#এক কাপ চা
পর্ব ২২
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
(৬৪)
তাশদীদ পুনরায় যখন সাগরিকার মুখের সামনে খাবার তুলেছে তখন মৌসুমি বলল,
“ও মা আছে। আর তাছাড়া এতটাও কাটেনি যে তুমি বড়দের সামনে ওকে এভাবে খাইয়ে দিচ্ছো।”
মৌসুমির কথায় ভ্রু-কুঁচকে তাশদীদ জিজ্ঞেস করলো,
“কীভাবে?”
“নিজ প্লেট থেকে।একটু আমার মান রেখো।”
“নিজ প্লেট থেকে খাইয়ে দিলে তোমার মান কেন যাবে?”
“তুমি কী অবুঝ?ওকে খাইয়ে এঁটো হাতে আবার তুমি নিজে খাচ্ছো।তুমি….”
“থামো।মনোযোগ দিয়ে খাবার খেয়ে নাও।না হলে গলায় কাটা বিঁধবে।”
মৌসুমি কিছু বলতে চাচ্ছিলো কিন্তু তাশদীদের মা বলল,
“আজ কাল নয় মৌসুমি।সাগরিকার পাঁচ বছরের বয়স পূর্ণ হওয়ার আগে থেকেই ও তাশদীদের হাতে খায়।শুধু তাই নয় স্নেহাও খায়। ওরা আগে খাবার খেলেও যদি তোমার বড় মামা কিংবা তোমার ভাইয়া ওদের মুখের সামনে খাবার তুললে এঁটো না কী ওরা দেখে না।খাবার খেয়ে নেয়।”
“ভাইয়া কে?তাশদীদ?”
“তোমার থেকে বয়সে অনেক বড়। তাজবীদ, শুভ্র তোমরা না হয় সমবয়সী কিন্তু তাশদীদ বড়। সম্পর্কে তোমার ভাই হয়। আশা করি এরপর থেকে ভাই বলেই ডাকবে।”
ঘরে ফিরে এসে সাগরিকার অস্থিরতা শুরু।উপরে আসার আগে সে শুনেছে তাশদীদ তার বাবাকে বলছিল পুকুরে মাছ ধরার কথা।মাছ গুলো যেহেতু বড় হয়েছে তাই মাছ তুলে নতুন মাছ ছাড়ার জন্য। আগামীকাল সকালে জেলে পাড়ায় খবর দেওয়ার জন্য।
মানে ওটা নিশ্চিত আগামীকাল সাগরিকার কপালে শনি নৃত্য করছে। দ্রুত পায়ে সাগরিকা পুনরায় নিচে ফিরে এলো।তার ফোনে মেগাবাইট নেই।ফোন দাদীর ঘরে রেখেছিল সেখান থেকে ফোন নিয়ে ঘরে ফিরে এসে গুগলে সার্চ করলো
কীভাবে প্রাকৃতিক উপায়ে জ্বর আনা যায়?
জ্বর আসার ঘরোয়া উপায়
কী খেলে জ্বর আসবে?
বগল তলায় রসুন রাখলে জ্বর আসে কি না?
আস্ত রসুনে জ্বর আসে?না কী রসুনের কোয়া নিতে হবে?
খোসা ছাড়ানো রসুনে শরীরের তাপমাত্রা বাড়ে না কী?
জ্বর আসার ১০১ উপায়
কিন্তু কোনো ভাবেই জ্বর আনা সম্ভব হচ্ছে না।এদিকে শেষ একটা কাজ করা যেতে পারে।
নাকে সরু একটা কাঠি ঢুকিয়ে হাঁচি দেওয়া।তাহলে অবশ্যই বিশ্বাস করবে ঠান্ডা লেগেছে। জ্বর না আসুক ঠান্ডা তো লেগেছে,এটাই বা কম কী?
তাশদীদ জোড় করবেই না আর যদিও করে বড় মা থোড়াই কেয়ার করবে তাকে?
