কলমে: নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
(২২)
অম্বরে,মাটিতে,হাওয়ায় আজ বর্ষার রঙ-বসন্তের উপহার। রূপকথার রাজপূত্রের মতোন রথের মর্মর ধ্বনি নিয়ে ছুটে এসেছে শ্রাবণী। ঝপঝপে বারিপাতে,অস্বচ্ছ জল জমেছে দ্বিগবিদিক।
পাঁকা সমান রাস্তার কতক স্থানে কালচে পীচের খবর নেই। চামড়ার মতো উঠে বেরিয়ে এসেছে খোয়া। কোথাও আবার গর্তের মত ডেবেছে। অসমান জায়গার ওই স্বল্প গর্তেই হৈহৈ করে দখল নিয়েছে সলিল। কাধব্যাগটা বুকে চেপে রিক্সায় বসে আছে নূহা। অন্য হাতের মুঠোয়, কোলের ওপর মেলে রাখা পলিথিন। সবুজ পলির গায়ে টুকটুকে রূপোর মতো জল। সম্মুখের রিক্সাচালক বৃষ্টিতে ম*রা কাকের মতো ভিজছেন। মাথায় একটা ক্যাপ রইলেও,পরনের ময়লা শার্ট একেবারে ভিজে লেপ্টে গেছে পিঠে। ভরদুপুরের এই আচমকা বরিষায়, কিছুদিন যাবত বেশ নাজেহাল মানুষজন। রিক্সাচালকের কথা ভেবে মন খারাপ করল নূহা। তার ছাতার দুটো ডাট একেবারে ভে*ঙে, উল্টে গেছে। ইউনিভার্সিটি ছেড়ে বাইরে আসতেই,জোরালো বাতাসেই ঘটেছে অঘটনটা। ছাতাটা ভালো থাকলে এখন এই ভদ্রলোকের মাথার ওপর ধরতে পারতো না? আহারে!
ভাবতে না ভাবতেই ঘটল আরেক বিপদ । রিক্সার চলন্ত এক চাকা গর্তে ঠিকড়ে পড়ল। নরম কাঁদামাটি রাবারের চাকা পেয়ে, নিজের সঙ্গে আকড়ে ধরে গতিতে। কাত হয়ে পড়তে নিলেই নূহার বুকের রক্ত অবধি ছলকে ওঠে ভ*য়ে। ত্বরিত রিক্সায় টান বসিয়ে আটকালেন চালক। মেয়েটা হাঁপ ছাড়ল। এ যাত্রায় বিরাট দূর্ঘ*টনা থেকে বেঁচেছে ভেবে। অথচ রিক্সার চাকা তোলা যায়নি। ভাসমান পানিতে অর্ধেকটা ডুবেছে। ভদ্রলোক বেশ খানিকক্ষণ টানাটানি করলেন। আশপাশ দেখলেন কিছু পল। একে দুপুর,দুইয়ে বৃষ্টি.. মানুষের দেখা পাওয়া মুশকিল। সেখানে কে সাহায্য করতে আসবে? অনেকক্ষণ টানাহেঁচড়ার পর হার মানলেন তিনি। শেষে অবসন্ন চোখে নূহার দিকে ফিরলেন। ভীষণ নম্র কণ্ঠে বললেন,
“ আপা, আপনে নাইমা যান। এই চাকা কহন ছুটব কওয়া যায় না।”
ও জানতো এমন কিছুই হবে। ক্লান্ত কণ্ঠে বলল,
“ আমি এখন নেমে গেলে,বাসায় কীভাবে যাব মামা? আর এত বৃষ্টিতে অন্য কোনো রিক্সাও তো পাব না।”
উনি চারপাশটা দেখলেন আবার। হন্যে চোখে একটা বড়সড় সুপার শপ ধরা পড়ল। হাত লম্বা করে বললেন,
“ ওইখানে যাইয়া খাড়ান তাইলে। যদি চাকা ছুটাবার পারি, ডাক দিমু।”
দীর্ঘশ্বাস ফেলল নূহা। কপাল ভরতি অনুচিন্তনের ভাঁজ সমেত নিশ্চুপ নেমে গেল। বৃষ্টি কমার বদলে বাড়ছে। আষাঢ় শুরু হয়েছে না? এখন এরকম অহরহ ঘটবে। তবে অন্ধকার হয়ে আসছে চারদিক। বন্যা হতে পারে। নূহার শ্যামলা মুখটা চিন্তায় ডু*বে গেল। এরকম হলে ও পৌঁছুবে কী করে? আচ্ছা,পুষ্পিতা তো ছাতাও নেয়নি। ওই গাধিটা বাসায় যেতে পেরেছে? এতবার করে বলেছিল, ‘ছাতা নে ছাতা নে’ মায়াদেবী নিলেনই না।
নূহা রাস্তার দিকে ফিরল। রিক্সাওয়ালা এখনও তার বাহন তোলার চেষ্টায়। লাগাতার বারিপাতে গর্তে আরো পানি জমেছে। কূল না পেয়ে খেই হারালেন তিনি। গলার গামছা দিয়ে মুখটা মুছে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলেন। সমর্থ্য শরীরের এক ফোঁটা জায়গা বাকী নেই সিক্ত হতে। এদের কি জ্বরও হয় না? না কি হলেও সয় না?
