কলমে: নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
(২৩)
ঝলঝলে নীলচে আকাশ।
অভিমানে কালো হয়ে যাওয়া মেঘটা এখন আনন্দের হাসি হাসছে। আর্দ্র পীচের বুকে শাই শাই বেগে ধেয়ে চলেছে লাল জিপ। গতিতে ক্লান্তি নেই! চারপাশে তখন গন্ধবহের ফুরফুরে রেশ। অথচ থম মেরে বসে আছে তীব্র। অন্য সময় পুষ্পিতা আশেপাশে থাকলে,বারবার আড়চোখে ফিরে চায় ছেলেটা। মায়াবী মুখে লেপ্টে থাকে আবিল, চোরা অক্ষিপট। ঠিকড়ে রাখে স্বীয় অভিভূতির সবটুকু ধ্যান। কিন্তু আজকে মুখে কথা নেই। প্রাণ নেই দৃষ্টিতে। শরীরী উদাসীনতায়,যন্ত্রমানবের ন্যায় ড্রাইভ করছে কেবল।
তবে, পুষ্পিতার নিভু নেত্র বারংবার তীব্রতে ঘুরে আসছে। সরল চোখ যুগলে বিহ্বলতার বাণ। কোটর দুটোয় টলটল করছে ভিন্ন কোনো ভাষা। বিস্ময়াবিষ্ট মস্তিকে বাক্য জাগছে কেবল,
“ স্যার কত বড়ো মাপের মানুষ! এত দামি গাড়ি যার সে নিশ্চয়ই অনেক স্বচ্ছল ঘরের ছেলে! অথচ মনের মধ্যে বিন্দুমাত্র অ*হংকার নেই! কী অবলীলায় একজন দুঃস্থ মানুষকে সাহায্য করলেন আজ! নিজের টাকা খরচ করে চিকিৎসাও করিয়েছেন। এই যুগে এমন ভালো মানুষও হয়?
মৃদু হাসল সে। তবে এই সুন্দর হাসিটায় আজকে চেয়ে থাকেনি তীব্র। ফিরেও দেখেনি। তার নিবেশন অন্য কোথাও আটকে। চোখে ভাসছে বৃদ্ধার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়ার দৃশ্য। কুচকে যাওয়া চামড়া ভাঁজে, চোখ জুড়ানো মমতা। আর এখানেই তীব্রর সকল আপত্তি, সকল বিরোধিতা জমা হচ্ছে এসে।
দোয়া পাওয়ার মতো কোনো কাজ তো করেনি ও। বাধ্য হয়ে কিছু করা, আর নিজের উদ্যোগে কিছু করা কি এক? এক না। তাহলে অহেতুক কেন এগুলোর মধ্যে জড়িয়ে যাচ্ছে সে?
তীব্রর মধ্যে আকুল দোটানা! ফ্যাসফ্যাসে চিত্ত সাহারা খুঁজতে খুঁজতে নিশ্চুপ কাটল সারাপথ। সেই আনচানে মনে হৃষ্টতা আসেনি৷ এফ.এম এ গান বাজেনি উত্তমের। হাওয়ায় ভাসেনি কোনো প্রশ্ন তরী। তবে দেখতে দেখতে হাজির হয়েছে গন্তব্য।
পুষ্পিতারা যে বিল্ডিং-এ থাকে, তার পাশাপাশি একটা বড়ো বিল্ডিংয়ের গ্যারেজে গাড়ি রাখে তীব্র।
সেখানেই থামল জিপ। বিলম্বহীন নেমে যায় সে। পুষ্পিতা নামল আস্তেধীরে!
দুজনের নিভন্ত নীরবতা প্রতাপ পেয়েছে বেশ। তীব্র কপাল কুঁচকে পায়ের বুটের দিকে চেয়ে রইল। ঝ*লসে যাওয়া কালচে ঠোঁট, সম্মুখ দাঁতে কা*টা৷ খুব সুনিপুণ ভাবে ভাবনায় ডুব দিয়েছে যেন।
কিন্তু কিছু বলতে উশখুশ করছে পুষ্পিতা। জড়তা আর সংকোচে নম্র-সম্র জ্বিভখানা ইচ্ছেপূর্বক বিফল হলো। পরাজয় মেনে শ্বাস তুলল বক্ষপট। চুপচাপ ব্যাগ থেকে ফোন-ওয়ালেট বের করে বাড়িয়ে দিলো ওর দিকে। তীব্রর ললাট রেখা গাঢ় হয়। তাকায় চোখ তুলে। ফোন ওয়ালেট নিতে নিতেই,
হুট করে প্রশ্ন ছুঁড়ে বসে,
“ কী কী করলে ভালো কাজ হয়,তুমি জানো?”
পুষ্পিতা কিছু হতভম্ব হলো। চেয়ে রইল ফ্যালফ্যালে চোখে। অপ্রত্যাশিত প্রশ্নে ভরকেছে খানিক। স্যার হঠাৎ এসব জিজ্ঞেস করছেন কেন?
তীব্রর গুরুতর ভঙ্গিতে বাঁকানো ভ্রু,আর জিজ্ঞাসু নজর দুটি ঘাবড়ে দেয় ওকে।
পরপরই টানটান করল চেহারা। মনে পড়ল সকালের কথা! তখন তো স্যারের পড়া বলতে পারেনি। সেজন্যেই কী এগুলো শুনতে চাইছেন? না কি দেখতে চাইছেন বইপুস্তকের পড়া না পারা মেয়ের সাধারণ জ্ঞান আছে কী না!
