তুমিঅন্য কারোসঙ্গে বেঁধো_ঘর (২৬)
অফিসে গিয়ে তামিম জানতে পারলো তাকে উপরের ফ্লোরে শিফট করে দেওয়া হয়েছে। শুনে তামিম কিছুটা আশাহত হলো। এতো দিন তো নবনীকে দেখতে পেতো,আজ থেকে তা আর সম্ভব হবে না।
তামিমের প্রচন্ড রাগ হলো।
ইচ্ছে করলো ছুটে গিয়ে মেঘের গলা টি/পে ধরতে।তামিম বুঝতে পারছে মেঘ কেনো এই কাজ করেছে।তামিম যাতে নবনীকে যখন তখন দেখতে না পারে তার জন্য মেঘ এই ব্যবস্থা নিয়েছে।
প্রচন্ড আক্রোশে তামিম চেয়ারে লা/থি মারলো।
তারপর সোজা মেঘের কেবিনের দিকে গেলো। গিয়ে দেখে মেঘ এখনো আসে নি অফিসে।নবনী পিসি’তে মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে।
তামিম নবনীর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
নবনীর খোঁপায় বেলীফুলের মালা জড়ানো, হাতে সাদা রেশমি চুড়ি,চোখে কাজল।কালো সুতির একটা নরমাল ড্রেসে নবনীকে মনে হচ্ছে অপ্সরা। তামিমের বুকে জ্বলুনি শুরু হলো।
খাঁ খাঁ মরুভূমির মতো তামিমের বুকের ভেতর ধুলোর ঝড় উঠলো যেনো।তপ্ত রোদে মরুভূমির বালু যেমন উত্তপ্ত হয়ে থাকে,তেমনি তামিমের বুকের ভেতর উত্তপ্ত হয়ে আছে।
বুকের ভেতর যেনো এক পৃথিবী শূন্যতা।এই নবনী তার ছিলো, অথচ আজ আর কেউ না।একসময় এই নবনীর উপর তামিমের ১৬ আনা অধিকার ছিলো অথচ আজ এর দিকে এক দন্ড প্রান ভরে তাকাতে ও বারন।
এই নবনীর জন্য কি-না একটা প্রতিষ্ঠানের মালিক উন্মাদ হয়ে ঘুরছে!
তামিম মানতে পারছে না এটা।
কেনো এতোদিন একে তামিম চিনতে পারলো না,কেনো এতো দেরি হলো তার?
কেনো অন্য কেউ এখন নবনীকে ভালোবাসে?
তামিম কিছুতেই এটা মেনে নিতে পারছে না।নবনী তামিমের না হোক,তাতে তামিমের সমস্যা নেই কিন্তু তামিম এটা মানতে পারছে না যে নবনী অন্য কারো হবে।অন্য কারো সঙ্গে ঘর বাঁধবে এটা ভাবলেই তামিমের মাথায় আগুন ধরে যায়।
নবনী মাথা তুলে তামিমের দিকে তাকালো। তারপর বললো, “কিছু বলবেন?স্যার তো এখনো আসেন নি,কোনো প্রবলেম থাকলে আমাকে বলুন,আমি স্যারকে জানিয়ে দিবো।”
তামিমের রাগ ক্ষোভে রূপ নিলো।স্বাভাবিক চিন্তাশক্তি লোপ পেলো।স্থান কাল পাত্র ভুলে দাঁত কিড়মিড়িয়ে বললো, “খুব ভালো আছো এখন?বড় স্যারকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়েছ,স্যারকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাচ্ছ, ভীষণ সুখে আছো এখন তাই না?এসব কাহিনি করার জন্যই আমাকে ছেড়ে যাবার জন্য এতো উতলা হয়ে গেছো?”
নবনী চোখ মুখ শক্ত করে বললো, “ডোন্ট ক্রস ইওর লিমিট। “
তামিম টেবিলে থাপ্পড় মেরে বললো, “লিমিট ক্রস করলে কি করবি তুই আমাকে?তোরে আমি ভয় পাই না-কি?
