কলমে: নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
(০৩)
চৈত্রের শুষ্ক দিন। সকালের এই প্রহর অপূর্ব মিষ্টি! ঝরঝরে রৌদ্রস্নাত আকাশে গাঙচিলের আনাগোনা। পুষ্পিতা সেই উড়ন্ত চিলের ডানা দুটো দেখল খুব মন দিয়ে। চোখে-মুখে কাঙ্ক্ষিত কিছু স্বপ্ন। অন্তঃপটে সাজানো কতক সুশ্রী কল্পনার আলিঙ্গন।
কী স্বাধীন ওরা! কী সুখী! কোথাও শাসন নেই,বারণ নেই। কেউ নিশ্চয়ই বকেনা,ধমকায়না!
পুষ্পিতা আনমনা হয়,সাদা ঐ আকাশে চেয়ে। মানস্পটে ভাসে শৈশবের কিছু স্মৃতি, কিছু সুন্দর মুহুর্ত। যা কোনও দিন ঘটেনি, ঘটবেওনা। তেমনই এক প্রত্যাশিত, কাঙ্ক্ষিত জীবনের ছবি নিয়ে ভাবুক তার বক্ষস্থল কেঁপে কেঁপে ওঠে।
মায়ের মুখ মনে আছে পুষ্পিতার। সালমা বেগমের সঙ্গে একটি ছবি আছে ওনার এ্যালবামে। সেখানেই বাবা-মা দুজনকে দেখেছে। মণির কাছে ওর আসার সঠিক বয়স কত? মনে নেই। তবে বুঝতে শেখার পর সামনে ওই মমতাময়ী নারীটিকে পাওয়া।
ছবিতে দেখা মা-বাবাকে নিয়ে বিস্তর এক জল্পনা সাজাল পুষ্পিতা। ছোট্ট সে ছুটছে,পেছনে ভাতের থালা হাতে মা। আদুরে কণ্ঠে চোখ পাকিয়ে বলছেন,
‘ এই মেয়ে,খেয়ে নে। দুষ্টুমি করেনা।’
পুষ্পিতা শুনছে না। ছোট্ট, নির্মল মুখে তার খিলখিলে,ফুরফুরে হাসি। বাবা এলেন হঠাৎ। ওকে কোলে তুলে ফেললেন। দুগালে দুটো চুমু খেয়ে ডাকলেন,
‘ আমার মা….’
পুষ্পিতার পেল্লব হাত বাবার গলা জড়িয়ে ধরে। মা খাবার মুখে পুড়ল সুযোগে। ইশ,কী সুন্দর এক দৃশ্য!
পুষ্পিতার চোখ ভিজে ওঠে। যা হয়নি,হবেনা,সেসব ভেবে হৃদয়ের আশপাশে ছেঁয়ে আসে অমানিশার বাণ। আচ্ছা, এমন হলে কি খুব ক্ষতি হোতো?
কেন বাবা এত নির্মম? একটা দুধের শিশুকে এতিমখানায় দিয়ে আসতে তার কী মায়া হয়নি? বুক পো*ড়েনি?
কেন মা বেঁচে রইলেন না? কেন ভাগ্য ওকে বোঝা করল অন্যের? মিথিলা,রাহাত, খোরশেদুল, মণি এদের চারজনকে একসঙ্গে দেখলে যে ওর ভারী লোভ হয়। এমন একটা সুন্দর, গোছানো পরিবার কী হতে পারত না ওর?
পুষ্পিতার বুক ফুঁ*ড়ে লম্বা,ব্য*থাতুর নিঃশ্বাস এলো বাইরে। ভেজা চক্ষুদ্বয় ফিরলো শূন্য অম্বর হতে। সেকেন্ডে মলিন বাতাসে শুকিয়ে গেল চ্যাটচ্যাটে অক্ষি।
নীচে তাকাল তারপর। বাসার সামনের এই রাস্তাটা স্বল্প নির্জন। যানবাহনের মাতামাতি ততটা নেই। সে সময় মিথিলা বের হয় গেট দিয়ে। ফোন টিপতে টিপতে হাঁটছে সে। মিথিলা এবার বিবি-এ তৃতীয় বর্ষে। ভার্সিটি, বাসা থেকে অনেকটা পথ।
ওর পড়নে সালোয়ার-কামিজ,মুখে মাস্ক। বাবার কড়া নিষেধাজ্ঞায় খোলা চেহারায় যাওয়ার স্পর্ধা হয়নি। দেখতে দেখতে সে রিক্সা ডেকে উঠল।
পুষ্পিতা দেখে গেল ওকে, যতক্ষণ দেখা যায়। মিথিলার বিয়ে পাকাপোক্ত হয়েছে। চৈত্র মাস শেষেই সেই তারিখ।
পুষ্পিতার মস্তিষ্কে পৃথিবীর পরিসর বড্ড ক্ষুদ্র। ক্ষুদ্র তার দেখা-শোনার আয়তন। সেই হিসেবে জগতের সর্বাধিক সুখী মেয়েটি মিথিলা। বাবা,মা, ফুটফুটে একটা আদুরে ভাই,একটি পূর্নাঙ্গ পরিবার আছে যার,সে শুধু সুখীই নয়,সবচেয়ে ধনী!
উচ্ছ্বল কদমে পাশে এসে দাঁড়াল রাহাত। ফর্সা গা উন্মুক্ত,ভুড়ির নীচে পরেছে ছাই রঙা থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট। সেটা আবার নেমে যাচ্ছে, রাহাত টানছে ক্ষণে ক্ষণে।
বাম হাতে ফোন । যতক্ষণ বাড়িতে থাকে ওর জ্বা*লায় সালমা নিজের ফোন কাছে পাননা।
সে এসেই ডাক ছু*ড়ল,
‘ এই ছোটপু!’
পুষ্পিতা চমকে তাকাল। গোল চোখে চেয়ে পল্লব ঝাপটাল। ভীত কণ্ঠে বলল,
‘ কী?’
‘ তোমাকে না আব্বু বারান্দায় আসতে মানা করেছিল? তাও এসেছ কেন?’
রাহাতের প্রশ্নে মুরুব্বিয়ানা। যেন কত বড় সে!
পুষ্পিতা ঠোঁট ওল্টাল,
‘ মাত্রই এলাম। আচ্ছা যাচ্ছি…’
রাহাত ভীষণ চিন্তিত গলায় বলল,
‘ হ্যাঁ হ্যাঁ, তুমি এখানে বেশি এসোনা। এলাকায় অনেক বড় বড় ছেলে থাকে। তোমাকে দেখলে যদি নিয়ে যায়? তখন আমি ছোটপু কোথায় পাব?’
পুষ্পিতা থেমে দাঁড়াল। পরপর হেসে ফেলল কথাটায়। প্রতিবারের মত ওর নরম গাল টেনে দিয়ে বলল,
‘ ওরে পাঁকা বুড়ো রে!’
