ফুলসজ্জা সিজন ২ পর্ব ১০
লেখিকাঃ #অনামিকা_ইসলাম “অন্তরা”
. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
” খেলে তো ধরা সবদিক থেকে….!”
পিছনে ফিরে তাকায় নীলিমা। গম্ভীর মুডে আবির দাঁড়িয়ে। কথা বলেনি কোনো। রিক্সাওয়ালাকে নীলিমার ভাড়াসহ ঐ স্যারের ভাড়াটাও দিয়ে দেয়।
রিক্সা চলে যায়। হাঁটা শুরু করে আবির। আবিরের পিছু পিছু নিঃশব্দে হাঁটছে নীলিমা। কারো মুখেই কোনো কথা নেই। নীলিমা অবশ্য এরই মাঝে বার কয়েক আবিরের দিকে ফিরে তাকিয়েছে, কিন্তু আবিরের সেদিকে একটুও খেয়াল নেই। বরাবরের মতই মাথা নিচু করে চুপচাপ হাঁটছে আবির। বাসায় পৌঁছে দু’জনেই।
” ব্যাগে টাকা আছে, ভাড়া বাবদ যত টাকা লাগে নিয়ে নিও।” নীলিমার হাতে আবির ওর মানিব্যাগটা ধরিয়ে দিয়ে হনহনিয়ে বাহিরে চলে যায়। নীলিমা সেদিকে ঢ্যাবঢ্যাব করে তাকিয়ে আছে।
আবির চলে গেলে ব্যাগ হাতে বিছানায় বসে নীলিমা।
**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
মানিব্যাগের একপাশে দুটো এক হাজার টাকার নোট, আর ৫টা একশ টাকার নোট রাখা। ৫টা একশ টাকার নোট ব্যাগ থেকে বের করে টাকাগুলো ছোট করে ভাঁজ করে নীলিমা ওর আঁচলে বেধে রাখে। তারপর শাঁড়িটা ঠিক করে আয়নায় নিজেকে একবার দেখে নেয়। আবির তখনো আসেনি, তাই ওর আসার আগেই বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। নীলিমা বের হয়ে যায় বাসা থেকে।
দুপুর ১টা____
সিএনজির অপেক্ষায় বাসার সামনে দাঁড়িয়ে নীলিমা। সেই সাড়ে ১২টা থেকে এখানে দাঁড়িয়ে, এখবো অবধি কোনো খালি সিএনজি কিংবা রিক্সা আসার নাম নেই। মেজাজ গরম হয়ে যায় নীলিমার। রাস্তার ওপাশের ছোট্ট বেঞ্চে বসার জন্য এগিয়ে যেতেই নীলিমা ছেলেদের হাসির শব্দ শুনতে পায়। বেঞ্চে বসে হাসিটা কোথা থেকে আসছে সেটা বুঝার চেষ্টা করে। পাশেই একটা বিল্ডিং মেরামতের কাজ চলছে। সেই বিল্ডিংয়ের ছাদের উপর কিছু ছেলেপুলে বসে গল্প করছে, হাসিটা সেখান থেকেই আসছে। দৃষ্টি ফিরিয়ে আনার আগে আবারো ছেলেদের দিকে তাকায়। ৫,৬টা ছেলের মাঝে আবিরও বসে ছিল সেখানে। অপলক ভাবে কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে থাকে নীলিমা। হঠাৎ’ই রিক্সাওয়ালার ডাক পরে,
ও আপা যাবেন? যাব বলে নীলিমা রিক্সার কাছে যায়। রিক্সার কাছে গিয়ে আবারো বিল্ডিংটার ছাদের দিকে তাকায়। আবির তখনো গল্পে মশগুল। রিক্সাওয়ালা আবারো বলে, আপা দাঁড়িয়ে ক্যান? কেউ আইব? কোনো উত্তর না দিয়ে নীলিমা আবারো ঐ বিল্ডিংটার ছাদে তাকায়। আবির তখনো গল্পে মগ্ন। ইস! একবার নিচে তাকা, শুধু একবার তাকা। মনে মনে কথাগুলো বলছিল নীলিমা।
আজব লোক’ তো…..!!!
