ফুলসজ্জা পর্ব ২
লেখা:- #অনামিকা_ইসলাম “অন্তরা”
নীলিমার কাজের মেয়ের দিকে ঐভাবে তাকিয়ে থাকার মানে কাজের মেয়ে বুঝে যায়। আর তাই কাজের মেয়ে বিনীত ভঙ্গিতে করুণ চাহনিতে চোখের ভাষায় নীলিমাকে বুঝিয়ে দেয়_
” স্যরি, ভাবি! আমায় মাফ করো… আমি পারলাম না প্রতিবারের মতো কথা লুকাতে, পারলাম না তোমাকে দেওয়া কথা রাখতে…”
কাজের মেয়ের চোখের ভাষা বুঝে গিয়ে নীলিমা আমার দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকালো। আমি পূর্বের ন্যায় ওর দিকে জিজ্ঞাসো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। ও যেন বুঝে উঠতে পারছিল না কি করবে, এদিকে আমি একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছি। সবশেষে ও__
” চলে এলেন যে? কোনো সমস্যা? মা দেখেছেন? দাঁড়ান আমি বলে আসছি..”
একটানা কথাগুলো বলে নীলি আমায় ফাঁকি দিয়ে চলে যাচ্ছিল রুম থেকে, ঠিক তখন’ই আমি ওর হাত’টা ধরে ফেলি। কোথাও যাবে না তুমি। আমার কথার উত্তর না দিয়ে কোথাও যেতে পারবে না। নীলিকে টেনে আমার বুকের খুব কাছে এনে কথাগুলো বললাম।এদিকে এ দৃশ্য দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না কাজের মেয়ে। লজ্জায় চোখ ঢেকে সেখান থেকে চলে যায় সে। আমি নীলিকে কাছে টেনে একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছি আর নীলি আমার মুখের দিকের মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে। এতক্ষণ যা বলছি তার একটাও ওর কানে ঢুকেনি। ওর চোখে চোখ পরতেই বন্ধ হয়ে যায় আমার কথা।
তাকিয়ে থাকি আমি আমার মায়াপরিটার দিকে। কি অদ্ভুত এক মায়াভরা মুখ, যে মুখে তাকালে রাজ্যের ক্লান্তি দুর হয়ে যায়।
বেশকিছু ক্ষণ এভাবে তাকিয়ে থাকার পর নীলি চোখ’টা ফিরিয়ে নেয় আমার থেকে। নিচের দিকে তাকিয়ে বলে__
” ছাড়েন…..”
আমি নীলির হাত’টা ছেড়ে দিলাম। নীলি দৌঁড়ে রুম থেকে চলে গেল। দুপুরে সবাই খাবার টেবিলে বসে আছি। কাজের মেয়ের সাথে নীলিও খাবার দিচ্ছে আমাদের সবাইকে। আপু সবার সাথে নীলিকেও খেতে বসতে বললে আম্মু নীলির আগে আগে জবাব দেয়__
” ও খেয়েছে একটু আগে। ওর মনে হয় খিদে নাই। ও না হয় পরে খাবে। তোরা খেয়ে নে…”
সকালের ঘটনায় মায়ের উপর ভিষণ রেগে ছিলাম আমি। কেন যেন মনে হচ্ছে নীলি খায়নি। আর কাজের মেয়ে যা বলছে তা যদি ঠিক হয়ে থাকে তাহলে নীলি সত্যি’ই খায়নি। আর খেলেও সবার পরে খায়। ঐ যে সবার পরের যে উচ্ছিষ্ট’টুকু থাকে কুকুর বিড়ালের জন্য, সেটুকু খেতে দেওয়া হয় ওকে। আর তাই আমি বলে উঠি___
” নীলি খেয়েছে কিনা সেটা’তো নীলির থেকে বেশী তুমি’ই ভালো জানো, তাই না মা? আর জানবে’ই তো। কারন খাবার শেষের উচ্ছিষ্ট খাবার বেছে বেছে তুমি’ই তো জমা করো।কখন খাওয়া হবে সবার, আর কখন তোমার বৌমা আই মমিন এ বাড়ির কুকুরকে দিবে, তাই না???”
কথা শুনে মা আমার দিকে চমকে তাকালো। মায়ের সাথে উপস্থিত সকলে অবাক বিস্ময়ে তাকালো।
– আদিবা আপু আমায় ধমকের স্বরে বলে__
” এসব কি বলছিস আবির?”
আব্বু আমায় বলে__
“এসব কি বলছিস আবির? নীলিমা এ বাড়ির বউ, ওকে কেন উচ্ছিষ্ট খাবার দিবে তোর মা?”
আমার দুলাভাই বলে__
” আবির! ওনি তোমার মা হয়। মায়ের সাথে এভাবে কথা বলতে নেই..”
আপু! আমি ভুল কিছু বলিনি। আমার এই মা নীলিমার সাথে দিনকে দিন বাজে ব্যবহার করে আসছে। এমন বাজে ব্যবহার যা আমার মুখ দিয়ে এই মুহূর্তে আসবে না। এটুকু বলে আমি কেঁদে দিলাম।
বাবা আমার দিকে তাকিয়ে বলল, কি বলছিস কি তুই আবির? তোর মা…(……)…???
হ্যাঁ, বাবা! আমি সব ঠিক বলছি। আমার মা….(….)…
নীলি আমার থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বলল, চুপ করেন।হাত জোর করছি আপনার কাছে, প্লিজ চুপ করুন। আব্বা!
আপু আপনারা ওকে চুপ করতে বলেন। ওনার মাথা নষ্ট হয়ে গেছে, তাই মায়ের বিরুদ্ধে এসব বলতে একবারও বিবেকে বাধছে না ওনার। নীলির কথা শুনে মা কান্না করা শুরু করে, আর আমার রাগ চরমে উঠে যায়। আমি___
” চুপ! একদম কাঁদবে না তুমি মা। আর নীলি! মিথ্যে আমি নই, মিথ্যে তুমি/তোমরা আমাকে বলছ। দিনের পর না খেয়ে, মায়ের সব নির্যাতন মুখ বোজে হজম করে আমাকে বলে এসেছ, মা নাকি তোমাকে অনেক আদর করেন… এতটাই আদর করেন যার নমুনা না দেখালে’ই নয়। আমি চেয়ার থেকে উঠে নীলির কাছে গিয়ে আঁচল’টা টান দিয়ে সরিয়ে ফেলি।
তারপর নীলির পিঠটা ওদের দিকে দিয়ে সবাইকে বলি__
” এই হলো সেই আদরের চিহ্ন, তার নমুনা।”
সবাই চমকে উঠে নীলির পিঠের দিকে তাকালো। আমার মা লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে পরল। আমি মনে মনে__
” ক্ষমা করো মা! আজকে এসব কথা না বললেই নয়”
আমার আপ-দুুলাভাই-আব্বু বসা থেকে উঠে পরল। আপু আমার দিকে তাকিয়ে বলল__
” আবির! এসব কিভাবে হয়েছে ওর? কিভাবে এতটা পুড়ল???”
আব্বুও ঠিক এক’ই প্রশ্ন করল। আমি কাজের মেয়ের দিকে তাকালাম। কাজের মেয়ে পূর্ব থেকে’ই প্রস্তুত ছিল কথা বলার জন্য। কারন ওকে আশ্বাস দিয়েছিলাম চাকরী চলে গেলেও ওকে আপুর বাসায় কাজে দিয়ে দিব। কাজের মেয়ে অকপটে নীলির সাথে করে আসা দূর্ব্যবহারের বর্ননা দিয়ে গেল। সব শুনে সবাই হতভম্ব হয়ে যায়।
বাবা একটা কথাও বলেনি। জলে ছলছল চোখ নিয়ে চলে যায় খাবার টেবিল ছেড়ে….