রাহাত হাসল। বোনের হাত ধরে নিয়ে এলো বসার ঘরে। সোফায় বসিয়ে বলল,
‘ তোমার সাথে একটা দরকারি কথা আছে বুঝলে? কাল থেকে বলার জন্য আমার পেট গুড়গুড় করছিল।’
পুষ্পিতা আগ্রহভরে শুধাল,
‘ কী কথা? ‘
সে মস্তক ঝুঁকিয়ে,সতর্ক ভাবে মায়ের ঘরটা দেখে নেয়। এই খবর পুষ্পিতা বাদে বাকীরা কেউ শুনলে যে আর আস্ত থাকবে না।
রাহাত চঞ্চল ভাবে পাশে বসল পুষ্পিতার। অথচ চাপা কণ্ঠে বলল,
‘ আমি না, কাল খুব কাছে থেকে বিট্টু মাস্তানকে দেখেছি।’
‘ বিট্টু মাস্তান ‘ ভীতু পুষ্পিতা নামখানা শুনেই শক্ত হয়ে গেল। মনে পড়ল খোরশেদুলের বলা সব বিশেষণ। সামান্য সিনেমা,নাটকে মা*রামারি,খু*নোখু*নি, র*ক্ত দেখতে ব্য*র্থ মেয়েটা আৎকে উঠল সবেগে। উদ্বীগ্ন কণ্ঠে বলল,
‘ তুমি,তুমি কী করে দেখলে? ও তোমাকে কিছু বলেনি তো?’
‘ আরে না। আমাকে কিছু বলবে কেন? তুমি জানো,কাল কী হয়েছে? একটা লোক জোরে বাইক চালিয়ে গেছিল,তাই জন্যে বিট্টু ভাই তার জামাকাপড় খুলে নিয়েছে। জাঙিয়া পরা অবস্থায় পুরো এলাকায় হাঁটিয়েছে। ‘
রাহাত হাসল,কুটিকুটি হয়ে শরীর ছেড়ে দিলো ফোমে। কিন্তু পুষ্পিতার একটুও হাসি পেলো না। বরং মায়া হলো সেই বেইজ্জ্বত হওয়া লোকের ওপর। বলল,
‘ ছি রাহাত! একজনের অসম্মান নিয়ে তুমি হাসছো? অন্যের খারাপ দেখে কী কখনও হাসতে হয়?’
রাহাত হাসি থামাল সহসা। সচকিতে শুধাল,
‘ তুমি রাগ করেছ?’
পুষ্পিতা মাথা নাড়ল। রাহাত আনন্দ চিত্তে বলতে গেল,
‘ তারপর আমি ওই বিট্টু ভাইয়ের…’
পথিমধ্যেই পুষ্পিতা আটকে দেয়,
‘ ভাই? গুন্ডা আবার ভাই হলো কবে? ‘
‘ হ্যাঁ ওই…’
‘ থাক থাক ভাইয়া,আর শুনব না। এরকম মানুষ এমনিতেই আমার পছন্দ নয়। যারা মানুষকে ক*ষ্ট দেয় তারা বাজে লোক! তুমি কিন্তু বেশি ধারে-কাছে যাবেনা ওদের। কেমন? ‘
রাহাতের স্ফূর্ত মুখবিবর মিইয়ে গেল। কোনও রকম মাথা ঝাঁকালেও মহাচিন্তায় পড়ল সে। এতটুকু শুনেই পুষ্পিতার প্রতিক্রিয়া, ওকে ধা*ক্কা দিয়ে ছু*ড়ে ফেলল ভাবনায়। তাহলে সে যে সকাল -বিকেল দুবেলা তীব্রর কাছে গিয়ে গল্প করার কথা ভাবছিল, সেটা শুনলে কী করবে আপু?
গতকাল বিকেলেও করিম শাহের দোকানে গেছিল রাহাত। তীব্র তাকে আইসক্রিম খাইয়েছে। হেসে হেসে কথা বলেছে। একদিনেই সে বনেছে তীব্রর বিরাট ফ্যান। মনে মনে তাকে ওস্তাদও বানিয়েছে নিজের। কিন্তু এখন কী হবে? না, এই নিয়ে আর কিচ্ছুটি শেয়ার করা যাবে না। আপু তো লক্ষী মেয়ে,তাই এসব পছন্দ করবেনা স্বাভাবিক । কিন্তু তীব্রকে ওর যা মনে ধরেছে, তার সাথে এক বেলা কথা না বললে চলবেনা যে। আপু জানলে, দেখা গেল, শেষে আর মা*রপিটই শেখা হবেনা। এইভাবেই বন্ধুদের মা*রধোর খেয়ে খেয়ে বড় হতে হবে!
কলিংবেল বাজল তখন। পুষ্পিতা উঠে গিয়ে দরজা খুলল। ওপাশের নারীটিকে দেখেই সালাম দিলো প্রথমে। মৃদূ হেসে বলল,
‘ আসুন আন্টি।’
রেহানা খাতুন, রাহাতদের আগের বাসার,পাশের ফ্লাটে থাকেন। পুষ্পিতাকে দেখেই দীর্ঘ হাসলেন,
‘ কেমন আছো?’
‘ ভালো। আপনি? ‘
তিনি ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে জানালেন,
‘ ভালো। তোমার খালা কোথায়?’
‘ আপনি বসুন,আমি ডেকে দিচ্ছি।’
রাহাত আর বসল না। প্যান্ট টেনে,হেলেদুলে কামড়ায় চলল।
সালমা বেগমের সেলাই মেশিনের খটখট শব্দটা থামল। কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে এলেন বাইরে। ভদ্রমহিলাকে দেখেই বললেন,
‘ আরে ভাবি যে,কী খবর?’
‘ খবর তো আপাতত ভালো ভাই। এত ভেতরের দিকে বাসা নিয়েছেন,খুঁজেই পাচ্ছিলাম না। যে ঠিকানা দিয়েছিলেন,রিক্সাওয়ালাও চিনছিল না। কী মুসিবত বলুন তো!’
‘ হ্যাঁ, ওই আপনার ভাইয়ের অফিসটা কাছে তো
এখান থেকে। তাই আর কী!’
‘ সে আপনাদের সুবিধা হলেই হচ্ছে। আচ্ছা যাক গে,আমার ব্লাউজ দুটো হলো ভাবি?’
‘ একটা করেছি ভাবি। আরেকটা বাকী।’
রেহানা খাতুন চটে গেলেন এবার।
‘ এখনও একটা বাকী? সেই কবে বানাতে দিয়েছিলাম! আপনারতো কাল দেওয়ার কথা ছিল। এখন আমি আমার ভাইঝির বিয়েতে কী পরব?’
‘ আসলে,হুট করে বাসা পাল্টালাম,আবার কাল মিথিলাকে দেখে গেল। কাজের চাপে মেশিনে বসতে পারিনি। আমাকে আজকের রাতটা দিন,কাল দুপুরের আগেই পাবেন।’
‘ এটা তো কোনও ভদ্র মানুষের কথা হলোনা। আপনি আজ দেব, কাল দেব করে করে আমাকে অনেক ঘোরাচ্ছেন। দুটো ব্লাউজ বানাতে এতদিন লাগে? মজুরি কি এক টাকাও কম দেই আমি? নির্ঘাত আমারটা রেখে অন্যদেরটা আগে বানাচ্ছিলেন। নাহলে, ওই বাসায় বসে বানাতে দিয়েছিলাম,আর এই বাসায় এসে নিতে হচ্ছে। আবার কাল আসব,বলি এত রিক্সা ভাড়া কি আপনি দেবেন?’
