কলমে: নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
(২৭)
পুষ্পিতা নিস্তব্ধ। সুদর্শণার নয়ন ভরতি কেবল ফ্যালফ্যালে বিস্ময়। টের পাচ্ছে,শ্রবণেন্দ্রিয়ের উষ্ণ ধোঁয়ার সৃষ্টি। কুণ্ডলী পাঁকিয়ে কোথাও ছুটে পালিয়ে যাচ্ছে ওরা। মেয়েটা এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না,একটু আগেই তীব্র বলল ওসব!
অথচ গোল গোল চাউনী দেখে হাসল সেই যুবক। ভীষণ চতুরের ন্যায় মিটিমিটি হাসি। পুষ্পিতা স্তম্ভের মত থেমে। কণ্ঠে অনিশ্চয়তা,
“ হ্যাঁ?”
তীব্রর মাঝে বিব্রত হওয়ার চিহ্ন মাত্র নেই। নিটোল ওষ্ঠ হাস্যবাণে বহাল। উত্তরের বদলে আচমকা ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে দিলো সে। পুষ্পিতা হকচকায়। সিমেন্টের মতো লেগে যায় দেওয়ালে। তীব্র একইরকম চেয়ে থেকে বলল,
“ কী বলেছি,বোঝোনি?”
পুষ্পিতা জবাব দেবে, কী বলবে কিচ্ছু জানে না। তার কান দুটো ঝা ঝা করছে কেমন।
তীব্র ভ্রু বাঁকায়,
“ আশ্চর্য। কথা নেই কেন?”
পুষ্পিতা নড়ে উঠল। ঠিক ছলকে ওঠে হাওয়ার মতো দেখাল তার শীর্ণ দেহ। কথা থাকবে কী করে? বিস্ময়ের দাপাদাপিতে যে সব খুইয়েছে।
বেগ পুহিয়ে তার ঠোঁট নড়ল এবার। তীব্রর মনে হলো কথা নয়,রক্তজবা হতে বেরিয়ে এসেছে সুরশাল এসরাজের সুর। খুব মিহি আওয়াজে শোনাল,
“ আপনি আমাকে এসব বলছেন কেন? আপনি তো আমার স্যার।”
তীব্র কপাল কুঁচকাল,
“ তো?”
পুষ্পিতা মিইয়ে এলো ওর ‘তো’ বলার ধরণে। আনত হয়ে বলল,
“ এসব বলা ঠিক না। মানুষ শুনলে কী ভাববে?”
তীব্র অমনি সোজা হয়ে দাঁড়ায়। দুরুত্ব বাড়ায়। প্রসস্থ কাঁধ উঁচায় জবাবে,
“ এখানে ভাবার কী আছে? মানুষ মানুষকে সুন্দর বলতে পারে না?”
পুষ্পিতা বলতে গেল,
“ না মানে, তা পারে। কিন্তু আপনি আমাকে..
কথা কেড়ে নিলো সে,
“ তোমাকে কী? সুন্দর বলেছি? আচ্ছা একটা কথা বলো, আমি দেখতে কেমন?”
পুষ্পিতা হতভম্ব চোখে চাইল,
“ জি?”
তীব্র চ সূচক শব্দ করে বলল,
“ এই জি ছাড়া আর কিছু শেখোনি?”
পুষ্পিতা ঠোঁট ওল্টাল। ও ফের শুধাল,
“ বললে না, আমাকে দেখতে কেমন?”
পুষ্পিতা ছটফটে চিত্তে একবার নিজেকে,আরেকবার তীব্রকে দেখল। দুজন এত্ত কাছাকাছি! আরেকটু হলেই চওড়া বুকটা মিশে যাবে তার শরীরে। এই প্রশ্নের উত্তর না পেলে লোকটা যে ছাড়বে না ঢেড় বুঝেছে।
চোখ নামিয়ে বলল,” ভালো।”
তীব্র চোখ সরু করল,
“ শুধু ভালো?”
ওর কণ্ঠে মৃদু উদ্বেগ,
“ না আসলে,সুন্দর!”
সাথে লজ্জায় বুজে এলো সে। যেন
মাথা তুলতেও কষ্ট!
তেড়ে আসা হাসি, পুরন্ত ঠোঁটে পিষে নিলো তীব্র। সহজ কণ্ঠের বক্র প্রশ্ন,
“ এবার যে তুমি আমাকে সুন্দর বলেছ,এটা শুনলে কেউ কিছু ভাববে না?”