মেয়েটা মাথা নামাল।
মুখ সংকীর্ণ করে বলল,
“ ইয়ে.. ভালো কাজ মানে তো স্যার.. এই যে আপনি একজনের বিপদ দেখে এগিয়ে এলেন সেটা।”
“ আর?”
পুরু ধ্বনির উত্তরে উদ্বেগ নিয়ে আওড়াল পুষ্পিতা,
“ আর হলো জেনেবুঝে কারো ক্ষ*তি না করা। কথায়-কাজে কাউকে কষ্ট না দেয়া। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো। আমার জানামতে এসবই ভালো কাজ স্যার!”
পায়ের পাতা থেকে চোখ তুলে চাইল পুষ্পিতা। প্রয়াস খাটাল তীব্রর অভিব্যক্তি বোঝার৷
মাঝদুপুরে এমন রাস্তায় দাঁড়িয়ে ও পড়া উগরেছে,অথচ জবাব দেয় না সে মানুষ। নূন্যতম হুঁ,হা-ও নেই।
পুষ্পিতা বিভ্রমে ভুগে শুধায়,
“ আমি কি ঠিক বললাম স্যার?”
নড়ে উঠল তীব্র,
“ হুঁ? হ্যাঁ।”
এতসময়ের অনুচিন্তনে থমকে থাকা আদলে,ভারিক্কি ভিড়ল পরপর। তেমন ভারি শোনাল গলার স্বর। গেটের দিকে ইশারা করে বলল,
“ ভেতরে যাও।”
পুষ্পিতা আনন্দ পেলো। সহজ প্রশ্নের সঠিক জবাব গুছিয়ে দিতে পারায়, শ্বাস টানল স্বস্তির। মাথা নেড়ে হাঁটা ধরল ঘুরে। অথচ লম্বা শরীর সহ স্তম্ভের মতো দাঁড়িয়ে রইল তীব্র। ভেতরটায় হাসফাস করছে কেমন। শিরা কে*টে ফেলে রাখা প্রানীর মত ছ*টফ*টে লাগছে সব কিছু। পালাক্রমে চোখের পর্দায় ছুটে বেড়ানো ভ্রমে, দুষ্কর হচ্ছে সহজ থাকা। কখনো হাসপাতালের সেই বৃদ্ধাকে মনে পড়ছে। কখনো আবার নিজের ফেলে আসা অতীত গুলো।
গত বছর এক মধ্যবয়সী লোকের মুদি দোকান ভা*ঙতে গিয়েছিল ওরা। কু*খ্যাতিতে এগিয়ে থাকা সেই বিট্টু মা*স্তানের গ্যাং। ভদ্রলোক চাঁদা দিতে দেরী করেছেন। সেখানে মাসের তিন তারিখে টাকা জমা দেয়ার কথা থাকে,সেখানে সেদিন সাত তারিখ। তীব্র চ*টে গেল। ভরা হাঁটবাজারেই ক্রেন দিয়ে গুড়িয়ে দিলো টিনের চাল। লোকটা কেঁ*দে কেঁ*দে অনুনয় করেছেন,পা চেপে মিনতি করেছেন। কঠোর তীব্র শোনেনি। বরং চারপাশের মানুষগুলোর ভ*য়*ড*রে চিমসে যাওয়া মুখ,ভদ্রলোকের অস*হায়ত্ব দেখে পৈশা*চিকতায় হৈহৈ করছিল ওষ্ঠপুট।
তৎক্ষনাৎ চোখ খিঁচে বুজে ফেলল তীব্র। চ সূচক শব্দ তুলল জ্বিভে। আজকে প্রথমবার সেই কাজের জন্যে আফসোস হচ্ছে তার। আক্ষেপে চৌচির হলো অন্তঃপট।
ঢোক গিলে ভাবল,
“ আমি যে কোনোদিন কোনো ভালো কাজই করিনি। উলটে যাকে পেরেছি মে*রেছি, কষ্ট দিয়েছি। ভীতু মেয়েটা এসব জানলে পছন্দ করবে না আমায়? ভালোবাসবে না?”
নিজের শেষ কথাতে নিজেই চমকে উঠল তীব্র। শশব্যস্ত প্রকট আঁখিতে ফিরে দেখল পুষ্পিতাকে। মেয়েটা চলে যাচ্ছে। পিঠের সাথে হেলেদুলে সন্ধি করছে কালো বেনুনি৷ তীব্রর হৃদপিণ্ড থমকে থাকে। থমকে থাকে পৃথিবী। বক্ষস্পন্দের গতিবেগ,থিঁতিয়ে আসে সহসা। ভালোবাসা! নিটোল ওষ্ঠভাঁজে শব্দখানা আওড়ে ফেলল কয়েকবার। এত শ্রুতিমধুর বাক্যও হয়? শুনতে এত শান্তি লাগছে কেন? বলতেই বা কীসের এমন সুখ?
তীব্র নিজেকেই প্রশ্ন করে,
“ আমি কি ভিতু মেয়েকে ভালোবাসি? আচ্ছা, ভালো না বাসলে কি কারো জন্যে এত কিছু করা যায়?”
সেই প্রথম দিকের আকর্ষণ, সন্দিহান ভালো লাগাকে প্রশ্রয় দিতে গিয়েই কি অ*ঘটন ঘটে গেল? এইভাবে নিজেকে যাচাই করার লড়াইয়ে নেমে মন প্রাণ ফেঁসে গেছে আমার? ভীতু মেয়েতে খেই হারালাম আমি?