রাগে দাঁড়িয়ে গিয়েছেন রেহানা। সালমা বেগম শান্ত করতে বললেন,
‘ রাগ করবেন না ভাবি। আমি কাল সকালেই পাঠিয়ে দেব।’
‘ কাল সকাল না ভাই, গায়ে হলুদ দুপুরে। আপনি আজ সন্ধ্যার মধ্যেই বানিয়ে দেবেন। ‘
‘ সন্ধ্যার মধ্যেই?’
‘ হ্যাঁ। পাশের এলাকায় আমার মেয়ের বাসা,এখন সেখানে যাচ্ছি। এসে যেন দেখি হয়ে গেছে। নেহাত ভালো বানান ,নাহলে যাদের কথা-কার্যের ঠিক নেই,তাদের কাছে রেহানা খাতুন ঘেষেনা বুঝলেন!’
‘ বসবে…
রেহানা খাতুন কথা শোনার প্রয়োজন বোধ করেননি। বেরিয়ে গেলেন তেজি পায়ে। সালমা খাতুন দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। শুকনো মুখে বসলেন চেয়ারে।
হাতে এত কাজ! সন্ধ্যার মধ্যে পারবেন করে দিতে? না দিলে তো আবার কথা শুনবেন। অবশ্য উনি কমই শুনিয়েছেন। এর থেকেও আরো কত কী শোনায় অনেকে!
তাদের পারিবারিক অবস্থা সচ্ছল। খোরশেদুল মোটা মাইনে পান, যা দিয়ে সব আরামসে চলে। এসব জামা-কাপড় সেলাইয়ের কাজ দরকার ছিল না। শুধুমাত্র পুষ্পিতাটার জন্যেই…..
খোরশেদুলের চোখে মেয়েটা বোঝা। ঘরের বাড়তি লোক। শুরু থেকেই তার সাফ সাফ বাক্য ছিল,
‘ বাড়িতে কুকুর পুষলেও মানুষ খেতে দেয়,তাই ওকে খাওয়াব। কিন্তু এর বেশি ওর পেছনে কোনও খরচ করতে আমি পারব না। পড়াশুনা তো হবেইনা। অন্যের মেয়েকে শিক্ষিত করে আমার কী লাভ? এত নষ্ট করার মত টাকা নেই আমার।’
সালমা বেগম সেদিন যোগ্য জবাব দিতে পারেননি। কেবল বিমুঢ়, আহত চোখে চেয়েছিলেন স্বামীর দিকে। শেষে বলেছিলেন,
‘ ওর সব খরচ আমার। তুমি শুধু মেয়েটাকে থাকতে দিও,তাহলেই হবে।’
কিশোরী বয়সে দুই বোন একসাথে টেইলার্সের কাজ শিখেছিলেন। মায়ের নিতান্তই শখের বশে শিখিয়েছিলেন মেয়েদের। সেদিন পুষ্পিতার জন্য ওইটুকুই কাজে দিলো। এ নিয়েও খোরশেদুলের ছিল চরম আপত্তি। তার মত মন্ত্রনালয়ে কর্মরত একজন লোকের স্ত্রী আশেপাশে মানুষের জামা সেলাই করবে? কিন্তু যুক্তিতর্কে পেরে উঠলেন না সেবার।
সেই থেকে সালমা বেগম, পুষ্পিতার পড়ার খরচটুকু এই দিয়ে চালাচ্ছেন। কিন্তু এই যোগান যে আহামরি হচ্ছেনা! শহরের স্কুল-কলেজে পড়ার মত সচ্ছলতায় কূলোচ্ছেনা । ওইজন্যে, মিথিলা-রাহাতের মত ভালো,উন্নত স্কুল চোখে দেখেনি মেয়েটা। ওদের মত কোচিং,টিচার কিচ্ছু পায়নি।
সালমার ভেতরটা এ নিয়ে আক্ষেপে ফে*টে যায়। মেয়েটা যখন শক্ত অঙ্ক কষতে গিয়ে হিমশিম খেত,ছুটে এসে জিজ্ঞেস করত, ‘ মণি এটা কীভাবে করব?’
বুকটা ছি*ড়ে যেত তার। তারওপর দুই বাবা-মেয়ের নীরব অ*ত্যাচার তো আছেই। মিথিলা ওকে নিজের চেয়ার-টেবিলে বসতে দেয়না। শব্দ করে পড়তে পারেনা। তারা বিরক্ত হয়। পুষ্পিতা পড়তে বসলেই, চলে হাজারটা কাজের হুকুম। সালমা বেগম তর্ক করতে করতে হাঁপিয়ে যান। আর কত বোঝাবেন? যাদের বিবেক থেকেও নেই,তাদের বোঝানো সম্ভব?
পুষ্পিতা অতটুকু সময়ে নিরিবিলি পড়তে পারে,যেটুকু সময় বাবা- মেয়ে ঘরে থাকেনা। তাই যা পারে,যা রেজাল্ট করে সব নিজের চেষ্টায়।
সালমা বেগমের ধ্যানের সুতো ছি*ড়ল, এক জোড়া কোমল হাতের স্পর্শে। পুষ্পিতা মেঝেতে বসে,হাঁটু আকড়ে ধরেছে ওনার। মাথাটা গুঁজে দিয়েছে কোলে। নাক টানার আওয়াজ পেতেই সালমা উদ্বেগ নিয়ে ওর মুখ তুললেন।
‘ কাঁদছিস কেন? ‘
পুষ্পিতার দীঘল আঁখি টলমলে। ভেজা গলায় বলল,
‘ আমার জন্য সবাই তোমায় কথা শোনায় মণি।’
‘ কে বলল তোর জন্য শোনায়? ‘
‘ আমি জানি। তুমি আমার জন্যেই এত কিছু কোরছো! মণি আমার সামনে কেউ তোমাকে কিছু বললে আমার খুব ক*ষ্ট হয়! রাগ হয় নিজের প্রতি । তুমি এসব ছেড়ে দাও মণি। দরকার নেই আমার লেখাপড়ার। আর পড়বনা আমি।’
সালমা ক্ষে*পে বললেন,
‘ এক চ*ড় মা*রব। এসব কী কথা? তুই পড়াশুনা ছাড়বি বলেই, এমন খাঁটছি এত বছর?’
পুষ্পিতার অশ্রু কপোল ছুঁলো।
‘ কিন্তু সবাই যে তোমায় কথা শোনায়। খালুজানও তো কত কী বলে! এত অশান্তি কেন সইবে আমার জন্য?’
‘ বলুক। ওসব আমার গায়ে লাগেনা। তুই আমার পেটের মেয়ে হলে কী এদের জন্য এসব থামিয়ে দিতাম? তাহলে এখন কেন থামাব? যে যা পারে বলে যাক আমায়। শুধু তুই নিজের জায়গায় স্থির থাকিস পুষ্পিতা। মনে রাখবি,তোর জীবন বাকী পাঁচজনের মত সুগম নয়। এত সহজে যদি হার মানবি,তাহলে তুই কেমন যুদ্ধ করলি এতদিন?
