ফুলসজ্জা পর্ব ৬ অন্তিম পর্ব
লেখিকাঃ #অনামিকা_ইসলাম “অন্তরা”
. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
নীলিমা আবিরের কাছ থেকে দুরে সরে যায়। বারান্দায় গিয়ে কিছুক্ষণ বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে ছিল।
কি মনে করে যেন বিছানায় এসে বসল, তারপর শুয়া…
অতঃপর ঘুম….
আবির একহাতে ভর দিয়ে শুয়ে নীলিমার দিকে তাকিয়ে আছে। নীলিমাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে’ই আবিরের চোখ দুটো কখন যে জলে ভরে উঠে সেটা বুঝতে পারেনি আবির। বুঝতে পারে তখন যখন নীলিমা নড়েচড়ে উঠে। চোখ মেলে আবিরের দিকে তাকাবে ঠিক তখন’ই আবির বালিশে শুয়ে পরে। শুয়ার সময় আবির বুঝতে পারে ওর চোখের জলে বালিশ ভিঁজে একাকার হয়ে আছে।
আবির চোখের জল মুছে নেয় হাত দিয়ে। তারপর মনে মনে বলে__
” আর নয়! আমি কালকে’ই নীলিমাকে ভালোবাসার কথাটা বলতে চাই।”
আবির বিছানা থেকে বারান্দার গ্রিল ধরে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়।
সবাই হয়তো তখন দিনের সমস্ত ক্লান্তি ভুলে নিদ্রাজগতে পাড়ি জমিয়েছে। কিন্তু আবির?!!!
আবিরের চোখে ঘুম নেই। আবিরের মনে তখন শুধু একটি নাম—
নীলিমা,নীলিমা,নীলিমা।
নীলিমা আবিরের প্রথম দেখা প্রেম,
না বলা ভালোবাসা;
নীলিমা আবিরের সুখের স্বর্গ,
বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা।
নীলিমা আবিরের মন খারাপের মহৌষধ।
যার মায়ামাখা মুখখানা দেখলে আবিরের ওর সমস্ত ক্লান্তি দুর হয়ে
নিমিষে’ই মন’টা ভালো হয়ে যায়, সে নীলিমা…. আবিরের নীলিমা…….
ঘড়ির কাটা তখন ভোর ৩টা ছুঁই ছুঁই।
নীলিমা ঘড়িতে একটা বিশেষ কাজে এলার্ম দিয়ে রেখেছিল।
৩টা বাজতে’ই এলার্ম বাজা শুরু করল। তন্দ্রাচ্ছন্ন নীলিমা ঘুম চোখে’ই হাতড়ে খুঁজতে থাকে এলার্ম ঘড়িটা।
খুঁজে না পেয়ে চোখ খুলে নীলিমা।
আধশোয়া হয়ে মাথার কাছ থেকে ঘড়িটা এনে এলার্মটা বন্ধ করে ফিরে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো।
লাইট না জ্বালিয়ে’ই ভীরু পায়ে নীলিমা আলমারির কাছে হেঁটে যায়।
” যে ডায়েরী ধরার অপরাধে ওনি সেদিন আমায় ধমক দিয়েছিলেন, আজ দেখতে চাই সেই ডায়েরী।
আমি জানতে চাই কি আসে ওতে। একটা সামান্য ডায়েরীকে কেন ওনি এভাবে আগলে রাখেন সেটা আমি জানতে চাই।”
নীলিমা ধীরে ধীরে আলমারিটা খুলে ঐখানটা খুঁজতে থাকে যেখানে আবির সেই ডায়েরীটা রেখেছিল।অনেক খুঁজাখুঁজির অবশেষে নীলিমা খুঁজে পায় ডায়েরীটা।
ডায়েরীটা হাতে নিয়ে আস্তে করে নীলিমা আলমারিটা লক করে দেয়।
শাড়ির নিচে লুকিয়ে ডায়েরী’টা নিয়ে নীলিমা চুপটি করে রুম থেকে বের হয়ে যায়। ছাদে গিয়ে নীলিমা ওর ফোনটা ওপেন করে সেটার টর্চটা জ্বালানো।ডায়েরীটা ওপেন করে নীলিমা।
টর্চলাইটের আলোয় দেখতে পায় ডায়েরীর প্রথম পৃষ্টায় লেখা-
” একটুকরো সাদা কাগজের মাঝে
আমি লিখে যাব সব কথা
অদৃশ্য কালির আচড়ে”
