# এক মুঠো রোদ .
# লেখিকাঃ নৌশিন আহমেদ রোদেলা
# পর্বঃ ৪৩
৭৯.
অফিসরুমের ভারী টেবিলের একপাশে রাফিন এবং অন্যপাশে মৃন্ময়। দু’জনেই নিশ্চুপ। এই নীরবতা কাটিয়ে মাঝেমাঝেই আর্তনাদ করে উঠছেন ডিরেক্টর সাহেব। রাফিনের নেশাটা অনেকটাই কমে এসেছে এখন। কিছুক্ষণের এই পিনপতন নীরবতা ঠেলে সোজা হয়ে বসলো রাফিন। মৃন্ময়কে লক্ষ্য করে হালকা হাসলো। স্পষ্ট গলায় বললো,
—” চা না কফি?”
—” থ্যাংক্স বাট নো নিড।”
—“ওকেই! আআআ…তো রোজা কোথায় আছে জিগ্যেস করবেন না?”
মৃন্ময় মুচকি হেসে বললো,
—“রোজা যে আপনার কাছে নেই তা আমি এখানে আসার আগেই জানি মিষ্টার.চৌধুরী। আর ও যদি এখানে থাকতো তাহলে হয়তো আপনি এখানে থাকতে পারতেন না। এক্চুয়েলি আমি থাকতে দিতাম না।”
মৃন্ময়ের হাসিমাখা ধমকিতে নিজেও হাসলো রাফিন। টেবিলের উপর থাকা পেপারওয়েটটা ঘুরাতে ঘুরাতে বললো,
—” আই লাইক ইউর এটিটিউট মিষ্টার. আরিয়ান মৃন্ময়।”
মৃন্ময় হালকা হেসে বললো,
—” সেইম টু ইউ মিষ্টার.চৌধুরী। “
রাফিন ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে বললো,
—” জানতেনই যখন তখন এখানে আসার কারণ?”
—” ব্ল্যাক ওয়ার্ল্ড স্টার এতো বনিতা করে আমাকে ইনভাইট কেনো করছে সেই কৌতূহল মেটাতেই এসেছি। আমার বাবার খুনি সম্পর্কে কিভাবে জানেন আপনি?”
রাফিন হাসলো। চোখের ইশারায় ডিরেক্টরকে ইঙ্গিত করে বললো,
—” জবাবটা তো পাশেই আছে। আমার ধারনা বাকিটা আপনাকে বলতে হবে না। এই কয়েকদিনে যতটুকু জেনেছি আপনি আমার থেকে কম কিছু নন।”
মৃন্ময় ডিরেক্টরের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। ডিরেক্টরের দুই হাত থেকে রক্ত গড়িয়ে ফ্লোরটাও ভিজে উঠেছে। দুর্বল শরীরে ঢুলু ঢুলু চোখে তাকাচ্ছেন। ডিরেক্টরকে পর্যবেক্ষণ করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রাফিনের দিকে তাকালো মৃন্ময়। ভ্রু কুঁচকে বললো,
—” এতে আপনার লাভ?”