আপু:- ছি! মা তুমি?!!!
এতটা নিচে নেমে গেছ???
আমি জাস্ট বিশ্বাসও করতে পারছি না আমার মা…(…)…!!!
আদিবাও চলে গেল। আদিবার পিছু পিছু আমিও নীলিমাকে নিয়ে রুমে চলে গেলাম। আমাদের লক্ষ্য ক দুলাভাইও চলল। আমরা রুমে ঢুকার একটু পরেই দুলাভাই রুমে ঢুকল। নীলি তখন বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে কাঁদছে, একটু আগে’ই ওকে ধমক দিয়েছি, মার হয়ে ওকালতি করতে আসছিল, তাই ধমক দিয়ে দিয়েছি। ধমক দেওয়ার পর থেকে’ই কাঁদছে। অকস্মাৎ দুলাভাই রুমে আসে। এর একটু পর আদিবা আপুও। দুলাভাই রুমে প্রবেশ করেই আমার হাতে একটা প্রেসক্রিপশন ধরিয়ে দিয়ে বলে যেভাবেই হোক ঔষধগুলো আনতে, সবার আগে মলমটা আনতে। আমি প্রেসক্রিপশন হাতে পেয়ে ছুটে চললাম ফার্মেসির দিকে। কাছেই ফার্মেসিতে ঔষধগুলো পেয়ে যাওয়াতে বাইরে কোথাও যেতে হয়নি। ঔষধ নিয়ে রুমে ঢুকার সময় আব্বুও আমার সাথে রুমে ঢুকে। মলম’টা তখন’ই ক্ষত স্থানে লাগিয়ে দেওয়া হয়। আব্বু আম্মুর কৃতকর্মের জন্য ভিষণ ভাবে লজ্জিত। আপু নিজেও আম্মুর কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিল।
৩দিন পর সকাল বেলা__
আমি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে ড্রয়িংরুমে বসে আছি নীলির বের হওয়ার অপেক্ষায়। আজ’ই নীলিকে নিয়ে ঢাকায় চলে যাব। না, না! মামার বাসায় নয়। বাবা আমাদের জন্য একটা বড় এপার্টমেন্ট কিনে দিয়েছে। সেখানেই যাচ্ছি। সেখান থেকে’ই ভার্সিটিতে শিক্ষকতা করব। আমি চাই না আর কোনো কালো ছায়া আমার নীলিকে স্পর্শ করুক, আর তাইতো ওকে নিয়ে যাচ্ছি সাথে করে। আমি যখন ড্রয়িংরুমে বসে অপেক্ষার প্রহর গুনছি ঠিক তখন’ই আম্মু এসে আমার পাশে বসল। আমি আমার মা’কে দেখে মুখ’টা বিপরীত পার্শ্বে ফিরিয়ে নিয়ে মায়ের থেকে একটু দুরে সরে বসলাম। আমার মা আমার আরো কাছে এসে বসল। তারপর আমার হাত দুটো ধরে বলল__
” বাবা! এভাবে রাগ করে যাসনে। আমি আর কখনো এমন করব না। প্লিজ ছুটির দিনটা এখানে কাটিয়ে যা, আর আমার ঘরের লক্ষ্মী’কে এখানে রেখে যায়। ও আজ থেকে আমার মেয়ে হয়ে থাকবে। ওকে আমি কলেজে ভর্তি করাবো। উচ্চ শিক্ষিত করব। মানুষ ওকে দেখে হিংসা করবে। ও সবার অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব হবে। বাবা! প্লিজ তুই থেকে যা কয়টা দিন। আর বউমাকে রেখে যা।”
আমি মায়ের মুঠো থেকে হাতটা সরিয়ে নিলাম।তারপর__
” মা! তুমি ওকে পছন্দ করো না জানতাম, কিন্তু এত’টা ঘৃণা করো সেটা আমি বুঝতে পারিনি। আজ যখন বুঝতে পারলাম তখন কেন যেন মন সাই দিচ্ছে না ওকে এভাবে একা ফেলে যেতে এখানে। তাই আমি ওকে আমার সাথে নিয়ে যাচ্ছি। Sorry, মা! আমাকে ক্ষমা করো। আমি পারলাম না তোমার এ কথা’টা রাখতে। আর একসেকেন্ডও সেখানে বসে থাকতে পারলাম না। দৌঁড়ে নীলির কাছে গিয়ে ওকে একরমক টেনে নিয়ে আসলাম। নিচে মা চাইবে ওর সাথে কথা বলতে তাই ওর হাত ধরে টেনেই ওকে বাইরে নিয়ে আসলাম। রওয়ানা দিলাম ঢাকার উদ্দেশ্যে। রাত সাড়ে আট’টা নাগাদ পৌঁছে গেলাম বাবার দেওয়া ঠিকানায়। আমাদের নতুন বাসায়। কাজের লোক ৪টা সাথে করে’ই নিয়ে এসেছিলাম। একজন সার্বক্ষণিক নীলির দেখাশুনার জন্য আর ৩জন রান্না-বান্নাসহ বাসার যাবতীয় কাজকর্ম করার জন্য। সেরাত্রে বাইরে থেকে খাবার কিনে এনে খেয়ে নিলাম। তারপর রুম গুছাতে গুছাতে রাত প্রায় ১২টা বেজে গেল। রাত ১২টার দিকে নীলিকে বললাম__
” সারাদিনে তো অনেক ধকল গিয়েছে। জার্নি করে এসেছ। তাই বলছিলাম কি আর বেশী রাত না জেগে ঘুমিয়ে পরাটাই ভালো হবে।তুমি ঘুমিয়ে পরো নীলি…”
___ নীলি আমার দিকে তাকিয়ে বলল, কোথায় ঘুমাবো আমি???
আমি হেসে বললাম, বোকা!
কোথায় ঘুমোবে সেটাও বলে দিতে হবে? ঘুমিয়ে পরো না সে রুম তোমার চয়েজ হয়…”
নীলি আবারো আমার দিকে তাকালো। তারপর__
” আপনি ঘুমাবেন না?”
আমি বললাম_
হুম, ঘুমাবো। তুমি শুয়ে পরলেই তোমার পাশের রুমে আমি ঘুমাবো….”