যদি পারিস পড়ে নিস অন্তিম চিঠি ভেবে।
দ্বিতীয় পৃষ্টা খালি।
নীলিমা তৃতীয় পৃষ্টা উল্টালো।
তয় পৃষ্টাও শূন্য।
এভাবে ৪র্থ,৫ম,৬ষ্ট পৃষ্টা উল্টালো নীলিমা। সবগুলো পৃষ্টা’ই শূন্য। তবে উপর থেকে দেখা যাচ্ছে পরের পৃষ্টায় কিছু একটা লিখা আছে। নীলিমা তাই পৃষ্টা উল্টালো। মানে সপ্তম পৃষ্টা উল্টালো।
৭ম পৃষ্টা’ই নীলিমা কিছু একটা দেখতে পায়। টর্চের আলোয় নীলিমা দেখতে পায় তাতে লিখা আছে—
” প্রেমে পরেছি প্রথম দেখায়”
অত্যাধিক কৌতূহল আর আকর্ষন নিয়ে নীলিমা ৮ম পৃষ্টা উল্টায়।
কিন্তু অন্তত দুঃখের বিষয় সে পৃষ্টা’টা খালি ছিল।
তারপর অনেকগুলো পৃষ্টা লিখা শূন্য ছিল। ১৩তম পৃষ্টা’য় নীলিমা আবারো দেখতে পায়। মনে হচ্ছে কিছু একটা লিখা আছে। টর্চের আলোটা নীলিমা ডায়েরীর কাছে নিয়ে যায়।
দেখতে পায় তাতে লিখা-
” সে আমার মায়াপরি যার মায়ামাখা মুখ’খানা দেখলে দুনিয়ার সব ক্লান্তি নিমিষে’ই ভুলে যায় এই আমি।”
নীলিমা পৃষ্টা উল্টালো।
নাহ, কিছু’ই লিখা নেই। ১৭তম পৃষ্টায় নীলিমা দেখতে পায় বড় করে লিখা-
” তাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে কখন যে তোমায় বুকের ছোট্ট আসনে স্থান দিয়ে ফেলেছি, বুঝতে’ই পারিনি।”
তারপর অমেকগুলো পৃষ্টা শূন্য।
৩৫তম পৃষ্টায় নীলিমা দেখতে পেল তাতে লিখা-
” আজ অনেক দিন পর লিখতে বসলাম।ভেবেছিলাম আর কখনো প্রিয় ডায়েরীটার সাথে দেখায় হবে না।কিন্তু হয়ে গেল।
তাই আবারো লিখতে বসলাম।
– – – – – – – – – – – – – – – – – –
মাকে দিয়ে অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে বাবা’কে রাজি করালাম।
বাবার মনটা ভিষণ খারাপ।
কারণ-
বাবার বাল্য বন্ধুর মেয়ে নীলিমা’কে বিয়ে করতে পারিনি আমি। কিন্তু কি করব আমি?!!!
আমি যে প্রথম দেখা’য় ভালোবেসে ফেলেছি আমার মায়াপরিটাকে।
তারপর কয়েক পৃষ্টা শূন্য।
৪১তম পৃষ্টা’য় লেখা-
” বাবাকে নিয়ে নরসিংদীর ছোট্ট এক অজপাড়া গায়ে এলাম। মনটা ভিষণ খারাপ। যাকে প্রথম দেখায় এতটা ভালোবেসে ফেলেছিলাম তাকে পারলাম না বিয়ে করতে। বাবার শরীরটা খুব বেশী ভালো না। তাই মুখের দিকে চেয়ে নিজের ইচ্ছেটাকে বুকের ভেতর’ই ধামাচাপা দিয়ে দিলাম। পড়ন্ত বিকেলে সবাই যখন উঠোনে বসে আড্ডা দিচ্ছে আমি তখন পুকুরপাড়ে চুপটি করে বসে আছি। এই সেই পুকুরপাড় যেখানে অচেনা মায়াপরীটাকে প্রথম দেখেছিলাম। ভাবতে ভাবতে চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরল।
রাত্রে সবার সব সিদ্ধান্ত শেষে আমায় আর পাত্রীকে দেওয়া হলো আলাদা রুমে কথা বলার জন্য। প্রথমে যেতে না চাইলেও আদিবা আপুর অনুরোধে গেলাম। পাত্রী তখন মাথায় ওড়না দিয়ে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। রুমে যেয়ে’ই ডাক দিলাম-
” শুনোন”
মেয়েটি পিছু ফিরে তাকাই।
আমার চোখ দুটো ছানাভরা হয়ে যায়। অবাক বিস্ময়ে প্রশ্ন করলাম-
” আপনি নীলিমা?”