—” লাভ-ক্ষতিটা ডিরেক্টরের থেকেই শুনি? আসিফ? ব্যাটাকে পানিতে চুবিয়ে সম্পূর্ণ হুঁশে আন।”
রাফিনের কথামতোই কাজ করলো আসিফ। ডিরেক্টর পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালো। মৃন্ময়কে দেখে চমকে উঠে বললো,
—” মৃন্ময় তুমি এখানে? এই সন্ত্রাসীর সাথে হাত মিলিয়েছো তুমি? তোমার বাবা কতো নেক দিল মানুষ ছিলো তুমি ভুলে গেছো? এদের সাথে উঠাবসা তোমায় মানায় না।”
মৃন্ময়ের চোখে-মুখে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা দিলো না। মৃন্ময়কে এমন ভাবলেশহীন থাকতে দেখে খানিক ভরকালো রাফিন। এই ছেলের কি রাগ নেই? রাফিন হলে এতোক্ষণে পুঁতে ফেলতো ওকে অথচ মৃন্ময়? মৃন্ময় ডিরেক্টরের দিকে পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে শান্ত গলায় বললো,
—” কেমন আছেন মঈনুল আঙ্কেল? আমাকে এখানে দেখে অবাক হচ্ছেন নাকি? তবে বান্দরবানের ডাকাতদের সাথে আপনার বন্ধুত্ব ছিলো শুনে আমি কিন্তু অবাক হই নি। কি বলুন তো, আপনার ধাঁচই ডাকাত টাইপ। আমার বাবা কতোটা নেক দিল মানুষ ছিলো তা আপনার মতো কুকুরকে ছেড়ে দেওয়ার নজির দেখেই বুঝতে পারছি। তবে আমি কিন্তু আমার বাবার মতো নেক দিল নই। একদমই নই।”
মৃন্ময়ের কথাগুলো রাফিনের বেশ পছন্দ হলো বলেই মনে হলো। মনে মনে একটা জবরদস্ত হাসি দিয়ে বললো,
—” ডিরেক্টর সাহেব? হিরো-ভিলেন দু’জনেই হাজির এবার তো মুভি স্টার্ট করুন।”
ডিরেক্টর ঢোক গিলে বললো,
—” কিসের মুভি? মৃন্ময়? কিসের ডাকাতের কথা বলছো তুমি? এই রাফিন চৌধুরী এসব বুঝিয়েছে না তোমায়? এর কথা বিশ্বাস করছো তুমি? এর কথা? এই গুন্ডার কথা?”
মৃন্ময় কিছু বললো না। রাফিন উঠে গিয়ে ডিরেক্টরের গালের মাঝ বরাবর ছুঁড়ি টেনে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
—” অনেক হয়েছে। ড্রামা বন্ধ করে বল বাবা কোথায়? কি করেছিস বাবার সাথে?”
এবার অবাক হতে বাধ্য হলো মৃন্ময়। বিরবির করে বললো, বাবা? রাফিন এবার চেঁচিয়ে উঠলো। ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলের নখটা তুলে নিয়ে বললো,
—” বাবা কোথায়?”
ডিরেক্টর ব্যাথায় চিৎকার করে উঠলো। দম ফাঁটা আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠলো রুমের হাওয়া। মৃন্ময় ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে দেখতে লাগলো রাফিনের নৃশংসতা। ডিরেক্টরের বামহাতের নখটাও তুলে নিতেই জ্ঞান হারালো ডিরেক্টর। পানির ছিঁটায় আবারও জ্ঞান ফেরানো হলো। রাফিন হিংস্র গলায় বললো,
—” চুপচাপ কাহিনী বলে যা নয়তো হাতের পায়ের একটা নখও আস্ত থাকবে না তোর। কোথায় বাবা?”
ডিরেক্টর ভয় পাওয়া গলায় বললো,
—” আপনার বাবা কে? আমি চিনিনা আপনার বাবাকে। চিনি না।”
রাফিন বিকৃত হাসি দিয়ে বললো,
—“চিনিস না? রিয়েলি?তোকে তো আমি…”
রাফিনকে থামিয়ে দিয়েই বলে উঠলো মৃন্ময়,
—” শান্ত হোন মিষ্টার.চৌধুরী প্লিজ! আঙ্কেল? বাবার সাথে এমন বিশ্বাসঘাতকতা কেন করেছেন?হুয়াই?”