পুষ্পিতা মাথা তোলে।
“ আপনিই তো জিজ্ঞেস করলেন।”
“ আমি জিজ্ঞেস করলেই বলবে?”
পুষ্পিতা এমনিতেই বোকা। বুদ্ধি সুদ্ধি যা ছিল সেটুকুও এলোমেলো হয়ে গেল। চেয়ে রইল নির্বোধের মতন।
তীব্র আরেকবার হুট করে চলে গেল কাছে। সুরম্য ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে মেয়েটা আঁতকে ওঠে। গুটিয়ে যায়।
তীব্রর বাইসেপসে উত্থলে ওঠা হাতটা দেয়ালে ঠেকাল। ঠিক তার মাথার পাশে।
পুষ্পিতার ভরকে যাওয়া মুখখানায় এক সেকেন্ডে ঘুরিয়ে আনল নজর।
একেবারে সোজাসুজি, ভণিতাহীন জানিয়ে দিলো,
“ সুন্দরকে আমি সুন্দর বলতে জানি। আজ তুমি একা,কাল যদি চারপাশে একশজনও থাকে,আমি তাও বলব তুমি সুন্দর! তুমি সুন্দর! তুমি সুন্দর!”
শেষ টুকু বলতে বলতে গলার স্বর আরো কমে এলো তীব্রর। ঠিক যেমন কমে এলো পুষ্পিতের হৃদযন্ত্রের গতি! অস্থির চিত্তে একটুখানি জলের জন্য হাঁসফাঁস করল সে। যখন ধাতস্থ হলো,তীব্র তখন সামনে নেই। চলে গেছে। বুকের তোলপাড় আর ধুক ধুক শব্দের তোপে সেই প্রস্থান অবধি টের পেলো না মেয়েটা।
****
একটা শক্ত খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছে মিথিলা। তার মুখে ঘন আমাবস্যার চিহ্ন। সামনে, টেবিলে বসে চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে পলাশ। আর এতেই রাগ বেড়ে চড়াও হচ্ছে ওর। রান্না করে দিতেই,ষাড়ের মতো গিলতে বসে গেল। একবার সাধলও না। বললও না চলো একসাথে খাই! মিথিলার দুঃখ উপচে আসে বুকে। এমন জীবন কি ও চেয়েছিল? কানাডা কানাডা করে লাফিয়েছে। বিদেশ বিভুই ঘুরে একাকার করার চিন্তায় যেখানে অস্থির ছিল,সেখানে আসার পর থেকে ঘরবন্দী। পলাশটা কোথাও নিয়ে যায় না।
মিথিলা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে একবার নজর বোলাল হাতে। রান্নার সময় তেলে পেয়াজ ছাড়তে গিয়ে ছিটকে এসেছে কিছু। জ্বলছে খুব! ফোস্কা পড়তে পারে। এত আহা-উহু করল,অথচ পলাশটা ফিরে অবধি দেখেনি। মিথিলার এতো কান্না পেয়েছিল তখন। ও দীর্ঘশ্বাস ফেলল। কিছু অতীতের কথা মনে পড়ল হঠাৎ।
একবার রাহাতের পরীক্ষার সময় সালমা বেগম সাথে গিয়েছিলেন। পুষ্পিতা নিজে থেকেই রান্না করতে গেল। ভাতের মাড় গলাতে গিয়ে,সব গড়িয়ে হাতে পড়ল বেচারীর। চিৎকার শুনেও মিথিলা ঘর থেকে নড়েনি। যখন পুষ্পিতা নিজে ছুটে এসে ক্ষত জায়গায় মলম লাগাচ্ছিল কেঁদে কেঁদে,সেও একইরকম মুখ ঘুরিয়ে থেকেছে। একটাবার জিজ্ঞাসাও করল না, কী হয়েছে! ওর হাত খসে পড়ে যাক,তাতে তার কী!
ইস,না জানি তখন পুষ্পিতাটার কত খারাপ লেগেছিল। মিথিলার আজ খুব আফসোস হলো নিজের আচরণ নিয়ে। এই যে ও কোনো কাজ করেনি বাড়িতে,কেন? পুষ্পিতার জন্যেই তো। চাওয়ার আগে মুখের সামনে পানির গ্লাস বাড়িয়ে ধরত মেয়েটা। আচ্ছা,ওকে কী খুঁজে পাওয়া গেছে? বিদেশে এলো কতগুলো দিন,অথচ বাড়িতে কথা হয়েছে মাত্র দু-তিনদিন হবে। পলাশ ওকে এখনো এখানকার সিম কার্ড কিনে দেয়নি। নিজের ফোন থেকেও তেমন কথা বলতে দেয় না। শয়তানটা কী যে চায়!