এটা বলে রিক্সাওয়ালা চলে যায়। ফিরে তাকায় নীলিমা। ততক্ষণে রিক্সাওয়ালা চলে গেছে। উফ! চলে গেল বলে নীলিমা পুনরায় বেঞ্চে গিয়ে বসে। আরেকটা সিএনজি আসে। নীলিমা সিএনজিকে না করে দেয়। তারপর আবারো উপরে আবিরের দিকে ফিরে তাকায়। আবির তখনো গভীর গল্পে মশগুল। এরই মধ্যে আরো একটা সিএনজি আসে। এবার নিঃশব্দে নীলিমা সিএনজির কাছে যায়। শেষ বারের মত ফিরে তাকায় উপরে। ততক্ষণে আবিরের দৃষ্টিও নীলিমার দিকে চলে এসেছে। মনে মনে একটা হাসি দিয়ে সিএনজিতে উঠে বসে নীলিমা। আবির দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে আবারো গল্পে মন দেয়।
দুপুর ১টা বেজে ৪৫মিনিট____
নীলিমা বাসস্টপের ছোট্ট বেঞ্চে চুপ করে বসে আছে। বাস চলে যাওয়ার হুইসেল দিচ্ছে তবুও নীলিমা টিকিট কাটেনি। বার বার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। প্রায় মিনিট দশেক পর বাস ছেড়ে দেয়। নীলিমা তখনও রাস্তার এপাশ ওপাশ তাকাচ্ছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ২টা বেজে গেছে। মনটা কালো অন্ধকারের ন্যায় করে ওপাশে তাকাতেই দেখে আবির আসছে। মুখে হাসি ফুটে উঠে নীলিমার। তাড়াতাড়ি বেঞ্চ থেকে উঠে দাঁড়ায়।
কিন্তু একি?!!!
ওনি আমার কাছে আসছেন না কেন? এদিকে কোথায় যাচ্ছেন???
মিনিট ত্রিশেক পর হাতে একগাদা সওদা নিয়ে আবির ফিরে। এবার নিশ্চয় আমার কাছে আসবে আমায় বাসায় ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য? ভাব নিয়ে দাঁড়ায় নীলিমা।
কিন্তু মুহূর্তেই ‘থ’ হয়ে যায় নীলিমা যখন দেখল আবির ওকে কিছু না বলে বাজার সওদা করে আপনমনে বাসায় চলে যাচ্ছে। রাগ হয় নীলিমার কিন্তু প্রকাশ করেনি। কিছুক্ষণ বেঞ্চে বসে থেকে পা বাড়ায় বাসার দিকে। মিনিট দশেক বছর বাসায় পৌঁছে নীলিমা। দরজা খোলায় ছিল তাই কলিং বেল আর চাপতে হয়নি। ভিতরে প্রবেশ করে নীলিমা। আঁচল থেকে টাকাগুলো খুলে বিছানার নিচে রেখে কিচেনের দিকে পা বাড়ায়। আবির তখন গভীর মনোযোগের সাথে রান্না করছে। কিছুক্ষণ দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে নীলিমা। তারপর মুখ খুলে___
” আমি চলে যাচ্ছি…..”
আবির চুপচাপ থেকে রান্না করে চলেছে। নীলিমা আবারো বলে উঠে, আমি গ্রামের বাড়িতে চলে যাচ্ছি। আবির এবারো চুপচাপ। নীলিমা আবারো বলে উঠে, শুনতে পাচ্ছেন আমি নরসিংদী চলে যাচ্ছি। রান্না করা অবস্থায়’ই জবাব দেয় আবির, সেতো আমি দেখেই আসছি আপনি চলে যাচ্ছেন। তো ফিরে আসলেন যে? কিছু রেখে গেছেন নাকি? এত কষ্ট করে আবার আসতে গেলেন কেন? আমায় কল করে বলতেন। আমি দিয়ে আসতাম।
” কোথায় আমাকে আটকাবে তা না,
উনি আমায় চলে যেতে হেল্প করবেন।”
প্রচন্ড রাগে কাঁপতে শুরু করে নীলিমা। ফেলতে থাকে ঘনঘন নিশ্বাস। দাঁতে দাঁত চেপে আবিরকে কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। ফিরে যায় রুমে। এত শীতের মধ্যে ঘামছে নীলিমা। ফুলস্পিডে ফ্যানটা ছেড়ে বিছানায় ধপাস করে শুয়ে পরে। চোখ থেকে দু’ফোঁটা জল বেরিয়ে আসে নীলিমার। হঠাৎ’ই অস্পষ্ট গানের স্বর ভেসে আসে। বিছানা থেকে উঠে বসে নীলিমা। মনে হচ্ছে কিচেন থেকেই শব্দটা আসছে। কিন্তু কে গায়ছে? বন্ধ করে ফেলে ফ্যানটা। নীলিমা স্পষ্ট শুনতে পায় আবির গান গাচ্ছে-
” চলে গেছো তাতে কি, নতুন একটা পেয়েছি।”
” ওহ, এই জন্য’ই বুঝি আমায় এভাবে যেতে দেয়া?”