মেয়েটি মাথা নেড়ে বলল- “হুম”….
আচ্ছা তুমি আমাকে চিনতে পারছ?
– হুম।
কে আমি বলো তো?!!!
– বাবার বন্ধুর ছেলে।
~~~ আর??? আর এর আগে কখনো দেখেছ আমায়???
– নাহ…..
কিন্তু আমি যে তোমায় এর আগে অসংখ্য বার দেখেছি। **নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
– জি, কিছু বললেন???
~~~ নাহ……কিছু বলিনি। আসি তাহলে।
দৌঁড়ে বাবার কাছে গেলাম।
সাথে সাথে হ্যাঁ বলে দিলাম। বাবা সেদিন’ই বিয়েটা ঠিক করে ফেললেন।
নির্দিষ্ট দিনে আমার আর মায়াপরীটার বিয়েটা সম্পূর্ণ হয়।
শুরু হয় আমার আর নীলির সাজানো সুখের সংসার…..
নীলিমার চোখ ছানাভরা।
অবাক বিস্ময়ে আবিরের ৪১তম পৃষ্টার লিখার দিকে তাকিয়ে আছে।
আর মনে মনে বলছে__
” মানে কি? ওনার সাথে আমার আগেও দেখা হয়েছে? কিন্তু সেটা কখন,কোথায়?”
নীলিমা পৃষ্টা উল্টায়।
তারপর অনেকগুলো পৃষ্টা খালি।
৭৭তম পৃষ্টায় লিখা-
” এই মেয়ে!
তোমার কি মনে আছে তোমার সঙে আমার প্রথম দেখা’টা কোথায় হয়েছিল? নাকি ভুলে গেছ? যাক, ভুলে গেলেও মনে করিয়ে দিচ্ছি।
তোমাদের গ্রামের শেষ সীমানায় ছিল আমার কলেজের বন্ধ সিয়ামদের বাড়ি। পাশেই ছিল পুরনো একটি বিশাল বড় শিমুল গাছ। শিমুল গাছের অদুরে একটি মনোরম স্থান ছিল, সেখানে ছেলেমেয়েদের আড্ডা থাকত প্রায় সবসময়। চাকরীর সুবাধে আমি ঢাকায় থাকতাম। ফলে সেখানে যেতে অনেক সময় লাগত। তাই মাঝেমধ্যে তপ্ত দেহটাকে শীতল করার জন্য সেখানে যেতাম। ইচ্ছে থাকলেও দুরে থাকায় সব সময় যেতে পারতাম না।
এমন’ই এক পড়ন্ত বিকেলে সেখানে যাওয়ার জন্য রওয়ানা দিলাম।আমার সঙ্গে ছিল আমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ‘সিয়াম’। আমরা মন্থর গতিতে হাটতে হাটতে যখন কাঙ্খিত স্থানের কাছাকাছি এসে পড়েছিলাম, ঠিক তখন পিছন পেছন থেকে একটি মিষ্টি হাসির শব্দ ভেসে এলো। অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমার চোখ দুটি পেছনে ফিরল এবং সেখানে স্থির হয়ে থাকল দীর্ঘক্ষণ। কিছু বলার উপায় ছিল না তখন আমার। মনে হয় নিজের বোধ শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলাম। আমার হাত থেকে ফোন’টি পরে গিয়েছিল মাটিতে। তোমার হরিণের মত চোখ দুটি থেকে দৃষ্টি ফেরাতে পারছিলাম না আমি।
ইষৎ হাসির ফলে সুগন্ধময় মুখের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা দাতের শুভ্রতা আমায় পাগল করে তুলেছিল। আমার দিকে তাকিয়ে যখন তুমি লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছিলে, তখন তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে দুনিয়ার সবকিছু ভুলে গিয়েছিলাম আমি।
আমাকে যখন তুমি অতিক্রম করেছিলে, তখন আমার মুগ্ধ দৃষ্টি পড়েছিল তোমার মাথায়। যেখানে দীঘল কালো চুলের আধারে গেথে রেখেছিলে তিনটি তাজা কদম ফুল। যার সুগন্ধ স্পর্শ করেছিল আমার নাককে।
শোনো মেয়ে!