পলাশ খেতে খেতে একবার চোখ তুলে চাইল। মিথিলার ভাবনায় বুঁদ মুখায়ব দেখে হাসল মনে মনে। কী দাপট দেখিয়েছিল প্রথম প্রথম, অথচ এখন চোখমুখে কী অসহায়ত্ব। অহংকারে উড়বি আর? কথা শুরু করতে গলা খাঁকারি দিলো সে। বলল,
“ দাঁড়িয়ে আছো কেন? খেতে বসলেই তো পারো।”
মিথিলা নড়ে ওঠে। ভাবনা কেটে যায়। সাথে বদলে যায় মুখভঙ্গি। রেগে ভাবে,
“ হুঁহ,এতক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি চোখ পড়েনি। এখন নিজের খাওয়া প্রায় শেষ, তখন বলছে।”
ভাব নিয়ে বলল,
“ খিদে নেই।”
পলাশ মাথা নাড়ল।
“ ও আচ্ছা।”
তার নম্র স্বর শুনে মিথিলা ভেবেছিল একটু ইগো দেখাবে। তাহলে ঠিক ওকে সাধবে পলাশ। তোষামোদের মতো অনুরোধও করবে। অথচ সে পুরুষ আরেকটিবার ওসব মুখেও আনা দূর,আচমকা ভাতের গামলায় জল ঢেলে দিলো। আঁতকে উঠল মিথিলা। আর্তনাদ করে বলল,
“ এ কী!”
পলাশ নিরুৎসাহিত। উঠে,চলে গেল বেসিনে। মিথিলা তখনও হতচেতন, হতবাক। গোলাকার চোখদুটো বাইরে ঠিকড়ে আসার দশা। পরপরই তেজে জ্বলে উঠল মাথা।
পলাশের কাছে গিয়ে বলল,
“ কী করলে এটা?”
পলাশ হাত কচলে কচলে ধুচ্ছে। না চেয়ে বলল,
“ কী করলাম?”
“ ভাতে পানি ঢাললে কেন?”
“ তুমি না বললে খিদে নেই?”
“ তাই বলে তুমি পানি ঢালবে?”
পলাশ বলল,
“ হ্যাঁ। নাহলে নষ্ট হোতো। আর ফ্রিজে রাখা ভাত গরম করে খেতে নেই। ব্যাকটেরিয়া হয়।”
মিথিলা আশ্চর্য বনে রইল। কিছু বলার ভাষা অবধি নেই। তার স্তম্ভিত হয়ে থাকার মাঝেই পাশ কাটিয়ে ঘরে চলে গেল পলাশ। যেতে যেতে ওষ্ঠপুটে দেখা গেল সিনেমার ভিলেন সম অসরল হাসি। পেছনে দাঁড়িয়ে ফুঁসল মিথিলা। পলাশ যে ইচ্ছে করে কাজটা করেছে বুঝতে বাকী নেই।
না, অনেক হয়েছে! এই সংসার নামক চিড়িয়াখানায় আর পোষাচ্ছে না ওর। পলাশ কোনো রকম দায়িত্ব তো পালন করেই না,উলটে জ্বালিয়ে মারে ওকে। খাবার-দাবার মুখের সামনে এগিয়ে দেয়া,জুতো মুছিয়ে নেয়। অথচ রাতে ঠিকই সুরসুর করে কম্বলের তলায় ডাকে। কেন? সে কি ওর খোড়াক মেটানোর বস্তু?
না না, আর সম্ভব না। কালই ও বাবাকে ফোন করবে। বলবে এখান থেকে নিয়ে যেতে। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার কোনো দরকার নেই। কানাডার এই বিভৎস রূপ তার চাই না। এর থেকে দেশেই ভালো!