নূহা ফোস করে শ্বাস ফেলল। বুঝে গেল আজ এই বৃষ্টি না কমা অবধি, তার বাসায় যাওয়া হবে না। কী মুসিবত!
একা একটা মেয়ে এমন রাস্তার মধ্যে তো দাঁড়িয়ে থাকতেও ভ*য় লাগছে। দোকানের নামিয়ে রাখা ঝাপের সাথে পিঠ এলিয়ে দাঁড়াল সে। কোথাও যখন কোনো আশার আলো নেই,আকস্মাৎ একটা সাদা গাড়ি ব্রেক কষল সেথায়। গতিশীল চাকা হঠাৎ থামায়,ছিটকে উঠল জল। তৎক্ষনাৎ সরে গেল মেয়েটা। একটুর জন্যে গায়ে লাগেনি। কঠিন বাক্য লুটিয়ে দিতে তেতে উঠল জ্বিভ। অথচ পূর্বেই কাচ নেমে বেরিয়ে এলো নাহিদের নির্মল মুখখানা। চওড়া ললাটে সূক্ষ্ম ভাঁজ,
“ মিস নূহা,আপনি এখানে কেন?”
নূহা চটজলদি গালির বাণ গিলে নেয়। পালটা ভ্রু কোঁচকায় ওকে দেখে। ফটাফট প্রশ্ন ছোঁড়ে,
“ এটা আপনার গাড়ি?”
মাথা নাড়ল নাহিদ।
“ না তো। ভাড়া করেছি। ইইন্টারভিউ দিতে যাওয়া আসার জন্যে।”
সে ঠোঁট গোল করে বলল,
“ ওহ।”
“ কিন্তু আপনি এভাবে ভিজছেন কেন?”
নূহা মুখ কালো করে বলল,
“ আমার রিক্সাটা গর্তে আটকে গেছে। ওই যে..”
আঙুল অনুসরণ করে চাইল নাহিদ। এক কাত হওয়া রিক্সা আর একটু দূরে বসা লোক দেখে বুঝে ফেলল পুরোটা। অথচ প্রফুল্ল স্বরে বলল,
“ তাহলে আর রিক্সা দিয়ে কাজ নেই। এক কাজ করুন, আমিও তো বাসাতেই যাচ্ছিলাম। আপনার কোনো সমস্যা না থাকলে আমার সঙ্গে আসতে পারেন।”
তুরন্ত,ইতস্ততার চিহ্নে মুখবিবর লেপ্টে এলো মেয়েটার। কপালে দুশ্চিন্তার রেখা প্রগাঢ় হলো আরো।
নাহিদ কে চেনেই মাত্র দুদিন। তারওপর প্রাইভেট কার একটা আটকা গাড়ি। যদি বাসার কথা বলে অন্য কোথাও নিয়ে যায়? তারপর…!
নূহা আর ভাবতে পারে না।
মেয়েলি মন অমন জ*ঘন্য কিছু কল্পনায় আনতেই আঁ*তকে ওঠে। মানা করবে ভাবল। উল্টোপাশের নাহিদ নির্ভেজাল হাসল তখনই। ভীষণ চমৎকার করে বলল,
“ ভয় পাচ্ছেন? ভয় নেই। আমাকে ভ*য় পাওয়ার থেকে গরুর গুঁতোকে ভ*য় পাওয়া ইজ হান্ড্রেড টাইমস বেটার মিস নূহা। আপনি নিশ্চিন্তে আমার সঙ্গী হতে পারেন। মানে এই পথটুকুর আর কী! ”
পুরো কথা নূহা শুনেছে কী না কে জানে! তবে ভাবিত দৃষ্টি পালটে গেল অচিরে। মন গেঁথে রইল মাঝের একটি লাইনের ওপর, ‘আপনি নিশ্চিন্তে আমার সঙ্গী হতে পারেন!’
তাকে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে দেখে নাহিদ কণ্ঠ উঁচু করল,
“ মিস নূহা, শুনতে পেলেন?”
মেয়েটা নড়ে ওঠে। যেন এক জড়বস্তুতে আঙুলের জোর খাটিয়ে টোকা দিয়েছে কেউ। শরীরী জড়তার সাথে মনে আশ*ঙ্কা ভিড়েছে। পাছে লোকটা খারাপ হয় যদি?
শান্ত নাহিদ চ সূচক শব্দ করল এবার। নেমে এলো বাধ্য হয়ে। তার গায়ে ফরমাল পোশাক। অফিসারদের মতো স্যুট-টাই পরা। গাড়ি রেখে আসতেই নির্নিমেষ ভিজে গেল সেসব। ছেলের কাণ্ডে ভরকে যায় নূহা। অবাক কণ্ঠে উদ্বেগ এনে বলে,
“ কী করছেন? আপনি আবার নেমে এলেন কেন?”
