অবাধ্য পিছুটান পর্ব ৩৫
#সাদিয়া_শওকত_বাবলি
#পর্ব_৩৫
( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )
থামলো আরুশ। বাঁকা হেসে বলল,
-“আমি একা ম’রা’য় বিশ্বাসী নই স্যার। নিজের হত্যাকারীকে নিজ হাতে মে’রে তারপর ম’রা’য় বিশ্বাসী।”
তুর্য আরুশের কপাল থেকে বন্দুক সরিয়ে নিল। ফিচেল হেসে বলল,
-“আ’ম ইমপ্রেসড।”
থামলো তুর্য। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
-“আজ শুধুমাত্র এই কথাটার জন্য বেঁচে গেলি তুই নয়তো এই মুহূর্তে তোর পা*ছা*য় লাথি মেরে অপারেশন থেকে বের করে দিতাম বেয়াদব।”
আরুশও তুর্যের কপাল থেকে বন্দুকটা সরিয়ে নিল। বুকে হাত দিয়ে বড় বড় কয়েকটা নিঃশ্বাস নিল। কত সাহস বুকে নিয়ে সে এতক্ষন তুর্যের সম্মুখে দাঁড়িয়ে ছিল তা একমাত্র সেই জানে। এই তুর্য ব্যাটাকে তো বিশ্বাস নেই। এ সত্যি সত্যিই তাকে গুলি করে দিতে পারতো। আরুশের তো এক সেকেন্ডের জন্য মনে হচ্ছিলো এই তার জীবনের অন্তিমক্ষন, তুর্যের বোনকে বোধহয় এই জন্মে আর বিয়ে করা হলো না। তারপর যেভাবেই হোক রতন বাবুকে মে’রে’ও এ যাত্রায় বেঁচে গেল বেচারা। আরুশ কয়েকটা নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করলো। কন্ঠ কিছুটা স্বাভাবিক করে বলল,
-“আমি যা করে ফেলেছি রাগের মাথায় স্যার। কিন্তু এই অপারেশনটা আমার স্বপ্ন।”
তুর্য তাকালো আরুশের পানে। সে নিজেও জানে এটা আরুশের স্বপ্ন। এই পেশায় আসার পর আরুশের প্রথম বড় কোনো কাজ এটা। তুর্য এবারে বেশ ঠান্ডা কন্ঠেই বলল,
-“স্বপ্ন হলে ধীর গতিতে মাথা খাটিয়ে সেই স্বপ্ন পূরণের পথে পা বাড়াতে হয়। আমরা এখন এমন অবস্থানে নেই যে হুট হাট মাথা গরম করে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেব।”
আরুশ মাথা নিচু করে ফেললো। কাঁচুমাচু হয়ে বলল,
-“স্যরি স্যার।”
-“এসব স্যরি তোর কাছেই রাখ আর ভাবতে থাক এই এন’কাউ’ন্টারের ব্যাপারে নাজিম স্যারকে কি জবাব দিবি।”
আরুশ ঢোক গিললো। ভয়ার্ত কন্ঠে বলল,
-“এবারের মতো উনার হাত থেকে বাঁচিয়ে নিন স্যার। উনি আমাকে এমনিই সহ্য করতে পারেন না। এরপর যদি এন’কাউ’ন্টারে’র ব্যাপারে শোনে তাহলে সোজা আমারই এন’কাউ’ন্টার করে উপরে পাঠিয়ে দিবে। তারপর আপনার বোন বিয়ের আগেই বিধবা হবে স্যার।”