পুষ্পিতা কেচি গেট খুলেছে।
তীব্রর অন্যমনস্ক নজর দুটো লেপ্টে রইল সেথায়। অচিরাৎ দাঁড়িয়ে গেল মেয়েটা। ফিরে তাকাল কিছু একটা ভেবে! তবে তীব্রর মধ্যে তাড়া নেই এবার। তখনকার মতোন চোখ সরানোর যু*দ্ধ নামেনি সে। নিবিষ্ট যোগে চেয়ে রইল। সরাসরি অবিচল,অচপল দৃষ্টিদ্বয়ের কবলে পড়েই,পুষ্পিতার বুক কাঁ*পে। ঝাঁকুনি লাগে সমগ্র দেহে। পিঠ পেরিয়ে নেমে যায়, গাঢ়-প্রগাঢ় সফেদ স্রোত। তীব্রর বক্ষ জুড়ে উচাটন৷ শ্রবণ রুদ্ধ করা ধুপধাপ আওয়াজ। ভীতু মেয়ের ঘুরে তাকানোয় প্রবল হলো সেটা। মনে পড়ল মিরাজকে বলা,
“ প্রেমে পড়িনি। প্রেমে পড়লে বুক ধুকপুক করে। আমার ওসব হয়নি।”
অচিরে টলে উঠল দেহ। নড়ল চোখের ভার। আজ তো বুক ধুকপুক করছে। এইত, পরিষ্কার শব্দ পাচ্ছে সে। হৃদযন্ত্রের বাইরে লুটিয়ে আসার অমত্ত আয়োজন যেন। মস্তিষ্কের দোলাচল ছুটে বেড়াচ্ছে দিশাহীন। বুক ফুলিয়ে শ্বাস ফেলল তীব্র। হঠাৎই ফিচেল হাস্যবাণে ওষ্ঠ তুলল এক দিকে। কথার নিবিড় আলোয় দ*প*দ*প করল আঁখি। কপালের পাশ চুলকে ভাবল,
“ভীতু মেয়ে! পছন্দের জোরে এসে, ভালোবেসে ফেলেছি।
বিট্টু মাস্তানকে প্রেমে ফাঁসালে তো! তার প্রেম কিন্তু লেকচারার তীব্রর মতো সভ্য হবে না।”
****
দরজায় ঠকঠক শব্দ। বেল না টিপে নিরন্তর ধা*ক্কা দিচ্ছে কেউ একজন৷ নাহিদ ছুটে এলো গতিতে। দরজা খুলতেই ওপাশের আয়েশা খাতুন হাসলেন। শশব্যস্ত সালাম দিলো নাহিদ। বিনম্র তার ভঙ্গি,
“ ভেতরে আসুন আন্টি।”
আয়েশার সদ্য ফোটা হাসি নিভে গেল। নাহিদকে দেখে ভাঁজ বসল কপালে। ছেলেটাকে বেশ কয়েকবার দেখলেও,কথা হচ্ছে আজ। তিনি এসেছেন তীব্রর কাছে। ভেতরে উঁকি দিলেন এক নজর। নাহিদ বুঝতে পেরে বলল,
“ বিট্টু কে খুঁজছেন?”
বেখেয়ালে মাথা ঝাঁকান আয়েশা। খেয়াল পড়তেই সতর্ক চোখে চাইলেন। কণ্ঠে অনিশ্চয়তা,
“ কী বললে?”
নাহিদের বুকখানা ছ্যা*ৎ করে ওঠে। এই রে,মুখ ফস্কে বিট্টু বেরিয়ে গেছে। তীব্র জানলে মে*রেই ফেলবে আজ। ওদিকে আয়েশার তীক্ষ্ণ চাউনী। সব মিলিয়ে বিপা*কে পড়ল ছেলেটা। পরিস্থিতি বাগে আনা জরুরি! ঠোঁটে হাসি টেনে মিনমিন করে বলল,
“ ইয়ে মানে, বললাম যে একটু আগে ফিরেছেন?”
ঠোঁট চেপে চোখ ঝাপটালেন আয়েশা। কেন যেন মনে হলো ছেলেটা এই কথা বলেনি। তবে বিশেষ মাথা ঘামালেন না।
নরম গলায় বললেন,
“ পুষ্পিতার স্যারকে একটু ডেকে দেবে বাবা?”
“ তীব্র তো মাত্র শাওয়ারে ঢুকেছে আন্টি। এক ঘন্টার আগে বের হবে না। আপনি এসে বসুন না ভেতরে।”
প্রস্তাব রেখে নিজেই মনে মনে, না না করল নাহিদ। প্রার্থনা ছুঁড়ল আকাশে,
উনি যেন কোনোভাবেই ভেতরে না ঢোকেন। ওদের ঘরের ওপর দিয়ে ছোটো-খাটো ঝ*ড় বয়েছে আজ। এদিক-সেদিক জামাকাপড়, মোজা। এসব দেখলে কী ভাববেন কে জানে!
আয়েশা ভেতরে গেলেন না। তবে অবাক কণ্ঠে বললেন,
“ এই ভর সন্ধ্যে বেলা গোসল করছে?
তাও এমন ঠান্ডার সময়?”
নাহিদ দাঁত মেলে হাসল।
“ ও এরকমই।”
মাথা নাড়লেন তিনি।
“ ও আচ্ছা। তাহলে বরং যেজন্যে এলাম,সেটা তোমাকেই বলে যাই।”
নাহিদ ভ্রু গোছাল,
“ কিছু হয়েছে আন্টি?”
