ফুলসজ্জা সিজন ২ পর্ব ৭
লেখিকাঃ #অনামিকা_ইসলাম “অন্তরা”
. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
সাইমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে নীলিমা আবিরের দিকে ফিরে তাকায়। আবির তখনও হা করে দাঁড়িয়ে বিষয়টা কি হয়েছে বুঝার চেষ্টা করছে।
এদিকে নীলিমা?!!!
রাগান্বিত দৃষ্টিতেই সাইমার দিকে তাকিয়ে ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে টেনে তুলে দাঁড় করায়। সাইমা কিছু বলতে চাইছিল তার আগেই ঠোঁটের সামনে আঙ্গুল খাড়া করে চুপ করার জন্য ইঙ্গিত করে নীলিমা। সাইমা চুপ হয়ে নীলিমার দিকে তাকিয়ে আছে। নীলিমা সাইমার দু’বাহু ঝাকিয়ে বলা শুরু করে___
” এই মেয়ে! পৃথিবীতে এত ছেলে থাকতে তুই কেন একটা বিবাহিত ছেলের পিছনে লেগেছিস? এসব করে কি লাভ তোর? তোর এতে কি স্বার্থ লুকিয়ে আছে? কেন তুই এভাবে আমার বরের পিছনে লেগেছিস? কেন তুই অন্যের সম্পদের দিকে এভাবে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিস? নূন্যতম লজ্জাবোধও কি তোর মধ্যে নেই? ধূর! কাকে কি বলছি….?!!!
নীলিমা সাইমার দিকে একটু দুরে সরে যায়। তারপর আবারো বলতে থাকে,
নৈতিকতার যে শিক্ষা মানুষ তার পরিবার থেকে পায় সেটা মনে হয় তোর পরিবার তোকে দিতে পারেনি। তাই তোর এ অধঃপতন। তুই আসলে….(……)….???”
পুরো কথা বলতে পারেনি নীলিমা। তার আগেই রুম ছেড়ে বেরিয়ে যায় সাইমা। পিছন থেকে ডাকতে থাকে নীলিমা-
” ঐ শয়তান মাইয়া! চলে যাচ্ছিস কেন? শুনে যা আরো কিছু কথা। যে শিক্ষা তোর পরিবার তোকে দিতে পারেনি সেটা আমার থেকে নিয়ে যা। বজ্জাতের হাড্ডি, কি হলো চলে যাচ্ছিস কেন?”
কথাগুলো বলতে বলতেই পিছনে তাকায় নীলিমা। আবিরের চক্ষুদ্বয় রাগে রক্তবর্ণ ধারন করেছে। যেই রেগে তেড়ে আসছিল নীলিমার দিকে, তখনি নীলিমা বলে উঠে-
” খবরদার! একদম সামনে আসবি না। এই মুহূর্তে তোর ছায়া পর্যন্ত আমি সহ্য করতে পারছি না। অনেক সহ্য করেছি। আর নয়! এই মেয়ের সাথে কিসের এত পিরিত তোর? ও কেন তোকে কিস করবে? চুল আচড়িয়ে দিবে? কোন শার্ট পরবি সেটা সিলেক্ট করে দিবে, ও কেন তুই কোন জুতা পরবি সেটা বের করে রাখবে? টাই বেঁধে দিবে? ও কেন তোর জন্য একেকদিন একেক রেসিপি তৈরি করে আনবে? কি হয় ও তোর? বউ?!!! তবে আমি কি??? কেন আমায় বিয়ে করলি? ফুলদানিতে সাজিয়ে রাখার জন্য???”
গর্জে উঠে আবির।
Hey you! Listen…..(……)………
মুখে আঙ্গুল দিয়ে বলে উঠে নীলিমা, চুপ! একদম চুপ। এটা তোর ক্লাস নয়, বেডরুম। সো, একদম লেকচার দিতে আসবি না। তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে! বের হয়ে যাবে সুন্দর এই মুখটার আড়ালে লুকায়িত খোলস।
নীলিমা স্টাডিরুমে গিয়ে ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দেয়। আবির ওর পরনের পাঞ্জাবী’টা খুলে ফেলে দেয়। দাঁতে দাঁত চেপে হাতটা দেয়ালে ছুঁড়ে মারে। তারপর দরজাটা টান দিয়ে বাইরে বের হয়। দরজা মিশছিল না দেখে দরজায় একটা লাথি মেরে নিচে সাইমার রুমের দিকে পা বাড়ায়।
” সাইমা! দরজা’টা খুল। প্লিজ, সাইমা দরজাটা খুল। লক্ষ্মী বোন আমার প্লিজ দরজাটা খুল…..”
কথাগুলো বলে আবির যখন দরজায় ধাক্কা দিচ্ছিল তখন পিছন থেকে কেউ একজন আবিরের পিঠে টোকা দেয়। পিছন ফিরে তাকায় আবির। ঝালমুড়ি হাতে সাইমা দাঁড়িয়ে।
চমকে যায় আবির-
” তুই? তাহলে ভিতরে কে?”