মেজাজ বিগড়ে যায় নীলিমার। প্রচন্ড রাগে নিজের মাথার চুল নিজে’ই দু’হাত দিয়ে এলোমেলো করে ফেলে। খামচে ধরে মুখ। নিজে নিজেই নিজের হাতে কামড় বসিয়ে দেয়। গালে দু’য়েক জায়গা থেকে রক্ত বের হচ্ছে আর হাতে দাঁতের দাগ বসে গেছে। রাগ তবুও কমছে না। বিছানার পাশেই ছিল আবিরের সদ্য কিনে আনা একটা ছোট্ট সুন্দর ডায়েরী। ডায়েরী কামড়ে ধরে নীলিমা। ডায়েরীর কিচ্ছু হয়নি, কিন্তু ডায়েরীর শক্ত অংশ দাঁতের মাড়িতে লাগার সাথে সাথে মাড়ি থেকে রক্ত বের হওয়া শুরু হয়। এতেও রাগ কমেনি নীলিমার। হাতের কাছে পেল বালিশ, তুলতুলে নরম সুন্দর বালিশটা নিয়ে নীলিমা বারান্দায় ঝুড়ির ভিতর ঢুকিয়ে দেয়। আরেকটা বালিশ ছুঁড়ে মারে বারান্দায়, কোল বালিশটা এক ধাক্কা দিয়ে খাটের নিচে ফেলে দেয়। রাগ তাতেও কমছে না দেখে বিছানা থেকে নেমে চাঁদরটা জড়ো করে বাথরুমে পানি ভর্তি বালতি’তে ডুবিয়ে রেখে আসে, সাথে কম্বলটাও ফ্লোরে ময়লার মধ্যে ঘষে পানিতে ভিঁজিয়ে রেখে আসে। আবিরের চশমাটা ড্রেসিংটেবিলের উপর রাখা ছিল। চশমা হাতে চোখের সামনে এদিক ওদিক করে চশমার একটা গ্লাস কামড়ে ধরে নীলিমা। তেজি মেয়ের এক কামড়ে চশমার ফ্রেম ভেঙে কাঁচগুলো ঠোঁটে গিয়ে বিধে। ওহ, মাগো বলে চশমাটা হাত থেকে ফেলে ঠোঁট ধরে প্রচন্ড জোরে চিৎকার দেয় নীলিমা।
নীলিমার চিৎকার আবিরের কান অবধি বুঝতে বেশী সময় নেয়নি। কেঁপে উঠে আবিরের কলিজা। রান্না রেখে ছুটে আসে রুমে। নীলিমার এ হেন অবস্থা থেকে আবির ভড়কে গেলেও পাশে পরে থাকা ভাঙা চশমা আর রুমের অবস্থা দেখে আবির খুব শিগ্রয়ই বুঝে যায় আসল ঘটনা। একি করছ?!!!
দৌঁড়ে গিয়ে নীলিমার পাশে বসে আবির। ঠোঁট থেকে কাঁচগুলো সরিয়ে নিতেই আরো জোরে চেঁচিয়ে উঠে নীলিমা। “ওমাগো, জ্বাল।
মরে গেলাম গো, জ্বলে যাচ্ছে গো…..”
আবির ওর ময়লা হাতের দিকে তাকায়। হাতে তখনো হলুদ, মরিচের গোঁড়া লেগে আছে। দিগ্বিদিক শূন্য আবির তখনি নীলিমার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়।
একি করছ?!!!
দৌঁড়ে গিয়ে নীলিমার পাশে বসে আবির। ঠোঁট থেকে কাঁচগুলো সরিয়ে নিতেই আরো জোরে চেঁচিয়ে উঠে নীলিমা। “ওমাগো, জ্বাল।
মরে গেলাম গো, জ্বলে যাচ্ছে গো…..”
