রোদ শুভ্রর প্রেমকথন পর্ব ৫২
লেখনীতে- নৌশিন আহমেদ রোদেলা
শুভ্র ভাইয়ের সাথে আমার দেখা হলো সেই আকস্মিক ঘটনা ঘটে যাওয়ার সপ্তাহ দুই পর। বাসার অবস্থা তখন স্বাভাবিক। আম্মু আগের মতোই ইউটিউব ঘেটে আমাদের স্বাস্থ্যবতী বানিয়ে ফেলার পায়তারায় মগ্ন। বাবা মগ্ন কোরবানির গরু সামলাতে। বিয়ে-শাদির ব্যাপারটা তাদের মাথায় নেই। আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। কিন্তু স্বস্তি বেশিক্ষণ টিকল না। আম্মু বিশাল এক বালতি আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,
‘ সারা বাড়ি ধোঁয়া-মোছার দায়িত্ব আজ তোর। সারাদিন শুয়ে-বসে থাকিস বলে ক্ষুধা লাগে না, শুকিয়ে যাচ্ছিস। স্বাস্থ্য ধরে রাখার প্রথম শর্তই হলো প্রচুর কাজ করা। সুতরাং কোনো বাহানা না দেখিয়ে কাজে লেগে পড়।’
আমি বালতি হাতে অসহায় চোখে চেয়ে রইলাম। কাজ-টাজ পারি না, এমন কোনো ব্যাপার আমার মাঝে নেই। সমস্যা হলো, কাজ টাজ করতে আমার ভালো লাগে না। একটা বিছানা ঝাঁট দিয়েই যে হয়রান হয়ে যায় সে মুছবে পুরো বাড়ি! চারটা শোবার ঘর, বসার ঘর, খাবার ঘর, রান্না ঘর, বারান্দা….. আঙ্গুলের কড়ায় ঘর সংখ্যা গুণতে গুণতেই অজ্ঞান হওয়ার জোগাড় হলো আমার। কিছুক্ষণ গাইগুই করে, হাজারটা বাহানা দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত কাজে লেগে পড়লাম। ঘর মুছতে মুছতে প্রাণ যখন আমার ওষ্ঠাগত হওয়ার জোগার। ঠিক তখনই বাসায় এলেন মামানি। আম্মু সুযোগ পেয়ে অভিযোগের পসরা নিয়ে বসলেন। আমাদের যন্ত্রণায় তাঁর যে যেদিকে দু’চোখ যায় সেদিকে চলে যেতে ইচ্ছে করে সেই মনোবাঞ্ছাও জানানো হলো। মামানি হাসলেন। ফেরার সময় আমাকে ঘর মুছামোছি থেকে নিষ্কৃতি দিয়ে বললেন,
‘ রোদু আমার সাথে চল তো। অরি? রোদকে সাথে নিয়ে গেলাম। তোমার ভাইয়া দুটো ইলিশ মাছ এনেছে। একটা তোমাদের জন্য। আসার সময় আনতে ভুলে গিয়েছি। মাছ নিয়ে আবার আসতে পারব না। বয়স হয়েছে, অতো জোর নেই। রোদের কাছে দিয়ে দেব।’
অন্যান্য সময় হলে ও বাড়ি না যাওয়ার জন্য হাজারটা অযুহাত দেখিয়ে ফেলতাম কিন্তু এবার তা করলাম না। এই ঘর মোছামুছির ভয়াবহ পরিশ্রম থেকে নিষ্কৃতি পাব ভেবেই খুশিতে ঝুমঝুম করে উঠলাম। আম্মু কিছুক্ষণ না না করেও শেষমেশ রাজি হয়ে গেলেন। আমি জামা, ওড়না পাল্টে ভদ্র বাচ্চাটির মতো মামানির পিছু নিলাম। মামানিদের বাসায় গিয়ে দরজা থেকেই ভেতর দিকে উঁকিঝুঁকি দিলাম আমি। মূর্তমান সমস্যাটা কী বাসায় আছে নাকি নেই? মামানি আমাকে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললেন,
‘ কী রে? ভেতরে আয়। দরজায় দাঁড়িয়ে আছিস কেন?’
আমি কয়েক সেকেন্ড চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে বললাম,
‘ মাছ-টাছ যা দেওয়ার এখান থেকেই দাও, নিয়ে চলে যাই। শুভ্র ভাই বাসায় থাকলে ভেতরে ঢুকব না। তোমার ছেলের বিশ্বাস নেই। উনার ইচ্ছে হলেই আমাকে আছাড় দিয়ে ইন্সট্যান্ট মেরে ফেলতে পারেন। আমার আপাতত মরার প্ল্যান নেই।’
মামানি অবাক হয়ে বললেন,
‘ ও শুধু শুধু তোকে আছাড় মারতে যাবে কেন? যদিও ওর মন মেজাজ খুব একটা ভালো নেই। তবুও, বিনা কারণে আছাড় টাছাড় মারবে না। ও নিজের ঘরে বসে পড়াশোনা না কী-সব করছে। এখন ঘর থেকে বেরুবে না। তুই ভেতরে আয়।’
আমি ভেতরে ঢুকলাম। মামানি রান্না ঘরে যেতে যেতে বললেন,
‘ সকালে খেয়েছিস?’
আমি টেলিভিশন অন করে নিয়ে বললাম,
‘ না। খাওয়ার কথা বলো না৷ খেতে আমার আলসেমি লাগে।’
মামানি কন্ঠে বিস্ময় নিয়ে বললেন,
‘ একটা বাজে এখনও সকালের খাবার খাসনি?’
আমি উত্তর না দিয়ে টেলিভিশনের চ্যানেল পাল্টাতে মনোযোগী হলাম। মামানি কয়েক মিনিটের মাঝেই এক থালা খাবার নিয়ে আমার পাশে বসলেন। আমি খাবার দেখেই আঁতকে উঠলাম।
‘ আমি খাইয়ে দিচ্ছি তুই শুধু গিলে যাবি। খাইয়ে দিলে খেতে সমস্যা কী?’