ঝালমুড়ি খেতে খেতে সাইমা বলে,
কেউ নেই। দরজায় তালা ঝুলানো আছে কানা। আবির দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে জোরেশোরে নিশ্বাস ফেলে।
” উফফ!”
পাশ থেকে সাইমা বলে উঠে,
নাও! ঝালমুড়ি খেয়ে মাথা ঠিক করো…..
আবির সাইমার হাতদুটো চেপে ধরে। প্লিজ বোন আমার, আমায় মাফ করে দে।
সাইমা চেঁচিয়ে উঠে,
আরে আরে ভাইয়া! কি করছো এসব? ঝালমুড়ি তো পরে যাচ্ছে…..!!!
যাক আমি তোকে আবার কিনে দিব।
তুই প্লিজ বল আমায় মাফ করছিস কি না।
করুণ চোখে আবির সাইমার দিকে তাকিয়ে বার বার একই আকুতি করে যাচ্ছে। সাইমা অত্যন্ত স্বাভাবিক গলায় বলল, আমি তোমাকে ছুঁয়ে বলছি ভাইয়া!
আমি তোমার বউয়ের কথায় কিচ্ছু মনে করিনি। আর একটা বাচ্চা মেয়ের কথায় এতকিছু মনে করার’ই বা কি আছে?
আবির সাইমার হাত ছেড়ে দেয়। রাগান্বিত গলায় বলে উঠে, ভাবের বাচ্চা ও। ও তো আসলে একটা পাগল। উন্মাদ হয়ে গেছে ও। সবকিছু পেয়েও হারিয়ে ফেলেছে ও। সেই জন্য উন্মাদ হয়ে গেছে ও…..
পাশ থেকে সাইমার জবাব, উন্মাদ!
হ্যা, উন্মাদ হয়ে গেছে ও। তবে সেটা ভুলের জন্য নয় তোমার ভালোবাসার জন্য। তোমার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য। তোমাকে অন্য কারো সাথে সহ্য করতে পারে না সেই জন্য…..
উত্তেজিত হয়ে আবির বলে উঠে,
তাই বলে ও আমার সাথে এরকম বাজে ব্যবহার করবে? এটা কিরকম ভালোবাসা সাইমা???
ঝালমুড়ির কাগজটা হাতে মুড়ে দুরে সরে ফেলে দিয়ে সাইমা বলে উঠে,
এটাই ভালোবাসা ভাইয়া!
খাঁটি ভালোবাসা….
মেয়েরা সবকিছু সহ্য করতে পারে কিন্তু নিজের স্বামীর পাশে অন্য কাউকে দেখতে পারে না। কারণ, ওরা স্বামীর ভাগ অন্য কাউকে দিতে রাজি নয়।
ওকে ফাইন!
মেনে নিলাম তোর সব কথা। ও আমার পাশে তোকে সহ্য করতে পারেনি তাই আজ আমাকে যাচ্ছে তাই কথা শুনিয়েছে। কিন্তু ঐ সময়..?!!!
দুই বছর আগে ও কেন আমার সাথে এমন করেছিল? কেন আমায় চরমভাবে অপমান করে চলে গিয়েছিল? ঐদিন তো আমার পাশে কেউ ছিল না। তবে কেন আমায় এভাবে…..(…..)…..???
আবিরকে থামিয়ে সাইমার জবাব,
হতে পারে দুই বছর আগে কেউ ছিল না, কিন্তু তারও আগে হয়তো কেউ ছিল,
থাকতে পারে…..
হাত উঁচু করে আবির,
একমিনিট! তুই কার কথা বলছিস???
জবাব আসে, সেটা তো তুমি’ই ভালো জানো ভাইয়া। আমাকে কেন জিজ্ঞেস করছো?
উতলা কন্ঠে আবির বলে, হেয়ালি রেখে বল তুই খোচা মেরে কার কথা বলছিস? দুই বছর আগে কে ছিল আমার জীবনে?
সাইমা আবিরের সামনে গিয়ে উত্তর দেয়, সেটা রাত্রি নয়’তো???
আবিরের সুন্দর মুখটা মুহূর্তেই ফ্যাকাসে হয়ে যায়। ঢোক গিলে বলে,
” তুইও ওর কথা….(….)….???”