শোন,এতো আকাশে উড়িস না।স্যার কে আমি বলে দিয়েছি তুই যে ডিভোর্সি, আমি যে তোরে দুই লাথি দিয়ে আমার জীবন থেকে বের করে দিয়েছি স্যার জেনে গেছে।তাই এতো ভাব মারিস না আমার সাথে। “
নবনীর সহ্য হলো না। এতো দিন নিরবে সহ্য করে যাওয়া সব আক্রোশ এবার বিদ্রোহ জানালো,কষে একটা চড় দিলো তামিমের গালে।পুরো অফিসের নিস্তব্ধতা যেনো খানখান করে ভেঙে পড়লো।
হিসহিসিয়ে নবনী বললো, “এটা আমার কর্মক্ষেত্র,এখানে আমি যেমন কাজ করতে এসেছি, আপনি ও কাজ করতে এসেছেন।আমার ব্যক্তিগত লাইফ নিয়ে কথা বলার রাইট আমি আপনাকে দিই নি।তাই নেক্সট টাইম সতর্কতা অবলম্বন করে কথা বলবেন।”
চড় খেয়ে তামিমের মাথা ঘুরে গেলো যেনো।
এই সেই নবনী!
নরম,কোমল,ভীতু!
সাত চড়ে যার রা ছিলো না,এই সেই নবনী!
শত আঘাতে ও যে উহ শব্দটা উচ্চারণ করতো না,এই কি সেই নবনী?
এতো তেজ এর কোথা থেকে এলো?
এই অগ্নিমূর্তি তো তামিম আগে দেখে নি।
তামিম আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ৬ বছরের চাকরি জীবনে এই প্রথম এরকম হলো তামিমের সাথে।
ধীর পায়ে তামিম অফিস থেকে বের হয়ে গেলো।
মেঘ অফিসে এসে দেখে নবনী চোখ মুখ শক্ত করে বসে আছে। ইন্টারকমে মেঘ নবনীকে কেবিনে যেতে বললো।
নবনী কেবিনে গিয়ে চেয়ারে ধপ করে বসে পড়লো। মেঘ ভীষণ মনোযোগ দিয়ে নবনীকে দেখতে লাগলো। তারপর বললো, “কি হয়েছে?”
নবনী মাথা নিচু করে রাখলো।মেঘের কোমল স্বর কঠোর হয়ে গেলো। আবারও জিজ্ঞেস করলো, “কি হয়েছে নবনী, সত্যি করে বলো।”
নবনী মাথা নিচু করে বললো, “তামিম সাহেব আমার সাথে অভদ্রতা করেছেন,এজন্য আমি ওনাকে একটা থাপ্পড় মেরেছি। “
মেঘ ক্ষুব্ধ হয়ে বললো,”ওকে আমি…. “
নবনী আর কিছু বলতে দিলো না,মেঘকে থামিয়ে দিয়ে বললো, “উনি আমার সাথে মিসবিহেভ করেছেন,তার জন্য আমি প্রতিবাদ করেছি।আমি আশা করছি আপনি এটা নিয়ে একটা কথাও বলবেন না,এটা কে পার্সোনালি নিবেন না।এই টপিক এখানেই সমাপ্ত।আপনি যদি এটা কেন্দ্র করে কোনো একশান নেন,তবে আমি কষ্ট পাবো “
মেঘ ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করলো।তারপর বললো, “তুমি কষ্ট পাবে এমন কাজ আমার জান থাকতে কখনো করবোনা আমি।”
নবনী বের হয়ে গেলো মেঘের কেবিন থেকে।মেঘ চেয়ারে বসে আপনমনে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো, “কোথায় ভেবেছি আজকে ফার্স্ট দেখাতে একটু ভালো করে দুজনে কথা বলবো,তা না উল্টো তৃতীয় ব্যক্তির জন্য এরকম একটা সুন্দর সময় নষ্ট হয়ে গেলো।শুধু তুমি কষ্ট পাবে বলেছ বলে এই মেঘ থেমে গেছে,নয়তো কুত্তার মতো মার খেতো ওই তামিম আমার হাতে।”
লাঞ্চের সময় নিতু জানতে পারলো তামিমকে নবনী থাপ্পড় দিয়েছে। কথাটা শুনে নিতু চমকালো ভীষণভাবে।মনের ভেতর যেই সন্দেহ দানা বেঁধেছে, এই কথা শুনে তা যেনো আজ চারাগাছে রূপ নিয়েছে।অশান্ত মনকে শান্ত করতে অফিস থেকে ফিরে নিতু সোজা বাবার বাসায় গেলো।
নিতুর বাবা রিটায়ার্ড বরকত হোসেন একটা চেয়ারে বসে মেয়ের দিকে অপলক তাকিয়ে রইলেন।তার ছোট্ট মেয়ে নিতু,পুতুলের মতো দেখতে মেয়েটাকে আজ কেমন বিবর্ণ লাগছে।ফ্যাকাসে মুখখানা দেখে মনে হচ্ছে সারা শরীরে বুঝি এক ফোঁটা রক্তবিন্দু ও নেই।
নিতু বাবার পায়ের কাছে বসে রইলো খানিকটা সময়। নিতুর মা রেবেকা টেবিলে খাবার দিতে দিতে বললেন,”তোর কি কোনো সমস্যা চলছে নিতু?তোকে এরকম লাগছে কেনো?”
