#প্রেমাতাল
পর্ব ৩১
লেখিকাঃ মৌরি মরিয়ম
কতক্ষণ পর তিতির ক্লান্ত হয়ে মাটিতে পা রাখলো। মাটিতে ভর দিতেই তিতির টের পেল ও সব শক্তি যেন হারিয়ে ফেলেছে, দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। মুগ্ধর কোমরটা আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঢলে পড়লো মুগ্ধর বুকের উপর। নিঃশ্বাস পড়ছিল ঘন ঘন। মুগ্ধ তিতিরের মুখটা ধরে উপরে তুলল তারপর নিজের ঠোঁট দিয়ে চোখের পানিটুকু মুছে দিল। ইশ একি সুখ মুগ্ধ দিচ্ছে ওকে! এত সৌভাগ্য নিয়ে জন্মেছিল ও! আচ্ছা মুগ্ধকে কেমন দেখাচ্ছে এখন? দেখার জন্য তিতির চোখ খুলে তাকালো। মুগ্ধর চোখে চোখ পড়তেই তিতিরের লজ্জা লাগলো, চোখ নামিয়ে নিল। মুগ্ধ জিজ্ঞেস করলো,
-“কাঁদছিলে কেন?”
তিতির কিছু না বলে মুগ্ধর বুকে মুখ লুকালো। খুব ভাল লাগছে ওর, এত ভাললাগা কি করে বোঝাবে মুগ্ধকে? যেভাবেই হোক ও যে বোঝাতে চায়।
মুগ্ধ তিতিরকে নিজের বুকের মধ্যে চেপে ধরে রইলো। এত ভাল অনুভূতি এর আগে কখনো হয়নি ওর। এর আগেও অসংখ্যবার চুমু খেয়েছে প্রাক্তন প্রেমিকাদের। কিন্তু আজ মনে হলো জীবনের প্রথম চুমু ছিল এটা। প্রথম অভিজ্ঞতা। তিতিরের আনাড়িপনা ও লজ্জা ব্যাপারটাতে অন্যরকম মাধুর্য এনে দিয়েছে। তিতির ভালই করেছে ওকে এতদিন অপেক্ষা করিয়ে। অপেক্ষার ফল সুমিষ্ট হয়!
মুগ্ধ তিতিরকে কোলে তুলে নিল। তিতিরও গলা জড়িয়ে ধরল, কিন্তু তাকাতে পারলো না ওর দিকে। মুগ্ধ ওকে কোলে নিয়েই বারান্দায় রাখা সোফাটায় বসলো। তারপর বলল,
-“চুপ করে আছো যে? কথা বলবে না?”
তিতির নিচু স্বরে
-“কি বলবো?”
-“কেমন লাগলো সেটা বলো?”
-“তুমি তো সবই বোঝো। আমি আর কি বলবো?”
-“বুঝি তো কিন্তু আমার তিতিরপাখিটার মুখে কি শুনতে ইচ্ছে করে না?”
তিতির মুগ্ধর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
-“সুখের সমুদ্রে ডুবে ছিলাম। মরে যেতে ইচ্ছে করছিল। যদি এত সুখের মুহূর্ত আর না আসে?”
তিতিরের উষ্ণ নিঃশ্বাস কানে লাগতেই মুগ্ধ কোথায় যেন হারিয়ে গেল। তিতিরকে বুকের উপর নিয়েই সোফাতে শুয়ে পড়লো। তিতির উপুর হওয়াতে ওর ভেজা চুলগুলো মুগ্ধর মুখের উপর পড়লো। মুগ্ধ চুলগুলোকে সরিয়ে বলল,
-“সুখের সমুদ্রে তো তোমাকে নিয়ে মাত্র পা ভেজালাম। এখনি মরতে চাও? যখন সাঁতার কাটবো তখন কি বলবে?”
একথা শুনে লজ্জায় তিতির আচমকাই উঠে পড়ল। মুগ্ধ আঁচল টেনে ধরতেই তিতির দাঁড়িয়ে পড়লো। মুগ্ধ কাত হয়ে সরে তিতিরকে বসিয়ে বলল,
-“আরে এখনি না তো! বিয়ের পরে। তুমি তো মাত্র ১৭। ১৮+ কাজ কি আমি তোমার সাথে করতে পারি বলো?”