ক্ষাণিক হেসে জবাব দেয় সাইমা,
সবাই জানে আমার জানতে অসুবিধে কোথায়? কিছু মনে করো না রাত্রিকে রাত্রি বলে ডাকছি সে জন্য। আসলে ওকে আপু বলতেও আমার ঘৃনা করে। এমন একটা মানুষের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা পাওয়ার পরও যে এত্ত বড় বেইমানি করতে পারে সে আর হোক আমার বোন হতে পারে না। আমার আপু হতে পারে না। ইন্ডিয়া থেকে এসে যখন শুনলাম ও তোমার আর ওর বিয়ের কথা বলে, গহনা কিনার কথা বলে ৪লক্ষ টাকা নিয়ে এক্স বয়ফ্রেন্ডের হাত ধরে পালিয়ে গেছে তখন কতটা কষ্ট যে পেয়েছি সেটা ঐ আল্লাহ জানেন! আমি তখন প্রতিদিন নিজেকে তোমার জায়গায় দাঁড় করাতাম, তোমার কষ্টটা উপলব্ধি করার চেষ্টা করতাম। তোমাকে দেখলে আমার গর্ব হতো এতকিছুর পরও তুমি আমাদের সাথে সম্পর্ক রেখেছ। তোমার প্রতি শ্রদ্ধাটা তখন থেকেই বেড়ে গেছে। আর ঐ রাত্রির প্রতি ঘৃণাটা দিনকে দিন গাঢ় হয়েছে। তখন থেকেই দোয়া করতাম আমি, আল্লাহ যেন মানুষটার সাথে ঐরকম মানুষকেই মিলিয়ে দেয়। আর আল্লাহর অশেষ রহমতে পেয়েও গেছ। যেন এক হীরক খন্ড। একটা কথা কি জানো….(……)….???
পিছনে তাকিয়ে থেমে যায় সাইমা।
কারণ, আবির ততক্ষণে উদাও হয়ে গেছে।
৪,৫দিন পরের কথা____
সেদিন বিকেলে কলেজ থেকে ফিরে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে খেতে বসে আবির। ততক্ষণে নীলিমা চেম্বার থেকে বাসায় ফেরে। ক্লান্ত নীলিমা যখন বিছানায় গা টা এলিয়ে দেই তখনি দরজার সামনে এসে দাঁড়ায় আবির-
” আদিবা ফোন দিয়েছিল। ও আসছে, আজকে আপনি আমার রুমে ঘুমোবেন।”
নীলিমা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অন্যদিকে মুখ করে শুয়ে পরে। রেডি হয়ে চলে যাচ্ছিল আবির। ফিরে আসে। দরজার কাছ থেকে বলে-
” বন্ধুর বার্থডে পার্টিতে যাচ্ছি। ফিরতে একটু রাত হবে। আপনারা খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে পরবেন।” এবারো নীলিমা পুরো কথাটা শুনে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে।
রাত্রি ৯টার দিকে আবিরের বোন আদিবা ওর ছেলে আদিত্যকে নিয়ে আবিরের বাসায় আসে। অবাক হয়ে নীলিমা প্রশ্ন করে, সেকি আপু! দুলাভাই আসে নি? মুখটা কালো করে উত্তর দেয় ননাস আদিবা, আর বলো না! ওর হসপিটাল থেকে জরুরী ফোন এসেছে। তারপর কি হয়েছে জানি না। ফোনটা কান থেকে নামিয়েই সবার থেকে বিদায় নিয়ে বিয়ে না খেয়েই চলে গেল। ওর মামা এজন্য অনেক রাগ দেখালো।
নীলিমা ননাস আসার পর থেকেই টেবিলে হরেক রকমের খাবার সাজিয়ে ফেলে। আদিবা হেসে বলে, ওরে পাগলি মেয়ে! এসব কেন করতে গেলা? পেটটা আমার একদম ভরা। পেটে জায়গা খালি নেই একটুও। এদিক দিয়েই নাকি তোমার দুলাভাই যাবে, তখন নিয়ে যাবে আমাদের মা ছেলেকে। মা ছেলেকে তাই এখানে ওয়েট করতে বলছে। ও আসলেই আমরা চলে যাব…..
” ওহ! চলে যাবেন? নীলিমার মুখটা কালো হয়ে গেল….”
একটা হাসি দিয়ে ননাসের জবাব,
যাও তো! আলমারি থেকে বিয়ের শাড়িটা নিয়ে আসো তো। দেখি বাচ্চা নীলিকে বউয়ের সাজে কেমন লাগে….!!!
বলা মাত্র’ই নীলিমা দৌঁড়ে গিয়ে একটা লেহেঙ্গা নিয়ে আসে।
ভ্রু কুঁচকে ননাসের জবাব,
সেকি! লেহেঙ্গা কেন???
নিচের দিকে তাকিয়ে নীলিমার জবাব,
” এখানে তো শাঁড়ি নেই। লেহেঙ্গা’টাই আছে।”
মুচকি হেসে ননাস আদিবার জবাব, সমস্যা নাই। এটাও লাল রঙের’ই। তাড়াতাড়ি কয়টা মুখে দিয়ে জটপট লেহেঙ্গা’টা পরে আসো। সাজাতে হবে তো। নীলিমা ডিনার সেরে নিয়ে তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে লেহেঙ্গা’টা পরে আসে। আদিবা নীলিমাকে ওর সামনে বসায়। হাতে লাল রঙের চুড়ি, চোখে গাঢ কালো কাজল, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দিয়ে আদিবা নীলিমার চুলগুলো খোঁপায় বেঁধে দেয়। তারপর নীলিমাকে আয়নার সামনে দাঁড় করায়। আয়নায় নিজেকে নিজে দেখেই লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে নীলিমা। আহ্লাদী স্বরে আদিবা বলে উঠে, ওলে পুতুলবউ’টা লজ্জা পেয়েছেরে…..
