এক সমুদ্র প্রেম!
লেখনীতে: নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
(৪৭)
উজ্জ্বল আলোয় তখন ঝলমলে বাড়ির ছাদ। কান ফাটানো মিউজিক আর অসাধারণ সুরের “Sajan sajan ” গান,আশেপাশে মানুষের কোলাহল,একে ওকে ডাকা-ডাকি, হাসাহাসি, এই এত সব আওয়াজের মধ্যেই নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল পিউ। তার অক্ষিকোটর অচল,স্তম্ভিত। ওষ্ঠযূগল তিরতির করে কাঁপছে। নিদারূন কম্পনে মেতেছে বক্ষপট। কপাল বেঁয়ে ঘাম এসে কান ছুঁলো। তার সূক্ষ্ণ ছোঁয়া দেখা গেল নাকের ডগায়। ফোন ধরে রাখা আঙুল গুলোও ঠকঠক করে কাঁপে। তানহা ফোস করে শ্বাস ফেলে দুপাশে মাথা নাড়ল। পিউয়ের এসব হাবভাব তার পরিচিত। কিছু বলতে যাওয়ার আগেই ওর হাত থেকে ফোনটা খসে পরতে নেয় ফ্লোরে। তানহার বুক ছ্যাত করে ওঠে। হকচকিয়ে কোনও মতে ধরে ফ্যালে। প্রাণের চেয়েও প্রিয় মোবাইল ফোন কে বাঁচাতে পেরে বুক ভরে শ্বাস নেয়। এই ফোন,মায়ের কানের কাছে তার অক্লান্ত ঘ্যানঘ্যানানির ফল। এটা নষ্ট হলে ভার্সিটি ওঠার আগে আর জুটবেনা কপালে। মেয়েটা পিউয়ের প্রতি একটু বিরক্ত হলো বটে। একটা মেসেজ দেখে এত কাঁপা-কাঁ*পির কী হলো?
বলল,
‘ সারাদিন ভালোবাসি ভালোবাসি করে লাফাস,অথচ ওদিক থেকে কোন ইঙ্গিত এলেই মৃগী রোগীর মত ছটফট করিস কেন?’
পিউ দেয়ালে দূর্বল দেহটা ঠেস দিয়ে দাঁড়াল। অদ্ভুত গলায় হাঁস-ফাঁস করে বলল,
‘ আমার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না! ধূসর ভাই,ধূসর ভাইয়ের মনে এত প্রেম? এত? ‘
তানহা হাসল। কাধ দিয়ে ওর কাধে ধাক্কা মেরে বলল,
‘ গরম পরছে তো,ঘামের মত ধূসর ভাইয়ের প্রেম ফোটায় ফোটায় বাইরে আসছে।’
পিউ মাথা নামিয়ে নিলো। সিমেন্টের খাঁজকা*টা ফ্লোরের দিকে চেয়ে বলল,
‘ এমন প্রগাঢ় অনুভূতি,এতটা ভালোবাসা,এতটা চাওয়া কীভাবে লুকিয়ে রাখেন উনি? কেন সামনে এসে বলে দিচ্ছেন না? এই অন্তরালে, লুকিয়ে ভালোবাসার মানে কী?’
তানহা হাত নেড়ে বলল,
‘ বলে দিলে তো খেল খতম হয়ে গেল। ধূসর ভাই হলেন ইউনিক মানুষ। তোকে নাঁচানোর এত দারূন বুদ্ধি হাতছাড়া করাটা বোকামো হবে। আর এমন বোকামো কি ওনাকে মানায়?’
পিউ উদাস কণ্ঠে বলল,
‘ জানিনা। ওনার মনে কী আছে উনিই ভালো জানেন। মাঝেমাঝে মনে হয় আমাকে চেনেনইনা। এমন ভাব করেন যেন খুব কাছে দাঁড়িয়ে থাকা আমিটা তার অপিরিচিত। চোখের সামনে আমাকে দেখেও ভাণ করেন কেউ নেই। আবার হুট করে একদম কাছে চলে আসেন। এমন এমন কথা বলেন আমারই কথা হারিয়ে যায়। ওনার অতর্কিত কাছাকাছি আসার চমকে দিশেহারা হয়ে পরি। নিতে পারিনা। শ্বাসবন্ধ হয়ে আসে। যেন এই,এক্ষুনি ম*রে যাব।’
‘ তোদের এই অদ্ভূত প্রেমের রসায়ন বোঝার মত ভালো ছাত্রী আমি নই। এমনিতেই ইংরেজিতে আমার অবস্থা করূন। এত বড় একটা ইংরেজি কথার বাংলা করতে গিয়ে আমার কী অবস্থা হচ্ছিল জানিস? দাঁত খুলে পরছিল প্রায়। যখন বুঝলাম কী লেখা ছুট্টে এসেছি ভাই। আর দ্যাখ উনি কী চালাক,স্টোরি দিয়েছেন ভালো কথা,তোকে হাইড করেই দিলেন? মানে সাপও মরবে লাঠিও ভাঙবেনা টাইপ বুদ্ধি! ওনার তো বালিশ না,ইট মাথায় দিয়ে ঘুমানো উচিত।’
পিউ মুচকি হাসল। কণ্ঠে লজ্জা ঢেলে বলল,
‘ ওনার যে শাড়ি এত প্রিয়, আগে জানলে বছরের বারোটা মাসই আমি শাড়ি পরে থাকতাম।’
তানহা ভ্রু কপালে তুলে ফেলল।
টেনে টেনে বলল,
‘ বাবাহ! পারা যায়না। তোদের এই মাখোমাখো প্রেম দেখলে আমার মত সিঙ্গেল মানুষের বুকে ব্য*থা করে।’
পিউ জবাব দিলো না। তার হরিনী দুই লোঁচন তখনও নীচে। ডান পায়ের বুড়ো আঙুলটা ফ্লোর খোঁচাচ্ছে। দুপাশে গালের মাংস ফেঁপে উঠেছে ক্রমে। র*ক্তলাল চোখা নাকে বিন্দু বিন্দু ঘাম। ওপরের ঠোঁটটা চেপে বসেছে নীঁচের ঠোঁটে। চোখে-মুখে স্পষ্ট কুন্ঠা দেখে তানহা ভ্রু কুঁচকে বলল,
‘ একটা সামান্য পোস্ট দেখে এত লজ্জা পাচ্ছিস পিউ? তোকে দেখে মনে হচ্ছে এক হাত ঘোমটা দিয়ে বাসর ঘরে বসে আছিস,আর ধূসর ভাই দরজা আটকে এগিয়ে আসছেন ফষ্টি-নষ্টি করার জন্য।’
পিউ হতভম্ব চোখে চাইল। নাক-মুখ কুঁচকে বলল,
‘ ছিহ! অশ্লীল মেয়ে!’
‘ হ্যাঁ সত্যি বললে দোষ! ‘
পিউ সোজা হয়ে দাঁড়াল।
‘ হয়েছে, এত সত্যি বলতে হবে না। চল,আপুকে হলুদ মাখিয়ে আসি।’
**
উল্টোপথ দিয়ে মারিয়াকে আসতে দেখেই থেমে গেল সাদিফ। কেন যেন মনে হলো,মারিয়া নয়, বিপদসংকেতের সেই লাল চিহ্নটা এগিয়ে আসছে তার দিকে। সতর্কতায়, চট জলদি এপাশ ঘুরে হাঁটা ধরল সে। কিন্তু বিধিবাম,মারিয়া দেখেই ডাক ছুড়ল,
‘ এই এই শুনুন!’