আমি যে চাই,তুই অনেক পড়াশুনা করবি,নিজের পায়ে দাঁড়াবি,নিজের পরিচয় বানাবি, কেউ তোকে বোঝা বলবেনা, খারাপ কথা বলে কষ্ট দেবেনা। সেসবের জন্য যা সহ্য করার আমি করব। খবরদার আর পড়া ছাড়ার কথা বলবিনা। মনে থাকবে?’
পুষ্পিতা ঠোঁট চেপে দৃষ্টি নামাল। সালমা গাল মুছিয়ে বললেন,
‘ বোকা মেয়ে! কাঁদলে কি সব কিছুর সমাধান হয়? বর্তমান পৃথিবীতে তোর মত নরম দের কোনও দাম নেই রে মা। শক্ত হতে শেখ। ‘
‘ আচ্ছা, কাজ ঠিকঠাক নাহলে সবাই তো কথা শোনাবেই। তুই যদি স্কুলে পড়া না পারিস স্যার বকেন না?’
পুষ্পিতা আস্তে মাথা দোলাল।
‘ এই যে তোর খালুজান অফিসে যান,সেখানে ঊনিশ বিশ করলে বস বকেনা?’
‘ হু।’
‘ তাহলে? এগুলো ধরতে নেই। আর তোকে এসব ভাবতেও হবেনা। একদিন পর রেজাল্ট বের হবে,তারপর তুইও ভার্সিটিতে যাবি। লেখাপড়া শেষ করে চাকরি করবি। যারা তোকে আশ্রিতা বলে খোঁচা দেয়,তাদের দেখিয়ে দিবি। পারবিনা?’
পুষ্পিতা ওনার হাতদুটো মুঠোয় নিয়ে বলল,
‘ তুমি পাশে থাকলে সব পারব।’
সালমা বেগম মুচকি হাসলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে টেনে নিলেন বক্ষে।
‘ আমি সব সময় তোর সাথে আছি। ‘
পুষ্পিতা মিশে রইল ওই বুকে। একটু আগে মায়ের জন্য করা মন খারাপ নির্নিমেষ মুছে গেল। সালমা বেগমের শরীর থেকে ছুটে আসা স্নেহের ঘ্রাণে জুড়িয়ে গেল অন্তঃপুর।
কে বলেছে মা নেই,ও অনাথ? এইত ওর মা,এই যে….
*****
শাফিনের মুখের দশা করুণ। চোখ-মুখের অবস্থা ভালো নয়। কাঁদোকাঁদো চেহারা। চিন্তায় ক্যামন ফ্যাসফ্যাসে শ্বাস নিতে নিতে তীব্রর পাশে এসে দাঁড়াল।
তীব্র এক পল চাইল ওর দিক। তার দলবলের মধ্যে শাফিন সবথেকে ঘনিষ্ঠ। সামনের দিক ফিরে বলল,
‘ এই অবস্থা কেন? নাহিদের মত কী তোর গার্লফ্রেন্ড ও ভেগে যাচ্ছে?’
পাশ থেকে স্বশব্দে হেসে উঠল সবাই। মজা পেয়েছে ওরা। শুধু নাহিদ গাল ফোলাল। ঠোঁট ওল্টাল শিশুর ন্যায়।
কিন্তু শাফিনের মুখবিবরে পরিবর্তন দেখা গেল না। বরং চেহারায় মেঘ ঘনাল আরেকটু। মিরাজ বলল,
‘ কাল লেট নাইট পার্টি করেছি মামা! কী ঝাক্কাস ক্লাব। ফোন তোলোনি,মিস করে গিয়েছ হু।’
শাফিন জবাব দিলো না। মর্মাহ*তের ন্যায় আওড়াল,
‘ আম্মু খুব অসুস্থ রে বিট্টু! কাল রাতে অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। সারারাত হাসপাতালে ছিলাম। সকালে বাড়ি রেখে, এই এলাম এখানে।’
সবার হাসি-খুশি মুখশ্রী উবে গেল ওমনি। তীব্র তটস্থ নজরে চেয়ে বলল,
‘ কিছু জানাসনি কেন? ‘
‘ মাথা কাজ করছিল না। বোনটা এত কাঁ*দছিল! আমিও প্রায় দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। আম্মুকে এত অসুস্থ কোনও দিন দেখিনি। হয়ত বুঝতে দেননি আমায়। কাল প্রথম ফিল করলাম,বেঁচে থাকতে মাথার ওপর বটবৃক্ষ টা খুব দরকার রে। আজ বাবা থাকলে হয়ত….
শাফিন থামল। গলা ধরে এসেছে ওর। তীব্র বলল,
‘ এখন কী অবস্থা?’
‘ ভালোনা। দুটো কিডনিই ধরে গেছে। খুব দ্রুত কিডনি ট্রান্সপারেন্ট না করলে বাঁচানো যাবেনা।’
বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলল ও। আরমান বলল,
‘ তাহলে ব্যবস্থা কর। দেরী করছিস কেন?’
‘ অনেক টাকার ব্যাপার। দেশে হবেনা,ইন্ডিয়ার এপোলো সাজেস্ট করছেন ওনারা। আর ওটা যে কেমন ডাকাতে হাসপাতাল জানিসইতো। লাখ পাঁচেক ছাড়া নড়তে পারব না। আর এই মুহুর্তে পাঁচ লাখ আমার কাছে অনেক কিছু…!’
মিরাজ উৎকণ্ঠিত হয়ে বলল,
” এখন তাহলে উপায়?’
শাফিন হতাশ কণ্ঠে বলল,
‘ জানিনা রে! বাইকটা বেঁচে দেব ভাবছি। ওটা দিয়ে যা পাব,আপাতত চলবে।’
থামল,শ্বাস টানার আগেই তীব্র ঠাস করে একটা চ*ড় বসাল ওর গালে। শাফিন চমকে গেছে। ভ্যাবাচেকা খেয়ে গাল ধরে বলল,
‘ কী করলাম?’
তীব্র নিশ্চুপ। ঘাড় বাঁকাল মিরাজের দিক।
‘ এ মাসের চাঁদা তুলেছি?’
‘ হ্যাঁ। সেতো এক তারিখেই উঠিয়েছি। সবকটা মিলে উরাধুরা উড়িয়েওছি পার্টি করে।’
তীব্র দাঁত দিয়ে নীচের ঠোঁট কা*মড়ায়। ভাবে কিছু। প্যাকেট থেকে সিগারেট তুলতে গিয়ে দেখল খালি। আরমানকে বলল,
‘ সিগারেট আনা তো।’
‘ তোর ভাই দামী সিগারেট। করিমের দোকান তো বন্ধ। অন্য দোকান থেকে আনব?’
‘ আন।’
আরমান রাস্তার ওই পাড়ের দোকানে গেল। সে ওদের দলবলে নাম লিখিয়েছে নতুন। দোকানদার চিনতেন না। বললেন,
‘ টাকা?’
সে চিল্লিয়ে ডাকল,
‘ বিট্টু,টাকা? ‘
নাম শুনেই দোকানদার ভ*য় পেলেন। তীব্রর ঘোলাটে নজর তাক হলো। ঠান্ডা গলায় শুধাল,
‘ তোর টাকা লাগবে?’
লোকটি শশব্যস্ত বললেন,
‘ না না ভাই। আপনার লোক বুঝিনি। লাগবেনা টাকা।’
আরমান ঠোঁট চেপে হাসল। রাস্তা ডিঙিয়ে ফিরে এলো। আস্ত প্যাকেট ছিড়ে,সিগারেটের তামাটে মাথা ধরাল নিজ থেকে। বাড়িয়ে দিলো তীব্রর দিক।
শাফিন গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে তখনও। বোকা বোকা চোখ ফ্যালফ্যাল করছে। চ*ড় কেন খেয়েছে,বুঝতে পারছেনা। ওতো খারাপ কিছু বলেনি। একটুখানি কষ্টের কথা শেয়ার করাতে মা*রল কেন বিট্টু?
সাদাটে ধোঁয়ার কবলে তীব্রর নাক-মুখ ঢেকে যায়। সুতনু বখাটের ঠোঁটে, জ্বলজ্বলে সিগারেট সৌন্দর্য ফোটায় দ্বিগুন।
ফোন বাজল তখন। রিংটোনের কড়া শব্দ ভেসে এলো। জিপের সিট থেকে ফোন এনে এগিয়ে দেয় মুশফিক। তীব্র স্ক্রিনে চাইল। ধরল,
‘ কোথায় তুমি?’
‘ যেখানে থাকার কথা। ‘
ব্যাঁকা উত্তরে জামশেদ নাক ফোলালেন। একটু থেমে শান্ত কণ্ঠে বললেন,
‘ এক্ষুণি একবার আমার অফিসে আসতে পারবে? কথা ছিল।’
‘ আসছি।’
লাইন কাটল তীব্র। উৎসুক দলের দিক চেয়ে জানাল,
‘ মন্ত্রীমশাইয়ের কল। দাওয়াত দিয়েছেন অফিসে।’
মিরাজ বলল, ‘ আমিও যাই?’
‘ আয়।’
মিরাজ জিপের দরজা খুলে ভদ্রের ন্যায় বসল। অথচ স্ট্যান্ড ধরে লাফ দিয়ে ভেতরে ঢুকল তীব্র। সময়টায়, তাকে মনে হলো, কাদম্বিনীর কোল ঘেঁষে ছুটে চলা দাপুটে এক বাজপাখি।
****
জামশেদ তালুদারের কেবিনের সামনে আসতেই গার্ড এসে সামনে দাঁড়ালেন। বাঁধা পেয়ে থামল ওরা। তীব্র ভ্রু বাঁকাল।
গার্ড নম্র গলায় বললেন,
‘ স্যার,কেবিনে যেতে হলে আগে বড় স্যারের অনুমতি নিতে হবে।’
তীব্র নিরুৎসাহিত,
‘ তোর স্যার আমায় ডেকেছে,আমি এসেছি। এখন অনুমতি নেব কী নেবনা,সেটাও আমি বুঝব।’
‘ কিন্তু স্যার…’
কথা সম্পূর্ণ হলো না। তীব্র উচ্ছিষ্টের ন্যায় লোকটির বুকে এক হাত দিয়ে ধা*ক্কা মারল। তিনি পিছিয়ে গেলেন দু-কদম। তীব্রর চোখ-মুখ দেখে ফের কিছু বলার সাহস হলো না।
জামশেদের বড়সড় কেবিন। দু দেয়ালে দুটো এসি ঝুলছে। পেছনে ঝুলছে দেশের প্রধানমন্ত্রী আর তার পিতার ছবি। টেবিলে রাখা নেমপ্লেটে লেখা, ❝স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জামশেদ তালুকদার। ❞
হাতের বা পাশে রাখা বাংলাদেশের পতাকার ক্ষুদ্র ভাষ্কর্য।
মনোযোগ সমেত কিছু লিখছিলেন তিনি। এর মধ্যেই দরজায় এলো তীব্র। দু আঙুল দিয়ে টোকা দিল কাঁচে।
জামশেদ মুখ তুললেন। ছেলেকে দেখে চেহারা বদলাল না। টোকা শুনেই বুঝেছেন,এটা কে! আজ অবধি যতবার তীব্রর আগমন হয়েছে,ভদ্র ভাবে হয়নি। নূন্যতম সভ্যতা ছেলেটা শেখেনি।
তিনি লেখা বন্ধ করলেন। কণ্ঠ গম্ভীর,
‘ এসো।’
তীব্র ঢুকল। সোজা টেবিলের কাছে এসে বলল,
‘ অফিসের লোকদের একটু ভদ্রতা শেখাবেন। কার সাথে কী বলতে হয় জানেনা। এখানে আমার অসম্মান হলে,আমি কিন্তু অনুরোধ করে ম*রলেও আসব না।’
জামশেদ জবাব দিলেন না। আশ্চর্য হলেন ভেতর ভেতর। যার নিজের মধ্যে ভদ্রতার ছিটেফোঁটা নেই,সে আবার অন্যকে নিয়ে কথা বলে!
পেছনে মিরাজকে দেখে ভ্রু কোঁচকালেন। শুধালেন,
‘ ও কে?’
মিরাজ গুঁটিয়ে এলো। এমনিতেই ওর ভ*য় লাগছে এখানে আসা থেকে। চারদিকে এত পুলিশ,গার্ড! জীবনে কোনও মন্ত্রীর অফিস সে দেখেনি।
‘ আমার বন্ধু।’
জামশেদের ভ্রু মসৃন হয়। তীব্রর বন্ধুদের নমুনা তার জ্ঞাত। এইত, চেহারার অবস্থা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। মিরাজ অস্বস্তি সমেত হাত উঁচিয়ে সালাম দিলো। তিনি উত্তর করলেন না বোধ হয়। তবে গমগমে গলায় বললেন ,
‘ শার্টের বোতাম লাগাও।’
মিরাজ থতমত খেল। তৎপর হাতে এলোমেলো শার্টের বোতাম লাগাল। একবার চাইল তীব্রর দিক। ওর থেকেও তার বোতাম একটা বেশি খোলা। ফর্সা বক্ষপট একেবারে হা করে চেয়ে। ভাবল,ওরটাও লাগিয়ে দেবে কী না! হাত দুটো সুরসুর করল। পরক্ষনে দমাল নিজেকে। দাঁড়িয়ে থাকতে চাইল নিশ্চুপ। জামশেদ তাতেও বাঁধ সেধে বললেন,
‘ তুমি বাইরে গিয়ে দাঁড়াও। তীব্রর সাথে আমার কথা আছে।’
মিরাজ প্রশ্ন নিয়ে চাইল। কী করবে? তীব্র চোখ দিয়ে বোঝাল ‘যা।’
ঘাড় হেলাল সে। বিনাবাক্যে বেরিয়ে গেল। জামশেদ চেয়ার দেখালেন,
‘ বোসো।’
‘ লাগবেনা।’
‘ বসলে কী সমস্যা?’
তীব্রর মুখে চুইংগাম। চিবোতে চিবোতে বলল,
‘ আমার বসার স্টাইল আপনার পছন্দ হবেনা। আপনি বলুন,আমি শুনছি।
জামশেদ ছোট্ট শ্বাস ফেললেন। শুধালেন,
‘ বাড্ডার,সাবেক এমপি সিকান্দারকে চেনো?’
‘ না।’
‘ নাম ও শোনোনি?’
‘ না।’
‘ দেখেছিলে তো একবার।’
‘ মনে নেই। কাজের কথা বলুন।’
‘ তোমাকে ওর কাছে যেতে হবে।’
‘ গিয়ে?’
জামশেদ বিরতি নিলেন। খানিক চুপ থেকে বললেন,
‘ গত মাসে এ-এসপি কামরানের একটা স্ক্যা*ন্ডাল ভাইরাল হয়েছিল। ওকে সাসপেন্ড করার মত অবস্থাপ্রায়। কিন্তু আমার জন্য ওর চাকরিটা বেচে যায়। ওইসময় ওর সাথে ফোনে কথা হয়েছিল আমার। সেখানকার একটা রেকর্ডস ক্লিপ সিকান্দারের হাতে পড়েছে। কীভাবে পেয়েছে জানিনা। ও সেটা নিয়ে আজ তিনদিন ধরে আমাকে ব্লাকমেইল করছে। মোটা অঙ্কের টাকা চাইছে, সাথে ওর অবৈধ মালামাল পাচার করার সহযোগিতা। নাহলে,হুম*কি দিচ্ছে ক্লিপ নেটে ছড়িয়ে দেবে। আর একবার সেটা পাব্লিকের কাছে গেলে,বুঝতেই পারছো কী হবে! ‘
জামশেদ যতটা গুরুতর ভঙিতে বললেন,তীব্রর ওপর লেশমাত্র প্রভাব পড়ল না তার। বিদ্রুপ করে বলল,
‘ সোজাসুজি বললেই হয়,আপনার ঘুষ চাওয়ার সিক্রেট আটকা পরেছে সেখানে।’
জামশেদ চোখ নামালেন। ছেলের কাটখোট্টা কথাবার্তায় বিরক্ত সে।
তীব্রর ঠোঁটে চটচটে হাসি। বলল
‘এখন সিকান্দারের থেকে ওই ক্লিপ আমাকে উদ্ধার করে আনতে হবে। মাস্তান ছেলে পছন্দ না,অথচ তার মাস্তানির সুবিধা নিচ্ছেন, এই নাহলে রাজনীতিবিদ বাপ!’
জামশেদ রে*গে বললেন,
‘ এত কথা বোলতে বলা হয়নি তোমায়। কাজটা করবে কীনা শুধু সেটুকু বলো।’
‘ আপনার হাতে অন্য অপশন আছে?’
নিভে গেলেন তিনি। এই কাজের জন্য যতটা সাহস,বিচক্ষণতা দরকার, তীব্রর থেকে ভালো কেউ নেই। থেমে থেমে বললেন,
‘ তুমি,আমার ছেলে। সবচেয়ে বিশ্বাসী লোক। এরকম একটা কাজ আমি কেন অন্য কাউকে দেব?’
তীব্র তুচ্ছ হাসল, বলল,
‘ আমি রোদের মধ্যে মানুষকে ভ*য় দেখিয়ে টাকা নিই,আর আপনি নেন এসি রুমে বসে,ঠান্ডা মাথায়। অথচ দুটোই কিন্তু অবৈধ। এদিক থেকে দেখতে গেলে, আপনি- আমি দুজনেই এক। তাইনা? ‘
জামশেদ অতীষ্ঠ ভঙিতে মাথার দুপাশ চে*পে ধরলেন। তার সহ্য শক্তি এই তীব্রর সামনে এলে কীভাবে যেন তরতর করে বেড়ে যায়। চাইলেও সঠিক উত্তর দিতে পারেন না,চুপ করে থাকেন।
তীব্র নিজেই বলল,
‘কাজটা করব, কিন্তু শর্ত আছে আমার।’
জামশেদ তাকালেন,
‘ কী শর্ত?’
‘ পাঁচ লাখ টাকা লাগবে।’
জামশেদ দ্বিতীয় প্রশ্ন করলেন না। বেশি ঘাঁটালে তীব্র বেঁকে বসবে নিশ্চিত। সহজ কণ্ঠে বললেন,
‘ আবুলের থেকে চেক নিয়ে যাও।’
তীব্র তুষ্ট গলায় বলল,
‘ গ্রেট! আপনার কাজ কালকের মধ্যেই হয়ে যাবে।’
জামশেদ উত্তর দিলেন না। তীব্র বেরিয়ে গেল। তিনি চেয়ে রইলেন ওর গমনপথে। মুখ ফুলিয়ে স্বস্তির শ্বাস ফেললেন। তীব্র যখন বলেছে কাজ হবে,তিনি শতভাগ নিশ্চিত তা হবেই।
***
দরজায় টোকা পড়ায়, আবুল হাসান বিরক্ত, বিস্মিত। এই অফিসে জামশেদের পরের সম্মান তার। ওনার কাজে লাগলে তাকে ফোন করে ডেকে নেন। কেবিনে আসেন না। তাহলে দরজায় এমন ঠোকাঠুকি করে কার সাহস? তিনি তেঁতে, উঁচু গলায় বললেন,
‘ এই কে রে?’
তীব্র দোর ঠেলে দিল। দেয়ালের এপারে এসে বারি খেল কাঠ। উৎকট আওয়াজ আর ওর মুখটা দেখেই চুপসে গেলেন তিনি।
তীব্র দাপুটে গলায় বলল,
‘ তোর বাপ!’
আবুল সবেগে উঠে দাঁড়ালেন। চেয়ার রেখে এগিয়ে এলেন ত্রস্ত।
‘ স্যার আপনি? আমি বুঝতে পারিনি। আসুন স্যার, আসুন। কী সৌভাগ্য,আপনি আমার কেবিনে!’
তীব্র ভেতরে ঢুকল। সাথে মিরাজ। তার চোখ অফিসের কোনা-কানিতে। চোখ জুড়ে বিস্ময় আর মুগ্ধতা। আবুল স্বীয় চেয়ার হাত দিয়ে মুছে তীব্রর দিক এগিয়ে দিলেন,
‘ বসুন স্যার।’
বসল তীব্র। পায়ের ওপর পা তুলে এক হাত ছড়াল হাতলে। চোখ ছোট করে বলল,
‘ তোর অতি ভক্তি দেখলেই আমার হাত চুলকায়। ইচ্ছে করে, তোর ভোঁতা নাকটা এক ঘু*ষিতে ফা*টিয়ে দিই।’
মিরাজ ঠোঁট চেপে হাসি আটকাতে চাইল। অথচ গহ্বর ফুঁড়ে ফিকফিক শব্দে বেরিয়ে এলো তা। আবুল হতভম্ব হয়ে বললেন,
‘ আমি, আমি কী করেছি স্যার?’
