রোদ শুভ্রর প্রেমকথন পর্ব ৫১
লেখনীতে- নৌশিন আহমেদ রোদেলা
ঝুম বৃষ্টির সকালবেলা কোনো এক হিন্দি সিরিয়ালের তুমুল ঝগড়াঝাটির শব্দে ঘুম ভেঙে গেল আমার। আপু ইউটিউব দেখছে। সাউন্ডে কান ফেটে যাওয়ার জোগার। আমি বিরক্তি নিয়ে উঠে বসলাম। আপু আজকাল সুযোগ পেলেই ইউটিউব ছেড়ে কান ফাটিয়ে ফেলার মহান দায়িত্বটা পালন করছে। হঠাৎ ঘুম ভাঙায় ঝিমঝিম করছে মাথা। সারা শরীরে বিশ্রী অলসতা। আম্মু রান্নাঘর থেকেই চেঁচিয়ে উঠলেন,
‘ রোদ? এখনও উঠলি না? সবার খাওয়া-দাওয়া শেষ। এখনও পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছিস তুই? উঠবি নাকি মাইর লাগাব?’
আমি আগের মতোই থম ধরে বসে রইলাম। নড়তে-চড়তে ইচ্ছে করছে না। আপু চেঁচিয়ে জানাল, আমি উঠেছি। চিল্লাচিল্লির দরকার নেই। আম্মু তবুও চেঁচালেন। এখনও বিছানায় কেন বসে আছি তা নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ গজগজ করলেন। ‘নড়তে চড়তে একদিন’ — প্রবাদটাকে সম্পূর্ণ অর্থবহ করে ওয়াশরুমে গেলাম আমি। সকালের নাস্তা খিচুড়ি আর ডিম ভুনা। ভালো খাবার। আমি খাবারের প্লেট হাতে সোফায় পা তুলে বসতেই আব্বু-আম্মুর নিচু স্বরে বলা কথোপকথন কানে এলো। আমি একরকম হামলে পড়ে বললাম,
‘ কী নিয়ে কথা বলো? কী হয়েছে আম্মু?’
আমার দাঁত কেলানো হাসিতে আম্মুর মন গলল না। ভয়ানক এক ধমক দিয়ে বললেন,
‘ সব জায়গায় এতো কান পাতা স্বভাব কেন? যা, খাবার টেবিলে গিয়ে বস।’
আমি আগের মতোই ঠাঁই বসে কান পেতে রইলাম। তবে খুব বেশি তথ্য জোগার হলো না। আপুর পাত্র বিষয়ক কোনো আলোচনা চলছিল, ব্যস। আমি হতাশ মুখে খাবার শেষ করলাম।
ঠিক দুপুরে, ফোনের ভেতর অলমোস্ট ঢুকে গিয়ে নিউজফিড স্ক্রল করছিলাম আমি। ঘর ফাঁকা, আপু টিউশনিতে গিয়েছে। এমন সময় ভেতরে ঢুকলেন আম্মু। আমার পাশে বসে বললেন,
‘ সারাদিন ফোনের ভেতর কী করিস? ঘরদোরও তো একটু গোছাতে পারিস। যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে। ফোনে কাজ আছে বলে সারা দুনিয়া অন্ধকার করে বসে থাকবি, এটা কেমন কথা?’
আমি উত্তরে চোখ তুলে চাইলাম। আম্মু গলার স্বর খানিকটা নামিয়ে এনে বললেন,
‘ তোর মামু রুহির সাথে শুভ্রর বিয়ের কথা বলছেন। এখন কী করি বল তো?তোর বাবা বলেছেন, রুহি রাজি হলে তাঁর কোনো আপত্তি নেই। রুহির মতের বাইরে গিয়ে কিছু করবেন না। রুহি কী রাজি হবে? তোর বাবার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। কয়েকদিন পর রিটায়ার্ড করবেন। কখন কোন দূর্ঘটনা ঘটে যায় কে জানে? রুহিকে বললাম, আরাফের পরিবারকে বিয়ের প্রস্তাব আনতে বল, সেটাও তো আনছে না। এভাবে হাত গুটিয়ে বসেও থাকতে পারি না। তোর বাবা আমাকে নিয়ে আবার হজ্জে যেতে চান। এতো বড় মেয়েকেঘরে রেখে হজ্জে কী করে যাবেন? আবার শুভ্রর সাথে বিয়ের বিষয়টাও কেমন খচখচ করছে। রুহিকে শুভ্র ছোট থেকেই বোনের মতো স্নেহ করে। এখন হঠাৎ বিয়ে। আমার তো মাথা ঘুরছে। ভাইয়া হুট করেই কেমন একটা প্রস্তাব দিয়ে ফেলল, বল তো? তবে বিয়েটা হলে খুব একটা খারাপও হবে না। শুভ্র ভালো ছেলে। তুখোড় ছাত্র। ভবিষ্যতে ভালো কিছু একটা করবে অবশ্যই।’
আমি হতভম্ব চোখে চেয়ে রইলাম। আম্মু চেয়ে আছে আমার মুখে। আম্মুর চাহনী দেখে হঠাৎ লজ্জা লাগছে আমার। নিশ্চয় কোনো উত্তর প্রত্যাশা করছেন? আমি মস্তিষ্ক হাতড়েও বলার মতো কিছু খুঁজে পেলাম না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম,
‘ হঠাৎ বিয়ে কেন? ভাইয়াকে বলেছ? ভাইয়া কী বলল?’