___ পাশের রুমে ঘুমাবেন মানে? আপনি আলাদা ঘুমোবেন?(নীলি)
আমি বললাম হ্যাঁ…
আমরা আলাদা রুমে’ই ঘুমাবো। তুমি-আমি সম্পূর্ণ আলাদা রুমে ঘুমাবো। আমার কথা শুনে নীলি আমার মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। মুখে না বললেও ওর মনে যে এই মুহূর্তে হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, সেটা আমি ওর মুখ দেখে’ই বুঝে গিয়েছিলাম।
যায় হোক।
ওকে সেসব কিছুই বুঝতে দিলাম না। দোতলার ছিমছাম গোছানো ছোট্ট একটা রুম পছন্দ করে ও। ও রুমে’ই ওকে শুইতে বলে সিড়ির অপর পাশের একটা রুমে আমি শুয়ে পরলাম।
পরদিন বিকেলে গল্প বলার চ্ছলেই জেনে নিলাম ও ছিল ভিষণ মেধাবী এবং স্বপ্নবিলাসী একটা মেয়ে।ওর ইচ্ছে ছিল পড়ালেখা করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ওর বাবা-মায়ের মত অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে।তাদের দিকে সেবার হাত বাড়িয়ে দিতে। মানে নীলির ইচ্ছে ছিল ও একজন ডাক্তার হবে।
মনে মনে বললাম__
” তুমি শুধু তোমার স্বপ্ন পূরণে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকো নীলি! তোমার পাশে স্বয়ং আল্লাহ আছে।তুমি জয়ী হবে নিশ্চিত…”
সেদিন রাত্রে’ই আমি একটা কলেজের প্রিন্সিপালের সাথে নীলির ভর্তির ব্যপারে কথা বলে রাখলাম। পরদিন ভোরে নীলিকে নিয়ে নরসিংদীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। নরসিংদী নীলির বাসা থেকে নীলির স্কুলের সব কাগজপত্র নিয়ে একদিন থেকে তারপরের দিন ঢাকায় চলে আসলাম। ঢাকায় এসে একদিন পর ভর্তি করিয়ে দিলাম। ঢাকার একটা নামকরা কলেজে নীলিকে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দিলাম। শুরু হলো নীলির কলেজ জীবন।
আমি প্রতিদিন নীলিকে বাবার গিফ্ট করা গাড়িতে করে কলেজে দিয়ে এবং নিয়ে আসতাম। আমার ভার্সিটির ছুটি শেষ হয়ে গেল। নীলিকে কলেজে পৌঁছে দিয়ে আমি ভার্সিটিতে চলে যেতাম। ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে নীলির কলেজে গিয়ে নীলিকে নিয়ে আসতাম। কোনো কোনো সময় নীলি আমার জন্য কলেজ গেইটের সামনে অপেক্ষা করত। দিনে কলেজ আর রাত্রে পড়াশুনা। বেশ ভালো’ই চলছিল। নীলি বেশ মেধাবী ছাত্রি ছিল। পড়াশুনার ব্যাপারে ওর সাথে বেশী প্যাঁচাল পারতে হতো না ও নিজ দায়িত্বে ক্লাসের পড়াগুলো কমপ্লিট করত। ওকে আমি রুটিন তৈরি করে দিয়েছিলাম। ও সে রুটিন মাফিক পড়াশুনা করেও পার্টটাইম জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন বই পড়ত।দেখতে দেখতে নীলির এইচএসসি কমপ্লিট হয়ে যায়। এইচএসসিতে নীলি বিজ্ঞান শাখা থেকে গোল্ডেন জি.পি.এ পেয়ে উত্তীণ্ন হয়।
নীলি মেডিকেলে কলেজে ভর্তির জন্য পরিক্ষা দেয়। পুরো বাংলাদেশের মধ্যে আমার নীলি মেধাক্রমে ২য় স্থান অধিকার করে। নীলি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় চান্স পেয়ে যায় ঢাকা সরকারি মেডিকেল কলেজে। যে জায়গায় নীলির বান্ধবী ৫লক্ষ টাকা দিয়ে চান্স পায় ঠিক সে জায়গায় নীলি ভর্তি হয় ভর্তির ফি শুধু ১০হাজার টাকা দিয়ে। আমার শান্তশিষ্ট বউ’টা যে কিনা কারো সাথে মিশত না কিংবা কেউ যার সাথে মিশত না আজ তার অসংখ্য ফ্রেন্ডস। শুধু মেয়ে নয়, ওর রয়েছে অসংখ্য ছেলে ফ্রেন্ডও। নীলি পড়াশুনার পাশাপাশি ওদের সাথে আড্ডা দিত, কোনো কোনো সময় ওদের নিয়ে আমাদের বাসায়ও আসত। নীলি এখন আর আগের সেই গ্রাম্য মেয়েটি নেই। নীলি এখন ঢাকা শহরের একজন স্মার্ট মেয়ে। আজকাল নীলির সাথে কথায় পেরে উঠি না আমি। মেডিকেল কলেজের স্টুডেন্ট বলে কথা…..
দেখতে দেখতে নীলির কোর্স প্রায় সম্পূর্ণ হয়ে যায়। ইন্টার্নি শেষ হলেই নীলি একজন সফল ডাক্তার। সেদিন রাত্রে খাবার টেবিলে নীলিকে জিজ্ঞেস করেছিলাম____
” নীলি! পড়াশুনা তো প্রায় শেষের দিকে। তারপর? কি ভেবেছ???”
অকপটে নীলির জবাব__
আমার স্বপ্ন পূরণ করব।
আমি নীলিকে জিজ্ঞেস করলাম__
” তোমার স্বপ্ন? কি সেটা??”
নীলির জবাব__
“ছোট্ট থেকে দেখে আসা স্বপ্ন পূরণ করব। আমি গ্রামে একটা হসপিটাল খুলে সেখানে বসব গরিব ও অসহায়দের সেবা করার জন্য…. “
– আর কিছু না???
~নীলি আমার দিকে তাকিয়ে বলে__
আর কি???
আমি বললাম__
” নাহ, মানে বুঝাচ্ছিলাম তোমার স্বপ্ন এটুকুই???”
নীলি স্বাভাবিক ভঙ্গিতে জবাব দিল__
” জি, আমার স্বপ্ন এটুকু’ই”
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম- ওহ্!
দেখতে দেখতে ইন্টার্নিসহ নীলিমার কোর্স সম্পূর্ন হয়ে যায়। নীলিমা এখন একজন সফল ডাক্তার। নীলিমা ভোরে’ই ওর দেশের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিবে। রাত্রে খাওয়া শেষে নীলিমা যখন ওর জিনিসপত্র গোছাচ্ছে তখনি ওর রুমে প্রবেশ করলাম আমি__
” বাব্বাহ! জিনিসপত্র গোছানো শুরু করে দিয়েছ?”
**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
নীলিমা ব্যাগে কাপড় ঢুকাতে ঢুকাতে বলল__
“হুম”….
-” গুড। সকালে কয়টাই রওয়ানা দিবা?”
আমার প্রশ্নের জবাবে নীলিমা জবাব দেয়___
” ৭টায়…”
আমি নীলিমার দিকে তাকিয়ে বললাম__
” নীলিমা!সকাল ৭টায় যাওয়ার কি আছে? তুমি বরং একটু দেরিতে বের হও, এর ভিতর আমি ভার্সিটি থেকে একটা ক্লাস করে আসতে পারব।”
– জনাব আবির সাহেব! আপনাকে ধন্যবাদ এটুকু বলার জন্য। আপনাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি, আর নয়….”
– মানে? তুমি আমার সাথে যাবে না???
নীলিমা সিরিয়াস মুডে জবাব দেয়___
” না! আমি যাচ্ছি না….আমার একটা ফ্রেন্ড যাবে আমার সাথে আমার গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে। আমি ওর সাথে’ই যাচ্ছি…”
তোমার ফ্রেন্ড মানে?কে সে?
আমার নীলি আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে বিরক্ত ভঙ্গিতে তাকালো। তারপর___
” আমার ফ্রেন্ড মানে ফ্রেন্ড। স্রেফ ফ্রেন্ড। আজব মানুষ তো আপনি! সবকিছুর কি জবাব আপনাকে দিতে হবে নাকি?”
