অন্যরকম তুমি ২
পর্ব:৫
তানিশা সুলতানা
সাদি পরির সামনে হাঁটু মুরে বসে। পায়ের থেকে মাটি ঝেড়ে দেয়। একটুখানি মাটি লেগেছে পায়ে।
ছোঁয়া মুখ বাঁকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পায়ে সে ভীষণ চোট পেয়েছে কিন্তু স্বীকার করতে নারাজ।
সাদি পরিকে শক্ত গলায় বলে
“জুতো কোথায় তোমার? এখানে কেনো এসেছো?
পরি কাঁদো কাঁদো গলায় বলে
” মাম্মা এনেছে।
ছোঁয়া চোখ বড়বড় করে তাকায়। বাপের মতোই মেয়ে। ঠাসস করে মিথ্যে বলে দিলো? অবশ্য বলবেই না কেনো? বাঘের মতো যেমন গর্জন করছে। যে কেউ ভয় পেয়ে যাবে।
ছোঁয়া দু পা এগিয়ে এসে বলে
“জুতো ছাড়া এসেছে বেশ করেছে। আপনার কি?
সাদি দাঁতে দাঁত চেপে তাকায় ছোঁয়ার দিকে।
” মুখে মুখে তর্ক করা পছন্দ না আমার।
“বাঘের মতো গর্জন করা আমারও পছন্দ না। আপনার বিবাহিত বউ লাগি আমি। আমার সাথে নীম পাতার মতো কথা বলা চলবে না। মুখে খানিকটা চিনি পুরে তারপর কথা বলতে আসবেন।
সাদি শক্ত চোখে তাকিয়ে থাকে। মেয়েটার সাহস অনেকটাই বেশি। নাহলে এভাবে কথা বলতে পারতো?
পরি যেনো একটু সাহস পেয়েছে। সে তার ভয়ে সিঁটকে রাখা মুখটাতে একটু হাসির রেখা টেনেছে।
” এই মেয়ে সরো সামনে থেকে।
ছোঁয়া আরও একটু এগিয়ে যায়। সাদির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে
“আমার নাম ছোঁয়া। ছ ও কারের ছো সাথে চন্দ্রবিন্দু য় আকারের য়া মোটমাট হলো ছোঁয়া। আন্ডারস্ট্যান্ড?
সাদি নাক সিঁটকিয়ে বলে
” সাট আপ
“আপনি সাট আপ সাদু
” সাদু কি? ভদ্রতা শিখো নি? পড়ালেখা করো নি?
“ওহহ সরি সাদু বেবি।
সাদি দাঁত কটমট করে। আর কিছু বলে না। এই মেয়েটা জাস্ট ইম্পসিবল। এর সাথে কথা বলা সম্ভবই না।
সাদি কুকুর বিড়ালের দিকে তাকায়।
” মুন্নি তিন্নি ফলো মি
বলেই সে হাঁটতে থাকে। আর কুকুর বিড়াল দুটোও পেছন পেছন আসতে থাকে। ছোঁয়া কোমরে হাত দিয়ে তাকিয়ে থাকে।
“হাই আল্লাহ
এ কোন অদ্ভুত প্রাণীর সাথে জুড়ি বাঁধলা? এর সাথে সংসার করবো কিভাবে? এ যে আস্ত একটা করলার পেটের করলা।
এই জল্লাদ শাশুড়ী আর জল্লাদ বরের সাথে আমি থাকবো কি করে?
বিকেলে ছোঁয়া বেলকানিতে বসেছিলো। বাড়ির জন্য মন কেমন করছে। তখন ধুপধাপ পা ফেলে সাবিনা চলে আসে। তার হাতে কিছু ব্যাগ। সে গুলো ছোঁয়ার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে
” এই মেয়ে
এই বাড়ির বউরা শাড়ি পড়ে। এই সব ঢংয়ের জামা পড়ে না। যাও এসব পাল্টে শাড়ি পড়ে এসো। আর তারপর রান্না করবে।
ছোঁয়া শাশুড়ীর দিকে হতাশার দৃষ্টিতে তাকায়।
“আন্টি ধমক না দিলে একটা কথা বলতাম।
সাবিনা শক্ত চোখে তাকিয়ে থাকে। নিরবতা সম্মতির লক্ষণ ভেবে ছোঁয়া বলতে শুরু করে
” নতুন নতুন বিয়ে করে এই বাড়িতে আসার পরে আপনার শাশুড়ী আপনার সাথে এমন করেছিলো তাই না?
তাই এখন আমার ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছেন?