ছেলেটা থমকাল। চোখ বুজে, জ্বিভ কে*টে দাঁড়িয়ে পরল। দেখে ফেলেছে রে!
মারিয়ে কাছে এসে দাঁড়াতেই হাসিহাসি মুখ করে ফিরে চাইল। সে দুই ভ্রু গুঁটিয়ে বলল,
‘ আমাকে দেখেই চলে যাচ্ছিলেন কেন?’
সাদিফ আকাশ থেকে পরার ভাণ করল,
‘ কই? আমিত দেখিনি আপনাকে। দেখেছিলাম না কি?’
মারিয়া সন্দেহী চোখে চাইল। সাদিফ নিষ্পাপ মুখ করে বলল ‘ সত্যিই দেখিনি। ট্রাস্ট মি!’
তাও কপাল শিথিল হলো না তার। সাদিফ বলল,
‘ আজকাল পৃথিবী থেকে কি বিশ্বাস জিনিসটা উঠে গেল না কি? কেউ সহজে বিশ্বাসই করেনা দেখছি। এমন ভাবে চেয়ে আছেন,মনে হচ্ছে আমি….. ‘
আমি’র পর আর কথা খুঁজে না পেয়ে থেমে গেল । সে যে সত্যিই মারিয়াকে দেখেই পালাচ্ছিল এটা ওকে বুঝতে দেয়া যাবে না। কিন্তু কেন পালাচ্ছিল? মেয়েতো ভালো! দোষ ওর নিজের ভেতর। কে বলেছিল এই মেয়েকে এত সাজগোজ করতে! আর করেছেই বা,এত সুন্দর লাগতে হবে কেন? এতে যদি সে একটু মুগ্ধ চোখে তাকায়,অপরাধটা কার? অবশ্যই ছেলে যে তার। মেয়েদের দোষ তো দুনিয়ায় কেউ ধরেইনা। কিন্তু এতে পিউকে ঠকানো হবে। যা তার পক্ষে ইহকালে সম্ভব নয়।
তবে গলার দাপুটে ভাবটা বেশিক্ষণ টিকল না সাদিফের। ওই আমি’র পরেই কথা ভুলে আমতা-আমতা করল। মারিয়া বুকের সাথে দুই হাত বেঁধে বলল,
‘ বিষয়টা তা নয়। আমার একটা প্রশ্ন ছিল,অনুমতি দিলে করতাম।’
‘জি জি নিশ্চয়ই। ‘
‘,কাল আপনি নিজেই আমাকে তুমি করে বললেন। আমাকেও বলতে বলেছেন। যদিও আমার মুখে আসছিল না। এখনও আসছেনা। কিন্তু আপনিই তো শুরু করেছিলেন। এমনকি কাল যতক্ষণ আমরা একসাথে ছিলাম আপনি তুমি করেই ডেকেছেন আমাকে। তাহলে এই তুমিটা আবার আজকে আপনি হয়ে গেল কেন?’
সাদিফকে বিচলিত দেখাল না। বরং চমৎকার করে হাসল। তকতকে, শোধিত দন্তপাটির উন্মুক্ত হাস্যে মারিয়ার বক্ষপিঞ্জর দুলে ওঠে পুনরায়।
সাদিফ বলল,
‘ আসলে, কিছু সম্পর্ক আছে যেখানে শুধুমাত্র আপনি মানায়। বাকী সব খাপছাড়া, বেমানান। আমার কেন যেন মনে হচ্ছিলো আপনাকে তুমি করে বলার চেয়ে আপনি করে বললে বেশি শ্রুতিমধুর লাগবে। তাই জন্যে এক্সপিরিমেন্ট করলাম,দেখলাম না,আমিই ঠিক। আপনিটাই বেশি ভালো। আমাদের সম্পর্কে এটাই সঠিক এবং সুন্দর। আর সম্বোধনেই বা কী আসে যায় বলুন ম্যালেরিয়া,বন্ধুত্বটা তো একইরকম আছে,তাইনা?’
মারিয়া দুদিকে ঠোঁট টেনে হাসল। একরকম জোর করে ভেতর থেকে টেনে আসা হাসি। সাদিফের কণ্ঠে তুমিটা যে তার অমৃতের মত লাগে কী করে বোঝাবে। আপনি শুনলেই হৃদয়ে ব্য*থা লাগছে তার। মনে হচ্ছে আবার ঠেলে দিচ্ছে দূরে। কাল যতবার তুমি তুমি বলেছে,হাওয়ায় ভাসছিল সে। ভেতর ভেতর দীর্ঘশ্বাস ফেলল মারিয়া। কপাল খারাপ হলে যা হয়! মিহি কণ্ঠে স্বায় মিলিয়ে বলল,
‘ আচ্ছা যেটা আপনার খুশি।’
সাদিফ হৃষ্টচিত্তে বলল ‘ থ্যাংক্স!’
সে ঠিক জানত,মারিয়া প্রশ্নটা করবে। তৈরী ছিল একদম। ওই জন্যেইনা গড়গড় করে সাজানো গোছানো কথাগুলো বলতে পারল। অদৃশ্য হস্তে নিজের পিঠ চাপড়াল সাদিফ। বাহবা দিল, ‘ ইউ আর আ জিনিয়াস সাদিফ! ভেরী গুড!’
‘ তা এভাবে লুকিয়ে বেড়াচ্ছিলেন কেন? ‘
সাদিফ অবাক হয়ে বলল,
‘ লুকিয়েছি? কখন?’
‘ এই যে এতক্ষন। দেখলাম কেমন কেমন করছিলেন!আমি কিন্তু ঠিকই খেয়াল করেছি। কিছু কি হয়েছে?’
সাদিফের চেহারা মসৃন হলো তৎক্ষনাৎ। বুঝতে পারল মারিয়া কী বলছে। মৈত্রীর নজর থেকে বাঁচার জন্য গা বাঁচিয়ে চলছিল সেটার কথাই হয়ত। ভীষণ লম্বা শ্বাস ফেলল সে। মুখমণ্ডলে দুঃখ ফুটিয়ে বলল,
‘ আসলে,বিষয়টা আপনি কীভাবে নেবেন বুঝতে পারছিনা। বলা উচিত হবে কী না তাও জানিনা। আ’ম কোয়াইট কনফিউজড।’
মারিয়া মিষ্টি গলায়, আশ্বস্ত করল,
‘ এত দ্বিধাদ্বন্দ্ব বন্ধুতে থাকতে নেই। আপনি নির্দ্বিধায় বলুন। ‘
সে সত্যিই ভরসা পেল। চেহারায় ফুটল তার পরিষ্কার,নির্ভেজাল চিহ্ন। প্রস্তুতি নিলো সবটা বলে দেওয়ার। এরপর কণ্ঠ চে*পে বলল,
‘ স্টেজের ঠিক বাম পাশে একটা মেয়েকে দেখছেন? হলুদ ডালা শাড়ি পরে দাঁড়ানো। ‘
মারিয়া সাদিফের কাধের ওপর থেকে তাকায়। এক পলক দেখে জানায়,
‘ হ্যাঁ মৈত্রী। ‘
‘ ও হ্যাঁ আপনারা তো পরিচিত। ভুলে গিয়েছিলাম।’
মারিয়া চিন্তিত কণ্ঠে বলল, ‘ কিছু হয়েছে?’
‘ কী হয়নি তাই বলুন! মেয়েটা বর্ষার বিয়ে থেকে আমার পেছনে লেগেছে। ওখানে যা একটু সীমার মধ্যে ছিল কিন্তু এখন একেবারেই লাগাম ছাড়িয়ে যাচ্ছে। যখনই দেখছি তাকিয়ে আছে,হাসছে,অকারণে লজ্জা পাচ্ছে। সেজেগুজে সামনে এসে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করছে কেমন লাগছে? ইটস ইরিটেটিং মি! নিতে পারিনা এসব আমি। মেয়েরা এরকম হয়?’