তিতির কিছু বলল না, শুধু হাসলো। মুগ্ধ ওকে বুকে নিয়ে বলল,
-“ইশ একটু তাড়াতাড়ি বড় হও না, বিয়ে করি।”
-“বড় হওয়ার মন্ত্র থাকলে আজই পড়ে বড় হয়ে যেতাম।”
-“তাই? সাঁতার কাটার এত ইচ্ছে?”
তিতির মুগ্ধর বুকে কিল মারতে মারতে বলল,
-“তুমি এত খারাপ কেন?”
-“তুমি এত লক্ষী বলে।”
এমন সময় মুগ্ধর ফোন বাজল। বংশী ফোন করেছে। মুগ্ধ ফোন ধরলো। বংশী কি বলল তা তো তিতির শুনতে পেল না কিন্তু তারপর মুগ্ধ বলল,
-“হ্যা, হ্যা.. তুমি নিয়ে এসো।”
ফোন রাখতেই তিতির বলল,
-“কি নিয়ে আসতে বললে?”
মুগ্ধ হাসলো। তিতির বলল,
-“কি? হাসছো যে?”
-“না মানে একটা কথা মুখে চলে এসেছিল, বললে তুমি লজ্জায় আমার সামনেই আর আসতে না তাই গিলে ফেলেছি। ওটা ভেবেই হাসলাম।”
তিতিরের মনে মনে রাগ হলো। এহ সারাদিন রাজ্যের আজেবাজে কথা বলতে থাকে, এখন একদম তুলসী পাতা হয়ে গেছে! কথাটা জানার জন্য মনটা আকুপাকু করলেও আর জিজ্ঞেস করতে পারলো না তিতির। বংশী এসে দরজায় নক করতেই মুগ্ধ গিয়ে খুলে দিল। পিছন পিছন তিতিরও ঘরে ঢুকলো। তিতিরকে শাড়ি পড়া দেখেই বংশী বলল,
-“দেখলিজিয়ে সাহাব, বিবিজিকো আব ছোটা নেহি লাগতা।”
তিতির হাসলো।মুগ্ধও হেসে বলল,
-“হ্যা।”
-“সাহাব, ডিনারপে কেয়া খায়েগা আপ দোনো?”
মুগ্ধ তিতিরের দিকে তাকিয়ে বলল,
-“এই তুমি কি খাবে?”
তিতির বলল,
-“খেয়ে না এলাম? আমি আর কিছু খাব না।”
-“খেয়েছি তো সেই ৬/৭ টার সময়। এখন তো ১০ টা বাজতে চলল।”
-“হোক।”
বংশী বলে উঠলো,
-“নেহি বিবিজি.. ইয়ে সাহি বাত নেহি! রাত কা খানা বহত জারুরি হোতা হেয়।”
মুগ্ধ বংশীকে বলল,
-“তোমার বিবিজির কথা বাদ দাও.. ও খাবে কি খাবে না আমি দেখে নেবো। তুমি দুজনের জন্য নরমাল কিছু নিয়ে এসো ১১ টার দিকে। যেমন ধরো ভাত, মাছ, ভর্তা।”
-“সাহাব, চিকেন গুতাইয়া হেয়। ও ভি দিব?”
-“ওহ ওয়াও। অবশ্যই দিবে।”
বংশী চলে গেল। যাওয়ার সময় মুগ্ধর হাতে একটা বোতল দিয়ে গেল। তিতির জিজ্ঞেস করলো,
-“এটা কি?”
-“এটা দিতেই তো বংশী এসেছিল।”
-“হ্যা কিন্তু জিনিসটা কি?”
-“মহুয়া।”
-“সেটা কি? মদ?”
