৯.
মেয়ের স্কুলের সামনে এসে ভালো করে চোখ মুছে নিলো মলি। মেয়ে কে স্কুল থেকে পিক করেই বাসার দিকে ছুটলো। মাঝখানে ফ্রাই ডে আর স্যাটার ডে ছুটি। ভাবলো বাসায় গিয়েই একটু মায়ের বাসার দিকে যাবে। একটু স্বস্তি দরকার।
বিকেল হতেই তোতন আর তিতলিকে নিয়ে মায়ের বাসায় গেলো মলি। মলির বাবা মারা গিয়েছেন অনেক আগে। মা আছে বড় ভাই আর তার বউ বাচ্চা সহ একছোট্ট বাসাতে থাকেন তারা। মলির খুব কমই আসা হয়। বাহিরের প্রতিটি মানুষ জানেন তারা হ্যাপি ফ্যামিলি অথচ মলি জানে প্রতি মুহুর্ত কত মিথ্যে অভিনয় করে যেতে হচ্ছে তাকে।
তোতোন তিতলিকে দেখে যেনো মলির মা প্রাণ ফিরে পেলো। কতদিন পর, ঢাকায় থাকে তারা অথচ দেখা সাক্ষাৎ কম ই হয়। আসলে মলির ভাই বউ এর জন্যই মলি এই বাসাতে কম আসে। তবে এবার ভাবলো একটু বেশি সময় থাকবে সে।
সন্ধ্যায় এক সাথে বসে মলি ও তার মা চা আলাপ করছিল,
জামাই আসবে রাতে? কত দিন থাকবি?
মলি বিরক্ত হয়ে বলল, জামাই জামাই করো না তো মা, সব সময় ক্যানো তার আসা লাগবে। এবার আমি ই থাকবো তিতলি আর তোতন কে নিয়ে বেশ কয়েক দিন।
সেকি! ওদের স্কুল আছে না?
এখান থেকেই নিয়ে যাবো তিতলিকে। তোতন তোমার কাছে থাকবে কিছুক্ষণ। কেন মা আমি কি আসতে পারিনা?
হঠাৎ মলির ভাই বউ জয়ার আগমন,
আসতে পারবা না কেনো মলি, অবশ্যই আসবা, কিন্তু দুলাভাই আসলো না, কিছু না জানিয়ে হঠাৎ আসলা, কোনো ঝামেলা হলো না তো?
মলি পিছনে না ফিরেই বলল, ঝামেলা হলেই কি বাবার বাড়ি আসতে হয় ভাবি, তুমি ত প্রতি সপ্তাহে যাও বাবার বাড়ি, সেটা কি ঝামেলা হলেই যাও? মলির কন্ঠে এক রাশ অভিমান।
কেন সবাই এত প্রশ্ন করছে, দু দন্ড শান্তি কি এখানেও মিলবে না? জয়ার চোখে মুখে রাজ্যের আধার। মলি সচরাচর খোঁচা মেরে কথা বলে না, জয়া কিছু বললেও পালটা শক্ত কোনো উত্তর দেয় না, অথচ আজকে সেই মলি এভাবে তাকে বাবার বাড়ি যাওয়া নিয়ে খোটা দিলো। জয়া ফুস করে বলে উঠলো,
তোমার সাথে তো দেখি মজাও করা যাবে না মলি, আসতে না আসতেই খোঁচা মেরে কথা শুনিয়ে দিলে। এই কথা বলে জয়া শাশুড়ির দিকে চাইলেন। ভাবলেন এই বুঝি শাশুড়ি কিছু বলবেন জয়ার হয়ে। কিন্তু মলির মা বরাবরের মতোনই চুপ। মলি কিছু বলতে চাইলে তার মা ইশারাতে মানা করলো, জল ঘোলা করার কি দরকার।
সেই রাতে আবিদ মলি কে কয়েকবার কল দিলো, কিন্তু মলি উঠালো না। ফোন ধরেই বা কি বলবে মলি, লোক টা তো বুঝবে না। সে তো পরিবর্তন হবে ন বরঞ্চ এখানের সবাই ও টের পেয়ে গেলে আরেক সমস্যা।
পরের দিন সকালে মলি উঠেই তিতলি কে নাস্ত করিয়ে রিকশা নিলো। তিতলি কে নিয়ে রিকশা থেকে নামতেই আবিদ কে দেখতে পেলো মলি। আবিদ কে দেখেই তিতলি দৌঁড়ে গিয়ে কোলে উঠে গেলো। মলির অভিমান এ আবিদের কিছু যায় আসে না কিন্তু ছেলে মেয়েদের জন্য তার মন টা ভীষণ উতলা হয়ে থাকে।
কত দিন থাকবে মায়ের বাসায়?
মলি অন্য দিকে তাকিয়েই উত্তর দেয়, জানিনা।
আবিদ তিতলিকে কোল থেকে নামাতে নামাতে বলে, তুমি থাকলে থাকতে পারো কিন্তু তিতলি আর তোতন কে তো ওত দিন আমি সেখানে এলাও করবো না।
মলির বুক টা ভার হয়ে এলো, কাঠ কাঠ গলায় বলল তাহলে ওদেরকেই পাঠিয়ে দিবো তোমার কাছে, ওদের যত্ন নেবার জন্য তো নিশ্চয়ই মানুষের অভাব হবে না।
আবিদ গাড়িতে উঠার আগে চোখ মুখ শক্ত করে বলল, রাতে ড্রাইভার কে পাঠিয়ে দিবো চলে এসো তোমরা।
সাঁই সাঁই করে গাড়ি চোখের আড়াল হয়ে গেলো। মলির এখন আর কাঁন্না ও পাচ্ছে না। মন টা আঘাত পেতে পেতে পাথর হয়ে গেছে।
১০.
দুপুরে খাবারের টেবিলে বসেই ভাই এর সাথে দেখা মলির। ছোট খাটো ব্যবসা করে সে। বাসায় এসেছে খেতে,
কত দিনের জন্য এসেছিস?
মলি কোনো উত্তর দিলো না অবাক ও হলো না, সে জানে এই বাড়িতে তার আসা থাকা টা বাঞ্চনীয় নয়।
জয়াই নীরবতা ভাংলো, দেখো কথায় কথায় ঝগড়া করে ভাই এর বাড়িতে আসা বুদ্ধিমানের কাজ না মলি।
মলি এবার ভাই আর জয়ার দিকে তাকালো, জয়া আবার বলা শুরু করলো, পুরুষ মানুষ কাজে ব্যস্ত থাকে, কত কিছু নিয়ে তাদের কাজ, বউ দের ই দায়িত্ব তাদের বশে রাখা।
মলির ভাই এই পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে বলল, আহ খেতে বসে এত কথা কেনো। কিন্তু জয়া এখানে থামলেও বিকেলে মলির রুমে আসলো, এসে এমন এমন কথা বলল যে মলির আর বিন্দু পরিমাণ ইচ্ছা হলো না এই বাড়িতে থাকার।
চলবে…..