আমি অসহায় চোখে তাকালাম। মামানি তার থেকেও অসহায় চোখে চাইলেন। মুখ গুজ করে বললেন,
‘ তোদের মধ্যে এখনই এতো বুড়ো বুড়ো ভাব কেন বুঝি না বাপু। আমার একটা মাত্র ছেলে। মাঝে মাঝে যদি শখ করে বলি, “আয় বাবা, একটু খাইয়ে দিই।” সাথে সাথেই ভ্রু কুঁচকে তাকাবে।’
আমি হেসে বললাম,
‘ মামানি? তোমার উচিত তোমার ছেলেকে আরেকটা বিয়ে দিয়ে দেওয়া। নাতি-পুতি হবে আর তুমি ননস্টপ খাইয়ে যাবে। কোনো থামাথামি নেই।’
মামানি দুঃখী দুঃখী কন্ঠে বললেন,
‘ হ্যাঁ। তারপর শুভ্র পুরো বাড়িটাকেই মাথায় তুলে আছাড় মারবে। এইটুকুতেই যে তান্ডব দেখাল! তোর বাবার উপর শুভ্রর সংঘাতিক রাগ।’
আমি হাসলাম। মামানি আমার মুখে খাবার তুলে দিতে দিতে বললেন,
‘ তোদের আমি কিছু বুঝি না। তোরা কখন কী চাস তা হয়ত তোরা নিজেরাই ঠিকঠাক বুঝিস না। শুভ্র তো…. ‘
মামানির কথার মাঝেই কলিং বেল বাজল। আমি উঠে গিয়ে দরজা খুলে উঁকি দিতেই অপরিচিত এক ভদ্রমহিলাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। আমি সরে দাঁড়াতেই ভেতরে আসলেন উনি। আমার দিকে এক ঝলক চেয়েই মামানির দিকে তাকালেন। সোফায় বসতে বসতে বললেন,
‘ খেতে বসেছেন নাকি? খাওয়ার সময় বিরক্ত করে ফেললাম মনে হচ্ছে।’
আমি দরজা লাগিয়ে আবারও সোফায় এসে বসলাম। মামানি এই ভদ্রমহিলার সামনে আমাকে খাইয়ে দিবে ভাবতেই অস্বস্তিতে কাদা হয়ে যাচ্ছে মন। মামানি ঠোঁটে বিশাল এক হাসি টেনে বললেন,
‘ আমি খাচ্ছি না। এইযে, মেয়েকে খাওয়াচ্ছি।’
আমি অস্বস্তি নিয়ে চুপ করে রইলাম। ভদ্রমহিলা একবার আমার দিকে তাকালেন,
‘ আপনার তো মেয়ে নেই শুনলাম। তাহলে এটা কে? এতো বড় মেয়েকে খাইয়ে দিতে হয়! শ্বশুর বাড়ি গেলে কে খাইয়ে দিবে?’
শেষ কথাটা বলেই মৃদু হাসলেন ভদ্রমহিলা। মামানি জোরপূর্বক আমার মুখে খাবার তুলে দিয়ে বললেন,
‘ আমার ননদের মেয়ে। আমার শ্বশুরমশাইয়ের ছেলেমেয়ে ছিলেন মোটে দুই। দুই ভাইবোনের বাচ্চা কাচ্চার দিক দিয়ে আমাদের ছোট্টটি হলো এই মেয়ে। বাপের কাছে, মামার কাছে বাচ্চা বলতে এই একটাই। তাই আদরও বেশি। সবাই মিলে আদর দিয়ে বাদর বানিয়ে ফেলেছি বলেই নিজ হাতে খেতেও তার আলসেমি। সারাদিনে এখনও খায়নি।’
ভদ্রমহিলা হেসে বললেন,
‘ ছোটরা একটু আহ্লাদীই হয়। আমার ভাইয়ের মেয়েটাও এমন। আচ্ছা, যে দরকারে এসেছিলাম, ভাবী এই মাসের ভাড়াটা…’
আমি উঠে দাঁড়িয়ে মুখ কাঁচুমাচু করে বললাম,
‘ আমি আর খাব না। পেট ভরে গিয়েছে। আমি ভেতরের ঘরে যাই।’
মামানি আমার অস্বস্তি বুঝতে পেরে বললেন,
‘ আচ্ছা যা। ও শোন, ভেতরেই যেহেতু যাচ্ছিস একটা কাজ করে দে মা। শুভ্রর ঘরে গিয়ে ওর বিছানার চাদর, বালিশের কাভার আর পর্দাগুলো খুলে লাল বালতিতে রেখে দে। বুয়া চাইবে এখনই। শুভ্র বুয়াকে ঘরে ঢুকতে দেবে না।’
আমি অসহায় চোখে তাকালাম। শুভ্র ভাইয়ের ঘরে যাওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে যে আমার নেই তা এই অপরিচিত ভদ্রমহিলার সামনে বলে ফেলতে পারলাম না। মামানি আমাকে এক বিন্দু গুরুত্ব না দিয়ে গল্পের ঝুড়ি নিয়ে বসলেন। বাধ্য হয়েই শুভ্র ভাইয়ের ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে হলো আমায়। শুভ্র ভাইয়ের ঘরের দরজা ভেজানো। আমি দরজাটা হালকা ফাঁক করে ভেতরে উঁকি দিলাম। শুভ্র ভাই টেবিলের উপর বিশাল এক কাগজ বিছিয়ে কিছু একটা আঁকাআঁকি করছেন। টেবিল জুড়ে ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন শেইপের পেন্সিল, রাবার আর মার্কার পেন। আমি নিঃশব্দে ভেতরে ঢুকে গেলাম। শুভ্র ভাই কপাল কুঁচকে কাগজের দিকে চেয়ে আছেন। মনোযোগী দৃষ্টির হেরফের করে আমাকে খেয়াল করলেন না। আমি কুশনের কাভারে হাত দিতেই ঘাড় ফিরিয়ে তাকালেন উনি। কুঁচকানো ভ্রু আরও কুঁচকে গেল। কয়েক সেকেন্ড চুপচাপ চেয়ে থেকে এক প্রকার জ্বলে উঠে বললেন,
‘ এই মহিলা! তোর এখানে কী?’
আমি চোখ তুলে তাকালাম। কপাল কুঁচকে বললাম,
‘ মহিলা! আপনি আমাকে মহিলা ডাকলেন কেন?’
শুভ্র ভাই এবার সোজা হয়ে দাঁড়ালেন। পরনে তার ছাই রঙা টি-শার্ট আর কালো টাউজার।
‘ তো? ডাকব না কেন? তুই মহিলা নস? তবে তুই পুরুষ? পুরুষ ডাকব?’
আমি ফুঁসে উঠে বললাম,
‘ কিচ্ছু ডাকবেন না। আমার নাম রোদ। ডাকতে হলে আমাকে রোদ বলেই ডাকবেন, ব্যাস।’
‘ অবশ্যই ডাকব না। রুমে উঁকিঝুঁকি দেওয়া মহিলাদের আমি নাম ধরে ডাকি না।’
‘ আমি রুমে উঁকিঝুঁকি মারি?’
‘ অবশ্যই মারিস। এইযে আমার রুমে দাঁড়িয়ে আছিস এটাও উঁকিঝুঁকি মারার দৃষ্টান্ত। অনেক কথা নষ্ট করে ফেলেছি। আর নষ্ট করা যাবে না। তুই এই মুহূর্তে আমার রুম থেকে বের হ। আমার রুমের আশেপাশে এলে তোর খবর আছে।’
আমি কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ালাম। জেদ ধরে বললাম,
‘ যাব না। মামানি আমাকে একটা কাজে পাঠিয়েছে। সেই কাজ করে তবেই বেরুব। আপনার সমস্যা হলে আপনি বেরিয়ে যেতে পারেন। সমস্যা নেই।’
শুভ্র ভাই অবাক হয়ে বললেন,
‘ কী মারাত্মক মহিলা তুই? আমার রুম থেকে আমাকেই বহিষ্কার করছিস?’