নাহিদ সামনাসামনি এসে থামল। ভ্রু কুঁচকে বলল “ আপনি আসলে কেমন মানুষ বলুন তো!”
নূহা আকাশ থেকে পড়ল। বুঝতে না পেরে বলল,
“ আমি আবার কী করলাম?”
“ কী করেননি তাই বলুন! আপনি জানেন, আমাদের বন্ধু মহলে সব থেকে চরিত্রবান ছেলে বলা হয় আমাকে? একটা প্রেম করে ছ্যাকা খাওয়া ছাড়া আমার আর কোনো বাজে রেকর্ড নেই। সেই আমি, মানে আমার মতো সৎচরিত্রবাণ একটা ছেলে আপনাকে গাড়িতে উঠতে বলেছে। আর আপনি কী না ভয় পাচ্ছেন? আমার মত এমন ভদ্র, নিষ্পাপ ছেলেকে সন্দেহ করা কত বড়ো অন্যায় কোনো ধারণা আছে আপনার? ভালো মানুষের সঙ্গে এমন আচরণ, প্রকৃতি মানবে তো?”
সব কথা গড়গড় করে নয়,বেশ গুছিয়ে বলেছে নাহিদ। পুরোটা মূকের মতো শুনলো নূহা। ছেলেটা এত কথা জানে? হঠাৎ হাসি পেলো তার। কেন পেয়েছে জানেনা! হাসলোও মিটিমিটি। বলল,
“ মেয়েদের চোখ- কান সব সময় খোলা রাখতে হয় মিস্টার ঢেঁড়স! সেটা আপন হোক বা পর, দুই ক্ষেত্রেই। অবশ্য এই ব্যাপার গুলো আপনাকে সারাদিন বললেও বুঝবেন না। আপনি তো ছেলে! এসব বুঝতে মেয়েদের মত মাথা থাকা চাই।”
নাহিদ প্রথমে মুখ ছোটো করল ঢেঁড়স শুনে। ড্রাইভার ছেলেটাকে পিছু ফিরে আলগোছে দেখে নিলো এক পল। না,সে খুব আরামসে বসে। কোনো তাড়া নেই।
জবাব দিলো বিলম্বহীন,
“ শুনুন, আমি মেয়ে না হলেও,তাদের হাব ভাব বুঝি। মেয়েরা যেমন চোখ দেখে পুরুষ চেনে? আমিও চোখ দেখলে বুঝি,আমার প্রতি কার কেমন ধারণা! আর আপনার মতো সাহসী মেয়ে যে কেন এত ভাবছে কে জানে! বাসা তো খুব দূরেও নয়। আপনাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে গেলেও তেমন লাভ হবে না। তবে এত ভিজলে মাস্টবি জ্বর আসবে আমার। প্লিজ আর কথা না বাড়িয়ে আসুন।”
নূহা হাঁ করতেই গেলেই,সে সতর্ক কণ্ঠে বলল,
“ আপনি যদি এখন আমাকে আবার সন্দেহ করে নিষেধ করতে যান,বিষয়টা আমার মান সম্মানের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াবে। আমি কিন্তু আপনাকে সাথে না নিয়ে তাহলে কোথাও নড়ব না। এই বৃষ্টিতে এভাবেই ভিজব। দ্যাটস ফাইনাল।”
নূহা দুই ভ্রু উঁচাল,
“ তাই? ঠিক আছে, ভিজুন। আমার কোন সমস্যা নেই। আপনি ভিজলে আমার কী?”
কাঠখোট্টা জবাবে ছেলেটার মুখ তিঁমিরে তলায়। শুভ্র ত্বক আলো খুইয়ে শুধাল,
“ সত্যিই যাবেন না?”
নূহা বড্ড শক্ত জবাব দিলো,
“ না।”
নাহিদের আনন জুড়ে উপচে পড়ে ক্ষুন্নতা। নূহা হেসে ফেলল এবার। বলল,
“ থাক, মন খারাপ করতে হবে না। আচ্ছা চলুন যাচ্ছি।”
ছেলেটা খুশি হয়ে গেল। ক্ষণপূর্বের অমানিশায় ডুবুডুবু মুখখানা জ্বলজ্বল করছে এখন।
‘আসুন’, ‘আসুন’ বলেই স্ফুর্ত পায়ে এগিয়ে চলল সামনে।
পেছনে পা বাড়াল নূহা। অথচ এক কদম হাঁটতেই স্লিপার ছিড়ে যায়। দু আঙুলের ভেতরে থাকা জুতোর চিকণ ফিতেটা উঠে এসেছে উপরে। থমকাল সে। মাথায় হাত দিয়ে বলল,
“ এই যা ছিড়ে গেল!”
