#এক কাপ চা .
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্ব ১৪
(৪০)
“তাইলে সামিনার লগে বিয়ার ব্যবস্থা করতে বলো?”
রাশেদ তার মায়ের কথা শুনছিল কিন্তু দৃষ্টি ছিল ইখুমের দিকে। ইখুম নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। দু গাল বেয়ে নোনাস্রোত নেমে আসছে৷ নিচের ঠোঁট কামড়ে শাড়ির আঁচল খামছে ধরে সে হয়তো অপেক্ষা করছে রাশেদের উত্তরের৷
“না।”
গমগম আওয়াজে রাশেদ স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিলো তার মা কে।
“আপনি বরঙ সমস্ত সম্পত্তি থেকে আমাকে বাদ দিয়ে দিন। হ্যাঁ আইনী ভাবেই আপনার সাথে আমার ডিভোর্স হবে আম্মা।
আপনি আমাকে ত্যাগ দিতে পারেন আমার আর কিছুই বলার নেই।”
“তুমি জানো না? রক্তের সম্পর্ক ছিন্নকারী জাহান্নামে যাইবে?”
“ইখুমের পেটে থাকা সন্তান কী আমার রক্তের সম্পর্ক নয়?”
“এতিমের উপর থেইক্যা হাত তুইলা নিলে আল্লাহ সইবো না।”
“আমি চাইনি তুলে নিতে কিন্তু আমার সন্তানকে এতিম করতে পারবো না।”
“মায়ের কথার অমান্য করতাছিস?কার সাথে পেট বাজাইছে কে জানে?”
“থামুন আম্মা। আপনি ইখুমকে পছন্দ করেন না জানি তাই বলে আপনি কারী চরিত্রে কথা বলতে পারেন না।”
“তুই আমারে কসম দিছিলি। মায়ের থেকে ওই ছেরি আর ওর পেটেরটা বড়?তোর মায়ের থেকে বড়?”
“আপনি মা। আপনার জায়গা কেউ নিতে পারবে না। কিন্তু ও আমার স্ত্রী, আমার অনাগত সন্তান।তাদের প্রতি আর অন্যায় করা সম্ভব না।”
“এক্ষুণি বাইর হইয়া যাবি আমার স্বামীর বাড়িত থেকে।”
“ভালো থাকবেন আম্মা।আল্লাহ্ হাফেজ।”
রাশেদ ফোন রেখেই প্রথমে মুখোমুখি হলো তার বড় ভাইয়ের। অবনত দৃষ্টিতে বলল,
“আমার অনেক দোষ ভাইজান।আমি জানি, ইখুমকে আমার এই ঝামেলার জীবনে নিয়ে আসা ঠিক হয়নি কিন্তু আমি পারছিলাম না ওকে ছাড়া থাকতে। তাই বাধ্য হয়েই আমাকে সব শর্তে রাজি হতে হয়েছিল। তখন আম্মা বলেছিল স্নেহাকে আমার নাম দিতে হবে। আমি ইখুমকে চিনি। সে কখনোই না করবে না কিন্তু বিয়ের রাতেই স্নেহার যখন শরীর খারাপ করলো হাসপাতাল থেকে ফেরার পর তখন আম্মা আমাকে তার মাথায় হাত রেখে কসম দিয়েছিল ইখুমকে আমি কিছুই জানাতে পারবো না। সে নিজ থেকে জেনে যদি আমার সংসার করে তবে করবে আমি নিজ থেকে জানালে আম্মা আমাকে তার সন্তান হিসেবে আর মানবে না।ত্যাগ করবে আমাকে। আমি পরিবার হারাতে চাইনি, না চেয়েছিলাম ইখুমকে হারাতে। কিন্তু আজ আমার পিঠ দেয়ালে ঠেকেছে। আমি আর পারছি না। আমাকে মাফ করবেন। আমার এতটুক যোগ্যতা রয়েছে যে আমি আমার স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করতে পারবো।