‘ বহিষ্কার টহিষ্কর করছি না। আমি আপনাকে সমাধানটা বলছি।’
‘ আমার কোনো সমাধান টমাধান লাগবে না। তুই এই মুহূর্তে আমার রুম থেকে দূর হবি, আমার কাছে এটাই সর্বৎকৃষ্ট সমাধান।’
‘ বললাম তো যাব না। যাব যোগ দন্ত ন আকার না।’
শুভ্র ভাই কয়েক সেকেন্ড আগুন চোখে চেয়ে থেকে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালেন। শক্ত কন্ঠে বললেন,
‘ তোকে আমি পাঁচ মিনিট সময় দিচ্ছি। পাঁচ মিনিটে যত কাজ আছে সমাধা কর এবং দূর হ। পাঁচ মিনিটের এক সেকেন্ড এপাশ-ওপাশ হলে আমি তোকে সত্য সত্য সাত তলা থেকে ফেলে দিব। উইদ আউট এনি ওয়ার্নিং।’
আমি বালিশের কভার আর চাদর উঠালাম। জানালার পর্দা খুলে বারান্দার দরজার কাছে দাঁড়াতেই দেখলাম শুভ্র ভাই আগের মতোই গম্ভীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। কপালে চিন্তিত ভাঁজ। কোনো কারণে রেগে টেগে আছেন নাকি? আমার মাথায় দুষ্টুমি খেলে গেল। চেয়ারের উপর দাঁড়িয়ে দরজার পর্দা খুলতে খুলতে শুভ্র ভাইকে ডাকলাম, উনি জাস্ট পাত্তা না দিয়ে চুপ করে রইলেন। আমি আবারও ডাকলাম, উনি জবাব দিলেন না। এবার মাথাটা একটু নিচু করে বারান্দায় উঁকি দিয়ে বললাম,
‘শুভ্র ভাই? এই শুভ্র ভাই, শুনুন না? জাপানিজ মেয়েরা কিন্তু দেখতে দারুণ হয়। পুতুল পুতুল, আহা।’
শুভ্র ভাই কুঞ্চিত কপাল খানি আরও একটু কুঁচকে ফেলে বললেন,
‘ তো?’
‘ তো মানে? চার-পাঁচ বছর থাকবেন, প্রেম টেম করবেন না? দারুণ একটা চান্স মিস হয়ে যাবে নয়তো।’
শুভ্র ভাই সরু চোখে তাকালেন। বারান্দার রেলিঙে ঠেস দিয়ে বুকের উপর হাতভাঁজ করে দাঁড়ালেন,
‘ তুই বাঙালী মেয়েদের ঐতিহ্য ধ্বংস করে ফেলবি দেখছি। তোর মাঝে মেয়ে জাতীয় কোনো অনুভূতি নেই?’
‘ অনুভূতি কেন থাকবে না? অনুভূতি আছে বলেই তো প্রেমের কথা বলছি। আমি মুভিতে দেখেছি। জাপানিজ আর কোরিয়ান মেয়েগুলো দেখার মতো।’
শুভ্র ভাই আক্ষেপ নিয়ে বললেন,
‘ হলেই কী? লাভ তো নেই। আমি হাফ বিবাহিত। এই যুগের ইয়াহিয়া আমাকে চূড়ান্ত ফাঁসানো ফাঁসিয়েছে।’
‘ ইয়াহিয়া? এই যুগের ইয়াহিয়া আবার কে?’
কথাটা বলেই চেয়ার থেকে নেমে দাঁড়ালাম আমি। পর্দাগুলো বুকে জড়িয়ে চোখ ছোট ছোট করে কৌতূহলী চোখে চেয়ে রইলাম।
‘ কে আবার? তোর ধান্ধাবাজ বাপ ছাড়া এতো সুন্দর বিশেষণ তো কাউকে দেওয়া যায় না।’
‘ আপনি আবার বাবাকে নিয়ে বাজে কথা বলছেন? বাবা কী এমন করেছে যে আপনি তাঁকে ইয়াহিয়া বলছেন?’
‘ করেনি, করছে। প্রেজেন্ট টেন্সে কথা বল। তোর বাপ হলো জলজ্যান্ত অত্যাচার। সেই যুগের ইয়াহিয়া বাংলার ঘর জ্বালিয়েছে। তোর বাপ ইয়াহিয়া, আমাকেই জ্বালিয়ে দিচ্ছে।’
আমি আঙুল উঁচিয়ে বললাম,
‘ বাবাকে নিয়ে বাজে বকবেন তো মামানিকে ডাকব।’
‘ তো ডাক। আমি ভয় পাই তোর মামানিকে? আর আমি মিথ্যাই বা বললাম কোথায়? পুরো ব্যাপারটা আমি প্রমাণ করে ফেলতে পারি। প্রমাণ চাস? আয়, তোকে উদাহরণ দেই।’
আমি চুপ করে চেয়ে রইলাম। শুভ্র ভাই বাম পায়ের ভর ছেড়ে ডান পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়ালেন। গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
‘ কোনো দরিদ্র, ক্ষুধার্ত মানুষ যদি খাবার চায়, সাধারণ মানুষ কী করবে বল তো? আবেগী হয়ে খাবার দিবে। কিন্তু তোর বাপের মতো মানুষ তা করবে না। তিনি অলওয়েজ ইয়াহিয়া টাইপ কিছু করবেন। দেখা যাবে, খাবারের প্লেট সামনে রেখে বলবে, ‘ডোন্ট টাচ’। আমার সাথেও তাই হচ্ছে , বিরিয়ানির প্যাকেট সামনে রেখে বলছে, ডোন্ট টাচ। মানে হয় কোনো? ব্যাটা ইয়াহিয়া। এসব লোককে কোনো চিন্তাভাবনা ছাড়াই শুট করে দেওয়া উচিত।’
আমি অবাক হয়ে বললাম,
‘ আশ্চর্য! আপনি এক প্যাকেট বিরিয়ানির জন্য একজনকে ইয়াহিয়া বানিয়ে ফেলবেন? চিন্তাভাবনা ছাড়াই শুট করে ফেলবেন? বাবা কবে আপনাকে এমন কথা বলেছে? আপনার ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে, বিরিয়ানি না পেয়ে আপনি মারা যাচ্ছেন? ওকে ফাইন! আমি আপনাকে বিরিয়ানি কিনে দেব। এক প্যাকেট বিরিয়ানি কেনার মতো সেভিংস আমার আছে।’
শুভ্র ভাই ভ্রু উঁচিয়ে তাকালেন। ধমক দিয়ে বললেন,
‘ আল্লাহ! এই তুই আমার রুম থেকে বের হ। এখন এবং এই মুহূর্তে বের হ। দুনিয়ার সব গাধামি আল্লাহ তোকেই কেন দিয়েছে? তোর নাম রোদ বালিকা না হয়ে রাসভ বালিকা হওয়া উচিত। ‘র’ ফর রোদ, ‘র’ ফর রাসভ সুন্দর মিলেছে। রাসভ অর্থ কী জানিস?’
