#স্যার I Love You
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
#পর্ব_০৩
____________
“ আম্মু আমি আমার ড্রেস খুঁজে পাচ্ছি না একটু খুঁজে দিয়া যাও। ” রুম থেকে চেচিয়ে বললাম।
“ তুই একটু খুঁজে নে আমি কিচেনে নাস্তা বানাচ্ছি! ” আম্মু বলল।
‘ আম্মু আমার লেট হয়ে যাচ্ছে একটু এসে খুঁজে দাও না! ‘
আম্মু- উফফফ এই মেয়েকে নিয়ে কি যে করি? এত বড় হয়ে গেছে এখনো নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখতে পারে না। আর আমি কষ্ট করে গুছিয়ে দিলে সেগুলো অগোছালো করে রাখে আর পরে আম্মু এটা পাচ্ছি না ওটা পাচ্ছি না এটা খুঁজে দিয়ে যাও ওটা খুঁজে দিয়ে যাও উফফ।
– আমমমমমমমম্মু।
আম্মু- আসছি তো চিৎকার করছিস কেনো?
আম্মু রুমে এসে কিছুক্ষণ খোঁজার পর, ‘ এই নে তোর ড্রেস, অসহ্য একটা কাজও ঠিকঠাক মতো করতে পারিস না। তোকে নিয়ে যে আমাদের কি হবে?
একমাত্র আল্লাহ জানেন। এত বড় হয়ে গেছিস কিন্তু এখনো বাচ্চাই রয়ে গেলি।
‘ ও আম্মু, আমি এমনই থাকতে চাই উমমম্মাহ। ’
আম্মুকে জড়িয়ে ধরে একটা পাপ্পা দিলাম। আম্মুকে একটু জড়িয়ে ধরে পাপ্পা দিলেই আম্মু গলে যায় আর কিছু বলে না, রাগ গলে পানি পানি হয়ে যায়, যখন ছোটো ছিলাম তখন দেখতাম আম্মু আব্বুর উপর একটু বেশি রেগে গেলেই আব্বু আম্মুকে এইভাবে জড়িয়ে ধরে আর বললাম না আমার বুঝি লজ্জা করে না।
তাই দেখে দেখে আমিও শিখে গেছি।
আম্মু: একদম বাবা মতো হয়েছিস, তাড়াতাড়ি নিচে আয় নাস্তা রেডি।
– ওকে আম্মু!
কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে নামতেই আব্বু বলল, – মামনি গুড মর্নিং!
– ওওও আব্বু গুড মর্নিং।
আব্বু- এসো আব্বুর পাশে বসে নাস্তা করো!
‘ ওকে আব্বু!’ আব্বুর পাশে বসতেই আব্বু আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে।
আম্মু- আমাকে তো সবাই ভুলেই গেছে!
আব্বু- আরে আমার লক্ষী সুন্দরী বউ আসো আমার পাশে বসো আমি তোমাকেও খাইয়ে দিচ্ছি!
হা করো!
আম্মু লজ্জায় লাল টমেটো হয়ে গেছে আর আব্বুর পাশে বসে হা করে খাচ্ছে।
– আম্মুর বিষয়ে আরেকটা কথা বলি, আমার আম্মু প্রশংসা পেতে খুব পছন্দ করে আর সেটা যদি আব্বু করে তাহলে তো কথাই নাই, আর বেশি বেশি প্রশংসা করলে এই যে এখনের মতো লাল টমেটো হয়ে যায়।
– আচ্ছা আব্বু-আম্মু আমার শেষ আমি যাই!
আব্বু- দাঁড়াও মামনি, তোমাকে একটা কথা বলার আছে!
– হ্যা বলো!
আব্বু ডেকে বলল, “ তোমাকে প্রাইভেট পড়াতে একজন নতুন স্যার আসবে বুঝেছো এইবার ওর সাথে কোনো দুষ্টামি করবে না! ও খুবই ভদ্র ছেলে বুঝেছো? এর আগেও ১০টা স্যার তোমাকে পরাতে এসে পালাইছে ৩দিনও টিকে নাই লাস্ট স্যার ৪ দিন টিকছিলো। জানি না কি করো যে তারা পালাতে বাধ্য হয়, এইবার এমন কিছুই করবে না তুমি! ”আম্মু ও আব্বুর সাথে একটু তালেতাল দেয়।
ওকে ওর কলেজের ফাজিল বন্ধু গুলার সাথে মিলা মিশা বন্ধ করে দাও ও এমনি ঠিক হয়ে যাবে। ফাজিল বন্ধুদের সাথে মিশে ফাজিল হয়ে যাচ্ছে দিনদিন!