সাদিফ দম ফেলল। তার চোখেমুখে তিতিবিরক্তির ছাপ। মারিয়া বিস্মিত হয়ে চেয়ে রইল কিছুক্ষণ। কথা গুলো হজম হতে বিলম্ব হলো। ফের তাকাল মৈত্রীর পানে। হ্যাঁ একটু পরপর এদিকেই তাকাচ্ছে ও। ওই মুহুর্তে প্রচন্ড খারাপ লাগল তার। বর্ষার বিয়ে,তারপর এই বাড়িতে এসে দুজনের একটা ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। কিন্তু তাই বলে ভালোবাসার মানুষের ভাগ দেয়া যায়?
সাদিফ বলল,
‘ আমি জানিনা কী করব? মেহমান দেখে কিছু বলতেও পারছিনা।’
মারিয়ার নিজেকে সামলানোর ক্ষমতা প্রবল। প্রবল তার অভিব্যক্তি চা*পা দেয়ার যোগ্যতা। ঠেলেঠুলে হাসি বের করে বলল,
‘ আসলে এটা স্বাভাবিক। মৈত্রীর বয়সই বা কত? এই বয়সে মেয়েরা ফ্যান্টাসিতে ভুগবেই৷ চোখের সামনে হ্যান্ডসাম,সুদর্শন ছেলে দেখলে একটু আধটু পেছনে লাগা দোষের কিছু নয়।’
সাদিফ ভ্রু বাঁকাল। সন্দিহান কণ্ঠে বলল,
‘ আমি সুদর্শন?’
‘ হ্যাঁ। কোনও সন্দেহ?’
সাদিফ ভাবার নাটক করে বলল,
‘ কিন্তু কদিন আগেই কে যেন আমাকে বলেছিল,আমাকে দেখতে ব্রয়লার মুরগির মতো? আমার গায়ের রং ফ্লোরে চুন ঢেলে দিলে যেমন লাগে তেমন! ‘
মারিয়া হেসে ফেলল। স্বীকারোক্তি দিলো,
‘ ওটা মজা করেছিলাম।’
‘ যাক! আপনার প্রসংশা পেয়ে ধন্য হলাম। কেমন গর্বে বুকটা ফুলে উঠছে।’
মারিয়া হাসল। আড়চোখে আরেকবার মৈত্রীকে দেখল। মেয়েটা এখনও চেয়ে। সাদিফ নিষ্পৃহ স্বরে বলল,
‘ কিন্তু ওনার ফ্যান্টাসি দিয়ে আমার কাজ নেই ম্যালেরিয়া। আমি ওনাকে পছন্দ তো দূর,কিছুই করিনা। এসব এক তরফা। আমি যে বিরক্ত হচ্ছি ওনার বোঝা দরকার।’
‘ তাহলে বরং ওকেই গিয়ে বলুন।’
সাদিফ সচেতন চোখে তাকাল,’ কী বলব?’
‘ যেটা আপনার মনে আছে সেটাই। ওর এই ভালো লাগা আস্তে আস্তে বাড়বে। আপনি চুপ থাকলে আরো প্রখর হবে। তখন বিষয়টা সামলানো জটিল হতে পারে। আপনি বরং ওকে গুছিয়ে ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিন। ম্যাচিউর মেয়ে,বুঝবে আশা করি।’
সাদিফ একটু ভেবে বলল, ‘ সত্যিই বলব?’
‘ যদি আপনার মনে হয় বলা উচিত তবেই,আমার কথায় নয় অবশ্যই।’
‘ আচ্ছা বেশ। আমি এমনিতেই নিতে পারছিলাম না। বলি বরং।’
মারিয়া শুভ্র হাসল, ‘ অল দ্য বেস্ট।’
সাদিফ বুক ফুলিয়ে এগিয়ে গেল। তাকে নিজের দিকে আসতে দেখে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াল মৈত্রী। এতক্ষণ কি তবে ওকেই নিয়েই কথা বলছিল দুজন? এদিকে মারিয়া পরেছে চিন্তায়। মৈত্রী দেখতে সুন্দর! বাবা মাকে নিয়ে একটা স্বচ্ছল পরিবার ওর। সাদিফের যদি ওকেই পছন্দ না হয়,তবে সে তো কোন ছাড়! ওর তো বাবাও নেই,বাবার টাকাও নেই। আর না আছে মাথা গোঁজার মত একটা দীর্ঘস্থায়ী ঠাঁই। এমন অবস্থা,যদি কাল বাসা ভাড়া দিতে না পারে তবে সেটাও থাকবে না। সাদিফের হাজারটা কারণ আছে তাকে প্রত্যাখান করার। মারিয়ার বুক মুচড়ে উঠল ব্যথায়। পরমুহূর্তে ভাবল, প্রত্যাখানের প্রসঙ্গ তো তখন আসবে,যখন সে জানাবে ভালোবাসার কথা। সাদিফ কখনও জানবেইনা ওর মনে কি আছে! ভালোবাসলে যে বলতে হবে,তাকে পেতে হবে এমন তো নয়। ওর নিজের অনুভূতি গুলো না হয় বাকীটা জীবন ওর একান্ত নিজেরই থাকবে। এমনিতেই বিয়ে,সংসার এসব তার জন্য নয়। তাহলে মাকে দেখার যে কেউ থাকবে না। মারিয়া সাদিফের থেকে চোখ ফিরিয়ে আরেকদিক তাকাল। সঙ্গে সঙ্গে ভরে উঠল তা। গড়িয়ে পরার আগেই ব্যস্ত হাতে মুছে নিল। সবার জীবনে পূর্নতা আসেনা,কারো জীবন শূন্যতায় সুন্দর!
সাদিফ মাঝপথে দাঁড়িয়ে পরল হঠাৎ। অচিরেই বিবেকবুদ্ধি কেমন জাগ্রত হলো। মৈত্রীর প্রতি মায়া লাগল। এই যে মেয়েটা তার বোনের বিয়েতে এসেছে,সেজেছে,আনন্দ করছে এখন এসব কথা বললে তো ক*ষ্ট পাবে। তার চেয়ে বরং আজ থাক! বিয়ে মিটে গেলে আরামসে বলবে। মজা করছে যখন, করুক। কাল থেকে যেমন দাঁত চেপে হজম করছিল,আর একটা দিন না হয় করবে। মায়া-মমতার কর্ণধার ছেলেটা এইসব ভেবে আর ওদিকে গেল না। ওখান থেকেই ফিরে বন্ধুদের দিকে চলে গেল। মৈত্রীর মুখটা কালো হয়ে এলো তাতে। ব্যাকুল চোখদুটো নিভে গেছে হতাশায়। সাদিফ নিশ্চয়ই কিছু বলতে চাইছিল। তাহলে চলে গেল কেন এভাবে?এখন না শোনা অবধি শান্তি পাবে না যে!