কথা শুনে ফিরে চাইল নাহিদ। নূহা ততক্ষনে ছেড়া স্লিপার হাতে নিয়েছে৷ সেটা দেখে অবাক হওয়ার ভান করে বলল,
“ জোর করে সাথে নিচ্ছি বলে জুতো ছিড়ে ফেললেন?”
সে চোখ রাঙিয়ে চায়। বলে,
“ এ আবার কী কথা? আপনি জোর করে নিচ্ছেনই বা কোথায়, আর আমি জুতোটা ছিড়বোই বা কেন?”
“ না মনে হলো আর কী!”
নূহার কাটকাট জবাব,
“ আপনাকে কিন্তু আমি ঢেঁড়স নামটা এমনি এমনি দিইনি। আপনি আসলেই একটা ঢেঁড়স।”
ছেলেটার তেমন কিছু এলো গেলো না। এ ধরণের বিশেষণে সে যথেষ্ট অভ্যস্ত। বিগলিত হেসে কলার টানল৷
খুব লাজুক ভঙ্গিতে বলল,
“আমার বন্ধুরাও তাই বলে!”
নূহা নাক-চোখ কোঁচকাল। জুতোটা দূরে ছুঁড়ে মা*রল পরপর। রেগে রেগে বলল,
“ দেশের আর কিচ্ছু হবে না।
এই জুতোটা এই সপ্তাহেই দুশো আশি টাকা দিয়ে কিনেছি। আর দেখুন, সামান্য একটু পানি লাগতেই এভাবে ছিড়ে গেল? এখন আর কোনো কিছু ভালো না।
ডাস্টবিনের আবর্জনার সঙ্গে জুতোটার ভেসে যাওয়া এক ধ্যানে চেয়ে দেখলো
নাহিদ। হুট করে নিজের বুট জোড়া খুলে এগিয়ে দিলো নূহাকে। বলল,
“ নিন এটা পরুন।”
মেয়েটা বিভ্রান্ত হয়। তেমনই বিভ্রম নিয়ে শুধায়,
“ কেন? আপনার জুতো আমি পরব কেন?”
“ এখানে ইটের ছোটো ছোটো খোয়া বিছানো দেখছেন না? খালি পায়ে হাঁটলে ব্যথা পাবেন। আরো কোথায় কোথায় কত কী আছে কে জানে! আপনি এটা পরে আসুন। বাসায় গিয়ে আমাকে ফেরত দেবেন না হয়!”
নূহার শব্দ-বাক্য ফুরিয়ে গেল। বিস্ময়াভিভূতি লেপটে এলো চোখে। ঠোঁট নড়ল শুধু,
“ কিন্তু আপনি? “
নাহিদের সরল চেহারায় আত্মগরিমা,
“ আমি তো পুরুষ মানুষ। হতে পারি সাধাসিধে বাট ব্যথা সওয়ার অভিজ্ঞতা আছে বুঝলেন?”
পরপরই আনমনে হাসল সে। বলল,
“ এর থেকেও হাজার গুণ ভারি ব্যথা সয়ে নিচ্ছি। সেখানে এসব কোন ছাড়!”
শেষ কথার সঙ্গে ঠিকড়ে পড়ল এক টুকরো ভারশীল প্রঃশ্বাস। বাক্যের আড়ালে যে মিথিলার প্রসঙ্গ লুকিয়ে,নূহার বুঝতে বাকী নেই। কিছু বলার বা,জুতোর বিষয়টা নিয়ে মানা করারও সময় দিলো না নাহিদ।
লম্বা লম্বা পা ফেলে গাড়িতে উঠে গেল।
এ যাত্রায় মাথা নামিয়ে হাসল নূহা। ছেলেটা বোকাসোকা! তবে উপকারী, যত্নবাণ। এমন মানুষকে মিথিলা আপু ছেড়ে গেলেন কী করে?
****
শুধু নূহা,নাহিদ নয়, একইরকম সাংঘাতিক বৃষ্টির কবলে পড়েছে পুষ্পিতা আর তীব্রও। তারওপর তীব্রর জিপে ছাদ নেই। আচানক মুষলধারায় ভরকে গেছে দুজনেই। কোনো রকমে রাস্তার এক সাইডে জিপ পার্ক করল তীব্র। একটা টিনের তৈরি বন্ধ দোকানের দিকে পুষ্পিতাকে নিয়ে ছুটে গেল।
পুষ্পিতা ব্যস্ত হাতে ব্যাগ হাতাচ্ছে। দেখছে বই ভিজেছে কী না! না, ভেজেনি৷ তীব্র সোনালী চুল থেকে পানি ঝাড়ছিল।
হঠাৎ তেড়ে আসা বৃষ্টিটাকে উটকো ঝামেলা ভেবে,মনে মনে অকথ্য দুটো গালি দিলো সাথে।
পুষ্পিতা নিজে থেকে বলল,
“ কলেজ থেকে বের হওয়ার সময়ই বুঝেছিলাম বৃষ্টি নামবে। এত তাড়াতাড়ি নামবে বুঝিনি। আপনার গাড়ি তো ভিজে যাচ্ছে স্যার!”
