# এক মুঠো রোদ .
# writer :নৌশিন আহমেদ রোদেলা
# পর্ব -২
.
২.
.
বাবা! বাবা প্লিজ! গিভ মি আ চান্স।আরিয়ান মৃন্ময়ের নিউজটা আমাদের অনেক বেশি মার্কেট এনে দিবে বাবা।
.
মামণি? তুই জানিস আমি মার্কেট পাওয়ার জন্য কিছু লিখি না।একজন জার্নালিস্টের কাজ অবশ্যই সুপারস্টারদের হাঁচি-কাশির খবর রাখা নয়।।সত্যিকারের জার্নালিজম হলো বিপদকে সামনে রেখে দেশের সেইসব ভয়ানক কিটকে এক্সপোস করা যারা ধীরে ধীরে দেশটাকে শুষে খাচ্ছে।।আর তোর বাবা সেই কাজটায় করে……অন্যান্য নামে মাত্র জার্নালিস্টদের মতো সুপারস্টারদের পেছনে দৌঁড়ায় না।
.
বাবা..আই নো।বাট এটাও একটা বিগ নিউজ হতে পারে।।তুৃমি আমায় একটা পারমিশন দাও….জার্নালিস্ট হিসেবে আমি খুব ভালো কিছু করবো বলে আমার ধারনা।।প্লিজ বাবা।
.
রোজা তুই জানিস তোকে আমি জার্নালিমের রিস্কি চাপ্টারে ঝাপিয়ে পড়তে দিবো না, আর না তথাকথিত সংবাদিকদের মতো কোনো সুপারস্টারের পিছু দৌঁড়াতে দিবো।।সো চেঞ্জ ইউর মাইন্ড…..তুই বরং কেমিস্ট্রি নিয়ে পড়াশোনাটা চালিয়ে যা…. সেটাই তোর ক্যারিয়ারের জন্য বেস্ট হবে মামনি…
.
বাবা!!
.
নো মোর ওয়ার্ডস্।
.
বাসায় ফিরেই বাবাকে রাজি করানোর পেছনে লেগে গিয়েছিলো রোজা।।পুরো কাহিনীটাকে রং চঙ মিশিয়ে দারুনভাবে উপস্থাপন করেছে সে।।এই নিউজটা সংগ্রহ করার জন্য কতো কতো পরিশ্রম করতে হয়েছে তার একটা মস্ত মিথ্যা ফর্দও দিয়েছে সে।তবুও শেষ রক্ষা হলো না।এতোক্ষণ মনোযোগ দিয়ে কথা শুনলেও তীরে এসে তরীটা ঢুবলোই।।রোজা সোফায় মুখ ফুলিয়ে বসে বাবার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।।বাবাকে কিভাবে বোঝাবে রোজা, জার্নালিজম যে তার প্যাশন।।ঢাকা ইউনিভার্সিতে জার্নালিজমের ফাস্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট সে।বাবাকে লুকিয়ে কিছুদিন এই সাবজেক্টে পড়লেও অবশেষে ধরা খেতে হয়েছে তাকে।।তাই বাবার কড়া হুকুম নেক্সট ইয়ার আবারও এডমিশন দাও এবং নিউ সাবজেক্টে ভর্তি হও।।এই সাবজেক্ট তার জন্য নিষিদ্ধ ।বাবার ধারনা জার্নালিজম নিয়ে পড়লে কোনো না কোনো সময় রোজাকে বিপদের সম্মুখীন হতেই হবে।।এমনিতেও তার কাজে কতো বিপদ উত পেতে আছে কে জানে?? একটা মাত্র মেয়ে তার… যদি কিছু হয়ে যায়??রোজার বাবা রাদিব আহমেদ। দেশের একজন বিখ্যাত ইনভেস্টিগেশন জার্নালিস্ট। নিজের সংবাদপত্র আর স্টুডিও আছে কিন্তু মেয়েকে তার থেকে দশ হাত দূরে রাখাটায় তার কাম্য।রোজা সোফায় বসে কিছুক্ষণ হাসফাস করে ফোনটা হাতে তোলে নিলো।।তীর্থর নাম্বারে ডায়াল করে ফোনটা কানে নিয়ে পা উঠিয়ে আরাম করে বসলো।ওপাশ থেকে কল রিসিভ হতেই-
.
ওই হারামি?কই তুই?
.
আমি বিছানায়।(জড়ানো কন্ঠে)
.
শালা তুই বিছানায় কি করিস?(সন্দেহের কন্ঠে)
.
রোজা?? আবে দোস্ত… অলওয়েজ সন্দেহ করস কেন?ঘুমাইতেছিলাম।।তুই ঘুমের বারোটা বাজাইলি…এবার ফোন রাখ।
.
দেবো এক থাপ্পড়।চুপচাপ ওঠে বস…নয়তো মালিহাকে ফোন দিয়ে বলবো তুই বিছানায়… আবারও আগের কাহিনী শুরু করছিস…হেহেহে।
.
তুই একখান চিজ মাইরি।জীবনটা ভাজা ভাজা কইরা দিলি।।একদম বিভীষণের ফিমেইল ভার্সন।।ক কি করা লাগবে…কি চাই?(ভ্রু কুঁচকে)
.
প্রথম আলোর সাথে তো তোর ভালো লিংক আছে তাই না?
.
হু আছে।তো?
.
ওখানে একটা আর্টিকেল ছাপানোর ব্যবস্থা করে দে।ফাস্ট!!
.
কিহ?তুই আর্টিকেল লিখবি?আর যদি লিখসই তাহলে তোর বাপেরটায় লেখ…
.
বেশি কথা বলস কেন?যা বলছি কর।।তোর কাছে ১৫ মিনিট টাইম আছে।ডু ইট ফাস্ট…নয়তো কোনো কথা নয় স্ট্রেইট মালিহাকে কল(দাঁত কেলিয়ে)
.
আল্লাহ!!বিশ্বাস কর দোস্ত…যে তোর জামাই হবো তার প্রতি বহুত সেমপ্যাথি সেমপ্যাথি ফিলিংস আসছে আমার।
বেচারার জীবনটা কচুরিপাতার মতো ভাসবান বানিয়ে দিবি তুই….হারামি কোথাকার…
.
তীর্থর কথায় খিলখিল করে হাসছে রোজা।রোজা জানে তীর্থ কাজটা করবে।।তীর্থও জার্নালিজমের স্টুডেন্ট….রোজা আর সে ক্লাস ফাইভ থেকে একসাথে পড়াশোনা করে আসছে।।তবে ভার্সিটি গিয়েই বন্ধুত্বটা আরো বেশি পাকাপোক্ত হয়ে গেছে তাদের।।রোজা ফোনটা রেখে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। দৃষ্টি আকাশে…..মেঘের ফাঁক দিয়ে এক মুঠো রোদ এসে পড়ছে জানালার কাঁচে।।আর্টিকেলটা পাবলিশ হলে কেমন দামাকা তৈরি হবে সেটা নিয়েই চিন্তা করছে রোজা।এই ৫ বছরের ক্যারিয়ারে মৃন্ময়ের নামে কোনো রং নিউজ প্রকাশ হয় নি বললেই চলে।মিডিয়া জগৎ -এ তার চরিত্র অনেকটায় ফুলের মতো পবিত্র!!আর সেই পবিত্রতা কালকের বাতাসের সাথে উড়িয়ে দিবে রোজা….ভাবতেই গা শিউরে উঠছে তার।।কিছুক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে আবারও ফোনটার দিকে তাকালো সে।।মুহূর্তেই দুষ্টু হাসি খেলে গেলো ঠোঁটে।।রুমে গিয়ে ড্রয়ার থেকে মামুর সিমটা বের করে ফোনে ভরেই মৃন্ময়ের কল করা নাম্বারে ডায়াল করলো সে।।কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর…. ওপাশ থেকে অস্থিরতা ভরা কন্ঠে কেউ একজন বলে উঠলো “হ্যালো!” লোকটার কথার স্বরেই মনে হচ্ছে বেচারা চরম বিরক্ত…বিরক্ত মানুষকে বিরক্ত করতে বেশ লাগে রোজার।তাই গলার স্বর কিছুটা মোটা করে বলে উঠলো সে-
.
হ্যালো মিষ্টার সোহেল টাকলা?কেমন আছেন?দিন দিন যেভাবে টাক্কু হয়ে যাচ্ছেন তাতে করে একজন নায়কের পিএ হিসেবে আপনি বড্ড বেমানান।
.
রোজার কথায় অনেকটায় চমকে উঠলো সোহেল।সত্যিই আজকাল বেশ চুল পড়ছে তার কিন্তু এই মেয়েটা সে খবর কি করে জানলো?অদ্ভুত!! ব্যাপারটা চিন্তা করে ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো সে-
.
কে আপনি?
.
হোয়াট?আমাকে চিনেন না?এতো বড় সাহস?আজই আপনার নামে সরি আপনার স্যারের নামে সচিবালয়ের নোটিশ আসবে। তাতে বড় বড় করে লেখা থাকবে ব্যাড মেনার্সের দায়ে সিনেমা জগৎ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হলো।
.
কিহহহহহহহহহহ.??
.
চেঁচাচ্ছেন কেন?এই শব্দ দূষনের জন্য আপনাকে এক্সট্রা জরিমানাও দিতে হবে।।আপনার বিহেভের জন্য আপনার স্যারের ক্যারিয়ারটা শেষ হয়ে গেলো,,আহারে… সো আফসোস…!!
.
মা মা মা নে??
.
ম্যা ম্যা করছেন কেন?? আমি অবশ্যই আপনার মা নই।তাই ছাগলের মতো ম্যা ম্যা করবেন না।।
.
কথাটা বলেই ফোনটা কেটে হাসিতে ফেটে পড়লো রোজা।।এদিকে সোহেলের মাথায় হাত। এমনিতেই মৃন্ময় তারওপর রেগে বোম….তারওপর এতোকিছু উফফফ….ভালো লাগে।। কিচ্ছু ভালো লাগে না।।
.
৩.
.
ফামহাউজের ছাঁদে পকেটে হাত দিয়ে স্ট্রেইট দাঁড়িয়ে আছে মৃন্ময়। গেইট পেরিয়ে রুজি নামের মেয়েটা বেরিয়ে যাচ্ছে।অবশেষে কাজটা শেষ হলো!!কথাটা ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো মৃন্ময়।।রেলিং এ ঠেস দিয়ে আকাশের দিকে তাকালো সে।।চারপাশে শেষ বিকেলের হালকা রোদ…যাকে বলে মিষ্টি রোদ।মৃন্ময়ের বাবাও একজন কন্ঠশিল্পী ছিলেন কিন্তু হঠাৎ এক দুর্ঘটনায় ওই দূর আকাশে হারিয়ে গেলেন।তখন মৃন্ময়ের বয়স ছিলো ১২ আর এখন ২৬। প্রায় ১৪ টা বছর পেরিয়ে গেছে।। বাবাকে হারিয়ে এখনও মাঝে মাঝে ওই মেঘের দিকে তাকায় সে….যদি মেঘকে লুকিয়ে এক মুঠো রোদ হয়ে ফিরে আসেন বাবা!!বুক চিরে একগুচ্ছ দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। ঘড়িটা একবার দেখে নিয়ে নিচে নেমে গেলো সে…নতুন একটা মুভির শুটিং আছে তার আবার স্টুডিও তেও যেতে হবে….এলব্যামের কাজটাও শেষ করতে হবে তাকে।।কতো কাজ!!
.
৩.
.
কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আরু।সামনের মোড়টাতে নাকি সেভেন স্টার গ্যাং এর গ্যাং স্টার রাফিন চৌধুরী এসেছেন।। কিছু একটা ঝামেলা করছে রাস্তায়….তাই সব স্টুডেন্টদের কলেজ গেইটেই আটকে রাখা হয়েছে।।সব স্টুডেন্টরা ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও আরুর মুখটা হাসি হাসি।।ওর খুব ইচ্ছে হচ্ছে দৌড় ওই মোড়টাতে গিয়ে ওই গ্যাং স্টারকে দেখা।।ছোটবেলা থেকেই মুভি পাগলী আরু….বিভিন্ন সাউথ ইন্ডিয়ান মুভি দেখে একটা মাফিয়ার সাথে ভাব করার খুব শখ তার।।শুনেছে গ্যাং স্টার রাফিন চৌধুরী দেখতে অস্থির…উনাকে দেখে মাফিয়া মনে হওয়ার জো ই নেই।কথাটা শোনার পর থেকেই আরুর মনে লাড্ডু ফুটতে শুরু করেছে। যেই রাফিন চৌধুরীর হিংস্রতার জন্য মানুষ তার সামনে দাঁড়ানোর সাহস পায় না তাকে দেখার জন্য এই ছোট্ট মেয়ের কতো লাফালাফি।।কিন্তু সেখানটায় যাবে কি করে সে??অনেক ভেবে চিন্তে স্যারদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ব্যাগ হাতে দৌড় লাগালো আরু……পেছন থেকে স্যারদের ডাক উপেক্ষা করে কিছুদূর গিয়ে থামলো সে।।হাঁটুতে হাত রেখে কিছুক্ষণ জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিয়ে আবারও হাঁটা দিলো সে।।রাস্তার মোড় টাতে এসেই আরুর চোখটা চড়কগাছ।না হলেও ৫০ টার বেশি কালো গাড়ি সারি সারি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।।রাস্তার মাঝখানে এখানে সেখানে রক্তের ছড়াছড়ি।।একপাশে একটা অফিশিয়াল চেয়ারে কেউ একজন পায়ের উপর পা রেখে বসে আছে আর তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে কিছু লোক….বাহ!!মাঝ
রাস্তায় চেয়ার??ইন্টারেস্টিং…রাস্তায় পড়ে থাকা রক্ত দেখে আরুর মনটা যেনো আরো নেচে উঠলো.. নিশ্চয় কিছুক্ষণ আগে হিরোর মতো ফাইটিং হয়েছে এখানে??আরু অসীম কৌতূহল নিয়ে উঁকিঝুঁকি দিয়ে চলেছে কিন্তু এই খাম্বাগুলোর জ্বালায় রাফিনকে দেখতেই পারছে না সে।।অবশেষে ওদের সবাইকে গাড়িতে উঠতে দেখা গেলো….একটা লোককে নিয়ে সবার ব্যস্ততা দেখেই ওটাই যে রাফিন তা বেশ বুঝতে পারলো আরু….পেছন থেকে বেশ ড্যাশিং ই দেখতে লাগছে লোকটিকে…কালো স্যুটে একদম সাউথ ইন্ডিয়ান হিরো মহেশবাবু…. আর কিছু না ভেবে দৌঁড়ে সেদিকে এগিয়ে গিয়েই পেছন থেকে চেঁচিয়ে ডেকে উঠলো সে-
.
ও হ্যালো মিষ্টার গ্যাং স্টার।
.
আরুর কন্ঠটা চারদিকে যেনো বজ্রপাতের মতো শোনালো।।রাফিনের চেলা পেলারা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।।যেখানে দেশের প্রেসিডেন্টই রাফিনের সাথে সমীহ করে কথা বলে সেখানে এই পুচকি একটা মেয়ে!!রাফিন তখন গাড়িতে উঠছিলো….পেছন থেকে এমন সম্বোধন শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।।কালো সানগ্লাস পড়া চোখেই স্ক্যান করতে লাগলো মেয়েটিকে…..
.
# চলবে..