আয়েশা হেসে বললেন,
“ আরে না। কী হবে? আসলে কাল তো শুক্রবার। ছুটির দিন। তাই কাল দুপুরে আমাদের বাসায় তোমাদেরকে দাওয়াত দিতে এলাম।”
ওর কণ্ঠে বিস্ময়,
“ হঠাৎ দাওয়াত কেন আন্টি?”
“ ওমা, দাওয়াতে আবার কারণ থাকে না কি? তোমরা এতদিন এসেছো এখানে,ঠিকঠাক তো আলাপই হলো না। কাল এসো কেমন?
কোনো না শুনবো না কিন্তু!”
নাহিদ খানিক দ্বিধাদ্বন্দে পড়ল। বিট্টুর থেকে না শুনে কী বলবে সে? তার চিন্তাভাবনার মধ্যেই নিজেদের ঘরে ঢুকে গেলেন আয়েশা। নাহিদ নিজেও দরজা আটকাল। পিছু ঘুরতেই সামনে এসে দাঁড়ালো তীব্র। সদ্য ভেজা উন্মুক্ত শরীর। প্রতিটা জলের ফোঁটা যেন উজ্জ্বল হীরকচূর্ণ! শুধাল ভীষণ ঠান্ডা গলায়,
“ কে এসেছিল?”
“ পাশের বাসার আন্টি। কাল দুপুরের জন্য দাওয়াত দিলেন আমাদের।”
“ হঠাৎ?”
আয়েশার বলে যাওয়া তখনকার কথাটাই হুবুহু অনুকরণ করল নাহিদ। বলল তার নিজের মতো,
“ ওমা, দাওয়াতে আবার কারণ থাকে না কি? আমরা এতদিন এসেছি এখানে,ঠিকঠাক তো আলাপই হলো না। কাল যেতে হবে কেমন?
কোনো না শুনবে না কিন্তু!”
তীব্র নাক-চোখ কোঁচকায়। সে বলল,
“ এভাবে তাকাচ্ছিস কেন? এসব কি আমি বলেছি,উনিই তো বলে গেলেন।”
চাউনী সরু হয় ছেলেটার। নিম্নোষ্ঠের নরম ত্বক পি*ষে ফেলল দাঁতে। একটু চুপ থেকে বলল,
“ ব্যাপারটা তো সুবিধের লাগছে না। হুট করে বাসায় দাওয়াত কেন?”
অথচ ততোটাই নিশ্চিন্ত দেখাল নাহিদকে। কাঁধ উঁচাল উত্তরে,
“ কী জানি। দেখ হয়তো তোর সাথে পুষ্পিতার বিয়ের প্রস্তাব দেবে!”
মিটিমিটি হাসিটা দেখেই তীব্রের গা জ্ব*লে উঠল রা*গে,
মোটা স্বরে বলল,
“ ইদানিং খুব খই ফুটছে তোর মুখে। তাই না?”
নাহিদ আশ্চর্য হয়৷ অবোধ কণ্ঠে বলে,
“ আমি কী করলাম? আচ্ছা যদি এটা নাই হবে, তাহলে শুধু শুধু কেউ কেন দাওয়াত দেবে আমাদের?”
তীব্র ধ*মক দিলো মৃদূ গলায়,
“ চুপ কর। ডিম ভাজতে বলেছিলাম, ভেজেছিস?”
মাথা নাড়ল সে। ভাজেনি। বন্ধুর ক*ট*ম*টে চিবুক দেখেই তৎপর দুহাত তুলে বলল,
“ ওকে ওকে। এভাবে তাকাতে হবে না ভাই। এক্ষুণি ভেজে দিচ্ছি।”
পাশ কাটিয়ে গেল খুব ভদ্র ভাবে। অথচ দুরুত্ব বাড়তেই বিড়বিড় করে বলল,
“ শা*লা মাস্তান। লেকচারার সাজলে কী হবে, গু*ন্ডা তো গু*ন্ডাই থাকে। কথায় কথায় মা*রতে আসে আমায়।”
ও ভেবেছিল তীব্র শোনেনি। হঠাৎ সে পিছু ফিরে বলল,
“ তুই যাবি?”
কিছু চমকায় নাহিদ। থতমত খেয়ে রান্নাঘরে ঢুকে যায় দ্রুত। কিন্তু তীব্রর ভাবনা গেল না। এই দাওয়াত নিয়েই যত উদ্ভট কথা মাথায় আসছে। এর মধ্যে আবার অন্য কোনো গল্প নেই তো?
***
নূহা আদা ছিলছে, আর কে*টে দিচ্ছে পুষ্পিতা। পাশেই পেয়াজ-রসুন ব্লেন্ড করছেন আয়েশা। এখন থেকেই আগামী আয়োজনের সব তোরজোর শুরু হয়েছে তাদের।
কিন্তু নূহার মাথা গরম। আজকাল ওকেও তীব্রর রোগে ধরেছে। যখন তখন মেজাজ চ*টে যায়। এই যে এখন ফুলেফেঁপে সব একেবারে বো*ম হয়ে আছে।
আর সেই রাগের পেছনেও আয়েশা দায়ী। আজকে হুট করে বাজারে এনেছেন তিনি। তারপর ঘোষণা করলেন ‘’পুষ্পিতার স্যারকে দাওয়াত দিয়ে এসেছি’’ মায়ের দ্বারা এমন রসিকতা মানা যায়? সেজন্যেই মুখ গোঁজ করে বসে আছে মেয়েটা।
কেন মা এরকম করবেন? ওদের সাথে একটু আলোচনা করা গেল না? ওরা কি এতোটাই ছোটো?