আমাদের পরিবারে একটা বদ্ধমূল নিয়ম হলো যেকোনো কাজে পরিবারের সকলের থেকে আলাদা আলাদাভাবে মতামত নেওয়া হয়। বাবার ধারণা, আমরা এখন বড় হয়েছি। পরিবারের ছোটবড় সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে ভাবনাচিন্তা করার সময় এসেছে। আম্মু উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললেন,
‘ রাহাত তো কিছু বলল না। শুধু শুনল। সব শুনে বলল, আমি কী বলব? তোমরা দেখো। এবার তুই বল। কী করা উচিত?’
আমি হেসে ঠিক ভাইয়ার মতো করে বললাম,
‘ আমি কী বলব? তোমরা দেখো।’
আম্মু উদ্বিগ্ন মুখে বসে রইলেন। আমার কাছে গোটা ব্যাপারটাই ভয়ানক বিশ্রী লাগছে। আপু আর শুভ্র ভাই? ছি! ভাবতেই কেমন গা গোলাচ্ছে। আপুর জায়গায় অন্যকেউ হলেও ঠিক ছিল কিন্তু? আম্মু বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,
‘ তুই একটু রুহিকে বুঝা। রুহি ৪/৫ বছর সময় চাইছে। শুভ্রর সাথে বিয়ে হলে স্যাটেল হওয়ার জন্য ৪/৫ বছর সময় এমনিতেই পেয়ে যাবে ও। শুভ্র এই সেপ্টেম্বরে স্কলারশিপের জন্য জাপান যাচ্ছে। ওর জাপানের পড়াশোনা শেষ হতে চার, পাঁচ বছর লাগবেই। ততদিনে… ভাইয়ার শরীরও ভালো না। আল্লাহ না করুক এর মধ্যে খারাপ কিছু ঘটে গেলে একমাত্র ছেলের বিয়েটাও দেখে যেতে পারবে না। ভাইয়ার প্রস্তাব তো ফিরিয়েও দিতে পারি না। তুই একটু বুঝা রুহিকে।’
আমি শান্ত কন্ঠে বললাম,
‘ আম্মু?আমি আপুকে বুঝাব, তুমি এখন যাও। আমার পুরো বিষয়টা খুব বিশ্রী লাগছে। বারবার শুনতে ইচ্ছে করছে না। এক কথা বারবার বলবে না।’
‘ বিশ্রী লাগার কী হলো?’
‘ বিশ্রী লাগার কী হলো সেটা তুমি বুঝতে পারছ আম্মু। ওদের বিয়ে জায়েজ হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে আত্মিক বাধা থাকে। আপু ভাইয়াকে যেভাবে দেখে, শুভ্র ভাইয়ের প্রতি তার দৃষ্টিও সেরকম। আমি এখন তাকে কী বুঝাব? ভাইয়ের দৃষ্টি সরিয়ে বর বর দৃষ্টিতে তাকাও। প্লিজ আম্মু, যাও তো। আমার মেজাজ খারাপ লাগছে।’
‘ তারমানে তুই ওকে কিছু বলবি না?’