নিতু মলিন হেসে জবাব দিলো, “কতোদিন তোমাদের দেখি না মা,তাই চলে আসলাম।তোমাদের জন্য মন কেমন করছে।”
রেবেকা বেগম গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বললেন,”তা হলে তো আর ভাবনার কিছু নেই।তবে নিতু শোন,একটা কথা মাথায় রাখিস,বিয়ের আগের জীবন আর বিয়ের পরের জীবন দুটো আলাদা। বিয়ের আগে যেসব স্বভাব ছিলো সেসবে পরিবর্তন আনার চেষ্টা কর।সবসময় প্রতিবাদী মনোভাব থাকা ভালো নয়।তুই আমার মেয়ে তো,আমি তো জানি তোকে।অন্যায়ের বিরুদ্ধে কিভাবে প্রতিবাদ করিস নিজের বাবার মতো। রিতুর মতো ধৈর্যশালিনী হতে চেষ্টা কর। সংসার জীবনে নানা আঘাত আসে মানুষের। সবকিছুতে উগ্রভাব দেখাস না।”
নিতু মায়ের দিকে তাকিয়ে হাসলো।বরকত সাহেব রেগে বললেন,”তোমার মতো শিক্ষিত মানুষ যদি এভাবে অন্যায়কে সাপোর্ট করে যায় তাহলে এই সমাজ তো রসাতলে যাবে।না না,আমার মেয়েকে আমি যেই আদর্শ দিয়ে গড়ে তুলেছি,তা থেকে আমার মেয়ে এক চুল ও নড়বে না।নিতু মা আমার,আমি জানি না তোর কি হয়েছে। তবে যাই হোক,মনে রাখিস তোর বাবা তোর সাথে আছে।তোর উপর বাবার সম্পূর্ণ ভরসা আছে।তুই কখনো ভুল করবি না।নিজের মনকে শান্ত কর মা।তোকে ভীষণ অস্থির লাগছে।”
রেবেকা বেগম টেবিলের উপর শব্দ করে প্লেট বাটি রাখতে লাগলেন।নিতু বুঝতে পারলো মা রেগে গেছেন।বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিতু বাসায় চলে এলো।
আজ বহুদিন পর সামিম বাসায় এসেছে। আগামীকাল লুবনাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে,তাহেরা বেগম কল করে কাঁদাকাটি শুরু করায় আসতে বাধ্য হলো ।এবার অবশ্য চেনাজানা থেকে সম্বন্ধ এসেছে।দিশার চাচাতো ভাইয়ের জন্য সম্বন্ধ এসেছে।শুনেই তো তাহেরা বেগম আনন্দে বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছেন যেনো।
এতো বড় ঘরের বউ হবে তার মেয়ে!কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না তার।
সামিম নানাভাবে মা’কে বুঝানোর চেষ্টা করছে কিন্তু তাহেরা বেগম এসব শুনতে ও চাচ্ছেন না।তিনি শুধু এই স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছেন যে শহরে ছেলের বাবার দুটো ৬ তলা বাড়ি আছে,ছেলেরা দুই ভাই মাত্র।
ছেলের আগে দুটো বিয়ে হয়েছে এই ব্যাপারটা ও যেনো দুটো ৬ তলা বাড়ির সামনে তুচ্ছ হয়ে গেলো। সামিম দিশার চাচাতো ভাই রাকিবের সম্পর্কে সব খোঁজ খবর নিয়েছে। এই ছেলেটা একেবারে বাজে চরিত্রের। বহু নারীতে আসক্ত,নেশায় আসক্ত।৩ বার রিহ্যাবে ও ছিলো। কিন্তু ওকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা যায় নি।
সামিম যতোবার মা’কে এসব বলতে যায় তাহেরা বেগম ততবারই এড়িয়ে গিয়ে বলেন,”ঘরে একটা বউ গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে।এই বয়সে সব ছেলেদের এরকম একটু আধটু দোষ থাকে।আর বড়লোকের ছেলেমেয়েরা একটু এরকমই হয়।এতে অসুবিধা নেই।”
সামিম অধৈর্য হয়ে গেলো মায়ের এসব শুনে।চিৎকার করে বললো, “তোমার এই লোভের জন্য আমাদের সব ভাইবোনের জীবন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মা।আমরা কেউই সুখী না।বড় ভাইয়ের আগে আমাকে বিয়ে করিয়েছ শুধুমাত্র নিজের লোভের বশে।দিশার বাবা ধনী বলে। অথচ কখনো দিশার সাথে আমার সম্পর্ক কেমন তা জানতে চাও নি।স্বামী স্ত্রী হয়েও আমরা দুজন দুই মেরুর বাসিন্দা। দিশা আজ এই পার্টি,কাল ওই পার্টি করে দিন কাটায়।তুমি সোনামুখ করে তা মেনে নাও,কেনো?