পুষ্পিতাকেও কিছু বলেনি। কথাটা শুনেও গাধীটাও ওর মতো ফ্যালফ্যাল করে চেয়েছিল। কোনো মানে হয় এসবের?
আয়েশা হাতের কাজ শেষ করে আদা নিতে এসেছেন। চোখ পড়ল মেয়ের ওপর। শ্যামলা আননে মেঘ দেখে বললেন,
“ কী হয়েছে তোর? আজকাল একটু হলেই দেখি চেহারাটাকে বিড়ালের হাগু বানিয়ে রাখিস!”
ফিক করে হেসে ফেলল পুষ্পিতা।
নূহা নাক-মুখ গোটাল। বমি পাওয়ার ভান করে বলল,
“ ইয়াক আম্মু,তোমার কাছে আর কোনো উদাহরণ ছিল না?”
“ না। যা সত্যি তাই তো বলেছি। সামান্য ঊনিশ-বিশ ঘটলেই তোর মুখের দিকে তাকানো যায় না কেন?”
“ তো কী করব আমি? তুমি গিয়ে দুজন মানুষকে দাওয়াত দিয়ে এসেছো, একবার বললেও না আমাদের?”
“ কী বলব? তোর সাথে পরামর্শ করতে গেলেই তো সেই পুরোনো কথা বলবি,যে না ব্যাচেলর ছেলে আম্মু। ওদের বাসায় আনার দরকার নেই।”
পুষ্পিতা মিটিমিটি হাসছে। নূহা বিরক্ত কণ্ঠে বলল,
“ ঠিকই তো বলি। আর এসব আমাকে কে শিখিয়েছে শুনি? তুমিই তো। তাহলে এখন তোমাকে আমার শেখাতে হচ্ছে কেন?”
মেয়ের চো*ট*পা*ট দেখে মুচকি হাসলেন আয়েশা। কাছে বসে বললেন,
“ সেসব তো তোর ভালোর জন্যই বলতাম মা। আমি না থাকাকালীন অপরিচিত কেন, পরিচিত কোনো ছেলেও বাসায় ঢোকাবি না। কিন্তু কাল তো আমি থাকব। আর মানুষটা পুষ্পিতার স্যার। ওনার তো একটা সম্মান আছে। সেদিন রান্না করতে গিয়ে হাত কে*টেছে শুনে, সৌজন্যবোধেও তো একটু দাওয়াত করে খাওয়ানো উচিত! তাই না?”
কাজে ব্যস্ত হাতটা থেমে গেল পুষ্পিতার। মাথা তুলল অবাক হয়ে। তার স্যারের জন্য আন্টি এত ভাবছেন? মণিও ঠিক এরকমই ছিল না? কত মিল দুজনের! দুজনেই কত মমতাময়ী! পুষ্পিতার ফাঁকা বুকটা হুহু করে উঠল। আজ কতগুলো দিন পেরিয়েছে! রাহাত, মণি কাউকে চোখের দেখা তো দূর, কণ্ঠস্বরটা পর্যন্ত শোনে না। আচ্ছা, একবার কি লুকিয়ে দেখা করে আসবে? যখন খালুজান বাড়িতে থাকে না তখন তো যাওয়া যেতেই পারে।
পরপরই স্বীয় সিদ্ধান্তের বিরোধাভাস করল সে। একবার ওখানে গেলে, মণি আর ফিরতে দেবে না। রাহাতটা হাত ছাড়বে কী না সন্দেহ! তখন নতুন করে আবার ঝামেলা করবেন খালুজান। মণির সংসারে আর কোনো অ*শান্তি চায় না সে। তাছাড়া ওই পুরো বিল্ডিংয়ের লোকগুলো,কথায়,খোঁচায় মে*রে ফেলবে ওকে। পুষ্পিতা ব্য*থিত শ্বাস ফেলল। মাঝেমধ্যে প্রিয় মানুষদের ভালোর জন্যেও দূরে থাকতে হয়!
***
রাত ১টা বেজে ২০ মিনিট।
সমস্ত কাজ গুছিয়ে সবে মাত্র ঘুমোতে এসেছে ওরা। নূহা একেবারে ফ্রেশ-ট্রেশ হয়ে ঘুরে ঢুকল। মায়ের প্রতি রা*গটা এখন অল্প-আধটু কমেছে।
না,দাওয়াত দেয়ার বিষয়টা খারাপ হয়নি। বরং ভালোই হলো। সত্যিই তো,ব্যাচেলর ছেলে দুটো একারা থাকে। কী খায় কে জানে!
হঠাৎ আজকের মুহুর্তগুলো এক এক করে মনে পড়ল নূহার। গাড়ির কাচ খুলে নাহিদের মাথা বের করে হেসে দেয়া দৃশ্য। কী চমৎকার করে হাসে সে! না,মানুষটা ভালো। আর যাই হোক, ছেলেদের চাউনি দেখলে চরিত্র বোঝা যায়। সেই ভিত্তিতে আজকের পুরোটা সময় নিজের তীক্ষ্ণতা দিয়ে তাকে বিচার করেছে নূহা। ওর ভাবনার মত জ*ঘন্য কিছু তো দূর, গাড়ির ভেতর নাহিদ ধারে অবধি ঘেঁষেনি। একদম জানলায় লেপ্টে বসেছিল। সাদাসিধে তবে সত্যিই চরিত্রবাণ ছেলে সে। নাহিদের কথাগুলো মনে করে হেসে ফেলল নূহা। ওই যে বলেছিল,
“ আমাকে ভ*য় পাওয়ার থেকে গরুর গুঁতোকে ভ*য় পাওয়াও ভালো। সেই কথাতেই ঠোঁট ফুঁড়ে বাইরে এলো দাঁত।
আচমকা চোখ পড়ল আয়নায়। সামনে বসে চুল আচড়াচ্ছে পুষ্পিতা। অথচ নিবেশন অন্য কোথাও। দর্পণে চোখ নেই। চেয়ে আছে দেয়ালের ওপর। পুষ্পিতার এই উদাসীনতা নূহার পরতে পরতে চেনা। যখন খুব বেশি চিন্তায় থাকে ও, তখন এমন করে। আবার কী হলো মেয়েটার?
