#ওহে প্রিয় পর্ব ১১
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_১১
৪.
নির্ঝরের জন্মদিন। নির্মল,নির্ঝরের মা এবং ছোট বোন নেহা এসেছে। নির্মলের মাকে দেখেই বোঝা যায় বেশ বড় বাড়ির বউ সে। কিন্তু বিন্দু মাএ অহংকার নেই। ছেলে, মেয়ে গুলোও হয়েছে ঠিক মায়েরই মতোন৷ কি সুন্দর খুব সহজেই সবার সাথে মিশে যায়, সবাইকে আপন করে নেয়৷ শুধু বড়টা বোধ হয় একটু বেঁকে গেছে বড্ড বেশীই মেয়েবাজ। হবে নাই বা কেনো? যেমন ধনাঢ্য পরিবারের ছেলে তেমন রূপ যেনো চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে । সত্যি বলতে তাঁর দিকে মিনিটকয়েক তাকিয়ে থাকলে আপনা আপনিই মুখ দিয়ে এসে যায়,
‘ ইশ এমনও পুরুষ হয় ‘?
এক দিক বাদে কোনোদিকে যেনো কমতি নেই ছেলেটার। ইয়া লম্বা সুঠাম দেহের অধিকারী। ধবধবে সাদা গায়ের রঙ, ঠোঁট জোড়াও লালচে গোলাপি, চোখ গুলোও কেমন ধবধবে সাদা চোখের মনিটাও সবার থেকে ডিফারেন্ট ঘোলাটে চোখে হালকা ব্রাউন মনি যেনো ব্ল্যাক এন্ড ব্রাউনের সংমিশ্রণ। আর চুল? ছেলেদের চুলও এতো সিল্কি হতে পারে ওর চুল না দেখলে জানতেই পারতাম না৷ এতো সুদর্শন, স্মার্ট ছেলেটা সারাক্ষণ চোখের সামনে ঘুরঘুর করে। মেয়েবাজ না হলে না জানি কবেই প্রপোজ করে বসতাম। ছিঃ মনটা বড্ড বেশীই বেশরম হয়ে যাচ্ছে। নয়তো এইভাবে এই মেয়েবাজটার প্রতি আকর্ষণ জন্মায়? ইশ কতোই না ভালো হতো যদি নির্মল প্লে বয় না হতো? ছেলে খোর মেয়েরাও যে পিছু ছাড়ে না তাঁর। প্রতি সপ্তাহে তাঁর নামে কতো যে চিঠি আসে হিসেবের বাইরে। সুন্দরী মেয়েদের পিছে ছেলেরা হুমড়িখেয়ে পড়ে শুনতাম৷ ঢাকা শহড় এসে বুঝতে পারলাম শুধু মেয়েদেরই না সুদর্শন ছেলেরাও ছাড় পায় না এই শহড়ে। অহরহ সুন্দরী মেয়েরা যদি কম বয়সী ছেলেদের এতো টপকায় তাহলে সে ছেলেটার ভালো থাকা কি আদেও সহজ ব্যাপার? সবার জন্য হয়তো সহজ নয়।
রান্নার তোড়জোড় চলছিলো আমি সাহায্য করছিলাম আন্টিকে। নির্ঝর, নেহা আমি বলতে অজ্ঞান। বাড়ির ভাড়াটিয়াদের সাথে যে মালিকদের সম্পর্ক এতো ভালো হয় জানা ছিলো না আমার৷ হয়তো নির্মলের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠায় ওর পরিবারের সাথেও আলাদা একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠেছিলো। রান্নার পাশাপাশি আমাদের গল্প চলছিলো৷ নির্ঝর, নেহা আর জেসমিন ড্রয়িং রুমে বসে লুডু খেলছিলো। আর নির্মল? সে না জানি সকাল সকাল কোন মেয়ের সাথে লটরপটর করতে বেরিয়ে গেছে। কথার ফাঁকে আন্টি তাঁদের পরিবারের সকলের গল্পই করলেন। আংকেল শহড়ের নামকরা