তীব্র চ সূচক শব্দ করল,
‘ সেটাইত সমস্যা। কিছু করছিস না। আচ্ছা,ওসব বাদ,ফটাফট একটা পাঁচ লাখার চেক দে।’
আবুল হাসান ভ্রু কপালে তুলে বললেন,
‘ এত টাকা? হঠাৎ এত টাকা কেন স্যার?’
তীব্র উষ্ণ, আড়চোখে চাইল। তিনি ঘাবড়ে বললেন,
‘ দি…দিচ্ছি।’
মুখ কালো করে চেক আনলেন তিনি। তীব্রর দিক বাড়িয়ে দিলেন বিনয়ে। সে হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়াল। একবার দেখল টাকার অঙ্ক। তাকাল আবুলের দিক। আচমকা,বি*ক্ষিপ্ত এক,দানবীয় থা*প্পড় সপাটে বসাল ওনার গালে। শক্তপোক্ত চ*ড়ে, আবুল ছিটকে গিয়ে পরলেন পাশের চেয়ারের ওপর। বাম চোখের চশমার গ্লাসটা ভে*ঙে, খসে পরল ফ্লোরে। প্রকান্ড হকচকিয়ে চাইলেন। ভ*য়ার্ত গলায় বললেন,
‘ টাকা তো ঠিকঠাকই দিলাম স্যার।’
তীব্র সেই চেয়ারের ওপর পা তুলে দেয়। ঝুঁকে যায় হাঁটুর ওপর। অলস ভঙিতে জানায়,
‘ টাকার জন্য নয়,মা*রটা তোর সাহসের পুরষ্কার। তীব্র রেজা তালুকদারকে প্রশ্ন করলি,উপহার নিবিনা?’
আবুল হাসান ঢোক গিললেন। কোনও মতে সোজা হলেন। কণ্ঠ নরম করে,আবেগ ঝরিয়ে বললেন,
‘ আমি তো আপনার বাবার বয়সী!’
তীব্র বক্র হাসল। মিরাজের দিক চেয়ে দেখল সেও হাসছে। তারপর ফিরে বলল,
‘ দাদার বয়সী লোককে পে*টানোরও রেকর্ড আছে আমার। ডেমো দেখবি?’
আবুল হাসান শঙ্কিত চেহারায় মাথা নাড়লেন দুপাশে। তীব্র ওনার গাল চাপড়ে বলল,
‘ ভ*য় পাস না! আজ আর মা*রব না। তুই আমার বাবার পোষা বিলাই। ম্যাও ম্যাও করবি,লেজ নাড়বি ব্যাস, এর এক দন্ড বেশি করেছিস তো….’
আঙুল উঁচাল সে। ছু*ড়ল নীরব,শব্দহীন গর্জন।
তীব্র হাঁটা ধরল। মিরাজ দাঁত মেলে হাসছে। কান্ড গুলোয় ভীষণ মজা পেয়েছে ও। আবুলের দিক চেয়ে বিড়বিড়িয়ে বলল,
‘ ঠিক হয়েছে।’
সেই হাসি,কথা আর তীব্রর পিঠের দিক চেয়ে জ্ব*লন্ত শিখার ন্যায় টগবগালেন আবুল। ভেতর ভেতর পুষলেন আ*গ্নেয়গিরীর উ*ত্তপ্ত, সীমাশূন্য, দ*গ্ধ লাভা।
ছোটখাটো, তবে আকষ্মিক থা*প্পড় খেয়ে শাফিন থম ধরে বসে৷ এমনিতেই ওর মন খারাপ। মায়ের চিকিৎসা কীভাবে করবে তা নিয়ে মাথা এলোমেলো। বাবার পেনশনে সংসার চলে, ওর নিজেরত ইনকাম নেই৷ বিট্টুর সঙ্গে থেকে যা কামায়,তা খরচ হয় নিমিষে। শাফিনের মস্তিষ্কে হঠাৎই বিবর্ণ বাস্তব সাঙ্গপাঙ্গ সমেত হানা দিলো। বোনটা বড় হচ্ছে,বিয়ে দিতে হবে একদিন। কীভাবে কী করবে ও? সারাদিন রংবাজি করলে তো আর সঠিক সুরাহা হবেনা। ওর কি আবার একটা চাকরির যোগানে নামা উচিত? কিন্তু নেমেছিল ত একবার। ঘুষ ব্যাতীত কেউ কাজ দিতে রাজী না। যেখানেই যায়,লাখ লাখ টাকা ডিমান্ড তাদের। সেসবের প্রতি বিদ্বিষ্ট হয়েই তো এই পথে নামল। আড্ডা,মারা*মারি এসবে এখন অন্য রকম সুখ।
পাশে বসা সবাই গল্পে ব্যস্ত। সামনে দিয়ে এক স্কুল পড়ুয়া মেয়ে গেলে,আরমান সিটি বাজাল। মুশফিক বলল,
‘ পিচ্চি মেয়ে, বউ হবা?’
মেয়েটি কথা বলল না। তাকায়ওনি। চুপচাপ মাথা নুইয়ে হেঁটে গেল। তাদের প্রমোদ কণ্ঠস্বর আজকে শাফিনের ওপর প্রভাব ফেলল না। সে একইরকম হতাশ ভঙিতে বসে।
তীব্রর জিপ এসে ভিড়ল তখন। মিরাজ নামল,নামল সে। শাফিন একবার চোখ তুলে ওদের দেখে আবার পায়ের পাতার দিক চাইল। আচমকা সামনে প্যাকেট জাতীয় কিছু দেখে মুখ তুলল। চাউনীতে প্রশ্ন।
তীব্র অধৈর্য,
‘ ধরবি? হা করে কী দেখছিস?’
‘ কী এটা?’
‘ খুলে দ্যাখ।’
বলে, ব্যাগটা ছু*ড়ে ফেলল ওর উরুর ওপর। শক্ত*পোক্ত জিনিস। শাফিন সহ সবাই উৎসুকে। সে কালো প্যাকেট আস্তে-ধীরে ছাড়ায়। উন্মুক্ত হয় পুরু টাকার কয়েকটি বান্ডিল। চোখ বেরিয়ে আসে ওদের। শাফিন ঠোঁট ফাঁকা করে বলে,
‘ এত টাকা!’
তীব্রর ভাবভঙ্গি উদ্বেগহীন। বরাবরের মতোন, জিপের ফ্রন্টে উঠে বসল। সাবলীল জবাব দিল,
‘ পাঁচ লাখ আছে। তোর মায়ের চিকিৎসা এইবার কনফার্ম! ‘
শাফিন স্তব্ধ,বিহ্বল। এমনকি চমক মিরাজের চোখেমুখেও। তীব্র চেক ক্যাশ করিয়েছে যখন,তখনও বোঝেনি। ও এত্তগুলো টাকা শাফিন কে এমনি এমনি দিয়ে দিলো ? এত বড় মন ওর!
শাফিন স্তম্ভের ন্যায় শক্ত হয়ে বসে রইল কিয়ৎক্ষণ। তীব্র ভ্রু উঁচায়,
‘ শালা এত কী ভাবছিস? আমি থাকতে তুই বাইক বেঁচবি?বিখ্যাত বিট্টু মাস্তানের নাম খা*রাপ করবি?’