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,
‘ তাকে কিছু বলব না এমন তো বলিনি আম্মু। আমি বুঝাব। তুমি যাও। এই বিষয়ে আর কিছু শুনব না আমি, প্লিজ।’
আম্মু বেরিয়ে গেলেন। আমার মেজাজ খারাপ তরতর করে বাড়তে লাগল। চারপাশের সবকিছু অসহ্য লাগছে।ফোনে টুংটাং শব্দ হচ্ছে। স্পৃহা নক দিচ্ছে বারবার। নোটিফিকেশন টুন, ম্যাসেজ টুন সবকিছুতে মাথা ধরে গেল আমার। ভেতরের মনটা ক্ষণে ক্ষণে চেঁচাতে লাগল, উফ, অসহ্য! অসহ্য! অসহ্য! আমি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সরে এলাম। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ম্যাসেঞ্জার ডিলিট করে, সীম বন্ধ করে, হাত- পা ছড়িয়ে পড়ে রইলাম বিছানায়। দুপুরে খাওয়া-গোসল কিছু হলো না।
আম্মুর সাথে অযথা মেজাজ দেখালাম। সেল্ফের সব বই ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করল। ড্রেসিং টেবিলের আয়না ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে করল। অযথা এই রাগে নিজের প্রতিই বিরক্ত হয়ে উঠলাম আমি। আপু ফিরল বিকেলে। আপুকে কীভাবে, কী বুঝাব মাথায় এলো না। থম ধরে বসে রইলাম। আম্মু শেষ বিকেলে বুঝানোর ব্যাপারটা মনে করিয়ে দিলেন। আপুকে বলতে না পেরে সন্ধ্যার আগে আগে সীম অন করে শুভ্র ভাইকে ফোন লাগালাম আমি। শুভ্র ভাই ফোন তুললেন না। দুই থেকে তিনবার ফোন দেওয়ার পর ফোন তুলে বললেন,
‘ বলে ফেল।’
আমি থতমত খেয়ে গেলাম। অগোছালো কথাগুলো গোছানোর চেষ্টা করলাম। শুভ্র ভাই অধৈর্য কন্ঠে বললেন,
‘ তুই কী ফোঁস ফাঁস নিঃশ্বাসের শব্দ শোনানোর জন্য ফোন দিয়েছিস আমাকে? শোন রোদু, মোবাইল ফোনটা ফোঁস ফাঁস নিঃশ্বাস শোনানোর জন্য আবিষ্কার করা হয়নি। প্রয়োজনীয় কথা বলার জন্য আবিষ্কার করা হয়েছে। সুতরাং ফোন দিয়ে প্রয়োজনীয় কথা বলবি। তোর মতো বলদরাই শুধু অপ্রয়োজনীয় ফোন কল করে অন্যের প্রয়োজনীয় সময় নষ্ট করে। বেয়াদব, কথা বল।’
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। এই হারামখোর, নিষ্ঠুর, বেয়াদব ছেলেটাকে এই মুহূর্তে মাথা ফাটিয়ে দিতে পারলে কেমন হতো? অথবা বিশ্রী কিছু গালি দিতে পারলে? ভাবনার সমুদ্র হাবুডুবু খেয়ে স্থির হয়ে দাঁড়ালাম আমি। শান্ত কন্ঠে বললাম,
‘ আপনাকে অযথা ফোন দিয়ে আপনার প্রয়োজনীয় সময় নষ্ট করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমার নেই। প্রয়োজনেই ফোন দিয়েছি। আর প্রয়োজনটাও আপনার নিজের। আম্মু আপুকে বুঝানোর দায়িত্ব আমার ঘাড়ে দিয়েছেন। আমি কিছু বুঝাতে টুঝাতে পারব না। আপুর সাথে আপনি নিজেই কথা বলুন এবং তাকে বুঝান। ব্যস, এতটুকুই।’
শুভ্র ভাই আকাশ থেকে পড়ার মতো ভাব করে বললেন,
‘ তোর বোনকে কী বুঝাব আমি? আমাকে কী ফ্রীতে বুঝানোর কামলা মনে হয় তোর? তোর বাপেরও তো তাই ধারণা। শুভ্র মানেই কামলা। এনিওয়ে, কী হয়েছে ওর? ফার্মের মুরগীর সাথে ভেগে টেগে গিয়েছে নাকি? ওকে বুঝানো আমার প্রয়োজন কীভাবে? আমাকে বেতন দিবি? তোর ধারণা আমার টাকা পয়সা নাই? আমার অন্যকে বুঝিয়ে বুঝিয়ে টাকা রোজগার করতে হবে? আমি হতদরিদ্র, ভিখিরি? যাহ ফুট!’
আমি হতবাক। একটা মানুষ ছোট্ট একটা কথাকে ঠিক কতভাবে পেঁচাতে পারে! আশ্চর্য! আমি মৃদু কন্ঠে বললাম,
‘ আপনাকে ভিখিরি কখন বললাম শুভ্র ভাই? বিয়ে যেহেতু আপনার তো আপনার হবু বউকে বুঝানোর দায়িত্বও আপনার। নিজের বউকে বুঝানোর জন্য বেতন দিতে হবে এখন?’
শুভ্র ভাই কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে ধমকে উঠে বললেন,
‘ আমার বিয়ে মানে কী? আমার হবু বউকে বুঝানোর সাথে রুহির কী সম্পর্ক? আমার মেজাজ খারাপ হচ্ছে। উল্টাপাল্টা কথা বলে মাথা না খেয়ে ফোন রাখ।’
আমি সত্যি সত্যিই ফোন রেখে দিলাম। ফোন-টোন অফ করে চুপচাপ শুয়ে রইলাম। রাতে খাওয়া-দাওয়া কিছু হলো না। মেজাজ খারাপ, খেতে ইচ্ছে করছে না। আপুকে তখনও কিছু বলা হয়নি। আচ্ছা? আপুকে জানানোর পর কেমন রিয়েকশন হবে তার? অবাক হবে? রাজি হয়ে যাবে? নাকি থমথমে মুখে নাকোজ করবে প্রস্তাব? সারারাত নির্ঘুম কাটল আমার। বইয়ে মন বসল না। চা খেতে ইচ্ছে হলো না। ঘুমানোরও কোনো কারণ খুঁজে পেলাম না। আচ্ছা? ঘুমানোর জন্যও বুঝি কারণ প্রয়োজন? মানুষ শরীরের প্রয়োজনে ঘুমায়? নাকি স্বপ্ন দেখার প্রয়োজনে? সারারাত বারান্দাময় পায়চারী করে সকাল সাতটার দিকে ঘুমোতে গেলাম আমি। ঘুম ভাঙতে ভাঙতে একটা বাজল। গত দুইদিনে আজ কিছুটা খাওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু খাওয়া যাচ্ছে না। বিস্বাদ খাবার মুখে তুলা মুশকিল। খাওয়া-দাওয়া-গোসল শেষ করতে করতেই আসরের আজান পড়ল। তার কিছুক্ষণ পর মামু আর মামানি এলেন বাসায়। বসার ঘরে নিচু গলায় আলোচনা শুরু হলো। গুরুগম্ভীর আলোচনা। আপু আমাকে জিগ্যেস করল,
‘ ব্যাপার কী রে?’