*****
ঘরের ভেতর ভোঁ ভোঁ শব্দে সিলিং ফ্যান চলছে। বাইরে নিশ্চুপ,ঠান্ডা প্রকৃতিতে, হামাগুড়ির মতো কড়কড়ে কোলাহল। সব কিছু ছাপিয়ে হাঁ করে নাহিদের দিকে চেয়ে আছে নূহা। মাথার স্নায়ু গুলো ঠিকঠাক কাজ করছে না ওর৷ বিচক্ষণ মেয়েটার বেয়াক্কেল ভাবমূর্তি বড্ড বেমানান লাগছে আজ। ওদিকে ভীষণ মনযোগে তটস্থ নাহিদ। তার চোখ দুটো ফেবিকলের ন্যায় বসে আছে ল্যাপটপে। মাঝেমধ্যে কিছু লেখালেখি করছে খাতার সাদা পাতায়। মনোনিবেশের শতভাগ খাটিয়ে নূহার এসাইনমেন্ট করছে ছেলেটা। আর এতেই যত বিস্ময় ওর। এই মুহুর্তে দুজন বসে আছে নূহাদের ফ্ল্যাটে। কাজ শেষে বড়ো করে দম ফেলল নাহিদ। ঠোঁট দুটোতে যুদ্ধজয়ের মতো হাসি টেনে নূহার দিকে চাইল। কলমের কালি গাঁথা
কাগজ গুলো বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“ নিন। আপনার এসাইনমেন্ট ডান।”
নূহা তখনও তাজ্জব। অবাকের তোড় সামলে ওঠেনি। বিহ্বল হয়ে বলল,
“ শেষ?”
“ জি। দেখুন সব ঠিকঠাক আছে কী না।”
নূহা দ্বিধাগ্রস্ত তার জবাব নিয়ে। হাতে নিলো কাগজ। কিন্তু এখনও তার বিস্ময় কাটেনি যে। সেই ধাক্কার দোলাচলে কোনো কিছুই বিশেষ মাথায় ঢুকল না। নাহিদ একবার দেয়াল ঘড়ি দেখল। সময়টা মেপে নিয়ে উঠে দাঁড়াল চটপট। ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলল,
“ আমি এখন আসছি মিস নূহা। আমার আরেকটা ইন্টারভিউ আছে।”
নূহা তাকিয়ে। কিছু বললও না,কিছু করলও না। এমনকি এক চুল নড়ল না অবধি৷ ও বলল,
“ থাকুন তবে। আর আপনার প্রফেসর কী ফিডব্যাক দেয় এটা দেখে একটু জানাবেন কেমন? অনেক দিন পর করলাম,ভুল থাকতে পারে। আসি।”
নাহিদ নিজের মতো বলে-কয়ে বেরিয়ে গেল। তখনও এক ভাবে চেয়ে রয় মেয়েটা। এই বোকা ছেলেটা আসলেই এত ব্রিলিয়ান্ট? এক চুটকিতে সব এসাইনমেন্ট শেষ করে ফেলল! দরজার লকটা ছোটো করে শব্দ তুলতেই হুশ ফিরল নূহার। নড়ে উঠল চটক কাটার ন্যায়।
নাহিদ বেরিয়ে গেছে বুঝতেই উড়ে এলো দরজায়। চেঁচিয়ে বলতে গেল,
“ আরে চা..”
চুপ করে গেল পরপর। নিজের প্রতি নিজেই ফেঁপে উঠল রাগে। বিড়বিড় করল,
“ এখন চেঁচিয়ে লাভ কী? অকাজ তো ঘটিয়েই ফেলেছিস। ইস,লোকটা এতো বড়ো উপকার করল,আর তুই? এক কাপ চাও সাধলি না? ছি!”
সময় তখন পেরিয়েছে। নাহিদের ইন্টারভিউ এগারটায়। এ মাসে এটাই তার লাস্ট ইন্টারভিউ। যত্তগুলো দিয়েছে, একটা না একটাতে তো টেকার কথা। একবার টিকে গেলেই ব্যস,আর কিচ্ছু চাই না। কাজের চাপ এমন ভাবে ডেকে ডেকে কাঁধে তুলবে,মিথিলা তো দূর! ওর চৌদ্দ গোষ্ঠির কথাও আর মনে পড়বে না।
নাহিদ প্রায় ছোটার মতো করে গেটে এসে থামল। আরেকটু সামনে এগিয়ে রিক্সা স্ট্যান্ড পড়ে। তবে ভাগ্যক্রমে বাইরে আসা মাত্রই দেখল, সম্মুখ হতে একটা খালি রিক্সা ছুটে যাচ্ছে। শশব্যস্ত ডাক ছুড়ল,
“ এই মামা!”
শুধু সে একা নয়। পেছন হতে আরেকজন ডেকে ওঠে ‘এই রিক্সা’ বলে। সমস্বরের ওই মেয়েলি আওয়াজে চকিতে ঘুরে চাইল নাহিদ। নূহা হন্তদন্ত ভঙ্গিতে সবে দাঁড়িয়েছে এসে। এত ব্যস্ত ভাবমূর্তি! কব্জিতে ঘড়ির বেল্টটা লাগাচ্ছে এখনও।
রিক্সা দাঁড়িয়েছে। দুজনকে একনজর দেখে বলল,
“ ক্যাডা যাইবেন?”