শুধু দিশার বাবার টাকা আছে,বড় ঘরের মেয়ে দিশা এই জন্য। আমি এটাই ভেবে পাচ্ছি না,দিশার বাবার টাকাপয়সা থাকলে তোমার আমার কি লাভ হবে?
আমাদেরকে কি ওখানে থেকে কয়েক কোটি টাকা দিয়ে দিবে?
না-কি ওসব আমাদের কোনো কাজে আসবে?
এই সহজ কথাটা তোমার মাথায় ঢোকে না মা।তোমার এই কাজের জন্য আমার বাবা আমার উপর অভিমান করে ছিলেন।বাবার কাছে আমি ক্ষমা চাইতে পারি নি। “
তাহেরা বেগম রেগে গিয়ে বললেন,”খবরদার, আমার সামনে চিৎকার করে কথা বলবি না।আমার মেয়ের ভালো আমি তোর চাইতে ভালো বুঝি।গায়ে পড়ে উপদেশ দেয়ার চেষ্টা করবি না।মেয়েকে বড় ঘুবিয়ে দিবো তা তোর সহ্য হচ্ছে না?”
সামিম পরাজিত সৈনিকের মতো সোফায় হেলান দিয়ে বসে পড়লো।পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ ছেলেটা ও চায় তার বোনের একটা ভালো জায়গায় বিয়ে হোক,বোন সুকজে থাকুক।
নিতু ফিরে দেখে সামিম বসে আছে। কেউ না বলে দিলেও নিতু বুঝতে পারলো, এ তামিমের ছোট ভাই সামিম।দুই ভাইয়ের চেহারায় অনেকটা মিল রয়েছে। নিতু এগিয়ে গিয়ে সালাম দিলো সামিমকে।সামিম হকচকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,”আপনি কে?”
নিতু হেসে বললো, “আমি নিতু।”
সামিম কিছুটা বিরক্ত হলো নিতুর নাম শুনে।এই সেই মেয়ে যার জন্য তামিম নবনীকে ছেড়ে দিয়েছে!
এই মেয়েটাই নবনীর সংসার ভেঙ্গে দিয়েছে মনে হতেই সামিমের ভ্রু কুঁচকে গেলো।
নিতু হেসে বললো, “আপনি মনে হয় আমাকে এখানে এক্সপেক্ট করেন নি,অথবা আমাকে দেখে বিরক্ত হচ্ছেন।খাবার খেয়েছেন কি?চা কফি কিছু খাবেন?