শান্তা এসে, ফোন হাতে দিয়ে গেল পুষ্পর। সবার হলুদ মাখানোর মধ্যেই ইকবাল ফোন করছে। আনসেভ নম্বরটা এখন সেভ হয়েছে। লুকোচুরির দিন শেষ কী না! পুষ্পর চারপাশ ঘিরে তার গুরুজনদের উপস্থিতি। এর মধ্যে ফোন ধরে কথা বলবে কী করে? ইকবালটাতো আর ভদ্র-সভ্য মানুষ নয়। নিদারুন বেহায়া! যা সব ঠোঁট কাটা কথাবার্তা বলে,শুনলেই কান দিয়ে ধোঁয়া বের হয় তার। পুষ্প দোনামনা করে ধরল না। সাইলেন্ট বাটন চেপে রেখে দিল। ইকবাল থামল না,আবার ফোন করল । পুষ্প ঠোঁট উলটে রিসিভ করে কানে ঠেকাতেই বলল, ‘ কী লিপস্টিক পরেছিলে মাই লাভ? এত মিষ্টি কেন? মনে হচ্ছিল চকলেট খেয়েছি।’ পুষ্পর ঠোঁট আলাদা হয়ে গেল। বক্ষঃস্থল ধ্বক করে ওঠে। ভূপৃষ্ঠে মিশে যায় কুণ্ঠায়। জানতো এরকম কিছুই বলবে। সবার মধ্যে ধমক ও দিতে পারল না। হাঁসফাঁস করে লাইন কেটে বন্ধ করে রাখল।
সুমনা বেগম পাশ থেকে বললেন,
‘বর একটা পাচ্ছিস,কী সাংঘাতিক বউ পাগল হবে ভাবছি! ‘
পুষ্প দুষ্টু হেসে বলল,
‘ আমার চাচ্চুর থেকেও বেশি?’
সুমনা হেসে ফেললেন। বললেন,
‘ এখনকার ছেলেপেলে না? চাচাদের ছাড়িয়ে যাবে দেখিস। এই বউ পাগল বর নিয়ে বউদের একদিকে যেমন শান্তি,অন্যদিকে অশান্তিও আছে।’
‘ কীরকম?’
‘ এখন বলব না। কাল বিয়ে হোক,নিজেই বুঝবি।’
**
পুষ্পকে মন ভরে হলুদ লাগিয়েছে পিউ। তানহা দিয়েছে সঙ্গ। এরপর দুজন ছাদের পেছন দিকে যায়। যেখানটায় ফুলের টব বসানো সেখানে আঁচল বিছিয়ে বসে পরে তানহা। পিউ হয় তার ফটোগ্রাফার।
এর মধ্যেই এক ঝাঁক লোক সঙ্গে করে ছাদে পা রাখল ধূসর। তার আগমনটাই অন্য রকম। অতগুলো ছেলে ছোকড়ায় নিমিষেই জায়গা ভর্তি হয় ছাদের। একটারও পাঞ্জাবি ফাঁকা নেই। চিবুক,কলার সব আবিরে ভর্তি। সোহেলও আছে এর মধ্যে। ইকবালের গায়ে হলুদ থেকে ফিরেছে ওরা। ওরটা বিকেলে আর পুষ্পরটা হচ্ছে রাতে। একবারে দুটো বিয়ে বাড়িতেই তারা নিমন্ত্রিত।
ধূসরকে দেখেই রুবায়দা বেগম বললেন ‘ হ্যাঁ রে ধূসর! ,তুই কই ছিলি বলতো? সবাই কত খুঁজছিলাম জানিস? বোনের বিয়ে,একটু কাছাকাছি থাকবিনা?’
সে উত্তর দেয়ার আগেই স্টেজ থেকে পুষ্প ডাক ছুড়ল ‘ ভাইয়া! ভাইয়া!
সাউন্ড সিস্টেম বন্ধ থাকায় ডাক পৌঁছে গেল সবখানে। পিউ বুঝে ফেলল ভাইয়াটা কে! তানহার ছবি তোলা চূলোয় রেখে ছুটে স্টেজের কাছে এসে গুঁটিশুটি মে*রে দাঁড়াল। এতক্ষন যেভাবে উড়ছিল ভদ্র মেয়ে হয়ে গেল ওমনি।
ধূসর এগিয়ে আসে পুষ্পর কাছে। পুরোটা সময় পিউ তন্ময় হয়ে চেয়ে রয়। মনে পড়ে সেই পেট ছোঁয়ার দৃশ্য। সমস্ত শরীর আরেকবার শিউরে ওঠে ফের। আনমনেই হাতটা পেটের কাছে জায়গা পায়৷
ধূসর কাছে এসে দাঁড়াতেই পুষ্প উত্তেজিত গলায় বলল,
‘ আপনি কোথায় ছিলেন? আমাকে হলুদ মাখাবেন না? কত কষ্ট করে এক গাল ফাঁকা রেখেছি দেখুন।’
বাম গাল টা দেখাল ও। সত্যিই তাই। তার ডান গাল,কপাল, থুত্নী হলুদে জুবুথুবু হলেও বাম গাল সম্পূর্ন ফাঁকা।
পাশ থেকে জবা বললেন,
‘ কাউকেই হলুদ মাখাতে দিলো না জানিস! লাগাতে এলেই হুশিয়ার করে বলছে,এখানে ধূসর ভাই হলুদ দেবেন। তোমরা বাকী সব খানে মাখাও।’
পুষ্প লজ্জা পেয়ে গেল। তার জীবনের এই বিশেষ দিনটার জন্য যার অবদান সবচেয়ে বেশি তার জন্যে এ আর এমন কী! ধূসর ভাইয়ের পায়ে লুটিয়ে পরলেও কম হবে।
ধূসর হাসল। যেই হাসিতে দন্তপাটি বাইরে আসেনা। বাটি থেকে হলুদ নিয়ে গালে ছুঁয়ে বলল ‘ সুখী হ।’
পুষ্পর কী হলো কে জানে! ভীষণ আবেগে নড়ে উঠল হঠাৎ। দুহাতে মুখ ঢেকে হুহু করে কেঁদে ফেলল। ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল সকলে। পরপর বুক ভারী হয়ে এলো। ধূসরের হাসিটুকুও বিলীন। মুছে গেছে পিউয়ের লজ্জা। তার চোখ ছলছলে হয়ে ওঠে। ক্ষনিকের জন্য স্থগিত হয়ে পরল, বিয়ের উৎসব আনন্দ। আঁচলে চোখ মুছলেন মিনা বেগম । ব্যথাতুর দীর্ঘশ্বাস ফেললেন আমজাদ। ভাইয়ের কাঁধে হাত রেখে নিরবে সান্ত্বনা যোগালেন আফতাব। কিন্তু এই সান্ত্বনা নিরর্থক। সবাই জানে, পুষ্প আর মাত্র দুটো বছরের অতিথি। তারপর সারাজীবনের জন্য মেয়েটার ঠিকানা হবে অন্য কোথাও।
পিউয়ের ঘরে একটা পা রাখার জায়গা নেই। বিছানা থেকে ফ্লোর বাদ নেই কিছু। যে যেভাবে পেরেছে, কাথা-বালিশ বিছিয়ে শুয়ে পরেছে একেকজন। এমনকি পিউ নিজেই তার শয্যায় জায়গা পেলো না। ছেড়ে দিয়েছে শান্তা আর সুপ্তিকে। দুজনের কেউই মেঝেতে শুতে পারেনা। ঠান্ডার প্রচুর ধাঁত ওদের। দেখা গেল কাল বিয়েতে সর্দি -হাঁচিতে একাকার করে ফেলছে। এর চেয়ে একটু আত্মত্যাগ করা ভালো।
সবাই যখন ঘুমিয়ে পিউ নিরন্তর মোচড়া-মুচড়ি করছে। একটু যদি ঘুম আসে! অথচ পাশেই নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে তানহা। হুশ-জ্ঞান কিচ্ছু নেই। এই মুহুর্তে ওকে চ্যাংদোলা করে পুকুরে ফেলে দিলেও টের পাবেনা।
পিউ ওর ঘুমটাকে প্রচণ্ড হিং*সে করছে এখন। ও ঘুমাচ্ছে,তাহলে তার কেন ঘুম আসছেনা?