ব্যবসায়ী৷ শহড় থেকে ভিতরের দিকেই তাঁদের বাড়ি। শহড়ে বেশ কয়েকটা ফ্ল্যাট আছে একটা বাড়িও আছে সেটাও ভাড়া দেওয়া। আর এই বাড়ি মানে আমরা যেটায় ভাড়া আছি এটা আন্টির ভাইয়ের বাসা। ফুল ফ্যামিলি বিদেশে স্যাটেল করেছে ভার্সিটির কাছে হওয়াতে এই বাসাটায় নির্মল থাকে। মামার অনুমতিতেই নিচের দু’রুম ভাড়া দিয়েছে আমার মামিকে। রান্না শেষ হতে হতে দুপুর হয়ে গেলো। নির্মলও ফিরলো সে সময়। মামি আর আন্টি টেবিলে খাবার বাড়ছিলো। আমি সবেই সোফায় বসে ওড়না দিয়ে মুখ মুছছিলাম। ঘেমে একদম খারাপ অবস্থা মুখের। হঠাৎই নির্মল খুব সিরিয়াস চোখ, মুখে বললো,
-‘ একটু উপরে এসো সাবা ‘।
-‘ পারবোনা এখন শাওয়ার নেবো বড্ড খিদে পেয়েছে ‘। বলেই ওঠে দাঁড়াতেই খপ করে আমার ডান হাত চেপে ধরে উপরের দিকে পা বাড়ালো। আমি ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলাম,
-‘ আরে আরে করছো কি এতো কি জরুরি কথা ‘?
নির্মল একটা কথাও বললো না সোজা নিজের রুমে টেনে নিয়ে গিয়ে দরজাটা ঠাশ করে বন্ধ করে দিলো। আমি দুহাত কোমড়ে রেখে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে প্রশ্ন করলাম,
-‘ কি ভন্ডামি হুম ‘?
-‘ চুপ একদম চুপ তোমাকে আমি বলেছিলাম ভার্সিটিতে অপরিচিত কারো সাথে কথা না বলতে সে কথা মনে ছিলো না ‘?
-‘ যাহ বাবা এত্তো রাগ । ঐ ভাইয়াটা টুকটাক প্রশ্ন করছিলো সিনিয়র তাই ভদ্রতা দেখিয়েছি আর কি। কিন্তু তোমার এতো জ্বলছে কেনো হুম ‘?
-‘ দেখ সাবা বাড়াবাড়ি করবিনা। আমার থেকে ওদের ভালো করে কেউ চেনে না। তুই জানিস তোর সাথে প্রেম করার জন্য এরা আমাকে চেপে ধরেছে ‘।
-‘ ওমা তাই নাকি বেশ তো প্রেম করতে চাইতেই পারে আমি না করলেই হলো ‘।
-‘ না হলো না তুই বুঝবিনা এরা পিছু নিয়েছে মানে সম্পর্ক করবে খাবে দাবে অতঃপর ছেড়ে দেবে। আর সম্পর্ক না করতে চাইলে মারাত্মক ভাবে ক্ষতি করে দেবে ‘।
-‘ ছিঃ কিসব ভাষা। শোনো নির্মল আমি মোটেই দূর্বল মেয়ে নই। ক্ষমতা আছে বলেই এরা যা খুশি তাই করতে পারবে না দেশে কি আইনকানুন নেই নাকি। জেলে ভরে দেবো একদম ‘।
নির্মল বিরক্ত হয়ে, ক্রুদ্ধ নয়নে আমার দুকাধ চেপে ধরে চিৎকার করে বললো,
-‘ জেলে ভরবি? বড় বড় কথা তাইনা? কখন জেলে ভরবি ক্ষতি করার আগে ওদের কিছু করতে পারবি? আর ক্ষতি হওয়ার পর ফাসিতে ঝুলিয়েও কি লাভ? তাছাড়া ক্ষতি করে দিলে জেলে দিলেও এরা ক্ষমতার জোরে টাকা খাওয়িয়ে ঠিক ছাড়া পাবে যা ক্ষতি তোরই হবে’।
আমি ভীত হয়ে তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে। মিনমিনে গলায় বললাম,
-‘ এমন কেনো নির্মল? আমার এসব ভালো লাগেনা। সব কেমন অদ্ভুত লাগছে ‘।
আমার অমন ভয়ার্ত মুখ দেখে আচমকাই জড়িয়ে ধরলো নির্মল। আদুরে গলায় বললো,
-‘ কিছু হবেনা সাবা আমি ওদের বলে দিয়েছি তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড বাই চান্স তোমার সাথে দেখা হয়ে গেলে যদি প্রশ্ন করে তোমার সাথে আমার কোন রিলেশনশিপ আছে কিনা জাষ্ট হ্যাঁ বলে দেবে ‘।
-‘ ওকে ওকে প্লিজ ছাড়ো আমায়, আমার শরীর শিরশির করে তুমি স্পর্শ করলে’।
নির্মল ছেড়ে দিলো আমায় ওর ভয়কাতুরে ভাবটা দূর হয়ে চোখে, মুখে উজ্জ্বলতা ফুটে ওঠলো। দুষ্টু হাসি ঠোঁটের কোনায় ফুটিয়ে পা থেকে মাথা অবদি চোখ বুলিয়ে এক গাল টিপে দিয়ে বললো,
-‘ সো সুইট ‘।
ওর আচরণে আমার বেশ সন্দেহ হলো এই একটুখানি জড়িয়ে ধরার জন্য আবার আমাকে ঢপ দিলো না তো? তেড়ে গিয়ে প্রশ্নটি করতে যেতেই গলায় তয়ালে ঝুলিয়ে বাথরুমে ঢুকে পড়লো। আর চেচিয়ে বললো,
-‘ যাও যাও ফ্রেশ হয়ে খাবার বাড়ো কর্তা কিন্তু আজ গিন্নির হাতে বেশ আয়েশ করে খাবে ‘।
আমার তখন অন্যরকম অনুভূতি। এই ছেলেটা কেমন আচমকা ছুঁয়ে দেয় আমায়। সে কি বুঝেনা একজন পুরুষের এভাবে কোন নারীকে স্পর্শ করতে নেই। গার্লফ্রেন্ডদের স্পর্শ করে সে না হয় তাঁরা ওর গার্লফ্রেন্ড আমিতো গার্লফ্রেন্ড নই। সব অনুভূতির আগুন নিভিয়ে দিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বললাম,
-‘ ওরে আমার কর্তা রে বারো নারীর লিপটেষ্ট করে আসছে আমাকে গিন্নি বানাতে। তোর আশায় সেগুরে বালি ‘ বলেই ভেঙচি কেটে চলে এলাম রুম থেকে।
সেদিন টি বেশ কাটলো আমাদের৷ ধীরে ধীরে নির্মলের সাথেও সম্পর্ক টা বেশ মজবুত হয়ে গেলো। শহড়ের জীবন বেশ কঠিন কিন্তু আমার সে কঠিন জীবনটাকে সহজ করে দিয়েছিলো নির্মল। নামের মতোই পুরোটাই নির্মল ছিলো ও। কঠিন হতো তখন যখন আমায় কোন ছেলে প্রপোজ করতো, যখন আমি বন্ধু মহলের বাইরে কোন ছেলের সাথে মিশতাম। সব সময় বলতো,
-‘ দেখো সাবা ভালোবাসার নাম করে অনেকেই আসবে জীবনে কাউকে ঠাই দিও না প্লিজ। বন্ধু হিসেবে আমি তোমার ক্ষতি চাইনা। এ শহড়ে অনেক ছেলেই আছে উপরে ফিটফাট ভিতরে সদর ঘাট। সবাই কিন্তু আমার মতোন প্রকাশ্যে কিছু করেনা। আমি যা করি একদম ওপেন আমি হলাম একটি বইয়ের এক একটি পাতা। যাকে খুব মনোযোগ দিয়ে পড়লেই বুঝে নেওয়া যায়। কিন্তু বাকিরা কিন্তু বইয়ের পাতা নয় ‘।
ওর কথায় আমি উত্তর দিতাম,
-‘ আমি এসব প্রেম, ভালোবাসা বিশ্বাস করিনা আর না এসবে আমার কোন আগ্রহ আছে। আমার এসব ফালতু ফিলিংস কারো প্রতি কখনোই আসবে না ইনশাআল্লাহ ‘।
আমার সে কথাটি শুনে বেচারার ফর্সা মুখটা একদম লালটকটকে হয়ে যেতো। তা দেখে ওর সামনের চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে হিহি করে হেসে ওঠতাম আমি। ওর অনুভূতি গুলোকে বুঝেও না বোঝার ভান করতাম । হয়তো এই ভানটা আমি করতাম না যদি না ওর জীবনে একের অধিক মেয়ের আসা যাওয়া থাকতো।
সব কিছুর বাইরে আমরা আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কে খুব সিরিয়াস ছিলাম। ওকে আগাগোড়া খুব গভীর ভাবেই জেনে যাই আমি। আমার বিষয়েও সবটা জানতো নির্মল। রোজ রাতে ছাদে বসে অনেকটা সময় গল্প করতাম আমরা৷ জেসমিন তারাতাড়িই ঘুমিয়ে যেতো৷ কিন্তু আমি আর নির্মল ছাদে বসে আড্ডা দিতাম৷ আমি আমার গ্রাম্য জীবনের গল্প শোনাতাম ওকে। আর ও শোনাতো ওর শহড়ে জীবনের গল্প। ছুটিতে বাড়ি গেলে নির্মল আমায় বাসে ওঠিয়ে দিতো। হাত ধরে অনেকটা সময় মুখের দিকে চেয়ে থাকতো আর বলতো,
-‘ ইশ তুমি যদি আমার গার্লফ্রেন্ড হতে একটুখানি ঠোঁট ছুঁইয়ে দিতাম এই কপালটায় ‘। আর বলতো,
-‘ যাও না যাও বাড়ি যাও এবার সিওর পেটমোটা, মাথাফাটা লোকের সাথে বিয়ে পড়িয়ে দেবে। ভয় নেই তুমি চাইলে বাসরঘর থেকে ওঠিয়ে নিয়ে এসে বউ করবো আমার ‘।
মানুষ টার তো সবই ঠিক ছিলো তাহলে এই মেয়ে রোগটা কেনো হলো? একদিন আমি সিদ্ধান্ত নেই আমার বন্ধু দের মধ্যে যার যার এই রোগটা রয়েছে সবগুলোর সাথে ব্রেকআপ করবো। হ্যাঁ বন্ধুত্বের ব্রেকআপ৷ ইতিমধ্যেই ফাহিমের সাথে আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে গেছে। এর কারণ নির্মল আমায় না বললেও আমি রাব্বির থেকে জেনে গেছিলাম। ফাহিম সব সময় অন্য নজরে দেখতো আমায়। প্রপোজ করতে চেয়েছিলো নির্মলের জন্য পারেনি। তাই বলে থেমে ছিলো না নোংরা দৃষ্টি ফেলতো সব সময়। সেবার লুডু খেলতে গিয়ে বন্ধুদের মধ্যে বেশ ঝগরা চলছিলো। আমি তো ঝগরার মুডেই ছিলাম কখন আমার শরীর থেকে ওড়না সরে গেয়েছিলো খেয়ালই নেই। ফাহিম নাকি সেসময়ই কামুক দৃষ্টি ফেলেছিলো আমার দিকে। আমার নজরে পড়েনি শুধু মনে আছে সেদিন সকলের সামনেই নির্মল ওড়না ঠিক করে দিয়েছিলো আমার। তারপর থেকেই নির্মলের সাথে ফাহিমের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। নির্মলকেও প্রচুর থ্রেট দেই যদি এইসব বাদ না দেয় তাহলে ওদের বাড়ি ছেড়ে অন্য বাড়ি ভাড়া নেবো আমরা। ব্যাস কাজ হয়ে যায় বেচারার চোখ,মুখের অবস্থা নাজেহাল। কিন্তু এই অবস্থাটার আসল কারণ কি? আমরা চলে যাবো তাই নাকি গার্লফ্রেন্ড জাতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে হবে তাই?
পুরো তিনদিন নাওয়াখাওয়া পর্যন্ত করে না৷ নির্ঝরের কাছে শুনি রাতে নাকি নিঃশব্দে কাঁদেও। আমি বেশ চিন্তায় পড়ে গেলাম ওকে নিয়ে। যতোদূর জানি কোন মেয়ের প্রতি দূর্বলতা নেই ওর৷ আমাকে মাঝে মাঝে ইমোশনাল কথা বললেও সেটা নিছক মজা। তাহলে অশ্রু বিসর্জনের রহস্য টা কি? শুনেছি মন খারাপ থাকলে মশাই গিটারে টুংটাং শব্দ তুলে গান গায়৷ সেদিনও রাতে ছাদের এক কোনায় বসে গান গাইছিলো। আমি নিঃশব্দে ওর পাশে গিয়ে বসি। ও চুপ হয়ে যায়। আমি দুহাটুতে হাত বেঁধে বসে প্রশ্ন করি,
-‘ গার্লফ্রেন্ডদের মিস করছো ‘?
-‘ নাহ আমার প্রিয় কে মিস করছিলাম এখন আর করছি না ‘।
-‘ তাই কে প্রিয় তোমার ‘?
-‘ বললে বিশ্বাস করবে ‘?
-‘ বলোই না আগে শুনি ‘?
আচমকাই আমার দুহাত নিজের দু’হাতে মুষ্টি বদ্ধ করে নিয়ে মোহময় চোখে চেয়ে বললো,
– ‘ আমার প্রিয় শুধুই তুমি সাবা ‘।
ওর কথা শুনে রাগে ফেটে পড়লাম আমি। এক ঝটকায় ওর হাত সড়িয়ে দিয়ে ত্যাজি গলায় বললাম,
-‘ আর একটা কথাও বলবে না তুমি। লজ্জা করে না তোমার? ভাবলে কি করে দিনের পর দিন এভাবে আবেগপ্রবণ কথা বলে আমাকে তুমি ইমপ্রেস করতে পারবে? দেখো নির্মল আমি তোমার মতো নই। আমি খুব সাধারণ পরিবারের সাধারণ একটি মেয়ে। পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য এই শহড়ে এসেছি। এসব প্রেম,ভালোবাসা করার জন্য আসিনি৷ আমাদের পরিবারটা তোমাদের মতোন নয়৷ সেখানে ছেলে বন্ধু থাকা মানেই মারাত্মক অপরাধ। প্রেম,ভালোবাসার সম্পর্কে জড়ানো মানে খুবই ঘৃণিত একটি কাজ। তোমার সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্কে জড়িয়েছি এই অনেক এর বেশী কিছু সম্ভব নয়৷ তাছাড়া অহরহ মেয়ের সংস্পর্শে এসে আমার মতো মেয়েকে চাওয়া নিছক বোকামি। আমার জীবনে কোন পুরুষ ছিলো না এখনো নেই ফিউচারে যে আসবে সে হবে আমার হাজব্যান্ড আর কেউ নয়। আমার হাজব্যান্ড নিশ্চয়ই আমারই মতোন হবে ‘?