তুমি চলে গিয়েছিলে সেদিনের জন্য। আমি তাকিয়ে ছিলাম তোমার পেছন পানে। সেদিন তোমার মায়াবী মুখ দেখে নিজের অজান্তেই অস্ফুট স্বরে উচ্চারিত হয়েছিল, মাশাআল্লাহ!
এরপর থেকে এমন কোনো দিন নেই যেখানে আমি তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম, সেখানে তোমার জন্য অপেক্ষা করিনি। কিন্তু কোনোদিন তোমার দেখা পাইনি। বিশ্বাস করো মেয়ে, তোমাকে না দেখার কারণে অনেক কষ্ট হতো আমার। আমি ঠিকমতো ঘুমাতে পারতাম না। ঘুমের ঘোরে তুমি এসে আনাগোনা করতে আমার চারপাশে। স্টুডেন্টসদেরও ঠিকমতো পড়াতে পারতাম না। জানি না, কেন এমন হতো। হয়তো এর’ই নাম ভালোবাসা।
এরপর তোমার সাথে দেখা হওয়ার জন্য বিধাতা আমাকে অন্য পথ দেখালেন। সেদিন সপরিবারে নরসিংদীর ছোট্ট অজপাড়া গায়ে গিয়েছিলাম। কখনো কল্পনাতেও ভাবিনি যার জন্য আমার চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেছে, সে আর কেউ নয়। আমার বাবার’ই বন্ধুর মেয়ে “নীলিমা”…..
সেদিন একবার মাত্র ফিরে তাকিয়েছিলে তুমি।
আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত বার বার তোমার মুখপানে তাকিয়ে ছিলাম।
আচ্ছা, তুমি কি এখনো আমায় চিনতে পারো নি???
যাক, ভুলে গেলে কিছু’ই ভুলার নেই।
আচ্ছা, নীলিমা সেদিন তোমাদের গ্রামে আমার একটা নীল ডায়েরী ফেলে এসেছিলাম। সেটা কি তুমি পেয়েছিলে???
নীলিমার চোখ দুটো জলে ছলছল করে উঠে। এ তাহলে সেই পাগলটা, যে প্রতিদিন ঐখানকার পুকুরপাড়ে চুপটি করে গিয়ে বসে লিখালিখি করত। বান্ধবীরা প্রতিদিন’ই বলতো দ্যাখ, দ্যাখ! কি সুন্দর, সুদর্শন এক যুবক চুপটি করে বসে আছে গাছের নিচে। ইস! তখন যদি একটা বার তাকিয়ে দেখতাম তাহলে তো আর এমনটি হতো না।
আচ্ছা!!!
ওনার নীল ডায়েরীটা তো আমার পড়ার টেবিলের ভেতরে’ই রেখেছিলাম। ঐটা কি সেখানে এখনো আছে???
মা’কে তো বলেছিলাম পুরনো সবকিছু রুম থেকে বের করে নতুন ফার্নিচার ঢুকাতে।
মা আবার ঐগুলো ফেলে দিল না’তো???
না, না!!!
ফেলে দিলে ওনার ডায়েরীটাও তো হারিয়ে ফেলব। মাকে বরং ফোন করি। নীলিমা ওর মায়ের নাম্বারে কল দেয়। কিন্তু একি?!!!
নাম্বার যে বন্ধ।
যাক আমি বরং একটু পরে’ই ফোন দিব। নীলিমা তাহাজ্জদ নামাজ পরে কল দেই, তখনো নাম্বার বন্ধ।
ফজর নামাজ পরে কল দেই, তখনও বন্ধ। উফ্!