একটু শাসন করো মেয়ে কে।
আমি মনে মনে বলে উঠি, “ আম্মু তুমি তো জানো না ওই ফাজিলদের দলের লিডার হচ্ছি আমি.।ওরা কি ওদের থেকে বড় ফাজিল আমি। হাহাহা.
আব্বু- দুষ্টামি করো না ওকে মামনি! ( আব্বু কপালে একটা চুমু দিলো আর আমার মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলো অফিসে)
আমিও আব্বুর সাথে বেরিয়ে অন্য গাড়িতে উঠে কলেজের উদ্দেশ্য রওনা হলাম।
আর ওই স্যার গুলার সাথে কি করছিলাম একটু বলি।
৯নাম্বার স্যার যে আমাকে পরাতে আসছিলো হেই বেডা একটু বোকা বোকা আছিলো হেরে একদিন চায়ের সাথে তেলাপোকা দিছিলাম।
হেয় তো চায়ের উপরে তেলাপোকা সাতার কাটতাছে দেখিয়া উল্টাই পাল্টাই দৌঁড়।
১০নাম্বার স্যারেরে তো রাস্তায় সব গুলা বান্ধবী মিল্লা এমন ধুলাই দিছিলাম আমারে কেনো জীবনে আর কোনো ছাত্র-ছাত্রী কে সে পড়ায় নাই।
আর বাকি গুলারে একটু উত্তম মাধ্যম দিছিলাম হেতেই হেরা সব ভাগছিলো।
ভাবতাছি এইটার সাথে কি করমু?
ভাবতে ভাবতে আমার গাড়ি থেমে গেলো।
“ কি হয়েছে আঙ্কেল? কলেজ তো এখনো অনেক দূর। এখানে ব্রেক করলেন কেনো? ”
“ ইতি মামনি মনে হচ্ছে গাড়ির ইন্জিনি নে কিছু প্রবলেম হয়েছে। ”
“ ওকে আঙ্কেল তুমি গাড়ি গ্যারেজে নিয়ে যাও ঠিক হয়েগেলে বাড়ি চলে যেও আমি রিকশা করে কলেজ চলে যাচ্ছি! ”
“ তুমি যেতে পারবে মামনি? ”
“হ্যাঁ আমি ঠিক যেতে পারবো। ”
অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি একটাও রিকশা খালি নাই উফফফ। আমার এমনিতেই দেরি হয়ে যাচ্ছে!
কিছুক্ষণ পর একটা রিকশা দেখলাম! ( যাক বাবা)
“ ওই রিকশা এদিকে আসো! ”
“ ওই মামা এদিকে আসো! ”
পাশে কোথা থেকে একটা ছেলে এসে আমার ডাকা রিকশা ওনি মামা বলে ডেকে নিচ্ছেন ম্যাজাজ টা গেলো বিগড়ে!
রিকশা ওয়ালা- কোথায় যাবেন আপনারা?
আমি- কোথায় যাবেন মানে কি আমি আগে ডেকেছি আপনাকে তাই আমি যাবো!
ছেলেটা: আমিও ডেকেছি আমিই যাবো আমার যাওয়াটা ইমপোর্টেন্ট! আপনি অন্য রিকশা করে চলে যান না প্লিজ। আমার চাকরির ইন্টারভিউ আছে! টাইমলি না পৌঁছাতে পারলে জব টা হাত থেকে চলে যাবে প্লিজ!
আমি-
“ তাতে আমার কি আমি আগে রিকশা ডাকছি! তাই আমিই যাবো! আর আমার কলেজের জন্য লেট হয়ে যাচ্ছে! ”
ছেলেটা- না আমি যাবো।
আমি– আমি যাবো।
১০মিনিট এই ভাবেই গেলো রিকশাওয়ালা বেশ মজাই নিচ্ছে আর মুখ চেপে হাসছে।
ছেলেটা বেশ ঝগড়াটে কিন্তু আমার তো লেট হয়ে যাচ্ছে! কালকে বৃষ্টি হয়েছে তাই রাস্তার জাগায় জাগায় কাঁদা আর পানি জমে আছে!
