেমে স্যারকে নিচে নামতে বলে। স্যারও গাড়ি থেকে নামে।
স্যার- কি সারপ্রাইজ?
ড্রাইবার- ওই তো আপনার সারপ্রাইজ।
আমাকে হাত দিয়ে দেখিয়ে বললো।
স্যারের আজ সেই ছয় বছর আগের লাস্ট রাতের কথা মনে পরে যাচ্ছে এভাবেই তো উনার জন্য গাড়ি পাঠিয়ে ছিলাম উনাকে প্রপোজ করে ছিলাম।
আর উনি আমাকে ছেড়ে চলে যায়।
স্যার- ইতি……..
ড্রাইবার- যান স্যার ম্যাম অপেক্ষা করছে।
স্যার এক পা এক পা করে আমার সামনে আসছে।
ঠিক আমার পেছনে দাঁড়িয়ে আমাকে ডাকলেন।
স্যার- ইতি……
স্যারের ভয়েস শুনে পেছনে তাকালাম।
আমি স্যারের দিকে ঘুরতেই স্যার আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
আমি- কেমন আছেন স্যার
স্যার- হুমমম ভালো! কেনো ডেকেছো আমায়।
আমি- আমি তো আপনাকে ডাকিনি আমি তো আপনাকে এখানে আনিয়েছি।
স্যার- হুম সেটাই কিন্তু কেনো? ইতি তুমি যদি আজও সেই আগের মতো প্রপোজ করার কথা চিন্তা করে এইগুলো করো তাহলে সব ভুলে যাও আমি আমার মেয়ের সঙ্গে ভালো আছি। আর…..
আমি- থামুন থামুন আর বলতে হবে না। আপনার জন্য ফুল এনেছি ফুলগুলো নিন।
ফুলগুলো স্যারের দিকে বাড়িয়ে দিলাম।
স্যার- আমি ফুল কেনো নেবো? নেবো না।
আমি- নিন না স্যার প্লিজ শুধু মাত্র আপনার জন্য এনেছি। একটা টেডি স্টাইল হাসি দিয়ে।
আমার হাসি দেখে স্যার সব ভুলে গেছে আর ফুলগুলো নিয়ে নিছে।
আমি- আমি আপনাকে এখানে ডেকেছি কারণ হচ্ছে।
স্যার- আজ প্লিজ প্রপোজ করো না ইতি আজ তুমি প্রপোজ করলে আমি তোমাকে ফিরিয়ে দিতে পারবো না প্লিজ করো না।
আমি- এই নেন!
স্যার- কি এটা? আমার হাত থেকে উনার হাতে নিয়ে।
আমি- আমার বিয়ের কার্ড।
স্যার- হোয়াট?
আমি- হুম আমার বিয়ের কার্ড সর্ব প্রথম কার্ড আপনাকে দিলাম। আপনাকে কিন্তু আসতেই হবে।
আমার কথূ শুনে স্যারের হাত থেকে কার্ডটা নিচে মাটিতে পরে যায়। স্যারের বা চোখের কার্নিশ বেয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পরে।
স্যার আমার থেকে জল লুকানোর জন্য বিপরীত সাইডে ঘুরে যায় নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে একহাত দিয়ে চোখের পানি মুছে নেয়।
পরে আমার দিকে ঘুরে দাঁড়ায়।
স্যার- তুমি রাজি?
আমি- হুমমমম।
স্যার- তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবা?