রাফিন টেবিলে বসে ডিরেক্টরের চেয়ারের হাতলে একপা রেখে হিংস্র চোখে তাকালো। ডিরেক্টর কাঁপা গলায় বললো,
—“আরিয়া আমার জুনিয়র ছিলো। আমার পরে মিডিয়া জগতে এসে ক্রমেই আমাকে ছাড়িয়ে যাচ্ছিলো। প্রথমে গান তারপর সিনেমাতে পরিচালকের কাজেও নামতে চেয়েছিলো সে। আমি জানতাম, ও যদি একবার ছবি পরিচালনা শুরু করে তাহলে সেখানেও খ্যাতি অর্জন করবে। সেটা কিছুতেই সহ্য হতো না আমার। যেসব মহলে সবসময় আমার রমারমা প্রশংসা থাকতো সেখানে ধীরে ধীরে আরিয়ার কতৃত্ব আসতে লাগলো। চারপাশে আরিয়া আরিয়া নামে পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম আমি। ঘৃণা করতাম ওকে, ঘৃণা করতাম। ওকে আমি যতবার ছোট করার চেষ্টা করেছি ততবারই সবটাই মাথা পেতে নিয়েছে সে। অপমান করতে গেলে উল্টো হাসিমুখে বলতো,” মুইনুল ভাই? আপনার মতো হতে আমার সাত জন্ম লাগবে। আপনি তো আপনিই।” ওর এই কথাটা আমার কাছে কটুক্তি মনে হতো। ওর সাবলিল কথাগুলো আমার কাছে অপমানের বানী মনে হতো। আমি ওকে সহ্য করতে পারতাম না। তারপর এলো মালিহা। অসম্ভব সুন্দর গান গাইতো মেয়েটা। তখনকার সিনেমার নায়িকা থেকে কম সুন্দরী ছিলো না সে। আমি মালিহাকে পেতে চেয়েছিলাম কিন্তু মালিহা আমাকে নয় আরিয়াকে পছন্দ করেছিলো। বিয়ের পরও অনেকবার মালিহাকে প্রস্তাব দিয়েছিলাম আমি কিন্তু মালিহা? মালিহা আমাকে নিজের জুতো দিয়ে মেরেছিলো। কি এমন করেছিলাম আমি? শাড়ির আঁচলটাই তো ধরেছিলাম…. “
এটুকু বলতেই প্রচন্ড ঘুষিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো ডিরেক্টর। কাঠের চেয়ারেটাও ততক্ষণে ভেঙে টুকরো। মৃন্ময় এবার গর্জে ওঠে বললো,
—” আমার মায়ের গায়ে হাত দেওয়ার সাহস কি করে হয় তোর?”
কথাটা শেষ করে আরো দুটো ঘুষি দিতেই নাক দিয়ে অবিরাম রক্ত ঝরতে লাগলো ডিরেক্টরের। রাফিন এতোক্ষণ মজা নিলেও এবার টেবিল থেকে নেমে দাঁড়ালো। মৃন্ময়কে টেনে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে আসিফকে ইশারা করলো। নতুন একটা চেয়ারে ডিরেক্টরকে আবারও বসিয়ে দিলো আসিফ। রাফিন ফুর্তিবাজ গলায় বললো,
—” তারপর কি হলো ডিরেক্টর সাহেব? আমার হাতে আরো কিছু না খেতে চাইলে তাড়াতাড়ি মুখ খুলো।”
ডিরেক্টর চাপা আর্তনাদ করে আবারও কথা পাড়লো,
—” মালিহা আমাকে আরিয়ার জুতোর সাথে তুলনা করেছিলো। সেই অপমানটা মেনে নিতে পারি নি আমি। ওদের বিয়ের একবছরের মাথায় মৃন্ময় হয়। তখন মালিহার দেহে অন্যরকম এক উজ্জ্বলতা আসে তার সাথে সাথে তার প্রতি আমার লোভটা আরও প্রকট আকার ধারণ করে। তবু নিজেকে সামলে নিয়েছিলাম আমি। সুযোগ খুঁজছিলাম। যখন মৃন্ময়ের আট বছর হলো তখন থেকে বাবার সাথে সাথে সুনামের পসরা বসিয়ে বসলো সেও। বিখ্যাত গায়ক, পরিচালক আর বিখ্যাত শিশু শিল্পীর বাবা হিসেবে আরিয়ার খ্যাতি আরো বাড়তে লাগলো। তখনই জানতে পারলাম আরিয়া আর তার বন্ধু রেজা মিলে বান্দরবানে কলেজ খুলতে চায়। জমিজমাও কেনা শেষ। আরিয়া যদি কলেজটা করে ফেলতো তাহলে আবারও মিডিয়ার কাছে হিরো হয়ে যেতো সে। তাই ডাকাতদের সাথে হাত মিলাই। ওদেরকে বুঝাই এখানে কলেজ হলে কতোটা ক্ষতি হতে পারে ওদের। প্রচুর পরিমানে টাকাও দিই। ভেবেছিলাম, এবার আরিয়াকে মেরে ফেলে অসহায়ত্বের দায়ে পড়া মালিহাকে আমি পাবো। তারসাথে ধীরে ধীরে আরিয়ার নামটাও মুছে দেব এই মিডিয়া জগৎ থেকে। সব আমার প্ল্যান অনুযায়ী চলছিলো। কিন্তু মালিহাকে পাওয়া হয় নি। আরিয়া মারা যাওয়ার পর যখন মালিহাকে আমার কাছে আসার প্রস্তাব দিই তখনই ও সন্দেহ করেছিলো আমায়। বলেছিলো, তার ছেলে এর শেষ দেখে ছাড়বে। সেদিন পাগলের মতো হেসেছিলো মালিহা। আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম তবুও ওর কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করতেই গর্জে ওঠে বলেছিলো, “ভুলে যাস না আমার ছেলের নাম ” আরিয়ান মৃন্ময়” আরিয়া থেকেই আরিয়ান। আর আরিয়ান থেকেই তোর মৃত্যু।” সেদিনের পর থেকেই মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে মালিহা। কিছুদিন পর মারাও যায়। আমি ভেবেছিলাম আপন কাউকে না পেয়ে বারো বছরের বাচ্চা আর কতদিন বেঁচে থাকবে? বখে যাবে। কিন্তু যায় নি। আরিয়ার মতো মৃন্ময়ও জিতে গেছে। মৃন্ময়ের যখন আঠারো বছর বয়স তখন বুঝতে পারি মৃন্ময় হেরে যাওয়ার জন্য জন্মায় নি। তখনই সত্য প্রকাশ হয়ে যাওয়ার ভয় মাথা চাড়া দিলো আমার। মৃন্ময়কে মারার চেষ্টা করলাম কিন্তু কাজ হলো না। মৃন্ময় নিজেই তখন যথেষ্ট শক্তিশালী। ওর আশেপাশে এক অদৃশ্য বলয় তৈরি করে রেখেছিলো যেখানে পৌঁছানোর সাহস আমার ছিলো না। ধীরে ধীরে ওর কাছাকাছি আসি। ওকে সিনেমায় এনে বিভিন্ন হিরোইনের সাথে লাগানোর চেষ্টা করি এমনকি আমার মেয়ে রুজির সাথেও। কিন্তু কোনো কিছুতেই সুবিধা করতে পারি নি বরং বাবার মতো ওর খ্যাতিটাও বেড়েই গিয়েছে দিনের পর দিন। তারপর যখন ওর বাবাকে খুঁজ করার কথা জানতে পারি তখনই ওকে শেষ করে দেওয়ার ডিসিশন নিই।”
রাফিন ফুঁস করে নিশ্বাস ছেড়ে বললো,
—“পুরো রামায়ণ কাহিনি শুনায় দিলি রে ডিরেক্টর। কিন্তু….এর মাঝে আমার বাপকে তুই কেন মারলি বুঝলাম না। মৃন্ময়ের বাপকে মারছিস ভালো কথা সেখানে আমার কোনো অবজেকশন নেই। কিন্তু রেজাউল চৌধুরী কি দোষ করেছিলো তোর?”
কথাটা বলেই পায়ের পাতার নিচে ফেঁস দিলো রাফিন। ডিরেক্টর কাতরাতে কাতরাতে বললো,
—“রেজা আপনার বাবা?”
—“কাহিনি ঝাড়…কেন মারছিস?”
—” আরিয়ার অন্ধভক্ত ছিলো রেজা। ছোটবেলার বন্ধু হওয়ায় রেজাকে নিজের সাইডে নিতে পারি নি আমি। শুধুমাত্র ওর জন্য আরিয়ার অনুপস্থিততেও কখনো মালিহার ক্ষতি করতে পারি নি আমি। মৃন্ময়দের বাড়ি থেকে দশমিনিটের রাস্তায় হসপিটাল ছিলো তার। আমি বাসায় গেলেই রেজাকে ফোন লাগাতো মালিহা। আমি রেজাকে অপছন্দ করলেও মারতে চাই নি। আরিয়াকে বাঁচাতে গিয়ে ডাকাতদের হাতে নিজে মরেছে রেজা।”
রাফিন কপাল কুঁচকে বললো,
—” আরে ব্যস! কি সিনেমা রে আসিফ। এক্কেবারে বাংলা সিনেমা। আমার বাবার আবার বাংলা সিনেমার নায়কদের মতো অতিরিক্ত ভালো মানুষ হওয়ার ধাঁত ছিলো বৈকি। আরিয়া আঙ্কেলেরও এই ধাঁতটা ছিলো। এরা হলো অতিরিক্ত ভালো মানুষ। যারা আমাদের মতো মানুষদের চক্ষুশূল তাই না ডিরেক্টর সাহেব?”
কথাটা বলে খানিকটা এগিয়ে গেলো রাফিন। ডিরেক্টর ভয় আর দুর্বলতায় সিঁটিয়ে আছেন চেয়ারে। তার ক্লান্ত,ভয়মাখা মুখ দেখে রাফিনের মায়া হলো না। দক্ষ হাতে ডান চোখের পাতাটা কেটে নিলো সে। সাথে সাথেই রক্তে ভেসে গেলো ডিরেক্টরের মুখ। ডিরেক্টরের প্রাণ কাঁপানো আর্তনাদে দেয়ালগুলোও কেঁপে উঠতে লাগলো থেকে থেকে। কিন্তু রাফিনের হাতটা কাঁপলো না। আগের মতোই দক্ষ হাতে বামচোখের পাতাটাও কেটে নিলো সে। এই পর্যায়ে জ্ঞান হারালো ডিরেক্টর। রাফিন চাকুটা ছুঁড়ে ফেলে বাঁকা হেসে বললো,
—” অন্যের বউয়ের দিকে নজর দিলে তো জ্ঞান হারাতেই হবে ডিরেক্টর। আসিফ? এটাকে নিয়ে যা। প্রথমে পানিতে ডুবিয়ে জ্ঞান ফিরাবি তারপর সবগুলো আঙ্গুলের নখ তুলবি। আবার জ্ঞান হারালে আবারও জাগাবি। জ্যান্ত থাকা অবস্থায় হাত-পা কাটবি। তারপর টুকরো টুকরো করে বুড়িগঙ্গায়। আর হ্যা, কিডনি আর চোখদুটো ভালো থাকলে ওগুলো রেখে দিস। ডিরেক্টর থেকে কিছু টাকা পাওয়া গেলে ক্ষতি কি? মানি ইজ স্ট্রেংথ…গো…”
রাফিনের কথায় আসিফ আর কয়েকজন ছেলে ডিরেক্টরকে তুলে নিয়ে গেলো। আরেকটি ছেলে এসে ঘরের মেঝেতে পড়া রক্ত, রক্ত মাখানো চাকু সব পরিষ্কার করে রুমে স্প্রে করে দিলো। তারপর আবারও নীরবতা ছেয়ে ধরলো দু’জনকে। রাফিন চেয়ারে বসে ড্রয়ার থেকে বিয়ারের ক্যান বের করে বললো,
—” হেভ সাম?”
মৃন্ময় শান্ত গলায় বললো,
—“আমি ড্রিংক করি না।”
—” স্মোকও করেন না?”
মৃন্ময় ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো,
—” নাহ।”
রাফিন ক্যানে চুমুক দিয়ে ঠোঁট উল্টে বললো,
—” বাহ্। পার্ফেক্ট পার্সন ফর রোজা। হওয়ারই কথা সে নিজেও অনেক সুইট। টক-ঝাল-মিষ্টি। হে হে। “
মৃন্ময় ভ্রু কুঁচকে বললো,
—” আপনি কথায় কথায় রোজাকে কেন টানছেন?”
রাফিন উত্তর না দিয়ে বললো,
—” আমি কিন্তু আপনাদের ব্যাপারটা আন্দাজ করেছিলাম মাত্র। এখন দেখি সত্যিই তাই।”
—” এই সত্যিটা হয়তো আপনার খুব একটা পছন্দ হয় নি মিষ্টার.চৌধুরী। “
রাফিন হাসলো। কথা ঘুরিয়ে বললো,
—” আরিয়া আঙ্কেলকে আমি দু’বার দেখেছিলাম। লাস্টবার দেখেছিলাম আমার চৌদ্দতম জন্মদিনে। আর নিজের বাবাকেও আমি সেদিনই লাস্ট দেখেছিলাম। আসলে, ভালো মানুষদের পরিণতি এমনই হয়। ওরা এটাই ডিজার্ভ করে। আপনিও তো বাপের মতোই। আপনার পরিণতিটাও যেন এমন না হয় মিষ্টার.আরিয়ান মৃন্ময় ।”
মৃন্ময় হাসলো। উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললো,
—” আমি বাবার মতো অতি ভালো নয় মিষ্টার.চৌধুরী। আজ বরং আসি।”
রাফিনের সাথে হাত মিলিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে যেতেই পেছন থেকে বলে উঠলো রাফিন,
—” খুব বেশি পছন্দ না হলেও অপছন্দ হয়নি আমার মিষ্টার.আরিয়ান মৃন্ময়।”
মৃন্ময় ফিরে তাকালো। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই মৃদু হেসে হাত নাড়িয়ে বললো রাফিন,
—” রোজা আর আপনার ব্যাপারটা। পার্ফেক্ট ম্যাচ। কনগ্রাচুলেশন। শী ইজ রিয়েলি স্পেশাল।”
মৃন্ময় কপাল কুঁচকে বললো,
—” আই নো, শী ইজ। কিন্তু আপনি..”
রাফিন হেসে বললো,
—” আমার ডিসিশন নেওয়া হয়ে গেছে মিষ্টার.মৃন্ময়। আমার গন্তব্য আলাদা। আমি বিবাহিত। আমি আমার ওয়াইফকে ভালো রাখতে চাই। আই ওয়ান্ট টু লাভ হার। এন্ড আই উইল! “
মৃন্ময় হালকা হেসে বললো,
—“কনগ্রাচুলেশন মিষ্টার.চৌধুরী। “
# চলবে….
[প্রথমতঃ “এক মুঠো রোদ” — এ মেইন ক্যারেক্টার রাফিন,মৃন্ময়,আরু কেউ নয়। মেইন ক্যারেক্টার হলো রোজা। তাই গল্পে রোজাকে যে বেশি ইম্পোর্টেন্স দেওয়া হবে তা খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। এতে রোজাকে কারো ভালো না লাগলেও তাকেই ইম্পোর্টেন্স দেওয়া হবে আর ভালো লাগলেও তাকেই ইম্পোর্টেন্স দেওয়া হবে।এতে দুঃখ পেলেও কিছু করার নেই।
দ্বিতীয়তঃ ভালোবাসা জিনিসটা মনের ব্যাপার। কে কাকে ভালোবাসবে তা সম্পূর্ণই তার মন নির্ধারন করবে আশেপাশের মানুষ নয়। কথায় আছে জোড় করে ভালোবাসা যায় না। ভালোবাসাটা হুট করেই হয়ে যায়। আপনাকে যদি কেউ ভালোবাসে আর সবাই যদি এক্সপেক্ট করতে শুরু করে আপনিও তাকে ভালোবাসবেন তাহলে সেটা তাদের বোকামী বৈ কিছু নয়। আপনি তাকেই ভালোবাসবেন যাকে আপনার ভালোলাগে। তাকে নয় যে আপনাকে ভালোবাসে বা মানুষ যাকে আপনার জন্য সিলেক্ট করে দিয়েছে। যদি আমাদের ইচ্ছেমতোই ভালোবাসাটা হতো তাহলে কাউকে আর কষ্ট পেতে হতো না। যা রাফিনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
তৃতীয়তঃ “প্রেমকথন” লেখার মতো কোনো কাহিনী নেই। সব কাহিনী শেষ। সুতরাং কিছু লিখতে পারছি না। আর “আরশিযুগল প্রেম” লেখবো রিসেন্ট গল্পটা শেষ হলে। তা তো আগেই বলে দিয়েছিলাম।
চতুর্থতঃ নিউজফিড স্ক্রল করতে করতে একটা পোষ্ট দেখে থমকে গেলাম। “নীলা রহমান মেঘা” নামে একজন লেখিকা কাল ইন্তেকাল করছেন। উনাকে আমি পার্সোনালি চিনি না। কখনো কথাও হয় নি। তবেও খারাপ লাগছে প্রচুর। বয়সের হিসেবে আমরা সমবয়সী তাই হয়তো খারাপ লাগাটাও বেশি। যায়হোক, সবাই উনার আত্মার মাগফেরাত কামনা করবেন। আল্লাহ উনাকে জান্নাতবাসী করুন। আমিন।
ধন্যবাদ সকলকে ]