তীব্র নিজেও একটু চিন্তায়। গাড়ি ভিজলে শুকানোর বন্দোবস্ত করা বিশাল ঝামেলা। ঢাকায় হলে চিন্তা ছিল না। কিন্তু এই মফস্বলে যেটা খুবই অসুবিধার। তারপর কিছু একটা ভেবে পকেটে হাতায় সে।
ফোন, ওয়ালেট বের করে বলে,
“ এগুলো তোমার ব্যাগে রাখো তো।”
পুষ্পিতা নিলো,রাখল ব্যাগে।
বৃষ্টির ছাটের সঙ্গে আস্তে-ধীরে বাতাসের বেগ বাড়ছিল। নৈসর্গে ঠান্ডা-হিম প্রবাহের স্পর্শ। নিগুঢ় নিস্তব্ধতার মাঝে দুজন মানব-মানবী নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে। মাথার ওপর টিনের চাল। ঝমঝম করে লুটিয়ে পড়া বর্ষার সুর কখনো ছন্দের মতো৷ কখনো বা সমুদ্রের ঢেউ। প্রথম দিকে গাড়ি নিয়ে বিরক্ত, চিন্তিত থাকলেও, হঠাৎ করেই চেহারার বেশ বদলে গেল তীব্রর। ফুরফুরে হলো মন। সকাল থেকে পুষ্পিতার প্রতি জেঁকে বসা রা*গ-ক্ষো-ভ এক লহমায় উবে গেছে এখন। এই যে পাশে ভীতু মেয়েটা দাঁড়িয়ে, দুজন একসঙ্গে বৃষ্টি দেখছে? এসব ওই সকালে একসাথে আসার থেকেও সুন্দর দৃশ্য!
সে আড়চোখে সম্মোহন ঢেলে পুষ্পিতার পানে চায়। চোখের পর্দায় ভেসে ওঠে ভবিতব্য কিছু চাওয়া-পাওয়া!
এমনই এক বৃষ্টি সিক্ত সন্ধ্যায় দুজন পাশাপাশি ভিজবে। ভীতু মেয়েটা এমন চুপ থাকবে না তখন। ওই যে কলেজের বাইরে যেভাবে হেসেছিল? ওমন করে হাসবে। শান্ত তরঙ্গের মতো হাসি,আর স্নিগ্ধ পদ্মের মতো মুখটা সে সময় নিবেশন দিয়ে পরোখ করবে তীব্র। বুক জুড়াবে,খেই হারাবে মুগ্ধতায়। কিছু অবাধ্য অভিলাষকে প্রশ্রয় দিয়ে জাপটে নেবে বুকে।
ঢোক গিলল তীব্র। স্বীয় পৌরুষকে কাবু করতে এদিক-ওদিক তাকাল। ঘাম মুছল কপালের। তার শক্ত শরীর শিরশির করছে আজ। পুষ্পিতাকে নিয়ে কিছু অনিয়ন্ত্রিত চিন্তাভাবনাই যার প্রধান হেতু। পরপরই মনে মনে হাসল সে। আজ অবধি যে মেয়ের হাত ধরেছে শুধু, তাকে নিয়ে কীসব ভেবে ফেলেছে! এটা যদি এই ভীতু মেয়েটা জানতো! মাথা ঘুরে পরে যেত নিশ্চয়ই?
তার চেয়ে থাকার মাঝেই,হঠাৎ তাকালো পুষ্পিতা। ওমনি শশব্যস্ত দৃষ্টি সরায় সে। তড়িৎ কিছু ভাঁজ পড়ল মেয়েটার শ্বেত ললাটে। কেন যেন মনে হলো,স্যার তাকিয়েছিলেন। সেই আগের দিনের মতোই। ও মাথা নোয়াতেই, তীব্র আবার তাকায়। যখনই চোখ তোলে, ফিরিয়ে আনে মুখ। টানা কয়েকবার চলল এসব। ভীতু মেয়ে ধরতে না পারায়,তীব্রর পো*ড়া ঠোঁটে শব্দহীন ফিচেল হাসির ধারা। হঠাৎ ঝট করে তাকাল পুষ্পিতা। তৎপর মিলে গেল নজর। তীব্র থতমত খায়। ভীষণ ব্যাপৃতের চাউনী আড়ালের প্রয়াস ব্যর্থ হলো এবার। ধরা পড়ায় মুখবিবরে বিব্রতের ছাপ বসল।
কিন্তু আনত চিবুকে ঠোঁট চেপে হাসল পুষ্পিতা। গায়ের সাথে ওড়নাটা শীতের কম্বলের মতো পেঁচিয়ে নিলো খানিক। তীব্র চশমার কোণা দিয়ে চাইল ফের৷ কপাল গোটাল দৃশ্যটায়। গলা খাঁকারি দিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“ তোমার কি শীত লাগছে?”