-‘ সব ছেড়ে দেবো সেদিনের পর কোন মেয়েকে স্পর্শ করিনি সাবা আজকের পর যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন থাকবে ‘।
ওর কথা শুনে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললাম,
-‘ নারী নেশা কাটানো কি এতোই সহজ ‘?
কথাটা শুনে নির্মল ভয়ংকর রেগে গেলো। আমাকে একটানে নিজের খুব কাছে নিয়ে কোমড়ে শক্ত করে চেপে ধরলো। ব্যাথায় কুকিয়ে ওঠলাম আমি। বললাম,
-‘ ছাড়ো নির্মল তুমি নিজের মধ্যে নেই ‘।
-‘ হ্যাঁ নেই তোর মধ্যে চলে গেছি আমি। প্লিজ সাবা এভাবে আমাকে অবহেলা করিস না মরে যাবো। বিশ্বাস কর আমি কোন মেয়ের সাথে ফাহিমের মতো ইন্টিমেট হইনি। সুযোগ থাকলেও হইনি এতটা খারাপও নই আমি। যতোটা আছি তুই ভালো করে নে সাবা প্লিজ ‘।
আমি ওর সাথে ধস্তাধস্তি শুরু করে দেই কিন্তু ও আমাকে কিছুতেই নিজের থেকে দূরে যেতে দেয় না। প্রচন্ড জোর খাটিয়ে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে আর বলতে থাকে -‘আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারবো না সাবা প্লিজ একটা সুযোগ দে আমায় ‘।
সেদিনের পর নির্মলকে এড়িয়ে চলতে শুরু করি। ওর চোখ,মুখ দেখেই বুঝতে পারছিলাম ও ঠিক নেই। আমার ইগনোর সহ্য করতে পারছেনা। কিন্তু আমিও তো অসহায়। একদিকে আমার পরিবার অন্যদিকে ওর প্রতি কিছুটা ঘৃণাও কাজ করতো আমার। তাছাড়া পরিবারের সাথে যুদ্ধ করে শহড়ে এসে পড়াশোনা করছি। এরমধ্যে এসব সম্পর্কে জড়িয়ে গেলে পরিবার যদি জানতে পারে আমার পড়াশোনা মাঝপথে বন্ধ হয়ে যাবে। মায়ের ওপর অত্যাচার বাড়বে এবং বিয়ের জন্য চাপ আসবে। সব মিলিয়ে আসন্ন আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে ফেললাম। কিন্তু ভালোবাসা কে কি নিয়ন্ত্রণ করা যায়? যে মেয়েটা এক আকাশ স্বপ্ন নিয়ে প্রবল আত্মবিশ্বাস এবং আত্মমর্যাদা নিয়ে এই শহড়ের বুকে পা ফেলেছিলো। যার স্বপ্নের তালিকায় ছিলো শুধু পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়ানো। পরিবারের পাশে দাঁড়ানো তাঁর স্বপ্নের তালিকায় হুট করে জায়গা করে নিলো নির্মল নামক মানবটি৷ নিজের আত্মবিশ্বাস কে ভেঙে গুড়িয়ে দিলো নিজেরই মন। কি নির্মমতা হায়! নিজের মনকেও আজকাল বিশ্বাস করা যায় না হায়! যেদিন বুঝে গেলাম অদৃশ্য এক মায়ার জ্বালে আটকে পড়ে গেছি সেদিন থেকে মানতে শুরু করলাম “পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতকের নাম হচ্ছে আপনমন ” কিন্তু সেই বিশ্বাসঘাতকতার খবর জানতে দিলাম না কাউকে। বিশ্বাসঘাতকতার কথা যে কাউকে জানাতে নেই। এ ভীষণ লজ্জার কথা।
চলবে..
ভুলগুলো ধরিয়ে দেবেন শুধরে নেবো।
.