আবির ওর ময়লা হাতের দিকে তাকায়। হাতে তখনো হলুদ, মরিচের গোঁড়া লেগে আছে। দিগ্বিদিক শূন্য আবির তখনি নীলিমার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। শুষে নেয় নীলিমার ঠোঁটের সবটুকু জ্বাল। কিছুক্ষণ ঘোরের মধ্যে ছিল নীলিমা। হুশ ফিরে যখন তখন আবির ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে উঠে দাঁড়ায়।
তোমার ঠোঁটের কাটাস্থানে অসাবধানতাবশত মরিচের গোড়া লেগে গিয়েছিল তাই, পুরো কথা বলতে পারে নি আবির। নীলিমা হাত উঁচু করে আবিরকে থামতে বলে। আবির থেমে যায়। রাগে হনহনিয়ে স্টাডিরুমে ঢুকে দরজা আটকে দেয় নীলিমা।
রান্না শেষে ভিঁজানো চাদর এবং কম্বল ধুয়ে ছাদে নিয়ে যায় আবির। এরই মাঝে নীলিমা ভাত নিয়ে খেতে বসে পরে। ছাদ থেকে ফিরে আবির আলমারি থেকে একটা নতুন চাদর বের করে বিছানা করে নেয়। বারান্দা থেকে বালিশ দুটো এনে ময়লা পরিষ্কার করে খাটে রাখে। খাটের নিচ থেকে কোলবালিশটা এনে খাটের একপাশে রাখে। সবশেষে ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে ঢুকে।
আবির ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে আসে। ততক্ষণে নীলিমার খাওয়া শেষ। পরনে তোয়ালে চেঞ্জ করে নীলিমার দিকে তাকায়। ” ভালো’ই হলো খাওয়া দাওয়া সেরে নিয়েছেন। এবার রেডি হন। আমি আপনাকে নরসিংদী দিয়ে আসি।”
চলে যাচ্ছিল নীলিমা, আবিরের কথা শুনে থমকে দাঁড়ায়। চোখ বড় বড় করে তাকায়।
” এভাবে তাকিয়ে কেন আছেন? আমি কি বলছি বুঝতে পারেন নি? নাকি বাংলা বুঝেন না? আপনাকে আমি নরসিংদী আপনার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যেতে চাচ্ছি, তাই দয়া করে রেডি হোন। কোনো কথা না বলে স্টাডিরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয় নীলিমা। অভিমানে গুমড়ে কেঁদে উঠে। লাঞ্চ সেরে আবির স্টাডিরুমের দরজায় নক করে। আবিরের শব্দ শুনেই হো, হো শব্দে অভিনয় করে কেঁদে উঠে নীলিমা।
**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
” ওহ,মাগো। মরে গেলাম গো। ব্যথা।”
ভড়কে যায় আবির। নীলিমার কান্নায় ভেতরটা মুচড় দিয়ে উঠে। নীলিমাকে দরজা খুলার জন্য একের পর এক দরজায় কড়াঘাত করছে আবির। কিন্তু ভুলে দরজা খুলছে না নীলিমা। যদি নরসিংদী নিয়ে রেখে আসে সেই ভয়ে দরজা খুলার সাহস পাচ্ছে না।
অনেকক্ষণ পর দরজা খুলে নীলিমা। আবির তখনো দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল। নীলিমা হন্যে হয়ে রুমে ঢুকে আবির।
” কি হয়েছে নীলিমা? কোথায় ব্যথা করছে? খুব ব্যথা করছে? এটা সেটা আরো কত কি।” আবিরের কোনো প্রশ্নের উত্তর দেয়নি নীলিমা। শুধু গাল থেকে আবিরের দু’হাত ছাড়িয়ে দিয়ে চুপচাপ বিছানায় শুয়ে পরে। আবির বিছানার পাশে বসে কিছুক্ষণ নীলিমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, তারপর ঘুমানোর কথা বলে চলে আসে।
রাত্রের খাবার শেষে স্টাডিরুমে চলে যায়।
স্টাডিরুমের দরজা আংশিক মিশিয়ে শুয়ে পরে নীলিমা।
একি?! ওনি আজকে আমাকে এ রুম থেকে নিচ্ছেন না কেন? তবে কি ওনি সকালের ঘটনায় সত্যি সত্যি রেগে গেছেন? ওনি কি সত্যি সত্যি আমায় নরসিংদী রেখে আসবেন? না, না। এ হতে পারে না। শুয়া থেকে উঠে বসে নীলিমা।