মাথায় নাড়ল ও। তীব্র এক পল নিজের দিকে দেখে। পরনে কেবল চেক শার্ট একটা। আচ্ছা, সিনেমার হিরোদের মতো এটা খুলে দিয়ে দেবে ওকে?
না থাক, খালি গায়ে তাকে নিশ্চয়ই হিরোর মত লাগবে না। অমন বাজে রূপ এক্ষুনি ভিতু মেয়েকে দেখানোর কোনো দরকার নেই।
বৃষ্টি থামল দশ মিনিটের মাথায়। গাড়ি ততক্ষণে ভিজে চুপচুপে হয়েছে। উপায়হীনতায় সেই ভেজা গাড়িতেই বসতে হলো ওদের৷
তীব্র ইঞ্জিন চালু করতে যাবে, তক্ষুণি জানলায় এসে দাঁড়ালেন এক প্রৌঢ়া নারী। উ,আ করে থালাটা এগিয়ে দিলেন শুধু। বোঝা গেল তিনি কথা বলতে পারেন না। কিন্তু তীব্রর মেজাজ চটে যায়। শালা এই বৃষ্টিতে মানুষ নড়তে-চড়তে পারে না,অথচ এরা ঠিকই ভিক্ষা নিতে আসে! যেহেতু পুষ্পিতা পাশে,রা*গ দেখানো গেল না। এই ক*ষ্টসাধ্য ভদ্র-সভ্য ইমেজটা তো ধরে রাখা প্রয়োজন৷ নিজেকে উদার প্রমাণে মানিব্যাগ বের করে একশ টাকা দিলো সে। বৃদ্ধা নারী মাথা নাড়লেন খুশিতে৷ লাঠিতে ভর দিয়ে সামনে চলে গেলেন। উল্টোপাশ থেকে রিক্সা ছুটে আসছিল তখন। ওদের চোখের সামনেই, বৃদ্ধা ধা*ক্কা খেলেন তাতে। তুরন্ত,ছিটকে পড়লেন রেইনট্রির গায়ে। চোখের সামনের দূর্ঘটনায়,
পুষ্পিতার কোমল মন আঁতকে উঠলেও,নির্বিকার বসে রইল তীব্র। বরং ব্যস্ত হলো হুইল ঘোরাতে। পুষ্পিতা নামতে ধরল তখনই। তীব্র খপ করে হাতটা চেপে ধরে বলল,
“ এই মেয়ে, কোথায় যাচ্ছো?”
সে উদ্বীগ্ন হয়ে বলল,
“ স্যার উনি পড়ে গেছেন তো! সাহায্য লাগে কী না দেখি।”
তীব্র এমন ভাবে চাইল,যেন আশ্চর্য কিছু শুনেছে। ততোধিক বিস্ময় তার কণ্ঠে,
“ তুমি কেন সাহায্য করবে? তুমি কি ওনাকে চেনো?”
মাথা নাড়ল পুষ্পিতা।
“ না।”
“ তাহলে নামছো কেন?”
“ চিনি না তাতে কী? বয়স্ক মানুষটা পড়ে গেলেন, হয়তো ব্য*থাও পেয়েছেন।!”
তীব্রর বদমেজাজী ভাব ফিরে এলো আবার। সুপ্ত ভাবে ক্রো*ধ চেপে বসল কাঁধে। একটা বাজখাই ধ*মক দিয়ে বলতে মন চাইল,
“ শোনো মেয়ে, এখানে অনেক লোক আছে! সাহায্য করার হলে, তারা করবে। তোমাকে এত ভাবতে হবেনা।”
অথচ এর আগেই চপল পায়ে নেমে গেল মেয়েটা। তীব্র দাঁত পিষল বসে বসে। বাধ্য হয়ে নিজেও নামল এবার। এমনিতেই ভেজা সিটে বসে জামাকাপড়ের অর্ধেক ভিজে গেছে। তারওপর এসব আপদ!
ধা*ক্কা দেয়া রিক্সাচালক বিপদ কাটাতে আরো আগেই ভেগে গেছেন। দু একজন লোক জড়ো হলেও ভিক্ষুক নারীটিকে ছোঁয়ার মতো আগ্রহ তাদের নেই। ওদিকে মাথায় আ*ঘাত পেয়েছেন তিনি। কপাল ফেটে নেমেছে লালচে তরলের গলগলে স্রোত৷
পুষ্পিতা ছুটে গিয়ে ধরল ওনাকে। কন্ঠে উদ্বেগ,
“ আল্লাহ র*ক্ত বের হয়েছে তো! ফার্স্ট এইড দরকার।”
ভদ্রমহিলা ঝাপসা চোখ কাটিয়ে ওঠার আগেই, ওর হাতের ওপর অজ্ঞান হয়ে গেলেন। ততক্ষণে আশেপাশে লোকজন ভিড়েছে। তীব্রও এসে দাঁড়াল। তার মাথার মধ্যে দাউদাউ করছে আ*গুন। বন্ধুদের ছাড়া কোনোদিন এভাবে যাকে তাকে সাহায্য করা স্বভাবে নেই। এই ভীতু মেয়ের কী দরকার ছিল নেমে আসার? পাশ কাটিয়ে চলে গেলেই তো পারত। সে বিড়বিড় করল,
“ অসহ্য!”