নূহা-নাহিদ মুখ চাওয়া-চাওয়ি করল। নাহিদ বলল,
“ আপনি যান। আমি অন্য রিক্সা নিয়ে নিচ্ছি।”
“ না না,আপনি আগে ডেকেছেন,আপনি যান।”
“ সমস্যা নেই। আপনি যান আপনার ক্লাস মোর ইম্পর্ট্যান্ট!”
নূহা বলল,
“ আর আপনার ইন্টারভিউ? ওটা কি গুরুত্বপূর্ণ নয়? শুধু শুধু এতো ঝামেলা করতে হবে না। আপনিই যান।”
নাহিদ মৃদূ হেসে বলল,
“ না না ঝামেলা কীসের? আমি তো বললাম অন্য রিক্সা নিয়ে নেব। আমার সমস্যা হবে না। আপনি যান।”
নূজার মেজাজ খারাপ হলো। খ্যাক করে বলল,
“ বললাম না আপনি যান। এত না না করছেন কেন হ্যাঁ?”
ছেলেটা ভ্যাবাচেকা খায়। তাজ্জব হয়ে বলে,
“ আরে,ভালো কথাই তো বলেছি। তাও রেগে যাচ্ছেন কেন?”
নূহা নিভে এলো। মিনমিন করে বলল,
“ সরি! আসলে আমার এই এক সমস্যা। যখন তখন মেজাজ চড়ে বসে। যাক গে,আপনি এতো কথা না বলে রিক্সা নিয়ে যান তো ভাই।”
নাহিদ ফের কিছু বলতেই যাচ্ছিল,রিক্সাওয়ালা বিরক্ত হয়ে বললেন,
“ আইজগুবি ব্যাপার স্যাপার তো। আমারে খাড়া করাই রাইখা নিজেরা ঠেলাঠেলি করতাছেন ক্যা? দুইজন যহন দুইজনরে চেনেনই,তহন এক লগে গ্যালেই পারেন। বাড়াও বাইচব,সময়ও।”
প্রথম দফায় খুব আশ্চর্য হলো দুজনে। একসঙ্গে যাবে,তাও এক রিক্সায়? পরপরই নূহা হাতঘড়ি দেখল। সময় বেশি নেই। যখন-তখন ফের বৃষ্টি ঝেঁপে আসবে। আর বৃষ্টি আসা মানেই,শহরের বুক থেকে রিক্সা উবে যাওয়া।
কিছুটা দোটানা নিয়ে নাহিদের দিক চাইল সে। নম্র কণ্ঠে শুধাল,
“ কোথায় যাবেন আপনি?”
“ ইয়ে বোর্ড বাজার।”
নূহা খুশি হয়ে বলল,
“ আরে তাই,আমিও তো ওই রাস্তাতেই যাব। চলুন একসাথে যাই।”
নাহিদ ভেবেছিল এত পাশাপাশি বসতে মেয়েটা রাজি হবে না। সেদিন যা দোনামনা করল! আজ এতো দ্রুত মত দেয়াতে কিছু অবাকই হয়েছে ও। কথা না বাড়িয়ে উঠে বসল রিক্সায়। নূহা বসতে বসতে বলল,
“ মামা একটু তাড়াতাড়ি চালাবেন। ক্লাসের আর মাত্র পনের মিনিট বাকী।”
“ আমিও একই কথা বলতাম। আপনি বলে কষ্ট কমিয়ে দিলেন।”
নাহিদের কণ্ঠ উচ্ছ্বল। নূহা হাসল। তারপরেই সে ফট করে বলে বসল,
“ আমি একটা ব্যাপার খেয়াল করেছি,আপনার আর আমার মেক্সিমাম চিন্তাধারা মিলে যায়। আমাদের মনের কত মিল তাই না?”
খুব সাধারণ কথাটাতেও, দপদপিয়ে হাসি মুছে গেল নূহার। ধ্বক করে কাঁপন ধরল বুকে। নিজে নিজে আওড়াল,
“ মনের মিল?”
( বাবুর জ্বর একটু কমেছে। তবে এত কান্না করে। ওকে সামলে গল্প লিখতে খুব কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জানি আপনারা আমার ওপর প্রচন্ড বিরক্ত কিন্তু কী যে করি!)
চলবে…