আস্তে আস্তে দরজা ফাঁকা করে আবিরের রুমের দিকে উঁকি দেয়। কপালে হাত দিয়ে আনমনে কি যেন ভাবছে আবির।
যাই,
কাছে গিয়ে শুই,
আমার কারণেই তো এরকম করছেন আজকে। আমি’ই গিয়ে রাগটা ভাঙায়।
নীলিমা স্টাডিরুমের দরজা মিশিয়ে আবিরের রুমে ঢুকে। আবির তখনো আনমনে ভেবেই চলছে। দরজাটা লক করে আবিরের গা ঘেষে শুইলে হুশ ফিরে আবিরের। ক্ষাণিকটা সরে আসে আবির। কিছুক্ষণ চুপ থাকে নীলিমা। তারপর আবারো আবিরের কাছে গিয়ে ওর উপরে একটা হাত উঠিয়ে দেয়। হাত সরিয়ে দেয় আবির। আবারো হাত রাখে নীলিমা, হাত সরিয়ে দেয় আবির। এবার একহাতে ভর দিয়ে মাথা উঁচু করে তাকায়। আবির তখন বিপরীতমুখী হয়ে শুয়ে। পিছন থেকে আবিরকে জড়িয়ে ধরে আবিরের গালে হাত রাখে নীলিমা। এবার অনেকটা ভ্রু কুঁচকে বিরক্তিকর ভঙ্গিতে আবির নীলিমার হাতটা ছাড়িয়ে নীলিমার দিকে ফিরে তাকায়। মুখটা অমাবস্যার কালো অন্ধকারের ন্যায় কালো করে নীলিমা দুরে সরে যায়। আবিরের থেকে অনেকটা দুরত্ব রেখে মাঝখানে কোলবালিশ রেখে শুয়ে পরে নীলিমা। বাকি রাতের মধ্যে একবারও আবিরের কাছে ঘেষার চেষ্টা করেনি। তবে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্নার আওয়াজটা শুনেছে আবির। ভোরে টুংটাং আওয়াজে ঘুম ভাঙ্গে আবিরের। আবিরের জন্য রান্নাবান্নায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে নীলিমা। খাওয়া দাওয়া মিস করেনি আবির, তবে নীলিমার সাথে কথাটা বলেনি। সারাদিনে একটা কথাও বলেনি। খাওয়া দাওয়া করেই বাইরে চলে যায় আবির। নামাজের টাইমে ফিরে আসে। ওজু করে আবার বাইরে চলে যায়।
কতভাবে নীলিমা আবিরের কাছে ক্ষমা চাইতে গিয়েছে, কিন্তু নীলিমাকে পাত্তাই দেয়নি আবির। রাত্রে খাওয়া দাওয়া করে নিজ রুমে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছিল আবির। তখনি দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে নীলিমা। পরনে গোলাপী কালার শাঁড়ি, তার মিলিয়ে হাতে একগোছা চুড়ি, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক আর চোখে গাঢ় কালো কাজল।
ব্যস এটুকুই…..
চুড়ির রিনিঝিনি শব্দে আবির শুধু একবার দরজার দিকে তাকিয়েছে, নীলিমাকে একনজর দেখে সাথে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়েছে আবির। লাইটটা অফ করে কম্বলে মুখ ঢেকে শুয়ে পড়ে আবির। ভিতরটা ফেটে চৌচির হয়ে যায় নীলিমার। সবকিছু সহ্য করা গেলেও প্রিয় কারো অবহেলা সহ্য করা যায় না। নীলিমাও পারে নি। বাইরে প্রচন্ড বেগে ঝড় বইছে ঠিক তেমনি ভেতরটাও অজানা ঝড়ে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে। দৌঁড়ে স্টাডিরুমে চলে যায়। বিছানার মাঝখানে গিয়ে বসে নীলিমা। হাতের চুড়িগুলো একটা একটা করে খুলে ফেলে। খুলে ফেলে শাঁড়ির সাথে মিলিয়ে পরা কানের লম্বা লম্বা দুল আর গলার মালা। শাঁড়িটাও চেঞ্জ করতে হবে। আর শাঁড়িটা চেঞ্জ করার জন্য আঁচলটা সরিয়ে রাখে। ঠিক তখনি রুমে প্রবেশ করে আবির। পায়ের শব্দ পেয়ে আঁচল দিয়ে দ্রুত শরীর ঢেকে নিল নীলিমা। কিন্তু ততক্ষণে যা দেখার দেখে ফেলেছে আবির।
আবির টের পেল ওর সমস্ত রক্ত মাথায় উঠে যাচ্ছে। সে আস্তে করে গিয়ে বসল নীলিমার পাশে।
নীলিমা বলল, ‘ আমি বড্ড বেশী করে ফেলেছি, না?”