তুর্য একবার তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালো আরুশের পানে অতঃপর পাশেই তাদের দাঁড় করানো গাড়ির ড্রাইভিং সিটে উঠে বসলো। জানাল থেকে মুখ বাড়িয়ে আরুশকে বলল,
-“তুই এখান থেকে এখন হেঁটে হেঁটে বাড়িতে যাবি নয়তো আমার বোনকেও পাবি না আর উপর মহলের সাথেও তোর এই এন’কাউ’ন্টার নিয়ে কোনো সুপারিশও করতে পারবো না বলে দিলাম।”
আরুশ আঁতকে উঠলো। যে বাড়িতে সে থাকে তার দূরত্ব এখান থেকে কমপক্ষে দুই কিলোমিটার। এই পুরো পথটা হেঁটে যাবে সে? আরুশ ছুটে গেল গাড়ির পানে। ব্যস্ত হয়ে বলল,
-“আমি এতটা পথ কিভাবে হেঁটে যাব? আমার পা ফুলে যাবে। আমার উপর এত বড় জুলুম করবেন না স্যার। আমাকে প্লীজ গাড়িতে নিয়ে নিন। দরকার হয় অর্ধেক পথে গিয়ে নামিয়ে দিবেন।”
তুর্য চোখ ছোট ছোট করে তাকালো আরুশের পানে। ওষ্ঠ বাঁকিয়ে বলল,
-“এতটা পথ কোথায়? মাত্র দুই কিলোমিটার। ট্রেনিং এর সময় রোজ এর থেকেও তো বেশি দৌড়াতি। আর এখন দুই কিলোমিটারে ভয়? মহিলাদের মতো ঢং বাদ দে আরুশ। নয়তো টানা দশ কিলোমিটার দৌড়াতে হবে তোকে। আর হ্যা অবশ্যই হেঁটে হেঁটে আমার বাড়িতে যাবি তোর বাড়িতে না।”
আরুশ আরও কিছু বলবে তার আগেই তুর্য গাড়িতে স্টার্ট দিল। সাঁই সাঁই করে গাড়িটা নিয়ে চললো সম্মুখের দিকে। আরুশ হকচকিয়ে গেল। সময় ব্যয় না করে গাড়ির পিছনে ছুট লাগালো। চিৎকার করে বলল,
-“স্যার আমাকে ফেলে যাবেন না। আমাকে নিয়ে যান।”
তুর্য শুনলো না আরুশের কোনো কথা। গাড়ি থামালো না সে। আরুশের মেজাজ বিগড়ে গেলো। লোকটা সব সময় ওর সাথে এমন করে। বাড়িতে মায়ের সাথেও পারে না, বউয়ের সাথেও পারে না। পারে শুধুমাত্র ওর সাথে। আরুশ ক্রোধে দিশেহারা হলো। ব্যস্ত হয়ে তাকালো আশেপাশে। একটা অর্ধ খন্ড ইটের টুকরা চোখে পড়লো তার। তড়িঘড়ি করে ইটের খন্ডটা হাতে তুলে নিল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
-“আমি তোর বোনকে বিয়ে করবো। তারপর তুই হবি আমার শা’লা, শা’লা। অফিসে তোর চললেও বাড়িতে কার চলে আমিও দেখে ছাড়বো। সব প্রতিশোধ কড়ায় গন্ডায় উসুল করবো।”
কথাটা শেষ হতে না হতেই তুর্য গাড়ি ব্যাকে আনলো। থামালো ঠিক আরুশের পায়ের কাছে। থতমত খেয়ে গেল ছেলেটা। দ্রুত হাতের ইটটা পিছনে লুকিয়ে ফেললো। আমতা আমতা করে বলল,
-“আবার ফিরে এলেন যে! আমি হেঁটে হেঁটে বাড়িতে যাব না?”
তুর্য উত্তর দিল না আরুশের কথার। বরং বেশ আগ্রহ নিয়ে বলল,
-“আমার বোনকে বিয়ে করবি তুই?”