তন্মধ্যে একজন বললেন,
“ সামনের গলিতে একটা হাসপাতাল আছে। আপনারা চাইলে ওনাকে সেখানে নিয়ে যেতে পারেন। “
এইবার খেই হারাল ছেলেটা। ভেস্তে গেল শান্ত থাকা। স্বভাবসুলভ খ্যাক করে বলল,
“ কেন? আমরা নিয়ে যাব কেন?
আপনারাও তো আছেন এখানে। অন্যের মাথায় কাঁঠাল ভা*ঙতে দারুণ লাগে তাই না?”
ভদ্রলোক চুপসে গিয়ে বললেন,
“ না মানে আপনাদের উপকারের জন্যই বললাম!”
পুষ্পিতা প্রৌঢ়ার গাল চাপড়াচ্ছে। ব্যাগ থেকে পানি বের করে মুখে ছেটালো তারপর। জ্ঞান ফিরল,তবে নিস্তেজ তিনি। বেশ কিছু দিন অভুক্ত থাকার মতোন শীর্ণকায় শরীর। ও ভীত কন্ঠে বলল,
“ স্যার ওনার মনে হয় কিছু হয়েছে! চলুন না হাসপাতালে নিয়ে যাই!”
তীব্র মানা করতে চেয়েও, পারল না। ভীতু মেয়ের হৃদয় নাড়ানো অনুনয় মস্তকের তপ্ততা কমিয়ে আনল খানিক। অসন্তোষ কণ্ঠ চাপা দিয়ে বলল,
“ ওকে!”
আশেপাশে কোন মহিলা নেই। পুষ্পিতার মতো রোগা মেয়ের পক্ষে অচেতন কাউকে তোলা অসম্ভব। সেখানে গাড়ি অবধি নিয়ে যাওয়া বহু দূরের ব্যাপার! দু একবার চেষ্টা করে অসহায় চোখে ওর দিক তাকাল সে। মৃগনেত্রের ভাষা বুঝে গেল তীব্র। আরেকদিক চেয়ে ঠোঁট গোল করে দম ফেলল। কথাবার্তা বিহীন নারীটিকে উঠিয়ে নিলো দুহাতে। বৃদ্ধা চমকে গেলেন ভীষণ। আহত শরীর ভুলে অবাক চোখে চেয়ে রইলেন। কিন্তু তীব্রর সেসব দেখার সময় নেই। রাগে শরীর জ্ব*লছে তার। শুভ্র আননে বিরক্তির সুস্পষ্ট ছটা। পুষ্পিতা পিছু পিছু আসে। অসমান রাস্তার বুক হতে ছুটে যায় তীব্রর লাল জিপ।
___
রিসিপশনের করিডরে দাঁড়িয়ে আছে তীব্র। মহাবিরক্ত ভঙ্গিতে শার্ট ঝাড়ছে বারবার। ভিক্ষুক বৃদ্ধার শরীরের সমস্ত নোংরা তার গায়েও লেগেছে। সব ওই ভীতু মেয়ের বেশি বোঝার ফল! এই মেয়ের এইটুকু শরীরে এত মায়া থাকবে কেন! বৃদ্ধাকে ফার্স্টএইড দিতে এমার্জেন্সীতে নেয়া হয়েছে। পুষ্পিতা পুরোটা সময় সাথে সাথে থাকলেও তীব্র দাঁড়িয়ে ছিল বাইরে। প্রায় আধঘন্টার মাথায় ছাড়া পেলেন তিনি। পুষ্পিতার কণ্ঠ শুনে কপালে ভাঁজ নিয়ে ফিরে চাইল তীব্র। মেয়েটা বড় যত্নে,সাবধানে নিয়ে আসছেন বৃদ্ধাকে। আস্তে,দেখে হাঁটুন.. এমন কত রকম সতর্কতা তার! তীব্র ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলল,
“ হয়ে গেছে? চলো তাহলে।”
পুষ্পিতার ছোটো স্বর,
“ স্যার,উনি মনে হয় আপনাকে কিছু বলতে চান। কিছু একটা বলছিলেন হাত নেড়ে। আমার যতটুকু মনে হলো আর কী!”
তীব্র ভ্রু কুঁচকে বলল,
“ আমাকে আবার কী বলবে?”