অবশ্য আসবেই বা কী করে? আজ সারাক্ষণ ধরে সেই কথা, আর সেই দৃশ্য ঘুরছে মাথায়। এই যে এখনও ঘুরছে। পিউয়ের চোখের সামনে ফের ভেসে ওঠে ধূসরের শাড়ি ভেদ করে হাত প্রবেশ করা,খিঁচে তাকে কাছে টানা। মেয়েটা চোখ বুজে নেয়,তারপর আবার তাকায়। বালিশে মুখ চেপে হাসে।
হঠাৎ দেখল কেউ একজন বাইরে যাচ্ছে। ভালো করে তাকিয়ে বুঝল,ওটা মারিয়া। পিউ জিজ্ঞেস করল,
‘ কিছু লাগবে আপু?’
নিস্তব্ধ ঘরে হঠাৎ কথা বলায় মেয়েটা চমকে গেল। পরের দফায় ধাতস্থ হয়ে বলল
‘ তুমি জেগে? আমি না আসলে ওয়াশরুমে যাব। রুমেরটায় যাওয়ার তো উপায়ই নেই। কার না কার গায়ে পা পরে! ‘
‘ ও আচ্ছা, আমি আসব?’
‘ না না লাগবে না,তুমি ঘুমোও।’
মারিয়া বেরিয়ে গেল। মৈত্রী ঘুম ঘুম কণ্ঠে বলল,
‘ কী ব্যাপার পিউরানি,ঘুমোচ্ছেনা যে!”
পিউ ওর দিকে ফিরে শুয়ে বলল,
‘ ঘুম আসছে না আপু। কে যেন চুরি করেছে আমার ঘুম। বিনিময়ে দিয়ে গিয়েছে বিনীদ্র রজনী।’
মৈত্রী চোখ মেলে তটস্থ কণ্ঠে বলল, ‘ পিউ,তুমি কি প্রেম করছো?’
পিউ আক্ষেপের সুরে বলল ‘ আর প্রেম! না আমি সিঙ্গেল, না আমি ডাবল। ঝুলে আছি মাঝখানে।’
মৈত্রী আগ্রহভরে বলল,’ সেটা কী রকম! আচ্ছা কাউকে পছন্দ করো তুমি?’
আগে হলে পিউ বলতোনা। কিন্তু এখনতো পুষ্প ও জানে,আর ধূসরের থেকেও মাঝে মাঝে সবুজ সংকেত আসছে। তাই বিনাদ্বিধায় বলল,
‘ ধূসর ভাইকে। পছন্দ করিনা,ভালোবাসি।’
মৈত্রী হা করে, চোখ পিটপিট করল। ধাতস্থ হয়ে, ফিসফিস করে বলল,
‘ কিন্তু উনি, উনি তো খুব মেজাজী। শান্তা পছন্দ করতো জানো,ওকে যা বকা বকেছে! তারপর ভাবো,কোথাকার কোন গ্রামে, যেখানে জীবনে প্রথম বার গেলেন উনি,সেখানে গিয়ে এলাকার ছেলেকে পিটিয়েছেন। কত সাহস! কত বড় কলিজা! ওনাকে দেখলেই না আমার খুব ভয় লাগে। মনে হয় যেন আমাকেও পে*টাবেন।’
পিউ ফিক করে হেসে উঠল। বলল,
‘ উনি হলেন নারকেলের মতন। ওপর থেকে খসখসে,শক্ত কিন্তু ভেতরটা চমৎকার। একদিন কথা বলে দেখো।’
‘ না বাবা! থাক। কিন্তু পিউ, তুমি কী করে ওনাকে পছন্দ করলে? একে তোমার অত বড়,আবার তুমি কত ফর্সা,উনি কালো!’
পিউয়ের মেজাজ চটে গেল। নাক-মুখ কোঁচকাল। পরক্ষনে মাথা ঠান্ডা করে বলল,
‘ কালো তো কী? তুমি ওনাকে কখনও খেয়াল করে দেখেছো? ওনার চোখ,নাক,ঠোঁট সব ইন্ডিভিজ্যুয়ালি সুন্দর। আর দেখলেও আমার মত করে দ্যাখোনি। আমার চোখে ওনার মত সুতনু পুরুষ দ্বিতীয় টি নেই।’
‘ ভাই রে ভাই! তুমিত প্রেমে পড়ে একেবারেই গেছো৷ বেশ পাঁকা পাঁকা কথাও বলছো।’
‘ হব না?আমার অনুভূতি তিন শেষ করে চারে পা দিলো। ইটস হাই টাইম ফর গ্রো আপ।’
মৈত্রী চোখ তুঙ্গে তুলে বলল ‘ চার বছর ধরে ওনাকে ভালোবাসো? আচ্ছা,উনি বাসেন? উনি জানেন তুমি ওনাকে ভালোবাসো?’
‘ হ্যাঁ। ‘
মৈত্রী আরেকদফা বিস্মিত হয়ে বলল,’ কিন্তু তোমাদেরত ওরকম কিছুই করতে দেখলাম না।’
‘ তোমাকে দেখিয়ে করব?’
মৈত্রী থতমত খেয়ে বলল,
‘ আরে কথাবার্তা বলার কথা বলেছি। ‘
তানহা ঘুমুঘুমু কণ্ঠে বলল,
‘ রাত বিরেতে কীসব নষ্টামির আলাপ করছো তোমরা? পিউ ঘুমা। তোর মামিরা যে এখানে শুয়ে, ভুলে গেছিস?’ পিউ চোখ বড় বড় করল। সত্যিইত, ময়মুনা, শায়লা দুজনেই এ ঘরে ঘুমিয়েছেন। আয় হায়! কিছু শুনে ফেললেন না তো। পিউ ঘাড় উচু করে দেখল। নাহ,তাদের সবার ভারি নিঃশ্বাসের শব্দ আসছে। এর মানে পরিবেশ নিরাপদ। মৈত্রী বলল, ‘ আচ্ছা,ঠিক আছে। বাকী গল্প কাল হবে। আজ ঘুমোও। গুড নাইট।’ পিউ মাথাটা বালিশে এলিয়ে দিলো। সিলিং ফ্যানের দিক চেয়ে বলল,’ আর ঘুম! ধূসর ভাই ঘুম টুম সব কেড়ে নিয়েছেন।’ মৈত্রী বলল, ‘ তাহলে মমতাজের গানটা গাও, ‘ আমার ঘুম ভাঙাইয়া গেল গো মরার কোকিলে….’
তানহা ঘুমের মাঝেও হেসে উঠল। হাসল পিউও।
মারিয়া ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করতেই লোড শেডিং হলো। আঁতকে উঠল মেয়েটা।তড়িঘড়ি করে আবার বেরিয়ে এলো। এই বাড়ি তার নিজের নয়। সুতরাং অন্ধকারে কোন দিকে যাবে কিছুই বুঝল না। জেনারেটর তো আছে৷ চলছেনা কেন? ফোনটাও আনেনি,নাহলে ফ্ল্যাশ জ্বালানো যেত৷ সে হাতড়ে হাতড়ে এগোতে নিলো। সামনে থেকে হঠাৎ কড়া আলো পরল চোখে। নেত্রযূগুল কুঁচকে মাথা ঘুরিয়ে ফেলল সে। সাদিফ এগিয়ে এসে বলল,
‘ আরে আপনি? ভূতের মত হাঁটাহাঁটি করছেন কেন?’