আমাদের এবার যেতে হবে।”
ইখুমের পাশে বসে রাশেদ শুধু বলল,
“দ্বিতীয় সুযোগ বলতে কিছু হয় না।মাফ চাইলেও মাফ দেওয়া যায় না।কিন্তু তবুও বলছি তুমি কী যাবে আমার সাথে?তুমি না গেলেও আমি চলেই যাবো।থাকা সম্ভব নয় এখানে কিন্তু তুমিও প্লিজ এখানে থেকো না।তোমার বাবার বাড়ি চলে যাও। আটকে রাখার মতোন অধিকারের কোনো কাজ আমি করিনি কিন্তু এখানে আমাদের সন্তানের কোনো নিরাপত্তা নেই। তুমি নিশ্চয়ই চাইবে না বাচ্চাটা সুন্দর পৃথিবী না দেখেই চলে যাক।বাকীটা তোমার ইচ্ছে।”
“পৃথিবীটা কী আদৌও সুন্দর চাচ্চু?কই আমি পৃথিবীর সৌন্দর্য দেখতে পাচ্ছি না।কোথায় সৌন্দর্য? সব তো হিংসা, ঘৃণা আর কুটচালে সাজানো অধ্যায়। কী হবে তোমাদের সন্তানের ভবিষ্যৎ এর?আর স্নেহা?তোমরা যার জন্য এত কানামাছি খেলছো সে কী দেখতে পাচ্ছে নিত্যদিন?স্নেহার অসুখের কথা রাঙ্গামা কিংবা আমাদের কেন বলোনি?একই বাড়িতে রইলাম অথচ বাড়ির মেয়ের অসুখের কথা জানলাম না?”
সাগরিকার কথার জবাব দিলো সামিনা।খ্যাকখ্যাক গলায় বলল,
“সব কথাতেই তোমাদের এত থাকতে হবে কেন?স্নেহার ভালোর জন্যই তোমাদের কাউকে জানাইনি।কারণ তোমরা ওকে স্পেশাল ট্রিট করবে আমার সন্তানকে বিকলাঙ্গ করার ইচ্ছে আমার নেই।”
“বিকলাঙ্গ কেন হবে?নিজের সাথে মানিয়ে নিতো।বিকলাঙ্গ করার কথা না কী রাঙ্গামা কে কষ্ট দেওয়ার ধান্দায়?”
কথাটা বলেই চট করে সে ঘুরে দাঁড়ালো বড় চাচার দিকে। সেদিকে তাকিয়ে বলল,
“তোমার মা কে কিন্তু আমি ডিটারজেন্ট দিয়ে ওয়াশিং মেশিনে ধুবো।আমি থাকতে তোমাদের মা লাগবে?তোমাদের মা বলে এমন অন্যায় মেনে নাও?আমি কিন্তু নিবো না।রাঙ্গামা না থাকলে আমিও এক কাপড়ে বের হয়ে যাবো।তারপর তোমার মা কে এনে বসিয়ে রেখো আসন পেতে।”
তাশদীদ বাবার পিছন থেকে একটু হেলান দিয়ে সাগরিকাকে এক পলক দেখলো।পরনে এখনো গতকালের শাড়ি। চুলগুলো এলোমেলো।চায়ের কাপ রেখে তাশদীদ দাঁড়িয়ে বলল,
“ব্যবসাটা আমরা সবাই মিলে দাঁড় করিয়েছি। বাড়ির প্রতিটি ইট আমাদের সবার পরিশ্রমের টাকা দিয়ে করা।তাই বাড়িটা আমাদের সবার। এখানে তুমি থাকবে তোমার অধিকারে। দাদুর সাথে আমি কথা বলে নিবো। চিন্তা করো না।”
(৪১)
গোসল সেরে বেরিয়ে সাগরিকা বিছানায় একটা কালো রঙের প্যাকেট দেখতে পেলো।আজ তাদের বিয়েতে যাওয়ার কথা। কিন্তু কী পরবে এটা নিয়ে চিন্তায় ছিল।আজ ড্রেসকোড দেওয়া হয়েছে সাদার মধ্যে। কিন্তু তার কোনো সাদার রঙের পোশাক নেই।কারণ তার মা সাদা পোশাক তাকে কিনে দেয় না।দাগ লাগিয়ে নষ্ট করে ফেলে। দেখা যাবে খেতে বসে দাগ লাগবে না হলেও লিপস্টিক।