ফোন বেজে উঠে আদিবার। কলটা রিসিভ করে কথা বলে। কান থেকে ফোন নামাতে নামাতে নামাতেই বলে, তোমার দুলাভাই এসে গেছে। যেতে হবে এখন। তাড়াতাড়ি এখানে একটু দাঁড়াও। কয়টা ছবি তুলি। নীলিমা ড্রেসিংটেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়ায়। আদিবা বিভিন্ন এঙ্গেলে নীলিমার অনেকগুলো ছবি তুলে নেয়। তারপর আদিত্যকে ধরে টান দিতেই বলে, দাঁড়াও আম্মু! আদিত্য ওর কাঁধে রাখা ব্যাগটা থেকে এক বিরাট গাধাফুলের মালা বের করে। আরো বের করে অনেকগুলো গোলাপ। এগুলো সে কান্নাকাটি করে ঐ বিয়ে বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছিল। অথচ এখন অনায়াসে সেই ফুলগুলো একটা একটা করে ছিঁড়ে আবিরের বিছানায় ছড়িয়ে দিচ্ছে। নীলিমাকে টানতে টানতে বিছানায় বসিয়ে ওর উপরও অনেকগুলো পাপড়ি ছড়িয়ে দেয়। তারপর মায়ের কাছে গিয়ে হাত তালি দিতে দিতে বলে, আজকে মামার বিয়ে! কি মজা, কি মজা….
লজ্জায় মাথানিচু করে ফেলে নীলিমা।আদিবা হেসে দেয়। মুচকি হেসে ছেলেকে কোলে নিয়ে নীলিমার থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়।
তারপর এলো সেই রাত…….
আদিবা আপু চলে যাওয়ার পরই নীলিমা চেঞ্জ করার জন্য বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়। জামা নিয়ে ওয়াশরুমে যাওয়ার আগে একবার ফোনের দিকে তাকায়। ফোনের স্ক্রিনে দেখে নেয় নিজেকে। ফোনটা হাত থেকে রাখার আগে কি মনে করে যেন আবারো স্ক্রিনের দিকে তাকায়। আচমকা মোবাইলের তারিখ’টা দেখে উল্লাসে নেচে উঠে নীলিমা।
” আজ আমাদের ৯ম বিবাহবার্ষিকী?”
মনে পড়ে নীলিমার, আদিবা আপুর সাথে ঐদিন হসপিটালে দেখা হয়। আবিরের সাথে সব ঠিকঠাক মত চলছে কি না সেসব কথার’ই একপর্যায়ে আবিরের বোন আদিবা ওর থেকে বিয়ের তারিখ’টা জেনে নিয়েছিল।
তারমানে ওনি আজ হুট করে আমার বাসায় আসেননি। ওনি জেনে শুনেই এসে আমায় সাজিয়েছেন।
**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
নীলিমা ওয়াশরুম থেকে ওর জামাগুলো নিয়ে আসে। ওর ইচ্ছে আবির আসলে ওকে এ সাজে দেখিয়ে তবেই চেঞ্জ করবে।
” আচ্ছা! বুড়ো এসে আজকেও কি আমায় বকবে নাকি এ সাজে দেখে চমকে যাবে! বুড়ো কি আগের মতই আমার দিকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে থাকবে নাকি মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পরবে? আচ্ছা, আগের মত ও আজকেও কি আমার জন্য প্রিয় বেলী ফুল আর একটা কবিতার বই নিয়ে আসবে? ও কি আজও আমায় পূর্বের ন্যায় হাতে লাল রেশমী চুড়ি পরিয়ে দিবে?
ভাবতে ভাবতেই ফোনটা বেজে উঠে নীলিমার। মুখে হাসির রেখা নিয়েই ফোনের দিকে ফিরে তাকায়। কি ব্যাপার? আদিবা আপু’তো কেবল গেলেন। ওনি কেন কল দিলেন?