-“ছি, এভাবে বলো না। যদিও ওই টাইপেরই। কিন্তু মহুয়া ইজ মহুয়া। চরম একটা জিনিস। খাসিয়ারা বানায় ফল দিয়ে।”
-“মানে কি? মদ তো মদই। তুমি যদি ওটা খাও আমার ধারেকাছেও আসবে না। ছিঃ আর তুমি মদ খাও আমি ভাবতেও পারিনি। আমি জানতাম তোমার কোনো নেশা নেই।”
মুগ্ধ বোতলটা সোফার সামনের টি-টেবিলের উপর রেখে তিতিরের কাছে এসে বলল,
-“আরে বাবা, আমাকে একটু বলার সুযোগ দাও।”
তিতির সরে গিয়ে বলল,
-“কি সুযোগ দেব? ছিঃ তুমি মদ খাও ভাবতেই আমার গা গোলাচ্ছে।”
মুগ্ধ তিতিরকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-“শোনো তিতিরপাখি, আমার সত্যিই কোনো নেশা নেই উইদাউট ইউ। ইভেন অকেশনালিও এসব করিনা শুধু বান্দরবান আর কুয়াকাটা গেলে মহুয়াটা খাই। তাও প্রত্যেকবার না। এটা অন্যরকম স্বাদ। আমি প্রথমবার যখন খেয়েছিলাম তখনই ঠিক করে রেখেছিলাম যে বউয়ের সাথে একবার খাব। সেজন্যই বংশীকে দিয়ে আনিয়েছি।”
তিতির চোখ বড় বড় করে বলল,
-“আমি খাব?”
-“হ্যা, মানে অল্প।”
তিতির সরে গেল। বিছানায় বসে বলল,
-“অসম্ভব।”
মুগ্ধ তিতিরের পাশে বসলো। বলল,
-“এক চুমুক খেয়ে ট্রাই করো। ভাল না লাগলে খেয়ো না।”
তিতির হ্যা না আর কিছু বলল না। প্রসঙ্গ পাল্টালো,
-“বাদ দাও, আচ্ছা উনি না বলেছিল কোনো কটেজ খালি নেই, তাঁবুতে থাকার ব্যবস্থা করবে। তাহলে পরে আমরা কটেজ কিভাবে পেলাম?”
-“ওহ এই কটেজটা অলরেডি বুকিং দেয়া। যারা বুক করেছে তারা কাল আসবে। তাই আজ আমাদের দিতে পারলো।”
-“ও।”
মুগ্ধ তিতিরের একটা হাত ধরে বলল,
-“তুমি রাগ করেছো?”
-“কেন?”
-“মহুয়া আনালাম বলে?”
-“না তা না কিন্তু আমি এগুলো পছন্দ করি না।”
-“এই তোমাকে ছুঁয়ে বলছি নেশা জাতীয় কোন কিছুই আমি রেগুলার করি না।”
তিতির আহ্লাদ করে হাসলো। তারপর বলল,
-“আচ্ছা ঠিকাছে।”
মুগ্ধ হঠাৎই বলল,
-“সিরিয়াসলি তোমাকে শাড়ি পড়ায় বড় লাগছে। একদম বউ বউ।”
তিতির হাসলো। মুগ্ধ তিতিরের কোমর ধরে কাছে নিয়ে আসলো। তারপর বলল,
-“বিয়ের পর সবসময় আমার সাথে যখন থাকবে ফর সিওর তুমি খুব বিরক্ত হবে।”
-“কেন?”
-“এইযে, তোমাকে এক মুহূর্তের জন্য ছাড়বো না যে। বুকেই রাখবো।”
-“তখন আর এত আকর্ষণ থাকবে না।”
-“কে বলল তোমাকে?”
-“পুরোনো হয়ে যাব না?”
-“কিছু জিনিস কখনো পুরোনো হয়না তেমনি কিছু মানুষও কখনো পুরোনো হয়না। প্রতিদিন নতুন করে ভাললাগা জন্মায় তাদের প্রতি।”
-“সত্যি তো?”
-“সত্যি।”
ওদের গল্প চলতেই থাকলো। এক সময় বংশী খাবার দিয়ে গেল। তিতির বলল,
-“আমার না তোমাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিতে ইচ্ছে করছে, দিই?”
