#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ
রুপান্তর ও তটিনীর সাথে মজনুর ভাব হয়ে গেলো হুট করেই। তিনজন একসাথে নোটস কালেক্ট ও বিভিন্ন কাজ করতে লাগলো। নিসন্দেহে মজনু একটি ভালো ছেলে। কিন্তু যেমনটা হোক সেটা সহ্য হলো না রুদ্রের। সে মজনুর ব্যাপারে খুঁজ নিলো। ছেলে খুবই ভালো এবং সহজসরল। রুদ্রের চিন্তা কমলো।
রুপান্তর অনলাইনে একজন পুরুষের প্রেমে পড়েছিল। কিন্তু পুরুষটি তাকে পাত্তা দেয়নি। মূলত মূল্যায়ন করেনি। সেজন্য মাঝে মধ্যে রুপান্তরের মনে অদ্ভুত শূন্যতা অনুভব হয়। সেটা সে তটিনী ও মজনুর সাথে শেয়ার করেছিল। তটিনী পিঠ চাপড়ে বলেছিল, ‘চিল বেগম রোকেয়া, এসব কতো আসবে কতো যাবে।’
মজনু ছিল নির্বিকার। সে শুধু একবার চশমা ঠিক করে বলেছিল, ‘তুমি কি অনেক পছন্দ করতে থাকে?’
রুপান্তরের উত্তর ছিলো, ‘অনেকটাই করতাম৷ কিন্তু সেটা ধীরে ধীরে শূন্যে এসে নামছে। যে আমাকে মূল্যায়ন করে না আমি তাকে নিয়ে ভাবতে চাই না আর৷ কিন্তু একটু সময় লাগছে শুধু।
যথারীতি তাদের ক্লাস চলছে৷ মজনু গ্রামের ছেলে। সে সিলেট থেকে ঢাকা পড়তে এসেছে৷ মধ্যবিত্ত পরিবারের সহজ-সরল মজনুকে তেমন স্মার্ট মনে হয়না। সে সবসময়ই দুটো শার্ট পড়ে। রুপান্তর ও তটিনী মিলে মজনুর জন্মদিনে দুটো শার্ট উপহার দিলো। কিন্তু মজনু নিতে রাজি হচ্ছিল না। তার মতে তটিণী-রা তাকে দয়া করতে চেষ্টা করছে।
তটিনী যখন রাগ করে বলেছিল, ‘দয়া দেখাবে কেন? তুই আমাদের বন্ধু না? বন্ধু হয়ে বন্ধুকে কিছু দিতে পারবো না?’
মজনু দুজনের জোরাজুরিতে নিতে বাধ্য হয়।
*
সেই মজনুর সাথে পরবর্তীতে বিয়ে হয়ে গেলো রুপান্তরের। আর তটিনী তার ভাব নিয়ে সিঙ্গেল জীবন কা*টাতে লাগলো৷ মজনুর সাথে রুপান্তরের বিয়েটা হয়েছে এক্সিডেন্টলি ভাবে। সেজন্য দুজনের কেউই মানতে পারলো না। রুপান্তর তার না পাওয়া পুরুষের জন্য দুঃখ করতে লাগলো। আর মজনু দুঃখ করতে লাগলো কেন তার কপালে এমন মানুষ জুটলো যে তাকে কখনো মেনেই নিতে পারবে না।
চলুন জানা যাক কি হয়েছিল সেদিন।
রুপান্তরেরা একাদশের ফাইনাল পরীক্ষা শেষে তিনজন ঘুরবে ফিরবে ভাবছিল। তো যথা নিয়মে তারা ঘুরাঘুরি করতে শুরু করে ঢাকার অলিতে গলিতে। ঢাকার খারাপ একটি স্থানে তারা চলে যায় নিজেদের অজান্তে। অন্য শহরের মজনুর সেই জায়গা সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই। পুলিশ যখন ধরলো তখন তো ছেড়ে দিবে না এমনি এমনি। মজনু ও রুপান্তরের বিয়ে দিয়ে দিলো। কিন্তু বাকি রইলো তটিনী। তটিনীকে এমনি এমনি ছাড়তে রাজি না হলে সে রুদ্রকে ইনফর্ম করে। বেচারা রুদ্র বহুত কষ্ট করে এদের বের করে