সাবিনা কিছু বলবে তার আগেই ছোঁয়া সাবিনার হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে এক দৌড় দেয়।
সাবিবা বিরবির করে বলে
“বড্ড ধরিবাজ মেয়ে।
তনু দরজা আটকে কিছু একটা করছে। ছোঁয়া নক করার সাহস পায় নি। শেষমেশ বাধ্য হয়ে চলে যায় সাদির রুমে।
দরজা ভিড়ানো ছিলো। ছোঁয়া সাবধানে পা ফেলে ঢুকে পড়ে। কেউ নেই রুমে। বুকে হাত দিয়ে শ্বাস টানে ছোঁয়া।
কিন্তু তখনই কানে আওয়াজ ভেসে আসে। কোথায় থেকে আসছে?
মনে হচ্ছে পরি হাসছে।
কোথায় পরি?
এদিক ওদিক খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ চোখ পড়ে খাটের পাশে। ওইখানে একটা দরজা আছে মনে হচ্ছে।
ছোঁয়া আস্তে আস্তে পা ফেলে ওইখানে যায়। হালকা ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলে। আর দেখতে পায় সাদি রান্না করছে। মুন্নি তিন্নি খাবার খাচ্ছে। আর পরিকে বসিয়েছে ছোট্ট বাথটাবে। সে একা একাই গোছল করছে।
ছোঁয়া মুখ বাঁকায়।
এই লোকটা কতো যে ঢং জানে।
সেদিকে পাত্তা না দিয়ে ছোঁয়া দরজা লক করে দেয়। যাতে ওই রুম থেকে এইরুমে না আসতে পারে। তারপর আরামসে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।
গোছল সেরে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে শাড়ি পড়তে থাকে ছোঁয়া। শাশুড়ী সুন্দর সুন্দর শাড়ি দিয়েছে। সাথে ম্যাচিং ব্লাউজ। ছোঁয়া সাদা মনে একটাই প্রশ্ন শাশুড়ী মাপ জানলো কি করে? এইটা জিজ্ঞেস করলে জল্লাদ শাশুড়ী ছোঁয়াকে তাড়িয়েই ছাড়বে।
তাই প্রশ্ন মনের মধ্যেই রেখে শাড়ি পরায় মন দেয়।
শাড়িটা ভালোই পড়তে জানে ছোঁয়া। ছোটবেলা থেকেই মায়ের শাড়ি পড়ে অভ্যস্ত সে। শাড়ি পরতে ভীষণ ভালো লাগে তার।
শাড়ি পড়া শেষে দরজা খুলে দেয়। আবার উঁকি দিয়ে দেখতে যায় ভেতরে কি হচ্ছে সাথে সাথে সাদির পেটে গুঁতো খায় ছোঁয়া। তাড়াহুরো করে দাঁড়িয়ে যায়। সাদি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।
ছোঁয়া শুকনো ঢোক গিলে বলে
“আমি আসলে দেখতে চাচ্ছিলাম পরি কি করছে। আর কোনো কারণ নেই। আমি একদমই দেখতে চাচ্ছিলাম না ভেতরে কি হচ্ছে।
আমার আবার অন্যের ওপর নজর রাখার অভ্যাস নাই সাদু বেবি
সাদি ফোঁস করে শ্বাস টানে৷
তার লম্বা হাতটা এগিয়ে ছোঁয়ার কান টেনে ধরে।
ছোঁয়া ব্যাথা পায়
” নেক্সট টাইম সাদু বেবি বললে কান টেনে ছিঁড়ে দিবো।
বলেই ছেড়ে দেয়। ছোঁয়া কান ডলে তাকায় সাদির দিকে।
ভেংচি কেটে খানিকটা দূরে গিয়ে আবারও পেছন ফিরে তাকিয়ে বলে
“সাদু বেবি
বলেই এক দৌড় দেয়।
পরি খিলখিল করে হেসে ওঠে। মুন্নি তিন্নি লেজ নাড়াতে থাকে। যেনো ওরাও মজা পেয়েছে।
সাদি নাক চুলকায়
” মেয়েটার শিক্ষার অভাব।
ছোঁয়া কান ডলতে ডলতে রান্না ঘরে যায়। সাবিনা দাঁড়িয়ে আছে। ছোঁয়া যেতেই বলে
“এতোক্ষন লাগে? কখন রান্না করবে কখন খাবে সবাই?
ছোঁয়া ভাতের হাড়ি হাতে নিয়ে বলে
” আপনার ছেলেই তো আসতে দিচ্ছিলো না। কানটা লাল করে দিলো আমার।
সাবিনা কেঁশে ওঠে। ছোঁয়া পাত্তা দেয় না
“দাঁড়িয়েই তো ছিলেন একটু তরকারি গুলো কেটে দিলেও পারতেন।
” এই মেয়ে বেশি কথা বলবা না একদম।
“ঠিক আছে। শেষ একটাই কথা বলছি আমার রান্না আমি খেতে পারি না। আপনারা পারবেন কি না জানি না।
সাবিনা কথা না বলে চলে যায়। ছোঁয়া ভেংচি কাটে
” এইরকম জামাই আর এই রকম শাশুড়ী যেনো আল্লাহ কারো কপালে না রাখে। জীবনটা ঝালাপালা।
চলবে