আরুশ নিজের ক্রোধ ভুলে গেল মুহুর্তেই। লাজুক হেসে বলল,
-“জ্বী স্যার।”
তুর্য হাসলো। টেনে টেনে বলল,
-“কিন্তু তোর মতো একটা আহাম্মকের সাথে আমি আমার বোনের বিয়ে দেবোওও না।”
আরুশ চমকালো তবে কিছু বলার আগেই তুর্য গাড়ির চালনা শুরু করলো আবার। মিনিট খানেকের মধ্যে দূরেও চলে গেল। আরুশ নিজের ক্রোধ আর ধরে রাখতে পারলো না। রেগেমেগে হাতের ইটের টুকরাটা ছুঁড়ে মা’র’লো তুর্যের গাড়ির পানে। কিন্তু বেচারা, শক্তি চালিয়ে ইটের টুকরাটা তুর্যের গাড়ি পর্যন্ত নিতে সক্ষম হলো না। অবশ্য এই অসক্ষমতায় লাভ বই লোকসান হয়নি তার। যদি সত্যি সত্যি আরুশের ক্রোধের বশে মা’রা ইটের টুকরা কোনোভাবে তুর্যের গাড়িতে লাগতো তবে আজ ঐ ইটের টুকরা দ্বারা তার শক্তপোক্ত মাথাটাও ফাটতো। আর তারপর হাসপাতাল।
৩৯.
সময় গড়ালো কিছুটা। আরুশকে ফেলে রেখে গাড়ি নিয়ে সোজা বাড়িতে গেল তুর্য। ফুরফুরে মেজাজে নিজ কক্ষে ঢুকতেই থমকে গেল সে। পৃথা কেবলই গোসল সেড়ে বেরিয়েছে। চুলগুলোও ভালোভাবে মোছেনি এখনও। লম্বা চুলের ডগা বেয়ে ঝড়ে পড়া টুপ টাপ পানির বিন্দুগুলো স্থান করে নিচ্ছে মেঝেতে। তুর্যের ঘোর লেগে যাচ্ছে। বুকের ভিতরটা কেমন ধুকপুক ধুকপুক করছে। শিরশির অনুভূতিতে আচ্ছাদিত হচ্ছে সম্পূর্ণ শরীর। তুর্য যেন এক মুহুর্তের জন্য ভুলে গেল তার জীবনের সব জটিলতা, সব বারন। সম্মোহিত ভঙ্গিতে দরজা খোলা রেখেই এগিয়ে গেল পৃথার পানে। হাত বাড়িয়ে আলতোভাবে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো মেয়েটাকে। কেঁপে উঠলো পৃথা। শিউরে উঠলো পুরো শরীর। হৃদস্পন্দন বাড়লো মেয়েটার। নিজেকে তাড়াতাড়ি সরিয়ে নিতে চাইলো তুর্যের বাঁধন থেকে কিন্তু পারলো না। তুর্য আরও শক্ত কন্ঠে নিজের সাথে জড়িয়ে নিল পৃথাকে। মেয়েটার ভেজা চুলে মুখ গুঁজে বলল,
-“আই ব্যাডলি নিড ইয়্যু জান।”
থামলো তুর্য। আবার বলল,
-“সরে যেও না প্লীজ। একটু সময় থাকো আমার কাছে, আমার সাথে মিশে। নিজেকে একটু শান্ত করতে দাও।”
তুর্যের কথায় কি ছিল জানা নেই পৃথার। কিন্তু মেয়েটা সরতে পারলো না তুর্যের থেকে। মস্তিষ্ক সরাতে বললেও হৃদয় বাঁধা দিল। সে তুর্যের এই স্পর্শকেই আপন করে চাইছে। আরও গাঢ় স্পর্শে নিজেকে বিলীন করতে চাইছে। এ কি তবে ভালোবাসা নাকি মায়া? পৃথা কি ধীরে ধীরে তবে তুর্যের মায়ায় বাঁধা পড়ে যাচ্ছে? এর কোনো প্রশ্নেরই উত্তর নেই পৃথার নিকট। সে শুধু এই মুহূর্তে তুর্যকে চাইছে।
তুর্য আলতোভাবে পৃথার ঘাড় থেকে ভেজা চুলগুলো সরিয়ে দিল। অতঃপর একটু ঝুঁকে ঘাড়ে কামড় বসালো একটা। পৃথা শিউরে উঠলো। চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে নিল। তুর্য আর একটু ঘনিষ্ট হলো মেয়েটার সাথে। ঘাড়ে ছোট ছোট চু’মু’তে সিক্ত করে তুললো মেয়েটাকে। পৃথা আর পারলো না নিজেকে ধরে রাখতে। তড়িৎ গতিতে পিছন ফিরে তাকালো তুর্যের পানে। অনূভুতির জোয়ারে ভেসে গিয়ে আছড়ে পড়লো তুর্যের বক্ষে। তুর্য হাসলো, দুই হাত বাড়িয়ে মেয়েটাকে জড়িয়ে নিল নিজের সাথে। ঠিক তখনই খোলা দরজা থেকে কক্ষের ভিতরে প্রবেশ করলো ইরা। সম্মুখ পানে না তাকিয়েই বলল,
-“ভাবী তোমাকে বড় চাচী….”