এভাবে বন্ধ থাকলে আমি মাকে কিভাবে বলব টেবিল যাতে কাউকে না দেয়??? কিংবা ফেলে না দেয়???
আচ্ছা!!!
মা যদি কালকে’ই রুম পরিষ্কার করে থাকে?!!!
তাহলে তো এতক্ষণে সব কাগজপত্র ফেরিওয়ালার কাছে বিক্রি করে দিয়েছে মনে হয়।
না, না। এ হতে পারে না।
আমি এখন’ই বাড়িতে যাব।
নীলিমা সাজ সকালে কাউকে কিচ্ছু না বলে রওয়ানা দেয় নরসিংদীর উদ্দেশ্যে…..
এদিকে আবির?!!!
ঘুম থেকে উঠে আবিষ্কার করে নিজেকে বারান্দায় ফ্লোরে।
” কি মেয়েরে বাবা!
আমি এভাবে এখানে ঘুমিয়ে পরলাম, একটা বার আমায় ডাক দেওয়ার প্রয়োজন মনে করল না?!!
হুহ্…..
আজকে ওর সাথে কথা’ই বলব না।”
আবির মনে মনে কথাগুলো বলে ফ্লোর থেকে উঠে বিছানায় গিয়ে শুইল। ৭টার দিকে বুয়া এসে চা দিয়ে গেল। চা খেয়ে ল্যাপটপ’টা পেটে নিয়ে ইংলিশ মুভি দেখতে লাগল। সকাল ৮টায় খাবার খাওয়ার জন্য ডাক পরল। শালিকাদের ডেকে তুলে নিচে গেল ব্রেকফাস্ট করতে।
টেবিলে বসে আবির এদিক-ওদিক করছে।
কাজের মেয়ে প্রশ্ন করল__
” ভাইজান! কাউকে খুঁজছেন?”
আবির:- নাহ…..(আমি আবার ওকে খুঁজব? যার মনে একটুও দয়া নেই মানুষের জন্য)
কাজের মেয়ে:- কি কইলেন ভাইজান?
আবির:- না, না…
তুমি খাবার পরিবেশন করো।
কাজের মেয়ে সবাইকে খাবার দিল।
দীঘি:- দুলাভাই! আপু কই??? আপু ব্রেকফাস্ট করবে না?
আবির:- রুমে’ই। একটু পর করবে।
তোমরা খেয়ে নাও।
ব্রেকফাস্ট করে আবির রুমে গেল।
আধঘন্টার মত হয়ে গেছে, নীলিমার কোনো সাড়া নেই। আবির মনে মনে খুজতে খুজতে থাকে নীলিমাকে। খুঁজতে খুঁজতে একটা সময় পুরো বাড়ি খুঁজে হয়রান হয়ে যায় আবির। কিন্তু কোথাও নীলিমা নেই। আবিরের ভেতরটা মুচড় দিয়ে উঠে। নীলিমাকে খুজতে ছাদে যায়। ছাদ থেকে বাগান। তারপর এ বাসা, ও বাসা। কোথাও নেই নীলিমা।
আবির পাগল হয়ে যায়। দাড়োয়ানের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে নীলিমাকে কোথাও যেতে দেখেছে কি না!