আমি বিরস কন্ঠে বললাম,
‘ জানি না।’
দুই জনই গিয়ে দাঁড়ালাম দরজার কাছে। কান খাঁড়া। মনে আলোচনার বিষয়বস্তু শোনার তাড়া। আলোচনার মাঝপথে হঠাৎ বললেন মামানি,
‘ তোমার ভাই ঝামেলা বাঁধিয়ে ফেলেছে। রোদের কথা বলার ছিল। রোদের বিয়ের কথা বলতে এসে…. ‘
আম্মু-আব্বু দুজনেই বিস্মিত চোখে চেয়ে রইলেন। আপুও হতবাক। আম্মু-আব্বুর হতভম্ব ভাব কাটতে সময় লাগল। প্রায় দশ মিনিট চুপ করে চেয়ে থেকে প্রথম কথাটা বললেন,
‘ অসম্ভব! এই প্রস্তাবটা আপনি কী করে আনতে পারেন ভাবী? এমন প্রস্তাব আনাই তো উচিত হয়নি।’
বাবার কথার উত্তরে ব্যস্ত হয়ে বললেন মামানি,
‘ অসম্ভব কেন? শুভ্র কী রোদের যোগ্য নয়?’
বাবা উত্তেজিত কন্ঠে বললেন,
‘ যোগ্যতা নিয়ে কথা আসছে না ভাবী। শুভ্র নিঃসন্দেহে ভালো ছেলে। কিন্তু আপনারা একের পর এক যা প্রস্তাব আনছেন তা মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। রোদের বয়স কত? ওর বিয়ের বয়স হয়েছে? শুভ্রর সাথে রোদের বিয়ে চিন্তায় করতে পারি না আমি। একইভাবে রুহির সাথেও শুভ্রকে ভাবতে পারি না। তাছাড়া রুহি থাকতে রোদকে বিয়ে দেওয়া অসম্ভব। সমাজ কী বলবে? বড় মেয়ে থাকতে ছোট মেয়ের বিয়ে? ছিঃ!’
মামানি হাল ছাড়লেন না। অসহায় কন্ঠে বললেন,
‘ এভাবে বলবেন না ভাই। আপনি তো জানেন রোদকে কতটা পছন্দ করি আমি। ছোট থেকেই নিজের বাচ্চার মতো দেখি ওকে। রোদের অন্য কোথাও বিয়ে হলে আপনাদের সাথে তার সম্পর্ক বহাল থাকলেও আমাদের সাথে তার সম্পর্কটা হয়ে যাবে নড়বড়ে। আমি রোদকে নিজের কাছে রাখতে চাই। এমন তো নয়, আপনারা আপনাদের মেয়েকে জলে ভাসিয়ে দিচ্ছেন। আমার ছেলে তো খারাপ নয়। যেকোনো মেয়েকে বিয়ে করার যোগ্যতা ওর আছে। অরি? তুমি কিছু বলো। শুভ্রকে তো ছোট থেকেই দেখছ।’
আম্মু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলেন। তাঁর বিস্ময়ভাব কাটছে না। আম্মুকে দেখে মনে হচ্ছে তিনি কিছু বুঝতে পারছেন না। তাকে হঠাৎ প্রচন্ড ঝাঁকুনি দেওয়া হয়েছে। তাঁর মাথা ঘুরছে। আম্মু আরও কিছুক্ষণ থম ধরে বসে থেকে বললেন,
‘ শুভ্র আর রোদ? কীভাবে সম্ভব ভাবী? আপনার মাথা ঠিক আছে? শুভ্র রোদকে ছোটবেলা থেকেই বোনের মতো স্নেহ করে। শুনতেই তো কেমন বিদঘুটে লাগছে ভাবী। এসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেন। আমরা বরং শুভ্রর জন্য সুন্দর একটা মেয়ে খুঁজি।’
মামানি এবার রেগে গেলেন। বসার ঘরে তুমুল বাকবিতন্ডা শুরু হলো। আমি আর আপু ভীত চোখে চেয়ে আছি। কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। শেষমেশ এই বিয়েশাদি নিয়ে দুই পরিবারের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে না তো? প্রায় ঘন্টাখানেক বাকবিতন্ডার পর বাবা মামুকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