কল রিসিভ করে নীলিমা।
— আসসালামু আলাইকুম, আপু!(নীলিমা)
—– ওয়ালাইকুম আসসালাম। কি ব্যাপার? খুব খুশি খুশি লাগছে যে? ঘটনা কি?(আদিবা)
—– ধূর, আপু! কি যে বলেন না…(নীলিমা)
— আচ্ছা, আচ্ছা! লজ্জা পেতে হবে না। এখন বলো বুড়ো ফিরছে কি না।(আদিবা)
—- আপু, তুমিও???(নীলিমা)
— তুমিও’ই তো প্রতিদিন নালিশ করো বুড়ো এটা করছে, বুড়ো ঐটা করছে। প্রতিদিন বুড়ো বুড়ো শুনতে শুনতে আমার যে মুখস্ত হয়ে গেছে। যায় হোক! আর বলব না। এখন বলো, ও পার্টি থেকে ফিরেছে কি না?!!!(আদিবা)
—– এখনো ফিরেনি। বলে গেছে তো ফিরতে রাত হবে।(নীলিমা)
—– আচ্ছা, বুঝলাম। শুনো…
যে কথাটি বলার জন্য ফোন করেছি। আজ কিন্তু বুড়ো ফিরলে বুড়োকে সব খুলে বলবে। দু’বছর আগে কি কারণে চলে গিয়েছিলা আর তার সত্যতা কতটুকু, সব, সব তোমায় আজকে জানাতে হবে, জানতে হবে। আমাদের কথা তো শুনতে চাও না, আবিরের মুখ থেকেই না হয় শুনে নিও ডায়েরীর গোপন রহস্য। ঠিক আছে এখন রাখছি। ভালো থেকো।(আদিবা)
—- আপু শুনেন… (নীলিমা)
—– হ্যা, বলো…(আদিবা)
—— ও শুধু আমার বুড়ো। …(নীলিমা)
—– হা, হা, স্যরি। মনে হয় কথার মধ্যে দু’একবার বুড়ো ডেকে ফেলেছি। ওকে, শুভ রাত্রি। (আদিবা)
আদিবা কল রাখলে নীলিমা একটা বড়সড় নিশ্বাস ফেলে।
” নাহ! আর নয়। অনেক কষ্ট দিয়েছি, পেয়েছি। আর নয় কষ্ট। আজ’ই সব খুলে বলতে হবে বুড়োকে। জানাতে হবে আসল কথা, জানতে হবে তার সত্যতা।”
ফোনটা হাত থেকে রেখে নীলিমা মনে মনে কথাগুলো সাজাচ্ছে। ওর বুড়োর কাছে কথাগুলো ঠিক কিভাবে উপস্থাপন করবে।
সোফায় শুয়ে আনমনে কথাগুলো সাজাচ্ছিল নীলিমা। একটা সময় চোখে তন্দ্রাভাব চলে আসে। দরজা আংশিক মেশানো শুধু।
নীলিমার চোখটা যখন প্রায় লেগে আসে, তখন’ই রুমে আবিরের আগমন। রুমে এসেই আবির বিছানা ফাঁকা পেয়ে এদিকে ওদিক কাকে যেন খুঁজতে থাকে । হঠাৎ’ই সোফায় চোখ যায়। আবির চোখ বড় বড় করে সোফায় শুয়ে থাকা নীলিমার দিকে তাকায়। মনে হচ্ছে কোনো স্বর্গের অপ্সরী, সবুজ পরী ভুল করে স্বর্গ থেকে ধরার বুকে নেমে এসেছেন। একটু একটু করে আবির সোফায় শুয়ে থাকা ঘুমন্ত পরীটির দিকে এগিয়ে যায়।
” একি! আমার রুমে পরী আসলো কোথায় থেকে?”
চোখ দুটো কচলে ভালো করে আবির আবারো ঘুমন্ত মেয়েটির দিকে তাকায়।
” পরী’ই তো!”
এদিকে রুমেও কেমন মাতাল করা ফুলের ঘ্রাণ পাওয়া যাচ্ছে। এমনিতেই পার্টিতে বন্ধুরা কি যেন কি খাইয়ে দিয়েছে জোর করে, তারপর থেকে মাথাটা ঝিম ঝিম করছে। এখন রুমে এসে দেখল পরী শুয়ে আছে। সবকিছু’ই আবিরের কাছে কেমন যেন রঙিন মনে হচ্ছে।
” আচ্ছা, এগুলো স্বপ্ন নয়তো? আমি কোনো ঘোরের মধ্যে আছি না’তো?”
আবির ঘুমন্ত নীলিমার সোফার পাশে হাটুঘেরে বসে পরে। একটা হাত আবির ওর ভাবনার পরী মানে নীলিমার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। আঙুল দিয়ে আবির ঘুমন্ত নীলিমার ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। নীলিমা কেঁপে উঠে। এটা কি স্বপ্ন নাকি সত্যি কিছুই বুঝতে পারছে না আবির। ঘোরের মধ্যেই আবির যখন ওর মুখটা নীলিমার ঠোঁটের খুব কাছে নিয়ে যায়, তখনি জেগে উঠে নীলিমা। চোখ বড় বড় করে আবিরের দিকে তাকায়। আবিরকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে সোফা থেকে উঠে পরে। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন, আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি। নীলিমা দৌঁড়ে কিচেনে চলে যায়। আবিরও নীলিমার পিছু নেয়। পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে নীলিমাকে। একহাতে নীলিমার খোপা খুলে দেয়, নাক ডুবিয়ে দেয় চুলের গভীরে। আচমকা আবিরের এমন আচরণে রীতিমত কাঁপতে থাকে নীলিমা।
অনেক কষ্টে আবিরের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়।
” খাবার দিচ্ছি, খেয়ে নিন!”
