#পঞ্চত্রিংশ #Yasira_Abisha (#Fatha)
বাবা আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তুমি রাজি কি না আমি জানতে চাই।
– জ্বি আংকেল?
– আমি চাচ্ছি আজকেই তোমার আর রুহির বিয়েটা দিয়ে দিতে।
– কেনো আংকেল?
– আজকের দিনটা ভালো
(সোবহান সাহেব আর মেঘা ও তার মায়ের কথাটা ইরাদকে বললো না, যেনো কোনো রকম বাজে প্রভাব না পড়ে এই ব্যাপাটায় ইরাদ ও রুহির সম্পর্কের ওপরে)
-ইরাদ রুহির দিকে তাকালো, রুহির চোখ দুটো যেনো ইরাদকে বলছে
– প্লিজ মানা করবেন না। অনেক তো হলো আর দূরে না থাকি এবার এক হয়ে যাই আমরা?
রুহির সম্মতি থাকা স্বত্তেও ইরাদ জিজ্ঞেস করলো
– আংকেল রুহির বাবা? আন্টি?( সোবহান সাহেবের স্ত্রী)
– সমস্যা নেই আমি তাদের জানিয়েছিলাম, বিয়েটা হয়ে গেলে একটা সারপ্রাইজ পাবে।
সোবহান সাহেব কথাটা বলে এক গাল হাসলেন।
রুহি মাটির দিকে তাকিয়ে আছে নিচু হয়ে কোনো কথা বলছে না।
ইরাদ সোবহান সাহেবের উত্তর শোনা মাত্রই বললো,
– আমি রাজি আংকেল
ইরাদ এক মুহুর্ত আর অপেক্ষা করলো না উত্তর দিতে।
এবার রুহির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– মা তুমি কি বলো? রাজি থাকলে আজকে আমরা শুভ কাজটা সেড়ে ফেলি?
– ঠিক আছে পাপা।
ইরাদের উত্তরটা শোনার পর থেকে রুহির যেনো একটা শান্তি এলো মনের ভিতর।
ইরাদ রুহি রাজি হওয়ার সাথে সাথেই ঘরে কাজী সাহেব ডেকে আনালেন সোবহান সাহেব।
বাইরে বেশ কিছুক্ষন ধরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পরছে, আবহাওয়াটা খুব স্নিগ্ধ সুষমায় ভরা রুহির খুব ভয় হচ্ছিলো, আজকের এই প্রতিক্ষিত দিনটা চলে এসেছে। আজকে রুহি আসলেই ইরাদের বউ হতে যাচ্ছে। যেই মানুষটাকে ভেবে রুহির দিন রাত কাটতো আজীবন আজকে সেই মানুষটা রুহির হতে যাচ্ছে। সারাটা জীবন যাকে পাওয়ার জন্য রুহির মনটা অস্থির থাকতো আজকে সে রুহির জীবনের এমন একটা বন্ধন হয়ে যাচ্ছে যার কোনো তুলনা হয় না।
আর এদিকে ইরাদ ভাবছে ও ঠিক মতো রুহির দ্বায়িত্ব নিতে পারবে তো? মেয়েটা ওকে যতটা ভালোবেসে কাছে আসছে সবটা ভালোবাসা সারাটা জীবন রুহিকে দিয়ে নিজের করে রাখতে পারবে তো? কারণ ইরাদের জীবনে এখন রুহি ছাড়া আর কোনো বাচার অবলম্বন নেই। এই মেয়েটা ওর সব কিছু। সারাক্ষণ শুধু ইরাদ ভাবতো হয়তো বা রুহি ভালো আছে অন্য জায়গায় অন্য কারো সাথে কিন্তু যখন ইরাদ জানতে পারলো রুহি তাকে ছাড়া আর কারো কথা কোনো দিন মাথায় ও আনেনি তখন থেকে ইরাদের যেনো ভালোবাসা এবং সম্মান আরো বেড়ে গেলো রুহির প্রতি। যেই মেয়েটা ইরাদকে তার সর্বস্ব দিয়ে ভালোবেসে এসেছে সবসময় সেই মেয়েটাকে হারাতে ইরাদের একদম ইচ্ছে নেই। বরং তাকে আগলে রেখে সারাটা জীবন ইরাদ বাচতে চায়। আজকে যখন সোবহান সাহেব বিয়ের কথাটা বললেন তখন আর ইরাদ কোনোভাবে তাকে না করতে পারলো না। অনেক তো দূরত্ব ছিলো দু’জনের মাঝে আজকে বিয়ে করে সবটা দুরত্ব ইরাদ ঘুচিয়ে দিবে।
কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন, রুহিকে যখন জিজ্ঞেস করলো কবুল কি না? রুহি লজ্জা মিশ্রিত মুখে ইরাদের দিকে একটাবার তাকিয়েই বললো “কবুল”
কি সুন্দর একটা জীবনে রুহি ও ইরাদ পা রাখলো। আর আজকে যেনো আকাশ বাতাসই বলছে রুহি ও ইরাদের দিন আজকে।
এ ছাড়াও কি সুন্দর কাকতালীয় ভাবে আজকে ইরাদ পড়েছে সাদা পাঞ্জাবি আর রুহি পড়েছে লাল শাড়ি। মনে হচ্ছে আজকে তারা নিজেদের বিয়ের জন্যই এইভাবে সেজেছে তবে ব্যাপারটা আল্লাহ পাকের ইশারায়ই ঘটে গেছে। কিছুক্ষনের মধ্যে রুহি ও ইরাদ একে অপরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেলো। ইরাদ কোনোদিন ভাবতেও পারেনি ও আবারো বিয়ে করবে, জীবনটা সাজাবে তবে হ্যাঁ ইরাদ পেরেছে আবারো নিজের জীবনটাকে গুছিয়ে নিতে। এবার রুহিকে নিয়ে সুন্দর ভাবে সবকিছু সাজিয়ে নেবার পালা।
.
প্রায় আধা ঘন্টা পর সবাই একসাথে খাওয়া দাওয়া করলেন, কাজী সাহেব ও চলে গেলেন। ইরাস ভাবছে রুহিকে নিয়ে বাই রোড আজকে ট্রাভেল করেই চিটাগং যাবে। সদ্য বিবাহিত বউকে রেখে এভাবে একা যাওয়াটা ঠিক হবেনা। আর তাছাড়া বিয়ের পর রুহি বাবার বাড়ি থাকবে এটা ইরাদ চায় ও না। তাই ভেবে সোবহান সাহেবের উদ্দেশ্যে ইরাদ বললো,
– আংকেল এখন তাহলে আমরা আসি?
– কোথায় বাবা?
– আংকেল আমার কটেজে।
– আজকে এখানে থেকে গেলে হয় না বাবা?
– আংকেল আসলে কাল আমার অপারেশন আছে চিটাগং এ আজকে কটেজে গেলেই আমার জন্য বেটার প্যাকিং করতে। আর বিয়েটা যেহেতু আজকে হয়েই গেলো আমি তাই ভাবছিলাম রুহিকে নিয়ে একটু চিটাগং যাবো।
– কাল যে মামনী আর আপু আসবে? দেখা করবেন না?
– আমার যে যাওয়াটা খুব জরুরি। ফিরে এসে দেখা করি?
সোবহান সাহেব – ঠিক আছে বাবা কোনো অসুবিধা নেই।
সোবহান সাহেবের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রুহি আর ইরাদ চলে এলো ইরাদের কটেজে, ইরাদের ম্যানেজার খুব সুন্দর করে পুরোটা কটেজ সাজিয়েছে। সবকিছু এতো ভালো লাগছে রুহির। যেনো খুশিতে রুহি কথা বলাই ভুলে গেছে। সারাটা রাস্তা রুহি কোনো কথা বলেনি বাইরের দিকে তাকিয়ে পুরোটা সময় যেনো উপভোগ করছিলো। ইরাদ ও তা বুঝতে পেরে রুহিকে সময় দিলো কিছুটা কটেজে এসে ওরা দু’জনই খুব খুশি হলো। পুরোটা রুমে হালকা কিছু ফুল দিয়ে ডেকোরেশন করা আর এক গোচ্ছা রজনীগন্ধা এনে পাশের টেবিলে রেখে দেওয়া হয়েছে এতে পুরোটা ঘর সুবাসিত হয়ে উঠেছে।
রুহি ঘুরে ঘুরে কটেজটা দেখলো, এরপর ইরাদকে বললো,
-বেশ সুন্দর কটেজটা।
ইরাদ মুচকি হাসলো, কোনো উত্তর না পেয়ে রুহি ভাবছে
“আসলে আমি কি থেকে কি বলছি? এই কথা বলাটা কি ঠিক হয় নি এখন? “
রুহির ভিতরে এক প্রকার আড়ষ্টতা কাজ করছে, লজ্জাও কাজ করছে ইরাদ বুঝতে পেরে রুহির হাত ধরে নিয়ে ওকে বিছানায় বসায় এবং নিজেও এক পাশে বসে।
রুহি লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো
– মিসেস ইরাদ আজকে আপনাকে অনেক বেশি সুন্দর লাগছে। ফাইনালি আপনি আমার ওয়াইফ। আপনি খুশি তো?