নূহা ত্রস্ত এগিয়ে গেল কাছে। কাঁধে হাত রাখতেই, একদম চমকে উঠল সে।
নূহার চাউনী পাল্টাল। প্রগাঢ় হলো সন্দেহ। কন্ঠে উদ্বেগ,
“ কী হয়েছে তোর? এতো কী ভাবছিলি?”
পুষ্পিতা ঘন ঘন মাথা ঝাঁকায়,
“ কিছু না। কিছু না।”
নূহা রেগে রেগে বলল,
“ দেখ পুষ্পিতা, মিথ্যে বলা পছন্দ করি না আমি। আবার সেটা যদি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড বলে তাহলে যে মাথাটা কোন লেভেলের গরম হবে, তুই নিজেও ভাবতে পারছিস না।”
পুষ্পিতা ঠোঁট ওল্টাল । মাথা নুইয়ে ডু*ব দিল চিন্তায়। মনঃদ্বিধা উপচে পড়ছে আদলে।
মিনসে কণ্ঠে বলল,
“ একটা কথা বলতাম। কিন্তু তুই আসলে কীভাবে নিবি সেটাই ভাবছি।”
নূহা দুই ভ্রু উঁচাল। অবাক হওয়ার ভান করে বলল,
“ ও তাই? পুষ্পিতা নামের মেয়েটা এখন আমার সাথে কথা বলতেও ভাবছে? আচ্ছা যা,শুনবোই না। তোর কথা তুই তোর পেটেই রেখে দে।”
মেকি অভিমান নিয়ে নূহা চলে যেতে নিলো। ব্যস্ত ভঙ্গিতে কনুই টেনে ধরল পুষ্পিতা। মৃদু স্বরে বলল ,
“ রাগ করিস না! আসলে এরকম কখনো কিছু বলিনি তো, তাই একটু কেমন কেমন লাগছে!
নূহার কণ্ঠ সন্দিহান,
“ কী হয়েছে বলতো? কোনো সমস্যায় পড়েছিস?”
পুষ্পিতা মাথা নাড়ল। চিবুক নিলো গলায়।
হাজার খানেক ইতস্ততা মিশে এলো স্বরে,
“ তীব্র স্যার না আমার দিকে কেমন করে চেয়ে থাকে জানিস। মানে হয় না কিছু তাকানোর ধরণ? উফ,কীভাবে যে বোঝাই তোকে! মানে ওই হয় না,দেখায় না সিনেমাতে? ওরকম আর কী!”
নূহা জোরে বলে ফেলল,
“ কীইই? কেমন করে তাকায়?”
পুষ্পিতা হকচকায়। চাপা কন্ঠে শা*সিয়ে ওঠে,
“ আহা আস্তে,কেউ শুনে ফেলবে তো।”
নূহা স্বর নামাল। ছোটো চোখ বড়ো করে বলল,
“ কী বলছিস? উনি কি তোকে কখনো কিছু বলেছেন?”
“ না। কিছু বলেনি। কিন্তু প্রায়ই দেখি চেয়ে থাকে। আর সেটা মোটেই স্বাভাবিক চাউনী না।”
পরপরই উদ্বেগ নিয়ে বলল
“ দেখ আমি যতই বোকা হই, কিন্তু মেয়ে তো। একটা মেয়ে হয়ে একটা ছেলে কীভাবে তাকায় বুঝবো না?”
নূহা বিজ্ঞের ন্যায় মাথা দোলাল। হুটহাট
কন্ঠ রুক্ষ করে বলল,
“ সে তো তাকাবেই। আরো যা, রান্না করে দিয়ে আয়। ওই রান্না খেয়েই ব্যাটার মাথা খারাপ হয়েছে। একে সুন্দরী মেয়ে, দুইয়ে ভালো রান্না জানে। তিনে মেয়ে আবার ভীষণ নরম। যাকে কাদামাটির মতো এদিক আ*ছড়াও,ওদিক আ*ছড়াও টু শব্দ করবে না। এমন মেয়ে হাতছাড়া করা যায়? ছেলেরা তো বউ হিসেবে এরকম মেয়েই চাইবে।”
পুষ্পিতা তব্দা খেয়ে বলল,
“ আমি বললাম তাকানোর কথা। তুই বউ পর্যন্ত চলে গেছিস?”
“ যাব না? আমি তো বউ অবধি গিয়েছি, তোর স্যার দ্যাখ গিয়ে তোর সাথে মনে মনে ফ্যামিলি প্ল্যানিংও করে ফেলেছে।”
পুষ্পিতা জ্বিভ কা*টল। হাসফাঁস করল নীরব লাজে। বুকের মধ্যে ঝুপঝাপ কাঁপুনি উঠেছে হঠাৎ। শুভ্র কপোলে ভিড় করছে হুড়মুড়ে কুণ্ঠা। নূহার চোখে সেই সবটা ধরা পড়ল। কণ্ঠ পুরু করে বলল,
“ সত্যি করে বলতো, তুই কি ওনাকে পছন্দ করিস?”
পুষ্পিতার উদ্বীগ্ন জবাব,
“ এ বাবা, না না। আমি তো ওনাকে নিয়ে এরকম কিছু ভাবিইনি কখনো। আর ভাববও বা কী করে? স্যার হলেন বা…”
মাঝপথেই তে*তে উঠল নূহা,
“ একদম তোর এই ব্যাকডেটেড ডায়লগ দিবি না। স্যার বাবার মত,স্যার বাবার মত! খালি এক কথা।
আজকাল কার স্যাররা না বাবার মত হয় না। আর তীব্র স্যার যেই ইয়াং, তোর মতন ওনার মেয়ে থাকবে কখনো? গাধী একটা! এখন যুগ পাল্টেছে। কত স্টুডেন্ট-টিচার বিয়ে হচ্ছে জানিস? এই তো শাহরুখ খানের মেহুনা মুভি তেও নায়িকা টিচার ছিল ওর। তাতে কী হয়েছে? ঠিকই তো একসাথে নেচে নেচে গান গাইল..
❝ তুমসে মিলকে দিলকা হে যো হাল ক্যা কাহে..
হো গায়া হে ক্যায়সা এ কামাল ক্যা কাহে!❞
পুষ্পিতার দেয়ার মতো যুক্তি নেই। অথচ তীব্রর সাথে এমন কিছু ভাবলেও লজ্জায় কাঁ*টা দিচ্ছে শরীর। তাছাড়া তনুজাও স্যার বলতে অ*জ্ঞান। নূহাটাকে এখন কিছু বোঝালেও বুঝবে না। থাক গে! সে
আমতা আমতা করেও চুপ করে গেল। নূহা
মুরুব্বিদের মতোন হাবভাব করে বলল,
“ ঠিক আছে। ব্যাপারটা তুই আমার ওপরে ছেড়ে দে। তোর স্যার দেখতে ভালো। মানুষটাও খারাপ না। আগে একটু যাচাই করে নেই৷ বুঝে নেই যে আমার বন্ধুকে সে কতটা সুখে রাখবে! পাশ করলে আমি নিজে এগিয়ে দেব তোকে।”
পুষ্পিতা হাঁ করে ফেলল। কন্ঠে বিরক্তি এনে বলল,
“ এইজন্যই কথাটা তোকে বলতে চাইনি। কী একটা জানিয়েছি,আর বিজ্ঞানী আপা কত কী ভেবে ফেলেছেন! থাক আপা,আপনাকে আর যাচাই করার দরকার নেই। আপনি ঘুমান।”
অতীষ্ঠ ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে চলে গেল মেয়েটা। ব্রাশে পেস্ট মেখে বেসিনের সামনে গিয়ে দাঁড়াল।
নূহা উচ্চস্বরে বলল
“ হ্যাঁ হ্যাঁ, এখন তো এসব বলবিই। আমি বললে দোষ তাই না? মনে রাখিস, গরিবের কথা বাসি হলে মিষ্টি লাগে। এখন আমার কথা খারাপ লাগল তো, এটাই না একদিন সত্যি হয়ে যায়!”
পুষ্পিতা এক কান দিয়ে শুনেও,আরেক কান দিয়ে বের করে দিলো।
তবে মাঝরাতের এই উচ্চবাচ্য বাইরে অবধি ছড়িয়ে যায়। নিজের ঘর হতে চেঁ*চিয়ে উঠলেন আয়েশা,
“ কী ব্যাপার নূহা? এখনো ঘুমাওনি তোমরা?”
তিনি থামলেন। সঙ্গে সঙ্গে চিল্লিয়ে ওঠে ব্যাচেলর ছেলের দল,
“ না আন্টি। আপনার মেয়েরা আমাদের সাথে ঘুমাবে বলে জেগে আছে।”
নূহা ক্ষে*পে কিছু বলতে যায়। পরপরই থামায় নিজেকে। এই রাতবিরেতে দেয়ালের রং খসে পড়লেও বি*কট শব্দ হবে। সেখানে ও চ্যাঁচালে তো কথাই নেই। পুরো গাজীপুর তে*ড়ে আসে কী না! এই অ*সভ্য গুলো যে কবে যাবে এখান থেকে? এদের জ্বা*লা থেকেই বা শান্তি দেবে কে?
পলাশ ঘুরে ঢুকতেই মিথিলা চেঁচিয়ে ওঠে,
“ জেনির সাথে অফিস গিয়েছিলে কেন?”
হঠাৎ নিনাদে ভরকায় সে ৷ পল্লব ঝাপটায় বিভ্রমে।
“ জেনির সাথে যাব কেন?”
মিথিলা আঙুল তুলে হু*শিয়ারী দিলো,
“ একদম মিথ্যে বলবে না। আমি নিজে দেখেছি তোমাদের মাখামাখি। তুমি একজন বিবাহিত পুরুষ ! বাইরের একটা মেয়ের সাথে তোমার এত ঢলাঢলি কীসের আমি বুঝি না? বোকা পেয়েছো আমাকে?”