নীলির এভাবে কথা বলা দেখে আমার বুকের ভেতর’টা হাহাকার করে উঠল। মুচড় দিয়ে উঠল। ৭বছরের বৈবাহিক জীবন আমাদের। এত বছরের বৈবাহিক জীবনে নীলির এমন ভাবে কথা বলা আগে কখনো শুনিনি। কিন্তু বিগত কয়েকটা মাস ধরে ও যেন কেমন হয়ে গেছে। আমার সাথে কথা বলে না। আমি কথা বলতে গেলে কেমন কেমন যেন করে। মুখ কালো করে উত্তর দেয়। তারউপর আজকে এমন ভাবে কথা বলার পর যেন নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারিনি। একরকম দৌঁড়ে চলে গেলাম রুম থেকে। পরদিন সকালবেলা ঘুম ভাঙে হাসাহাসির আওয়াজে। ঘুম চোখে রুম থেকে বের হলাম। নিচে তাকিয়ে দেখি ড্রয়িংরুমে নীলি আর ঐ ছেলেটি বসে আছে। যে ছেলেকে নিয়ে নীলি এর আগে একাধিকবার এই বাসায় এসেছে এমনকি ঘুরতেও গেছে।
আজও সেই ছেলে এই বাসায়। নীলি জোর করে ছেলেটির মুখে বিস্কুট তুলে দিচ্ছে, আর গল্প করছে। হাসাহাসিও হচ্ছে, হচ্ছে চোখাচোখি। আমি উপরে দাঁড়িয়ে সে দৃশ্য অবলোকন করছি। বেশীক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারিনি এভাবে, নীলি আমায় দেখে ফেলে। আমি নিচে নামলাম। নীলি ওর ছেলে বন্ধুর সাথে আমায় পরিচয় করিয়ে দেয় এইভাবে___
” ইমন! এ আমার বন্ধু আবির। এখানকার একটা ছোট্ট ভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেন…আর আবির সাহেব! এ আমার বন্ধু ইমন।এবার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া কমপ্লিট করে এখানকার সেরা নামকরা কোম্পানিতে এমডি হিসেবে জয়েন করেছে….
নীলি পরিচয় পর্বের মধ্যেই আমায় অদ্ভুতরকম ভাবে ছোট করেছে। তারপরও আমি হেসে হেসে নীলির ঐ ছেলে বন্ধুর সাথে হেসে করমর্দন করলাম। নীলি রওয়ানা দেয় ওর ছেলে বন্ধুর সাথে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে আর আমি হতভাগা দাঁড়িয়ে সে দৃশ্য দেখছি।
আমার চোখের সামনে দিয়ে আমার পরি উড়ে যায় দুর অজানায় সুখের উদ্দেশ্যে। আর আমি চোখে জল মুখে হাসি নিয়ে আমার পরির জন্য দোয়া করলাম__
” হে আল্লাহ! তুমি আমার পরিটাকে সুখে রেখো…শান্তিতে রেখো…
কোনো কষ্ট যেন ওকে স্পর্শ না করে….”
আমার গল্প এখানে’ই সমাপ্ত……
এটুকু লিখে আবির অফলাইনে চলে যায়। আর কখনো আবিরকে অনলাইনে পাওয়া যায়নি। এরপর আবির আর কখনো ওর পরিকে নিয়ে কিছু লিখেনি। আবিরের নামের পাশের সবুজ দাগটাও আর কখনো দেখেনি কোনো পাঠক।
লেখিকার কথা-
“সত্যি’ই কি গল্প এখানে সমাপ্ত???”
নাহ!!!
গল্প এখানে সমাপ্ত নয়। এরপর আবির গিয়েছিল নরসিংদীর সেই অজপাড়া গায়ে যেখানে আবির ওর নীলিকে প্রথম দেখেছিল। আবির ওখানে পা রাখার সাথে সাথে ঐখানকার ছেলে মেয়ে’রা ছুটাছুটি করতে থাকে নীলি আপুর জামাই এসেছে, জামাই এসেছে বলে।
আবিরের বাবা হাসি মুখে ওর বন্ধু পুত্রকে রুমে নিয়ে যায়। আবিরের মা হেসে জবাব দেয়-
“এতদিন পর মনে পরল তবে আমাদের কথা? আমরা তো ভাবছিলাম ভুলেই গেছ…”
আবির বলে__
” কি যে বলেন না!
বাবা মাকে কি কেউ ভুলতে পারে?!!!”
আবির আসার খবর শুনে নীলিমা হসপিটাল থেকে আসে। উঠোনে আসতে’ই শুনে ওর বাবা কার সাথে যেন বলছে___
” জামাই আইছে। রুমে বইয়্যা আছে। বাজার করতে অইব…”
নীলিমাকে দেখে ওর বাবা বলে__
” মা এসেছিস? রুমে যা। জামাই আইছে…”
আবির রুমের জানালা দিয়ে বাইরে তাকাই….
এদিকে নীলিমা বিরক্ত গলায় উঁচু স্বরে জবাব দেয়_
“তোমরা এত জামাই, জামাই করো কেন সেটাই বুঝি না।”
নীলিমার মা রুম থেকে বের হতে হতে বলে__
” জামাইরে জামাই কইব না তো কি কইব?”
নীলি আরো জোরেশোরে বলে___
” মা-বাবা! তোমাদের আর কত বলব?!!! ওনি আমার বন্ধু, স্রেফ বন্ধু। আর কিচ্ছু না।”
মা:- কি বলছিস তুই এসব? তুই না আবিবের বিয়ে করা…. (….)….
নীলিমা:- বউ, এইতো?!!!
কিন্তু আমি মানি না এসব বিয়ে।
বাবা:- কি কস তুই এসব?
নীলিমা:- বাবা আমি ঠিক বলছি। ওনি আমার বন্ধু’ই শুধু। আর তাছাড়া ওনার বয়স আর আমার বয়সটা খেয়াল করেছ????
তাই বলছি, ওনার সাথে আমার যায় না।
নীলিমার কথা শুনে নীলিমার বাবা মা অবাক আর আবির?!!!
দুর থেকে’ই সবকিছু শুনে নিয়ে চোখের পানি ছেড়ে দিল…..
আবিরের দু’চোখ গড়িয়ে যখন অশ্রু পরছে, নীলিমা তখন ওর বাবা-মাকে বকতে বকতে রুমে ঢুকছে। রুমে ঢুকে’ই নীলিমা আবির’কে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিছুটা চমকে যায়। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে চলে যাওয়ার জন্য যেই না পা বাড়ালো নীলিমা ওমনি আবির পেছন থেকে ডেকে উঠল___
“নী….লি..মা……”
নীলিমা থমকে দাঁড়ায়। আবির চোখের পানি মুছে নীলিমার সামনে যায়। তারপর__
“আমি চলে যাব। আজ এখনি চলে যাব। তার আগে তোমার কাছ থেকে আমার কিছু জানার আছে, বুঝার আছে…”
আবিরের কথা শুনে নীলিমা মাথা নিচু করে ফেলল। আবির আবারো বলা শুরু করল__
” বিশ্বাস করো নীলিমা! আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর পেয়ে গেলে আমি আর কখনো তোমার সামনে আসব না,কখনো না…”
নীলিমা চুপটি করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আবির আবারো বলছে__
” আমি তোমায় জোর করব না আমার সাথে যাওয়ার জন্য, আমি শুধু একটা কথায় জানতে চাই। আর সেটা হলো_
“আমি কি সত্যি’ই তোমার অযোগ্য?”