বৃদ্ধা ইশারা করলেন চেয়ারের দিকে। বসতে চাইছেন তিনি। পুষ্পিতা নিয়ে বসাল সেখানে। মফস্বল হওয়ায় এখানে অনেক ভিড়।
ভদ্রমহিলা বসেই, তীব্রকে হাত নেড়ে কাছে ডাকলেন। এত্ত বিরক্ত লাগল ওর! এক পল পুষ্পিতার দিকে দেখল। এই মেয়ে ভীতু,কিন্তু অতিরিক্ত পাঁকা। আগ বাড়িয়ে এত ঝক্কি পোহানোর কী দরকার ছিল? উফ!
সে এগিয়ে গেল অনিচ্ছায়। কর্কশ কণ্ঠটায় জোর করে মিষ্টি আনার চেষ্টা করে বলল,
“ জি বলুন!”
বৃদ্ধা সত্যিই বাকশক্তিহীন। কথার বদলে হাত দেখালেন নিচু হতে। তীব্র চ সূচক শব্দ করল। এত রং-তামাশা কী ভালো লাগে? ধুর বা*।
অনীহ ভঙ্গিতে হাঁটুগেড়ে বসল তাও। বীতঃস্পৃহায় থমথমে চেহারা। বৃদ্ধা চামড়ায় কুঁচকে যাওয়া হাতটা তুলে মাথায় রাখলেন ওর। সোনালী চুলে হাত পড়তেই তীব্রর চাউনী থমকায়। বিমূর্ত হয়। চোখ তোলে তৎপর। বৃদ্ধার চোখে জল। তাঁর নিজেরও দুটো ছেলে আছে। স্বামী মারা যাওয়ার পরই, দায়িত্ব থেকে মুখ ফেরায় তারা। জন্মদাত্রী মাকে গলগ্রহ ভেবে তাড়িয়ে দিলো বাড়ি থেকে। পেটের দ্বায়ে কিছু বছর যাবত রাস্তায় ভিক্ষা করছেন তিনি। মানুষের লাথি-ঝাটার সঙ্গে পরিচিত এখন । কখনো ক্ষুধা কমাতে ফেলে দেয়া পচা খাবারও গিলেছেন। সে মানুষকে এমন একটা ছেলে একেবারে হাতে করে এখানে চিকিৎসা করাতে নিয়ে এলো! এমন ভালো মানুষ এখনো আছে দুনিয়ায়? তীব্রর জন্য সত্যিই মন-প্রান উজাড় করে দোয়া করলেন তিনি। জীর্ণ কাপড়ে চোখ মুছে আ- উ করে বলার চেষ্টা করলেন কিছু। তীব্র সেসব বোঝেনি। সে হাঁ করে চেয়ে রইল বৃদ্ধার চোখের দিকে। দৃষ্টিজুড়ে কেবল লুটিয়ে পড়া দোয়া। মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে আকাশপথে ইশারা করছেন বারবার। নীরবে বোঝাচ্ছেন ‘আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুক!’ মা ছাড়া এভাবে কেউ কখনো দোয়া করেনি তো। উলটে গা*লম*ন্দ করেছে। হয়ত অভিশা*পও দিয়েছে। সামনে সম্মান দেখিয়ে পেছনে কত বাজে ভাষা ব্যবহার করেছে কে জানে! তার কর্মই যে গালি শোনার মতো। আচ্ছা,সে কি তবে একটা ভালো কাজ করেছে আজ? কিন্তু নিজের ইচ্ছেয় তো কিছু করেনি। যা করেছে অনীহায়,অনাগ্রহে। পুষ্পিতার জন্য বাধ্য হয়ে।
তীব্র মাথা নিচু করল। খেয়াল পড়ল,হুট করে তার সমস্ত বিরক্তি মুছে গেছে। বুকে জমেছে কিছু পুঙ্খ পুঙ্খ ভালো লাগা। কাউকে সাহায্য করলে এমন ভালোবাসা পাওয়া যায় জানতো না তো। অবশ্য জানবেই বা কীভাবে? কখনো কারো উপকারেই যে আসেনি। উলটে সব সময় সবার ক্ষতি করেছে। এলাকার সবাইকে জ্বা*লিয়ে মে*রেছে।
তীব্রর বিলাতি সাদাটে আঁখিতে মায়া ভিড়ল আজ। ঘাড় কাত করে নজর ফেরাল পুষ্পিতার দিকে। যার পুরন্ত ঠোঁটে হাসির স্রোত! এই মেয়েটা তার জীবনে আসার পর থেকেই সব এভাবে বদলে যাচ্ছে কেন? প্রথমে তার পোশাক বদলাল। হালচাল বদলাল। বদলে গেল তার কথা বলার ধরণ। বিট্টু মাস্তান থেকে লেকচারার তীব্র হওয়ার মতো পরিচয় হলো।
তীব্রর মনে প্রশ্ন জাগে আজ। এভাবে কী তার পৃথিবীটাও বদলাবে? অতীতে বখাটেপনা,মা*স্তানি, বেপরোয়া জীবনের কালো ধোঁয়ায়,ভীতু মেয়েটাই কী হয়ে উঠবে সন্ধ্যাপ্রদীপ?
চলবে…