ছেলেটা বেশি বারাবারি করছে আর আমার শয়তানি মাথায় একটা তুফানি আইডিয়া আসলো।
ছেলেটা যেই রিকশায় উঠতে যাবে তাকে এক ধাক্কা দিয়ে দিলাম কাঁদায় ফেলে সাথে কাঁদা পানি ফ্রি।
আর টুস করে রিকশায় উঠে বসলাম। সবাই ছেলেটার দিকে তাকিয়ে হাসছে
ছেলেটা কতক্ষণ আমার দিকে বলদের মতে তাকিয়ে ছিলো!
কিন্তু এখন ছেলেটার দিকে তাকিয়ে খেয়াল করলাম ছেলেটা বেশ কিউট আর হ্যান্ডসাম এতক্ষণ ঝগড়া করছি তাই খেয়াল করি নাই কিন্তু এখন ওই সে যেমনই হোক না কেনো তাতে আমার কি?
“ রিকশা মামা তাড়াতাড়ি চলো আমার কলেজের জন্য দেরি হয়ে গেছে এমনিতে অনেকটা! ”
রিকশাচালক- আপা কাজটা কি আপনি ঠিক করছেন?
-কি করতাম বলেন ছেলেটা কিভাবে ঝগড়া করছিলো আপনি তো দেখছেনই আর আমার ও অনেক লেট হয়ে গেলো আজ তো স্যার ক্লাসে ডুকতেই দিবে না।
কলেজের সামনে এসে রিকশা ভাড়া দিয়া এক দৌঁড় দিলাম সোজা ক্লাসের সামনে গিয়ে থামলাম।
হাঁপাতে হাঁপাতে, “ আসবো স্যার? ”
“ না! তুমি আজকে বাহিরেই থাকো। ”
স্যার উনার পুরো ক্লাস আমাকে বাহিরে দাঁড় করিয়ে রাখলো। অন্য স্যারের ক্লাসে ঢুকলাম!
সবগুলো ক্লাস করলাম কলেজ ছুটি কি মজা!
কলেজের পাশে একটা ফুলের বাগান আছে সেখানে এসে আমরা সবাই আড্ডা দেই আমি আগেই এসে বসে আছি!
তানিম, রুবেল, মুন্নী, মিম আর আব্রু এই পাঁচটা আমার কুত্তা কুত্তী বন্ধু বান্ধবী আর আমার ফাজিলের দল।
আমার কাছে এসে বসে বসলো, আর বললো,
‘ কিরে আজ আমাদের ছাড়াই চলে এলি আর ক্লাসেও খুব একটা দুষ্টামি ফাজলামি করিসনি কি হয়েছে একটু বলবি? ’
তার ওদের সব খুলে বললাম রাস্তার ঘটনা।
ওরা তো হাসতে হাসতে ৩২টা হাঁত বাহির করে দিচ্ছে আর হাসতে হাসতে এক জন আরেক জনের উপরে গিয়ে পরছে।
‘ ওই তোরা চুপ করবি? ’ বলে ইচ্ছা মত দিলাম কত গুলা কিল ঘুসি। আরও বললাম,
‘ ছেলেটার সাথে ঠিক করি নাই, ওইভাবে ধাক্কা দেওয়া একটু উচিত হয় নাই। ছেলেটা বলছিলো ওর ইন্টারভিউ আছে আর আমি কাঁদায় ফেলে দিলাম! ইসসস। ’
মুন্নী- এখন আর ইসস ইসস করে কি করবি যা করার তা তো করেই দিছোস।
আব্রু- ছেলেটা কেমন ছিলো রে?
আমি- অনেক কিউট আর হ্যান্ডসাম ছিলো।
মিম- ওও প্রেমে টেমে পরে যাওনি তো আবার?
রুবেল- কিরে বিকেলে চল সবাই ফুচকা খেতে যাই!
তানিম- আইডিয়া টা ভালো!
মুন্নী,মিম,আব্রু এক সাথে, ‘ ওকে ডান! ’
আমি- আমি যেতে পারবো না রে!
মুন্নী- কেন?
আমি- আজ বিকালে আমার নতুন প্রাইভেট স্যার আসবে আমাকে পড়াতে!
সবগুলা একসাথে-নকিহহহহহ? আবার আরেকটা স্যার! এবার এটার সাথে কি করবি?
আমি, ‘ভাবছি কি করবো? ’
আচ্ছা চল সবাই এখন বাড়ি যাই টাটা।
বলে সবাই চলে গেলো।
চলবে?
(কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ)