#প্রেমাতাল
পর্ব ৩৭
লেখিকাঃ মৌরি মরিয়ম
তিতির চোখ মেলে দেখলো গাড়িতে ও একা। মুগ্ধ নেই, গাড়ি একটা শপিং মলের সামনে পার্ক করা। এটা কোথায় বুঝতেও পারছে না। তিতির মোবাইল বের করে মুগ্ধকে কল করলো,
-“হ্যালো, আমার ঘুমকুমারীর ঘুম ভেঙে গেল?”
-“হুম। আপনি আমাকে একা রেখে কোথায় চলে গেছেন?”
-“তুমি লক করা আছো তাই একা রেখে আসলেও প্রব্লেম নেই। আমি তোমককে ডেকেছিলাম কিন্তু তুমি ওঠোনি তখন। আমি মলে ঢুকেছি, কিছু কেনাকাটা আছে।”
-“কি আবার কিনবে?”
-“আরে হুট করে এসেছি না? সাথে জামাকাপড় তো নেই, পড়বো কি? দুজনের জামাকাপড় কিনতে ঢুকেছি।”
-“শুধু তোমারটা কেন তাহলে। আমার আজ ফ্রেন্ডের বাসায় থাকার কথা ছিল না? একটা এক্সট্রা সালোয়ার-কামিজ আছে সাথে।”
-“ওহ, সেটা ভাল কথা কিন্তু বিছনাকান্দিতে কি তুমি সালোয়ার-কামিজ পড়ে পানিতে নামবে? সামলাতে পারবে তো?”
তিতির উচ্ছাসিত হয়ে বলল,
-“আমরা বিছনাকান্দি যাব?”
মুগ্ধ হেসে বলল,
-“তো সিলেট এসেছি কেন?”
-“ওয়াও, আমি খুশি ধরে রাখতে পারছি না। বাই দ্যা ওয়ে, সিলেট এসেছি মানে? আমরা কি সিলেট চলে এসেছি?”
-“হ্যা।”
-“বাপরে! এতক্ষণ ঘুমিয়েছি আমি?”
-“ব্যাপার না।”
-“তুমি কোনো ব্রেক নাওনি?”
-“নাহ।”
-“কষ্ট হয়েছে অনেক?”
-“আরে না।”
মুগ্ধ ততক্ষণে কথা বলতে বলতে বাইরে চলে এসেছে। গাড়ির দরজা খুলে বলল,
-“আসুন ম্যাম।”
তিতির হেসে বেড়িয়ে এল। শপিং মলে ঢুকে কেনাকাটা করছে এমন সময় তিতির লেডিস শার্ট দেখছিল। কয়েকটা কালারের মধ্যে বেবি পিংক টা বেছে নিল তিতির। মুগ্ধ বলল,
-“এটা নিও না। ব্ল্যাক কিংবা নেভি ব্লু টা নাও।”
-“কেন এটা খারাপ লাগছে? তুমি তো বলেছিলে আমাকে লাইট কালারে ভাল লাগে।”
মুগ্ধ বলল,
-“এটা পড়ে পানিতে নামবে? নাকি এমনি পড়তে নিচ্ছো?”
-“পানিতে নামার জন্যই তো নিচ্ছি।”
-“তোমার সেন্স অফ হিউমার ভাল, কিন্তু মাঝে মাঝে সেটা কাজে লাগাও না কেন?”
-“কি করলাম আবার? কিছুই তো বুঝতে পারছি না।”
মুগ্ধ এবার কাছে এসে নিচু স্বরে বলল,
-“হালকা কালারের ড্রেস পড়ে ভিজলে সব দেখা যায়।”
তিতির লজ্জা পেয়ে পিংক টা রেখে নেভি ব্লু টা নিল। পিংক টা এমনভাবে ছুড়ে রাখলো যেন ওটাতে কোন পোকা পড়েছে।
কেনাকাটা শেষ করে ওরা লাঞ্চ করে নিল। তারপর গাড়িতে উঠতেই তিতির বলল,
-“আমরা উঠছি কোথায়? হুট করে এলাম রুম পাব তো?”
মুগ্ধ হেসে বলল,
-“বুকিং দেয়া হয়ে গেছে।”
-“সিরিয়াসলি? কোথায়?”
-“শুকতারা ন্যাচার রিট্রিট।”
তিতির চোখদুটো বড় বড় করে বলল,
-“রিসোর্ট?”
মুগ্ধ হেসে বলল,
-“হ্যা।”
-“ওয়াও। খুব ভাল হয়েছে, আমার হোটেলে একদম ভাল লাগে না।”
-“সেজন্যই তো রিসোর্টে থাকবো।”
কিন্তু হঠাৎই চিন্তায় পড়ে গেল তিতির। বলল,
-“কিন্তু খরচটা তো অনেক বেশি হয়ে যাবে।”
-“তাতে কি? কতদিন তো কোথাও যাই না। হোকনা একটু খরচ, ডেইলি ডেইলি তো যাচ্ছি না।”
-“কেন যাওনা?”
-“তুমি ছাড়া এখন আর কোথাও যেতে ভাল লাগে না।”
তিতির চুপ হয়ে গেল। কে জানে এটাই হয়তো মুগ্ধর সাথে শেষ ট্যুর!
রিসোর্টের রিসিপশানে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ বলল,
-“স্কিউজমি, আমাদের বুকিং ছিল।”
ম্যানেজার একটা ফর্ম দিল ফিলাপ করার জন্য। এতদিন যত যায়গায় গিয়েছে এসব ফর্মালিটিজ মুগ্ধই করেছে। আজ ফর্মটা তিতিরের দিকে এগিয়ে দিল। যা সবসময় মুগ্ধ লিখে এসেছে আজ তা লিখলো তিতির।
Mr. Mehbub Chowdhury Mugdho with Mrs. Titir Mehbub.
…………………………………………….
…………………………………………….
…………………………………………….
ফর্মালিটিজ শেষ করতেই একজন কেয়ারটেকার ওদের দোতলায় নিয়ে গিয়ে রুম খুলে দিয়ে বলল,
-“স্যার, লাঞ্চ করবেন?”
-“না না আমরা লাঞ্চ করে এসেছি। ডিনার করবো এখানে।”
-“ওকে স্যার, কিছু লাগলে ইন্টারকমে ১০১ এ কল করলেই হবে।”
-“ওকে, থ্যাংকইউ।”
-“মোস্ট ওয়েলকাম স্যার।”
ছেলেটি চলে যেতেই মুগ্ধ-তিতির ঘরে ঢুকলো। তিতিরের মনটাই ভরে গেল। বিশাল একটা ঘর। লাল ইটের সিরামিকের দেয়াল। বেতের বিছানা, বেতের আলমারি, বেতের ড্রেসিং টেবিল, সাথে কাঠের ফ্রেম করা আয়না। ঘরের পুরো একটা দেয়ালে কাঠের ফ্রেমে থাই গ্লাস লাগানো। ওপাশে একটা বারান্দা, বারান্দায় যাওয়ার জন্য বড় একটা দরজাও আছে, দরজাটাও গ্লাসেরই। ভেতর থেকেই দেখলো বারন্দার ওপাশে যতদূর চোখ যায়, শুধু পাহাড় দেখা যায়। পুরো গ্লাসের দেয়ালটায় লাল রঙের পর্দা লাগানো। বেড কভার, বালিশের কভার সব সাদা। বিছানায় সামনে, টয়লেটের সামনে পর্দার সাথে মিলিয়ে লাল রঙের পাপোশ বিছানো। সব মিলিয়ে অসাধারণ লাগলো। তিতির দরজা খুলে বারান্দায় গেল। সেখানে গিয়ে আরেকটা সারপ্রাইজ পেল। বারান্দার একপাশে বাগানের মত ঘাস লাগানো হয়েছে, পাশে সাদা গোল সিরামিকের টবে ফুলের গাছ। অন্যপাশে একটা ডিভান রাখা। পুরো বারান্দায় রেলিং বলে কিছু নেই। তবে বাউন্ডারি আছে, সেখানেও ঘাস ও ছোট ছোট বাগানবিলাশ লাগানো হয়েছে। আর বারান্দার ওপারে উন্মুক্ত পাহাড়, যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। বান্দরবান আর সিলেটের দূরে থাকা সবুজ সৌন্দর্যের একটা পার্থক্য রয়েছে। বান্দরবানের দূরের সবুজগুলো গাঢ় সবুজ। আর সিলেটের দূরের সবুজগুলো হালকা সবুজ, কিন্তু উজ্জল। তবে দুটো সৌন্দর্যই চোখ জুড়ানো, মন ভোলানো। কারো সাথে কারো তুলনা করা চলে না।
হঠাৎ মুগ্ধ তিতিরকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ওর চুলের গন্ধ নিল। তিতির মুগ্ধর বাহুডোরে থেকেই ফিরলো মুগ্ধর দিকে। তারপর মুগ্ধকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল। মুগ্ধ ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
-“দেখো অবস্থা। এজন্য নিয়ে এলাম নাকি?”
তিতির চোখ তুলে মুগ্ধর দিকে তাকালো। মুগ্ধ ওর চোখ মুছে দিল। তিতির বলল,
-“তুমি ফর্মটা কেন আমাকে ফিলাপ করতে দিলে?”
-“কেন, কি হয়েছে তাতে?”
-“মিস্টার এন্ড মিসেস লেখার পর আমার কেমন যেন একটা ফিলিং হলো।”
মুগ্ধ হেসে জিজ্ঞেস করলো,
-“কেমন?”
-“জানিনা, কেমনই যেন! বোঝাতে পারব না।”
-“সবসময় তো আমিই ফিলাপ করি এবং তখন আমার এই ফিলিং টাই হয়। তোমাকে এটার সাথে পরিচয় করানোর জন্যই আজ তোমাকে ফিলাপ করতে দিয়েছি।”
তিতির আবার কাঁদলো। কাঁদতে কাঁদতে বলল,
-“সব ঠিকঠাক থাকলে তো আজ আমরা হাসবেন্ড-ওয়াইফই থাকতাম।”
-“আমরা হাসবেন্ড-ওয়াইফই তিতির। আমাদের আত্মার বিয়ে অনেকদিন আগেই হয়ে গেছে। তোমার কি মনে হয়না আমাদের সম্পর্কটা শুধু একটা প্রেম না। তার থেকেও অনেক বেশি কিছু?”
-“হয় তো।”
-“হুম, এবার কান্নাটা থামাও না বাবা। আর গোসলে যাও। আমরা বিকেলে বের হব।”
-“কোথায় যাব?”
-“কোথাও একটা যাব। কোথায় তা এখনো জানিনা।”
মুগ্ধ তিতিরের চোখটা আবার মুছে দিল। তিতির বলল,
-“তুমি আমাকে কতদিন ধরে কোলে নাও না বলোতো?”
মুগ্ধ একথা শুনে এক সেকেন্ডও দেরী করলো না। কোলে তুলে নিল তিতিরকে। তারপর ঘরে নিয়ে গিয়ে নামাতে নিল আর তিতির বলে উঠলো,
-“নামিও না, নামিও না।”
মুগ্ধ অবাক হয়ে বলল,
-“কেন?”
-“গোসল করবো না? বাথারুমে দিয়ে আসো।”
-“ওহ, ওকে।”
মুগ্ধ তিতিরকে বাথারুমে রেখে ফেরার সময়ই তিতির শাওয়ার ছেড়ে ওকে ভিজিয়ে দিল। মুগ্ধ লাফিয়ে উঠে বলল,
-“এটা কি করলে বলোতো?”
তিতির হো হো করে হেসে দিল। মুগ্ধও ওকে টেনে শাওয়ারের নিচে এনে ভিজিয়ে দিল। কোথায় তিতির সরে যাওয়ার চেষ্টা করবে তা না করে মুগ্ধর টাই টা আলগা করে শার্টের উপরের দুটো বোতাম খুলে দিল। তারপর ওর গলার পিছনে দুহাত বেঁধে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে রইলো ওর চোখের দিকে। মুগ্ধ যখন বিস্ময় কাটিয়ে উঠতে পারলো তখন তিতিরের ওড়নাটা টেনে ফেলে দিল। তারপর তিতিরের কোমর জড়িয়ে উঁচু করে শূন্যে তুলে নিজের সমান করে বলল,
-“উইল ইউ কিস মি?”
তিতির চোখ নামিয়ে হাসলো। শাওয়ারের পানি তিতিরের চুল বেয়ে বেয়ে এসে পড়ছে মুগ্ধর ঠোঁটে, চোখে, বুকে। মুগ্ধ বলল,
-“এমনভাবে করো তিতির যার ফিল টা আমার মধ্যে মৃত্যু পর্যন্ত থাকবে?”
তিতির মুগ্ধর দুই গালে হাত রেখে আরো একটু কাছে চলে গেল। তারপর ঠোঁটে ঠোঁট বসালো। শাওয়ারটা ছাড়াই রইলো। বেশ অনেকক্ষণ পর মুগ্ধ আচমকা তিতিরকে নামিয়ে দেয়ালে ঠেকিয়ে পাগলের মত চুমু খেতে লাগলো। তিতিরের ঠোঁটের কত যায়গায় যে কামড়ে দাগ বসিয়ে দিল তার কোন হিসেব নেই। অবশ্য তিতির যে মুগ্ধর কত চুল টেনে ছিঁড়লো তারও কোনো ইয়ত্তা নেই। মুগ্ধও একসময় তিতিরের ঠোঁট ছেড়ে গলায় নেমে এল। হাত চলে গেল কোমরে। পাগলামি চলতেই থাকলো। তিতিরের চোখ দুটো বন্ধ, ঘনঘন নিঃস্বাস ফেলছে। তখনই মুগ্ধ একটা হাত কোমর থেকে সরিয়ে তিতিরের পিঠের কাছে নিয়ে গেল। গলায় চুমু খেতে খেতেই তিতিরের পিঠ বরাবর কামিজের চেইনটা খুলে ফেললো। ভেজা পিঠে ভেজা হাত রাখতেই মুগ্ধর খেয়াল হলো তিতির আজ কিছুতেই না করছে না মুগ্ধকে কিন্তু ওর ফ্যামিলি তো সত্যিই কোনদিন মানবে না। একদিন হয়তো তিতিরের বিয়েও হবে অন্যকারো সাথে সেদিন যদি তিতিরের আফসোস হয় আজকের দিনটার জন্য? চেইনটা আবার লাগিয়ে দিল। তিতির অবাক হয়ে চোখ খুললো। মুগ্ধ বলল,
-“তারাতারি গোসল করে বেড়িয়ে এসো। এর বেশি ভিজলে ঠান্ডা লেগে যাবে।”
একথা বলে তিতিরের কপালে একটা চুমু দিয়ে ঘরে চলে গেল মুগ্ধ।
মুগ্ধ বেড়িয়ে যাওয়ার পর তিতির যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানেই বসে পড়লো। পাগলের মত কাঁদতে লাগলো। কান্নাটা কোনভাবেই থামাতে পারছে না। কিন্তু কেন কাঁদছে তা ও নিজেও ধরতে পারছে না। এত আদর পেয়ে সুখে কাঁদছে নাকি যা পেলনা তার জন্য কাঁদছে!
To be continued…