‘ ভাই? আপনিই বলেন। এই বয়সে রোদের বিয়েটা ঠিক? আমার ছোট মেয়েটাকে এখনই বিয়ে দেওয়ার কথা কল্পনাও করতে পারি না আমি। বিয়ের বয়স হয়তো ওর হয়েছে কিন্তু আমার কাছে হয়নি। আমার শেষ বয়সের সম্বল আমার ছোট মেয়ে। ওকে শেষ বয়সে কাছে কাছে রাখতে চাই। এখনই বিয়ে দেব না। আপনি তো বুঝবেন ব্যাপারটা।’
মামু এতক্ষণ চুপ করে ছিলেন। এবার গলা খাঁকারি দিয়ে মৃদু কন্ঠে বললেন,
‘ আপনার ব্যাপারটাও বুঝতে পারছি। কিন্তু ছেলে না মানলে, না মানে ছেলের মা মানতে না চাইলে কী করি বলুন? রোদের প্রতি ওর টান ছোট থেকেই। রোদও ছোট থেকে ওর কোলে কোলেই বড় হয়েছে। মেয়ে হয়ে যেহেতু জন্মেছে বিয়ে তো দিতেই হবে। আজ নাহয় কাল। শুভ্রর সাথে ওর আত্মীয়তার সম্পর্ক আছে। এর মধ্যে বিয়ের কথাটা আসলেই একটু বিদঘুটে শোনায়। কিন্তু শুভ্রর সাথে বিয়েটা হলে কিন্তু মেয়েকে আপনি কাছেকাছেই রাখতে পারছেন।’
বাবা গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
‘ মেয়ে তো পালিয়ে যাচ্ছে না। শুভ্র পড়াশোনা শেষ করে ফিরুক। ততদিনে আল্লাহ চাইলে রুহির বিয়েটাও হয়ে যাবে। আমরা নাহয় তখন ভাবব এই বিষয় নিয়ে। তাড়া তো নেই।’
দেখা গেল মামানির প্রচুর তাড়া। তিনি বাবাকে ব্যস্ত হয়ে বুঝালেন। শেষে ক্লান্ত কন্ঠে বললেন,
‘ ছেলে আমার বিদেশ ভূঁইয়া পাড়ি জমাচ্ছে ভাই। আপনার ভাইয়ের শরীরও ভালো না। কখন কী হয় বুঝা মুশকিল। একমাত্র ছেলের বিয়েটা না দেখে যেতে পারলে আফসোস থেকে যাবে। তাছাড়া, আমাদের দুজনেরও তো আঁকড়ে ধরার মতো কেউ চায়। আপাতত এতটুকু স্বস্তি পাব যে ছেলের ঠিকঠাক সঙ্গী নির্বাচন করতে পেরেছি।’
মামানির এই কথায় বাবার তুমুল আপত্তি দেখা দিল। সব মিলিয়ে ঝামেলাটা প্রকান্ড রূপ ধারণ করল। আমি আর আপু দরজা ছেড়ে বিছানায় বসে রইলাম। দুজনের মুখই থমথমে, হতভম্ব। কী হচ্ছে এসব? আপু বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
‘ এখন কী হবে?’
আমি জবাব দিলাম না। আপু নিজের মনে বলল,
‘ বাবাকে বলবি যে তুই অন্য কাউকে পছন্দ করিস? শুভ্র ভাইয়েরও তো গার্লফ্রেন্ড আছে শুনেছিলাম। তুই চাপ নিস না। শুভ্র ভাই লয়াল ছেলে। উনি যেহেতু অন্য কাউকে পছন্দ করেন সেহেতু দুনিয়া উল্টে গেলেও বিয়েতে রাজি হবেন না। কুরুক্ষেত্র বাঁধিয়ে ফেলবে তবুও না।’