মারিয়ার ভয়-ডর উবে গেল ওমনি। সাদিফ কে দেখে স্বস্তির শ্বাস ফেলে বলল,
‘ ও আপনি? ভয় পেয়ে গেছিলাম। ঘুমোননি এখনও? ‘ ‘ আমিত রুমেই ছিলাম না। ছাদ থেকে এলাম।’ ‘ ওহ। এত রাতে একা একা ছাদে? ভয় করেনা আপনার? ‘
‘ ভয় মেয়েদের জিনিস ম্যাডাম। পুরুষ মানুষ হলো বাঘের বাচ্চা, তারা ভয় পায় না।’
মুখ বাকাল মারিয়া। বলল
‘ ফ্ল্যাশটা আমার মুখের সামনে থেকে সরান। তাকাতে পারছিনা।’
‘ ও হ্যাঁ হ্যাঁ। আচ্ছা আপনি রুমে যান,আমিও যাই। টায়ার্ড লাগছে খুব। জেনারেটরের যে কী হয় মাঝেমাঝে! এখনও চালু হচ্ছেনা,গরমে ঘুমোবো কী করে ও গড!
‘
সাদিফ বিড়বিড় করে বলল। মারিয়া মিটিমিটি হেসে ভাবল, ‘ আপনি চাইলে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করে দিতে পারি।খালি বলুন রাজি। ‘
‘ হাসছেন কেন?’
‘ হু? না কিছু না। যাই হ্যাঁ? ‘
‘ আচ্ছা যান।’
মারিয়া পাশ কা*টাতে নিলো। রান্নাঘরে বিড়াল সানসেট বেয়ে লাফিয়ে পরল মেঝেতে। লেজে বেঁধে স্টিলের বিশাল, বড় গামলাটা আছড়ে পরল সাথে । ঝনঝন করে বিকট শব্দ হলো। ছড়িয়ে গেল বাড়িময়। অন্ধকারে কলিজা ছল্কে উঠল মারিয়ার। ‘ও মাগো’ বলে চিৎকার করে কাছে পেল সাদিফকে। দ্বিগবিদিক ভুলে ওকেই জড়িয়ে ধরল তখন। সাদিফ থমকে গেল। হাত থেকে ফোনটা পরে গেল ফ্লোরে।
প্রথম বার কোনও মেয়ে জড়িয়ে ধরায় রক্তাসঞ্চালন অবধি থেমে গেছে তার। হাত পা অবশ হয়ে আসছে। মারিয়া দুহাতে পিঠ খামচে ধরে বলল, ‘ ভূত ভূত,আপনাদের বাড়িতে ভূত আছে।’ সাদিফের গলা শুকিয়ে কাঠ -কাঠ। ঢোক গিলে কিছু বলতে গিয়ে বুঝল কথা ফুটছে না।
তক্ষুনি জেনারেটর চালু হয়। আলোয় আলোয় ভরে যায় বাড়ি। রুবায়দা সজাগ ছিলেন। তার কণ্ঠ শোনা গেল দূরে। কী পরেছে খুঁজতে আসছেন। মারিয়া চট করে চোখ খুলল। কোথায় আছে বুঝতে সময় লাগেনি। ধড়ফড় করে সরে এলো। একবার তাকাল। অস্বস্তি আর অপ্রতিভতার ছাঁয়া চেহারায়। সাথে মৃদূমন্দ লজ্জা। সাদিফের কপাল বেঁয়ে ঘাম পরছে। স্টিলের মত শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে সে। ঠান্ডা দুটো চোখ তার ওপরেই নিবদ্ধ। মারিয়া দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। কী করেছে ভাবতেই, মাথা ঘুরছে। ওয়াশরুমের কথা ভুলে সে ছুট্টে পালিয়ে গেল ঘরে।
বিয়ের জন্য একটা বড়সড় ক্লাব ভাড়া নেওয়া হয়েছে। সিকদার বাড়িতে এত মেহমান একসঙ্গে বসিয়ে খাওয়ানোর জায়গা নেই। ঘরের মালপত্র রাখবেন কই,আর চেয়ার টেবিল বসাবেন কই? তাই সিদ্ধান্ত হলো ক্লাবেই বিয়ে সাড়বেন। কাবিন হলেও আয়োজন বেশ বড়সড়।
ইকবালদের চারটে গাড়ি এসে কেবলই গেটের সামনে ভীড়ল। মাঝের ফুলে ফুলে সজ্জিত গাড়িটা থেকে নেমে দাঁড়াল সে। পড়নে জমকাল সোনালী শেরওয়ানি,পায়ে নাগড়া জুতো। ঠোঁটে একপেশে চকচকে হাসি। যেন বিয়ে নয়,জিততে এসেছে কোনও রাজপ্রাসাদ। এপাশ থেকে নামল ধূসর। সে কনে পক্ষের লোক হয়েও বরযাত্রী আজ। সবই ইকবালের জোরজ*বরদস্তি। গতকাল সে গাল ফুলিয়েছে, কেন ধূসর হ্লুদে যায়নি। শেষে এক কথা, বিয়েতে বরযাত্রী হতে হবে ওকে। তার সাথেই যেতে হবে। ধূসর ও বাকবিতন্ডায় না জড়িয়ে আপোসে হার মানল।
বরপক্ষকে সম্মানের সহিত ভেতরে নিতে এগিয়ে এসেছেন সিকদার বাড়ির চার কর্তা। সিড়ি পার করে হলের মূল গেটে আসতেই থামতে হলো তাদের। সামনে পুরু লাল ফিতা বাঁধা। অর্থাৎ গেট ধরেছে মেয়েপক্ষ। ধূসর ভেবেছিল পিউ থাকবে৷ আজ তো মানা করেনি। নিজের বোনের বিয়ে,মানা করবেও বা কেন!
কিন্তু সবার মধ্যে ওকে না দেখে অবাক হলো। তানহা আছে, তাহলে ও নেই কেন?
শান্তা,সুপ্তি কানাঘুষা করে পিউকে খুঁজেছে অবশ্য। আবার সময় পার হচ্ছে দেখে নিজেরাই তদারকি শুরু করল। মারিয়া,মৈত্রী দলনেত্রী। গেটে বরাবরের মত বিজয়ী হলো মেয়েরা। ইকবাল আগেই বলে রেখেছে কোনও তর্ক করা যাবে না। তার শালীকারা যা চাইবে তাই দেবে সে। এত সাধনার পর যাকে পাচ্ছে তার কাছে পৌঁছাতে টাকা যায় যাক! টাকা আগে? না বউ?
ইকবাল স্টেজের দিক তাকিয়েই বুকে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। পেছনে হেলে ঢং করল অজ্ঞান হওয়ার। ইফতি দুহাতে আগলে ধরল ভাইয়ের পিঠ। হাসল সে। হাসল সবাই।’ হোহোওওওও’ বলে জোরধ্বনি উঠল। পুষ্প লজ্জায় হাত কচলাচ্ছে বসে বসে। বাড়ির সবার সামনে ইকবালের এসব নিতে গিয়ে ম*রে যাচ্ছে সে।
ইকবাল ধীর পায়ে স্টেজের কাছে যায়। পাশে বসে। সবাইকে ছাপিয়ে ফিসফিস করে স্বীকারোক্তি দেয়,
‘ আমার বাগিচার পুষ্পটা এত সুন্দর কেন মাই লাভ? এই পুষ্পর সুঘ্রান পেতে আমি বান্দা জান পেতে দিতেও রাজি।’
পুষ্প লজ্জা পেয়ে মিনমিনিয়ে বলল, ‘ যাহ!’
