ওহে প্রিয় .
জান্নাতুল_নাঈমা
পর্ব_২২
রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো হ্যাভেন,
-‘ হাউ ডেয়ার ইউ ‘।
ভয়ে চুপসে গেলো আহি। জড়োসড়ো হয়ে বসে ভয়াতুর দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো হ্যাভেনের দিকে। দেড়বছর যাবৎ চেনে মানুষ টাকে। গলা উঁচু করে কথা বলার শাস্তিই যা ভয়ংকর হয় সেখানে তো আজ অনেক বড় দুঃসাহসিক কাজ করেছে। চোখ, মুখ খিঁচে দুহাতে শাড়ি খামচে ধরলো। আহির ভাবভঙ্গি দেখে দ্বিগুণ ক্ষেপে গেলো হ্যাভেন। কতো বড় স্পর্ধা এই মেয়ের একেতো তাঁকে আজ কিস করার মতো জঘন্য ভুলটা করেছে তাঁর ওপর ফোন ছুঁড়ে ফেলেছে। এই মেয়েকে তো আজ দেখেই ছাড়বে। যে ঠোঁট দিয়ে কিস করেছে সেই ঠোঁট আগুনে ঝলসে দেবে। যে হাতে ফোন কেঁড়ে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলেছে সেই হাত মুচড়ে দেবে। ক্রুদ্ধ হয়ে আহির ঘাড় চেপে ধরলো হ্যাভেন। ভয়ে বড় বড় করে তাকালো আহি। দুজনের চোখাচোখি হতেই আহি চোখ সরিয়ে নিলো হ্যাভেন বললো,
-‘ এই ভুলের শাস্তি কতোটা ভয়ানক হবে জানো তুমি ‘?
আঁতকে ওঠলো আহি। পরোক্ষণেই বিদ্যুৎ চমকানোর মতো করে চমকে ওঠলো। একি করছে সে ভয় কেনো পাচ্ছে? ভয় পেলে তো চলবে না। ভয় কে জয় করতে হবে। এই খ্যাপাটাকে জব্দ করার জন্য দ্বিগুণ খ্যাপা হতে হবে। তাছাড়া সে তো ভুল করেনি বরং সঠিক একটা কাজই করেছে আজ। আর সেই সঠিক টা এই উন্মাদটাকেও বোঝাতে হবে। নিজের ভিতর এক আকাশ সাহস জুগিয়ে চোখে, মুখে দুষ্টু হাসির রেখা ফুটিয়ে তুললো আহি। দুহাতে হ্যাভেনের গলা জরিয়ে আহ্লাদি স্বরে বলে ওঠলো,
-‘ এতো রেগে যাচ্ছেন কেনো? ঐ বজ্জাত মহিলা আপনাকে কেনো ফোন করবে? সে জানেনা আপনি আমার একমাএ স্বামী ‘?
বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলো হ্যাভেন। এই মেয়ে বলে কি? মাথাটা কি খারাপ হয়ে গেলো নাকি ভূত টূত ঘাড়ে চাপলো? এতো আহ্লাদ করে জরিয়ে ধরা, নিজের স্বামী বলা রূপসার প্রতি জেলাসি সব কিছু মিলিয়ে মাথা ঝিম ধরে গেলো হ্যাভেনের। নিশ্চয়ই এই মেয়ে পেটে পেটে কোন কুবুদ্ধি আঁটছে। ভাবামাএই দুহাতে আহির দুহাত বেশ শক্ত করে চেপে ধরেই ছাড়িয়ে দিলো। চিৎকার করে বলে ওঠলো,
-‘ সমস্যা কি তোমার এমন অস্বাভাবিক আচরণ করছো কেনো ‘? বলেই বিছানা ছেড়ে ওঠে পিছন মুখী হয়ে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকলো।
আহি দুহাতে নিজের মুখ চেপে ধরলো। যেনো তাঁর হাসির শব্দ হ্যাভেনের কান অবদি না পৌঁছায়। কোনরকমে হাসিটা থামিয়ে হাঁটু ভর করে করে এগিয়ে গিয়ে পিছন থেকে আবারো গলা জরিয়ে ধরলো। এবার হ্যাভেন নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে আহিকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে তাঁর দিকে ঘুরে চিৎকার করে বলে ওঠলো,
-‘ ডোন্ট টাচ মি। এই সমস্যা কি তোর? আমি বলছি আমার গা ঘেঁষাঘেঁষি করতে? এইসব বালের বিহেভ আমার সাথে একদম দেখাবিনা। আসল রূপ বের করছিস? শোন এই রূপ এতোদিন যেমন চাপা দিয়ে রাখছিলি সারাজীবন তাই করবি৷ একদম বেহায়াপনা দেখাতে আসবিনা ‘।
হ্যাভেন কথাগুলো বলতে বলতে শার্ট গায়ে চাপিয়ে রুম ছাড়তে উদ্যত হতেই আহিও চিৎকার করে ওঠলো,
-‘ মি. হ্যাভেন তালুকদার বউয়ের সাথে শুইতে ভালো লাগে অথচ বউকে ভালোবেসে বুকে জায়গা দিতে ভালো লাগেনা তাইনা। বউয়ের ভালোবাসাও করলার মতো তিতা লাগে তাইনা ‘?
থেমে গেলো হ্যাভেন। আহির আচরণে রাগ যতোটা না লাগছে তাঁর থেকেও বেশী ঘাবড়ে যাচ্ছে সে। এতোদিনের চেনা পরিচিত আহির সাথে এই আহির যেনো একটুও মিল খুঁজে পাচ্ছে না। হ্যাভেনের এ মূহর্তে হওয়া অনুভূতি আহির অনুভূতির থেকে ব্যাতিক্রম নয়। সেও এতো দিনের চেনা পরিচিত হ্যাভেনের সাথে আজকের হ্যাভেনকে মেলাতে পারছেনা। আশ্চর্য! বিয়ের পর থেকে যে ছেলেটা দিনের পর দিন রাতের পর রাত জোর জুলুম করে তাঁকে কাছে পেতে চেয়েছে আজ তাঁর কাছে স্বেচ্ছায় যাওয়াতে এতো রাগ?
-‘ লিসেন আমি আমার ইচ্ছে অনুযায়ী কাজ করি অন্য কারো ইচ্ছেতে কাজ এই হ্যাভেন করেনা ‘।
হাতে তুরি বাজিয়ে কথাটি বললো হ্যাভেন। আহি তাচ্ছিল্য হেসে বিছানা থেকে নেমে হ্যাভেনের মুখোমুখি দাঁড়ালো। দুহাত আড়াআড়ি ভাবে ভাজ করে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বললো,
-‘ এটা আপনার অফিসের কাজ না বা আপনার পলিটিক্যাল মিটিং না। আর আমিও আপনার অফিস কলিগ নই ‘।
-‘ বেড কলিগ তো ‘। বলেই বিদ্রুপের হাসি হাসলো হ্যাভেন।
মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো আহির। এর আগেও অসংখ্যবার এভাবে অপমানিত হয়েছে সে। কিন্তু আর না হ্যাভেনকে আর অপমান করার সুযোগ দেবে না সে। দুহাতে শার্টের কলার চেপে ধরে বললো,
-‘ অনেক হয়েছে আর না। টাকা ছড়ালে চাহিদা মেটানোর জন্য মেয়ের অভাব হবেনা আপনার মতো ছেলের জন্য। তবুও সেই পথ অবলম্বন না করে আমার মতো অতি সাধারণ মেয়েকে ঘরের বউ করেছেন। বউ যখন করেছেন যথার্থ মূল্যায়নও করতে শিখুন ‘।
-‘ বড্ড বেশীই সাহস বেড়েছে দেখছি ‘। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে কথাটি বললো হ্যাভেন।
আহি দু পায়ের গোড়ালি উঁচু করে হ্যাভেনের মুখোমুখি হয়ে চোখেতে চোখ মিলিয়ে শান্ত গলায় বললো,
-‘ এমপির বউ আমি এটুকু সাহস না থাকলে মানায় নাকি ‘ বলেই নিজের ওষ্ঠ দ্বারা হ্যাভেনের ওষ্ঠদ্বয়ে আলতো স্পর্শ করলো।
হ্যাভেনের শরীরে যেনো আগুন ধরিয়ে দিলো আহি। এমন একটা ভাব করে এক ধাক্কায় মেঝেতে ফেলে দিলো আহিকে । পড়ে গিয়ে ব্যাথায় আর্তনাদ করে ওঠলো আহি। সেদিকে হ্যাভেনের বিন্দু পরিমাণ ভ্রুক্ষেপও নেই। সে তাঁর মতো ভাষণ দিতে শুরু করলো,
-‘ একদম স্মার্ট সাজার চেষ্টা করবে না। এতোদিন যেভাবে ছিলে ঠিক সেভাবেই সাজিয়ে রাখো নিজেকে। বেশী উড়তে চাইলে ডানা কেটে দিব একদম। তোমার সাথে প্রেম প্রেম খেলা করার জন্য তোমাকে বিয়ে করে আনিনি । কেনো করেছি এটা নিশ্চয়ই এতোদিনে বোঝার আর বাকি নেই? তোমার প্রতি বিন্দু পরিমাণ ভালোবাসাও নেই তাই এইসব তামাসা নেক্সট যেনো করতে না দেখি ‘। বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
সারারাত আর ঘরে ফেরেনি হ্যাভেন। আহিও সমস্ত চিন্তা বাদ দিয়ে নিশ্চিন্ত মনে ঘুমিয়েছে। মাঠে যখন নেমেছে নব্বই মিনিটের আগে মাঠ সে কিছুতেই ছাড়বেনা।
__________
শাশুড়ী মায়ের সাথে হাতে হাতে কাজের পাশাপাশি বেশ গল্প করছে আহি। রুবিনা তালুকদার অভিভূত হয়ে গেলেন আজ ছেলের বউয়ের এমন প্রাণখোলা হাসি প্রাণখোলা কথাবার্তায়। আজ আহিকে দেখে মনে হচ্ছে কেউ তাঁকে জোর জবরদস্তি করে কিছু চাপিয়ে দিচ্ছে না বা দেয়নি। এই সংসার, সংসারের মানুষ গুলো তাঁর খুব আদরযত্ন এবং ভালোবাসার। শাশুড়ী মায়ের অনুভূতি বুঝতে পেরে আহি শাশুড়ী মায়ের কাঁধে শক্ত করে চেপে ধরে বললো,
-‘ দোয়া করুন মা আমি যেনো আপনাদের সবাইকে আপন করে নিতে পারি। আপনার ছেলেকে একটা সুস্থ, স্বাভাবিক জীবন উপহার দেওয়ার পাশাপাশি নিজেও সুস্থ, স্বাভাবিক জীবন উপভোগ করতে পারি ‘।
খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলো রুবিনা তালুকদার। আহির কপালে চুমু খেয়ে বললো,
-‘ সত্যি বলছো তুমি মা। মন থেকে তুমি আমার ছেলেকে গ্রহণ করেছো ‘?
-‘ হ্যাঁ মা কিন্তু আপনাদের সাহায্য আমার খুব প্রয়োজন ‘।
-‘ কি সাহায্য মা ‘?