দাড়োয়ান জানায় নাহ।
ওরা নীলিমাকে গেইট দিয়ে কোথাও যেতে দেখেনি। আবির দৌঁড়ে আশপাশের বাসার মানুষজনের কাছে যায়। একজন বলে নীলিমাকে খুব ভোরে এদিকে’ই ছুটে যেতে দেখেছে। কোথায় গিয়েছে কেউ জানে না। আবিরের ভেতরটা অজানা শূন্যতায় হাহাকার করে উঠে। নীলিমার সবকয়টা বান্ধবীর নাম্বারে কল দেয়, কিন্তু নীলিমাকে কোথায়ও খুঁজে পাওয়া যায় নি। আবির রাস্তা-ঘাট, পার্ক, শপিং মল সবজায়গায় নীলিমাকে খুঁজে। কোথাও নীলিমার সন্ধান পাওয়া যায়নি। সবশেষে আবির আশপাশের হসপিটালগুলোতে গিয়ে খুঁজ করে।কিন্তু কোথাও খুঁজে পায়নি। আবির ওর শাশুড়ির ফোনে কল দেয়। ফোনটা এখনো বন্ধ দেখাচ্ছে। আবির নীলিমার ফোনে আবির কল দেয় যদি ফোন’টা ওপেন করে সেই আশায়। কিন্তু নীলিমার ফোন’টা অফ যে অফ’ই আছে। দুপুর একটাই আবির বাসায় যায়। লিমাকে বলে আবির বের হতে যাবে তখন’ই পিছন থেকে সবাই বলে উঠে___
” আমরাও যাব দুলাভাই আপুকে খুঁজে বের করতে।”
আবির সবাইকে সাথে নিয়ে রওয়ানা হয় বাকি হসপিটাল গুলোতে খুঁজ নেওয়ার উদ্দেশ্যে।
নাহ, কোথাও নেই নীলিমা।
সবাই এবার রওয়ানা দিবে নরসিংদীর উদ্দেশ্যে। তারআগে বাসায় গিয়ে ওদের বলে আসতে হবে__
” ওরা যাতে ফোনের কাছাকাছি থাকে। আবিরসহ সবাই বাসায় যায়।ওদের সবকিছু বুঝিয়ে গাড়িতে উঠতে যাবে তখন’ই লিমা আবির’কে দাঁড় করায়।
” ভাইয়া! আপনি আপনার বন্ধুকে কল দিয়ে একটু বলেন না খুঁজ নিতে আপু বাড়িতে গেছে কি না।”
লিমার কথামতো আবির সিয়ামকে কল করে সবটা বলে। **নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
গাড়িতে উঠার আগে আবির আরেকবার নীলিমার ফোনে কল দেয়। নাহ!
এবারও ফোনটা অফ।
আবিরসহ সবাই গাড়িতে উঠে পরল। গাড়ি চলছে। হঠাৎ’ই মনে হলো গাড়ির পাশ দিয়ে কেউ যেন চলে গেছে। আবির গাড়ির গ্লাসে তাকিয়ে দেখে একটা মেয়ে যার মাথায় ওড়না দেওয়া কিন্তু চুলগুলো বের হয়ে আছে। ঘন কালো চুলগুলো দেখে আবির অতীতে ফিরে যায়। সেই অতীত যে অতীতে আবির ঠিক এরকম’ই চুল দেখেছিল নীলিমা নামের অচেনা মেয়ের। আবির গাড়ি ঘুরায় পিছন দিকে। ততক্ষণে মেয়েটা অনেকটা পথ সামনে এগিয়ে গেছে। গাড়ি’টা মেয়েটার কাছে গিয়ে’ই থামালো আবির। মনে হচ্ছে, এ গেইট দিয়ে’ই ঢুকবে।
আবির গাড়ি থেকে নেমে পরে।
আবিরের সাথে বাকি সবাই।
মেয়েটি গেইটের ভেতর ঢুকবে ঠিক তখনি আবির পিছন থেকে ডেকে বলল___
” দাঁড়াও।
মেয়েটি পিছু ফিরে তাকালো।”
সবাই আপু বলে চিল্লান দিয়ে উঠল।
আবির সবাইকে থামিয়ে বলল__
” তোমরা সবাই রুমে যাও।
সবাই রুমে চলে গেল।আবির নীলিমার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। নীলিমা তখন থরথর করে কাঁপছে।
আবির:- কোথায় গিয়েছিলে???
নীলিমা:-……..
আবির:- আমার প্রশ্নের উত্তর দাও বলছি……(ধমকের স্বরে)
নীলিমা:- …….
আবির:- আমার কথা কি কানে ঢুকতেছে না। চুপ করে আছ কেন???(অত্যাধিক মাত্রায় ধমক দিয়ে)
নীলিমা:- বাসায় গিয়েছিলাম….(ক
াঁপাস্বরে)
আবির তখন’ই ঠাস করে নীলিমার গালে থাপ্পর মারল।
নীলিমা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
আবির:- বাসায় গিয়েছিলে আমায় বলে গিয়েছিলে? কি মনে করো তুমি নিজেকে, হুহ? তুমি হুটহাট না বলে উদাও হয়ে যাবে, আর আমি তোমাকে খুঁজে বের করব???