ধূসর পুরো ক্লাব চক্কর কে*টে ফেলল। পিউ নেই কোথাও। ভীষণ চিন্তায় পরে গেল এবার। আজ সকাল থেকে ও বাড়িতে ছিল না। ইকবালের জোরাজুরিতে ওদের বাড়ি গিয়েছিল। পিউ ঠিক আছে তো? এর মধ্যে কিছু হয়নি তো!
কাকে জিজ্ঞেস করবে? পুষ্প ছবি তুলছে ইকবালের সাথে। ওখানে যেতে সংকোচ হলো তার। তখনি তানহা পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। ধূসর পেছন থেকে দেখেই চিনেছে। সোজাসাপটা প্রশ্ন ছুড়ল,
‘ পিউ কোথায় তানহা?’
তানহা ঘুরে তাকাল। ধূসরকে দেখে মিটিমিটি হাসল। ধূসর ভ্রু কোঁচকায় তার হাসি দেখে।
ফের শুধায়,
‘ জানো ও কোথায়?’
তানহা দুষ্টু হেসে বলল,’ আপনার বউ কমন রুমে। তার চুল খুলে গিয়েছে। তৈরি হচ্ছে আবার। আমি ওখানেই যাচ্ছি।’
হতভম্ব হয়ে গেল ধূসর। আপনার বউ? সম্বোধন শুনে চোখ প্রকট হয়ে এলো। তানহা হেলেদুলে প্রস্থান নিয়েছে। কিন্তু সে অবাক চোখে চেয়ে রইল। পরপর দুপাশে মাথা নেড়ে ঠোঁট গোল করে শ্বাস ফেলল। পিউয়ের বান্ধুবি তো,স্বাভাবিক এসব। সব এক গোয়ালের গরু। অল্প বয়সে দাঁত উঠেছে। মুখে ধান দিলেই খই ফুটছে। কিন্তু এই পিউটার এত সাজার কী আছে? কাকে দেখাবে এত সেজে? ধূসর সচেতন চোখেমুখে প্রার্থনা করল,’ আর যাই করুক,শাড়ি যেন না পরে।’
প্রার্থনা কবুল হলো। পিউ শাড়ি পরেনি। ভারি কাজের একটা জর্জেট থ্রি পিস পরেছে। সেজেছে সে নিজেই। কিন্তু বড় সাধ করে পার্লার থেকে একটা খোপা করেছিল। অথচ ক্লাবে ঢুকতেই বেখেয়ালে পিলারের সাথে ধা*ক্কা খেয়েছে,আর খুলে গিয়েছে চুল। পার্লারের মেয়েটা যতগুলো ক্লিপ লাগিয়েছিল,সব খুলতে হয়েছে ওকে। ওই জন্য গেট ধরাটাও মিস করে ফেলল। সে যে কেঁদে ফ্যালেনি এই ঢেড়।
যখন বাইরে এলো, তখন বিয়ের কাজ শুরু হয়েছে। মোটামুটি বর-কনের ছবি তোলার পর্ব সমাপ্ত। কিন্তু সেতো একটাও ছবি তুলল না।
হায় হায়! পিউ আশেপাশে তাকিয়ে তানহাকে খুঁজল। ওর কাছেই তার ফোন। হঠাৎ দেখল ইফতির সাথে এক কোনায় দাঁড়িয়ে কথা বলছে সে। পিউ আগ্রহ নিয়ে একটু কাছে গিয়ে দাঁড়াল। অত চেচামেচির ভেতর যা কানে এলো তাতে বুঝল,ইফতি প্রসংশা করছে তানহার।
হেসে ফেলল পিউ। দুপাশে মাথা নেড়ে চলে এলো। কিছু ছেলের কাজই হয় মেয়ে পটানো। ইফতি এই বয়সেই এই,বড় হলে কী হবে?ও যে ইকবাল ভাইয়ের ভাই,বিশ্বাস করা দুঃসাধ্য।
ইকবালের কথা মাথায় আসতেই ধূসরকে খুঁজতে শুরু করল পিউ। চারদিকে এত ছড়ানো-ছেটানো লোক,এদের মধ্যে তার কাঙ্ক্ষিত তিনি কোথায়?
পিউ একা একা কিছুক্ষণ ঘুরে বিরক্ত হয়ে পরে। তানহা আর ইফতির খোশগল্প ইহকালে শেষ হবেনা। ফোনের আশায় না বসে ফটোগ্রাফারের দিক এগিয়ে গেল। ডেকে বলল,
‘ আমার কিছু ছবি তুলে দিন। আমি আমজাদ সিকদারের ছোট মেয়ে।’
‘ ও শিওর ম্যাম। আসুন। ওখানে দাঁড়ান,লাইটিংটা ভালো। সুন্দর আসবে!’
স্টেজের পাশেই ফুল দিয়ে সাজানো আরেকটু বড় জায়গাটা দেখালেন তিনি৷ পিউ যেতে গিয়েও থেমে দাঁড়াল। ধূসর খাবারের ওখান থেকে বের হয়েছে। তাদের ভবিষ্যৎ মেয়র খালেকুজ্জামান এসেছেন। ওনাকেই সম্মানের সহিত বসিয়ে দিয়ে এলো।
পিউ ওকে দেখেই ঝলকে ওঠে। ছেলেটিকে বলে,
‘ একটু দাঁড়ান।’
‘ জি।’
তারপর দুরন্ত পায়ে কাছে যায়। ধূসর দুজন ছেলের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত তখন। পিউ পেছনে গিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রয়। অপেক্ষা করে কথা শেষ হওয়ার। এর আগেই সামনের একটি ছেলে তাকে দেখে ধূসরকে ইশারায় বলল,
‘ ভাই… পেছনে…’
ধূসর ফিরে চাইল। চোখাচোখি হলো দুজনের। এতক্ষণে পিউকে দেখে বুকের ভারী ভাবটা নিমিষে নেমে গেল।
সেকেন্ডে আপাদমস্তক দেখে নিলো ওর। শাড়ি পরেনি বলে স্বস্তির শ্বাস ফেলল মনে মনে। জিজ্ঞেস করল’ কী? ‘
পুরূ কণ্ঠটা শুনেই গুলিয়ে গেল পিউ। নার্ভাস হয়ে ঠোঁট ভেজাল জ্বিভে। ধূসর ছেলে দুটোকে বলল,
‘ তোরা গিয়ে খেতে বোস।’
‘ আচ্ছা ভাই।’
ওরা যেতেই ধূসর সম্পূর্ন ঘুরে দাঁড়াল। পিউ
আমতা আমতা করে বলল, ‘ ওই ছবি তুলতাম আর কী! আসলে উনি বলছিলেন একার চেয়ে দুজন হলে ভালো হয়। ‘
উনি হিসেবে ক্যামেরা ম্যানকে বোঝাল সে। ধূসরের চোখ-মুখের পরিবর্তন দেখা গেল না। কণ্ঠস্বরও অপরিবর্তিত রেখে বলল,
‘ আয়।’
পিউ শঙ্কিত ছিল ধূসর শুনবে কী না! এই প্রহেলিকার মন বোঝা দ্বায়। কখন কী চায় নিজেই জানেনা হয়ত। অন্য সময় হলে সে আসতোও না বলতে। এক সাথে ছবি ওঠানোর কথা তো দূর! কিন্তু কালকের ওইসব ঘটনার পর তার সাহসটা হুহু করে বেড়ে গেছে।
পিউ হাসিহাসি মুখে ক্যামেরার লেন্সের সামনে দাঁড়াল। ধূসরকে সাথে নিয়ে এত তাড়াতাড়ি ছবি তুলতে পারবে ভাবেওনি। এই ২০২৩ সাল তার জন্য আশীর্বাদ। সব ভালো হচ্ছে।
জীবনে প্রথম ছবি দুজনের,আহা তাও কাপল পিক!