অদৃশ্য হাতে নিজেই নিজের পিঠ চাপড়ে দিলো সাগরিকা।বাহবা দিতে দিতে এগিয়ে গেল বারান্দায়। সবার সাথে বসেছে। চাদর দিয়ে মাথা হাত ভালোভাবে ঢাকা।মাথা নিচু করে ঠেকিয়েছে হাটুর সাথে। চাদরের নিচ দিয়ে নাকে সরু কাঠি ঢুকিয়ে ধপাধপ চার পাঁচটা হাঁচি দিয়ে দিলো সে।
পুনরায় একই কাজ করলো।পঞ্চম বারের বেলায় টানা সাত আটটা হাঁচি দিয়ে এবার আর মাথা দাঁড় করিয়ে রাখতে পারছে না।মাথার ভিতর ঝিম ঝিম করছিলো।হঠাৎ গলার কাছটায় তেঁতো স্বাদের অনুভূতি হলো।
মিনিট দুয়েকের ব্যবধানে হরহর করে বমি করে দিলো সে।
শারিরীক কষ্ট হলেও মনে শান্তি। যাক তাশদীদ তো অত্যাচার করতে পারলো না।
(৬৫)
স্নেহাকে কোলে নিয়ে বসে আছে সামিনা।মেয়েটার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আছে। তারা যাচ্ছে সামিনার বাবার বাড়ি।স্নেহা সে বাড়িতে খুব একটা যেতে চায় না।বাসায় তাশদীদ, তাজবীদের সাথে মিশছে, তাদের সাথে ঘুরতে যাচ্ছে, খাচ্ছে দেখা যাচ্ছে ওদের ঘরেও মাঝেমধ্যে ঘুমিয়ে যায় কিন্তু এ বাড়িতে এলেই কান্নাকাটি শুরু করে সে। বিশেষ করে যখন তার মামাতো ভাইয়েরা তাকে নিতে চায়। তাদের কাছে তো যাবেই না তারা কিছু দিলেও তাদের হাতে কিছু খেতে চায় না।
সামিনাও খুব একটা জোড় করে না।
কিন্তু আজ আসার সময় স্নেহা তার গলা জড়িয়ে ধরে বলেছিল,
“মা, আমরা দরজা ওয়ালা ঘরে ঘুমাবো।তুমি যখন কোথাও যাবা আমাকে বন্ধ করে রেখে যাবে।আমি বড় হয়েছি না? একাই থাকতে পারবো না হলে আমাকে নিয়ে যাইয়ো?আমি দুষ্টামি করি না। তাই না গো মা?”
“আচ্ছা।নিয়ে যাবো। কিন্তু তুমি কেন ওদের সাথে খেলো না?”
“ওরা পঁচা কথা বলে। মা তুমিই বলো বর বৌ খেলা ভালো?তুমি কখনো খেলেছো?”
“কে বলেছে বর বৌ খেলা ভালো না?”
“আমিও ছোটো বেলায় খেলেছি তো মা।আমরা পুতুল খেলেছি, বর বৌ খেলেছি, গোল্লাছুট খেলেছি।”
“কই আমাদের বাসায় তো কেউ খেলে না।
ভাইয়ারা তো খেলে না।ভাইয়ারা তো ভালো।কখনো বকা দেয় না।”
“তোমার ভাইয়ারা বড় হয়েছে তাই।আচ্ছা শোনো বাড়িতে গিয়ে সব্বাইকে সালাম দিবে কিন্তু।”
“আচ্ছা।”
স্নেহা তার মা কে আর কিছুই বলল না।চুপচাপ তার মায়ের বুকের সাথে লেপ্টে রইল।তার মায়ের শরীরের এই গন্ধটা তার খুব ভালো লাগে। নাক ডুবিয়ে দিলো মায়ের বুকে।
ইখুমকে নিয়ে তার শাশুড়ির বিচারের শেষ নেই। তার মতে ইখুমের কোনো গুন নেই।ইখুমের পোশাক ভালো নয়। শাড়ি পরলেও আঁচল টেনে রাখে তাতে না কী বাজে লাগে।আজ ইখুম রান্না করেছে বলে সে খেতে বসেনি সবার সাথে। পরে বসেছে। ইখুমের দোষ এখানে সে কেনো তার শাশুড়িকে খেতে বসতে বলেনি।পরে যখন সবাই বলাতে বসেছিল সে খাবার খেয়েছে সবার মন রাখতে। রান্না তার মনের মতোন হয়নি।বিনিময়ে ইখুম কিছুই বলেনি। সে তার মতোন আছে। নিজেকে খুশি রাখতে জানে সে। অন্যের উপর নিজের সুখ ছেড়ে দেওয়া বোকামির।
অথচ আমরা সেই বোকামি খুব ভালো করেই করি।
নিজের সুখ অন্য কেউ এনে দিতে পারে না কিন্তু দুঃখ, মন খারাপ সব’টা জানো অন্যের দান।
(৬৬)
জ্বলন্ত সিগারেট তাজবীদের দিকে এগিয়ে দিয়ে শুভ্র জিজ্ঞেস করলো,
“সাগরিকাকে পছন্দ করিস?”