নীলিমা:- আসলে আমি…..(…)….
আবির:- চুপ, একদম চুপ।
আর কোনো কথা বলবা না। সোজা যেখান দিয়ে এসেছ, সেখান দিয়ে চলে যাও। তোমার মুখ যাতে আমি দেখি আর…..
আবির গাড়ি গেইটের ভেতর ঢুকিয়ে হনহন করে বাসার ভিতর ঢুকে পরে।
নীলিমা চুপটি করে গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর নীলিমা পিছুহটে।
এদিকে আবির?!!!
ড্রয়িংরুমে অপেক্ষায় আছে কখন নীলিমা রুমে আসবে। কিন্তু মিনিট পাঁচেক যাওয়ার পরও নীলিমা আসছে না দেখে আবির রুম থেকে বাহিরে বের হয়। গেইটের কাছে গিয়ে নীলিমাকে দেখতে না পেয়ে প্রশ্ন করে দাড়োয়ানকে___
” নীলিমা কোথায়?”
বাগান দেখাশুনা করে যে চাচা সে এসে বলল___
” বাজান! ডোজ’টা বেশী হয়ে গেছে। গাল ফুলিয়ে চলে যাচ্ছিল। আটকিয়ে রাখছি। বাগানের ভিতরে গিয়ে দেখেন।”
আবির চলে যাচ্ছিল তখন আবারো ঐ চাচা পিছন থেকে ডাক দিল__
” এই নাও বাজান! বাগানের সব থেকে সুন্দর ফুল, যাও আম্মাজানের রাগ ভাঙাও গিয়ে।”
আবির থ্যাংক ইউ চাচা বলে ফুল’টা হাতে নিয়ে দৌঁড় দেয়।
নীলিমা চুপটি করে বাগানের একপাশে বসেছিল। আবির গিয়ে নীলিমার পাশে বসল। আবিরকে দেখে নীলিমা বসা থেকে উঠে চলে যাচ্ছিল, আবির লাল গোলাপ হাতে নীলিমার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
নীলিমা একবার সেই ফুলের দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়।
লাল গোলাপ ধরে রাখা হাতটা ক্রমেই শ্লথ হয়ে আসছিল আবিরের।নীলিমা চলে যাচ্ছিল পাশ দিয়ে, সুযোগ হারিয়ে ফেলার আশঙ্কায় দ্রুত পথ আগলে দাঁড়ালো আবির। চমকে যায় নীলিমা। কিন্তু অস্বাভাবিক হয়নি। মনে হচ্ছে এমন পরিস্থিতির জন্য সে প্রস্তুত ছিল।
লাল গোলাপটি হাতে দিয়ে নির্দ্বিধায় বলে ফেলল আবির__
” I love you,Nilima”….
আবিরের সেই মুহূর্তে কেমন লেগেছিল মন দিয়ে অনুভব করা ছাড়া লিখে বুঝানো সম্ভব নয়। কিছুক্ষণ কারো মুখেই কোনো কথা সরছিল না। মন্ত্রমুগ্ধের মতো একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হয়, দুজনের বুকের ভেতর ধুকধুক শব্দ প্রতিধ্বণিত হচ্ছিল। যা ছিল একান্ত নিরব ও গোপন। আর সেটা প্রমাণ করছিল সেই কোয়াচ্ছন্ন বিকালেও নীলিমার নাকের ডগায় জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘামের কণাগুলো। ডান হাত দিয়ে গোলাপটি হাতে নিল নীলিমা।
মৃদ্যু কন্ঠে বলল, এত দেরী করলে কেন তুমি? তুমি কি জানো না আমিও যে তোমাকে নিয়ে’ই কল্পনার প্রাসাদ গড়েছি?
কিন্তু আমি নারী। আমি লজ্জার দেয়ালে আবদ্ধ। এ কারণে তোমাকে বলতে পারিনি। কিন্তু তুমিও কি আমার কথাটা বুঝতে পারোনি? কেন এত দেরী করলে তুমি? জানো না, অপেক্ষা করা কত কষ্টের?
