রোমান্টিক অত্যাচার পর্ব ১৫
লেখিকাঃ Israt Jahan Sobrin
ধারণাঃ Kashnir Mahi
.
আশফিঃ গেলেই দেখতে পাবে। ওকে কোলে তুলে বেডরুমে চলে এলাম।
#মাহিঃ আরে এবার তো নামাও, এভাবে তাকিয়ে থাকবে নাকি কোলে করে।
-কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে জনাব আমাকে নিচে নামালেন।
#আশফিঃ এবার একটু ডানে ঘুরুন ম্যাম।
#মাহিঃ ওকে। আমি ডানে ঘুরে দেখলাম একটা মেয়ের আইডল। মুখটা ঢাকা আছে। আর আইডল টা কে একটা হোয়াইট গাউন পড়িয়ে রেখেছে। গাউন টা অনেক সুন্দর। কিন্তু আইডল টা কার হতে পারে? আশফি আমার হাত ধরে আইডল টার কাছে নিয়ে গেলো। তারপর মুখের ওপর থেকে পাতলা সাদা কাপড় টা সরিয়ে দিল। আমি আইডল টার মুখটা দেখে শুধু তাকিয়েই আছি। কারণ আইডল টা কে এতোটাই সুন্দর ভাবে তৈরি করেছে যে আমি নিজেও এতোটা সুন্দর না।
#আশফিঃ এটা আমার White Angel. একে দেখেই আমার দিন টা শুরু হতো আর শেষ হতো।
#মাহিঃ আমি কি আপনার White angel টা কে ছুঁয়ে দেখতে পারি??
-ও আমার কথাটা শুনে শুধু একটা হাসি দিল। আইডল টার ঠোঁটের নিচের তিল টাকে দেখে মনে হচ্ছে নতুন করে দেওয়া হয়েছে।
আশফি তোমার এই আইডল টা দেখছি তোমার মাহির থেকেও অনেক সুন্দর। কথা গুলো বলার সময় আমি যখন ওর দিকে ঘুরে দাড়ালাম ও তখন আমার কপাল সোজা Gun তাক করে আছে। ওর মুখটা দেখে আমি ভীষণ ভয় পাচ্ছি অনেক ভয় করছে। ওকে দেখে আমি বুঝতে পারছিনা ও ঠিক কি করতে চাইছে। ওর এরকম চেহারা দেখে আমার মুখ থেকে কথা বের হচ্ছেনা। শুধু চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে। গলা কাঁপা অবস্থায় অনেক আস্তে করে ওর নাম টা উচ্চারণ করলাম
-আশফি?
ও তখন gun টা একদম আমার কপালের সাথে ঠেঁকিয়ে ধরলো। আমি ভয়ে চোখ টা বন্ধ করে ফেললাম। আমি ওকে চিনতে পারছিনা। ও কি সত্যিই আমার আশফি? (মনে মনে) ও এমন করছে কেনো?
২ মিনিট হয়ে গেলো আমি চোখ বন্ধ করে আছি। সামনে থেকে কোনো সাড়া শব্দ পাচ্ছিনা। আমি চোখটা খুললাম। দেখলাম ও দাত বের করে নিঃশব্দে হাসছে।
#আশফিঃ এতোটা করুণ অবস্থা হবে তোমার? কেউ যদি তোমার সামনে এভাবে তোমার কপালে গান ধরে তুমি একদম silently তার সামনে surrender করবে? আরও একটা বিষয় আমাকে খুব hurt করেছে। এখন পর্যন্ত তুমি আশফি কে বিশ্বাস করোনা। আমি তোমার সামনে গান ধরলাম আর তুমি ভয়ে চোখ টা বন্ধ করে ফেললে? এটা ভেবে নিলে যে আমি তোমাকে মেরে ফেলবো? মাহি তুমি যেদিন আমার গলায় ছুরি ধরেছিলে সেদিন কিন্তু আমি একটু ও ভয় পাইনি। কারণ আমি জানি তুমি আমার সাথে আর যাই করো আমাকে কখনো মারতে পারবেনা। সেটাই ছিল বিশ্বাস।
#মাহিঃ ওর এই ফাজলামি টা আমার একটুও ভালো লাগেনি। ও আমাকে অন্যভাবে বোঝাতে পারতো এই বিষয় গুলো। আমি তো সত্যি ভয় পেয়েছি। রাগে আমার শরীর জ্বলে যাচ্ছে। আমি ওর হাত থেকে গান টা কেড়ে নিয়ে ওকে ধাক্কা দিয়ে দেওয়ালের সাথে লাগিয়ে দিলাম। তারপর ওর বুকে গান টা ঠেঁকিয়ে ধরলাম।
-সেদিন ভয় পাওনি তো কি হয়েছে? আজকে ভয় পাবে। এভাবে আমাকে ভয় দেখানোর মজা তুমি এখন টের পাবে। এটা বলেই আমি ওর বুকের সামনে থেকে গান টা সরিয়ে চোখ টা বন্ধ করে অন্য পাশে এক নাগাড়ে গুলি চালাতে থাকলাম।
কি ব্যাপার গুলির শব্দ হয়না কেনো? তার মানে এটা খেলনা ছিল?
এই তুমি আমাকে এই খেলনা গান দিয়ে ভয় দেখাতে এসেছো? কি হলো ওভাবে হাসছো কেনো?
#আশফিঃ হাসবোনা তো কি করবো? তুমি যা করছো । আমি ওর হাতটা ধরে আমার বুকের কাছে টেনে নিয়েলাম। তারপর ওর কাছ থেকে গান টা নিয়ে ওটাকে লোড করে দেখালাম।
-এবার বুঝেছেন এটা খেলনা নাকি সত্যি?
#মাহিঃ ও তার মানে এখন নিশ্চই গুলি চালালে গুলি বের হবে?
#আশফিঃ Yes.My white angel. তাই বলে আপনি এখন এটাকে নিয়ে খেলনার মত করে খেলবেন না। না হলে যখন তখন murder হতে পারি।
#মাহিঃ আরে ধুর এটাকে নিয়ে আমি খেলবো কেনো? এটা নিয়ে তো এখন আমার নাচতে ইচ্ছা করছে। আচ্ছা ঐ song টা প্লে করো তো “Dil kiye goli chali nyano ki banduk se”( Raamleela movie’s song). আমি এখন ঐ গানটা তেই নাচবো।
#আশফিঃ আমার কাছে ঐ গান নেই। তুমি সিরিয়াসলি নাচবে?
#মাহিঃ ইয়েস মাই ডিয়ার। ঠিক আছে আমি আমার ফোনেই বাজাচ্ছি।
তারপর গান প্লে হলো….
Dil kiye goli chali nyano ki banduk se, bum bhi girenge aab pyar ki sanduk se…………
Dil kiye goli chali nyano ki banduk se, bum bhi girenge aab pyar ki sanduk se……
Haaa dil kiye goli chali nayno ki banduk se bum bhi girenge aab pyar ki sanduk se…. ishqiye tera mera ishqyaunge dhishqiyaoun ke dhishqiyaoun……. yaah ishqyaun waha dhishqiyaoun….
#আশফিঃ গান টার সাথে ওর নাচ টা ভালোই দেখাচ্ছে। নাচার মাঝেই বার বার ও আমার কাছে আসছে আর নাচছে। ভালোই এনজয় করছি। কিন্তু যেভাবে গান টা নিয়ে নাচছে তাতে তো যখন তখন……
আরে মাহি সাবধানে। ওর কাছে গিয়ে বলতে গেলাম। কিন্তু ও আমার কোনো কথাই শুনছেনা। পাগলের মতো নেচেই যাচ্ছে।
-মাহি???
#মাহিঃ আআআ( চিৎকার করে)
ইসসস আর একটু হলেই তো আশফির গায়ে গিয়ে লাগছিল। ভাগ্যিস মাথা নিচু করেছিল। নাচতে নাচতে চাপ লেগে গুলি বেরিয়ে গেছে। এর জন্যই অতিরিক্ত কিছু ভালোনা। ও আমার আমার সামনে চোখ রাঙিয়ে দাড়িয়ে আছে। আমি মাথা নিচু করে sorry বলে গান টা ওর কাছে দিয়ে দিলাম।
#আশফিঃ গান টা ওর হাত থেকে নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। ও ভয় ভয় চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছে। কিছু বললাম না। কারণ ভয় টা আমার থেকে বেশি ও পেয়েছে। আর এদিকে গার্ড গুলো গুলির শব্দ পেয়ে দৌঁড়ে এসেছে। তাদেরকে ইশারা করে চলে যেতে বললাম।তারপর ওর দিকে তাকিয়ে একটু হেসে দিয়ে গান টা ড্রয়ারে রেখে দিলাম। অবশ্য আমার হাসিটা ও দেখেনি। মাথা নিচু করেই আছে। আমি ওর সাথে কোনো কথা না বলে মামনি কে ফোন দিলাম। পৌছানোর কথা জানালাম। ওর সাথে ও কথা বলিয়ে দিলাম। তারপর ওকে বললাম,
– এইযে এখন যান গোসল করে আসুন অনেক Dhishqiyaoun করেছেন। আর একটু হলেই তো…….
#মাহিঃ sorry sorry sorry সোনা আমি সত্যি একদম বুঝতে পারিনি। আর তোমার কিছু হলে আমি নিজেকেও shoot করে দিতাম। ওকে জড়িয়ে ধরে কথা গুলো বললাম
#আশফিঃ হুম আমি বুঝেছি। এখন যাও ফ্রেশ হয়ে আসো ডিনার এর সময় হয়ে গেছে।
#মাহিঃ ওকে জানু……উমমমম
মমমমমম্মাহহহ। ওর গালে একটা লম্বা চুমু দিয়ে গোসলে গেলাম। তারপর আশফি ও ফ্রেশ হয়ে দুজন ডিনার করে নিলাম।
-আচ্ছা আশফি বেডরুমে আমার যে ছবি গুলো তুমি টাঙিয়ে রেখেছো সেগুলো তো মে বি ৩ বছর আগের ছবি আমার। আর এই ছবি গুলো তো আমাদের এলবাম এ ছিলোনা তাহলে তুমি পেলে কি করে?
#আশফিঃ এতক্ষণ ধরে এই গুলোই ভাবছিলে বুঝি।
#মাহিঃ হুম।বলোনা। আমার এই বিষয় টা একদমই মাথায় কাজ করছেনা। তখন তুমি দেশে আসোনি তাই না? আর একটা প্রশ্ন জানিনা তুমি ঠিক কিভাবে নিবে তবুও জানতে ইচ্ছা করছে।
#আশফিঃ বলো সমস্যা নেই।
#মাহিঃ তোমার আর আমার মাঝে তো অনেক বছরের distance ছিল। আমাদের দেখাও হয়নি এত গুলো বছরের ভেতর। তাহলে তুমি কিভাবে আমাকে এতো ভালোবাসতে পারলে?
#আশফিঃ অনেক দারুণ একটা প্রশ্ন করেছো। লাখ টাকার প্রশ্ন। তাহলে আপনাকে বলেই ফেলি। তোমাদের দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার পরেও বাবা তোমাদের খোঁজ খবর সবসময় রাখতো। এমনকি ২ জন বডি গার্ড তোমাদের জন্য ওখানে রেখেছিল। যারা তোমাদের সব সময় আড়ালে থেকে তোমাদের সিকিউরিটি দিতো। আর বাবা তো এমন কোনো দিন নেই যে তোমাদের কথা আমার কাছে গল্প করতোনা। সবসময় আমাকে বলতো যে ভাবেই হোক তোমাকেই যেনো আমি তার পুত্রবধূ করে আনি। আমি বাবা কে বলতাম যে তোমাকেই আমি আমার বৌ করে আনবো আর সেটা তুমি না চাইলেও। বাবার কাছে বাইনা করতাম তোমার ছবি দেখার জন্য। ওরা যেনো তোমার ছবি তুলে পাঠাই।এমন কি তুমি রেগুলার কি করো সেটাও দেখার জন্য বাইনা করতাম বাচ্চাদের মতো। বাবা ওদের বলে দিয়েছিল। ওরা তোমার ছবি তুলে দিতে পারলেও ভিডিও টা করতে পারতোনা। তারপর ওরা একদিন তোমাদের বাড়িতে যাই ইলেকট্রিক এর লোক হয়ে। সেখানে তোমার বেডরুম ছাড়া সব জায়গায় ক্যামেরা ফিট করে রেখে আসে। তারপর থেকেই তোমাকে প্রতিদিন আমি ভিডিও তে দেখতে পেতাম।
সব থেকে মজার ব্যাপার কি জানো প্রতিদিন তোমাকে দেখতে দেখতে তোমার সম্পর্কে এতো কিছু জেনে গেছিলাম যা তুমি নিজেও তোমার সম্পর্কে জানোনা।
#মাহিঃ Haaa এতদূর? তো কি কি জানো আমার সম্পর্কে যা আমি নিজেও জানিনা।
#আশফিঃ আচ্ছা তুমি বলো তো তুমি সব থেকে কোন টিভি শো গুলো বেশি পছন্দ করো?
#মাহিঃ আমি তো টিভির সামনে গেলে শুধু চ্যানেল ঘুরাই। বুঝতেই পারিনা কি দেখবো।
#আশফিঃ তুমি এ্যাকশন মুভি বেশি লাইক করো।
#মাহিঃ আরে হ্যা। এরকম মুভি পেলে তো আমার কিছুই লাগেনা।
#আশফিঃ আরও বলছি। তুমি তোমার নিজের চয়েস নিয়ে সবসময় কনফিউজড থাকো। কোথাও যেতে গেলে কি ড্রেস পরবে কিভাবে যাবে সেটা নিয়ে তুমি সবসময় মামনি কে জ্বালাতে। রাইট?
আর তুমি তো অনেক বোকা। তুমি যে কোল্ড কফি খাও সেটা আমি জেনেছি আরও ৩ বছর আগে। আমি আসার পর তুমি কাজ নিয়ে এতোটাই বিজি থাকতে যে কফি খাওয়ার সময় টুকু ও তুমি পাওনি। আর সেটা তোমার মাথায় একদম কাজ করেনি। আমি তোমাকে যেভাবে বলেছিলাম তুমি সেটাই বিশ্বাস করেছিলে।
#মাহিঃ তাইতো? তার মানে তুমি সত্যি আমাকে প্রতিদিন দেখতে? আর হ্যা আমাদের মনে হতো যে সবসময় কেউ আমাদের ফলো করে। ওরা তোমাদেরই লোক ছিল?
#আশফিঃ না। ওরা আমার লোক ছিলোনা। আমি দেশে যাওয়ার পর ওদের কাজ থেকে ছাড়িয়ে দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম আমি থাকতে ওদের আর কোনো প্রয়োজন হবেনা। কিন্তু সেটাই ছিল আমার বড় ভুল। ওরা ওদের লোক ছিল। ঐ ভুল টা না করলে সেদিন তোমার এত বড় ক্ষতি হতোনা।
#মাহিঃ আচ্ছা বাদ দাও তো। তার মানে আমার আশফি আমাকে প্রতিদিন দেখতো অথচ আমি ই তাকে দেখতে পাইনি কতগুলো বছর।
#আশফিঃ তো এখন দেখো। এখন তো সামনেই আছি।
#মাহিঃ আমি তো আপনাকে দেখিই। আপনিই তো আজকাল আমাকে সেভাবে লক্ষ করেন না। তাই আজকে আমি আপনাকে কিছু রুলস দিবো। যেটা প্রতিদিন আপনাকে মেনে চলতে হবে। তারপর আমি আমার রুলস গুলো বলা শুরু করলাম।
#আশফিঃ বাবা……… এই রুলস গুলো তো দেখি আমার রুলস গুলোর থেকেও বেশি কড়া।
ওর রুলস গুলোর মাঝে এরকম কিছু রুলস আছে যেমন ঘুম থেকে সকালে ওঠার আগে ওকে আমার আদর করে তারপর উঠতে হবে। বাইরে যতুটুকু সময় আমি থাকবো প্রতিটা সেকেন্ড আমি যেনো ওনার মুখ দেখি(ভিডিও কল) যাতে অন্য কোনো মেয়ে আমার চোখে না পড়ে। যাই হোক এই রুলস গুলো আমি খুবই এনজয় করবো। আর এখন যে রুলস টা মানতে হবে সেটা আর নিশ্চই আমাকে বলে বোঝাতে হবেনা।
#মাহিঃ এখানে আমি আর তুমি ছাড়া কেউ নেই তাই তোমাকে আমি এখন যা খুশি তাই করতে পারবো। নাও শুরু করো আমাকে আদর করা।
#আশফিঃ তারপর আর কি আমি আমার বৌ এর আদেশ মাথা পেতে নিলাম।
চলবে…..
সবগুলো পর্ব একসাথে