কিছু খেতে হলে আমাকে ডাকবেন।আমি করে দিবো।”
সামিম কোনো কথা বললো না।নিতু নিজের রুমে চলে গেলো। তাহেরা বেগম নিতুর রুমে গিয়ে আদেশের সুরে বললো, “কাল অফিসে যাবে না,১১ টার দিকে বাসায় গেস্ট আসবে লুবনাকে দেখতে।ওদের জন্য সব রকম খাবারের ব্যবস্থা করবে সকালে উঠেই।ভাত,পোলাও, চিকেন,বিফ,মাটন,ফিস,স্নেক্স সব কিছু চাই আমার। “
নিতু হাই তুলতে তুলতে বললো, “আমি রোবট নই,আপনার মেয়েকে দেখতে আসবে তার ব্যবস্থা আপনি করবেন।বড় ভাইয়ের বউ হিসেবে আমি থাকতে পারি উপস্থিত, কিন্তু তাকে অন্যভাবে নেওয়ার সাহস করবেন না।আমি বাসার কাজের মহিলা নই।বড়জোর আপনাকে একটু হেল্প করতে পারি গেস্টদের খাবার সার্ভ করতে।আপনার বাড়ির ছোট বউ যদি সারাদিন অন্য ছেলেদের সাথে সময় কাটিয়ে, সংসারে মনোযোগ না দিয়ে, গায়ে বাতাস লাগিয়ে ঘুরতে পারে তাহলে আমি ও তা পারি।আমি তবু তা করি না কেননা আমি এই শিক্ষা পাই নি আমার পরিবার থেকে।তাই বলে আবার আমার ভদ্রতাকে আমার দুর্বলতা ভাববেন না।আমার উপর কোনো কিছু চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবেন না।”
তাহেরা বেগম চাপা ক্রোধ নিয়ে নিতুর রুমে থেকে বের হয়ে গেলো। বসার রমে বসে সামিম সবটা শুনতে পেলো। এবং শুনেই এক অদ্ভুত প্রশান্তিতে সামিমের মন ভরে গেলো। সামিমের একটুও খারাপ লাগলো না তার মায়ের সাথে বড় ভাইয়ের বউ এরকম ব্যবহার করায়।বরং আনন্দিত হলো এই ভেবে যে এতো দিনে একজন উপযুক্ত জবাব দিয়েছে।
তবে আফসোস হলো নবনীর জন্য,নবনী যদি এভাবে সাহস করে রুখে দাঁড়াত তবে হয়তো এভাবে সংসারে ভাঙ্গন দেখা দিতো না,এতো তাড়াতাড়ি বাবাকে হারাতো না সামিম।
বাবার সাথে যে এখনো অনেক কথা বলা বাকি ছিলো সামিমের।আর কি এই জনমে বাবাকে তা বলা হবে?
আজীবনের জন্য এতিম উপাধি দিয়ে বাবা হারিয়ে গেলো এক বুক অভিমান নিয়ে।সামিম তো পারলো না বাবার সেই অভিমান ভাঙ্গাতে,সেই চেষ্টা করবার আগেই যে বাবা ফাঁকি দিয়ে চলে গেলো।
তাহেরা বেগম নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লেন।সামিম সোফাতেই শুয়ে পড়লো। লুবনা নিজের রুমে রূপচর্চা করছে।দিশা মেসেঞ্জারে ব্যস্ত। এতোদিন পর স্বামী বাসায় এসেছে অথচ তাতে দিশার কোনো মাথাব্যথা নেই।
ফ্লোরে বসে অপেক্ষার প্রহর গুনতে লাগলো নিতু। বারবার নিতুর মনে হতে লাগলো এই নবনী -ই সেই মেয়ে যার সাথে তামিমের বাবা তামিমের বিয়ে দিতে চেয়েছিলো।
বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে নিতু,ঘড়ির কাঁটা ১ টার ঘরে পৌঁছে গেছে অথচ তামিম এখনো বাসায় আসে নি।নিতুর চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। বাহিরে তাকে যতোই শক্ত মনে হয়, ভেতর থেকে যে সে ততই ভঙ্গুর তা কি কেউ জানে!
ভালোবাসার কি অপরিসীম শক্তি!একজন কঠোর হৃদয়ের মানুষের মনকেও ভেঙে চুরমার করে দেয় অনায়াসে।
নবনী মেঘের সাথে কথা বলতে গিয়ে বারবার লজ্জায় লাল নীল বেগুনি হয়ে যাচ্ছে। কিছুই বলতে পারছে না নবনী। অবশ্য মেঘ নবনীকে কথা বলার সুযোগ ও দিচ্ছে না।নিজেই সব বলে যাচ্ছে। যেনো কতো বছর ধরে মেঘ কারো সাথে কথা বলতে পারে নি,তাই জমানো সব কথা প্রকাশ করছে নবনীর কাছে।
অথচ ব্যাপারটা হলো,মেঘ নবনীকে ফ্রি হবার টাইম দিচ্ছে।শুরুতেই যদি নবনীকে বারবার কথা বলো না কেনো এসব বলে তবে নবনী বিব্রত হবে বারবার। এর চাইতে ভালো নবনী আগে ফ্রি হয়ে নিক,তারপর নিজ থেকেই কথা বলবে। এরকম হু হা করবে না।
অবশ্য এই হু হা শুনতেও মেঘের ভীষণ ভালো লাগছে।
ভালোবাসার মানুষের সবকিছুই কি সবার এতো ভালো লাগে!
এতো মধুর মনে হয়! ভালোবাসা ব্যাপারটা এতো বেশি মধুর কেনো!
চলবে…….
রাজিয়া রহমান