ব্যস এই টুকুতেই মুখ বন্ধ করতে হলো মেয়েটাকে। সম্মুখ পানে তাকিয়েই ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো সে। কি করতে এসে কি দেখে ফেললো ইরা। হঠাৎ চিৎকার করে উঠলো মেয়েটা। দুই হাতে জলদি নিজের চোখ চেপে ধরে বলল,
-“আমি কিছু দেখিনি দেখিনি, আমি কিছু দেখিনি।”
পৃথা আর তুর্য চমকালো। মেয়েটা ছিটকে দূরে সরে যেতে চাইলো তুর্যের থেকে কিছু তুর্য যেতে দিল না। বরং আরও শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে নিল পৃথাকে। অতঃপর এক রাশ বিরক্তি নিয়ে সে তাকালো ইরার পানে। নাক মুখ কুঁচকে বলল,
-“আমার শান্তি সহ্য হয় না? আমার প্রেমে এলার্জি আছে তোদের? সব আহাম্মকের দল।”
ইরা অপ্রস্তুত হলো। এখানে এসে এমন একটা পরিস্থিতিতে পড়বে জানলে কোনো দিনই আসতো না। সে তো জানতোই না তুর্য ঘরে ফিরেছে। ইরা আমতা আমতা শুরু করলো। ইতস্তত করে বলল,
-“না মানে বড় চাচী ভাবীকে খাবার খেতে ডাকছিলো তাই।”
তুর্য নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলল,
-“তুই যা আমরা আমাদের কাজ শেষ করে আসছি।”
ইরা আর দাঁড়ালো না এক মুহুর্তেই। এক দৌড়ে কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেল সে। আর পৃথা! বেচারীর এই মুহূর্তে ইচ্ছে হচ্ছে লজ্জায় মাটির মধ্যে ঢুকে যেতে। কি নির্লজ্জ কথাবার্তা। তাও অন্য মানুষের সম্মুখে। “কাজ শেষ করে আসছি মানে কি?” পৃথার ভাবনার মধ্যেই তুর্য তাকালো তার পানে। আদুরে কন্ঠে বলল,
-“চলো বউ, আমরা আবার প্রথম থেকে শুরু করি।”
পৃথা ভরকে গেল পরক্ষনেই আবার তেতে উঠলো। তুর্যের বাঁধন থেকে নিজেকে ছাড়াতে উদ্যত হয়ে বলল,
-“চুপ করুন অ’স’ভ্য লোক। ছাড়ুন আমাকে।”
তু্র্য নিজের ঠোঁট দুটো গোল করলো। একটু উঁচিয়ে বলল,
-“আগে আঁটসাঁট বেঁধে তোমাকে একটা চু’মু’টা খেতে দাও। তারপর ছেঁড়ে দিচ্ছি।”
পৃথা অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো তুর্যের পানে। ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,
-“একটা মানুষ এতটা নি’র্ল’জ্জ কিভাবে হয়? একটু তো শরম করুন। ইরার সামনে ছিঃ ছিঃ কি ভাবলো ও।”
তুর্য চোখে হাসলো। চোখ মেরে বলল,
-“খোঁজ নিয়ে দেখো তুমি ঠিক যতটা লজ্জা পাচ্ছো না ওরা তোমার এই লজ্জার থেকেও অধিক আমাদের নিয়ে ভেবে ফেলেছে।”
পৃথা অপ্রস্তুত হলো। এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে বলল,
-“ছাড়ুন আমাকে।”
-“আগে একটা চু’মু খেতে দাও তারপর ছাড়ছি।”
চলবে…..