আনে। জনমের মতো ঘুরাঘুরির স্বাদ মিটে যাওয়ার পর তটিণী-রা দ্বাদশের বইয়ে ডুবে গেলো। তটিনী আজকাল রুদ্রের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারে না। তার সেদিনের ঘটনা মনে পড়লে লজ্জা লাগে। ওরকম নিচু একটি জায়গায় সে এভাবে চলে যাবে ভাবেনি। রুদ্র ওয়ার্নিং দিয়েছে ভালোমতো পড়াশোনা করতে। নাহলে তটিণী-র এই কুকীর্তি সবাইকে বলে দিবে। বাধ্য হয়ে তটিনী পড়াশোনায় মনোযোগ দিলো। সেদিনের পর আর ঘুরতে যাওয়ার নাম মুখে নেয়নি সে।
*
তটিনী ও রুপান্তর মার্কেটে এসেছে ঈদের শপিং করতে। রমজান মাস শেষ হওয়ার বেশি বাকি নেই। এক সপ্তাহ আগে থেকেই শপিং করা শুরু করেছে তারা। তটিনী ঘুরেঘুরে সবকিছু দেখতে লাগলো। কিন্তু কিছুই পছন্দ হলো না তার। রুপান্তরের আজকাল শাড়ির প্রতি ঝোঁক অনেক। তার অনেক পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। তটিণী-র মনে হয় রুপান্তর ও মজনু লুকিয়ে প্রেম প্রেম খেলছে তারই চোখের আড়ালে।
সব বুঝতে পেরেও তটিনী রুদ্রের ভয়ে চুপ করে আছে। কারণ রুদ্র সেদিন সেখানে বলেছে রুপান্তর ও মজনুকে যেনো বিয়ের কথা কেউ মনে না করিয়ে দেয়। দুজন যদি দুজনের সাথে থাকতে পারে তবেই নাহয় স্বীকৃতি দিবে। রুদ্রের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করছে ভাব ওয়ালী তটিনী।
*
শপিং করে মন খারাপ হলো তটিণী-র। পছন্দ না হওয়া সত্বেও অনেক কিছু কিনেছে সে। কারণ তার রোজা রেখে বারবার শপিং করতে ভালো লাগে না। মুখ গোমড়া করে তটিনী যখন বাড়ির গেইট দিয়ে ঢুকলো তখন রুদ্রের সামনে পড়ে গেলো। রুদ্র তটিণী-র মুখশ্রীতে চোখ ভুলিয়ে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘কোনো অকাজ করে এসেছিস?’
তটিনী মুখ কালো করে দাড়িয়ে রইলো। রুদ্র পুনরায় বলল, ‘জবাব দিচ্ছিস না কেন? কি করে এসেছিস আবার?’
তটিনী কাঁদোকাঁদো স্বরে বলল, ‘কোনোকিছু পছন্দ হয়নি আমার।’
রুদ্র তটিণী-র হাতের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘পছন্দ না হলে হাতে এতগুলো শপিং ব্যাগে কি?’
তটিনী অসহায় চোখে তাকিয়ে বলল, ‘রোজা রেখে বার-বার মার্কেটে যেতে ইচ্ছে করে না রুদ্র ভাই। সেজন্য যা পেয়েছি নিয়ে এসেছি। পড়লেই হলো। এতো পছন্দ দিয়ে কাজ নাই। দেখুন এখনই কেমন যেনো লাগছে। যদিও আরও দুএকদিন মার্কেটে গিয়ে ঘুরি তো আমি অজ্ঞান হবো নিশ্চিত।’
রুদ্র নিজের ফোন এগিয়ে দিয়ে বললো, ‘যা পছন্দ হয় অর্ডার দিস অনলাইনে। টাকা লোড আছে ফোনে। তবুও মুখের রিয়াকশন চেঞ্জ কর। তোকে দেখতে ভালো লাগছে না।
তটিনী অফারটা লুফে নিলো৷ বললো, ‘আপনি এতো ভালো কেন রুদ্র ভাই?’
রুদ্র কথা না বলে বাঁকা হেসে চলে গেলো। তটিনী নাচতে নাচতে বাড়িতে প্রবেশ করলো৷ রুমে বসে একের পর এক ড্রেস পছন্দ করতে লাগলো। আজ রুদ্রের একাউন্ট ফাঁকা করার ধান্দা তার। সেদিনের ধমকা ধমকির প্রতিশোধ নিবে সে।
যথানিয়মে তটিনী মোট পাঁচটা দামি ড্রেস অর্ডার করে ফেললো। রুদ্রের একাউন্টের পঞ্চাশ হাজার টাকা এক বসাতেই নাই হয়ে গেলো। রুদ্রের বাটন ফোনে নোটিফিকেশন আসতে লাগলো বার-বার। রুদ্র হতভম্ব হয়ে তটিণী-কে কল করলো। কিন্তু চালাক তটিনী ধরলো না। রুদ্রের মাথায় হাত। রুদ্রের একাউন্টে নব্বই হাজারের মতো টাকা ছিল। পড়াশোনার পাশাপাশি বাপ চাচার বিজনেসও সামলায় সে। নিজের কষ্টের টাকা এভাবে উধাও হয়ে যাচ্ছে দেখে রুদ্রের বুকে ব্যথা করতে লাগলো৷ তটিণী-র নাম্বারে ডায়াল করতে করতে বাড়িতে আসতে লাগলো দৌড়ো।
তটিনী রুদ্রের মোবাইল রুবা নাহারের হাতে দিয়ে নিজের রুমে দরজা বন্ধ করে দিলো। শান্তির ঘুম দিবে সে এবার। আপাতত ইফতারের টাইম ছাড়া রুদ্রের সাথে তার দেখা হওয়ার চান্স নেই।
রুদ্র বাড়িতে এসে মায়ের হাত থেকে নিজের মোবাইল নিয়ে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো। রোবা নাহার ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘কি হয়েছে রুদু?’
রুদ্র দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল, ‘কিছু না মা।
রুদ্র হনহন করে নিজের রুমে গেলো। একটানে টিশার্ট খুলে ছুঁড়ে ফেললো মেঝেতে। তটিণী-র মোবাইলে বার্তা পাঠালো।
‘ঐশির বাচ্চা ঐশি, চালাকি করলি তো? প্রতিশোধ নিলি? আমার টাকা যদি আমি উসুল না করছি তো আমার নামও রুদ্র ইরফান নয়। তোকে আমি ছাড়বো না।’
তটিণী-র রিপ্লাই আসলো কিছু মিনিট পর।
‘অপ্রিয় রুদ্র ভাই আমার। ভবিষ্যতে আমি আপনার টাকা দিয়ে দিবো। শুধু একটা জামাইয়ের অপেক্ষা৷ আপনাকে আমার জামাইয়ের টাকার গরম দেখিয়ে হাওয়া করতে না পারলে আমিও তটিনী ইফফাত ঐশি নই। হাহ্ নামটা মনে রাখবেন।
রুদ্র ফের লিখলো,
‘তোর মাথায় এতো গোবরে ভরা কেন? শয়তান একটা। সবসময় শয়তানি নিয়ে ঘুরে। তোরে আমি মায়া করে মোবাইল দিছি, তুই সেটার মান রাখলি না। আর জীবনে কিছু চাইতে আসিস ফহিন্নি কোথাকার।’
তটিনী রাগে গজগজ করে রিপ্লাই দিলো,
‘আপনি ভিখারি, সাথে আপনার বাপ চাচাও।’
রুদ্র হতভম্ব হয়ে উত্তর দিলো, ‘নিজের বাপকেও ছাড়লি না কেমন মেয়ে তুই?’
তটিণী-র কথাটা গায়ে লাগলো। বললো, ‘আমার গোষ্ঠীর আপনি ছাড়া সবাই ধনী। আপনি একাই ফহিন্নি ও কিপটে। বুঝেছেন মাথা ছিড়া রুদ্র ভাই?’
রুদ্রের মাথা ঘুরতে লাগলো। তার ছিঁড়া শুনেছে সে। কিন্তু মাথা ছিঁড়া শুনেছি!
(চলবে)
( নোট- আমি অনেক অসুস্থ ছিলাম। সেজন্য গল্প দিতে দেরি হলো।)