পিউ গদগদ হয়ে পরেছে। আইসক্রিম হলে নির্ঘাত গলে যেত। ধূসর পাঞ্জাবির কলার ঠিকঠাক করে পাশে দাঁড়াল। পারফিউমের ঘ্রাণ হুটোপুটি করে নাকে এসে লাগল তার। আহ! কী মিষ্টি! কী মিষ্টি!
তাদের মধ্যে তখনও দুই হাত সমান দুরুত্ব।
ফটোগ্রাফার ছেলেটি ক্যামেরা চোখ বসিয়ে হাত দিয়ে বোঝাল ‘ আরেকটু ক্লোজ হন।’.
পিউ এগোবে কী না , বুঝে উঠল না। ঠিক তখনি ধূসর কাঁধে হাত রেখে টেনে নিলো কাছে। পিউ চকিতে তাকায়। বিস্মিত হয়। পরপর ভেতর ভেতর খুশিতে লাফিয়ে উঠল শিশুর ন্যায়। মুচকি হেসে ক্যামেরার দিক চাইতেই একটা দারূন যূগল ছবি বন্দী হলো সেখানে।
ওই সময় ইকবাল স্টেজ থেকেই ডাক ছুড়ল,
‘ এই ধূসর-পিউ এসো ছবি তুলি। আয় ধূসর। ‘
ধূসর জিজ্ঞেস করল, ‘ আর তুলবি?’
ইতোমধ্যে অনেক গুলো ক্লিক বসিয়েছে ছেলেটি। পিউ মোহগ্রস্তের মত চেয়ে থেকে দুপাশে মাথা নাড়ল। ধূসর তাকে ফেলে এগিয়ে গেল স্টেজে। ইকবাল,পুষ্পর মাঝখানে জায়গা নিলো। দুজনকে দুহাতে আগলে ছবি ওঠাল। পিউ কেমন করে দাঁড়িয়ে থাকে। যেন একটা আঙুলের টোকায় হেলে পরবে। পুষ্প ফের ডাকল,’ এই পিউ আয় না।’
মুহুর্তমধ্যে সম্বিৎ ফিরল তার। চুল ঠিকঠাক করে স্টেজে গিয়ে দাঁড়াল। ইকবাল তাকে আগলে দাঁড়ায়। চারজনের হাস্যজ্জ্বল একটা ছবি স্মৃতি হিসেবে আটকে যায় সারাজীবনের জন্য।
ইকবাল গড়গড় করে কবুল বলেছে। সময় নিয়েছে পুষ্প। থেমে থেমে বলেছে সে। সকলের সমস্বরে ‘আলহামদুলিল্লাহ ‘শোনা গেল। স্টেজের কাছে বিপুল মানুষের ভীড়ে,তানহা পিউ জায়গা পেল না দাঁড়ানোর। ওরা দুজন হাল ছেড়ে দিয়ে, একদম পেছনের দুটো লোহার চেয়ারে গিয়ে বসল।
পিউ জিজ্ঞেস করল,
‘ ইফতি কী বলছিল?’
‘ ফোন নম্বর চাইছে।’
‘ দিয়েছিস?’
‘ দেইনি। দেব?’
‘ ভালো লাগলে দে।’
‘ দেখতে কিউট। কিন্তু সেম এইজ রিলেশনশিপ ভালো লাগেনা। তোর আর ধূসর ভাইয়ের প্রেম দেখে তো আরোইনা। আমার এমন দশ বছর গ্যাপের একটা প্রেমিক চাই। পাঁচ অন্তত থাকতেই হবে। এর নীচে হলে ক্যান্সেল।’
পিউ হাসল। ভ্রু নাঁচিয়ে বলল, ‘ সাদিফ ভাই সিঙ্গেল এখন? ট্রাই করবি?’
‘ এই না না। ‘
পিউ স্টেজের দিকে চোখ দিলো। ধূসরের সাথে ছবি তোলার পর গেট ধরার দুঃ*খ ভুলে গিয়েছে সে। মন-মেজাজ বেশ ফুরফুরে এখন। অনেকটা সময় লাগল স্টেজের কাছটা ফাঁকা হতে। মোনাজাত ধরল সবাই। পিউও মাথায় ঘোমটা টানল। ‘আমিন’ বলে দুহাত মুখে ঘষল। স্টেজে বসা বোনের দিকে অভিনিবিষ্ট হয়ে চেয়ে রইল কিছুক্ষণ। পুষ্প আর পাশাপাশি ইকবালকে ধরিত্রীর সর্বাধিক শ্রেষ্ঠ জুটি লাগছে তার। দুজন যেন দুজনের জন্যেই তৈরী। ইকবালের মুখের হাসিটা? যেন গোটা রাজ্য জয়ের উল্লাস সেখানে। হঠাৎ করেই ওদের মাঝে নিজেকে খুঁজে পেল পিউ। ভ্রু গুছিয়ে এলো ওমনি। পুষ্পর জায়গায় সে,আর পাশে ঠিক ধূসরকে দেখে বুকটা ধড়াস করে উঠল। বিশ্রামহীন উর্মীমালা আছড়ে পরে হৃদয়ে। ওমন নিষ্পলক চেয়ে থেকেই বলল,
‘ তানহা, ভাবতে পারছিস,একদিন এইভাবে আমারও বিয়ে হবে। ধূসর ভাই ঠিক এইরকম একটা শেরওয়ানি পরে আমার পাশে বসবেন। মাথার পাগরীটা জ্বলজ্বল করবে ওনার। আমি তখন হা করে চেয়ে থাকব। চোখের তৃষ্ণা মিটিয়ে দেখব। ওনার শেরওয়ানীর রং অবশ্যই মেরুন হতে হবে বুঝলি। ওই রংটায় ওনাকে ঠিক আমার স্বপ্নের রাজপূত্রের মত দেখায়। যেই রাজিপূত্রকে দেখে আমি মনে মনে শতবার অজ্ঞান হয়েছি।’
তারপর নিজেই হাসল। লজ্জা লজ্জা কণ্ঠে বলল,
‘ তারপর আমাদের বাসর হবে। বাচ্চাগাচ্চা হবে। তোকে খালামনি ডাকবে। ইশ এসব ভাবলেই…
বলতে বলতে মিটিমিটি হেসে পাশ ফিরতেই ভূত দেখার ন্যায় চমকে উঠল। পরপর ছিটকে দাঁড়িয়ে গেল বসা থেকে। তানহার টিকিটাও নেই এখানে। তার জায়গায় বসে ধূসর। শৈলপ্রান্ত এঁকেবেকে আছে। বাম উরুর ওপরে তোলা ডান পা টা নাড়াচ্ছে। লোহার চেয়ারের হাতলে ঠেসে দেয়া এক হাত। পিউয়ের প্রকট চক্ষু কোটর ফুঁড়ে বেরিয়ে আসবে প্রায়। শুকনো ঢোক গিলল সে। ধূসর ভাই কি তার নির্লজ্জ কথাবার্তা শুনে ফেলল?
চলবে…………………
সম্পূর্ণ গল্পের লিংক
https://kobitor.com/somudro/
দুদিনের জায়গায় এমন চার, পাঁচদিনের গ্যাপের জন্য আমি ভীষণ দুঃখিত। একটু অগোছালো আর বানান ভুল হতে পারে। গরমে আমার অসুস্থতা আরো বাড়ছে। একটু দোয়া করবেন সবাই।