শাফিনের দৃষ্টি মারবেলে। ধাতস্থ হতে সময় লেগেছে অনেক। পরপর ঝড়ের বেগে উঠে গিয়েই ঝাঁ*পিয়ে পড়ল তীব্রর ওপর। কাঁধ ভিজিয়ে দিলো অশ্রুতে। কান্নার দমকে কথা বের হলো না,তবে স্পষ্ট তার কৃতজ্ঞতা।
তীব্র ফোস করে শ্বাস ফেলে শাফিনের পিঠে হাত বোলাল। বাকীরা মুগ্ধ হাসে। মিরাজ ছুটে এসে উপর থেকে জড়িয়ে ধরে দুজনকে। ওর দেখাদেখি বাকীরাও এলো। যারা তীব্রর ছোট, কেবল সাহসের অভাবে দাঁড়িয়ে তারা। তবে বশীভূত অনুরুপ।
বখাটে বিট্টু মাস্তানের অন্য রকম উদার মনের হদিস পেয়ে,ভীষণ আবেগে আপ্লুত।
****
পুষ্পিতার রেজাল্ট দিয়েছে। জিপি-এ টেনেটুনে, বরাবর ৩.৯৬ এসেছে। আর এই নিয়ে সেই থেকে খোরশেদুল আর মিথিলার কটু বাক্যের স্বীকার সে। উঠতে বসতে খোরশেদুল বিদ্রুপ করছেন। বলছেন,
‘ কী রেজাল্টের ছিড়ি! এই রেজাল্ট নিয়ে নাকী আবার ভালো ভার্সিটিতেও পড়াতে চাও সালমা। রেজাল্ট হচ্ছে আমার মেয়ের! এইটির নীচে আজ অবধি নম্বর পায়নি। তোমার বোন-ঝিকে বরং বলো ওর পা ধুয়ে একটু পানি খেতে। তাহলে যদি তোমার ক*ষ্টটা স্বার্থক হয়।’
পুষ্পিতা লজ্জায় মাথা নামিয়ে ফেলল। পৈশাচিক,তাচ্ছিল্য হাসল মিথিলা। রাহাত, পুষ্পিতাকে দেখল নিঃসহায়ের মতোন। যতটা আনন্দে মাংসের হাড় চিবোচ্ছিল,হারিয়ে গেল সব।
সালমা বেগম তপ্ত কণ্ঠে বললেন,
‘ তোমার মেয়ের প্রতিটা সাব্জেক্টে টিচার দেওয়া হয়েছে। ইংলিশ মিডিয়ামের স্টুডেন্ট সে। এক্সট্রা কোচিং ক্লাশ তো ছিলই। এত সুবিধার পরও যদি আশির ঘরে নম্বর না পায়,তাহলে সেটা লজ্জার ব্যাপার।
আর পুষ্পিতা যা পেয়েছে নিজের চেষ্টায়। একা একা পড়েছে। তাই ও সামান্য পাশ করলেও আমি খুশি হোতাম। ‘
খোরশেদুলের হাসি কমে গেল। তিক্ত গলায় বললেন,
‘ পৃথিবীতে তুমিই একমাত্র মহিলা,যার নিজের থেকে অন্যের মেয়ের জন্য দরদ বেশি।’
‘ তাতে তোমার সমস্যা কোথায়?’
পুষ্পিতার হাত আর চলছেনা ভাতে। মুখে নেওয়াটুকুও কাঁ*টার মতন বিঁধে রয়েছে গলায়। এই রোজকার কলহে সে ক্লান্ত,বিধ্ব*স্ত। রাহাত মাঝখান থেকে বলল,
‘ আম্মু, ছোটপু যে পাশ করল,মিষ্টি খাওয়াবে বলেছিলে। খাওয়াবে না এখন?’
সালমা বেগম হাসলেন, ‘ খাওয়াব তো। পুরো বিল্ডিং এ দেব ভাবছি।’
খোরশেদুল আগ বাড়িয়ে, থমথমে গলায় বললেন,
‘ আমি কিন্তু কোনও টাকাপয়সা দিতে পারব না। ‘
সালমা ভ্রু কুঁচকে বললেন,
‘ তোমার কাছে কে চাইল? ওই কটা মিষ্টি কেনার টাকা আমার আছে।’
মিথিলা বলল,
‘ যেই না রেজাল্ট,তাতে আবার মিষ্টি!’
সালমা কিছু বলতে চাইলেন,পুষ্পিতা ত্রস্ত হাত চেপে ধরল ওনার। তাকালে দুপাশে মাথা নেড়ে অনুনয় করল কথা না বাড়াতে!
থেমে গেলেন তিনি। একটু চুপ থেকে পুষ্পিতাকে বললেন,
‘ বিকেলে মিষ্টি কিনতে যাব আমরা,কেমন? ‘
সে চুপসে যাওয়া কণ্ঠে বলল,
‘ থাক না মণি! শুধু শুধু টাকা…’
পথিমধ্যেই ধ*মক ছুড়লেন সালমা,
‘ চুপ কর তো তুই। ওসব তোকে ভাবতে হবেনা।’
রাহাত হৈহৈ করে বলল,
‘ আম্মু আমি একাই কিন্তু বিশটা মিষ্টি খাব।’
‘ আচ্ছা,খাস।’
খোরশেদুল অসহ ভঙিতে বসে। ইচ্ছে করছে উঠে যেতে। নেহাত খাবার নষ্ট পছন্দ নয় বলে, গাঁট হয়ে রইলেন। বিড়বিড় করলেন,
‘ আদিক্ষেতা।’
মিথিলারও একই অবস্থা। কিন্তু তার রা কম।রাগ হলেও, ধরা দিচ্ছেনা। নীরবতা নামল খানিক। কিছুক্ষণ পর খোরশেদুল নিজেই বললেন,
‘ ওকে নিয়ে বাইরে গেলে বোরখা পরিয়ে নিও। কোনও উটকো ঝামেলা যেন আবার আমার ঘাড়ে না বাঁধে।’
সালমা বেগম নিশ্চুপ। হ্যাঁ /না দ্বিরুক্তি করলেন না কোনও।
শুধু পুষ্পিতা ঢোক গিলল ভ*য়ে। ও যে বাইরে যাবে,বিট্টু মাস্তানের কবলে পরবেনা তো আবার? মেয়ে দেখলেই যারা বিরক্ত করে, তারা কী বোরখা মানবে?
চলবে…
যাদের বিট্টু নাম পছন্দ নয়,তাদের জন্য তীব্র নাম আছে। একজন বখাটে ছেলের উদ্ভট নাম হিসেবেই বিট্টু দেওয়া। তাই অহেতুক কেউ পাল্টানোর অনুরোধ করবেন না।
আর ৯০% পাঠক তীব্র-পুষ্পিতার দেখা হওয়ার জন্য উন্মুক। দেখা তো হবেই। তার আগে তীব্রকে চিনুন,ধৈর্য নিয়ে পড়ুন। ধৈর্যের ফল সব সময় মিষ্টি হয় কিন্তু।