আমি আগের মতোই চুপ করে বসে রইলাম। কিছুক্ষণের মাঝে উপলব্ধি করলাম, আমার রিয়েকশন বাটন কাজ-টাজ করছে না। সিস্টেম নষ্ট। কোনো ঘটনাতেই প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারছি না। সন্ধ্যায় মামুরা চলে গেলেন। কী সিদ্ধান্ত হলো, আমি আর আপু কেউই বুঝতে পারলাম না। রাতে বাবা আম্মুর সাথে প্রচন্ড রাগ দেখালেন। তিনি মেয়ের বিয়ে কিছুতেই দিবেন না। আমি, আপু আর ভাইয়া একে অপরের দিকে হতাশ চোখে চেয়ে রইলাম। তাঁদের ঝগড়ার মাঝেই হঠাৎ উপলব্ধি করলাম আমার লজ্জা লাগছে। বাবা-মা আমার বিয়ে নিয়ে ঝগড়া করছে? ইয়া মা’বুদ! কী লজ্জাজনক অবস্থা। সেই রাতটা কাটল সবার থমথমে মেজাজে। একমাত্র আমিই বোধহয় ভেতরে ভেতরে উত্তেজনা অনুভব করলাম। আমার স্বল্পবাসী ভাই মুখ ফুটে বলেই ফেলল,
‘ শুভ্র তো ছেলে ভালো। মামানিরা যখন এতো জোড়াজুড়ি করছে তখন পজিটিভ সিদ্ধান্তও নেওয়া যায়।’
আপুর চোখ-মুখ উত্তেজনায় ঝলমল করতে লাগল। সে সারা রাত পায়চারী করে কাটিয়ে দিল। একটু পর পর ভবিষ্যতবাণী করতে লাগল, কী হতে পারে! পরমুহূর্তেই হতাশ হয়ে আমায় জিগ্যেস করতে লাগল, কী হতে পারে? আমি বেকুবের মতো বসে রইলাম। ফোন বন্ধ, বই পড়তে ইচ্ছে করছে না, চা খেতে ইচ্ছে করছে না, ঘুমানোর কারণ খুঁজে পাচ্ছি না এভাবেই কেটে গেল আরেকটা রাত। পরের দিন সকালে কিছুক্ষণের জন্য ফোন অন করলাম। স্পৃহাকে পুরো ব্যাপারটা জানাব জানাব করেও ফোন কেটে আবারও ফোন অফ করে রেখে দিলাম। সারা শরীর উত্তেজনায় কাঁপছে। প্রচন্ড টেনশনে গা গোলাচ্ছে। হাত জ্বলছে। আমি সকাল থেকেই ঘরের ভেতর চুপচাপ বসে রইলাম। দুপুর দিকে আপু এসে হতাশ কন্ঠে বলল,
‘ কাজী আসছে বিকেলে। বিয়েটা বোধহয় হয়েই যাবে। শুভ্র ভাই রাজি হয়েছে কি-না বলা যাচ্ছে না।’
আমি চমকে উঠলাম। এভাবেই বিয়ে ঠিক হয়ে গেল? এদের লড়াই ঝগড়াতে আমার মতামত নেওয়ার ব্যাপারটা বেমালুম ভুলে গেল? আশ্চর্য! আমি অবশ্যই বিয়ে টিয়ে কিছু করব না। শুভ্র ভাইকে তো কখনোই না। সবার এই নিষ্ঠুরতায় আমার কান্না পেয়ে গেল। আমি বিছানায় হাত-পা ছুঁড়ে দিয়ে বললাম,
‘ আমি বিয়ে করব না।’
আপু হাই তুলতে তুলতে বলল,
‘ সেটা তোর কালকে বলার উচিত ছিল। বাবার মেজাজ এখন এমনিতেও চড়া। বাবার সামনে যেতেই ভয় লাগছে আমার।’
আমি পুরো দুপুর বিছানায় গড়াগড়ি করে চিৎকার-চেঁচামেচি করলাম,
‘ আমি বিয়ে করব না। শুভ্র ভাইকে তো জীবনেও বিয়ে করব না। করব না। করব না। করব না।’
দুপুর পর্যন্ত আমার চিৎকার চেঁচামেচিতে মোটামুটি সবাই অতিষ্ঠ হয়ে গেল। ঘড়িতে তিনটা বাজতেই খেয়াল করলাম, বাসায় কোনো বাড়তি মানুষের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে না। আমি চিল্লাচিল্লি থামিয়ে দিলাম। বিয়ে মানেই অনেক মানুষ। যেহেতু মানুষ নেই সেহেতু বিয়ে হচ্ছে না। চিল্লাচিল্লি থামিয়ে ঘুম দিলাম আমি। অশান্তির ঘুম। আমাকে ঘুমের মাঝেই ডেকে তুলল আপু। আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,
‘ কী হয়েছে?’