তাড়াহুড়ো করে খাবারগুলো দিয়ে দৌঁড়ে স্টাডিরুমে চলে যায়। হাতমোজা পরে ঘুমিয়ে পরার প্রস্তুতি নেয়। দরজাটা বন্ধ করার জন্য ধরতেই দরজা ঠেলে রুমে প্রবেশ করে আবির। আবিরের চোখের দিকে একবার তাকিয়ে ভয়ে বুকস্লেফের বইয়ের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দেয় নীলিমা। আবির সামনে গিয়ে একহাত দেয়ালে ঠেকিয়ে নীলিমার পথ আগলে দাঁড়ায়। মাথার ছোট্ট চুলগুলো এলোমেলো ভাবে নীলিমার চোখে মুখে এসে পরছে। কাছে গিয়ে আবির সেই চুলগুলোতে ফুঁ দেয়। একটা বাজে স্মেইল নীলিমার নাকে প্রবেশ করে। চোখ বড় বড় তাকায় নীলিমা। রেগে প্রশ্ন করে____
” আপনি ড্রিংক করেছেন?”
মাথা চুলকায় আবির। না মানে সবুজপরীকে দেখে নেশা ধরে গেছে। একধাক্কায় আবিরকে ওর পথ থেকে সরিয়ে দেয়। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
” আপনি এখানেই দাঁড়ান। আমি নেশা কাটানোর ব্যবস্থা করছি এখনি।”
নীলিমা ফ্রিজ থেকে তেঁতুলেরটক নিয়ে আসে। আবিরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
” নিন! এগুলো খান। নেশা কেটে যাবে।”
আবির তেঁতুলের বয়ামটা ড্রেসিংটেবিলের উপর রেখে এগিয়ে যায় নীলিমার দিকে।
” আমি তেঁতুল খাবো না, তোমাকে খাবো।”
ঘাবড়ে যায় নীলিমা, কিসব উল্টাপাল্টা কথা বলছেন? মানুষকে আবার মানুষ খেতে পারে নাকি? আর এদিকে আসছেন কেন এভাবে?”
আবির একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে, সব’ই যায়। কাছে আসছি তো সেটাই বুঝানোর জন্য। আবির নীলিমার কাছে চলে আসে। নীলিমা আলতো করে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে। আবির নীলিমার এলোমেলো চুলগুলো কানের পাশে গুজে দিয়ে ঘাড়ের মধ্যে আলতো করে উষ্ণ ভালোবাসার রেখা টেনে দেয়। পরম সুখে কেঁপে উঠে নীলিমা। চোখ মেলে তাকায়। কাঁপা কন্ঠে বলে, আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে। প্লিজ আগে আমার কথাগুলো শুনে নিন। আবির মুখে কিছুই বলল না। নীলিমার হাত ধরে নীলিমাকে বিছানায় শুইয়ে দিল। কপালে আর ঠোঁটে কিস করল। নীলিমার বুকে মাথা রেখে কিছুক্ষণ শুয়েও থাকল। তারপর নীলিমার একচোখে কিস দিয়ে আরেক চোখে দেওয়ার জন্য এগিয়ে যেতেই বিছানা থেকে উঠে বসে নীলিমা।
খাট থেকে সোজা বারান্দায় চলে যায়। আবিরও নীলিমার পিছু নেই। মাতাল আবিরের চোখের দিকে তাকিয়ে অত্যন্ত শান্ত ও স্বাভাবিক গলায় বলে উঠে নীলিমা,
” প্লিজ আপনি আমায় একটু সময় দিন। আমার কথাটা শুনার চেষ্টা করুন। কথাগুলো বলা খুব জরুরী। আপনি কথাগুলো আগে শুনে নিন, তারপর না হয়…..(…..)…..???”
পুরো কথা বলতে পারেনি নীলিমা। তার আগেই আবিরের ঠোঁট দুটো নীলিমার নরম ঠোঁট দুটোকে তার ভিতরে নিয়ে গেল। হাত দিয়ে আবির নীলিমার মাথার পিছনের দিকটা শক্ত করে চেপে ধরে। তারপর সজোরে আবির ওর ঠোঁট নীলিমার ঠোঁটের উপর চেপে ধরল।
নীলিমা প্রথমে কাঠের পুতুলের মত দাঁড়িয়ে ছিল। তারপর একসময় সেও খামচে ধরল আবিরের দুই কাধ। হাত বাড়িয়ে নিবিড় করে জড়িয়ে ধরল আবিরকে।
কিছুক্ষণ পর আবির নীলিমাকে ছেড়ে দিয়ে দ্রুত ওর রুমে চলে গেল। নীলিমা কিছুক্ষণ সে স্থানে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল। ভাবল, আজ’ই আবিরকে সব কথা খুলে বলতে হবে। আবিরের রুমে গিয়ে তাই চুপ করে বিছানায় শুয়ে পরল। চোখ দুটো বন্ধ করে নীলিমা যখন বড় বড় নিশ্বাস ফেলছে, আবির তখন’ই চুপটি করে বিছানায় এসে বসে। কিছু বলার জন্য চোখ মেলে তাকাতেই ভড়কে যায় নীলিমা।
শার্টের বোতাম গুলো একটা একটা করে খুলে ফেলছে আবির। চোখ বড় বড় করে ফেলে নীলিমা, একটা দুষ্টু হাসি দেয় আবির। ভয়ে ঢোক গিলে নীলিমা বলে,
” আপনি আমার কথাটা শুনোন…..”