নীলিমা চুপ।
নীলিমা চুপ করে থেকো না।
তুমি যত তাড়াতাড়ি উত্তর দিবা, ততই তোমার ভালো। কারন, আমার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেলে আমি চলে যাব তোমার বাড়ি থেকে। শুধু বাড়ি নয়, তোমার জীবন থেকেও। আর কখনো কোনো দাবি নিয়ে তোমার সামনে এসে দাঁড়াবে না এই আবির।”
নীলিমা মুখ খুলে। কাঁপা কাঁপা স্বরে জবাব দেয়___
” জি, বলুন! কি জানতে চান?”
আবির আবারো বলে ঐ যে বললাম,
আমি কি সত্যি’ই তোমার অযোগ্য?
নীলিমা কাঁপা গলায় জবাব দেয়__
“আপনি অযোগ্য হতে যাবেন কেন?”
আবির:- নীলিমা! আমি প্রশ্নের বদলে প্রশ্ন নয় উত্তর চাই….
নীলিমা:- বলছি….
বাইরে যাবেন???
আবির:- বাইরে? কোথায়???
নীলিমা:- আগে চলেন’ই না…
আবির:- তুমি বাইরে গিয়ে কথা বলতে চাচ্ছো???
ঠিক আছে, চলো….
নীলিমা আবিরকে নিয়ে যায় সবুজ মাঠের ভেতর দিয়ে দুরে কোথাও। আবিরও নীলিমার পিছু পিছু গ্রামের মেঠুপথ ধরে হেঁটে যাচ্ছে।বেশ কিছুদূর যাওয়ার পর নীলিমা থেমে যায়। একটা বিশালাকার আম গাছের নিচে গিয়ে নীলিমা দাঁড়ায়। আমগাছটা একটা বিরাট বড় পুকুরের সামনে গা ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে। এই মুহূর্তে ওরা পুকুরের সামনে গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে আছে চুপটি করে। কারো মুখে’ই যেন কোনো কথা নেই।শুধু ক্ষাণিক বাদে বাদে গাছের মগডাল থেকে ভেসে আসছে পাখির কিচিরমিচির শব্দ। দু’জনের মনেই এখন হাজারো কথারা এসে ভীড় করেছে, কিন্তু কেউ শুরু করতে পারছে না। মুখ খুলে প্রথম নীলিমা____
” জায়গা’টা বেশ দারুণ,তাই না?”
আবির:- হুম, ঠিক তোমার মতো….
নীলিমা:- মানে…..???
আবির:- সে কিছু না…
নীলিমা:- ওহ….
আবির:- তারপর…???
কেমন চলছে ডাক্তারি জীবন???
নীলিমা:- মন্দ না, ভালো’ই।
আচ্ছা, বাবা-মা, আদিবা আপু, দুলাভাই ওনারা কেমন আছেন??? **নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
আবির:- জানি না কেমন আছে। তবে বেঁচে আছে মনে হয়….
নীলিমা:- সে আবার কেমন কথা???
আবির:- মানে বাড়িতে যাওয়া হয় না ৮বছর ধরে। এই ৮বছরে ওদের খুঁজ নেওয়া হয়নি, শুধু সময় সময় আব্বুকেই কল দেওয়া হয়। যেহেতু ওদের সাথে কোনো কথা হয়না, তাই জানাও নেই ওরা কেমন আছে। বেঁচে আছে এই কারনে বললাম কারণ মরে গেলে এতদিনে ঠিক কারো না কারো মাধ্যমে খবর পেয়ে যেতাম। এবার বুঝেছ???
নীলিমা:- হুম….
,
আপনি না সত্যি’ই একটা রোবট।
আবির:- Sorry, কি বলছ???
নীলিমা:- এইভাবে এতটা বছর ধরে ওদের থেকে আলাদা আছেন, আপনার খারাপ লাগে না ওদের জন্য???
আবির:- না….
নীলিমা:- এই জন্য’ই আপনাকে রোবটের সাথে তুলনা করলাম…..
আবির:- হুম, রোবট’ই বটে।না হলে মানুষের দেওয়া এত আঘাত সয়ে যেতে পারতাম না…..
আবির একরকম খোঁচা দিয়ে’ই কথা’টা বলে। আবিরের কথা শুনে নীলিমা চুপ হয়ে যায়….
যায় হোক….
আমার প্রশ্নের উত্তর’টা কি আমি পাবো???
গম্ভীর ভাব নিয়ে আবির নীলিমার দিকে তাকালো…
নীলিমা আবিরের দিকে তাকিয়েও তাকাতে পারেনি অজানা কারনে। যার কারণে পুকুরের দিকে তাকিয়ে’ই জবাব দেই__
” আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। প্লিজ,এ ব্যাপারে আর কোনো প্রশ্ন করে আমায় বিব্রতকর অবস্থায় ফেলবেন না…”
নীলিমার কথা শুনে আবির নীলিমার দিকে চোখ তুলে তাকালো। তারপর__
” আমিও সেটাই চাই নীলি! আমি সব প্রশ্ন ভুলে যেতে চাই। তুমি শুধু প্লিজ আমার সাথে চলো। তুমি যদি এভাবে আমায় ফিরিয়ে দাও তাহলে আমি জীবনেও এ মুখ দেখাতে পারব না আমার বাবাকে। নীলি! আমি কখনো আমার বাবাকে এতটা খুশি দেখিনি, যতটা খুশি হতে দেখেছি বাবা যখন তোমার বাবাকে বলেছিল__
” আবির বিয়েটা করছে”।
নীলি! আমি আমার বাবার জন্য এই একটি কাজ ছাড়া কখনো কিছু করতে পারিনি, আর পারব কি না জানিও না। তাই বলছি__
নীলি! প্লিজ এমন করো না তুমি। চলো আমার সাথে…”
নীলিমা চুপ হয়ে আছে।
আবির নীলিমার কাছে গিয়ে হাত দুটো ধরল। তারপর__
“নীলি! প্লিজ একটা কিছু বলো। এভাবে চুপ করে থেকো না।”
নীলিমা হাত দুটো সারিয়ে নিয়ে বলল__
“তা কিছুতেই সম্ভব নয়..”
আবির:- নীলি! আমি বলছি না তোমায় আমার সাথে সংসার করতে হবে, তুমি শুধু মিছেমিছি আমার সাথে থাকবে। যাতে করে শেষ বয়সে এসে আমার বাবা না কষ্ট পেয়ে মরে। শুধু আমার নয় তোমার বাবা-মায়ের কথা’টাও একটু ভাবো….
,
নীলিমা:- ঠিক আছে।
আমি আপনাকে পরে জানাচ্ছি….আজক
ে রাতটা আমায় ভাবতে দিন।
আবির:- ঠিক আছে….
সেদিন সারা রাত ভেবে চিন্তে নীলিমা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে,
যায় হোক!
সে কখনো পারবে না ওর সিদ্ধান্ত থেকে লড়তে। নীলিমা আবিরকে জানিয়ে দেয় তার পক্ষে আবিরের ঘর করা সম্ভব নয়। আবির অনেক বুঝিয়ে শুনিয়েও নীলিমাকে ওর সিদ্ধান্ত থেকে টলাতে পারে নি। নীলিমা ওর সিদ্ধান্তে বড্ড পরিকর।
একবুক হাহাকার আর হতাশ মন নিয়ে আবির ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। ঢাকায় গিয়ে অনেক চেষ্টা করেছে নীলিমাকে ভুলার জন্য, কিন্তু পারে নি। যতবার’ই ভুলার চেষ্টা করেছে ততবার’ই নীলিমার মায়া মায়া মুখ’খানি চোখের সামনে ভেসে উঠেছে। আবির না পারছে নীলিমাকে আপন করে কাছে পেতে, না পারছে নীলিমাকে ভুলে যেতে।
ভুলবে কি করে???