তাই সে ভেবেছে কালো জামাটা পরবে সাথে সাদা ওড়না।ওই জাত রক্ষা হলেই হলো।কিন্তু মৌসুমির যা স্বভাব। কিছু না বললেই হলো।আনমনে প্যাকেট হাতে নিতেই বেরিয়ে এলো সাদা গোলাপি রঙের একটা শাড়ি।শাড়িটা বেশ ভারী ছিল। সাদার মাঝে গোলাপি রঙের দ্যুতি না কি গোলাপির মাঝে সাদার দ্যুতি বুঝে উঠছিল সে। শাড়িটা নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখতেই বেরিয়ে এলো বাকী সব। শাড়ির সাথে বাকী সব দেখে সে বেশ অবাক হলো কারণ আন্ডারগার্মেন্টস গুলোও ছিল তার মাপের। তখন সে মনে মনে ধরেই নিয়েছে এটা ইখুম এনেছে।
তাজবীদকে দেখে দুই ঠোঁট গোল করে শীষ বাজালো সাগরিকা আর তুলি।আজ তাকে দারুণ লাগছে। হাসির ছলে সাগরিকার মা বলল,
“আজ তাজবীদের প্রেম পাক্কা।দেখিস বেয়াইন-টেয়াইন পাস কি না।পছন্দ হলে বলবি। একদম তুলে নিয়ে আসবো।”
চাচীর কথায় তাজবীদ একগাল হেসে বলল,
“পছন্দ তোমাদের সামনেই আছে। সময় হলেই জানবে।”
তাজবীদকে দেখে শীষ বাজালেও তাশদীদকে দেখে হৃদ স্পন্দন থেমে গেল সাগরিকার। চুল ঠিক করতে করতে নেমে আসছিল সে৷ তার দিকে তাকিয়ে থাকা কতটা ভয়ংকর সব জেনেও বেহায়া চোখ তাকেই দেখে যাচ্ছে।তাশদীদের গলার দিকে তাকিয়ে ফাঁকা ঢোক গিলল সে৷ঠোঁট কামড়ে পেটে মোচড়াতে থাকা অনুভূতি গুলোকে ধমকে দিয়ে চুপচাপ এগিয়ে গেল গাড়ির দিকে।কিন্তু কী আর হবে?তাকে তো যেতে হবে তাশদীদের সাথেই।
(৪২)
বিয়ে বাড়ির হৈচৈ দেখে মন খারাপ হয়ে এলো সাগরিকার। তাশদীদ, তাজবীদ সমেত বাকী ছেলেরা মেয়ে পক্ষের সাথে চুটিয়ে তামাশা করছে।কিন্তু তাদের বলা হয়েছে কোথাও যেন না যায়।
তুলি সাগরিকার কানে কানে বলল,
“ওয়াশরুমে যাবো আপু।মামীকে বলো।”
সাগরিকা তার মা কে বললে ভদ্রমহিলা তাদের দুজনকে নিয়ে গেল কনের ঘরের পাশের ওয়াশরুমে।ওদের রেখে সে আবার ফিরে এলো সবার কাছে।
কিছুক্ষণ পর যখন তারা ফিরেছে ততক্ষণে হট্টগোল বেধেছে।
মৌসুমির বাবা তখন রেগে আগুন।কারণ বিয়ের কনে পালিয়েছে এবং মৌসুমির কথা মতো পালাতে সাহায্য করেছে সাগরিকা।
রেগেমেগে মৌসুমির বাবা তখন ভরা মজলিসে তাশদীদের বাবাকে শাসিয়ে বলল,
“যেহেতু আপনার ভাইয়ের মেয়ে বৌ পালাতে সাহায্য করেছে তাই ভরপাই আপনার ভাইয়ের মেয়েই করবে। সাগরিকার সাথেই এখন মুনিরের বিয়ে হবে। হবে মানে হবেই।”
চলবে …….