নীলিমার কথাগুলো শুনে আবিরের কাছে মনে হচ্ছিল দুনিয়াতেই বুঝি সে জান্নাতের সুখ পেয়ে গেছিল। আবিরের মন আনন্দে আত্মহারা হয়ে শূন্যে উড়ে বেড়াচ্ছিল মুক্ত বিহঙ্গের মতো। সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গের মত হারিয়ে যাচ্ছিল কোনো এক দুর অজানায়। হৃদয়ের মাঝে বিশ্বজয়ের প্রশান্তি অনুভূত হচ্ছিল।
তারপর থেকে বিরামহীন ভাবে চলতে থাকে আবির-নীলিমার দুষ্টু-মিষ্টি প্রেম। হাসি-আনন্দে,দুষ্টু-মিষ্টি খুনসুটিতে ভরপুর ছিল আবির-নীলিমার সম্পর্ক।
তারপর এলো সেই দিন।
যেদিন নীলিমা আবিরের দেওয়া ঐ শাঁড়ি’টা লাল টুকটুকে শাড়িটা পরল, যেটা নীলিমা গত বিবাহবার্ষিকীতে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল। নীলিমা সেই নূপুর জোড়াও পরল, যা একদিন আবির পরিয়ে দিয়েছিল একবুক আশা নিয়ে।
হাতে লাল রেশমী চুড়ি,
ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক, চোখে গাঢ কালো কাজল।
এ সাজে যখন নীলিমা আবিরের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় আবির তখন রুমে পরীক্ষার খাতা দেখায় ব্যস্ত। নীলিমার রিনিঝিনি চুড়ির আওয়াজে আবির ফিরে তাকালো সামনের দিকে। নীলিমাকে এভাবে নববধূর সাজে দেখে বসা থেকে দাঁড়িয়ে পরল আবির। ধীর পায়ে এগিয়ে যায় নীলিমার দিকে। নীলিমার দিকে কিছুক্ষণ অবাক বিস্ময়ে চেয়ে থেকে আলমারি থেকে কি যেন একটা বের করে আবির। তারপর নীলিমার খোপায় সেটা গুজে দিয়ে বলে___
” এবার একদম ঠিকঠাক লাগছে।”
নীলিমা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আবির নীলিমার কপালে আলতু করে চুমু দিয়ে ঘোমটা’টা টেনে দিয়ে নীলিমার চোখে চোখ রেখে বলে___
” তুমি আমার বউ হবে?”
নীলিমা আবিরের কানে কানে ফিশফিশ করে বলে___
” আমি শুধু তোমার বউ না, তোমার সন্তানের মাও হতে চায়।”
আবির নীলিমার দু’বাহু ধরে চোখে চোখ রেখে দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে___
” তাহলে তো এই আদরে হবে না।
এখনো মিশনে নামতে হবে। ডজনখানেক সন্তানের মা হওয়া চাট্টিখানি কথা নয়গো….”
নীলিমা লজ্জায় চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে।
The End
[ দুটি কথা:- প্রিয় পাঠক/পাঠিকা,
আমাদের বর্তমান সমাজে একটি নতুন ধারনার আবিভার্ব হচ্ছে, যা সত্যি’ই বেদনাময়। আর তা হলো সাদা-কালো, ধনী-গরিবের মধ্যে কখনো প্রেম হয় না। কিন্তু তারা মানতে চায়না যে, প্রেম-ভালোবাসা প্রদত্ত আল্লাহ’র দান। ইহা স্বর্গ হতে আসে আর স্বর্গেই যায় চলে এবং ভালোবাসার কোনো প্রভেদ নেই, নেই সাদা-কালোর পার্থক্য। কারণ ভালোবাসা হয় মনের সাথে মনের। আর যার ভালোবাসার মত মন আছে সেই পারে ভালোবাসা দিতে এবং নিতে। হউক সে সাদা বা কালো।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা,
আমার এই লিখা দ্বারা আমি তাই বুঝাতে চেয়েছি। জানি না আপনাদের কতটা ভালো লেগেছে। তবে যদি এতটুকুও ভালো লাগে তাহলে নিজেকে ধন্য মনে করব।]