রুহি ইরাদের হাতটা শক্ত করে ধরে বলে,
– অনেক বেশি আলহামদুলিল্লাহ।
চলেন দুই রাকাআত করে শুকরিয়া প্রকাশ করে নফল নামাজ আদায় করি।
ইরাদ আর রুহি নামাজ পড়ে নিলো।
বাইরে কিছুক্ষণের মধ্যেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো,
রুহি ইরাদের উদ্দেশ্যে বলে,
– চলেন না ভিজি?
– আজকে?
– হুম প্লিজ
ইরাদের হাতটা ধরে রুহি বেশ কিছুক্ষন বৃষ্টিতে ভিজলো। রুহিকে যেনো অপরূপা লাগছে, ইরাদ নিজের চোখ দুটোকে একদম বিশ্বাস করাতে পারছে না এই মায়াবতী আজকে থেকে ওর হয়ে গেছে। তার স্বপ্ন সবটাই যে সত্যি হয়েছে এখনো যেনো ইরাদের মনে হচ্ছে না। রুহিকে এক টানে নিজের দিকে ঘুরিয়ে, কপালে আলতো করে একটা চুমু দিলো ইরাদ।
এবং রুহির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– আর ইউ কমফোর্টেবল?
রুহি এবার ইরাদকে কোনো উত্তর না দিয়ে পায়ের পাতায় ভর দিয়ে ইরাদের গলা জড়িয়ে ধরে
এতেই ইরাদ বুঝতে পারে রুহির সম্মতি আছে। এবার ইরাদ আর অপেক্ষা না করে রুহির কোমর জড়িয়ে ধরে, ওকে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলে। বৃষ্টির তীব্রতা ও কমে এসেছে এখন হালকা বাতাস বইছে এবং ইরাদ রুহির ঠোঁট জোড়া আস্তে করে নিজের দখলে নিয়ে নিচ্ছে। রুহি লজ্জায় চোখ দুটো একদম বন্ধ করে ফেলে। সারা শরীর যেনো কেপে কেপে উঠছে বারবার। রুহির চোখে মুখে ইরাদ নিজের ভালোবাসা বসিয়ে দিচ্ছে। কিছুক্ষন পরে ইরাদ রুহিকে কোলে করে নিয়ে ভেতরে চলে আসে।
রুহি চোখ বন্ধ করেই রেখেছে।
ইরাদ রুহিকে কানের কাছে এসে বলে,
– আজকে এতো আদর করবো যে আমার বউটার বিগত দিনের রাগ গুলো যেনো মাটি হয়ে যায়।
ইরাদ রুহিকে অজস্র চুমুতে ভরিয়ে দেয়, রুহির ফর্সা চেহারাটা একদম লাল হয়ে গেছে লজ্জায়। আজকের সময়টা যেনো রুহির মনে হচ্ছে কখনো যেনো শেষ নাহয়।
এমন সময় রুহির ফোন বেজে ওঠে,
– কে যেনো কল দিয়েছে
-দেক পড়ে দেখো
– কোনো পেশেন্ট হলে?
ইরাদ রুহিকে ছাড়ে।
রুহি উঠে দেখে স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করে লিখা উঠছে
-আপু
অর্থ্যাৎ মেঘার কল এসেছে।
(চলবে..)