আপু উত্তেজনা নিয়ে বলল,
‘ বিশাল কাহিনী হয়ে গিয়েছে। বসার ঘরে কাজী সাহেব বসে আছেন অথচ শুভ্র ভাইয়ের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। উনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, উনি বিয়েশাদী করবেন না। উনার প্রচুর ব্যস্ততা। রুম থেকে বেরিয়ে আমাদের বাসা পর্যন্ত আসা মানে বিশাল ক্ষতি। রেজিস্ট্রার খাতায় স্বাক্ষর করার মতো সময় তার নেই।’
আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। চুলগুলোকে হাত খোপা করতে করতে বললাম,
‘ উনি বিয়ে করবেন না মানে? আমি কী বিয়ে করার জন্য নাচছি নাকি? আমিই উনাকে বিয়ে করব না। করব না মানে করব না।’
বিছানার কুশন, কাঁথা, চাদর সবই ছুঁড়ে ফেললাম আমি। চাপা স্বরে শাসানোও চলল কিছুক্ষণ। বিয়ে করব না বলে হৈ হৈ চলল। আম্মু পর্দা সরিয়ে গরম চোখে তাকালেন একবার। আপু নির্বিকার বসে রইল। শুভ্র ভাইয়ের জেদ আমার থেকে ডাবল। উনি চোটপাট কিছু করলেন না। সোজাসাপ্টা জানিয়ে দিলেন, উনি বিয়ে করবেন না। উনার এক কথা। যা বলবেন তাই। আমার মেজাজ খারাপ তখন তরতর করে বাড়ছে। মামু-মামানি দিশেহারা। শেষমেষ এক রকম জোর করেই শুভ্র ভাইকে ডেকে আনা হলো বাসায়। অনেকটা হাতে-পায়ে ধরার মতো অবস্থা। উনি বাসায় এসে মামানির সাথে কিছুক্ষণ চাপা রাগ দেখালেন। তারপর যথারীতি স্বাক্ষর করলেন। এবং স্বাক্ষর শেষেই পত্রপাঠ বিদায় নিলেন। এক মিনিটের জন্যও দাঁড়ালেন না। এটুকু আপুর বদৌলতে জানা, আমার সাথে উনার দেখা-টেখা কিছু হলো না। বাবাসহ অচেনা এক লোক আমার ঘরে এলেন ঠিক সন্ধ্যায়। আমাকে রোল করা বিশাল এক খাতা দিয়ে স্বাক্ষর করতে বলা হলো। ‘মা এখানে স্বাক্ষর করো’ ব্যতীত দ্বিতীয় কোনো কথা ভদ্রলোক রুমের ভেতরে থাকতে বললেন না। কিছুক্ষণ পর আপু নাচতে নাচতে এসে বলল,
‘ এতো ঢং করে কী লাভ হলো? কাবিন তো হয়েই গেল।’
আমি অবাক হয়ে বললাম,
‘ বিয়ে হয়ে গিয়েছে? কীভাবে হলো? কবুল তো বললাম না।’
আপু বলল,
‘ বিয়ে হয়নি। কাবিন হয়েছে।’
আমি হতবাক,
‘ মানে? বিয়ে আর কাবিন কী আলাদা?’
‘ হ্যাঁ আলাদা। ধর্মীয় পদ্ধতিতে বিয়ে হয়নি। শুধু রেজিষ্ট্রেশন হয়েছে। শুধু রেজিষ্ট্রেশন করলে দাম্পত্য জীবন জায়েজ হয় না।’
‘ তুমি না মাত্রই বললে, কাবিন হয়েছে? রেজিষ্ট্রেশন, কাবিন সবই তো হলো। তাহলে বিয়ে হলো না কেন?’
আপু হতাশ হয়ে বলল,
‘ শুভ্র ভাই ঠিকই বলে, তুই গাধার চূড়ান্ত। কাবিন আর রেজিষ্ট্রেশন একই জিনিস।’
আমি চূড়ান্ত কনফিউশড হয়ে বললাম,
‘ উফ! তাহলে বিয়ে আবার কীভাবে হয়? আলাদা নিয়ম আছে? আচ্ছা, তুমি এতটুকু বলো, আমি এখন বিবাহিত নাকি বিবাহিত নই?’
‘ কাগজে-কলমে বিবাহিত। কিন্তু ধর্মীয়ভাবে বৈধতা নেই। বিয়ে বৈধ হওয়ার জন্য বিয়ে পড়াতে হবে। ওটা এখন হবে না। শুভ্র ভাই পড়াশোনা শেষে ফিরে আসার পর। বুঝলি রোদু? শুভ্র ভাই মামানির সাথে বিশাল রাগারাগি করলেন। তোর কাপলে দুঃখ আছে।’
আমি ক্লান্ত মুখে বসে রইলাম। আপু রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আমি সীম অন করে দ্রুত স্পৃহাকে ফোন লাগালাম। স্পৃহা ফোন তুলতেই নিস্পৃহ কন্ঠে বললাম,
‘ দোস্ত? আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে।’
স্পৃহা আমার কথাকে জাস্ট পাত্তা না দিয়ে আশেপাশের গল্প জুড়ে দিল। ফোন বন্ধ কেন, আইডি ডিয়েক্টিব কেন, হোয়াটসঅ্যাপে পাওয়া যাচ্ছে না কেন হেনতেন। আমি ক্লান্ত কন্ঠে বললাম,
‘ আমি সিরিয়াস দোস্ত। বিশ্বাস কর।’