-‘ আমি হ্যাভেনকে ডক্টর দেখাতে চাই। ভালো একজন সাইকিয়াট্রিস্ট দেখানো উচিত আপনার ছেলেকে। সাইকিয়াট্রিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী ভালো ট্রিটমেন্ট করিয়ে সুস্থ করে তুলতে চাই ওনাকে ‘।
-‘ কিন্তু হ্যাভেন কে কিভাবে রাজি করাবে? ও তো রাজি হবে না। তাছাড়া ওকে এসব বললে আরো দ্বিগুণ ক্ষেপে যাবে সন্দেহ করবে। ও কখনোই স্বীকার করবেই না যে ওর একটা প্রবলেম আছে। এর আগে আমরা অসংখ্য বার ওকে বুঝিয়েছি চেষ্টা করেছি লাভ হয়নি ‘।
-‘ এবার হবে আর এর জন্য বাবা আর হ্যারি,হিরার সাহায্য প্রয়োজন আমার ‘।
-‘ তুমি যদি পারো তাহলে আমরা সবদিক দিয়ে সাহায্য করবো তোমায় ‘।
আহি আর রুবিনা তালুকদার যখন নিজেদের মধ্যে কথোপকথনে ব্যাস্ত হ্যাভেন ডায়নিং টেবিলে বসে দুহাতের আঙুল দিয়ে টেবিল ঠকঠক করতে করতে গলা উঁচিয়ে বললো,
-‘ রান্না ঘরে মিটিং আর কতক্ষণ চলবে? সকালের খাবার কি আজ দুপুরে পাবো’?
-‘ আরে ব্রো আজ বেশীই খিদে পেয়েছে মনে হচ্ছে ‘?
বলেই হ্যাভেনের পাশের চেয়ারে বসলো হ্যারি।
তাঁর পাশের চেয়ারে বসলো হিরা। কিছু সময় বাদে হুমায়ুন তালুকদারও এসে গেলেন। আহি আর শাশুড়ী মা ও এসে সকলকে খাবার পরিবেশন করলেন। খাওয়া শেষে হ্যাভেন আহির আঁচলে হাত মুখ মুছার আগেই আজ আহি নিজের আঁচল দিয়ে হ্যাভেনের ঠোঁট মুছে হাতও মুছে দিতে লাগলো। সকলের চোখই বড় বড় হয়ে গেলো। হ্যারি, হিরা প্রথমত ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো দ্বিতীয়ত মাথা নিচু করে মিটিমিটি হাসতে লাগলো। কাজের মেয়েটা রান্নাঘরের সামনে দাঁড়িয়ে খিলখিল করে হাসতে লাগলো। হুমায়ুন তালুকদার ইতস্ততভাবে মাথা নিচু করে খাচ্ছে । হ্যাভেন আশ্চর্যের শেষ মাথায় গিয়ে ঠেকলো যেনো। চোখ রাঙিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বললো,
-‘ এসব কি অসভ্যতামি ‘। বলেই হাত ছিটকে সড়িয়ে নিলো।
-‘ বা’রে রোজ রোজ আপনি বউয়ের আঁচলে হাত মুখ মুছলে হয় সভ্যতামি আর একদিন আমি নিজ থেকে মুছিয়ে দিলেই হয়ে যায় অসভ্যতামি ‘?
চলবে..
কি লিখেছি নিজেও জানিনা। প্রচন্ড অসুস্থতার মধ্যেও এক হাজারের বেশী ওয়ার্ড টাইপিং করে ফেললাম। আমি জানি ভালো হয়নি তবুও সকলে অপেক্ষা করছে ভেবেই যেভাবে পারি সেভাবেই কিছু লাইন লিখেছি।
আমি খুব অসুস্থ আমাদের টাংগাইলে করোনার হার অনেক বেশী। আমাদের উপজেলায় কড়াভাবে লগডাউন চলছে। আমি সহ আমার বাড়িতে মোট ছয় জন কিছুদিন যাবৎ মারাত্মক জ্বর,ঠান্ডায় ভুগছি। আপনারা সকলেই দোয়া করবেন আমাদের জন্য। সম্পূর্ণ সুস্থ না হয়ে ভালোভাবে গল্পটি লিখা সম্ভব হবে না। মাথায় কিচ্ছু কাজ করেনা। সকলেই গল্প চায় ইনবক্সে কিন্তু আমি কতোটা কঠিন পরিস্থিতি তে রয়েছি তা আমার পরিবার এবং আমিই জানি। আজকে সবাইকে জানিয়ে দিলাম আশা করি সকলেই বুঝবেন। আল্লাহ তায়ালা বাঁচিয়ে রাখলে এবং সুস্থতা দান করলে ইনশাআল্লাহ গল্প রেগুলার কন্টিনিউ করবো।