নীলিমা যে ওর প্রথম প্রেম,
প্রথম ভালোবাসা….
প্রথম ভালোবাসাকে কি কেউ কখনো ভুলতে পারে?
না…
কখনো না…
শত ব্যস্ততার মধ্যে থেকেও আবির পারেনি একমুহূর্তের জন্য ওর নীলিমাকে ভুলে যেতে। এদিকে নিজেকে কন্ট্রোলও করতে পারছে না। আবিরকের ভেতরের প্রেমিক মন যেন সবসময় নীলি, নীলি করে চিৎকার করত। নীলিকে কাছে চাইত। বড্ড আপন করে কাছে পেতে চাইতো….
কিন্তু সেটা বোধ হয় উপরওয়ালা চাইনি। তাইতো এমন ভাবে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল। মাঝে মাঝে’ই আবির ভাবে__
আচ্ছা আমি কি ওকে সত্যি’ই ভালোবাসতে পেরেছি??? নাকি কোথাও একটা কমতি আছে…?!!!
আচ্ছা, সত্যি’ই কি আমি ওর অযোগ্য নাকি কোথাও একটা ভুল হচ্ছে….
এমন হাজারো প্রশ্ন আবির নিজেকে নিজে’ই করে। কিন্তু কোনোটার সঠিক জবাব পায় না। এদিকে আবির ভার্সিটিতে ঠিক ভাবে স্টুডেন্টসদের পড়াতেও পারছে না। মানসিক শান্তির জন্য আবির চাকরীটা ছেড়ে দেওয়ার দরখাস্ত করে। আবিরের মত মেধাবী টিচার হাতছাড়া করতে চাইনি ভার্সিটি কর্তৃপক্ষ।আবিরের দরখাস্ত মঞ্জুর না করে আবিরের সার্বিকদিক বিবেচনা করে আবিরকে ৬মাসের ছুটি দেয় ভার্সিটি থেকে। আবির দিন রাত চব্বিশ ঘন্টা রুমে আবদ্ধ থাকায় কয়েকদিনের ভেতর আবির অসুস্থ্য হয়ে যায়। খবর পেয়ে ছুটে আসে নীলিমা….
দিন রাতে জেগে আবিরের সেবা এবং পরিচর্যা করে করে আবিরকে সুস্থ করে তুলে ডাক্তার নীলিমা। মাত্র ২মাসের ব্যবধানে আবির অনেকটা সুস্থ হয়ে যায়। আবির নীলিমাকে নরসিংদীতে চলে যেতে বলে, যেহেতু ওর হসপিটাল আছে। নীলিমার ভাষ্যমতে___
” আপনি এখনো সম্পূর্ণ সুস্থ হোন’নি। এই অবস্থায় আপনাকে ছেড়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আর গেলেও বাবা-মা পাঠিয়ে দিবে এইখানে। আর হসপিটালের জন্য আমার সহকারী এবং দুইটা নার্স আছে। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন…”
নীলিমার সাহচর্যে আবির আবার আগের মত হয়ে যায়। সুস্থ হয়ে উঠে। কিন্তু মনটা উত্তরোত্তর দুর্বল হতে থাকে নীলিমার প্রতি। এ অবস্থা চলতে থাকলে আমি পাগল হয়ে যাব, আমাকে যে করে’ই হোক নীলিমার আড়ালে যেতে হবে। নিজের জন্য না হলেও নীলিমার সুখের জন্য ওর আড়ালে চলে যেতে হবে। দুরে চলে যেতে হবে, খুব দুরে….
যেখানে গেলে আমার ছায়াও নীলিমা দেখতে না পায়….
আবির নীলিমার থেকে দুরে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। আবির দেশ ছেড়ে বিদেশ চলে যাওয়ার সব বন্দোবস্ত করে ফেলল। নীলিমার সামনে যাওয়ার সাহস আবিরের নেই, যদি দুর্বল হয়ে পরে সেই ভয়ে। আবির দুরে উড়াল দেওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে ওর পরিকে এসএমএস করবে। তার আগে আবিরের যেতে হবে মণির বাসায়। মণি নীলিমার বেস্ট ফ্রেন্ড। ইন্টার এবং মেডিকেলে একই কলেজে ওরা একসাথে পড়ত। আবির যাচ্ছে তার’ই বাসায়। বিদেশে গিয়ে এই মণির মাধ্যমেই আবির ওর পরীর যাবতীয় খবরাখবর নিতে চায়।
দুপুর ২টার দিকে আবির গিয়ে পৌঁছায় মণিদের বাসায়…..
মণিদের বাসায় পৌঁছে’ই আবির প্রথমে নীলিমাকে বার্তা পাঠাই। বার্তা মারফত জানিয়ে দেয় সে দুরে কোথাও চলে যাচ্ছে। খুব দুরে। আর এও জানালো যে বাকি জীবনটা সে সেখানেই কাটিয়ে দিবে…
প্রিয় বান্ধবী নীলিমার হাজবেন্ড এসেছে, সেটা শুনে হসপিটাল থেকে ছুটে আসে ডাক্তার মণি। এসে সালাম ও কুশল বিনিময় করেই ব্যস্ত হয়ে পরে বান্ধবীর বরের জন্য কি রান্না করবে না করবে সেসবে। আবির মণিকে শত চেষ্টা করেও থামাতে পারেনি। বলতে পারেনি বোন! আমার হাতে সময় নেই। আমি আজ রাতের ফ্লাইটের বিদেশ চলে যাচ্ছি।
মণি যখন কাজের বুয়ার সাথে রান্না বান্নায় ব্যস্ত, মণির হাজবেন্ড তখন বাহির থেকে কলিংবেলে চাপ দেয়।
আবির গিয়ে দরজাটা খুলতে’ই চমকে যায়। আবিরের সাথে সাথে ইমনও চমকে যায়….
চমকে গিয়েও মুখে হাসি ফুটে উঠে ইমনের….
রুমে ঢুকতে ঢুকতে আবিরকে বলে___
” এতদিনে তবে আমি মামা হতে চলেছি??? তা কোথায় আমার বোন নীলিমা..???”
ইমনের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারেনি আবির। কি বলছে এসব? কিসের মামা? আর বোন?!!! **নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
কোন নীলিমার কথা বলছেন ওনি? আর ওনি তো সেই ছেলে যে ছেলের সাথে খুব ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল নীলিমার। সেই ছেলে এখানে কেন?
এমন হাজারো প্রশ্ন আবিরের মনে এই মুহূর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে।ইমন রুমে ঢুকেই সোফায় গা এলিয়ে দেয়। আবিরকেও বসতে বলে। আবির সোফায় বসলে ইমন বলা শুরু করে___
” আমি ইমন! ইঞ্জিনিয়ার ইমন। আমার আরেকটা পরিচয় আছে আর সেটা হলো আমি মণির হাজবেন্ড।”
আবির কিছু একটা বলতে যাবে তখনি ইমন বলে__
” নীলিমা মণির বান্ধবী। সেই হিসেবেই প্রথম ওর সাথে আমার পরিচয়। ওর বড় ভাই নেই। ও আমাকে তাই ভাইয়া বলেই ডাকত। আমিও ওকে বোনের মত স্নেহ করতাম। ও ওর যাবতীয় কিছু আমার আর মণির সাথে শেয়ার করত। একদিন ও ওর জীবনের গল্প আমায় শেয়ার করে। ওর গল্প শুনে আমি কেঁদে দিয়েছিলাম। আমার ওয়াইফ তো সেদিন সারারাত প্রাণপ্রিয় বান্ধবীর জন্য কেঁদেছে। যে কথাটি বলছিলাম….