অবাক হলো আবির। হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন?
নীলিমা তাকিয়ে রইল আবিরের দিকে। আপনি খুব ভালো মানুষ মি. আবির। আমি ঘুমাতে যাচ্ছি। কাল আমি চলে যাব। তবে আপনাকে কোনোদিন ভুলতে পারব বলে মনে হয় না। দরজার দিকে পা বাড়াল নীলিমা, ঘুরে দাঁড়ালো আবার। গুড নাইট মি. আবির। দরজা বন্ধ করে চলে গেল নীলিমা।
আবির তাকালো নীলিমার দিকে।
” ও কি বলে গেল- কোন দিন ভুলতে পারবে না। মানে কি এ কথার?” নীলিমাকে ম্লান আর বিষণ্ন লাগল। উত্তর দিল,
‘জানি না আমি।’
কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইল দু’জনে। বাতাসের আর্তনাদ ছাড়া অন্য কোনো শব্দ নেই। আবির চেষ্টাকৃত হাসি দিল। বৃষ্টিতে ভিঁজবে? মাথা নাড়ল নীলিমা। ভিঁজবে না। চলে যাবার জন্য উঠে দাঁড়াচ্ছে, ওর হাত ধরে ফেলল আবির।
” যেয়ো না। তুমি জানো এই মুহূর্তটির জন্যই অপেক্ষা করেছিলাম আমি। তোমার সাথে কথা বলতে চাই। তোমার মিষ্টি কন্ঠটা শুনতে চাই।”
আবির উঠে বাতি নিভিয়ে দিল। শুধু ড্রিম লাইটের মৃদু আলোয় আলোকিত হয়ে থাকল ঘর। আবির বসল নীলিমার গা ঘেঁষে।
” এখন আরো রোমান্টিক লাগছে না?”
আবির দু’হাত দিয়ে নীলিমার গাল স্পর্শ করে কথাটা বলল। হাতটা সরিয়ে দিল নীলিমা। ‘আমি ঘুমাবো।’ জবাব আসে, রাত তেমন বেশি হয়নি। বাহির ভিতর একসাথেই মাতাল হাওয়া বইছে। পরস্পরকে জেনে নেয়ার এই সুযোগটা হারাতে চাচ্ছি না।
এবারও আবিরের হাত দুটো সরিয়ে দিল নীলিমা। ‘ আমি যাই। সত্যি মি. আবির, আপনার সঙ্গে আমার থাকা সম্ভব নয়। এটা- এটা ঠিক না।’
মিস্টার বাদ দাও। আমাকে স্রেফ আবির বলে ডাকতে পারো না? আমি তো তোমার’ই বুড়ো। আর তাছাড়া বাহিরে ঝড় বইছে, ভিতরে আমরা দু’জন অন্ধকারে বসে আসি। ব্যাপারটা রোমাঞ্চকর লাগছে না তোমার কাছে? আমার কাছে তো রূপকথার মত মনে হচ্ছে।
আমি বুঝতে পারছি আবির। কিন্তু আমি আর এখানে থাকতে চাচ্ছি না। আমার ঘুম পাচ্ছে। নীলিমার মাথার পিছনে হাত চালিয়ে দিল আবির, ঝুঁকে এল ওর দিকে। ঘুম গোল্লায় যাক। একটা ঘন্টা অন্তত সময়টাকে স্থির করে দিতে পারো না? তোমাকে ভালোবাসি এই কথাটা আমাকে বলতে দাও। বলতে দাও এই কুৎসিত পৃথিবীতে তুমি’ই একমাত্র সুন্দর মানবী। তোমার সৌন্দর্যের কাছে ম্লান হয়ে গেছে ঝড়ের শক্তি। আমার দিকে তাকাও, নীলিমা। একটা ঘন্টার জন্য কি আমরা রূপকথার রাজ্য থেকে ঘুরে আসতে পারি না? সব ভুলে আমরা কি এক হতে পারি না? নীলিমাকে নিজের কাছে টেনে আনল আবির। রাগে কাঁপছে নীলিমা। কাঁপতে কাঁপতেই নিজেকে সমর্পণ করল আবিরের কাছে।
আবির নীলিমার নরম অধরে নিজের ঠোঁট চেপে ধরল। সেই মুহূর্তে নীলিমাকে একান্তভাবে পাবার ইচ্ছে জেগে উঠল মনে…..
.
চলবে____