জবাব আসে, আজ আমি তোমাকে শিখাবো ভালোবাসার এক নতুন অধ্যায়। সো, কোনো কথা হবে না।
লাইটটা অফ করে ড্রিম লাইটটা জ্বেলে দেয় আবির। অতঃপর……..
সকালে স্টাডি রুমে ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসে তোয়ালে দিয়ে ভেঁজা চুলগুলো মুছছিল আর মিটিমিটি হাসছিল নীলিমা। তখনি ঘুম ভাঙে আবিরের। শরীরটা টানা দিয়ে উঠে বসতেই চমকে যায় আবির। নিজের শরীরের দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠে বলে____
” একি! আমার এ অবস্থা কেন?”
আবির ওর বুকে লিপস্টিকের লাল দাগ দেখে ভড়কে যায়। রাত্রে ঠিক কি হয়েছিল বুঝার চেষ্টা করে। অনেক কষ্টে পার্টিতে ড্রিংক করার কথা মনে পড়ে আবিরের। তার বেশী মনে করতে পারে না। তবে কি নীলিমা….(…..)….???
**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় আবির। ততক্ষণে নীলিমা আবিরের জন্য চা বসিয়েছে। ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে আবির নীলিমার জিনিসপত্র আলমারি থেকে বের করে ফ্লোরে ছুঁড়ে ফেলে। চা হাতে নীলিমা রুমে প্রবেশ করে আবিরের এই অবস্থা দেখে ভয়ে কেঁপে উঠে, তবে প্রকাশ করেনি।
” কিছু খুঁজছেন?”
রাগান্বিত দৃষ্টিতে আবির নীলিমার দিকে তাকায়। নীলিমার হাতের চা’য়ের কাপটা আবিরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
” এই নিন! চা খেয়ে মাথা ঠান্ডা করে বলুন কি চায় আপনার? আমি খুঁজে দিচ্ছি।”
চায়ের কাপটা টেবিল থেকে হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয় আবির। রাগে রীতিমতো কাঁপা শুরু করছে সে। কাঁপতে কাঁপতেই বলে,
” বা হাতে আপনি আমাকে খাবার দিন। ডান হাতে কি হয়েছে আপনার? পঁচন ধরেছে?”
কাঁপা কন্ঠে নীলিমার জবাব, কি হয়েছে আপনার? এভাবে কথা বলছেন কেন?
উত্তর দেয় আবির, আপনি এখনি আমার বাসা থেকে বের হয়ে যাবেন। আমি আপনাকে আর সহ্য করতে পারছি না।
আবারো প্রশ্ন করে নীলিমা, আমার অপরাধ কি? কি করেছি আমি? সেটা বলুন…..
রক্তচক্ষু নিয়ে আবির নীলিমার দিকে তাকায়, আপনি জানেন না কি করেছেন? নাকি স্বীকার করতে চাচ্ছেন না? হা, হা! যে অধিকার এতদিন আমি নিজ থেকে দেইনি, সেই অধিকার কালকে আপনি জোর করে আদায় করে নিলেন, তাই না। লজ্জা করেনি আপনার, একজন অচেতন মানুষের সাথে এরকম কু-কীর্তি করতে?
জবাব দেয় নীলিমা, কু-কীর্তি??? পাশে থেকে ব্যাঙ্গাত্বক উক্তি ছুঁড়ে দেয় আবির।
” নাহ! আপনি কু-কীর্তি করেননি, সু-কীর্তি করেছেন।”
আপনি ভুল বুঝছেন আমায়। আপনি আমার কথাটা শুনোন….
থামিয়ে দেয় আবির। চুপ। একদম চুপ। আমি আপনার কোনো কথায় শুনতে চাচ্ছি না। দয়া করে, আজকে এই মুহূর্তে এ বাসা খালি করেন। বিদায় হোন সামনে থেকে। চোখের জল লুকিয়ে ভাঙা কাপের টুকরোগুলো কুড়িয়ে বাইরে চলে যায় নীলিমা। বেশ কিছুক্ষণ পর রুমে ফিরে নীলিমা। আবির তখন সোফায় মাথায় হাত দিয়ে শুয়েছিল। সোজা কিচেনে ঢুকে নীলিমা। চুলায় ভাত বসিয়ে তরকারী কুটতে থাকে। চোখের পানিতে ওড়না ভিঁজে একাকার নীলিমার। রান্না শেষে গরম গরম খাবার টেবিলে এনে রেখে ডাক দেয় আবিরকে। খাবারের কথা বলতেই গর্জে উঠে আবির। লজ্জা করে না আপনার? এত কথা শুনার পরও এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছেন? এত বেহায়া কেন আপনি?