আমি- পারবো না কিন্তু আমি যাকে চাই সে তো চায় না।
স্যার- তার কাছে যে দ্বিতীয় কোনো অপশন নেই।
আমি- অপশন আছে স্যার! আপনি যদি চান তাহলে সব সম্ভব আমার ছোট্ট ইতিকে নিয়ে কোনো সমস্যা নেই নিজের মেয়ের মতো করে ওকে রাখবো সবার আগে ইতি থাকবে আমার জীবনে সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ইতি হবে। আমি আপনার সাথে থাকতে চাই আপনার সাথে চলতে চাই আপনার সুখে দুঃখে পাশে থাকতে চাই আপনার জীবন সঙ্গী হতে চাই।
ইতির মা হতে চাই। আপনি আমাকে ভালোবাসেন এটাই সত্যি।
আপনি কার্ডে ছেলের নাম দেখেননি।
কার সাথে বিয়ে হচ্ছে। কার্ডটা উঠান আর দেখুন।
স্যার কিছু না বলে মাটি থেকে কার্ডটা হাতে নিয়ে সেটা খুললো।
স্যার- শাওন….
আমি- আমি আপনার ছিলাম আপনার থাকবো।
এখন ডিসিশন আপনার আপনার জন্য দুইটা অপশন।
১/ এই কার্ডের নাম অনুভব কালকে আপনি আমাকে বিয়ে করবেন।
আর ২/ আর এটা যদি আপনি না করেন। আর আজ যদি আপনি আমাকে ফিরিয়ে দেন বা ছেড়ে চলে যান তাহলে শুনে রাখুন আমারও শেষ কথা আমি এখানেই এই হাইওয়ে তে ট্রাক এক্সিডেন্টে নিজের জীবন শেষ করে দেবো আর হ্যাঁ সেটা এখনই আমি আপনাকে ভালোবাসি আপনাকে না পেলে আমার জীবন আমি শেষ করে দেবো মরে যাবো আমি।
বলতে বলতেই স্যার উনার হাত আমার মুখের উপর রাখে।
স্যার- এর আগেও একবার এক্সিডেন্ট করেছো ইতি সেটা আমার জন্য আর এখন এই কথা ভুলেও বলো না। প্লিজ আমি তোমার এক্সিডেন্টের কথা শুনে মাদ্রাস থেকে চলে আসি। তোমাকে দূর দেখে দেখি।
তোমাকে খুব বেশি ভালোবাসি প্লিজ কখনো ছেড়ে যাওয়ার কথা বলো না।
কথা শেষ করেই আজ প্রথম স্যার আমাকে জরিয়ে ধরলেন। আমি ও স্যারকে শক্ত করে জরিয়ে ধরি আর কাঁদতে থাকি দু’জনেই কাঁদতে কাঁদতে সমুদ্র বানিয়ে দিচ্ছি।
স্যার আমাকে উনার থেকে ছাড়িয়ে আমার কপালে চুমু দেয়।
“ ইতি! আমার মেয়ে আসলে ও ” স্যার হতবিহ্বল তাকিয়ে সরু কন্ঠে বলল। উনাকে থামিয়ে দিয়ে ইতি নিজে বলে উঠল, “ আমি জানি সব জানি আন্টি বলেছে। আর হ্যাঁ, ছোট্ট ইতি এখন শুধু আপনার মেয়ে না আজ থেকে ও আমাদের মেয়ে। ”
স্যার আবারও আমাকে জরিয়ে ধরলেন। তারপর আজ রাতেই সব কথা পাকাপাকি হয়ে যায়। দুইদিন পর বিয়ে ফিক্সড হয় আমার অনুরোধে বিয়ে খুব সিম্পল ভাবে হবে শুধু আত্মীয়স্বজন আর বন্ধু বান্ধব’রা থাকবে। সবাই তাতেই রাজি হয়ে যায়।
দুইদিন পর!
আজ গায়ে হলুদ ফাইনালি আমি আমার স্যার এক হবো। এই আশা তো আমি ছেড়েই দিয়েছিলাম।
দুই হাত ভর্তি মেহেদী দিয়ে বসে আসি।
এরইমধ্যে কল বেজে উঠে। হাতে মেহেদী তাই কল রিসিভ করতে পারছি না। মুন্নী কল রিসিভ করে ওরা ওদের মতো শয়তানি করে কথা বলছে।
স্যারও কম নয় উনিও উনার ফোন উনার বন্ধুদের কাছে দিয়ে দেয়।
To Be Continued?
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ]