রোমান্টিক অত্যাচার পর্ব ৩
লেখিকা:Israt Jahan
ধারণা : Kashnir Mahi
.
আমিঃআমার তো Doubt হচ্ছে, একজন P.A এর ডিউটির মধ্যে আদৌ কি এমন ধরনের কাজ পড়ে??। আমি তার কাছে গিয়ে স্যুটটা পড়িয়ে দিলাম।
আশফিঃ তো বাকি যে কাজ গুলো আছে সেগুলো কাল আমাকে complete করে দিবেন।এখন আসতে পারেন।
আমিঃ বেরিয়ে আসলাম। উফফ…সারাটা দিন এই গন্ডার টার সামনে বসে কাজ করতে করতে আমি ক্লান্ত। তারপর অফিস থেকে বেড়িয়ে পড়লাম। সামনে গিয়ে ট্যাক্সি/সিএনজি ধরতে হবে তাই হাঁটতে শুরু করলাম। কিছুদুর যেতেই মনে হল কেউ আমার পেছন পেছন আসছে।পেছনে ঘুরে তাকালাম কিন্তু কাউকে দেখতে পেলামনা। মনের ভুল ভেবে সামনে একটা ট্যাক্সি পেয়ে উঠে গেলাম। বাসায় পৌঁছানোর পর ফ্রেশ হয়ে হালকা নাস্তা করে বিছানায় গিয়ে একটু গা এলিয়ে দিলাম।তারপর মা রুমে এসে আমার ওপর চিৎকার করে উঠলো।
মাঃ কিরে তুই কি দিন দিন নাস্তিক হয়ে যাচ্ছিস? আজ ২ দিন দেখছি ১ ওয়াক্ত নামায-কালাম পরছিস না,ব্যাপারটা কি?
আমি: মা…. সবকিছু হচ্ছে ঐ গন্ডারটার জন্য।এতো পরিমাণ কাজের চাপ দিচ্ছে যে আমি টয়লেটে যাওয়ার সময়টুকু পায়না।
মাঃ চুপ কর পাঁজি মেয়ে
আমি এসব কিছু শুনতে চাইনা।কাজের জায়গায় কাজ আর নামজ-কালামের জায়গায়……????
আমিঃ নামায-কালাম(উত্তর)।ঠিক আছে মা জননী তাই হবে এবার অন্তত একটু রেস্ট নিতে দাও!!
মাঃহুম নে।তুই তো এখন একটু আমাকেও সময় দিসনা।( মন খারাপ করে চলে গেলো।)
আমিঃ সত্যিই তো…. কাজের চাপে এখন মাকেও ঠিকমত সময় দেওয়া হয়না। বেচারি সারাদিন একা থাকে বাড়িতে। এতো বলি যে একটু পাশের বাসার আন্টির সাথে গিয়ে গল্প করে এসো সেটাও শুনবেনা।মাকে নিয়ে যে কি করি? ভাবছি এই Friday তে মাকে নিয়ে ঘুরতে বেরোবো।রেস্ট নিয়ে উঠে এশার নামায পড়লাম। তারপর মা খেতে ডাক দিল। খেতে বসে আমি আর মা কথা বলছি।
মাঃ মাহি কাল একবার আমার সাথে এতিমখানায় যেতে পারবি?
আমিঃ কিভাবে যাবো মা, কাল তো অফিস আছে নতুন এম.ডি. স্যার তো ছুটি দিবেনা।
মাঃ ওহ…আচ্ছা ঠিক আছে। তাহলে আমি একাই যাবো।
আমিঃ হুম।
আমি যেতে পারতাম কিন্তু ইচ্ছা করেই না বললাম।কারণ আমি জানি মা কেনো যাবে। প্রতি বছরে ২বার মা এতিমখানার বাচ্চাদের খাওয়ায়। আমার জন্মদিনে আর ঐ লোকটার জন্মদিনে। আমি বুঝিনা এতো কিছুর পরও মা ঐ লোকটাকে এখনও কিভাবে এতো ভালোবাসে।আমার বুদ্ধি হবার পর থেকে ঐ লোকটাকে কখনও বাবা বলে ডাকিনি। কিন্তু তবুও মাকে কখনো আমি বাঁধা দেইনি। কারণ সে জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছে। তাই মা যেভাবে ভালো থাকতে পারে আমি তাকে সেভাবেই ভালো থাকতে দেই।
খাওটা শেষ করে আমি শুতে চলে গেলাম। মায়ের কাছে গেলামনা। কারণ সে এখন একা থাকতে চাইবে। আজকে রাতে খু্ব শান্তির ঘুম দিলাম। তাই খুব ভোরে ঘুম ভাঙ্গলো। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ফযরের নামায আদায় করলাম। নামায শেষে মায়ের ঘরে গেলাম দেখলাম মা বসে কুর’আন শরীফ পাঠ করছে।আমি বসে শুনছিলাম। পাঠ শেষ হলে মায়ের সাথে বসে কিছুক্ষন গল্প করলাম। তারপর মা নাস্তা রেডি করলো আর আমি নাস্তা শেষ করে অফিসে চলে আসলাম। আর মা দুপুরে এতিমখানায় যাবে বাচ্চাদের খাওয়াতে।
ভাবছি বুল ডগ টা আজকে আর কি কি করাবে আমাকে দিয়ে। তারপর তার চেম্বারে গেলাম।
Good morning sir…
সে ফোনে কথা বলছিলো, আমার দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে তারপর বললেন… Morning.