পলাশ চুপচাপ জুতো খুলে র্যাকে রাখল। একটা কথাও না বলে সোজা চলে এলো বেড রুমে। স্পষ্ট অবজ্ঞা মিথিলার গায়ে সূচের মতো বিঁ*ধে। হনহন করে এসেই দরজায় লা*থি মারল।
চিৎ*কার ছুঁড়ল ফের,
“ কানাডায় নিয়ে এসেছো বলে আমাকে মানুষ মনে করো না তুমি? কাজের লোকের মতো ট্রিট করছো, রান্না করাচ্ছো। আর বাইরে গিয়ে গা ঘেঁষে থাকছো জেনির? কোথায় গেছিলে তুমি হ্যাঁ? অফিসে,না হোটেলে?”
পলাশ আ*গুন চোখে চায়। হু*ঙ্কার ছোঁড়ে কঠিন স্বরে,
“ একদম বাজে কথা বলবে না। জেনি আমার বন্ধু,আর কতবার বলতে হবে তোমাকে?”
“ বন্ধু মাই ফুট! আমার বন্ধু ছিল না? জীবনে কোনো বন্ধু দেখিনি আমি? কই,তারা তো এমন গা চিপকে থাকে না। যেখানে দেখুক,যার সামনে দেখুক ওই চূন্নি মেয়ে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে তোমাকে। কেন? হোয়াই?”
পলাশ দাঁত কি*ড়*মি*ড় করে এগিয়ে এলো। শক্ত বাঁধনে কনুই চেপে ধরতেই, মিথিলা ব্য*থা পায়। ক*কিয়ে ওঠে। পলাশ রুষ্ট কণ্ঠে বলল,
“ বস্তির মতো চেল্লাবে না এখানে। এই এপার্টমেন্টে আমার সুনাম আছে। তোমার জন্য যদি সেখানে একটুও আঙুল তোলে কেউ, তাহলে কিন্তু…”
মিথিলা তেলেবেগুনে জ্ব*লে ওঠে
“ তাহলে কী,কী করবে তুমি? মা*রবে?”
পলাশের র*ক্ত ফুটল রা*গে। আচমকা হাত ছেড়ে গাল চেপে ধরল। মেয়েটা ব্য*থায় নয়,থমকে গেল বিস্ময়ে।
ও হিঁ*স*হিঁ*স করে বলল,
“ দরকার পড়লে আমি মা*রতেও পারি মিথিলা। এখনো সময় আছে নিজের জ্বিভ আর অ*হংকারকে সামলে রাখো। ভুল জায়গায় দেখাতে এলে কিন্তু নিজেই বি*পদে পড়বে।”
ছেড়ে দিলো তারপর।
মিথিলার তৎপর নিজের চিবুকে হাত বোলায়। য*ন্ত্রণায় সব অবশের মতো লাগছে। বিমূঢ় হয়ে বলল,
“ বিয়ের দু মাসও হয়নি, তুমি আমার গায়ে হাত তুললে পলাশ?”
“ এজন্যে তুমিই দায়ী। আমার সঙ্গে ভদ্র থাকো,কিচ্ছু বলব না। অ*ভদ্রতা করলেই…’”
হাত উঁচিয়ে থাপ্পড় দেখায় পলাশ। স্তম্ভিতের চক্করে ক্ষণপূর্বের ব্য*থা ভুলে গেল মিথিলা। ক্ষে*পে উঠল বাঘিনীর ন্যায়,
“ তুমি অন্য মেয়ের সঙ্গে নষ্টামি করতে পারবে আর আমি বললেই সেটা অ*ভদ্রতা তাই না? আবার হুমকি দিচ্ছো আমাকে মার”বে?”
পলাশ চোখ রাঙিয়ে সাবধান করল,
“ ডোন্ট ক্রস ইওর লিমিট মিথিলা। নষ্টামি আমি নই, তুমি করে বেড়িয়েছো। কে জানে নাহিদের মতো আরও কত বয়ফ্রেন্ড ধরা ছিল দেশে। আর আজকালকার প্রেম কেমন হয় সবাই জানে! ক’বার শুয়েছিলে সেটা বলো!”
মিথিলা স্তব্ধ হয়ে গেল।
গলার স্বর ফা*টল উচ্চ ধ্বনিতে
“ পলাশ!”
“ শেষ করে ফেলব একদম। আমার সাথে এইভাবে কথা বলার সাহস করবে না মিথিলা। সারাদিন অফিসে গাধার মতো খেটে এসে এখন তোমার রং তামাশা দেখতে হবে? এই যাও সামনে থেকে যাও, এক্ষুণি!”
বলতে বলতে ওকে দুহাত বাড়িয়ে ধা*ক্কা দিলো পলাশ মিথিলা পিছিয়ে যায়। প্রকোপে পড়তে পড়তেও সামলে ওঠে। তবে ক্ষুন্নতায় উথলে পড়ছে চোখ। কোটর ফে*টে স্বচ্ছ জল ছুটে আসতে চাইছে। দৌড়ে বেরিয়ে এলো সে। অন্য কামরায় ঢুকে দরজা লাগিয়ে বসে পড়ল মেঝেতে। হঠাৎ করেই ঝাপসা চোখে ভেসে উঠল নাহিদের সরল মুখখানি। কিছু অনুতাপ,কিছু আক্ষেপ গলার কাছে কুণ্ডলী পাঁকাল ওমনি। কেন পলাশকে বিয়ে করতে গেল ও!
এর থেকে হাজার গুণ ভালো ছিল নাহিদ। ওটাকে বিয়ে করলে আজ জীবন অন্যরকম হোতো। ওর কথায় উঠত-বসতো ছেলেটা। মিথিলা মাথায় হাত দিয়ে কাঁদে।
ইস,এখন সব শেষ তার!
চলবে,