আমি বোকা বোকা চোখে চেয়ে মাথা নাড়লাম। শুভ্র ভাই বিরক্তি নিয়ে বললেন,
‘ জানতাম জানিস না। জানলে তো আর রাসভ হতি না, বুদ্ধিমতি হতি। রাসভ অর্থ হলো গাধা। আর তুই হলি নিম্নমানের গাধা।’
আমাকে প্রত্যুত্তরের সুযোগ না দিয়ে, শুভ্র ভাই হঠাৎ ভ্রু বাঁকিয়ে বললেন,
‘ কাছে আয়, একটা প্রশ্ন জিগ্যেস করি। প্রশ্ন করতে হবে চুপিচুপি। তুই গাধামীর কোন লেভেলে আছিস সেটা পরীক্ষা করতে হবে৷ কী হলো? আয়।’
আমি মুখ ফুলিয়ে চুপচাপ চেয়ে রইলাম।শুভ্র ভাই কয়েক পা এগিয়ে এসে, হাত বাড়িয়ে আমার বেনিনু টেনে ধরলেন। আমি চোখ-মুখ কুঁচকে বললাম,
‘ আহ্। ব্যথা লাগে। ছাড়ুন।’
‘ ব্যথা লাগার জন্যই তো টানলাম। আদর করার জন্য টানিনি। বড়রা কথা বললে শুনতে হয় জানিস না? আমি তোর কয় বছরের বড়? বড়দের সম্মান করতে শিখিসনি?কাছে আয়।’
কথাটা শেষ করে আবারও এক টান দিলেন শুভ্র ভাই। আমি বাধ্য হয়েই দুই পা এগিয়ে গেলাম। শুভ্র ভাই মুচকি হাসলেন। আমি তীক্ষ্ণ চোখে তাকাতেই মাথা নুইয়ে মুখটা কানের কাছে নিয়ে আলতো স্বরে আওড়ালেন অপরিচিত কবিতার কয়েকটি লাইন। আমি অবাক হলাম। আশ্চর্য, এমন অশ্লীল কবিতাও কবিরা লিখে? আমার চোখদুটো বড় বড় হয়ে গেল। ছিটকে সরে দাঁড়াতে গিয়ে চুলে টান পড়ল। এক হাতে বেনিনুটা শক্ত করে চেপে ধরে বললাম,
‘ ছি! অশ্লীল।’
শুভ্র ভাই হো হো করে হেসে উঠলেন। হাসতে হাসতে বিছানায় গিয়ে বসলেন। বিস্মিত হওয়ার চেষ্টা করে বললেন,
‘ আশ্চর্য! অশ্লীল কী বললাম?’
আমি কয়েক সেকেন্ড রক্তিম চোখে চেয়ে থেকে পর্দা আর বিছানার চাদর নিয়ে বেরিয়ে আসতে নিতেই সটান উঠে খপ করে বেনুনি চেপে ধরলেন আবার। আমি রাগে দুঃখে চেঁচিয়ে উঠে বললাম,
‘ উফ! আমি কিন্তু মামানিকে ডাকব। ব্যথা লাগছে। ছাড়ুন।’
বাস্তবিকই ব্যথা লাগছিল মাথায়। চুলে শক্ত টান পড়ায় চোখ উপচে জল গড়াল। শুভ্র ভাই যেন দেখেও দেখলেন না। তার চোখে-মুখে কোনো ভাবান্তর দেখা গেল না বরং ভীষণ আক্ষেপ নিয়ে বললেন,
‘ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো লেখকের কবিতাকে তুই ফট করে অশ্লীল বলে ফেললি? এই অপরাধে তোকে আরেকটা কবিতা শুনাতে হয়। হুমায়ুন আজাদ অথবা খালেদ মতিন?’
আমি চোখ-মুখ শক্ত করে বললাম,
‘ আমি শুনব না।’
‘ শুনবি না বললেই হলো নাকি? শুনতে হবে।’
আমি অসহায় চোখে তাকালাম। শুভ্র ভাই গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
‘ তোর এই চোর চোর মুখ দেখে আমার মায়া হচ্ছে। আচ্ছা যা। তোকে আমি দুটো অপশন দিচ্ছি। এক. এখানে দাঁড়িয়ে সুনীলের সেই কবিতা শুনবি। দুই. আমার ধোঁয়া শার্টগুলো ঝটপট ইস্ত্রি করে দিবি।’
আমি অবাক চোখে চাইলাম। একটা মানুষ এতোটা সুবিধাবাদী কী করে হতে পারে? আমাকে দিয়ে কাজ করানোর পায়ঁতারা সব! আমি ফুঁসে উঠে বললাম,
‘ চোর চোর মুখ মানে কী? আপনি নিজের কাজ নিজে করতে পারেন না? আমি কোনো ইস্ত্রি ফিস্ত্রি করতে পারব না।’
শুভ্র ভাই মুখ ভর্তি হাসি নিয়ে বললেন,
‘ তার মানে তুই কবিতা শুনতে চাস? সেটা সরাসরি বললেই হয়।’
আমি আবারও অসহায় হরিণীর মতো চাইলাম। শুভ্র ভাইয়ের মতো বেয়াদব মানুষ পৃথিবীতে দুটো হতে পারে বলে আমার বিশ্বাস হয় না। এই ব্যক্তি জোরপূর্বক আমায় কবিতা শুনিয়ে কাজিন জাতিকে বলবে, রোদু জোর করে কবিতা শুনেছে। তাও আবার এমন সাংঘাতিক কবিতা! শুভ্র ভাই চোখ-মুখে হাসি নিয়ে কবিতা বলার প্রস্তুতি নিলেন। ঠিক সেই সময় বসার ঘর থেকে ডাকলেন মামানি। কাপড় ধোঁয়ার বুয়া এসেছে, কাপড় দিতে হবে। শুভ্র ভাই তার দ্বিতীয় নির্দেশ ছুঁড়ে দেওয়ার আগেই আকাশসম স্বস্তি নিয়ে বিছানার উপর থাকা চাদর আর পর্দাগুলো নিয়ে দৌঁড়ে বেরিয়ে এলাম আমি। বুয়াকে কাপড়গুলো দিতেই মনে পড়ল আংটিটির কথা। সপ্তাহ এক আগে স্নিগ্ধার সাথে মার্কেটে গিয়ে হঠাৎ একটা আংটি পছন্দ হয়ে গিয়েছিল আমার।
একটা বললে ভুল হবে, বলতে হয় এক জোড়া। কাপল রিং কেনার মতো কারণ আমার নেই। কিন্তু ফিমেল আংটিটা এতো পছন্দ হলো যে রেখে আসারও উপায় নেই। আকাশ-পাতাল চিন্তা করে অবশেষে কিনেই ফেললাম আংটি জোড়া। স্নিগ্ধা কাপল রিং এর মেল রিংটা নিয়ে কী কী করা যেতে পারে তার বিস্তর আইডিয়া নিয়ে বসতেই প্রথমেই মনে পড়ল শুভ্র ভাইয়ের কথা। কিন্তু উনাকে দেব আংটি! তাও আমি? সর্বনাশ! অতো সাহস কখনও ছিল নাকি আমার?
আংটি দিতে গিয়ে ভয় আর লজ্জাতেই আধা মরা হয়ে যাব নির্ঘাত। অসম্ভব! কাউকে কোনো আংটি ফাংক্টি দেওয়ার দরকার নেই। আমার আংটি আমিই পরব, ব্যস। যা ভাবনা তাই কাজ। আজ সকালে ভীষণ আনন্দে অযথা পড়ে থাকা মেল আংটিটা পরেছিলাম ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুলটাতে। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে টেখে ফোনে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় খুলতে ভুলে গিয়েছিলাম। সেই আংটির কথায় মনে পড়ল, শুভ্র ভাইয়ের রুমে গিয়ে পর্দা খোলার সময়। মনে যেহেতু পড়েছে, পর্দা খোলার পাশাপাশি আংটিটাও খুলে শুভ্র ভাইয়ের টেবিলে রেখে দিলাম।
যাক! যার আংটি তাকে দেওয়া হয়ে গেল। ধরা পড়ার চান্স নেই। তখন সব ঠিকঠাক লাগলেও এখন কেমন খচখচ করছে মন। শুভ্র ভাই আংটি পরেন না। উনি কী আংটিটা আদৌ পরবেন নাকি ডাস্টবিনে ফেলে দিবেন? শুভ্র ভাইয়ের জন্য কোনো কিছুই আশ্চর্য নয়। উনার কাছে কারো অনুভূতি, টনুভূতি গুরুত্ব পাওয়ার কথা নয়। আমার শখের আংটি ডাস্টবিনে পড়ে আছে চিন্তা করেই বিশাল মন খারাপ হয়ে গেল আমার। আমি আংটি উদ্ধারের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম। এই বেয়াদব লোককে আংটি পরতে দেওয়াও চরম পাপ। এই ভয়াবহ পাপ করা যেতে পারে না।
আমি ফিরে এসে খুব সাবধানে রুমে উঁকি দিলাম। শুভ্র ভাই ততক্ষণে আংটিটি তুলে নিয়েছেন হাতে। ভ্রু বাঁকিয়ে আংটিটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছেন। আমি মনে মনে জানতাম, আংটিটা উনি পরবেন না। হাতে আংটি পরে ঘুরে বেড়ানোর অভ্যাস উনার নেই। পছন্দও না বোধহয়। তবে আংটিটা কী করবেন উনি? ফেলে দিবেন? শুভ্র ভাই আমাকে ভাবনাতীত অবাক করে দিয়ে আংটিটা হাতে পরলেন। ভ্রু কুঁচকে হাতের দিকে চাইলেন। হাতটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে নিয়ে কিছু একটা ভাবলেন।
টেবিলের সিকিউর ড্রয়ার খুলতে খুলতে হঠাৎই, একদম আচমকা পেছন ফিরে দরজার দিকে তাকালেন। আমি দ্রুত সরে গিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ালাম। নিঃশ্বাস বন্ধ করে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আমাকে দেখে টেখে ফেলল না তো আবার? বেশ কিছুক্ষণ কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে, বুকে থুতু ছিটিয়ে আবারও দরজার উপর ঝুঁকে পড়লাম আমি। শুভ্র ভাই দরজা থেকে একহাত দূরে, পকেটে হাত দিয়ে নিশ্চিত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে।
চোখের দৃষ্টি দরজার দিকে স্থির। আমি খুব বিশ্রীভাবে ধরা পড়ে গেলাম। ধরা খেয়ে মুখটা ফাঁটা বেলুনের মতো চুপসে যেতেই কয়েক পা এগিয়ে এলেন শুভ্র ভাই। আমি মনে মনে সূরা ইউনূস আওড়াতে আওড়াতে ভাবতে বসলাম, আমার কী এই মুহূর্তে দৌড় লাগানো উচিত? শুভ্র ভাই আমার সামনে এসে দাঁড়াতেই ঠোঁট টেনে বোকা বোকা হাসি দিলাম আমি। শুভ্র ভাইয়ের মুখ গম্ভীর। আমার হাসিকে পাত্তা টাত্তা দিলেন না। ভীষণ সিরিয়াস কন্ঠে বললেন,
‘ সমস্যা কী? উঁকিঝুঁকি মারছিস কেন? তুই আর তোর বাপ এসব উঁকিঝুঁকি মেরেই দুনিয়া ধ্বংস করে ফেলবি। পুরো দুনিয়ার ভবিষ্যৎটাই টিকে আছে আমার মতো যুব সমাজের আশায়। কিন্তু তোর ইয়াহিয়া বাপের যন্ত্রণায় এই যুব সমাজ আজ ধ্বংস প্রায়। আমার মতো ট্যালেন্টেড ব্যক্তি যদি ধ্বংস হয়ে যায়, পৃথিবীটা চলবে কীভাবে?’
শুভ্র ভাইয়ের কথায় চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল আমার। ভীষণ বিস্ময় নিয়ে বললাম,
‘ যুব সমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে! আমাদের একটা উঁকি দেওয়াতে যুব সমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে শুভ্র ভাই?’
‘ যাবে কী? বল, যাচ্ছে। বাপে উঁকি মারে মাথায়, মেয়ে উঁকি মারে দরজায়, দেহে, মনে, মস্তিষ্কে। তোদের সমস্যাটা কী? এভাবে উঁকিঝুঁকি মেরে কী প্রমাণ করতে চাস? তোরা গেরিলা যোদ্ধা? পৃথিবীর ভবিষ্যৎ চিন্তায় অস্থির শুভ্রকে তোরা ঘায়েল করতে পারলি কী-না তার খবরাখবর নিতে চাস?’
আমার মাথা ঘুরে গেল। চিন্তা-ভাবনা সব গুলিয়ে গেল। কথার সুর কেটে গেল। কোথা থেকে কথা শুরু হয়েছিল তাই ভুলে গেলাম। বোকা বোকা কন্ঠে বললাম,
‘ গেরিলা যোদ্ধারা কী উঁকিঝুঁকি মারত শুভ্র ভাই?’
শুভ্র ভাই বিরক্ত চোখে তাকালেন। আচমকা আমার বামহাতটা চেপে ধরে বললেন,
‘ লাফালাফি করবি না। এভাবে উঁকিঝুঁকি মেরে আমার ভবিষ্যৎ নষ্ট করার অপরাধে ভয়াবহ শাস্তি দেওয়া হবে তোকে।’
শুভ্র ভাই শক্তিশালী পুরুষ। হাতের মুঠো শক্ত। উনার হাতের চাপে আমার হাতের হাড়গুলো যেন মড়মড় করে উঠল একবার। হাত ছাড়ানোর সাধ্য নেই বুঝতে পেরে খুব অসহায় কন্ঠে বললাম,
‘ আমি উঁকি দিলেই যে আপনার ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাবে তা তো আমি জানতাম না শুভ্র ভাই। এরপর কখনও উঁকি দিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ নষ্ট করব না, কসম!’
শুভ্র ভাই আমার বামহাতের আঙ্গুলগুলো মেলে ধরতে ধরতে বললেন,
‘ যা নষ্ট করার তা তো করেই ফেলেছিস। আমার তো আর উপায় নেই।’
আমি কথাটা ঠিক ধরতে না পেরে ক্লান্ত চোখে চেয়ে রইলাম। হাত ব্যথা করছে। ঠিক সেই মুহূর্তে আমার উপলব্ধি হলো, এই নিষ্ঠুর লোকের জন্য আংটি কিনে ভয়াবহ ভুল করে ফেলেছি আমি। এই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য আমার এই মুহূর্তে রেললাইনের উপর শুয়ে জীবন বিসর্জন দিয়ে দেওয়া উচিত। কিন্তু রেল লাইন পাবোটা কোথায়? মেডিকেল থেকে রেললাইন যেতে কমছে কম বিশ টাকা রিকশা ভাড়া। বেশিও হতে পারে। দশ টাকা রিকশা ভাড়া থাকাকালীনই জীবন বিসর্জন দিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। এতো অত্যাচার সহ্য করে পাঁচটা বছর কেন বেঁচে থাকলাম আমি? মাঝ থেকে রিকশা ভাড়াটা বেড়ে গেল। ভুল হয়েছে, চরম ভুল। শুভ্র ভাই আমার বাম হাত থেকে আংটিটা খুলে নিতেই সচেতন হলাম আমি। লাফিয়ে উঠে বললাম,
‘ আরেহ! আরেহ! এটা আমার আংটি। নিজের টাকায় কিনেছি। ছাড়ুন, ছাড়ুন।’
শুভ্র ভাই চোখ রাঙালেন। ধমক দিয়ে বললেন,
‘ লাফালাফি করবি তো এক চড়। আংটির সাথে সাথে মট করে ভেঙে ফেলব তোর হাত। লাফালাফি বন্ধ।’
ঠিক এই মুহূর্তে কান্না পেয়ে গেল আমার। এই এতো বড় দুনিয়াতে শুভ্র ভাই কেন শুধু আমার সাথেই এমন করেন! হাত ভেঙে ফেলার জন্য কী এই পৃথিবীতে দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তি নেই? আমার হাতই ভাঙতে হবে কেন? আমার আংটিই ছিনিয়ে নিতে হবে কেন? উনাকে কী আমি আংটি দিইনি? মেয়েদের আংটি দিয়ে উনার কী কাজ? শুভ্র ভাই আংটিটা খুলে নিয়ে বললেন,
‘ তুই বাচ্চা মেয়ে। বাচ্চা মেয়েদের আংটি পরলে বলদের মতো লাগে। এলাকার অনেকেই জানে তুই আমাদের আত্মীয়। আমার বাবার বোনের কুড়িয়ে পাওয়া মেয়ে। আমাদের আত্মীয় হয়ে হাতে আংটি পরে বলদ সেজে ঘুরে বেড়াবি, ব্যাপারটা তো ভালো দেখায় না।’
আমার ধৈর্যের সব রকম বাঁধ ভেঙে গেল আমার। আমি অবসন্ন কন্ঠে বললাম,
‘ আমি বাচ্চা টাচ্চা কিছু নই। আই এম নাইন্টিন নাও।’
শুভ্র ভাই গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
‘ তাহলে তো আরও পরতে পারবি না। উনিশ বছরের যুবতীদের আংটি পরতে হয় না। এই বয়সে আংটি পরা মানেই গর্হিত অপরাধ। আমি একজন রেসপন্সেবল মানুষ হয়ে তোকে কোনো গর্হিত অপরাধ করতে দিতে পারি না।’
আমি মেজাজ খারাপ নিয়ে বললাম,
‘ গর্হিত হলে গর্হিতই। এই অপরাধে ফাঁসি হয়ে গেলেও সই। আপনি আমার আংটি দেন, ব্যস।’
শুভ্র ভাই আকাশ থেকে পড়ার মতো মুখভঙ্গি করে বললেন,
‘ তোর আংটি মানে? আংটিতে তোর নাম লেখা আছে? কোথায় তোর নাম? নাম থাকলে দিয়ে দেব। দেখা নাম!’
ঠিক এই মুহূর্তে, ঠিক এই মুহূর্তে আমার মনে হলো, আমি বেঁচে আছি কেন? এই অসহ্য লোকটাকে সহ্য করার চেয়ে জীবন ধর্ম ত্যাগ করে ফেলা নিশ্চয় শতগুণ সুখময় হবে আমার জন্যে। আমি চোখভর্তি রাগ নিয়ে শুভ্র ভাইয়ের দিকে তাকালাম। শুভ্র ভাইয়ের ভাবভঙ্গি দেখেই বুঝা যাচ্ছে আংটি ফেরত দেওয়ার বিন্দুমাত্র পরিকল্পনা তার নেই।
তার পরিকল্পনা যেহেতু নেই সেহেতু তাকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে দেওয়া হলেও অথবা কেউ আত্মহত্যা করে মরে গেলেও তার কোনো যায় আসবে না। সে দিবে না, মানে দিবেন না, সোজা হিসেব। রাগে দুঃখে চোখদুটো টলমল করে উঠল আমার। অতিরিক্ত রাগে কান্না পেয়ে যাওয়ার বিশাল সমস্যাটা নিয়েই উনার সামনে থেকে সরে এলাম আমি। প্রচন্ড রাগে শরীর কাঁপছে। পৃথিবীটাকে আছাড় মেরে আলু ভর্তা বানিয়ে ফেলতে পারলে ভালো হতো, রাগটা একটু কমতো। আমি ঝড়ের গতিতে উড়ে এসে বসার ঘরে ঢুকলাম। মামানির দিকে চেয়ে জেদ নিয়ে বললাম,
‘ আমি এক্ষুনি বাসায় যাব মামানি। তোমার মাছ তুমি রাখো। আমি কোনো মাছ টাছ নিয়ে যেতে পারব না।’
মামানি ভদ্রমহিলার সাথে গল্পে ডুবে ছিলেন। আমার দিকে চেয়ে অবাক হয়ে বললেন,
‘ কী হলো হঠাৎ? চোখ-মুখ এমন লাল হয়ে আছে কেন? শুভ্র কিছু বলেছে?’
আমার বলতে ইচ্ছে হলো, তোমার অসভ্য, বেয়াদব ছেলে সবসময়ই অসভ্য, অভদ্র কথা বলে। তার মধ্যে অভদ্রতার বিশাল সফটওয়্যার ব্যতিত অন্যকিছু নেই। দুঃখের বিষয় তোমরা তা বুঝতে পারো না। কিন্তু ভদ্রমহিলার সামনে এসব বলা যায় না বলে বললাম,
‘ আমার শরীর খারাপ লাগছে। আমি বাসায় যাব।’
মামানি আৎকে উঠে বললেন,
‘ শরীর খারাপ লাগলে বাসায় যাবি কেন? শরীর খারাপ নিয়ে তোকে আমি এক পা বেরুতে দিব না। সুস্থ মেয়ে এখানে এসেই অসুস্থ হয়ে যাবে এ কেমন কথা? না খেলে তো শরীর খারাপ করবেই।’
শরীর খারাপের দোহায় দিয়ে যে ভয়াবহ প্যাঁচ লাগিয়ে ফেলেছি তা শীঘ্রই বুঝতে পেরে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। এদিকে রাগটাও কন্ট্রোলে রাখা যাচ্ছে না। আমি অসহায় কন্ঠে বললাম,
‘ প্লিজ মামানি। যেতে দাও। আমার ভালো লাগছে না। আমি বাসায় যাব, ব্যস।’
এমন সময় খুব ফুরফুরে মেজাজে বসার ঘরে এলেন শুভ্র ভাই। ভদ্রমহিলাকে দেখে বিনয়ী হাসি হাসলেন। তাকে দেখে মনে হল, তার মতো নম্র, ভদ্র ছেলে ইহজীবনে দ্বিতীয়টি হতে পারে না। অথচ ভেতরে ভেতরে কী অসহ্য! শুভ্র ভাই পাশে দাঁড়িয়ে মৃদু হেসে হাসলেন,
‘ আসসালামু আলাইকুম আন্টি। কেমন আছেন?’
ভদ্রমহিলা নম্র হেসে ঘাড় নাড়লেন,
‘ ভালো আছি। শুনলাম, তুমি জাপান চলে যাচ্ছ?’
‘ দেশের পরিস্থিতি তো ঠিক অনুমান করা যাচ্ছে না। সব ঠিক থাকলে সেপ্টেম্বরে ইন-শা-আল্লাহ।’
ভদ্রমহিলা মজার ছলে হেসে বললেন,
‘ ফরেনে পড়াশোনা শেষ করতে তো প্রায় চার পাঁচ বছর লেগে যাবে। তোমার বাবা-মা তো দেশে একদম একা পড়ে যাবেন। একটা বিয়েশাদী করে ফেলো এর মধ্যে। আমরাও একটা দাওয়াত পাই।’
শুভ্র ভাই জবাব না দিয়ে ভদ্রতার হাসি হাসলেন। আমি চোটপাট করে বললাম,
‘ মামানি আমি গেলাম।’
মামানি কপাল কুঁচকে তাকালেন। শুভ্র ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘ তুই ওকে কী বলেছিস শুভি?’
শুভ্র ভাই মামানির কথায় পাত্তা না দিয়ে খাবার ঘরের দিকে চলে গেলেন। যেতে যেতে বললেন,
‘ আমি তাকে কী বলব? আশ্চর্য!’
মামানি আমার দিকে চেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। চোখের ইশারায় আমায় সান্ত্বনা দিয়ে বললেন,
‘ আচ্ছা যা। রান্নাঘরে মাছ কেটে রেখেছি। মুখবন্ধ লাল বাটিতে আছে। যাওয়ার সময় নিয়ে যা।’
এদের মা-ছেলের টানাহেঁচড়ায় তখন আমি ক্লান্ত প্রায়। মামানির কথায় ক্লান্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলে রান্নাঘরের দিকে রওনা দিলাম। শুভ্র ভাই খাবার টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে গ্লাসে পানি ঢালছিলেন। খাবার ঘর থেকে রান্নাঘরে যাওয়ার রাস্তাটা সরু। একসাথে দুজন যাওয়ার উপায় নেই। শুভ্র ভাই একটু পিছিয়ে আমাকে যাওয়ার সুযোগ করে দিলেন। আমি তাকে পাশ কাটিয়ে এক পা এগুতেই আটকা পড়ল হাত। শুভ্র ভাইয়ের শক্ত হাতের মুঠোয় নিজের হাত আবিষ্কার করে চোখ রাঙিয়ে তাকালাম। শুভ্র ভাইয়ের ঠোঁটে মৃদু হাসি।
‘ ছাড়ুন!’
শুভ্র ভাই ছাড়লেন না। আমি রাগ টলমলে চোখ নিয়ে বললাম,
‘ সমস্যা কী? চলেই তো যাচ্ছি। আসব না আর আপনার বাসায়। এতো জ্বালাচ্ছেন কেন! আপনাকে আমার একবিন্দু সহ্য হচ্ছে না আর। ছাড়ুন।’
শুভ্র ভাই জোরপূর্বক হাত টেনে চেয়ারের সামনে ঠেস দিয়ে দাঁড় করালেন। স্বাভাবিক কন্ঠে বললেন,
‘ আমি তোকে ধরে রেখেছি নাকি? কী জানি? বুঝতে পারছি না। যখন বুঝতে পারব তখন ছেড়ে দেব।’
আমি মুখ ফুলিয়ে শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলাম। বামহাতের আঙ্গুল উঁচিয়ে বললাম,
‘ দেখুন…. ‘
শুভ্র ভাই হাত ছেড়ে আমার দুইপাশে চেয়ারের উপর হাত রেখে বললেন,
‘ কী দেখব?’
আমার রুদ্রমূর্তি থিতিয়ে গেল। আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে আশেপাশে দেখলাম, কেউ দেখছে না তো? ধমক দেওয়ার মতো করে বললাম,
‘ আমাকে যেতে দিন। আমার মেজাজ খারাপ, আমি কিন্তু মামানিকে ডাকব। অযথা একটা সিনক্রিয়েট হয়ে যাবে।’
শুভ্র ভাই হাসলেন। আমার চোখের পাতায় ফু দিয়ে বললেন,
‘ যেখানে সেখানে আম্মুকে ডাকতে চাস কেন? এখানে আম্মুর কী কাজ?’
আমি সন্দেহী চোখে তাকালাম। এবার আমার কান্না পেয়ে যাচ্ছে। টেবিলের উপর থাকা কাঁচের জগটা তার মাথায় মেরে তাকে অজ্ঞান করে ফেলার ভয়াবহ ইচ্ছে জাগছে। উফ, জীবনটা এতো বিরক্তিকর কেন? আমি দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,
‘ এখানে আপনারও কোনো কাজ নেই। সরে দাঁড়ান।’
শুভ্র ভাই না সরে এক পা এগিয়ে দাঁড়ালেন। বামহাতটা হাতে তুলে নিয়ে টাওজারের পকেট থেকে সাদা চকচকে একটা আংটি বের করে খুব যত্ন করে পরিয়ে দিলেন বামহাতের রিং ফিঙ্গারে। ফিসফিস করে বললেন,
‘ এখানে আমার থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ আর কারো থাকতেই পারে না।’
আমি তীক্ষ্ণ চোখে আংটির দিকে চেয়ে থেকে বললাম,
‘ এটা আমার আংটি নয়। আপনি আমার আংটি ফেরত দেন। অন্যের আংটি আমি নেব না।’
‘ ওটা তোর আংটি তেমন কোনো প্রমাণ তো দেখাতে পারিসনি। এটাই তোর আংটি। একদম পার্ফেক্ট। খুঁজে দেখ, নাম লেখা আছে।’
আমি সন্দিহান চোখে তাকালাম। আংটি পরা আঙ্গুলটা চোখের সামনে নিয়ে বেশি কিছুক্ষণ সময় নিয়ে খুব সূক্ষ্ম চোখে খেয়াল করতেই চোখে পড়ল ব্যাপারটা। আংটির ঘন কারুকার্যের মাঝে একদম সূক্ষ্ম চালে লেখা ‘ শুভ্র’স ওয়াইফ’। আমি অবাক হয়ে তাকালাম। শুভ্র ভাই ভ্রু নাচিয়ে হাসলেন,
‘ পার্ফেক্ট না? তোর সবচেয়ে ইম্পোর্টেন্ট নাম। পুরো পৃথিবী ভুলে গেলেও এটা ভুললে চলবে না। তুই যে রিজার্ভড সম্পদ হয়ে ঘুরাফেরা করছিস আংটিটা তার রিমাইন্ডার। মালিকের অনুপস্থিতিতে বারবার মনে করিয়ে দেবে,” দিস রিসোর্স ইজ রিজার্ভড।”
তার কথার ধরনে ভ্রু বাঁকিয়ে তাকালাম আমি। গম্ভীর কন্ঠে বললাম,
‘ সবচেয়ে ইমপার্ফেক্ট নাম। আমি এটা পরব না। আপনার রিমাইন্ডার আপনার কাছে রাখুন।’
শুভ্র ভাই আচমকা হাতদুটো চেয়ারের দু’পাশে রেখে খুব কাছে এসে দাঁড়ালেন। সহজ কন্ঠে বললেন,
‘ পরবি না? ওকে! খুলে দেখ, খুন করে ফেলব।’
তার সহজ কন্ঠটিতে যে প্রচ্ছন্ন ধমকি ছিল তাতেই আটকে গেলাম আমি। আংটি খোলার সাহস করার সাহস করে উঠতে পারলাম না। তেজ নিয়ে বললাম,
‘ আপনিই না বললেন, উনিশ বছরের যুবতীদের জন্য আংটি পরা গর্হিত অপরাধ?’
‘ উনিশ বছরের যুবতীদের জন্য অপরাধ৷ কিন্তু বউ বউ ধরনের যুবতীর জন্য বিশাল ছাড়।’
এটুকু বলে আমার দিকে চাইলেন শুভ্র ভাই। পরমুহূর্তেই কানের কাছে মুখ নামিয়ে ফিসফিসিয়ে বললেন,
‘ যার হাসিটা পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর। যার আগমন মানেই প্রাণবন্ততা। যে তাকালেই খুন হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে, তার জন্য সাত খুন মাফ।’
আমার ঠোঁটে অযথায় হাসি ফুটে উঠল। শুভ্র ভাই কথা না বাড়িয়ে সরে দাঁড়ালেন। তিনি সেখান থেকে সরে যাওয়ার পরও স্তম্ভিত মন নিয়ে একই জায়গায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম আমি। এখন আমার কী করা উচিত? রাগ ধরে রেখে উনাকে গালি দেওয়া উচিত? নাকি ভুলে যাওয়া উচিত? শুভ্র ভাই হঠাৎ ফিরে এলেন। ডানপাশের গালে আচমকা গাঢ় এক চুমু দিয়ে বললেন,
‘ আর যে শুভ্রর বউ, যাকে শুভ্র প্রচন্ড ভালোবাসে, তার জন্য সব খুন মাফ। তার সব অপরাধই মিষ্টি। সে মানেই ভালোবাসা। তার ভাবনা মানেই প্রশান্তি। তার হাসি মানেই, আমি তোমাকে ভালোবাসি।’
কথাটা বলে উত্তর-দক্ষিণ না দেখে আবারও হাওয়া হয়ে গেলেন শুভ্র ভাই। কিন্তু এক মিনিটের মাথায় আবারও ঘুরে এসে আবারও গাঢ় একটা চুমু খেলেন গালে। আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই আবারও হাওয়া হলেন ঘরের বাঁকে! আমি আগের জায়গাটাতেই বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইলাম। ধীরে ধীরে রক্তিম হয়ে উঠল গাল। প্রচন্ড লজ্জায় শিউরে উঠল লোমকূপ পর্যন্ত। হৃদপিণ্ডের স্পন্দন দ্রুত হলো। দ্রুত থেকেও দ্রুততর। হৃদস্পন্দের ধামামা বাজিয়ে তারাও নিশ্চয় বলছে, শুনছ হে? আমি তোমাকে ভালোবাসি! প্রচন্ড ভালোবাসি!
সমাপ্ত….
রোদ শুভ্রর প্রেমকথন সম্পূর্ণ গল্পের লিংক
https://kobitor.com/rodsuvro/
[ বিঃদ্র-১ঃ প্রেমকথন চলবে। রোদ-শুভ্রর কিছু মুহূর্ত তুলে ধরা হবে আগের মতোই। যারা প্রেমকথনকে ধারাবাহিক গল্প হিসেবে নিয়েছে তাদের জন্য এখানেই সমাপ্ত। পরের লেখাগুলো আমি আগের মতো লিখব। ছোট ছোট করে, শুধু নিজের জন্য।
বিঃদ্র-২ঃ আমার একটাই পেইজ। এটাই আমার একমাত্র পেইজ। দ্বিতীয় কোনো পেইজ আমার নেই। আমার নামে চালানো ফেইক পেইজ দেখে বিভ্রান্ত হবেন না। সচেতন হোন। যদিও আমি ফেইক পেইজের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নিচ্ছি। তবু আপনাদের সচেতনতা প্রয়োজন।
বিঃদ্র-৩ঃ ৪৯৫২ শব্দে লিখেছি গোটা পর্ব। পান্ডুলিপি লিখতে গিয়ে আপনাদের এবং আপনাদের মন্তব্য খুব মিস করছি। হাঁপিয়ে উঠেছি আপনাদের ছাড়া। যাদের পক্ষে সম্ভব তার একটা করে মন্তব্য করে যাবেন। ভালোবাসা ]