সেদিন নীলিমার কষ্টের কথা শুনে ওকে বলেছিলাম,
কখনো যদি কোনো হেল্পের প্রয়োজন হয়, এই ভাইকে বলবি। এই ভাই জীবন দিয়ে হলেও তোর উপকার করার চেষ্টা করবে। একদিন নীলিমা আমায় কল দেয়। ওর নাকি খুব বিপদ তাই আমায় পার্কে যেতে বলে। আমি ছুটে যায় পার্কে। সেখানে গিয়ে যা শুনলাম তাতে আমি বাকরূদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। যাকে আমি নিজের বোনের মত স্নেহ করতাম সেই বোন আমায় বলেছিল__
” ওর প্রেমিক হয়ে অভিনয় করতে, ওর সাথে এমন ভাবে মিশতে যাতে ওর আবির ওকে ঘৃণা করে দুরে সরে যায়।”
আবির একথা শুনে লাফ দিয়ে সোফা থেকে উঠে পরে। তারপর___
” অভিনয় মানে? কেন???
ও আমার সাথে কেন এমন করল? আর ওর থেকে দুরে সরাতেই বা কেন চাচ্ছিল?”
ইমন আবারো বলা শুরু করল__
ঢাকায় নিয়ে এসে ওর আবির নাকি ওকে একটা পার্টিতে নিয়ে গিয়েছিল। আবিরের বন্ধুর বার্থডে পার্টিতে। সেখানে যাওয়ার পর ওর আবির সবার সাথে ওকে পরিচয় করিয়ে দেয়। আবির যখন ওকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে কোথায় একটু গেছিল ঠিক তখনি আবিরের মানে আপনার কিছু বন্ধু বান্ধব নীলিমার পাশে এসে দাঁড়ায়।”
আবির:- তারপর???
ইমন:- তারপর ওদের মধ্যে একটা মেয়ে নীলিমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নিয়ে বলে, এই মেয়েকে আবির বিয়ে করেছে, যার হাসি দিলে দাত ছাড়া কিছুই দেখা যায় না??? কথাটা এমন ভাবে ব্যাঙ্গ করে বলে যে বাকি সবাই হু হু করে হেসে দেয়। হাসি থামিয়ে আরেকজন বলে__
আবির শেষ পর্যন্ত একটা কালিতারাকে বিয়ে করল???
আরেকজন বলল__
যে ছেলে একটা তুরি বাজালেই হাজারটা মেয়ে লাইন ধরত সে ছেলে কি না এমন গেয়োভূতকে বিয়ে করেছে?!!!!
জবাব আবির সাহেব, সেদিন আপনার একটা বন্ধ বলেছিল,
আরে বুঝিস না….
রাত্রে লাইট নিভালে তো সবই অন্ধকার। আবির কেবলমাত্র ওকে…….. (…….)…… করার জন্য’ই বিয়ে করেছে। আরেকজন বলেছিল___
ওর যদি এতই মেয়েদের নিয়ে রাত কাটানোর শখ ছিল তো আমাদের বলত। আমাদের কেন বলেনি??? আমার বললে তো হাইয়ার লেভেলের মেয়ে এনে দিতাম….
জনাব আবির সাহেব আপনি যার জন্মদিনের পার্টিতে গিয়েছিলেন তার জিএফ কি বলেছিল জানেন???
বলেছিল আপনি নাকি আপনার বাবার কথা রাখার জন্য বিয়েটা করেছেন। আপনি নাকি ওকে কখনো স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারেন নি, আর পারবেনও না। ঐ মেয়েটি এও বলেছিল স্ত্রী হিসেবে মেনে নেওয়া তো দুরের কথা আপনারা নাকি আজও অবধি আলাদা রুমে ঘুমান। আপনার আরেকটা বন্ধু খুব বাজে ভাষায় গালি দিয়ে বলেছিল__
” কিরে মেয়ে! তোর রেট কত?”
তারপর আপনি চলে আসাতে ওরা কথার টপিক চেঞ্জ করে ফেলে। আর আপনি ঐ সকল মানুষরূপি জানোয়ারদের সাথে হেসে কথা বলেছেন।
বোকা মেয়েটির সেদিন থেকে কান্নাই হলো নিত্যদিনের সঙ্গী। ও কেঁদে কেঁদেই এমবিবিএসটা শেষ করে। আর আপনার থেকে দুরে সরে যাওয়ার প্ল্যানটা সেদিন’ই করে।
আবির দাঁড়ানো থেকে বসে পরে। ইমনেরও গলাটা জমে আসে। মণি চায়ের ট্টে’টা সামনে এনে রেখে বলা শুরু করে__
” ভাইয়া জানেন?!!!
কালো’রাও মানুষ। ওদেরও মন আছে। আর সে মনে আছে ভালোবাসা। ওদেরও ভালোবাসতে ইচ্ছে করে ভাইয়া। নীলিমা চাইত। খুব করে চাইত আপনাকে কাছে পেতে, ভালোবাসতে। জড়িয়ে ধরে কাঁদতে। আপনি যখন রাত্রে ওকে ঘুমানোর কথা বলে শুয়ে পরতেন, তখন ও চোখ বোজে ঘুমানোর ভান করে থাকত। আপনি যখন ঘুমিয়ে পরতেন ঠিক তখনই ও চুপি চুপি ও আপনার রুমের জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়াতো। ও ঘুমাতো আপনার মুখ দেখে, আর ঘুম ভাঙলেও আপনার মুখটা দেখার জন্য জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়াত। ভোরের আলোয় আপনাকে প্রথম দেখে ও ওর দিনটা শুরু করত। আর আপনার স্বপ্ন চোখে নিয়েই ও ঘুমিয়ে পরত। সেদিন আপনি যখন ওকে জিজ্ঞেস করেছিলেন ওর স্বপ্ন কি???
ও মনে মনে বলেছিল__
“আমার স্বপ্ন তো আপনি”
মুখে বলার সাহস পায়নি, কারণ ওর সবচেয়ে বড় দুর্বলতা ও কালো….”
আপনি যখন সেদিন ওর বাসায় গিয়েছিলেন ও খবর শুনে হসপিটাল থেকে ছুটে আসে খুশিতে আত্মহারা হয়ে। ইচ্ছে ছিল আপনাকে জড়িয়ে ধরতে, অভিমানী স্বরে বলতে__
এতদিন পরে এলে???”
কিন্তু পারেনি, কারণ ও কালো। সেদিন আপনি যখন বলেছিলেন ওকে ফিরে আসার জন্য ও যা খুশি হয়েছিল বলে বুঝানো যাবে না কিন্তু যখন বললেন আপনার বাবার জন্য আপনি ওকে এতবার রিকোয়েস্ট করতেছেন, তখন নিমিষেই ওর মনটা খারাপ হয়ে গেল। আপনার সাথে আসবে না কথাটা ও সাথে সাথে বলে দিতে পারত, কিন্তু বলেনি। কারন_
ও চেয়েছিল আপনি একটা ওসিলায় ও বাড়িতে থাকুন। আর ও আপনাকে একটা রাতের জন্য কাছে পাক। একই রুমে হয়তো শুয়া হয়নি, কিন্তু ও মনকে শান্তনা দিয়েছিল একই ছাদের নিচেই তো আছি আমরা…” **নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
আপনি চলে আসার সময় আপনার সামনে আসেনি, কারন সকাল থেকেই কেঁদে কেঁদে ওর চোখ লাল রক্তবর্ণ ধারণ করেছিল। আপনার অসুস্থতার কথা ও ওর বাবা মা নয়, আপনার বাসার কাজের মেয়ের থেকে জেনেছিল। কারণ, ও কাজের মেয়ের সাথে প্রতিদিন মিনিমাম ঘন্টাখানেক কথা বলত শুধুমাত্র আপনার খুঁজ খবর নেওয়ার জন্য।
ভাইয়া! সাদা-কালো কোনো ফ্যাক্ট না। আসল কথা হলো মানুষের মনটা কেমন???