‘ আমাকে তোর বলদ মনে হয়? আমি জানি না আঙ্কেল-আন্টিকে? আপুকে রেখে তোকে বিয়ে দিয়ে দেবে? শোন দোস্ত? আমাকে বলদ বানানোর চেষ্টা বন্ধ কর। সারাটা জিন্দেগী প্র্যাঙ্ক করে করে আমাকে বলদ বানিয়ে আসছিস। আমার মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে বিশ্বাস করতে বললেও বিশ্বাস করব না।’
আমি অসহায় কন্ঠে বললাম,
‘ বিশ্বাস কর, প্র্যাঙ্ক না। সিরিয়াসলি বিয়ে হয়ে গিয়েছে। আমার এখন কেঁদে কেটে মরে যেতে ইচ্ছে করছে।’
স্পৃহা স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
‘ তাহলে মরে যা। মরার আগে চল্লিশার দাওয়াত দিয়ে যা।’
আমি হতাশ দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। এমন সময় আম্মু রুমে ঢুকলেন। আমি স্পৃহার ফোন কেটে চুপ করে বসে রইলাম। মুখে ভয়াবহ দুঃখী দুঃখী ভাব। আমার এবার সত্যি সত্যি কান্না পাচ্ছে। সবাই যখন জানবে আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে, তখন কী হবে? রোদু দি বিবাহিত মহিলা!!! নো!!! আম্মু টেবিলের বই নাড়াচাড়া করতে করতে বললেন,
‘ তোর আর শুভ্রর বিয়ের ব্যাপারে কেউ জানে না। পরিবারের বাইরে তোর ছোট কাকা শুধু জানে। তোদের ফুপুদেরও জানানো হয়নি। জানাজানি হলে সমস্যা। রুহির বিয়েতে সমস্যা হবে। আমাদের দুই পরিবার আর তোর ছোট কাকা ছাড়া এই খবর যেন আর কারো কানে না যায়। আদিবা, জারিফ কিংবা তোর বান্ধবী কেউ না। পরবর্তীতে ঘটা করে বিয়ের সময় সবাইকে জানানো হবে। এই ব্যাপারে কারো সাথে আলোচনা করিস না৷ তোর বাবা রাগ করবে। বিয়ে হয়েছে, এই ব্যাপারটাও ভুলে যা।’
আমার বলতে ইচ্ছে করল, ‘ আমি কী বিয়ে করতে চেয়েছিলাম?জোর করে দিলে কেন? এখন আমি মাইক দিয়ে পাড়ায় পাড়ায় ঘোষণা করব।’ বলতে ইচ্ছে করলেও বলা উচিত মনে হলো না বলে বলা হলো না। চুপ করে বসে রইলাম। মার কথা মতো বিয়ের ব্যাপারটা ভুলে গেলাম। পরিবারের সবাই না-জানার মতো ভাব করল। সবার আগে ভুলে গেলেন আমার বাবা, হয়তো শুভ্র ভাই নিজেও। স্পৃহা বারবার কল করছিল। আম্মু বেরিয়ে যেতেই রিসিভ করে বললাম,
‘ সরি, দোস্ত। বিয়ের ব্যাপারটা প্র্যাঙ্ক ছিল।’
স্পৃহা খুশিতে ঝুমঝুম করে উঠে বলল,
‘ আমি জানতাম। রুহি আপুর আগে তোর বিয়ে ইম্পসিবল। ভাগ্যিস বিশ্বাস করিনি। নয়তো ছ্যাঁকা দিতি। দেখেছিস কত ইন্টেলিজেন্ট আমি?’
আমি হতাশ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,
‘ হ্যাঁ। খুব ইন্টেলিজেন্ট তুই। প্র্যাঙ্কটা ধরে ফেলবি ভাবতেই পারিনি।’
স্পৃহা গল্পের ফুলঝুরি নিয়ে বসল। আমি ফোন কেটে চুপচাপ বসে রইলাম৷ আমার পরিবারের সামনে পুরো ঘটনাটা প্রকাশ পেল এভাবে, শুভ্র ভাই বা আমি কেউই বিয়েতে রাজি নই। আমাদের ধরে-বেঁধে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের মিল-মিছিল হওয়ার কোনো সম্ভবনা নেই। অথচ মুদ্রার অপর পাশ বলছে, এই আমরাই গত পাঁচ বছর যাবৎ লুকিয়ে চুরিয়ে প্রেম করে বেড়াচ্ছি। দু’দিকের দুই বিশ্বাস। মাঝে আমাদের দীর্ঘশ্বাস। ইন্টারেস্টিং না?
রোদ শুভ্রর প্রেমকথন সম্পূর্ণ গল্পের লিংক
https://kobitor.com/rodsuvro/
[ বিঃদ্রঃ অনেক লিখে ফেলেছি। আর লিখতে ইচ্ছে করছে না। অনেকে বলবে শুভ্র ভাইয়ের সাক্ষাৎ কেন পাওয়া গেল না। সহজ উত্তর রোদের সাথে শুভ্র ভাইয়ের দেখা সাক্ষাৎ হয়নি। দুজনের কেউই সাক্ষাৎ-এর চেষ্টা করেনি।
বিঃদ্র-২ঃ প্রেমকথন সবসময়ই খানিক অপরিপক্ক ধরনের হয়। প্রেমকথন অপরিপক্ক হবে এটাই নিয়ম। এখানে পরিপক্বতা খুঁজবেন না।
বিঃদ্র-৩ঃ নতুন গল্প আপাতত আসছে না। বই অর্থাৎ পান্ডুলিপি লিখছি। দোয়া করবেন যেন ভালো কিছু উপহার দিতে পারি। ধন্যবাদ।]