কথা বলে শেষ করে…..
আশফিঃ Whai is this??? দেখতে পাচ্ছিলেন যে ফোনে কথা বলছিলাম। তাহলে কথা বলা শেষ হওয়ার পর আপনার Morning বলা উচিত ছিল?
আমিঃস্যার আপনিইতো বলেছিলেন যে আমি অফিসে এসে আপনার রুমে ঢুকেই আপনাকে যেনো morning বলি।
আশফিঃ আ…….( রেগে কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেলেন)
আযব……যান এখান থেকে।
আমিঃ ওকে স্যার
আশফিঃ দাড়ান।
বসুন, এখানে অফিসের কিছু রুলস রয়েছে যেটা কাল থেকে সবাইকে maintained করতে হবে। আর সেটা দেখার দায়িত্ব আপনার। আজকে সবাইকে জানিয়ে দিন।
আমিঃ ওকে।
স্যার…..???( কাগজটার দিকে তাকিয়ে)
ছেলে-মেয়ে উভয় স্টাফকেই ব্ল্যাক আর হোয়াইট প্যান্ট-শার্ট পরতে হবে??
আশফিঃYes… সবাইকেই। অবশ্য কিছু uncultured থাকতে পারে তাদের জন্য অনেকটা কষ্টকর হতে পারে কিন্তু তাও সবাইকে এগুলোই পরতে হবে।
আমিঃ কথাটা নিশ্চই উনি আমাকে বললেন। উনি কি ভাবেন আমি uncultured ।আমি কতটুকু cultured সেটা আমি ওনাকে দেখাবো। আমি বাইরে চলে এসে সবাইকে জানালাম।
– এটা কি করে সম্ভব? আমরা যারা ২/৩ টা বাচ্চার মা তারা কিভাবে এগুলো পরবো? (স্টাফ)
-ফরেইনার কান্ট্রি থেকে পড়াশোনা করেছেন। তার জন্যই আরকি এরকম…
আমিঃ হুম। আর তা ছাড়া আমাদেরও তো এগুলো শিখতে হবে। কারণ আমাদের কোম্পানির শাখা এখন বাইরের কান্ট্রিতেও থাকছে। তাদের সাথে ওঠা বসা করার জন্য আমাদের এগুলো শেখা জরুরি। এখন সবাই কাজে যাও কাল থেকে রুলস গুলো সবাই ফলো করবে। আমি আমার চেম্বারে এসে কাজ শুরু করলাম।
আশফিঃ যাক এই সুযোগে মহারাণীকে একটু মডার্ন ড্রেসে দেখতে পারবো।কবে যে এই মহারাণীকে আমার রাণী সাজে দেখতে পারবো
মাহি, আমার চেম্বারে আসুন (ফোনে)।
আমিঃ ৫ মিনিট ও হয়নি বসেছি। অসহ্য
ওনার রুমে ঢুকলাম.yes sir……
আশফিঃ আমার জন্য এক কাপ চা করুন।
আমিঃ শুরু হয়ে গেছে ওনার হুকুম। ইচ্ছে করছে মাথাটা একদম ফাটিয়ে দেই। বকতে বকতে চা টা বানিয়ে ফেললাম।
এই নিন ধরুন।
আশফিঃহুম দিন।উমমম….. এটা কি চা নাকি গ্লুকোজ? এতো মিষ্টি কেনো? ধরুন। আপনি কি মেয়ে মানুষ নাকি অন্যকিছু, এক কাপ চা ও ঠিকমত বানাতে পারেননা…..?
আমিঃ কি? এতো বড়ো কথা এবার আমার নারিত্ব নিয়ে কথা বলেছে তাই আর চুপ করে থাকতে পারলামনা।
আপনার কি কোনো Doubt আছে, থাকলে clear করতে পারেন। কথাগুলো বলেই জিহ্বা কামড়ে ধরলাম।হাই হাই এটা আমি কি বলে ফেললাম। ছি ছি ছি। স্যার আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।লজ্জাতে চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসলাম।
আশফিঃ ..মেয়েটা কি বলে গেলো। থাকলে clear করতে পারেন(রিপিট করে)।হাহাহাহা।ও এখনো বাচ্চাই আছে।
আমিঃ ছিছিছি এটা আমি কি বলে ফেললাম। সালার গন্ডারটার জন্য আমার মথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বলতে বলতে চায়ের কাপে চুমুক দিলাম।(অন্যমনস্ক হয়ে)উমম…ছিঃ ওনার খাওয়া চা আমি খাচ্ছি!!! আসলেই তো চা টা একদম শরবত ই মনে হচ্ছে। সব ওনার জন্য। তখন ওনাকে বককে বকতে ৪ চামচ চিনি দিয়ে ফেলেছি। ও খোদা ওনার জন্য আমি পুরো পাগল হয়ে যাবো।
চলবে….
সবগুলো পর্ব একসাথে