আমি এ ব্যপারে ১০০%গ্যারান্টি দিতে পারব, আমার বান্ধবী খাঁটি সোনা।
আর ওর মনটা ছোট শিশুদের মত নিষ্পাপ…..
ইমন:- এবার যখন ঢাকায় আসে তখন আমি বলছিলাম আপনাকে নিয়ে এখানে আসতে। ও বলল, আসলে সুখবর নিয়েই আসবে। আচ্ছা, সুখবর কি? আপনাদের মধ্যে সব ঠিকঠাক হয়ে গিয়েছে তো?!!!
আবির সোফা থেকে উঠে দাঁড়ায়। পকেট থেকে পাসপোর্টের কাগজটা বের করে টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ফেলে। মণি আর ইমনের দিকে তাকিয়ে বলে__
“বড় ভুল হয়ে গেছে। অনেক বড় ভুল…”
তারপর ব্যাগপত্র রেখে’ই একরকম দৌঁড়ে বের হয়ে যায় রুম থেকে। এদিকে ফ্লোরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পাসপোর্টের টুকরো দেখে মণির ভেতরটা আঁতকে উঠে। তবে কি নীলিমার কিছু হয়েছে???
ইমন- মণি একমুহূর্ত দেরী করল না। আবিরের রেখে যাওয়ার ব্যাগপত্র নিয়ে ওরাও রওয়ানা হয়ে যায় ঢাকার উদ্দেশ্যে।
এদিকে নীলিমা!!!!
ফোনে আবিরের বার্তা পেয়ে পাগলের মত হয়ে যায়। রুমের দরজা বন্ধ করে আবিরের রুমের দেয়ালে আবিরের যতগুলো ছবি আছে সবগুলো নামিয়ে ফেলে। সবগুলো ছবি একসাথে জড়ো করে সেগুলোকে বুকে জড়িয়ে কাঁদতে লাগল নীলিমা। একবার বুকে তো আরেকবার ফ্রেমে বন্দি আবিরের ছবি মুখের কাছে নিয়ে কাঁদতে থাকে নীলিমা।কাঁদতে কাঁদতে বিলাপ করে বলতে থাকে__
” আমি দুরে সরাতে চেয়েছি, এত দুরে তো যেতে বলিনি। আমি এখন কাকে নিয়ে থাকব? কার জন্য বাঁচব?”
কেঁদে কেঁদে একটা সময় নিস্তেজ হয়ে যায় সে।ফ্লোরেই ঐ অবস্থায় ঘুমিয়ে পরে নীলিমা।
এদিকে সে রাত্রেই বাসায় পৌঁছে আবির, মণি এবং ইমন।
রাত্রি ১২টা___
আবির ওর দরজায় এসে একের পর এক নক করতেছে। কিন্তু ওর নীলি আর দরজা খুলছে না। এদিকে মণি কল দিচ্ছে নীলির ফোনে। ফোনটাও রিসিভ করছে না। রীতিমত ভয় পেয়ে যায় সবাই। আবির তো কেঁদে অস্থির। নীলির কিছু হলো না তো???
এদিকে দরজা যে ভাঙবে তারও উপায় নেই। কারন দরজাটা স্টিলের, হাতের কাছে এমন কিছু নেই যা দিয়ে দরজা কাটবে। মণি বিরামহীন ভাবে একের পর এক কল দিয়েই যাচ্ছে। মাঝরাত্রে ঘুম ভেঙে যায় নীলিমার। ফোনে আলো জ্বলে উঠতেই দেখে ৩০০মিসড কল। নীলিমা ঘুম চোখে কল বেক করে….
ওপাশ থেকে মণি উদ্ভীগ্ন কন্ঠে বলে__
” নীলিমা! দরজাটা খুল। কথা আছে। ইমন, আবির ভাইয়া সবাই দাঁড়িয়ে আছে।”
আবিরের নাম শুনে নীলিমার চোখ থেকে ঘুম লাফিয়ে দুরে সরে গেল।একমিনিট খুলছি বলে নীলিমা লাফিয়ে ফ্লোর থেকে উঠে। দরজা খুলতে গিয়েও খুলেনি। ফ্লোরে রাখা ছবিগুলো টানানোর জন্য উঠে পরে লেগে যায় নীলিমা। লাফিয়ে একবার ফ্লোরে আরেকবার ফ্লোর থেকে ছবি নিয়ে খাটে উঠে সেগুলো দেয়ালে টানাতে শুরু করে। এদিকে আবির দরজায় একের পর এক নক করতেই থাকে। ১০মিনিট পর দরজা খুলে নীলিমা। আবিরসহ সবাই রুমে প্রবেশ করে। রুমে প্রবেশ করে আবিরের চক্ষু চরকগাছ……..
সকালেও তো রুমটা সাজানো গোছানো ছিল, একদিনের ব্যবধানে কি করে হলো এসব???
মণি এবং ইমন দুজনেই নীলিমার দিকে তাকিয়ে বলল__
” ইয়া ছি! তোর এই অবস্থা কেন? শাড়ি, চুল এমন এলোমেলো কেন? আর রুমে এত ধূলোবালি…..রুম কি গুছাস না???পঁচা মেয়ে….”
ইমন বিছানায় বসতে গিয়ে দাঁড়িয়ে পরল। ধুলোয় চাদর কচকচ করতেছে__
” নীলিমা! তুই না নোংরা পছন্দ করিস না বোন?!!! তো এসব কি??? বিছানায় বসা যাচ্ছে না কেন????”
আবির ইমন আর মণিকে সোফায় বসতে বলল।ওরা সোফায় বসতে গিয়ে লাফিয়ে উঠল। আবির কি হলো জিজ্ঞেস করতেই মণি জবাব দেয়__
” সোফায় জুতা কে রেখেছে?”
আবির বিছানা ঠিক করার জন্য বারান্দা থেকে বিছানা পরিষ্কার করার ঝাড়ু আনতে গিয়ে বারান্দায় ওর একটা ছবি আবিষ্কার করে। ছবিটা হাতে নিয়ে রুমে ঢুকে আবির বলে__
” আমাদের বিয়ের যে ছবি আলমারির ভেতর ছিল, সে ছবি বারান্দায় গেল কিভাবে? ছবিরও কি পা আছে নাকি?”
মণি:- ভাইয়া! ঐ যে খাটের নিচে দেখেন আপনার ল্যাপটপ। ল্যাপটপেরও কি পা আছে?
ইমন:- চায়ের কাপ পরে আছে টেবিলের নিচে। টেবিলও কি আজকাল চা খায়???
আবির:- মণি! সিসিটিভির ফুটেজটা অন করে দেখো তো আজকে কয়টায় ভূমিকম্প হয়েছিল? আর ঠিক কয়মিনিটের জন্য….
কথাটা বলে আবির নীলিমার দিকে তাকাই।নীলিমাও তখন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে……
চলবে……