-“কি সৌভাগ্য! কি সৌভাগ্য! প্লিজ দাও।”
তিতির এলোমেলো চুলগুলোকে হাতখোঁপায় বেঁধে কোমরে আঁচল গুঁজে নিল। মুগ্ধ তাকিয়ে রইলো ভ্যাবলার মত। একদম গিন্নী গিন্নী লাগছে। এই সৌন্দর্য কোথায় ছিল এতদিন?
তিতির হাত ধুয়ে ভাত নিল প্লেটে। ভাত মেখে মুগ্ধর মুখে সামনে তুলে ধরলো। মুগ্ধ তখনও তাকিয়ে। তিতির বলল,
-“কি হলো? নাও খাও।”
মুগ্ধ হা করলো তিতির খাইয়ে দিল। মুগ্ধ বলল,
-“তুমিও খাও।”
-“তুমি খাও, আমার ইচ্ছে করছে না।”
-“ওকে আমিও খাব না, রাখো।”
-“আচ্ছা আচ্ছা খাচ্ছি, বাপরে বাপ! ব্ল্যাকমেইলর একটা।”
তিতিরও খেল। মুগ্ধ হেসে দিল। খাওয়াদাওয়া শেষ করে তিতির যখন হাত মুখ ধুয়ে প্লেটগুলো গোছাচ্ছিল। পিছন থেকে মুগ্ধ ওকে ধরে নিজের দিকে ফেরালো। কপালে একটা চুমু দিল। তারপর চোখে চোখ রেখে বলল,
-“তোমাকে যতটা বাচ্চা ভাবি ততটা বাচ্চা তুমি নও।”
-“একথা কেন বললে?”
-“এইযে এত সুন্দর করে খাইয়ে দিলে। তারপর এই খোঁপা! আঁচল কোমড়ে গোঁজা। সব মিলিয়ে পারফেক্ট বউ।”
-“আমার সবই তো তোমার পারফেক্ট লাগে। আমার খারাপটা বলোতো। ভাল শুনতে শুনতে আমি টায়ার্ড।”
-“তোমার খারাপটা হচ্ছে তুমি খুব কিপটা।”
-“কি কিপটামি করেছি?”
-“আদর করতে কিপটামি করো সবসময়। নিজে থেকে তো শুধু জড়িয়ে ধরো আর কিছুই না। আমাকেও করতে দাওনা।”
তিতির লাজুক মুখে বলল,
-“আজ তো দিয়েছি।”
মুগ্ধ তিতিরের শাড়ির ভেতর দিয়ে কোমরের কার্ভে হাত রেখে বলল,
-“তাই?”
তিতির একটু নড়ে উঠে বলল,
-“ছাড়ো সুড়সুড়ি লাগে।”
মুগ্ধ আস্তে আস্তে হাতটা উপরের দিকে ওঠাতে লাগলো। তিতির ছটফট করতে লাগলো। সরে যেতে চেয়েও পারলো না। মুগ্ধর একহাত ওকে ধরে রেখেছে। অবশেষে বলল,
-“দোহাই লাগে ছাড়ো। নাহলে মরে যাব।”
মুগ্ধ হাত সরিয়ে নিল, ছেড়ে দিল। তারপর বলল,
-“দেখেছো! আমি কিছু করতাম না জাস্ট দেখালাম তুমি কত কিপটা।”
তিতির নিচু স্বরে বলল,
-“আমার খুব সুড়সুড়ি লাগছিল।”
মুগ্ধ মুচকি হেসে বলল,
-“হুম জানি, আমি দুষ্টুমি করছিলাম।”
তিতির মুগ্ধর কাছে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-“এটাতে কখনো কিপটামি করিনা আমি।”
মুগ্ধও ওকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-“হুম, আর এটাই আমাকে সবথেকে বেশি শান্তি দেয়। যতক্ষণ তুমি দূরে থাকো, উত্তাল সমুদ্রের ঢেউয়ের মত উথাল পাথাল করতে থাকে বুকের মধ্যে। তারপর যখন এসে জড়িয়ে ধরো সব ঠান্ডা হয়ে যায়। তখন আমার চেয়ে সুখী মানুষ পৃথিবীতে আর একটিও পাবে না।”
তিতির বলল,
-“আমারও একই অবস্থা হয়।”
কিছুক্ষণ পর মুগ্ধ বলল,
-“এই চলো মহুয়া খাই, তুমি কখন ঘুমিয়ে পড়বে তার ঠিক নেই।”
-“আমি কিন্তু অল্প একটু খাব।”
-“হুম। অল্পই পাবে, বেশিটা পাবে কোথায় আমারই লাগবে ওটুকু।”
-“খেলে কি নেশা হয়?”
-“অল্প খাবেতো, নেশা হবে কোত্থেকে?”
-“তুমি তো বেশি খাবে।”
-“আমার তো অভ্যাস আছে রে বাবা। আরো বেশি খেয়েও নেশা হবে না। আর নেশা হলেও তোমার ভয় পাওয়ার কিছু নেই। নেশা হলে আমি খুব ঠান্ডা হয়ে যাই। চুপচাপ বসে থাকি।”
-“ও।”
মুগ্ধ বংশীকে ফোন করে বরফ আনালো। বরফ, গ্লাস আর মহুয়ার বোতল নিয়ে ওরা বারান্দায় চলে গেল। মুগ্ধ গ্লাসে ঢেলে এগিয়ে দিতেই তিতির বলল,
-“পানি মেশাবে না?”
-“আরে এটা ওইটাইপ না বাবা। এটা মহুয়া। পানি মেশানো লাগে না। পানি মেশালে টেস্টই চলে যাবে।”
-“ও।”
মুগ্ধ এক গ্লাস খেয়ে ফেলেছে, তিতির তখনো একটু খানি হাতে নিয়ে বসে রয়েছে ওর পাশে, মুখে দেয়নি। মুগ্ধ তা দেখে বলল,
-“খেতে যদি একান্তই ইচ্ছা না করে জোর করে খেওনা।”
-“না, তেমন কিছু না।”
তিতির মুখে দিল। ঘ্রাণটা সুন্দর, খেতেও টেস্টি কিন্তু গলা দিয়ে নামার পর কেমন যেন লাগলো। কয়েক সেকেন্ড যাওয়ার পর তিতির বলল,
-“ওয়াও, গ্রেট!”
-“কি?”
-“টেস্ট টা! খাওয়ার কতক্ষণ পরে বেশি ভাল লাগে।”
মুগ্ধ হেসে বলল,
-“বলেছিলাম।”
গ্লাসের টুকু শেষ করে তিতির বলল,
-“আমি আরো খাব।”
-“পাগল? নেশা হয়ে যাবে তোমার।”
-“না না হবে না। প্লিজ আরেকটু দাও না।”
-“না বাবা, এমন করোনা। টেস্টটা অনেক ভাল বলে তোমাকে আমি টেস্ট করিয়েছি। তার মানে এই না যে আমি তোমাকে আরো দিতে পারি। এটা অনেক কড়া।”
মুগ্ধ কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিতির বোতলে মুখ লাগিয়ে ঢকঢক করে খেতে লাগলো। তারপর মুগ্ধ টেনে নিয়ে নিল। বলল,
-“ইশ কেন যে আনতে গেলাম।”
-“কেন? খুব ভাল করেছো আনতে দিয়ে। খুব মজা তো।”
ততক্ষণে তিতিরের কথা জড়িয়ে যাচ্ছিল। মুগ্ধ আর খেলনা। তিতির সোফায় হেলান দিয়ে শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষণের মধ্যেই মুগ্ধ বুঝলো তিতির ঘুমিয়ে পড়েছে, যাক বাবা, বাঁচা গেল। নেশা হওয়ার আগে ঘুমিয়ে পড়লো। মুগ্ধ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো তিতিরের ঘুমন্ত মুখটার দিকে। ইশ, পৃথিবীর সব সুখ যেন এই মুখটার মাঝে। মুগ্ধ এগিয়ে তিতিরের কপালে একটা চুমু দিল। চুমু দিয়ে আর উঠতে পারলো না তিতির ওর শার্টের কলার ধরে ফেলেছে কখন যেন। ছাড়াতে যেতেই তিতির চোখ খুলে বলল,
-“আগে বলো খুলবে?”
মুগ্ধ অবাক,
-“কি খুলবো?”
-“এই পচা শার্ট টা।”
-“পচা? এটা তো তোমারই পছন্দের শার্ট। তুমিই দিয়েছিলে।”
-“নাহ এটা খুব পচা। এটা তোমার বুকের লোমগুলোকে ঢেকে রেখেছে, আমি কিসসি করতে পারছি না।”
মুগ্ধর বুঝে গেল, নেশা ভাল ভাবে হয়েছে। হবেই তো, বোতলে মুখ লাগিয়ে গিলেছে! পাগলী একটা। ওকে তারাতারি ঘুম পাড়িয়ে দিতে হবে। মুগ্ধ ওকে কোলে নিতে যাচ্ছিল। তিতির বলল,
-“খবরদার, এভাবে কোলে নিবে না। শার্ট খোলো আগে।”
মুগ্ধ অগত্যা শার্ট খুললো। তিতির সেটাকে ছুড়ে ফেলে দিল, শার্ট টা ঘরের দরজায় লেগে মাটিতে পড়লো। মুগ্ধ বলল,
-“খুশি?”
তিতির সেকথার উত্তর না দিয়ে মুগ্ধকে ধাক্কা দিয়ে শুইয়ে দিল সোফার উপর। ওর বুকে মধ্যে মুখ ডুবিয়ে ঘ্রাণ নিল কতক্ষণ, তারপর অজস্র চুমুতে ভরিয়ে দিল মুগ্ধর বুকটা। মুগ্ধর তখন পাগলপ্রায় অবস্থা। চুমু দিতে দিতে একসময় তিতির ওর গলাতেও চুমু দিল, তারপর গালেও দিল। মুগ্ধ ওর মুখটা ধরে বলল,
-“শোনো তিতির, তোমার নেশা হয়ে গেছে, চলো ঘরে গিয়ে ঘুমাবে।”
-“উফফফো! এমন পূর্ণিমারাতে এত সুন্দর পরিবেশে কেউ ঘুমায়?”
-“হুম, ঘুমায়।”
-“জানো, কেন আজকে থাকতে চেয়েছিলাম?”
-“কেন?”
-“তুমি আমাকে যতবার কিসসি করতে চেয়েছো আমি দিইনি। পরে খারাপ লেগেছে। আমি জানতাম থাকলে একসাথেই থাকবো আর তুমি আমাকে কিসসি করতে চাইবে, তখন আমি আর বাধা দিবনা। সেজন্য থাকতে চেয়েছি।”
-“হুম, আমি যদি সুযোগ নিয়ে আরো অনেক কিছু করে ফেলতাম তখন?”
উত্তর দিল না তিতির। বলল,
-“জানো তুমি যখন কিসসি করেছিলে তখন আমি কেন কেঁদেছিলাম?”
-“জানতে তো চেয়েছিলাম, তুমি বলোনি।”
-“তুমি এত সুন্দর আদর করে ধরেছিলে আমাকে আর এত সুন্দর করে কিসসি করেছিলে যে আমার বুকের ভেতর কেমন যেন অস্থির অস্থির করছিল। আমি সেই অস্থিরতাটা সহ্য করতে পারছিলাম না। কেমন যেন! সেজন্যই কান্না এসে গিয়েছিল আর আমি কেঁদে ফেলেছিলাম।”
মুগ্ধ তিতিরের মুখটা নিজের বুকে রেখে বলল,
-“ওহ, আহারে!”
তিতির মুখটা আবার তুলল। মুগ্ধর চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
-“এই শোনোনা, তখন আমি আবেশে কোনো এক অন্য দুনিয়ায় চলে গিয়েছিলাম। কিছুতেই বুঝতে পারিনি তুমি কিভাবে আমাকে কিসসি করেছিলে! আর আমার কেমন অনুভূতি হয়েছিল, শুধু অস্থির অস্থির লাগাটা বুঝতে পেরেছিলাম। আমাকে আরেকবার ওভাবে কিসসি করবে?”
মুগ্ধ হাসলো আর ভাবলো, ইশ কি ইনোসেন্ট! নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান পুরুষ বলে মনে হচ্ছিল। তিতির ওকে চুপ করে থাকতে দেখে বলল,
-“ভাবছো তো নিজে না করে তোমার কাছে চাইছি কেন? আমি তো জানিনা কিভাবে করতে হয়। তখন তো বুঝতে পারিনি। আমাকে একটু শিখিয়ে দাও না। আমিও তোমার মত করে তোমাকে আদর দিতে চাই।”
মুগ্ধ তিতিরকে সরিয়ে উঠে বসলো। তারপর দাঁড়াল। তিতির বলল,
-“দাও না, প্লিজ। আর কখনো তোমাকে ফিরিয়ে দেব না।”
মুগ্ধ হেসে তিতিরকে কোলে তুলে নিল। তারপর ঘরে নিয়ে গিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল। তিতির বলল,
-“কিসসি না করে ঘুমাবো না।”
তিতির তখনো মুগ্ধর গলা ধরে আছে। মুগ্ধ বলল,
-“জানি।”
মুগ্ধ তিতিরের কানের নিচ দিয়ে চুলের ভেতর হাত গলিয়ে ওর মুখটা কাছে নিয়ে এল। তারপর তিতিরের ঠোঁটে চুমু খেল। তিতিরও একসময় মুগ্ধর গলা জড়িয়ে ধরলো। মুগ্ধ যখন ছাড়তে চাইলো তিতির ছাড়লো না। পারলে ও মুগ্ধর গলায় ঝুলেই উঠে আসে। মাঝে মাঝে আবার কামড়ও দিচ্ছিল।
কিছুক্ষণ পর তিতির মুগ্ধকে ছেড়ে হাঁপাতে লাগলো। মুগ্ধ উঠে যাচ্ছিল। তিতির ধরে রাখলো। মুগ্ধ হেসে জিজ্ঞেস করলো,
-“কি? আরো?”
তিতির এক্সাইটমেন্টে, নেশা আর ঘুমের মধ্যে কি যে বলল বুঝতে পারলো না মুগ্ধ। মুগ্ধ জিজ্ঞেস করলো,
-“বুঝিনি কি বললে! আবার বলবে?”
-“তোমার এক্স গার্লফ্রেন্ডদের কি এভাবেই কিসসি করতে?”
-“আরে নাহ!”
-“তাহলে কিভাবে করতে?”
-“কেন এসব জিজ্ঞেস করছো?
তিতির কান্না করে দিল,
-“বলোনা..”
-“এভাবে করতাম না। তুমি আবার কাঁদছ কেন?”
-“এভাবে চুলের ভেতর হাত দিয়ে ধরতে?”
-“নাহ।”
-“ওইভাবে কোমরে ধরতে?”
-“না।”
-“উপরের ঠোঁটটায় কি…..”
মুগ্ধ তিতিরের মুখ চেপে ধরে চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
-“শোন পাগলী! আমি কখনো কাউকে এভাবে আদর করিনি। যতটা ভালবাসলে এভাবে আদর করা যায় ততটা ভাল শুধু তোকেই বেসেছি। আর তোর পরেও আমি অন্য কোনো মেয়েকে স্পর্শ করবো না। মাথায় কিছু ঢুকেছে?”
তিতির মুগ্ধকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-“উফফফ, বাঁচালে!”
তিতিরের পাগলামি দেখে মুগ্ধর নিজেরই মাথা ঘুরছিল। ওকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে শুয়ে রইল মুগ্ধ। একসময় ঘুমিয়েও পড়লো তিতির। হয়তো কাল ঘুম থেকে উঠে তিতিরের কিছুই মনে থাকবে না। কিন্তু মুগ্ধর জীবনে তিতিরের সাথে বিয়ে, সংসার আরো আরো যতকিছুই হোক না কেন আজকের এই স্পেশাল রাতটা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে!
To be continued..