তাজবীদের সোজা উত্তর,
“কেন করবো না?আমাদের বাড়ির মেয়ে বলে কথা। তাছাড়া আমার কাছের মানুষ বলতে তো সাগরিকাই।”
“আমি ওটা বুঝাইনি।তুই কী সাগরিকাকে ওই টাইপের পছন্দ করিস?”
“কোন টাইপ?”
“গাধা একটা। বুঝছিস না?”
“তুমি গাধা। তুমি জানো না?সাগরিকা আমার ছোটো বোন।ওকে আমি বোনের মতোই দেখি।”
“তবে চায়ের জন্য এত প্যারা দিস কেন?”
“ভাই তার বোনকে চায়ের কথা বলতে পারে না?কিন্তু “
“কী?”
“বলা যাবে না।”
“বলে ফেল না হলে বলে দিবো তুই ফোনে কাউকে হাম্পি ঝাম্পি দিচ্ছিলি।”
“আশ্চর্য। তুমি খুব খারাপ তো।”
“বলবি?”
“সাগরিকাকে ওটার কথা বলো না।আমায় মেরে ফেলবে। “
“কেন?”
“কারণ ও চায় না ওর কোনো বান্ধবী তার ভাবী হোক।”
“মানে?তুই ওর বান্ধুবীর সাথে প্রেম করিস? আর ও জানে না?মজা পাইলাম।”
“হুম।কোনো একটা কারণে ও রাজী নয়। তবে দেখা যাক কী হয়। এজন্যই আমি ওকে এত জ্বালাই যাতে অসহ্য হয়েও রাজী হয়ে যায়।”
“আর তোর ভাই?সে কী?”
“ওটা তুমি ভাইয়াকেই জিজ্ঞেস করে নাও৷ তোমাদের স্নায়ুযুদ্ধের মাঝে আমাকে ফেলো না।আর একটা কথা সাগরিকার মানসিক কোনো অশান্তির কারণ যেন তোমরা না হও। অনুরোধ রইল।
সাগরিকার পাশে বসে তাশদীদ তার কপালে হাত রেখে বলল,
” কী খাবি?”
“কিছু না।”
“একটু কিছু। মেডিসিন নিতে হবে।”
“দই খই খাবো।”
মিনিট দশেক পর দইখই নিয়ে এসে তাশদীদের মা সাগরিকাকে খাইয়ে দিয়ে গেল।তাশদীদ পাশে বসে বলল,
“রেজাল্ট হয়েছে আজ তোর।”
“আর কী?ফেল করেছি?আমি জানতাম।আমার মতোন লেমন চুষলে ছাত্রীর কিছুই হবে না।বলি বিয়ে দিয়ে দাও। তা তো দাও না। হলো তো?করলাম তো ফেল।”
“প্লাস এসেছে।”
“ওটাই তো। এবার সবাই আমাকে ফেল মারছি বলবে। কী বললে?প্লাস এসেছে? “
“হুম।আর জ্বর আনার একশ এক উপায় সম্পর্কে জানার জন্য প্রস্তুত থাক।কারণ প্রাকৃতিক ভাবেই কাল জ্বর আসবে তোর। সকালে জেলে এসে মাছ ধরবে। বটি নিয়ে রেডি থাকিস।”
“মানে?”
“গুগলে ওসব সার্চ আপনি আপনার নয়, আমার ফোন দিয়েই করেছেন।”
সাগরিকা কিছুই বলার শক্তি পেলো না।এবার মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবীটা সত্যি গোল গোল হয়ে ঘুরছে।
চলবে…