রুমে ঢুকছিল সাইমা। ওদের মধ্যকার কথা বার্তা শুনে দরজা থেকেই বিদায় নিচ্ছিল সে। ডাক দেয় আবির-
” কিরে বাইরে দাঁড়িয়ে কেন? ভিতরে আয়।”
সাইমা ভিতরে ঢুকে। মাথা নিচু করে জবাব দেয়, পায়েস রান্না করছিলাম। ভাবছিলাম তোকে দেই…..
বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় আবির। হাসি মুখে বলে, তো আমাকে না খাইয়েই চলে যাচ্ছিস যে? দে। খাইয়ে দে।
সোফার পাশে মাথা নিচু করে বসে সাইমা। আবিরের জুড়াজুড়িতে বাধ্য হয়ে আবিরের মুখে পায়েস তুলে দিচ্ছে। আবিরও ফাঁকে ফাঁকে সাইমাকে মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছে।
আমার রান্না করা খাবার অনাদরে পরে আছে আর ঐ শয়তান মেয়ের খাবার খাচ্ছে? রাগে ফুসে উঠে নীলিমা। টেবিলে রাখা পায়েসের বাটি যেখান থেকে দুজনে খাচ্ছে সেই বাটি হাতে নিয়ে ফ্লোরের মধ্যে ছুঁড়ে মারে নীলিমা। আবির সাইমা দুজনেই বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।
আবিরকে জড়িয়ে অকথ্য ভাষায় নীলিমা সাইমাকে গালাগাল করতে থাকে। ঘটনার আকস্মিকতায় আবির ঠাস ঠাস শব্দে ৪,৫টা থাপ্পর বসিয়ে দেয় নীলিমার গালে।
থাপ্পর খেয়েও উন্মাদের মত নীলিমা সাইমাকে গালিগালাজ করে যাচ্ছে। এবার মুখ খুলে আবির____
” আপনার উপরটা, বাইরের চেহারাটা যতটা কালো তার থেকে অধিক কালো, অধিক অপরিষ্কার আপনার ভিতরটা। আজ যাকে আপনি বাজে ভাষায় গালিগালাজ করছেন তার নখেরও যোগ্য নন আপনি। আপনি আমার স্ত্রী হবার যোগ্য নন। আমার স্ত্রী হবার যোগ্যতা যদি কেউ রাখে সে সাইমার মত কোনো মেয়ে। যার মনটা আপনার মত নিচু নয়, আকাশের মত উদার।”
………………………………..
আপনি এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছেন? যান। এই মুহূর্তে এই বাসা থেকে বেরিয়ে যান। নীলিমা দৌঁড়ে স্টাডিরুমে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দেয়।
আবিরের দিকে ফিরে তাকায় সাইমা।
নিচু স্বরে বলে, ও তোমায় বড্ড বেশী ভালোবাসে ভাইয়া। আজ খুব বেশী বলে ফেলেছ। এর জন্য প্রস্তাতে হবে তোমার। সাইমা চলে যায়।
ঘন্টা খানেক পর রুমে ঢুকে নীলিমা। সোফায় মাথায় হাত দিয়ে আবির যে পাশটাই বসে ছিল, তার ঠিক পাশেই আবিরের মুখোমুখী বসে নীলিমা। ফিরে তাকায় আবির। কিছু বলার আগেই মুখ খুলে নীলিমা। আমি চলে যাচ্ছি। আমার জন্য তো আর কারো জীবন থেমে থাকবে না, থাকতে পারে না। হাতের সাদা কাগজটা টেবিলের উপর রাখে নীলিমা। বা হাতে একটা কলম নেয়। তারপর কাঁপা কাঁপা হাতে সাদা কাগজের মাঝখানে বড় অক্ষরে লিখে, নীলিমা।
লিখা শেষে কাগজটা আবিরের দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বলে,
” এই নিন! ২য় বিয়ে বা ডিভোর্সের সময় প্রথম বউ হিসেবে সাদা কাগজের এই সাক্ষর’টা কাজে লাগবে।”
প্রতিউত্তরে কিচ্ছু বলেনি আবির। শুধু কৌতূহলের দৃষ্টিতে নীলিমার মোজা পরিহিত ডান হাতের দিকে তাকায়। নজর এড়ায় না নীলিমার। শেষ বেলায় আবিরের কৌতূহলটা মিটিয়ে দেয়ার জন্য নীলিমা ওর হাত থেকে মোজাটা খুলে কাটা হাতটা আবিরের চোখের সামনে মেলে ধরে। আবিরের চোখ মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে নীলিমার হাতটা দেখে বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। উত্তেজিত হয়ে নীলিমার চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল আবির তার আগেই ভেঁজা চোখে জবাব দেয় নীলিমা,
” ভালোবাসার অপরাধে আঙুলটা কেটে নেয়া হয়েছে…..”
.
চলবে____